অন্য রূপকথা – তৃতীয় ও শেষ অধ্যায়
মৌপর্ণা
Ladies and gentlemen, we have just been cleared to land at the Hyderabad airport. Local time is 17 Hours and 35 minutes and the temperature in Hyderabad is 24°c. As we start our descent, please make sure your seat backs and tray tables are in their full upright position. Make sure your seat belt is securely fastened and ……………………………………………………
…………………………………………………………..
ল্যান্ডিং এনাউন্সমেন্টের সাথে শোভন ও অপু দুজনেই ফিরে এলো বর্তমানে….
“অপু, ফ্লাইট ল্যান্ড করবে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই, এবারে নিজের টিমের সাথে গিয়ে বস”
“কিন্তু, শোভন আর অন্বেষার গল্পের শেষটা …….”
” উফফ, অপু! পুরোটাই তো বললাম তোকে! ”
” কোথায় বললে? তারপর কি নিয়ে তোমাদের ঝামেলা হলো? এমন কি হলো যে অন্বেষা দিদি তোমাকে ছেড়ে……”
” উফফ! বললাম তো অপু অন্বেষা আর পাঁচটা লোকের মতন সাধারণ একটা সম্পর্ক চেয়েছিলো, শর্তহীন ভালোবাসা নয় ….
আমার কাছে সময় ছিলোনা, তাই ওর চাকরি পেয়ে দিল্লি চলে যাবার পর সব কিছু শেষ হয়ে যায়, ও অপেক্ষা করতে পারেনি, আর তার জন্যে ওকে আমি দোষও দিনা, আসলে কি বলতো আমি চারিদিক সামলে ওর সাথে দিনে দুটো মিনিট সময় বের করে কথা বলতে পারতাম না! ব্যাস সেই থেকেই ঝামেলা শুরু…..আর তারপর সেই অভিমান বাড়তে বাড়তে ছাড়াছাড়ি……….!”
একটু থেমে একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলে শোভন অপুর দিকে ফিরে তাকায় আবার, অপুর চোখে চোখ রেখে বলে –
“অন্বেষা আমার ফেলে আসা জীবনের একটা অংশ অপু, কিন্তু তুই আমার বর্তমান জীবনের সবটা! কাল ভালো করে বল করবি কিন্তু…..”
” কাল থেকে বৃষ্টির ফোরকাস্ট আছে জানতো!”
” ওসব আমি বুঝিনা অপু! তুই দুটো বল ফেললেও, যেন ওই দুটো বল তোর জীবনের সেরা দুটো বল হয়…..”
*************************************************
ফ্লাইট ল্যান্ড করতে না করতেই অপু মিশে যায় টিমের সাথে, শোভন চলে একা……..
শোভন লক্ষ্য করে, অপু হাঁটছে টিমের পেছন পেছন, এদিক ওদিক দেখছে যেন মনে এক অস্থিরতা, বাঁ কানে ফোন, ডান হাতের তালু দিয়ে ঢেকেছে ঠোঁট…..এই ভাবে কার সাথে কথা বলছে, এর আগেও শোভন দুএকবার দেখেছে অপুকে ফোনে ফিসফিস করে কথা বলতে, অপু কে জিজ্ঞেস করলে বারবার বলে ওর টিমের কোচ নয়তো টিমের কোনো দাদা, কিন্তু আজতো পুরো দল ওর সাথেই,
” নিজের এখনো সাদা কালো ফোন…..
অপু কে স্মার্ট ফোনটা কিনে দিয়ে কোনো ভুল করে ফেললাম কি? কিন্তু স্মার্ট ফোন ছাড়া ও ব্যাটসম্যানের দুর্বলতাটা বুঝতো কি ভাবে? কোন ব্যাটসম্যানের কোন বল খেলতে অসুবিধে, সেই গুলো না জানলে যে একজন কমপ্লিট প্লেয়ার হওয়া যায়না, বিপক্ষের দুর্বলতাটা কাজে লাগিয়ে পারফরমেন্স না দিলে একজন বড় মাপের বোলার হওয়া যে কখনোই সম্ভব নয়…..”
মনে মনেই বিড়বিড় করতে করতে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ এয়ারপোর্টের বাইরে, তারপর অপুর টীম রওনা হলে, একটা ট্যাক্সি ডেকে সোজা গিয়ে উঠলো আগে থেকে বুক করা হোটেলে……
হোটেলের ফর্মালিটি সেরে যখন ঘরে চেকইন করলো তখন রাত আটটা….
তাড়াতাড়ি মুখ হাত ধুয়ে হোটেলের রিসেপশনে ফোন করে রাতের খাবার ঘরে পৌঁছে দিতে বললো, তারপর ঘরে বসেই রাতের খাবার শেষ করে, খাবারের প্লেট ঘরের বাইরে রেখে আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়লো বিছানায়….
আজ রাতে আবারও ঘুমটা আসছেনা, মাস চারেক হলো অপুর পাশে ঘুমোনো টাই অভ্যেস হয়ে গিয়েছিলো শোভনের, বিচ্ছুটা না থাকলে অদ্ভুত এক ঝড় ওঠে মনের মধ্যে, বাবা, মায়ের মারা যাওয়া, অন্বেষার শেষদিনের কথা গুলো বারেবারে চলতে থাকে মাথার ভেতরে……….
সাইকোলজিস্ট অম্লান চৌধুরীর এন্টি-ডিপ্রেশন পিলস গুলোর চেয়ে ষোলো বছরের অপুর ছেলেমানুষি কথাগুলো অনেক – গুণ ভালো কাজ করে….
কিন্তু ছেলেটা কার সাথে ফিসফিস করে কথা বলছিলো আজ? ভাবতে ভাবতেই চোখ দুটো বুজে আসে শোভনের……
*************************************************
সকালে সাড়ে সাতটার আলার্মে ঘুম ভাঙে শোভনের, চটপট স্নান ও ব্রেকফাস্ট সেরে রওনা হয় স্টেডিয়ামের দিকে, স্টেডিয়াম থেকে হোটেলের দূরত্ব তাও নেই নেই করে ছয় কিলোমিটার তো বটেই, এতটা রাস্তা হেঁটে যাওয়া সম্ভব নয়, তাই শোভন হাঁটতে থাকে বাস স্ট্যান্ডের দিকে, মিনিট দুয়েকের মধ্যেই পৌঁছে যায় বাস স্ট্যান্ড, খুব সম্ভত এখন থেকে বাস নয়তো ক্যাব কিছু একটা পেয়েই যাবে স্টেডিয়ামের দিকে………
“কৌন? ব্লু শার্ট? অন্বেষা প্লিজ! তিন সাল হো গয়ে ……… অব তো শোভন – শোভন করনা বন্ধ কর ইয়ার……অউর শোভন হায়দ্রাবাদ ক্যাইসে ……”
পেছনের কোনো এক অবাঙলির গলায় অন্বেষা আর শোভন এই দুটো নাম শুনে পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো শোভন …..বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে মাথার ভাঁজে ……..একবার পেছনে ঘুরে দেখার জন্যে মনটা বড় ছটপট করে চলেছে, স্টেডিয়ামের বাস পেরিয়ে গিয়েছে অনেকক্ষণ…..
“নো ইয়ার…..অন্বেষা….ওহ শোভন নেহি …..”
নামটা ঠিকই শুনেছে শোভন……
নিজেকে আর আটকে রাখতে না পেরে পেছনের দিকে ঘুরতেই চোখ পরে অন্বেষার দিকে, দুটো চোখ বেয়ে জল নেমে এসেছে গালে…..
অন্বেষাও অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে, শোভনের দিকে, সেই প্রথম দিনের অন্বেষা – লাল টপ, ফেডেড জিন্স, খোলা চুলে যেরকম শোভন দেখেছিল ফ্রেশেরস পার্টির স্টেজে….
“শোভন?” – কলেজ থেকে বেরিয়ে চাকরিতে ঢোকার পর থেকেই শোভনের নাম ধরেই ডাকতো অন্বেষা শোভনকে….
শোভন নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে অন্বেষার দিকে চেয়ে, মনের মধ্যে জমিয়ে রাখা অনেক গুলো কথা ছটফট করতে থাকে মুখে আসার জন্যে……………
বেশ জোর করেই মনটাকে যতটা সম্ভব শান্ত করানোর চেষ্টা করে শোভন আর তারপর অত্যন্ত একটা ছোট্ট কথা ছুঁড়ে দেয় অন্বেষার দিকে –
” ভালো?”
” হ্যাঁ, ভীষণ ভালো!…..”
অন্বেষার মুখে কটাক্ষের হাসি…….
অন্বেষার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি নিজে থেকেই নিজের পরিচয় জানিয়ে খুব অদ্ভুত ভাবে ওদেরকে বিদায় জানিয়ে একটা বাসে গিয়ে উঠে পরে…., শোভন তখনও আনমনা হয়ে চেয়ে রয়েছে অন্বেষার দিকে…….
অন্বেষা মেয়েটিকে বিদায় জানিয়ে শোভনের দিকে চেয়ে বললো –
” তাহলে ………
কেমন আছো? কেমন চলছে সব কিছু? হমম মিস্টার শোভন ভৌমিক……..? ………..
এতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে কেন? হমম??
শেষ যেদিন কথা হলো সেইদিন তো কত কথাই না বলছিলে ………কি যেন বলেছিলো ……আচ্ছা আচ্ছা একটু মনে করি, ………..
হ্যাঁ মনে পড়েছে –
আর পারছিনা আমি সম্পর্কটা টানতে…..! তাইনা? ”
অন্বেষার কথাগুলো কেমন যেন কর্কশ সোনাচ্ছিলো শোভনের কানে………
শোভন অবাক হয়ে চেয়েই রয়েছে অন্বেষার দিকে, মনে হলো যেন কতদিনের জমানো রাগ ভেঙে পড়েছে শোভনের ওপর!
অথচ মেয়েটা এতটুকু অবাক হয়নি শোভন কে দেখে, এমন ভাবে কথা গুলো বলে চলেছে যেন শোভনের ওপরে তার কতনা অধিকার আজও , অথচ শোভন, হতবম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে অন্বেষার দিকে !
” রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা না বলে, চল কোনো এক কফি শপে বা কোনো….”
“সত্যি, মিস্টার ভৌমিক! ফাইনালি তাহলে আজ তোমার সময় আছে! ………দারুন ব্যাপার!”
” কি হয়েছে তোর? এভাবে কেন কথা বলছিস তুই ? আজ এতদিন বাদে…..”
” পারলে এতো বড় নাটকটা করতে..? …. কি মনে করো নিজেকে, কি মনে করো তুমি? তুমি আমার সাথে ভালোবাসার মিথ্যে নাটকটা না করলে আমি চাকরিটা পেতামনা? নাকী আমি ভেইন কেটে সুইসাইড করতাম?” চিৎকার করে কথাটা বলতে বলতে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরে অন্বেষার………
” অন্বেষা আসতে অন্বেষা!….
সবাই এদিকে দেখছে……, আমার কথাটা একটু শোন…চল আমরা সামনের ওই কফি শপে…..”
“একদম অধিকার দেখাবেনা…..আমার ওপর? ওকে? আমি রাস্তায় দাঁড়িয়েই এভাবেই কথা বলবো তোমার সাথে”
সেই বছর খানেক আগের অবুঝ মেয়ে……যে ছন্নছাড়া, যাকে কখনো বাঁধা যায়না …..
যাকে আগলে রাখতে হয় ভালোবাসায়, যত্নে…..
*************************************************
মিনিট দশেক হলো শোভন কোনোরকমে বুঝিয়ে সুঝিয়ে অন্বেষাকে নিয়ে এসে বসেছে একটা রুফ টপ রেস্তোরাঁতে…….
অন্বেষার কথা মতন ওয়েটার কফি আর স্নাক্স দিয়ে গিয়েছে টেবিলে…..
” বাবা প্রথম কবে দেখা করে তোমার সাথে? আমি পুরো ঘটনাটা জানি শোভন, তাই আজ পুরো সত্যিটা বলো, কারণ আমি তোমার মুখে পুরোটা শুনতে চায়!”
” তোর বাবা এসেছিলেন, ষোলোর জুন মাসের শেষে, আমার বাড়িতে, আরো ভালো ভাবে বলতে গেলে, তখন সবে তোরা ফাইনাল ইয়ারে.. ”
” এক্সাক্টলি কি বলেছিলো তোমাকে? ”
” সেরম কিছুই নয়, শুধু এটুকুই তোর জন্যে বাড়ির লোক – ছেলে দেখে রেখেছে, ছেলে বিদেশে চাকরি করে……ইত্যাদি ইত্যাদি….”
” তুমি কি বলেছিলে? এই কথা গুলো কোথায় বসে বলেছিলো, তোমাদের ঘরে?”
” না, উনি এসেই বললেন, আমাদের ঘরে ঠিকঠাক বসে কথা বলার মতন জায়গা নেই, তাই
গাড়িতে উঠতে, আমার মা বারবার বলেছিলো জানিস, ঘরে ঢুকতে……যাই হোক….তারপর গাড়িতে ওঠার পর উনি তোকে নিয়ে কথা বলতে শুরু করলেন, তোকে কি ভাবে আগলে আগলে মানুষ করেছে সবাই, তুই বাড়ির একমাত্র মেয়ে…ইত্যাদি….. ”
” তোমার এক্সাক্টলি কি মনে হয়েছিল ? ”
” কি মনে হবে, কিছুইনা! ওনার কন্সার্নটা খুব স্বাভাবিক ছিল!”
” তুমি কি উত্তর দিয়েছিলে? ”
” আমি বলেছিলাম আমার মনে তোর জন্যে কোনো কিছু নেই, আর দশজন স্টুডেন্টের মতন তুই একজন! উনি সেইদিন চলে গেলেন……তারপর অক্টোবরের শুরুতে আবার হঠাৎ প্রপোস করলি তুই, যেটা আমি কোনোদিনও ভাবিনি, তারপর ঝামেলাটা হলো, আমার মনে হলো আরও একবার তোর বাবার সাথে কথা বলাটা দরকার, তাই কথা বলতে গেলাম তোর বাবার অফিসে! ”
” সেদিন এক্সাক্টলি কি বলেছিলে? ”
” এটাই যে, তুই বলছিস ক্যাম্পাসিংয়ে বসবিনা, মার্কেট রিসেশনে, এটা একটা বড়ো রিস্ক হতে পারে, তাই কিছুদিনের জন্যে তোর সাথে…”
” একটা মিথ্যে নাটক করবে…..আর তারপর তুমি জানতে যে প্রথম পোস্টিং কলকাতার বাইরেই পরে বেশিরভাগ সময়ে, তাই আমি যতদিন তোমার কাছাকাছি আছি ততদিন একটা মিথ্যা নাটক চালিয়ে যাবে, তারপর কলেজ থেকে বেরিয়ে যাবার পর আমি কলকাতার বাইরে চলে গেলে কোনোভাবে কাটিয়ে দেবে…? তাইতো? আর ঠিক করলেও তাই, এভরিথিং ওয়াস প্ল্যান্ড!
…………………………………………………………….
আর তারপর সময় নেই এটাতো তুমি প্রথম দিনই জানিয়ে দিয়েছিলে তাইনা?
কাজেই ইচ্ছে করে রইলে আমার থেকে একটা দূরত্বে! আর তারপর আমি দিল্লি চলে এলে ইচ্ছে করে ফোন করা, যোগাযোগ রাখাটা কম করতে শুরু করে দিলে! আমি একদিন ঝগড়া শুরু করতে না করতেই তোমার তো উত্তর রেডি – তুমি আর টানতে পারছোনা এই সম্পর্কটা আর আমার এটার মধ্যে মাইন্ড করার কিছুই নেই কারণ তুমি কোনোদিনও অ্যাডভান্টেজ নাওনি আমার! হোয়াট এ প্ল্যান! মিস্টার ভৌমিক!
……………………………………………………………
তাহলে এই সব কিছুর জন্যে বাবার কাছে কত টাকা নিয়েছিলে…..?”
” না না, অন্বেষা প্লিজ! এইটা বলিসনা প্লিজ! আমি সত্যি একটা টাকাও নিনি, তখন আমার খুব টাকার দরকার ছিল জানিস….
স্যালারির অর্ধেকটা ধার দেনা শোধ করতে চলে যেত আর বাকিটা সংসার খরচায়,
মা কে অ্যাপোলোর একজন কার্ডিও দেখছিলেন, উনি বলেছিলেন একটা ব্লক আছে হার্টে, বছর খানেকের মধ্যে সার্জারি করতে হবে ……..
তার জন্যে সন্ধ্যেয় একটা কোচিং ইন্সটিটিউটে পড়াতে যেতাম, পাওনাদার দেরও একটু কম করে দিয়ে এডজাস্ট করছিলাম…..সংসার খরচ টাও অনেক কমিয়ে দিয়েছি তখন, টাকার খুব দরকার ছিল বিশ্বাস কর, তোর বাবা নিজে থেকেই টাকার কথা বলেও ছিলেন, কিন্তু আমি…..”
” সব ব্যাপারে মহান হতে চাও – তাইনা? এক্সাক্টলি পারফেক্ট মানুষ! জাস্ট দি পারফেক্ট! ”
অন্বেষার মুখে আবার কটাক্ষের হাসি…..
শোভন কিছু বলেনা, মাথা নীচু করে বসে থাকে কিছুক্ষণ……
অন্বেষা একটু থেমে আবার বলে –
” কিন্তু আমার সাথে যেটা করেছিলে, ঠিক করেছিলে তো? ”
” না ঠিক করিনি, পারলে আমায় ক্ষমা করে দিস….. ”
” ইউ নো হোয়াট? তুমি ছেড়ে চলে যাওয়ার পরও আমি তোমায় এতটা খারাপ ভাবতাম না, কিন্তু যেদিন বাবার মুখে শুনলাম তোমার সো সো করা নাটকের প্লানটা, খুউব ঘেন্না করছিলো নিজেকে – এটা ভেবে আমি মন থেকে তোমায় ভালোবেসে ছিলাম….”
” বিয়ে করিসনি কেন এখনো? ”
” ওই যে বললাম তোমার মতন মিথ্যে নাটক করিনি তাই ……………………………………….”
” এখনো আগের মতন আছিস! একদম ! আমার ওপর রাগ করে সারাজীবন একা থাকবি? ”
” তুমি কেন বিয়ে করোনি এতদিন? তুমিতো মিথ্যে নাটক করেছিলে! তবে? ”
” তুই আমার জীবন থেকে চলে যাবার মাস তিনেকের …”
” দাঁড়াও দাঁড়াও! আমি যায়নি ওকে? বলো তুমি তাড়িয়ে দিয়েছিলে তোমার জীবন থেকে আমাকে!”
” হ্যাঁ একই হলো….আমাদের সম্পর্কটা শেষ হলে…. ”
” হ্যাঁ মিথ্যে সম্পর্কটা শেষ হলে…..”
শোভন চুপকরে টেবিলের দিকে তাকিয়ে থাকে মাথা নীচু করে…..
অন্বেষা বলে চলে –
” হ্যাঁ থামলে কেন, বলো … বলো….আমাদের মিথ্যে সম্পর্কে শেষ হওয়ার তিন মাস পরে ……”
” মা মারা যায়…! ” এবারে শোভন চোখ রাখলো অন্বেষার দিকে…… চাপা কান্নায় গলার আওয়াজটা পাল্টে গেছে……..একটা দীর্ঘ্যশ্বাস ফেলে গলাটা পরিষ্কার করে আবার বলা শুরু করে…
” ওই মাসেই সার্জারির তারিখ ছিল, সেই রাতেই আমি কিছু টেস্ট করিয়ে, ডাক্তারের সাথে কথা বলে একটা ডেট ফাইনাল করে এসেছিলাম…..রাত অব্দি একদম ঠিক ছিল জানিস……… রাতে আমাকে বারবার জিজ্ঞেস করছিলো আমি আপসেট কেন? সেইদিন রাতে ঘুম আসছিলোনা কিছুতেই…….ভেবেছিলাম ভোরে উঠে আমার সব জমানো কথাগুলো বলবো…..ভোর অব্দি আর রইলোনা…..ঘুমের মধ্যেই মারা গেলো….একই ভাবে …যে ভাবে….বাবা চলে গিয়েছিলো……” কথাটা শেষ হতে না হতেই শোভনের চোখ বেয়ে জল নেমে এসেছে আবার….
অন্বেষা বেশ খানিকটা শান্ত এখন……
আরো কত না কথা বলা ছিল অন্বেষার, কিন্তু কিছুই বলতে পারেনা আর……
আকাশের দিকে চেয়ে দেখে ঘন কালো মেঘ জমাট বেঁধেছে আকাশে, কিন্তু আজও আকাশ ভেঙে পড়েনি বৃষ্টিতে……….
শোভন চোখ দুটো রুমালে মুছে দেখে, অন্বেষা তাকিয়ে রয়েছে আকাশের দিকে, আকাশটা দেখতেই শোভন বলে ওঠে –
” ওহ্হো! অপুর ম্যাচে যাচ্ছিলাম তো আমি! আজ বৃষ্টি এলে সর্বনাশ…..
অপু হচ্ছে আমি এখন যেখানে থাকি – কাকদ্বীপ কলেজ স্টাফ কোয়াটার, ওখানকার বন্ধু……! ওর জন্যেই তো এখানে আসা….ও রঞ্জির ম্যাচ প্লেয়ার জানিস…. ফাস্ট বোলার…..”
” কবে থেকে কাকদ্বীপে? সরকারি চাকরি তো?”
” হ্যাঁ কলেজ সার্ভিস কমিশন এক্সামটা ক্লিয়ার করে এই চাকরিটা পেলাম ……..মা চলে যাবার মাস দুয়েক পর জয়েনিং পেলাম………..সে ওখানে গিয়েও নিত্য দিনের ঝামেলা…..তারপর অপুর সাথে বন্ধুক্ত……ও আমার চেয়ে অনেক অনেক ছোটো জানিস……কিন্তু ও ছাড়া আর কেউ নেই আমার…..কে জানে, এতক্ষন কি চলছে মাঠে….”
” আমাকে নিয়ে যাবে মাঠে….অপুর খেলা দেখতে ? ”
” তুই যাবি? তোর অফিস নেই আজ?”
” আজতো শনিবার….”
” এখানে কোন কম্পানি তে এখন ? ”
” সব এখনই শুনবে? ফাঁকা আছি এখন তিন চারদিন….আমরা কিন্তু এমনি অনেক লেট ম্যাচের জন্যে….”
” হমমম চল…..”
*************************************************
গত তিনদিন রোজ অপুর ম্যাচ দেখেছে ওরা দুজন পাশাপাশি বসে…..
গত তিনদিনে আর কোনো ঝগড়া হয়নি ওদের মধ্যে, শুধু অপুকে নিয়ে কথা হয়েছে,
অপুর সাথে বন্ধুক্তের কথা, সেই প্রথম দেখা অপুর বুলেট বোলিংয়ের কথা…..
অন্বেষার অফিসের কথা জিজ্ঞেস করলে অন্বেষা এড়িয়ে গিয়েছে রোজ……… শুধু বলেছে অন্বেষা ফাঁকা এই তিন চার দিন……
ওরা বারবার ফিরে এসেছে অপুর দুর্ধষ্য বোলিংয়ে……..
আর এই বোলিংয়ের সাথেই হয়তো জন্ম হয়েছে একজন নতুন ভারতীয় বোলারের!
প্রকৃতিও সাথ দিয়েছে অপুর ভাগ্যয়ের ……..
ঘন কালো মেঘে আকাশ ঢেকে রয়েছে একই ভাবে শেষ তিনদিন থেকে, মাঠে জ্বালাতে হয়েছে আলো…..তবুও বৃষ্টি পড়েনি এক ফোঁটাও…….তাই অপুও সুযোগ পেয়েছে বারবার নিজেকে প্রমান করার জন্য….
*************************************************
আজ চতুর্থ দিন ম্যাচের…..কিন্তু হয়তো পুরোদিন খেলা হবেনা আজ …….
বাংলার চাই মাত্র উনচল্লিশ রান এই ম্যাচটা জেতার জন্যে, অথচ হাতে এখনো নটা উইকেট……অপু এখন মাঠে নেই….হয়তো আসবে আবার ম্যাচ জেতার শেষে……
দুটো ইনিংসের শেষে তার প্রাপ্ত উইকেট ছটা …..ডেবু ম্যাচে এরকম পারফরমেন্স খুব কম প্লেয়ারই দিতে পারে…..
শোভনের সব কষ্ট সার্থক হয়েছে শেষ তিনদিনে…..সব দুঃখের শেষ যেন এখানেই………
*************************************************
গত তিনদিনের মতন আজও লাঞ্চ ব্রেকে ওরা গিয়ে বসেছে এক রেস্তোরায়…..
লাঞ্চের পর মাত্র পাঁচটা রান বাকি অপুদের…..
খাবারের অর্ডারটা দিয়ে শোভন বলে ওঠে –
” কি ব্যাপার বলতো তোর? আজ মঙ্গলবার, আজও ডুব মেরে দিলি অফিসে, আর রোজ ঠিক নটায় পৌঁছে যাস বাসস্ট্যান্ডে, আবার বিকেলেও একই বাসস্ট্যান্ডে নেমে যাস আমার সাথে….অফিসের কথা জিজ্ঞেস করলে এড়িয়ে যাচ্ছিস…কোথায় থাকিস বললেও এড়িয়ে যাচ্ছিস! কাল এতবার বললাম তোকে ছেড়ে দিয়ে আসি, কিন্তু তুইতো তুই….মিস Aggressive মিত্র! ”
” তুমি সত্যিই এখনো কিছু বোঝোনি? ”
” মানে কি বুঝবো? ”
” অপুর সাথে কথা হয়নি এরমধ্যে?”
” হ্যাঁ হয়েছে তো? ”
” কি কথা হয়েছে?”
” ম্যাচের কথা…বোলিংয়ের কথা…..ওর বাবা মায়ের কথা….ট্রফি শেষ হতে হতে মাধ্যমিকের সময় চলে আসবে কিন্তু তবুও এই বছর, ও পরীক্ষার দেওয়ার চেষ্টা ……”
” উফফফফফ আর কোনো কথা নেই….মাধ্যমিক আর খেলা ছাড়া……..”
” আসতে…কি হলো আবার খেপে গেলি কেন? ”
” উউফফফফ…. সিরিয়াসলি শোভন! গড!
……………………………………………………”
” কি হলো বলতো ?”
” প্রথম দিনের ম্যাচের শেষে অপুর সাথে দেখা হওয়ার পর অপুকে যখন তুমি বললে – অপু অন্বেষা দিদি!…..ও তখন কি বললো! ”
” ও কিচ্ছু বললোনা, শুধু তোর দিকে চেয়ে হাসলো….আর বললো তুই এলি বলে ওর ভালো লাগলো…….মানে? …………… মানে ও জানতো তুই হায়দ্রাবাদে ? …… ও জানতো তোর সাথে আমার দেখা হয়েছে…… ও জানতো ? ….হ্যাঁ ঠিকতো….ওর কাছে তোর হঠাৎ আসাটা একদমই আনএক্সপেক্টেড ছিলোনা…..অন্বেষা! অপু….তোকে….”
” কারেক্ট! প্রথম দিন বাসস্ট্যান্ডে তুমি হতবম্ব হয়ে চেয়ে ছিলে আমার দিকে…..আমি সারপ্রাইজড ছিলাম? না তাইতো? আমিতো এন্তার ঝেড়েছি তোমায় সেদিন! বাসস্টান্ডেই…..! ”
হিসেব না মেলা অংক গুলো আসতে আসতে মিলে যাচ্ছিলো শোভনের মনে মনে….
অন্বেষা না থেমেই বলে চলে –
” দিন আঠেরো কি কুড়ি আগে, আমার হোয়াটস্যাপে একটা আননোন নম্বর থেকে একদম ছোট্ট একটা মেসেজ আসে – ‘শোভনদা তোমাকে ছাড়া ভালো নেই’ ”
আমি সাথে সাথে ঘুরিয়ে ফোন করি নম্বরটা তে…..দুটো রিং হওয়ার সাথে সাথে কালটা কেটে দেয় ওপারের মানুষটি …….
তারপর আসে আরো একটা মেসেজ – এবারে খানিকটা বড় –
‘অন্বেষা দি! আমি প্রসেনজিৎ, শোভন দা আমায় অপু বলে ডাকে, আমি শোভনদার বন্ধু………তোমার নম্বরটা শোভনদার ফোন থেকে খুঁজে পেয়েছি…..এখন শোভন দা আমার পাশেই ঘুমিয়ে…….তাই এতো রাতে কথা বলাতে একটু অসুবিধে…..কাল সকালে শোভনদা কলেজে গেলে তোমাকে ফোন করি? দুপুরের দিকে?’
আমি একটা শর্ট রিপ্লাই করি – দুপুর দুটো?
ওপাশ থেকে রিপ্লাই এলো – আচ্ছা! ”
কথাটা বলতে বলতে অন্বেষা এগিয়ে দিলো ফোনটা শোভনের হাতে…..তারপর বলে চললো –
” শোভন! আমার পাসপোর্ট ছবিটা এখনো কেন রেখে দিয়েছো তোমার মানি ব্যাগে? কেন কথায় কথায় তিন বছর পরেও আমার কথা মনে করেছো প্রতি রাতে? শুকনো লাল গোলাপের পাপড়ি এখনো কেন রেখেছো বইয়ের ভাঁজে? সেদিন আমি এতকিছু বললাম একবারও তো বললে না কিছু! শুধু একবার বলো…….শোভন….আজ শুধু একবার বলো……”
” কি বলবো অন্বেষা? কি বলতাম তোকে –
এটাই যে আমি প্রথম দিন তোকে ফ্রেশার্স পার্টিতে স্টেজে গান গাইতে দেখেই ………..অনেক স্বপ্ন এঁকেছিলাম মনে মনেই!
প্রথম দিন তুই ক্লাসে দেরি করে আসার জন্যে তোকে ক্লাস থেকে বের করে দিয়েও আফসোস হয়েছিল সেই রাতে…..
তারপর দিন থেকে প্রতিদিনই খুঁজেছিলাম তোকে ক্লাসের বেঞ্চিতে…..
তারপর তুই নিজেই কাঁদতে কাঁদতে বললি তোর পিছিয়ে পড়ার কথাটা…..
তারপর থেকে সকাল বিকেল শুরু হলো এক্সট্রা ক্লাস! আমার সাদাকালো জীবনটা হঠাৎ পাল্টে যেতে শুরু করে…..
কি বলতাম অন্বেষা….
তোকে সাহায্য করাটা শুধু তোর তাগিদে নয়, তোর সাথে সময় কাটাতে যে আমার ভীষণ ভালো লাগে!
তারপর ওই অংকের, ফিজিক্সের বই গুলোই একমাত্র উপায় ছিল তোর কাছাকাছি থাকার…..
রাত জেগে নতুন একটা সাবজেক্ট পড়লাম তোর জন্যে! সেটাও তো শুধু তোর কাছাকাছি থাকবো বলে….!
তোরা ফাইনাল ইয়ারে উঠতেই মনে হলো – ব্যাস! এবার তো আমার মেয়াদ ফুরোলো, তখনি মাথায় এলো তোদের চাকরির অংকের বাহানায় তো দেখা হতেই পারে আমাদের রোজ!
তাই ক্লাস চালু হলো কলেজেই, বাড়িতে আলাদা টিউশন দিলে যদি তুই না আসিস! তারপর তোর সাথে এক গাড়িতে ফেরা!…….
সব ঠিকই চলছিল জানিস…কিন্তু যেদিন তোর বাবা এসে আমায় বললো সে আমাকে একদিন দেখেছে তোদের গাড়িতে….
জিজ্ঞেস করলো আমাদের সম্পর্কের নামকি? আমি খুব ঘাবড়ে গেলাম জানিস….সব এলোমেলো হয়ে গেল এক ঝটকায়! তারপর সব চেয়ে বেশি কষ্টদায়েক ছিল ওই সাতটা দিন…..তুই প্রপোজ করার পরের সাতটা দিন……
আবার গেলাম তোর বাবার অফিসে …..বলতে গিয়েছিলাম কি? বলে ফিরলাম কি!
বলতে গিয়েছিলাম –
‘স্যার আমার পক্ষে আর সম্ভব নয় ওকে না করা ‘
বলে ফিরলাম –
‘স্যার আপাতত ওকে হ্যাঁ না বললে এই সময়ে চাকরিটা হাত ছাড়া হয়ে যেতে পারে…..’
কথা দিয়ে ফেললাম তুই চাকরি পেয়ে কলকাতা ছেড়ে চলে গেলেই এই সম্পর্কটা কাটিয়ে দেব…….
বিশ্বাস কর অন্বেষা তোর বাবার তেরো তলার কাঁচের কেবিন থেকে আমার ওই সাড়ে তিনশো স্কোয়ার ফিটের শেওলা ধরা ভাঙা জীর্ণ ভাড়া বাড়িটা কে খুব তুচ্ছ মনে হচ্ছিলো রে ………
আমার সাহস ছিলোনা রে সত্যিটা স্বীকার করার! আমিতো চেষ্টা করেছি বল…..খুব চেষ্টা করেছিলাম সব কিছু বাঁচানোর ….মা কে বাঁচাতে পারলাম না….বাবাকে বাঁচাতে পারলাম না…আমাদের সম্পর্ক টা বাঁচাতে পারলাম না……
আমি কিচ্ছু পারলাম না…..অন্বেষা …….আমি কিচ্ছু পারলাম না…..”
বলেই অঝোরে কাঁদতে শুরু করলো মুখটা রুমালে ঢেকে…….
” শোভন ……..এই শোভন…..সবাই দেখছে…..শোভন!…….শোভন কিছু শেষ হয়নি ওকে? ………সব শেষ হলে..আমি অপুর একটা কথায় ছুটে আসি দিল্লি থেকে….হমমম ….. ?
এই শোভন……তাকাও আমার দিকে…..অফিসে এতো ঝামেলা করে দিল্লি থেকে এখানে এসেছি সব শেষ করবো বলে – বলো?
ইন ফ্যাক্ট আমি তো ভেবেছিলাম আমি কাকদ্বীপ যাবো, তারপর অপু বললো ছোট শহর, সবাই জানা শোনা, নানান কথা বার্তা হবে, এই শোভন……….শোভন …………..তাকাও আমার দিকে …..বাসস্ট্যান্ডের মেয়েটা কে জানো? ও আমার অফিস কলিগের বান্ধবী…….এখানে থাকে……আমরা এয়ারপোর্ট থেকে তোমায় ফলো করছিলাম……..”
” ম্যাডাম জি – সব ঠিক ? ”
অন্বেষাও দুটো আঙ্গুল দিয়ে চোখের কোণ দুটো মুছে ফেললো দ্রুত…..
” হাঁ….সব ঠিক…….”
শোভন ভালো করে রুমালে চোখ ও মুখটা মুছে, রেঁস্তোরার ভেতরে তাকাতেই দেখলো সবাই খুব অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওদের দিকে….অন্বেষার হাতটা অবেচতন মনেই স্পর্শ করেছে শোভনের হাত দুটোকে…..
তাকালো বাইরের আকাশটার দিকে………..
আকাশ আজ আর মানেনি কোনও বাঁধা, কোনো মানা……
ভেঙে পড়েছে বৃষ্টির জলে………..
সামনের গাছের পাতা গুলো বৃষ্টির জলে ধুয়ে আরো বেশি সবুজ দেখাচ্ছে ……..গাছের ডালে বসে পাখিদের দল ভিজছে বৃষ্টির জলে ……যেন কতদিনের অপেক্ষায় ছিল তারা এই বৃষ্টির!
এ যেন এক অন্য রূপকথা………..
*************************************************
ভোর চারটেয় হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেলো শোভনের, হোটেলের ঘরের জানালা দিয়ে চাঁদের আলো এসে পড়ছে বিছানার এক কোণায়…….
রূপকথার ম্যাজিকম্যান অপু অঘোরে ঘুমোচ্ছে শোভন কে জড়িয়ে ধরে, বিচ্ছুটা ম্যাচের শেষে ঠিক কোচকে ম্যানেজ করে এসে উঠেছে শোভনের হোটেলে, মাথার পাশের টেবিল থেকে ফোনটা আনলক করতেই চোখে পড়লো – কলার লিস্টের প্রথমে থাকা অন্বেষার নামটা……..
আজ ফিরতে হবে কলকাতায়, কলকাতা থেকে সোজা কাকদ্বীপ, অপু ফিরবেনা সাথে, তাই অপুকে সকাল আটটার আগেই পৌঁছে দিতে হবে ওর টিমের কাছে, অন্বেষার দিল্লির ফ্লাইট সকাল দশটায়, শোভনের কলকাতার ফ্লাইট সাড়ে দশটায়, কথাটা ভাবতেই বুকের ভেতরটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠলো শোভনের, ডায়াল করে দিলো অন্বেষার নম্বরটা –
“হ্যালো!…….এতো রাতে …..জেগে আছো নাকি!……..ঘুম আসছেনা নাকি?” ঘুম ও আদর মাখানো গলায় বললো অন্বেষা…..
“ভালো লাগছেনা জানিস…..”
“কেন আবার কি হলো?” এবারে বেশ বিস্মিত গলায় জিজ্ঞেস করলো অন্বেষা……
“আজকের সময়টা এখানেই আটকে দেনা অন্বেষা……আজ তোদের ছেড়ে একা একা একদম ফিরতে ইচ্ছে করছেনা রে……! এই ……”
“ওহ! এই ব্যাপার…..! ”
“এটা শুধু এই ব্যাপার তোর কাছে? …..”
“কেন তুমিই তো বলতে আগে, ভালোবাসা স্বার্থহীন, শর্তহীন, হিসেবহীন, তাতে চাওয়া পাওয়ার হিসেব রাখতে নেই, সো মিস্টার ভৌমিক, আজ আপনার কি হলো?”
“হমম…. কিন্তু এটাও বলেছিলাম যে রিলেশনশিপে ……”
“দাঁড়াও! দাঁড়াও! কি বললে? মিস্টার ভৌমিক – ইউ মিন রিলেশনশিপ – আর ইউ …….প্রপসিং মি???………………………..
……………….. ব্যাস একটা হমম! ……………..
…………..ঠিক আছে, হ্যাঁ বলা যেতেই পারে কিন্তু আমার ক্লাসে থুড়ি আমার সাথে থাকতে গেলে মানতে হবে কিছু শর্ত – ১) হোমওয়ার্ক মানে ঘরের কাজ করতে হবে রোজ…..২) আমার পরে ঘুম থেকে ওঠা চলবেনা, আমার পরে ঘুম থেকে উঠলে কিন্তু ……………………………,………….
………………………………………………….
…………………………………………………………
………………………,…………..তাহলে রাজি তো?”
সমাপ্ত