কৃষ্ণ_মেঘের_প্রেম-১০

#কৃষ্ণ_মেঘের_প্রেম-১০
লেখিকা:- ইশানূর ইনায়াত

গান বন্ধ করে রোদ্র বললো,

“লাবনী ওই ম্যাসেজ টা আমার কলিগ করেছিল ওর নাম স্নেহা ও এরকমই একটু গায়ে পরা স্বভাবের বাট আমি তো না। আমি কি গিয়েছি বলো? ও অফার করলো তাতেও দোষ হয়ে গেল আমার?”

লাবনী ভীষণের চেয়েও ভীষণ অবাক হয়ে গিয়ে বাকশক্তি হারিয়ে ফেরলো ক্ষানিক সময়ের জন্য।
তারপর একটু বিনীত কন্ঠে বললো,

“না মানে..মানে, ” কি বলবে ভেবে না পেয়ে চুপ করে গেল।

রোদ্র ওর না মানে না মানে দেখে স্নিগ্ধ হেঁসে বললো,

” না মানে না মানে কি? তুমি আমাকে একটুও বিশ্বাস করো না হ্যা না?”

” না না, সেটা বিষয় না”

“এটাই বিষয়। নাহয় ওমন রাগ করেছিল কিসের জন্য?আমি বুঝি বুঝিনি?”

লাবনী মাথা নিচু বসে রইলো। গাড়ির খোলা জানালা দিয়ে মৃদু হাওয়া ওর খোলা চুল গুলো হালকে উড়ছে।
মুখে চুল এসে পরছে। রোদ্র কাছে ব্যাপার টা ভীষণ ভালো লাগলো। সম্ভব হলে এই মুহুর্তে লাবনীর এমন অনুতপ্ত মুখশ্রী নিচু করে রাখা, চুল গুলো মুখে আছড়ে পরে থাকার একটা ছবি অন্তত থাকা ভীষণ প্রয়োজব বলে মনে করলো। তবে প্রয়োজন টা মিটলো পরিস্থিতির কারণে। ও ড্রাইভ করছে এই অবস্থায় ছবি ও তুলতে পারবে না। গাড়ি থামালে লাবনী তাকাবে আর এই মুহুর্তে তখন থাকবে ও না। আর না লাবনী এভাবে লক্ষ্মী হয়ে বসে ছবি তুলবে বলে মনে হলো রোদ্রের।

“আপনি কি করে বুঝলেন আমি..”

“সিক্সসেন্স! সিক্সসেন্স! ”

লাবনী কিছু বললো না আর। লাবনীর মনটা ভীষণ সতেজ লাগছে। এতক্ষণ ওই বাসায় মিশুর সাথে খুশি ভাবে কথূ বললেও মন মরা হয়েছিল। আর এখন মন সতেজ হয়ে গিয়েছে।

……….

সপিং মলে গিয়ে লাবনী বেশ কিছু টপস, কুর্তি, ওয়ান পিস, লেগিংস্, শাড়ি, আর কিছু অর্নামেন্টস।
রোদ্র একটা গাঢ় লাল জর্জেটের একটা শাড়ি নিয়েছে সেটার বিল পে করে লুকিয়ে রাখলো। লাবনীর অন্যান্য কেনাকাটার জিনিসপত্রের সাথে ওটা হাতে নেয়ায় লাবনীর চক্ষুগোচর হয়েছে।

বাসায় ফেরার পর লাবনী ফ্রেশ হয়ে।
দু কাপ কফি নিয়ে হাজির হলো রোদ্রর কাছে।
রোদ্র ল্যাপটপে অফিসের কিছু কাজ করছিল।
লাবনী কফির কাপ দুটো ট্রে সহ টি টেবিলে রাখলো টেবিলে রোদ্রের ফোন ছিল সেটায় স্ক্রিন লাইট অন অফ হচ্ছিল কেউ ফোন করায়। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে স্নেহা নামের একটি মেয়ে ফোন করেছে।

লাবনী রোদ্রকে বললো,

“রোদ্র! আপনার ফোন এসেছে।”

রােদ্র নির্লিপ্ত জবাব দিল,

” নাম কি?কে ফোন করেছে?”

“স্নেহা”

“কেটে দাও আর ফোন রেখে কফির কাপ দুটো নিয়ে এসো আমার পাশে বসো।”

“কিন্তু? ফোন কেটে দিব? কোন দরকার ও তো হতে পারে।”

রোদ্র সামান্য রাগ দেখিয়ে বললো,
“না কোনো কাজ থাকতে পারে না।”

লাবনী কিছু বলার আগেই ফোন কেটে গেল। লাবনী ফোনটা আগের জায়গায় রেখে কফির কাপ দু’টো রেখে জিজ্ঞেস করলো,

“আপনি রাগ করছেন কেন? আমি তো ভালো ভেবেই বললাম।”

” তোমার ওপর না রাগ আমার ওই মেয়েটার ওপর। কি বেহায়া আমি ইগনোর করছি দেখেও কেমন পেছনে পরে আছে। ছেলেদের ছ্যাচড়ামির রেকর্ড ও এই মেয়েই ভেঙে ছাড়বে।”

রোদ্রের কথা শুনে লাবনী হেঁসে ফেললো। লাবনীর হাসি দেখে মুগ্ধ হলো রোদ্র। মেয়েটাকে হাসলে কত স্নিগ্ধ লাগে ভাবলো।

“মেয়েটা কি আমার এক্স?”
লাবনীর জানে যে না তবুও রোদ্র কে হালকা রাগাতে ইচ্ছে করেই বললো।

রোদ্র বললো,

“জীবনেও না। ওর মতো মেয়ে কে গালফ্রেন্ড কেন ফ্রেন্ড ও না করি আমি। আর আমার কোনো এক্স ফেক্স নেই!হু! তোমার ছিল?”

“না আফসোস! আমার কোনো এক্স ছিল না যে আমার বিয়ে এসে হাতের শিরা কেটে বিরহে মরবে!” বলে মিথ্যে চোখ মোছার নাটক করলো। রোদ্র বললো,

“ড্রামাকুইন!”

“আর আপনি ড্রামাকিং?”

__________
আজকে এডমিশনের ডেট।
কাল রাত পর্যন্ত ভীষণ এক্সাইটেট থাকলে এই মুহুর্তে ভীষণ নার্ভাস ফিল করছে লাবনী। গাড়িতে বসে সব দোয়া দরুদপাঠ করে নিজেকে ফুঁ দিচ্ছে আর ফাইলে ফুঁ দিচ্ছে। তা দেখে রোদ্র লাবনী বললো,

“আমাকেও একটু ফুঁ দিতে পারো। আফটার অল আমিই তোমাকে ড্রাইভ করে এডমিশন করাতে নিয়ে যাচ্ছি এনি চান্স আমার -ই কিছু হয়ে গেলে এডমিশনের কি হবে?”

“চুপ করুন। আমি এখানে ভয়ে বাঁচি না আর উনি
এসব উল্টাপাল্টা কথা বলে চিন্তা আরে বাড়িয়ে দিচ্ছেন। আরেকটা বাজে কথাও বললে আমি পায়ে হেঁটে এডমিশন নিতে যাবো।”

“ওকে ফাইন আই এম কোয়াইট!”

ইউনিভার্সিটি তে গাড়ি প্রবেশ করতেই এক অজানা শিহরণ বয়ে গেল লাবনীর মনে। নতুন পরিবেশ, নতুন জায়গা, নতুন মানুষ!
ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে অনেক তরুণ তরুণী। অধিকাংশই এডমিশনের জন্য এসেছে বোঝা যাচ্ছে তাদের মুখশ্রী দেখে। লাবনী গাড়ি থেকে নেমে পরলে রোদ্র গাড়ি পার্ক করে চলে আসে। রোদ্র লাবনীর ডান হাত নিজের বাম হাতের মুঠোয় অতি সমর্পণে নিয়ে অফিস রুমের দিকে আগত হয়।

কিছু মানুষ ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। রোদ্র লাবনীর হাত ধরায়। লাবনী মনে মনে বললো,

“খেয়ে দেয়ে কোনো কাজ নেই? এমন ড্যাপ ড্যাপ করে চেয়ে আছে কেন এরা? জীবনে মনে হয় কাপল দেখেনি। নিজেরা বয়ফ্রেন্ড নিয়ে টো টো করে ঘুরে খেয়াল নেই আমি জামাই নিয়ে এডমিশন নিতে আসলাম ওমনেই নজর দেওয়া লাগে। ভদ্র মানুষের দিনকাল শেষ লুচ্চামিতে ভরা এখন বাংলাদেশ। “এসব বলতে বলতে লাবনীর খেয়াল হলো। ” লাবনী তুই এডমিশন নিতে আসছিস এদেরকে গালাগাল করতে না। ফোকাস অন ওয়ার্ক! ডু ইট লাবনী!” নিজেকেই নিজে বললো।

এডমিশনের সব কাজ শেষ হলে লাবনী কে নিয়ে একবার ক্যাম্পাস টা ঘুরিয়ে দেখায় রোদ্র। লাবনী চক্ষু তৃষ্ণা মিটাচ্ছে আর ক্যাম্পাসের চারপাশ দেখছে। লাবনীর মুখে থাকা স্নিগ্ধ হাসিই বলে দিচ্ছে যে ও কতটা খুশি। ওকে খুশি দেখে রোদ্র ও ভীষণ খুশি।
রোদ্র ভাবছে,
প্রিয় মানুষদের খুশি তে মনে হয়।
নিজেদেরও খুশি জুড়ে থাকে।
প্রিয় মানুষের হাসিতেই নিজের হাসি মিশে থাকে।
~ইশানূর ইনায়াত~

তার মানে লাবনী আমার প্রিয়?
হুম লাবনী আমার প্রিয়।
আমিও নিশ্চয়ই ওর প্রিয়?
ওকে একদিন জিজ্ঞেস করবো..

ক্যাম্পাস ঘুরে ওরা একটা রেস্টুরেন্টে গেল। লাবনীর বান্ধবী রাহি এসেছে সাথে। রাহি রোদ্রর কাছে আবদার করলো ট্রিট দেওয়ার রোদ্র ও রাজি হয়ে গেল এক কথায়।-” নিজের শালিকা কে ট্রিট দিব নাতো কার শালিকা কে দিব?”

লাবনীর কাছে রোদ্রের বেশ প্রশংসা করলো রাহি্।
লাবনীর ও ভীষণ ভালো লাগছিল নিজের বরের প্রশংসস শুনে। প্রিয়দের ভালো তে নিজেরও ভালো লাগে তাই।
______________

-“চলবে”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here