জেদ,পার্ট৩৪,৩৫

#জেদ,পার্ট৩৪,৩৫
(A Conditional Love Story)
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
পার্ট৩৪
.
দরজা খুলতেই চোখের সামনে বড় একটা ফুলের তোড়া ভেসে উঠল।আমি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে উঠলাম
-কাকে চাই? ওপাশ থেকে জবাব এল
-তোমাকে।
বিরক্ত হলাম আমি। দরজা বন্ধ করতে যাব তখনি ফুলের তোড়াটা নেমে গেল সামনে থেকে।চমকে উঠলাম আমি।
-আরদ্ধ!!
-hi baby doll. You missed me?
আমার উত্তরের অপেক্ষা না করে আরদ্ধ আমাকে সরিয়ে দিয়ে ঘরে ঢুকে গেল।সেই সাথে তার ঠোট গুলো ছুইয়ে দিল আমার গালে।চোখের নিমিষেই যেন ঘটে গেল সবকিছু।আরদ্ধ ফুলের বুকেটা টেবিলের উপর রেখে চারদিক ঘুরে দেখতে লাগল।
-সব কিছু এত ফ্যাকাশে কেন বেব?তুমি তো এত সাদামাটা ছিলে না। আরদ্ধ কথা বলছে আর চারদিক ঘুরে দেখছে। আমাকে কোন কথা বলার সুযোগ দিচ্ছে না সে।ঘুরতে ঘুরতে আমার রুমের সামনে গিয়ে দাড়াল সে।সেকেন্ড দুয়েক থেমে ভিতরে ঢুকল।চারদিকে একবার নজর বুলিয়ে বলে উঠল
-এটা তোমার রুম তাই না বেব?
-কেন এসেছ এখানে তুমি?
-বারেহ। তোমার সাথে দেখা করার জন্যে আবার আমার রিজন লাগবে নাকি।আমার‍ যখন মন চাইবে আমি তখন আমার জানকে দেখতে আসব৷
শেষ কথাটা আরদ্ধ আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল।তার ঠোটে ফুটে আছে হালকা একটা বাকা হাসি ।তার এই হাসির মানে বুঝতে খুব একটা সমস্যা হল না।আরদ্ধ যখন বড় সড় কোন কিছু প্লান করে তখন তার মুখে এই হাসিটা শোভা পায় ।
আরদ্ধর হাত দুটো অবাধে আমার পিঠে ঘোরাফেরা করছে।আরদ্ধ চোখ বুঝে এগিয়ে আসছে আমার দিকে।আমি আরদ্ধের বাহুডোরে ঘোরের মধ্যে আটকে আছি ।আরদ্ধর ঠোট আমার ঠোট ছোয়ার আগেই আমি নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম।সরে যেতে চাইলেই আরদ্ধ আবার হাত ধরে ফেলল আমার ।দুহাতে জরিয়ে আমাকে মিশিয়ে নিল তার বুকের মধ্যে।
-আরদ্ধ প্লিজ ছাড়ো আমাকে ।
-উহু ।অনেক দিন তোমার চুলের ঘ্রান নেই না। I missed this thing.
-আরদ্ধ প্লিজ ছাড়ো আমাকে।
আমি নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম আরদ্ধর বাহুডোর থেকে ।
-মিস করেছিল আমাকে?তুমি?কখন শুনি!!গত এক বছরে একবারও ফোন করেছিলে তুমি ?আমি শত সহস্রবার ফোন করেছি তোমাকে।একটা বার ফোন ধরো নি তুমি।দেখা করার কথা নাই বা বললাম।বিয়ের আগে আমি তোমার পায়ে পর্যন্ত ধরে বলেছিলাম চল আমরা দুজনে বিয়ে করি।কিন্তু তুমি ছিলে তোমার জেদ নিয়ে ।তোমার আর বাবার জেদের বলি হলাম আমি ।যখন আমি দিনে রাতে তোমার পাওয়ার ঘোরে মগ্ন ছিলাম তখন তুমি তোমার জেদে ডুবে ছিলে। এখন আমি অন্য জনের স্ত্রী ।প্লিজ চলে যাও তুমি এখান থেকে ।আমার হাসবেন্ড তোমাকে এখানে দেখলে রাগ করবে ।তুমি প্লিজ চলে যাও ।
একনাগাড়ে কথা গুলো বলে থামলাম আমি ।
-ইনা আমার কথা…
-আরদ্ধ আমি কোন কথা শুনতে চাচ্ছি না ।তুমি প্লিজ চলে যাও এখান থেকে ।
-ইনা
-প্লিজ লিভ……
আরদ্ধ হয়তো কিছু বলতে চাচ্ছিল ।কিন্তু তার আগেই চেচিয়ে উঠলাম আমি ।তার কোন কথাই শুনতে ইচ্ছে করছে না আমার।নিজের মধ্যে এক অসম লড়াইয়ে জড়িয়ে যাচ্ছি আমি ।আরদ্ধ আর কোন কথা বলল না ।শুধু একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চলে গেল ।আরদ্ধ চলে যেতেই আমি দরজা লাগিয়ে বসে পড়লাম ।ডুকরে কেদে উঠলাম আমি ।চিতকার করে কাদতে ইচ্ছা করছে আমার ।আরদ্ধকে পাওয়ার জন্যে কত কিছুই না করেছি আমি ।এই আমি জানি আরদ্ধকে ঠিক কতটা ভালোবাসি।অথচ আজ তাকে হাতের কাছে পেয়েও তাকে দূরে ঠেলে দিলাম আমি।আমি চাইলেও পারব না তাকে কাছে টেনে নিতে ।
.
.
কতক্ষন কেদেছি আমি নিজেও জানি না।কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে গিয়েছি।ঘুম ভাংল কলিং বেলের আওয়াজ শুনে।কেউ বেশ কিছুক্ষন ধরে টানা কলিংবেক বাজিয়ে চলছে।আমি গিয়ে দরজা খুললাম। আরাজ মাতাল অবস্থায় দাড়িয়ে আছে।আমাকে দেখেই একটা নোংরা হাসি ছুড়ে দিল সে। আমি পিছন ফিরে চলে আসতে যাব তখনি সে আমার হাত টেনে ধরল সে। -কোথায় যাচ্ছ জানেমন!হাসবেন্ড বাসায় এসেছে কোথায় একটু সেবা করবে আদর করবে তা না তুমি পালাচ্ছ!তা তো হবে না.Come on babe.Give me a kiss.
আরাজ আমাকে জড়িয়ে ধরে জড়া জড়ি করতে লাগল।আমাকে কিস করার চেস্টা করছে সে ।আর আমি আপ্রান চেস্টা করছি তাকে ঠেলে দূরে সরানোর।কিন্তু কোন ভাবেই তার সাথে পেরে উঠছি না।আরাজ প্রচন্ড হিংস্র বিহেব করছে।পকেটে তার ফোন বেজে চলছে অনবরত কিন্তু আরাজ যেন হুশ হারিয়ে ফেলেছে।আমি কোন ভাবেই তাকে থামাতে পারছি না।আরাজের ঘোর ভাংল কলিং বেলের আওয়াজ শুনে ।কেউ একজন অনবরত বেল বাজিয়ে যাচ্ছে।আরাজ নিতে না পেরে আমাকে ছেড়ে দিয়ে দরজার দিকে আগালো।আমি সেই সুযোগে এক দৌড়ে রুমে চলে এলাম।আরাজ বের হয়ে বেশ খানিকক্ষন কে কে বলে আওয়াজ দিল ।কিন্তু কারও কোন খোজ নেই ।এত রাতে কেই বা হতে পারে!কিন্তু যেই হোক না কেন সে জানেনা সে আমাকে কত বড় বিপদের হাত থেকে বাচিয়েছে।
বাকি দুনিয়ার সামনে আমি আরাজকে স্বামী মানলেও আমি তাকে কখনোই মন থেকে মেনে নিতে পারিনি।তার প্রতি একটা অজানা বাধা কাজ করে শুরু থেকেই ।অথচ আরদ্ধর প্রতিটা ছোয়া যেন এখনো আমাকে শান্তি দেয় ।ছুয়ে যায় আমার অন্তর আত্মাকে ।আমি যতই যা করি না কেন আরদ্ধর প্রতি আমার ভালো বাসার কখনো কোন কমতি হয় না ।শুধু বাবার কথা চিন্তা করে আমি চাইলেও পারিনা আরদ্ধকে নিজের করে নিতে।
.
.
আরাজ সকাল সকাল কোন কথা না বলেই বাস থেকে বের হয়ে গিয়েছে।যাওয়ার আগে বেশ কয়েকবার দরজা নক করেছিল।কিন্তু আমি কোন ভাবেই তার কোন কথায় সায় দেইনি।রুম থেকে বের হয়ে দেখি আশেপাশের সব কিছু ভেংগে চুড়ে একাকার অবস্থায় পরে আছে ।আমি চারদিকে চোখ বুলিয়ে এক এক করে সব গোছাতে লাগলাম।ঘর গোছানো শেষ করে মাত্র গোসলে যাব তখনি আবার দরজায় নক পড়ল।আমি কাপা কাপা পা এগিয়ে গিয়ে লুকিং গ্লাসে চোখ রাখলাম।বাইরে কাউকেই দেখতে না পেয়ে ঘুরে আসতে যাবো ঠিক তখনি কেউ আবার নক করল ।এবারো লুকিং গ্লাসে কেউ দৃষ্টিগোচর হলো না ।ফিরে চলে আসব তখনি বাইরে থেকে আওয়াজ এল
-Please open the door.
আমি কাপা কাপা হাতে দরজা খুলতেই যেন চমকে গেলাম ।পরমুহুর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলে উঠলাম
-তুমি আবার কেন এসেছ এখানে?
আরদ্ধ আমার কোন কথার জবাব দিল না ।চোখ মুখ মুছে নিজেকে শান্ত করে বললাম -তুমি আবার এখানে কেন এসেছ? আরদ্ধ কোন কথা বলছে না। একদৃষ্টিতে চুপচাপ করে তাকিয়ে আছে সে আমার দিকে।আমি ওড়না দিয়ে নিজেকে ভালো করে ঢেকে নিলাম।আরদ্ধর কোন ভাবান্তর নেই।সে আমাকে পাশ ফিরিয়ে ভেতরে ঢুকল।আমি আরদ্ধের কাজ কারবার দেখে অবাক হচ্ছি।আমার বিষ্ময়ে আরেক মাত্রা যোগ করে টেবিলের ড্রয়ার খুলে একটা ফার্স্ট এইডের বক্স বের করল ।আমি মাসের পর মাস এই বাড়িতে থাকছি অথচ আমিই জানি না কোথায় কি আছে।আরদ্ধ এগিয়ে এসে আমার হাত ধরতে যাবে তখনি আমি এক কদম পিছিয়ে গিয়ে বললাম
-কেন এসেছ তুমি এখানে?কি চাও তুমি?
-………
-আরদ্ধ প্লিজ চলে যাও এখান থেকে ।
-………।
আমি যত কথাই বলি না কেন আরদ্ধ পুতুলের মত চুপচাপ শুনে যাচ্ছে।যেন আমাকে শুনেও শুনছে না সে।শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে সে।সাধারনত সে কষ্ট পেলে এইভাবে বাচ্চাদের মত ভর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো ।আমি পরম আদরে তার মাথাটা বুকে টেনে তার কপালে ঠোট ডুবিয়ে রাখতাম।খুব ইচ্ছা করছে আবার আগের মত আরদ্ধকে বুকে জড়িয়ে নিতে কিন্তু সব ইচ্ছা সব সময় পূরন হয় না ।আমি ধৈর্যের বাধ ভেংগে বলে উঠলাম
-আরদ্ধ প্লিজ চলে যাও তুমি এখান থেকে।আমি অনেক ভালো আছি ।প্লিজ আমি চাই না তোমার জন্যে আমার সংসারে কোন ঝামেলা হোক।তাছারা আমি এখন ম্যারিড ।অযথা আমার পিছনে সময় নষ্ট না করে ভালো কোন মেয়েকে খুজে নেও ।তোমার বাবার পছন্দের কাউকে বিয়ে করে নেও ।তুমি অনেক ভালো ছেলে ।আমার চাইতেও অনেক ভালো মেয়ে পাবে তুমি।
অনেক কষ্টে কান্না আটকে কথা গুলা বললাম আমি ।যেই আরদ্ধর পাশে সারাজীবন আমি নিজেকে ভেবে এসেছি ,যার হাতের আংগুলের ভাজে সব সময় আমার আংগুল খেলা করত ,যে ছেলের বুকে মাথা রেখে আমি হাজার রাত কাটাবার স্বপ্ন দেখেছি সেই ছেলের পাশে অন্য কাউকে চিন্তা করতেই যেন কেপে উঠলাম আমি।
আরদ্ধ আমার কথায় এগিয়ে এল।আমার কথার ফাকে কখন সে হেক্সিসলে তুলা ভিজিয়ে নিয়েছে খেয়াল করিনি।আরদ্ধ আমাকে এক হাতে জড়িয়ে আরেক হাতে আমার ওড়না সরিয়েগলার ভাজে লুকিয়ে থাকা ক্ষত মুছতেমুছতে বলল
-হ্যা হাজার জনকে পাবো ।চাইলেও যে কেউ আমার হয়ে যাবে।কিন্তু চাইলেও কেউ ইনায়াত হতে পারবেনা।কেউ পারবেনা ইনায়াতের মত করে আরদ্ধকে ভালোবসতে।পারবে না কেউ প্রতিটা নিশ্বাসে আরদ্ধকে মিশিয়ে নিতে ।কেউ কখনোই পারবে না নিজের সবটা উজার করে আরদ্ধকে ভালো বাসতে ।
আরদ্ধ লো ভয়েসে কথা গুলো বলছে আর খুব আলতো করে আমার ক্ষত গুলোতে ড্রেসিং করছে ।ড্রেসিং শেষে আমার বিউটি বোনে আলতো করে চুমু একে বলল
-আর আমি ম্যারিড ।তোমার মত একটা ওয়াইফ থাকতে কেন আমি অন্য কাউকে খুজতে যাব?………

চলবে

#জেদ(A Conditional Love Story)
#পার্ট৩৫
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
হা করে তাকিয়ে আছি আমি আরদ্ধর দিকে।দুইবার চোখের পলক ফেলে বলে উঠলাম -আরদ্ধ তোমার কি মাথা ঠিক আছে?আমি আরাজের ওয়াইফ। তোমার চোখের সামনে সমাজের আর দশ জন লোকের উপস্থিতিতে কালিমাকে সাক্ষি রেখে আমার আর আরাজের বিয়ে হয়েছে। তার পরেও তুমি কিভাবে এসব বলতে পারো?
-চোখে দেখা সব কিছু কি সব সময় সত্যি হয়?
আরদ্ধর কথা শুনে আমি থ বনে গেলাম ।কি যা তা বলছে এই ছেলে ।
-দেখো আরদ্ধ……
-এক বছর থেকে তো দেখেই আসছি।আমার বউ আমাকে ছেড়ে অন্য আরেকজনের সংসার করছে।কি ভেবেছ?শুধু তুমি আমাকে মিস করেছ?
প্রতিটা মুহুর্ত প্রতিটা সেকেন্ড আমি তোমার জন্যে সময় গুনেছি।প্রতিটা জায়গায় ছায়ার মত থেকেছি তোমার সাথে।Ina I love you more that anything is this entire world.তোমাকে পাওয়ার জন্যে আমি দুনিয়া এদিক ওদিক পর্যন্ত করে দিতে পারি।আমি জানি বিশ্বাস করবে না তুমি আমার কথা ।I have proof.
আরদ্ধ দুই হাতে আবদ্ধ করে রেখছে আমাকে ।আমার শরীর মিশে আছে তার বুকে।তার চোখে ভাসছে অগাধ ভালোবাসা আর কণ্ঠস্বরে অভিমানের তীব্রতা।
.
.
আরদ্ধর সাথে পার্কে বসে আছি আমি ।চারপাশের পরিবেশটা বেশ সুন্দর ।ছেলে বুড়ো নানা বয়সের মানুষের আনাগোনা চার দিকে।তার মধ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের পদচারন বেশি ।কেউ এসেছে জগিং করতে কেউ বা ডেটিং করতে।আরদ্ধ আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার চুলে নাক গুজে আছে।
-আরদ্ধ তুমি।
-শশশশশ……আমি অনেক দিন পর এই মোমেন্ট টা পেয়েছি ।আমি চাই না এটা কেউ নষ্ট করুক ।not even you .
নেশাভরা মাতাল কন্ঠে বলে উঠল আরদ্ধ ।আমি আরদ্ধর হাতদুটো আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।চারদিকে ঠান্ডা বাতাস বইসে ।এই শীতলতায় যেন আমার লাইফও জমে গেছে ।থমকে গেছে সব কিছু ।জানি না কিভাবে এই মায়াজাল থেকে বেরিয়ে আসব !শুধু এতটুকু জানি আরদ্ধকে ছাড়া ইনা অপূর্ন ।আরদ্ধ বিনা ইনার অস্তিত্ব শূন্য ।
সন্ধ্যা নামার কিছু আগে আরদ্ধ আমাকে বাসায় নামিয়েদিয়ে গেল ।কপালে আলতো করে একটা চুমু একে বলল
-Trust me ok?আমি সব কিছু ঠিক করে দেব।
আমার ইচ্ছে হচ্ছিল আরদ্ধকে চিতকার করে বলি
-বড্ড ভালোবাসি তোমাকে।অনেক বেশি বিশ্বাস তোমার প্রতি ।
কিন্তু আমার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হল না।ছলছল চোখে আরদ্ধর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ালাম।আরদ্ধ ঠোটে হাসি ধরে রাখলেও চোখ জুরে তার বিরহের ব্যাথা ।
.
.
আরাজ বাসায় ফিরল রাত ১১টায় ।আমি তখন সোফায় বসে ঝিমাচ্ছি ।আরাজ ঘরেঢুকেই একবার আমার দিকে শীতল চোখে তাকাল ।চেয়ারে বসে জুতা খুলতে খুলতে বলল
-নেক্সট উইকে আমার আর তোমার বাবা মা আমেরিকায় আসবে ।তারা আসলে আমরা আলাদা রুমে থাকতে পাব না।নাহলে তারা সন্দেহ করবে।তুমি কাল বা পরশুর মধ্যে তোমার জিনিস পাতি আমার ঘরে শিফট করে নেও ।উনারা টিকিট পেলেই যেকোণ দিন চলে আসতে পারেন ।
কথা গুলো বলে আরাজ নিজের রুমের দিকে পা বাড়াল ।রুমে ঢুকতে যাবে তখনি পেছন ফিরে বলল
-বাই দা ওয়ে বাসায় কি কেউ এসেছিল?
আরাজের কথা শুনে চমকে উঠলাম আমি ।তোতলাতে তোতলাতে বললাম
-ক…ক…কই?নাতো।কে…কে আসবে/।কেউ আসেনি
-না সেদিন টেবিলের উপর ফুলের বাকেট রাখা ছিল।আজকে বাসায় কেমন একটা অন্য রকম স্মেল পাচ্ছি ।ব্যাপার কি!
-বুকে টা?অইটা তুমি অফিস থেকে নিয়ে এসেছিলে।ড্রাংক ছিলে তাই হয়তো খেয়াল নেই তোমার ।আর আমি কোন স্মেল পাচ্ছি না রুমে ।অযথা সন্দেহ করার কিছু নেই ।
কথা গুলো বলেই আমি সেখান থেকে চলে এলাম ।পেছন ফিরলে হয়তো দেখতে পেতাম আরাজ তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
.
.
আব্বু আম্মু আমেরিকা তে আসবে এই নিউজ আরাজের আগে আরদ্ধর কাছ থেকে পেয়েছি আমি।আরেকটূ বুঝিয়ে বললে বলা যায় আরদ্ধই আমার আর আরাজের বাবা মাকে ডেকে আনছে ।কেন তার কারন আমার অজানা।আরদ্ধ আরাজের বাসায় ফোন করে জানিয়েছে আমাদের এখানে থাকতে অসুবিধা হচ্ছে।আমার বাসায় জানিয়েছে আমি অসুস্থ ।এই নিউজ শুনে দুই ফ্যামিলির মেম্বার রা স্বাভাবিকভাবেই প্যানিক এট্যাকে ভুগছে যেকোণ মুহুর্তে তারা উড়ে চলে আসতে পারে এখানে।
কাজ গুছিয়ে ঘুমাতে যাব তখনি ফোনে ছোট্ট একটা ম্যাসেজ এল
_-I am always with you .”Aroddho”
আমি ফোন হাতে নিয়ে চুপচাপ বসে পরলাম ব্যালকনিতে ।ঠিক কালকে পর্যন্তও আমার লাইফের মিনিং অন্য রকম ছিল,আজকে হঠাত করে আরদ্ধ এসে সব কিছু পালটে দিল।বাবার #জেদের সাথে মানিয়ে নিতে না নিতেই আরদ্ধ তার #জেদ পূরনে উঠে পরে লেগেছে।বাবার অবাধ্য হয়ে আমি তাকে কাদাতে পারব না ।একজন আমাকে জীবন দিয়েছে আরেক জন আমাকে বাচতে শিখিয়েছে।আমি চেয়েছিলাম একসাথে মানুষদুটোর হাত ধরে সব কিছু সুন্দরভাবে গুছিয়ে নিতে ।কিন্তু তাদের #জেদের রোষানলে পরে আমি দিন দিন পিষ্ট হয়ে যাচ্ছি।জানি না ঠিক কবে এসব থেকে মুক্তি পাব ।কবে সুর্যোদয় হবে নতুন সকালের?নাকি কখনো হবে না?প্রশ্ন থেকেই যায় অগনিত।শুধু বুক চিরে বেরিয়ে আসে চাপা আর্তনাদ আর গভীর দীর্ঘশ্বাস।……
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here