বৃত্তের_অন্তরালে পর্ব_১৩
#পলি_আনান
“শুন আমি যে ভাবে প্লানিং করেছি ঠিক সেই মোতাবেক করবি ”
“আচ্ছা মা তুমি চিন্তা করোনা। ওজিহা শুধু একবার ঘর থেকে বেরহোক তার পরেই আমি কাজটা কমপ্লিট করবো”
“ঠিক আছে সাবধানে করবি খবরদার ধরা খেলে কিন্তু মান সম্মান পুরো ধুলেয় মিশে যাবে”
“দূর মা চোরের আবার মান সম্মান কি!
এতোক্ষন আড়ালে থেকে ফিসফিস করছিলো মারিয়া আর ওজিহার মামি আমিনা।ওহিহাকে আসতে দেখে তারা আবার সাধারণ ভাবে কথা বলা শুরু করে।ওজিহা তাদের দেখে মুচকি হেসে এগিয়ে আসে,
” কি খুজচ্ছেন মামিমা?
“তেমন কিছুনা বাড়িটা একটু ঘুরে দেখছিলাম আর কি! তো তুই ডাক্তারের কাছে যাবি শুনলাম?
” হ্যা একটু পরেই যাবো। তোমরা বরং তোমাদের রুমে গিয়ে বিশ্রাম নাও।অনেক দূরের পথ শরীর হয়তো ক্লান্ত লাগছে এখন!
“হ্যা রে মা আমরা যাচ্ছি তুই সাবধানে যাস।”
কথাটি বলেই জোর কদমে পা ফেলে স্থান ত্যাগ করে তারা।
একসাপ্তাহ আগে ওজিহার মা হওয়ার বিষয়টি জানতে পারে ওজিহার মামার বাড়ির সবাই।গতকাল বিকালেই তারা এই বাড়িতে উপস্থিত হয়েছে।ওজিহার মামা ফিরোজ বেশ খুশি। তবে খুশি হতে পারেন নি তার মামিমা।ওজিহার সম্পত্তির উপর লোভ লালসা কিছুতেই কমেনি তাদের।জমির কিছু দলিল এখনো ওজিহার কাছেই আছে তা যানতে পেরে মারিয়া আর আমেনা একটি যুক্তি পরার্মশ করে। কিভাবে সেই দলিল গুলো তাদের হাতে আনা যায়।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তৈরি হচ্ছে ওজিহা।নাহিয়ান এসে আলতো করে তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।ওজিহার চুলে মুখ ডুবিয়ে নিতে থাকে সেই মাদক ময়ী ঘ্রাণ।
“তোমার চুলে কোন নেশা আছে ওহিজান। যা আমাকে বার বার আকৃষ্ট করে।”
“আরে কি করছেন কি আমায় ছাড়ুন দেরি হয়ে যাচ্ছে তো “!
” উহু দেরি হবে না,দাও আমি তোমার চুল আছড়ে দি!
“ধূর আমি পারবো আপনি যান তো, আপনি বরং রুম টা গুছিয়ে ফেলুন”
“উহু,আগে আমি আমার ওহিজান কে রেডি করবো তারপর সব।
নাহিয়ান ওজিহার চুল আচড়ে সুন্দর করে মাথায় ওরনা পরিয়ে দেয়।
” বাহ আমার জানটাকে পুরো হুর পরি লাগছে!
কথাটি বলেই আলতো করে ওজিহার কপালে ভালোবাসার পরশ একে দেয়।
“জানো ওহিজান দাদিজান কি করছে?
” কি!
“দাদিজান ছাদে উঠে তোমার জন্য হরেক রকমের আচার বানাতে বসেছে”
“কি!দাদি জান কি পাগল হয়ে গেছে এতো ঝামেলার কি প্রয়োজন ছিল!
” দূর আমি অতো শত জানি না তোমার যেটা প্রয়োজন ঠিক সেটাই করা হবে ইটস মাই অডার”
“হয়েছ এবার চলুন দেরি হয়ে যাচ্ছে”
“হুম, চলো।
.
ওজিহার রুমের পাশটা সব ফাকা হয়ে আছে সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত।মারিয়া ভালো করে চারদিকটা একবার পরখ করে নিয়ে ওজিহার রুমে ডুকে পরে, তারপর তন্ন তন্ন করে খুজতে থাকে সেই জমির দলিল। কিছুক্ষনের মধ্যে খুব সহযে সে পেয়েও যায়। বিশ্বজয়ের হাসি হেসে মারিয়া রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
.
প্রায় সাত মাস পেরিয়ে। ওজিহার শারীরিক এখন যথেষ্ট পরির্বতন হয়েছে।পেটের দিকটা ফুলে গেছে, হাতে, পায়ে পানি এসে ফুলে গেছে। এখন ওজিহাকে দেখতে বেশ মোটা সোটা লাগছে।আর ওজিহার দেখাশোনা করতে করতে ক্লান্ত নাহিয়ান।একের পর এক বায়না মিটিয়ে যাচ্ছে সে।ওজিহার বাচ্চা সুলভ আচরন থেকে প্রথমে কিছুটা বিচলিত হয় সে। পরর্বতীতে তফুরা খাতুন তাকে সব বুঝিয়ে দেয়।ওজিহার সব আবদার মেনে নেয় আর সব বাচ্চামো মুখ বুজে সহ্য করে।
” ওহিজান প্লিজ ঔষুধটা নাও।আর কতক্ষন আমাকে এই ভাবে ঘুরাবে তুমি প্লিজ কলিজা আমার ওষুধটা নাও”
“উফফফ বললাম না আমার এইসব খেতে আর ভালোলাগেনা আপনি যানতো। সরুন আমি এখন কিছুতেই ওষুধ খাবোনা!
“এমন করেনা পাখি প্লিজ ওষুধটা নাও,”
“প্লিজ বাচ্চার বাপ আপনি যান আমি ওষুধ খাবোনা!
” ওহিজান আমি কিন্তু এবার রেগে যাচ্ছি। তুমি ওষুধটা যদি খেয়েনাও তাহলে আমরা বাবুর জন্য আরো অনেক জামা,খেলনা অডার করবো প্লিজ!
“তুমি কি পাগল হয়ে গেছ! বাবুর জামা,খেলনা কিনতে কিনতে সারা ঘর ভরিয়ে দিয়েছো আবার কিনবে তুমি?
” হ্যা অবশ্যই কিনবো আমার কি আগে চার ছয়টা ছেলে মেয়ে হয়েছে নাকি আমার প্রথম বাচ্চা হবে তাই আমি দেশের সব খেলনা কিনতে রাজি!
“হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না মনে আছে তো তোমার, ছেলে হলে আমার দেওয়া নাম আর মেয়ে হলে তোমার দেওয়া নাম।
” হুম আমার বেশ মনে আছে ছেলে হলে, ওয়াফী আর মেয়ে হলে নাবিলা। এবার ওষুধটা নাও!
ওজিহা মুচকি হেসে ওষুধটা হাতে নিয়ে নেয়।এমন সময় তাদের ফ্রেন্ডের মাঝ থেকে গ্রুপ ভিডিও কল আসে নাহিয়ান বেলকনিতে গিয়ে ফোন রিসিভ করে,
“কিরে বন্ধুগন তোদের কি অবস্থা।
” কিরে তুই তো আমাদের ভুলেই গেছিস। বউয়ের আচঁলের নিচে বুঝি মুখ লুকিয়ে থাকছিস(মিতু)
“ওই একদম ফালতু কথা বলবিনা।বউয়ের সেবায় নিয়োজিত আছি বুঝেছেন আপনারা।
” হ বুইঝা ফেলছি। তা ভাবি কেমন আছে(মুচকি রাকিব)
“আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে ভালই আছে।এবার তোদের কথা বল কক্সবাজারে গিয়ে কেমন লাগছে আপনাদের!
” দূর শালা, সবঠিক ঠাক লাগলেও এক দিকে শূন্যতা অনুভব হচ্ছে।তুই যে নাই তোরে খুব মিস করছি দোস্ত।ভার্সিটি থেকে প্রতিবছর টুরে তুই আমাদের সাথেই থাকতি কিন্তু এই বছর তোর আর দেখা নেই।”(মন খারাপ করে রওনক)
তাদের কথায় নাহিয়ান একটু মুচকি হাসে।হঠাৎ করেই নাহিয়ানের কানে আসে একটি কাচঁ ভাঙ্গার শব্দ সাথে ওজিহার চিৎকার। নাহিয়ান মোবাইল রেখে ছুটে যায় ওজিহার কাছে।সে কাপছে দরদর করে কাপছে।ওজিহা বিছানার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মাথায় হাত দিয়ে তার সামনে একটি ভাঙ্গা মগ পরে আছে সাথে পানি।নাহিয়ান ছুটে গিয়ে ওজিহাকে জড়িয়ে ধরে,
“কি হয়েছে ওহিজান তুমি গ্লাসটা ফেলে দিলে কেন”
“আয়ায়ায়ায়া মি পায়ায়া নি মুখে নেওয়ার সময় দেখি পায়ায়ানির পরির্বতে তাজা রক্ততে গ্লাস পরিপূর্ণ।
” হোয়াট কি বলছো দেখো এখানে সব পানি মেঝেতে সব পানি পরে আছে।এইটা তোমার মনের ভ্রম ওহিজান।”
“না না আমি দেখেছি তাজা রক্ত, তাজা রক্ত তাই আমি উফফফ(ওজিহা মুখ চেপে কান্না শুরু করে)
” ওহিজান ভয় পেয়োনা আমি আছি তো। দেখো এই সময় তুমি ভয় পেলে সবচে বড় ক্ষতিটা হয়ে যাবে। আচ্ছা তুমি শান্ত হও চলো আমরা বেলকনিতে যাই কি সুন্দর দিন আজ। ”
এমন সময় একজন সার্ভেন্ট দরজার সামনে দাঁড়িয়ে নাহিয়ানের উদ্দেশ্য বলে,
“সবাই আপনাকে নিচে যেতে বলেছে স্যার।নতুন মেহমান এসেছে”
“আপনি গিয়ে বলুন আমি এখন ওহিজান কে ছেড়ে কোথাও যাবোনা।আর শুনুন এই যায়গাটা পরিষ্কার করে রাখবেন ”
নাহিয়ান ওজিহাকে নিয়ে বারান্দায় চলে যায়। এদিকে নাহিয়ানকে দেখার উদ্দেশ্য একজন চাতক পাখির মতো ছটফট করছে।
চলবে……