গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে,পর্বঃ৩১,৩২
লেখিকা :#নবনী_নীলা
পর্বঃ৩১ :#তোমায়
” তাই বলে টয়া মতের বিরুদ্ধে গিয়ে কেনো বিয়ে করবে? আমি থাকতে সেটা হবে না।”, গম্ভীর গলায় কথা শেষ করে দাদা ভাই উঠে নিজের রুমে চলে গেল।
টয়া নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। ছোটো ভাবি বললো,” ভাইয়া কথাটা তো ঠিকই বলেছে। টয়ার জীবনের ব্যাপার টয়া যদি রাজি না থাকে তাহলে জোর করার কোনো প্রয়োজন নেই।” ছোটো ভাইয়াও মাথা নাড়িয়ে সম্মমতি জানালো।
এসব কি যখন না বলেছিলো জোড় করে বিয়ের পেপার এ সাইন করিয়ে নিয়েছে এবার এসেছে মতামত নিতে।
বড়ো ভাবি কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,” হুম টয়ার খুসিটাই তো সব।” সবাই খুব টায়ার্ড ছিলো সবাই ঘুমাতে গেলো টয়ার ঘুম হারাম করে দিয়ে।
ড্রয়িং রুমে নীচে ফ্লোরে বিছানা করে টয়া আর রিতু শুয়ে আছে। কথপকথনের সময়ে রিতু কিচেনে ছিলো কিন্তু সবই শুনেছে। টয়ার কিছুতেই ঘুম আসছে না সে এপাশ ওপাশ করছে। মনের ভিতরটা অস্থির লাগছে। রিতু একটু কেশে উঠে বললো,” বলে ফেললেই পারিস যে তোর ইয়াদকে চাই।”
টয়া বড়ো বড়ো চোখ করে রিতুর দিকে ফিরলো। তারপর অগোছালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,” মানে?”
” তুই বলে দে বিয়েতে তুই রাজী তাহলে আর শুধু শুধু রাতের ঘুম হারাম করতে হবে না।”, খোঁচা মেরে বললো রিতু।
টয়া অগোছালো কন্ঠে বললো,” থাম হইসে। তোকে পাকনামি করতে হবে না।”
” আচ্ছা তুই কি ইয়াদকে ভালোবাসিস?”, স্পষ্ট গলায় বলল রিতু। টয়ার বুকের ভিতরটা ধক করে উঠলো। মুখ ঘুরিয়ে অন্যপাশ ফিরে চুপ করে রইল। রিতু কাথা গায়ে জরিয়ে ঘুম ঘুম সরে বললো,” প্রশ্নের উত্তর খুঁজে ফেল, তোর জন্যই ভালো।”
টয়া চোখ বন্ধ করে ফেললো। ঘুম দেখছি আজ সবাই মিলে হারাম করবে।
🌟
অনেক দেরিতে ঘুম থেকে জাগার কারণে টয়ার মাথা ধরে আছে। ঘুম থেকে উঠে সবাইকে ব্যাগ গুছাতে দেখে টয়া অবাক হয়ে প্রশ্ন করে বললো,” কি করছো তোমরা?”
আশে পাশে তাকালো দাদাভাই আর ছোট ভাইয়াকে কোথাও দেখতে পাচ্ছে না। টয়া চোখ ডলতে ডলতে বড় ভাবিকে বলল,” কোথায় যাচ্ছো তোমরা?”
উত্তরে বড় ভাবি বললেন,” আগের বাড়ী।”
” আগের বাড়ি মানে?”, মলিন চোখে তাকিয়ে বলল টয়া।
” আরে তোমাদের বাড়ি। যেটায় আগে ছিলে?”, ছোটো ভাবি ব্যাগের চেইন লাগাতে গিয়ে বললো।
টয়া হা হয়ে আছে। এখন আবার সেই আগের জায়গায় যাবার কি দরকার? নিশ্চই দাদাভাইয়ের সিদ্ধান্ত।
ভাবতেই বিরক্ত লাগছে। এখানে একসাথে থাকতে কি অসুবিধা? টয়া মুখ ফুলিয়ে সোফায় বসে পড়লো। বড়ো ভাবি তাড়া দিয়ে বললো,” আরে আরে! বসে পড়লে যে যাও রেডি হও তোমায় ও যেতে হবে। তোমার দাদাভাই বলেছে তোমায় সাথে করে নিয়ে যেতে।”
” কি! আমি। আমি কেনো যাবো? তোমাদের যেতে ইচ্ছে করলে তোমরা যাও আমি যাবো না।”, মুখ ভার করে বললো টয়া।
” কেনো এখানে থেকে বরের সাথে প্রেম করবে বুঝি?সেটা হচ্ছে না। চলো চলো উঠো। নিচে ড্রাইভার দাড়িয়ে আছে।”, ছোটো ভাবির কথায় টয়া লজ্জায় পড়ে গেলো। আড় চোখে তাকিয়ে রইলো। এমন সময়ে রিতু একটা ব্যাগ হাতে রুম থেকে বের হলো। টয়া ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো,” তুই আবার কোথায় যাচ্ছিস? আবার কোনো ট্রিপ?”
” না না, তোদের সাথে যাচ্ছি।”, হেসে হেসে বললো রিতু।
” বাহ বাহ। আচ্ছা আমরা যাচ্ছি কেনো?”, বড়ো ভাবির দিকে উদ্দেশ্য করে বললাম।
” নীরব গেছে বাবা মাকে নিয়ে আসতে। এখানে তো এতোজন থাকা সম্ভব নয়। তোমার ভাইয়েরা তাই সকাল সকাল সেই বাড়িতে চলে গেছে। আর কথা নয় টয়া এবার উঠো।”, বড় ভাবির কথায় টয়া মুখ ফুলিয়ে উঠে গেলো।
টয়া রেডি হয়ে বের হতেই দেখলো বড় ভাবি ইয়াদের সাথে কথা বলছে। টয়া নিজের ব্যাগটা রেখে একপাশে চুপ করে দাড়িয়ে রইলো। ইয়াদের দৃষ্টি টয়ার দিকে থমকে আছে।
ভাবি একটু কেশে ইয়াদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললো,” তা যাচ্ছ কোথায়?”
” একটা কাজে বের হচ্ছিলাম।”, ইয়াদের দৃষ্টি গেলো ব্যাগের দিকে ব্যাগ নিয়ে এরা কোথায় যাচ্ছে? ইয়াদ প্রশ্ন করবে কি করবে না বুঝতে পরছে না শেষে বললো,” আপনারা কি কোথাও যাচ্ছেন?”
” হ্যা বাবা মা আসছেন তো তাই আগের বাড়িতে যাচ্ছি। তোমার সাথে পরে কথা হচ্ছে কেমন?”, কথাটা শুনেই ইয়াদ টয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। টয়া দেখেও না দেখার ভান করলো। সবাই একে একে লিফটের দিকে এগিয়ে গেলো। সবার পিছে টয়া, ইয়াদ নিজের জায়গায় স্থির থাকলো। টয়া যেতেই টয়ার হাত ধরে একপাশে নিয়ে এলো। রিতু পিছনে ফিরতেই সবটা দেখে চোখ কপালে উঠে গেলো তার। ছোটো ভাবি টয়াকে দেখতে না পেয়ে রিতুকে বললো,” টয়া কোথায়?”
রিতুর মরি মরি অবস্থা কি বলে এবার সে? প্রেম করবে এরা আর বিপদে পড়বে সে। এ কেমন বিচার!
” কি জানি ফেলে এসেছে? সেটাই নিতে গেছে, চলে আসবে চলেন গিয়ে নীচে অপেক্ষা করবো।”বলে এ যাত্রায় রক্ষা পেলো রিতু।
” মাথা কি গেছে আপনার? হাত ছাড়ুন কেউ দেখে ফেলবে।”, টয়া আশে পাশে কেউ আছে কিনা দেখতে দেখতে বললো।
” দেখুক I don’t Care. তুমি যে যাচ্ছো আমাকে বলোনি কেনো?”, গম্ভীর গলায় বললো ইয়াদ।
টয়া অন্য হাত দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নেওয়া চেষ্টা করছে। দাতে দাঁত চিপে টয়া বললো,” শুনুন আপনার কিছু এসে না গেলেও আমার এসে যায়। ছাড়ুন হাত।”
ইয়াদ এক টানে টয়াকে আরো কাছে এনে বললো,” আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দেও। আমাকে জানাওনি কেনো?”
” আরেহ আমি নিজেই তো সকালে জানলাম। আর আপনাকে জানালে আপনি কি করতেন?”, চটে গিয়ে বললো টয়া।
ইয়াদ কিছুক্ষণ গম্ভীর মুখে তাকিয়ে থাকলো তারপর হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,” কোথায় যাচ্ছো?”
” আগের বাসায়?”, হাত পিছনে লুকিয়ে রেখে বললো টয়া।
” তা কবে ফিরবে?”, সোজাসুজি প্রশ্ন করলো ইয়াদ।
” বলবো না”, বলেই টয়া পালাতে যাবে ইয়াদ টয়ার কোমড় জড়িয়ে কাছে নিয়ে এসে বললো,” বলবে নাকি আমি…”, বলেই কাছে আসতেই টয়া দুই হাত দিয়ে নিজের মুখ চেপে বললো,” সত্যিই জানি না আমাকে বলেনি।”
ইয়াদের বিশ্বাস হলো না। আরো এগিয়ে আসতেই টয়া ইয়াদের মুখে হাত দিয়ে রেখে থামিয়ে বললো,” বিশ্বাস করেন সত্যি বলছি। বাবা মা আসবে তাই ওই বাসায় যেতে হচ্ছে।”
টয়া গর গর করে কথা গুলো বলতে লাগলো। না বলতে পারলে ইয়াদের মাথায় ভূত চাপলে কি আবার করে বসে।
কিন্তু ইয়াদের মাথায় তো টয়া নামক পেত্নী চেপে বসে আছে, অপলকে ইয়াদ তাকিয়ে আছে। তারপর টয়ার হাতে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতেই ঝড়ের বেগে টয়া হাত সরিয়ে নিলো বড়ো বড়ো চোখ করে তাকিয়ে রইল। এটা কি হলো? ইয়াদ টয়াকে কাছে এনে বললো,” ঠিক আছে মাফ করলাম। কিন্তু এটার জন্য pay করতে হবে পরে। এখন ছেড়ে দিচ্ছি যাও।”, বলে টয়াকে নিজের থেকে আলাদা করলো। টয়া ছাড়া পেয়ে দিলো দৌড়, পিছে যেনো ডাকাত পরেছে তার। লিফটে উঠে বুকে হাত রেখে হাপাতে লাগলো। কোনো সুযোগ ছাড়ে না এই লোক।
আগের বাসায় এসে যেনো পুরনো দিনগুলো যেনো তাজা হয়ে গেলো। নিজের ঘরে ঢুকতেই মনের ভিতরটা নড়ে উঠলো। এই রুমের সাথে সব দুঃখ, হাসি, কান্না আস্টে পিষ্টে জড়িয়ে আছে। রুমে আসতেই চোখ গেলো সেই জানালার দিকে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো টয়া। দৃষ্টি আটকে গেলো আগের সেই ফ্ল্যাটে যেখানে ইয়াদ থাকতো। যদিও ফ্ল্যাটটায় হয়তো অন্য কেউ আছে। তাও তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে আগের সেই অনুভতিটা যেনো বাতাসে ছড়িয়ে আছে।
রাতে বাবা মা সবাই এসেছে। ড্রয়িং রুমে গন্ডগোল চলছে আনন্দ হচ্ছে কিন্তু টয়ার ফাকা ফাকা লাগছে মনে হচ্ছে কেউ যেনো নেই। টয়া এসে নিজের রুমে বসে আছে।
রিতু এতক্ষন ছাদে ছিলো ভাবীদের সাথে তার বেশ ভালোই ভাব হয়েছে। ছাদে বৃষ্টিতে ভিজছে তারা এক সাথে। টয়া ভিজেছিলো কিন্তু আগেই চলে এসেছে। ঐ যে ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।
রিতু এতক্ষণে নামলো নিচে, মেয়েটা পুরো ভিজে গেছে। চুল থেকে ঝর ঝর করে পানি ঝরছে। চুল ঝরাতেই চুলের পানি গিয়ে নিরবের গায়ে পড়লো। নিরব পিছন থেকে দেখে চিন্তে না পেরে বললো,” চুল সামলে রাখুন নাকি কাউকে লাগবে সামলে দিতে।”কিছুটা ভঙ্গিমা করে বললো নিরব।
রিতু ভ্রূ কুচকে তাকালো। রিতুকে দেখে নিরব হতভম্ব হয়ে গেলো। নিরব অপ্রস্তুত হয়ে গেলো, মেয়েটা রিতু হবে সেটা সে ভাবে নি। রিতু নীরবের কথা গুলো শুনে অট্টহাসি দিয়ে বললো,” আরেহ গরু চোর।”
নিরব মাথা গেলো নষ্ট হয়ে রেগে বললো,” shut up। আমাকে এসব নামে ডাকবে না। নইলে….”
রিতু পাত্তা না দিয়ে চলে যেতে যেতে বলল,” আমার নাম রিতু রজনী। আমি যারে তারে ডরাই না।”
এমন মেয়ে নিরব বাপের জন্মে দেখেনি। একে পেটে রেখে কি যে খেয়েছে এর মা, এতো ঝাঁজ।
রাতের খাবার শেষ করে ফেললো সবাই অনেক আগেই কারণ সবাই টায়ার্ড ছিলো। তারপর ঘুমাতে গেলো। রিতুর হালকা মাথা ব্যাথা করছে তাই সে শুয়ে পড়লো। বৃষ্টিতে ভেজার শখ মিটেছে এবার। রাত বারোটা টয়ার ঘুম আসছে না উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। বারান্দায় দাড়াতেই হটাৎ কেউ মুখ চেপে ধরলো। বুকের ভিতরটা ধক করে উঠলো টয়ার। চিৎকার করতে চাচ্ছে কিন্তু করতে পারছে না। মুখ ঘুরিয়ে তাকাতেই টয়ার চোখে পানি চলে এলো। ইয়াদ দাড়িয়ে আছে। ভয়ে আরেকটু হলেই অজ্ঞান হয়ে যেতো টয়া। টয়া ইয়াকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে চোখ মুছলো। ভয়ে এখনো কাপছে সে। টয়াকে কাপতে দেখে ইয়াদ এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো তারপর নরম গলায় বললো,” I’m sorry। বেশী ভয় পেয়েছো?”
টয়া কিছু বললো না ইয়াদের শার্ট খামচে ধরলো। ভয়ে গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। কিছুক্ষণ দুজনেই নিরব ছিলো তারপর নিরবতা ভেঙ্গে ইয়াদ বললো,” চলো তোমার মন ভালো করে দেই। একটা জায়গায় নিয়ে যাবো চলো” টয়া মাথা তুলে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো তারপর বললো,” কিভাবে যাবো? আপনিই বা কিভাবে এলেন? কখন এলেন?” চোখে মুখে শুধু প্রশ্ন টয়ার।
” এই তো এই মাত্র। কিভাবে এলাম সেটা তোএক্ষুনি দেখতে পাবে চলো আমার সাথে”, টয়া সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল,” না যাবো না আপনি আমাকে জ্বালাবেন।”
” না গেলে আরো বেশী জ্বালাবো।”, দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো ইয়াদ। টয়ার চোখ গেলো রিতুর দিকে রিতু হাসি হাসি চেহারা নিয়ে বসে আছে। নিশ্চই এই মেয়েটা এই ষড়যন্ত্র করছে এর সাথে মিলে। ওর না মাথা ব্যাথা ছিলো? ইয়াদ রিতুকে দেখে হেসে ফেললো। বাসায় দুইটা দরজা আছে একটা দরজা বন্ধই থাকে। রিতু সেটা খুলে দিয়েছে ইয়াদের জন্যে।
ইয়াদ দ্রুত টয়াকে নিয়ে বেড়িয়ে এলো। নিজের বাসা থেকে এভাবে কোনোদিন চোরের মতো বের হতে হবে কল্পনাও করেনি টয়া। কেউ দেখলে কি ভাববে? বাসায় কেউ জেনে ফেললে কি হবে? টয়ার মাথায় শত চিন্তা। ইয়াদ এর মাঝে টয়ার চোখে একটা কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে দিলো। টয়া সেটা খুলে ফেলতে নিলে ইয়াদ হাত ধরে ফেললো।
” আবার কি করছেন?”, কিছু বুঝতে না পেরে বললো টয়া।
” একটা সারপ্রাইজ আছে।”, কানের কাছে মুখ এনে বললো ইয়াদ।
[ চলবে ]
গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
[পর্বঃ৩২ :#surprise
লেখিকা :#নবনী_নীলা
ইয়াদ টয়ার হাত ধরে নিয়ে এলো। চোখ বন্ধ তাই টয়া ভয়ে ভয়ে হাঁটছে, বিরক্ত হয়ে বলল টয়া,” আর কতক্ষণ এভাবে থাকতে হবে অসহ্য লাগছে।”
” আর একটু।”, টয়ার হাত ধরে সামনে নিয়ে এসে বললো।
” না না আমি এক্ষুণি খুলে ফেললাম।”, বলে খুলতে যাবে এমন সময় ইয়াদ টয়ার হাত দুটো ধরে ফেললো। তারপর নিয়ে যেতে যেতে বলল,” এতো অধৈর্য কেনো তুমি?”
” ভালো হয়েছে আমি অধৈর্য্য। আপনি তাড়াতাড়ি করুন।”, টয়া তাড়া দিয়ে বললো।
হটাৎ ইয়াদ টয়াকে থামিয়ে দিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো,” এবার তুমি চোখ খুলতে পারো।”
টয়া ফট করে চোখের বাঁধনটা হাত দিয়ে নামিয়ে ফেললো। কিন্তু কোথায় সারপ্রাইজ চারিদিক অন্ধকার। টয়া এদিকে ওদিকে তাকাতে লাগলো অন্ধকারে সে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। এ আবার কেমন surprise!
হটাৎ চারিদিক আলোয় ভরে গেলো। হটাৎ এতো আলোতে চোখ মেলতে অসুবিধা হলো টয়ার। তারপর আশে পাশে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো সে। কি সুন্দর করে সাজানো বাসাটা! টয়া যে রুমে দাড়িয়ে আছে সেটা অসম্ভব সুন্দর। বেডের মাথা বরাবর একটা জানালা। জানালার হালকা রঙের পর্দা রুমটায় স্নিগ্ধতা এনে দিয়েছে। পর্দার সামনে কি সুন্দর একের পর এক ছোটো ছোটো লাইট ঝোলানো। রুমের একপাশে বিশাল টিভি, সারা দেওয়ালে অসম্ভব সুন্দর কিছু পেইন্টিং। টয়ার চোখ আটকে গেলো বারান্দার দিকটায়। বাহিরের দিকটা তার খুব চেনা। টয়া তাকিয়ে আছে। ইয়াদের মুখে হাসি, সে এগিয়ে এসে টয়ার হাত ধরে বারান্দায় নিয়ে এলো। টয়ার বিস্ময়ের সীমা রইলো না। এটা সেই বাসাটা, না হলে এখান থেকে টয়ার রুম কিভাবে দেখা যাচ্ছে। টয়ার মুখ হা হয়ে রইলো।
ইয়াদ টয়ার মাথায় একটা টোকা দিয়ে বললো,” মুখে মাছি ঢুকবে তো।”
টয়া ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল,” এটা আপনি ….. মানে কিভাবে? কিভাবে সম্ভব? Same জায়গায়।”
ইয়াদ টয়াকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,” সম্ভব তো করতেই হতো। এই দুটো জায়গা তোমার আর আমার। এটা অন্য কারোর দখলে থাকবে সেটা তো আমি হতে দিতে পারিনি। তাই যারা এখানে ছিলো তাদের বিদেয় করে দিয়েছি।”
” হ্যা, বিদেয় করে দিয়েছেন মানে?”, হতবাক হয়ে প্রশ্ন করলো টয়া।” ও কিছু না। তোমার কি পছন্দ হয়েছে?”, টয়ার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে বললো ইয়াদ। টয়া ইয়াদকে সরিয়ে দিয়ে বললো,” মানুষ দেখবে তো। কি করছেন?”
” দেখুক who cares?”, টয়াকে আবার কাছে টেনে নিলো ইয়াদ।
দুজনেই সেই আগের দিনগুলোয় হারিয়ে গেছে। টয়ার ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে বলল,” জানেন আপনি যে সারারাত জেগে পড়তেন। আপনার রূমের আলোটা ঠিক আমার বারান্দায় গিয়ে পড়তো আমার অন্ধকার রুমটা আবছা আলোয় ভরে যেতো। সেই আলোর দিকে তাঁকিয়ে থাকতে থাকতে আমি ঘুমিয়ে পড়তাম। তখন আমার আর একা ঘুমাতে ভয় করতো না।”
” হ্যা আর আমি আগে ঘুমিয়ে পড়লে যে তুমি আবার রুমে লেজার লাইট মারতে। এই জন্য মারতে?”, নরম গলায় বললো ইয়াদ।
” তো আমি কি অন্ধকারে ঘুমাবো? এ জন্য আপনার ঘুম নষ্ট করতাম যাতে আমি ঘুমাতে পারি।”, ফিক করে হেসে উঠল টয়া। এভাবে হাসতে যেনো টয়াকে ইয়াদ অনেক দিন পর দেখছে। হাসতে হাসতে টয়া খেয়াল করলো নিরবকে। নিরব টয়ার পাশের বারান্দায় দাড়িয়ে আছে। দেখে ফেলেনি তো। টয়ার বুকটা ধক করে উঠলো। টয়া জলদি ইয়াদকে টেনে রূমের ভীতরে নিয়ে এলো।
” কি হলো এভাবে চলে এলে কেনো?”, ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো ইয়াদ।
” নিরব ছিলো। দেখে ফেলেছে হয়তো। কি হবে এবার?”, বিচলিত হয়ে বলল টয়া।
” কিছুই হবে না। দেখে ফেলেছে তো কি হয়েছে।”, তারপর বারান্দায় যেতে নিলো ইয়াদ। টয়া ইয়াদের শার্ট খামচে ধরলো তারপর চিন্তিত হয়ে বললো,” কি করছেন? ও দেখে ফেলবে। আপনি ওদিকে যাবেন না।”
ইয়াদ টয়ার হাতের দিকে দৃষ্টি রেখে বললো,” আচ্ছা যাবো না if I get a kiss।” বলেই টয়ার দিকে তাকালো।
এই কথা কর্ণপাত হতেই টয়া ছিটকে দূরে সরে গেল। বলেছিলাম না জ্বালাবে এইতো শুরু করেছে। ইয়াদ এগিয়ে আসতে লাগলো,” কি হলো বোলো যাবো কি যাবো না।”
” আপনি এতো নিলজ্জ কেনো?”, মাথা নুইয়ে চিকন গলায় বললো টয়া। ইয়াদ টয়ার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে এনে বললো,” কি বললে? শুনতে পেলাম না।” ইয়াদ ঠিকই শুনেছে তবে টয়াকে এভাবে জ্বালাতে তার ভালোই লাগে।
টয়ার ইচ্ছে করছে ঐ নীরবকে গিয়ে ইচ্ছে মতন কয়েকটা মাইর দেয়। ওর জন্য এখন এই বিপদে পরতে হলো তাকে।
ইয়াদ ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে লাগলো। টয়ার বুকের ভিতরটা অস্থির হয়ে আছে। সে চোখ বন্ধ করে মাথা নুইয়ে রাখলো। ইয়াদ টয়ার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে টয়ার দিকে অপলকে তাকিয়ে রইলো। টয়া চোখ খুলতেই ইয়াদের চোখে চোখ পড়তেই সে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। ইয়াদ টয়ার দুই গালে হাত দিয়ে টয়ার মুখটা উপরে তুললো তারপর আদুরে গলায় বললো,” তোমায় লজ্জা পেলে দেখতে দারুন লাগে।”
টয়া লজ্জায় পারেনা কোথাও মুখ লুকিয়ে রাখে, টয়া নিচের ঠোঁট কামড়ে মুখ ঘুরিয়ে ফেললো।
ইয়াদ টয়াকে বুকে জরিয়ে ধরলো। যাক টয়া মুখ লুকানোর একটা জায়গা পেলো। ইয়াদ এভাবে জড়িয়ে ধরে বললো,” আমাদের যখন একটা বেবী হবে তখন তাকে কোলে নিয়ে তোমার রুম দেখিয়ে বলবো তুমি কিভাবে আমাকে জালাতে।”
টয়া ভ্রু কুঁচকে মুখ তুলে বললো,” কি! আপনিই এসব বলবেন?”
” অবশ্যই বলবো।”, সিরিয়াস হয়ে বললো ইয়াদ।
” একদম না।”, ইয়াদকে থেকে সরিয়ে দিয়ে বললো টয়া।
তারপর আরো বললো,” আপনি যদি এসব বলেছেন আপনাকে আমি….” বাকি টা বলার আগে ইয়াদ টয়ার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বললো,” আগে বেবী আসুক। তারপর ডিসাইড করবো কেমন?”
টয়া লজ্জা পেয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।
আজব এর কথায় টয়া এভাবে গলে যাচ্ছে কেনো টয়া সে নিজেই জানে না। অদ্ভুত সেই অনুভূতিটা। ইয়াদ টয়ার হাত ধরে পুরো বাসাটা দেখলো। সে নিজে সবটা সাজিয়েছে।
ইয়াদ এতো সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে যে টয়ার অনেক পছন্দ হয়েছে। টয়া নিজের অনুভূতি বলে প্রকাশ করতে পারবে না। টয়া মুখে এক ঝিলিক হাসি নিয়ে সবটা দেখছে।
” ভালো লেগেছে?”, পকেটে দুই হাত রেখে বলল ইয়াদ।
” হুম, খুব। “, বলে টয়া ইয়াদের সামনে এসে তার বুকে হেলান দিয়ে দাড়ালো। ইয়াদ ব্যাস্ত হয়ে পকেট থেকে হাত বের করে টয়াকে কে ধরে বললো,” এভাবে দাড়িয়ে আছো কেনো পরে যাবা তো।”
টয়া ইয়াদের বুকে মাথা হেলিয়ে দিয়ে ইয়াদের মুখের দিকে তাকিয়ে ইশারায় নিজের দিকে ডাকলো। ইয়াদ কিছু বুঝতে না পেরে মুখ এগিয়ে নিয়ে এলো। টয়া ইয়াদের অপর পাশের গালে হাত রেখে ইয়াদের গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বললো,” পড়বো না। আপনি তো আছেন।” তারপর চোখ নামিয়ে মাথা নুইয়ে রাখলো
টয়ার কাজে ইয়াদ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল তারপর আরো অস্টে পিষ্টে জড়িয়ে ধরলো। অবশেষে টয়ার মন গলেছে। সব ঠিক ঠাক হলেও ইয়াদের মনের কোনে একটা অনুতাপ ররেই গেছে। টয়াকে sorry না বলা পর্যন্ত ইয়াদের মন শান্ত হবে না। তাই ইয়াদ নিচু স্বরে অনুতপ্ত হয়ে বলল,” sorry।” বলে ইয়াদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
টয়া মাথা ঘুরিয়ে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বললো,” মানে?” আবার sorry কেনো বলছে ইয়াদ টয়া বুঝলো না।
ইয়াদ টয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,” আমার জন্য সেদিন তোমার এতো বড় ক্ষতি হলো। তোমার অ্যাকসিডেন্ট।”, বাকিটা শেষ করার আগে টয়া চটে গিয়ে বললো,” কে বলেছে এগুলো আপনাকে? নিরব! ও বলেছে না? ”
” কিন্তু কথাগুলো তো সত্যি।”, ইয়াদের কথায় টয়া ক্ষেপে গেলো। কেনো তার ভুলের দায় ইয়াদ নিজের ঘাড়ে নিচ্ছে? এই নীরবকে তো…!
” আচ্ছা তাই বুঝি? তাহলে যেই গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগেছিল সেটা আপনি ড্রাইভ করছিলেন? নাকি আপনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে গাড়ির সামনে ফেলেছেন? যখন সেখানে আপনি উপস্থিত ছিলেনই না দোষটা আপনার হলো কি করে? আমি দেখে হাটি নি দোষ আমার। আপনি কেনো নিজের ঘাড়ে দোষ নিচ্ছেন।”, গম গম করে বললো টয়া। টয়া রেগে যাওয়ায় ইয়াদ টয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,” থামো থামো বুঝেছি।”
” আপনি এই কথাটা আর কোনো দিন বলবেন না। মনে থাকে যেন।”, শাসিয়ে বললো টয়া। ইয়াদ ভদ্র ছেলের মতো মাথা নাড়ল মহা রানী ক্ষেপে গেছে আর রাগানোর কোনো মানে নেই।
” আচ্ছা চলো বের হই।”, ইয়াদ টয়ার হাত ধরে টেনে বললো।
” বের হবো মানে? আবার কই যাবো?”, সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল টয়া।
” গেলেই দেখতে পাবে।”, বলেই টয়াকে নিয়ে এগিয়ে গেলো।
” এতো রাতে আবার কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন।”, ইয়াদকে প্রশ্ন করতে টয়া ব্যাস্ত।
[ চলবে ]