জেদ#পার্ট০২,০৩

#জেদ#পার্ট০২,০৩
(A Conditional LoveStory)
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
#পার্ট০২
.
আমার নামটা শুনে আরদ্ধ এক দফা চোখ তুলে তাকিয়ে আবার ফাইল দেখায় মন দিল।আমি স্লাইড ওপেন করে প্রেজেন্টেশন দেওয়া শুরু করলাম।প্রায় আধঘন্টা বক বক করার পর থামলাম আমি।আমার কথা শেষ হতেই সবাই হাত তালি দিয়ে উঠল আরদ্ধ বাদে।সে একনজরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি হালকা করে মাথা নুইয়ে দেখলাম কোথাও কোন ঝামেলা হয়েছে নাকি!
নাতো! সবকিছুই তো ঠিক আছে।তাহলে এইই ছেলে এইভাবে তাকিয়ে আছে কেন?
.
সবাই থামলে আরদ্ধ আমার দিকে তাকিয়ে কলম নাচাতে নাচাতে জিজ্ঞেস করে উঠল
– মিস ইনায়াত।Everything was good.কিন্তু মিস ইনায়াত আপনি কিভাবে৷ গ্যারান্টি দিবেন যে বায়ারসরা আপনার প্রোডাক্ট কিনবেন?
আরদ্ধের প্রশ্ন শুনে ছোট্ট একটা দম ফেললাম আমি।আরদ্ধের দিকে তাকিয়ে বললাম
-মি.রেওয়াত একজন সেলার হিসেবে কাজ করার আগে আমি নিজেও একজন বায়ার।আমাদের প্রোডাক্ট যদি বায়ার হিসেবে আমার চাহিদা গুলো ফিলাপ করতে পারে তাহলেই এটা মানসম্মত বলে গন্য হবে।তারপরেও ঠিক যেসব গুনাগুন থাকলে কোন প্রোডাক্ট আমাকে আকৃষ্ট করবে তার সবগুলোই আমাদের প্রোডাক্টে আছে।তাছাড়া সম্প্রতি একটা রিসার্চ থেকে জানা গেছে আমাদের প্রোডাক্ট বায়ারসের চাহিদা মেটাতে পুরোপুরিভাবে সক্ষম এবং বর্তমানে আমাদের প্রোডাক্টের কম্পিটিটিভ কোন প্রোডাক্ট বাজারে নেই।
এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে থামলাম আমি।আরদ্ধের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি সে এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।তবে চোখদুটো এখন আর যেন প্রানহীন নেই।অজানা ভাষায় কিছু একটা বলতে চাচ্ছে।কিন্তু এই দৃশ্য খুব বেশি সময় স্থায়ী হল না।মুহুর্তের মধ্যেই আরদ্ধ চোখ নামিয়ে ফাইল চেক করে বলল
– ডিল ফাইনাল।এগ্রিমেনট এর পেপার আমার অফিসে পাঠিয়ে দিবেন।আমরা আগামী পরশু দিন থেকে কাজ শুরু করব।
কথাটা বলা শেষ হতে না হতেই আরদ্ধ উঠে চলে গেল।তার পেছন পেছন দৌড়ে গেল তার পি এ।
আমরা সবাই হা করে তার চলে যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
.
.
গাড়ির ঝাকুনিতে ধ্যান ভাংল আমার।বাসার সামনের মোড়ে চলে এসেছি। ভাবনার জগতে হারিয়ে গিয়েছিলাম পুরোটা সময় জুড়ে।সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে অনেক আগেই। ঘড়িতে এখন রাত ৮টা বাজে।ডায়নিং রুম পেরিয়ে সিড়িতে উঠতে যাব তখনি পেছন থেকে বাবার গলা শুনতে পেলাম
-আজ এতো দেরী হল যে!
– কাজ বেশি ছিল আজকে বাবা।
কথাটা বলেই আমি অপেক্ষা না করে রুমে চলে এলাম।
ভাবছি আজকেই বাবাকে আরদ্ধের কথা বলে দেব।ছেলেটা পাগলের মত ভালোবাসে আমাকে।খুব বেশি সিরিয়াস না হলে ওভাবে বাচ্চাদের মত জড়িয়ে ধরে কাদত না সে।
.
.
ফ্রেশ হয়ে বসে কালকের অফিসের কিছু কাজ গোছাচ্ছি।তখন বাবা এলেন।
– কাজ করছিস?
-হ্যা বাবা। নেক্সট উইকের মধ্যে এই প্রেজেন্টেশন টা জমা দিতে হবে।তাই একটু কাজ করতে হচ্ছে।কিছু বলবে?
-আসলে তোর সাথে কিছু জরুরি কথা বলার ছিল। তুই কাজ শেষ করে তাড়াতাড়ি খেতে আয়। তখন বলব।
কথাটা বলে বাবা বের হয়ে চলে গেলেন।বাবার চোখ মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে নিশ্চয়ই কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।নাহলে বাবা এতটা সংকোচ করতেন না।
বাবার চিন্তা সাইডে সরিয়ে কাজে মন দিলাম।কাজ শেষ প্রায় এমন সময় আরদ্ধের ছোট করে টেক্সট এল।
-অনেক কাজ হয়েছে।যাও গিয়ে খেয়ে নেও।
ম্যাসেজটা পরতেই সব চিন্তা নিমিষেই দূর হয়ে গেল।ঠোটের কোনে ফুটে উঠল ছোট একটা হাসি।এই ছেলেটা আসলেই পাগল।
.
.
ল্যাপটপ অফ করে সবকিছু গুছিয়ে খেতে চলে গেলাম।অন্যদিন আমার আসতে দেরী হলে বাবা খাওয়া শুরু করে দেন।কিন্তু আজ গিয়ে দিয়ে উনি ভাতের প্লেট হাতে আমার জন্যে বসে আছেন।আমাকে দেখে বলে উঠলেন
-আয় বস। অনেকক্ষন ধরে প্লেট নিয়ে বসে আছি।খেয়ে নেই। খুদা পেয়েছে খুব।
অনেকক্ষন যাবত বাবা উষ খুশ করছেন। কিছু একটা বলার চেস্টা করছেন কিন্তু বলতে পারছেন না।
-কিছু বলবে বাবা?
– হ্যা আসলে অনেকদিন ধরেই তোকে একটা কথা বলব বলব ভাবছি।কিন্তু তুই ব্যস্ত তাই আর বলা হয় নি।
– কি কথা?
-তোর মনে আছে ইমতিয়াজ আংকেলের কথা।আমরা একসাথে জব করতাম।
-হ্যা মনে আছে। কি হয়েছে উনার?
-উনার ছেলে কয়েকদিন আগে আমেরিকা থেকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে এসেছে।ভালো বেতনের জব ও পেয়েছে।দেশে ফিরেছে কয়েকদিনের ছুটিতে।উনার ছেলের জন্যে পাত্রী খুজছে।বিয়ে করেই আবার আমেরিকাতে ফিরবে।
আমি বাবার কথায় মন না দিয়ে খেতে খেতে বললাম
– তা ভালো তো।পাত্রী খুজুক।বিয়ে ঠিক করুক।আমি অফিস ছুটি নিব নে দরকার হলে।
-পাত্রী ওদের পছন্দই আছে।
-তাই নাকি? তাহলে তো বেশ ভালো।একেবারে বিয়ের ডেট ফিক্স করে আমাদেরকে জানাবেন।আমরা যথা সময়ে উপস্থিত হয়ে যাব নে গিফট নিয়ে।
-উনারা পাত্রী হিসেবে তোকে পছন্দ করেছেন।
কথাটা শুনতে না শুনতেই বিষম খেলাম আমি।কোন রকমে পানি গিলে শান্ত হলাম।
নিজেকে সামলে বললাম
– উনারা পছন্দ করতেই পারেন।তার মানে তো এই না যে আমাকেও পছন্দ করতে হবে।
– তুই একবার আজারকে দেখ তো। তোরও পছন্দ হয়ে যাবে।
-পছন্দ হতেই পারে তাই বলে যাকে পছন্দ হবে তাকেই তো আর লাইফ পার্টনার বানানো যায় না বাবা।আর তাছাড়া আমার এখন বিয়ে করার ইচ্ছে আর সময় কোনটাই নেই।হাতে কাজ পড়ে আছে অনেক।আমি যাই।
এক নিশ্বাসে শেষ কথাগুলো বলে উঠে রুমে চলে আসলাম আমি।
.
.

চোখ ফেটে কান্না আসছে।নিজেকে শান্তনা দিচ্ছি আমি।ওয়াশরুমে গিয়ে চোখ মুখে হালকা পানি দিলাম।
ব্যালকনির খোলা বাতাসে বসতে না বসতেই ফোনটা বেজে উঠল।আরদ্ধ কল দিয়েছে।নোটিফিকেশনে ওর ৫টা মিসড কল ভেসে আছে।কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে উঠল
-আজকে কি বাসায় স্পেশাল কিছু রান্না হয়েছে নাকি!
আরদ্ধের কথা শুনে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম
-কেন?
-ম্যাডাম সময় দেখেছেন?ঘড়িতে বাজে রাত ১১ঃ৩০ টা।সেই ১০ঃ৪০ এ আপনি খেতে গিয়েছেন।তারপর থেকে আপনার কোন খোজই নেই।মশার কামড় খেতে খেতে তো আমার অবস্থা কাহিল!তোমার বাসার সামনে এত মশা কেন বলতো!?
আরদ্ধের কথা শুনে আমি হা হয়ে গেলাম।বলে কি এই ছেলে!
-আমার বাসার সামনে মশা মানে?কোথায় তুমি?
-ব্যালকনিতে আসো!
বলেই ফোনটা কেটে দিল আরদ্ধ।আমি গলায় ওড়না পেচিয়ে এক দৌড়ে ব্যালকনিতে গিয়ে পৌছালাম।আরদ্ধ বাসার সামনে দাড়িয়ে আছে গাড়িতে হেলান দিয়ে।পরনে একটা কালো শার্ট আর কালো জিন্স।অন্ধকারের রাজপুত্র যেন!
-তুমি এত রাতে এখানে কি করছ?
-তোমাকে দেখতে ইচ্ছা হচ্ছিল তাই চলে এলাম।
-ভিডিও কল দিলেও পারতে।
-না সামনাসামনি দেখতে ইচ্ছ হচ্ছিল তাই এলাম।
বেশ দম নিয়ে গম্ভীরভাবে কথাটা বলল আরদ্ধ।
– আরদ্ধ তুমি জানো তুমি সবার কাছে মিথ্যে বলতে পারলেও আমার কাছে পারবে না। কি হয়েছে বলো!
– কিছু না বাবা বাসায় পার্টি এরেঞ্জ করেছে।নানান রঙের মানুষ নানান পদের ড্রিংক্স,হরেক রকমের কাজ কারবার।তুমি তো জানোই আমার ভীড় পছন্দ না।
-ও আচ্ছা তাহলে এই কাহিনি! এই জন্যেই তাহলে এত সেজেগুজে এসেছ! লুকিং হট হাহ!
-টিজ করছ?
– করতেই পারি।আমার বয়ফ্রেন্ড। কার কি!?
– আচ্ছা তাই না?
…………
এভাবে অনেক রাত কেটে গিয়েছে আরদ্ধ আর আমার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে।জানা অজানা অনেক রকম রংগিন গল্পের ভীড়ে।
ঘুম ভাংল মোবাইলের এলার্মে।সাড়ে সাতটা বাজে।নয়টায় অফিস।
তাড়াহুড়ো করে উঠে রেডি হয়ে নিলাম। অফিসে ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে। আজ তাড়াতাড়ি পৌছাতে হবে।সারারাত ব্যালকনিতে বসে থাকার কারনে ঠান্ডা লেগেছে বেশ।সর্দি জমার কারনে নাকটাকে একটা ভারী মাংস পিন্ড মনে হচ্ছে।
রেডি হয়ে রুম থেকে বের হতেই আমি অবাক হয়ে গেলাম।
একগাদা মেহমান বসে আছেন বাসার ড্রয়িংরুমে।আমাকে দেখতেই বাবা হাসিমুখে আমাকে টেনে নিয়ে গিয়ে তার পাশে বসালেন।
-ইনায়াত তোকে বলেছিলাম না কাল রাতে আরাজের কথা! ওই আরাজ।আর আরাজ বাবা এই আমার মেয়ে ইনায়াত।
আমি চোখ তুলে তাকাতেই দেখি আজার আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।আমি প্রতিউত্তরে হালকা হাসি ফিরিয়ে দিলাম।এদিকে বাবা আমাকে বসিয়ে রেখে আরামে গল্প চালিয়ে যাচ্ছেন।কিন্তু ঘড়ীর কাটা থেমে নেই।অফিসে দেরী হয়ে যাচ্ছে।আজকে যেভাবেই হোক আমাকে প্রোজেক্টের কাজ রেডি করতে হবে।এটা আমার ড্রীম প্রোজেক্ট।এই মুহুর্তে বাবাকে কোন কথা বলে লাভ হবে না জানি ।তাই ইমতিয়াজ আংকেলকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলাম
-আংকেল সরি বাট আমাকে যেতে হবে।আমার আফিসে একটা জরুরি কাজ আছে।দেরী হয়ে যাচ্ছে।Hope you don’t mind.
ইমতিয়াজ আংকেল এর চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছে উনি এরকম কিছুর জন্যে মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না।কথাটা বলে আমি উন্নার জবাবের অপেক্ষা না করেই পা বাড়ালাম।
-ইনা এভাবে হুট করে চলে যাওয়াটা বেয়াদবি।
পেছন থেকে বাবা ভাবগম্ভীর গলায় বলে উঠলেন।আমি বাবার কথা উপেক্ষা করে চলে এলাম………

চলবে

#জেদ(A Conditional LoveStory)
#পার্ট০৩
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
বেশ কিছু ক্ষন যাবত হাটছি।কোন অটো বা রিকশা কিছুই পাচ্ছি না।সামনে এগিয়ে গলির মুখে এগোতেই আরদ্ধের গাড়ী চোখে পড়ল।আমি ভ্রু কুচকে একবার হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সামনে তাকালাম।গাড়ীতে আরদ্ধই বসে আছে।আমি এগিয়ে গিয়ে চুপচাপ আরদ্ধের সাথে ব্যাক সিটে উঠে পড়লাম।আমাকে দেখেই আরদ্ধ বলে উঠল
-কি ব্যাপার দেরী করলে যে!তুমি তো বলেছিলে আজ তাড়াতাড়ি অফিসে যাবে!
-আরে বোলানা সকালে……
কথাটা বলতে গিয়েও থেমে গেলাম আমি। আরদ্ধকে এখনে এসব বলা ঠিক হবে না।ছেলেটা এম্নিতেই টেনশনে আছে।আরদ্ধ ফোন থেকে মাথা তুলে বলল
-সকালে কি?
-সকালে ঘুম ভাংগে নি ।আজকে এলার্মও বাজে নি।
আরদ্ধ ফোনটা পকেটে গুজে আমার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ল।আমার হাত দুটো টেনে নিয়ে ওর চুলে রাখল।আমি হালকা হেসে ওর মাথায় হাত বুলাতে লাগলাম।
আমি জানি আরদ্ধ সারারাত ঘুমায় নি।ভোর চারটায় বাড়ী পৌছেই সে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছে।ঠিক সাড়ে সাতটার দিকে রেডি হয়ে আটটার মধ্যেই বাসার সামনে এসে পৌছেছে।এখন ওর প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে।আমি হালকা ঝুকে আরদ্ধের কপালে গাঢ় করে একটা চুমু খেলাম।
ছেলেটা কতই না সুন্দর করে প্রোফেশনাল লাইফ পারসোনাল লাইফ সামলাচ্ছে!অথচ এই আরদ্ধ আগে কতই না আগোছালো ছিল!আমার আজও মনে আছে সি দিনের কথা।
.
.
রেওয়াত গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির সাথে ডিল ফাইনাল হওয়ার পর আমার জবটাও ফাইনাল হয়ে যায় ।শুধু তাই নয় ফার্স্ট দিনেই প্রমোশন পেয়ে যাই আমি। কারন আরদ্ধ সহজে কোন কোম্পানির সাথে ডিল সাইন করত না।কাজের মধ্যে সামান্যতম ভুলও তার পছন্দ নয়।ম্যানেজার অসুস্থ হওয়ায় ব্যাপারটাতে যেন আরও ভাটা পড়ে যায়।সবাই ধরেই নিয়েছিল যে এই ডিলটা হবে না।কিন্তু কাউকে তো ফেস করতে হবে! সে দায়টাই বা কে নেবে!তাই প্রেজেন্টেশনের দায়িত্ব আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল।নতুন ক্যান্ডিডেট হওয়ায় আমার উপর তেমন কারও কোন প্রত্যাশা ছিল না।দায়মুক্ত হওয়ার ব্যাপারটাও তেমন সহজ হয়েগিয়েছিল।
একটা ফাইলের কাজে সেদিন আমাকে আরদ্ধের অফিসে যেতে হয়েছিল।আমি যাওয়ার মাত্র ১০ মিনিট আগেই আরদ্ধ একটা ইম্পরটয়ান্ট মিটীং এ চলে যায়।মিটিং কখন শেষ হবে সেটা অজানা।এদিকে ফাইলের কাজটাও ইম্পরট্যান্ট ।ফেলে রেখে যেতে পারছি না।এদিকে আরদ্ধের স্ট্রিক্ট ইন্সট্রাকশন তার পারমিশন ছাড়া যেন কেউ রুমে না ঢুকে।তাই অগ্যতা বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম আরদ্ধের রুমের সামনে।আরদ্ধের রুমটা ফ্লোরের ঠিক পশ্চিম দিকে।একটা গ্লাস পার্টিশন দিয়ে পুরো রুমটা ফ্লোর থেকে আলাদা করা। আরদ্ধের কেবিনটাও ব্লার গ্লাস ঘেরা ।বাইরে থেকে ভেতরটা দেখা যাচ্ছে না।রুমের ডান সাইডে ছোট একটা জানালা আছে ।তার এক পাশে ছোট একটা গাঢ় সবুক রঙের সাইকাস গাছ জায়গাটার শোভা বর্ধন করছে।আমি জানালাটার কাছে এগিয়ে গিয়ে আনমনে গুনগুনিয়ে উঠলাম
যদি মন কাঁদে
তুমি চলে এসো, চলে এসো
এক বরষায়…
যদি মন কাঁদে
তুমি চলে এসো, চলে এসো
এক বরষায়…
এসো ঝর ঝর বৃষ্টিতে
জল ভরা দৃষ্টিতে
এসো কোমল শ্যামল ছায় ।
যদিও তখন আকাশ থাকবে বৈরি
কদম গুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরি ।।
উতলা আকাশ মেঘে মেঘে হবে কালো
ছলকে ছলকে নাচিবে বিজলী আরো
তুমি চলে এসো, চলে এসো
এক বরষায়…
যদিও তখন আকাশ থাকবে বৈরি
কদম গুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরি ।।
উতলা আকাশ মেঘে মেঘে হবে কালো
ছলকে ছলকে নাচিবে বিজলী আরো
তুমি চলে এসো, চলে এসো
এক বরষায়…
নামিবে আঁধার বেলা ফুরাবার ক্ষণে
মেঘ মাল্লা বৃষ্টিরও মনে মনে ।।
কদম গুচ্ছ খোঁপায়ে জড়ায়ে দিয়ে
জল ভরা মাঠে নাচিব তোমায় নিয়ে
তুমি চলে এসো, চলে এসো

এক ধ্যানে গুনগুন করছিলাম হঠাত পেছন থেকে কারও আওয়াজ শুনে আতকে উঠলাম আমি।পেছনে তাকিয়ে দেখি আরদ্ধ পকেটে হাত দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে।আরদ্ধ কিছু বলার আগেই আমি কাপা কাপা গলায় বলে উঠলাম
-মি. রেওয়াত।একটা ইম্পরট্যান্ট ফাইলে আপনার সাইন লাগতো।
-আমার কেবিনে আসুন।
বলেই আরদ্ধ রুমে গিয়ে ঢুকল।আমি চললাম তার পিছু পিছু।
.
.
আরদ্ধের রুমে ঢুকতেই কড়া একটা স্মেল নাকে এসে লাগল।প্রথমে পারফিউম ভাবলেও ভালোভাবে তাকাতেই বুঝতে পেলাম এটা আসলে রুম ফ্রেশনার।এত কড়া একটা গন্ধের মধ্যে মানুষটা সারাদিন কীভাবে বসে থাকে কে জানে!
আরদ্ধ চেয়ারে গিয়ে বসতেই আমি ফাইলটা তার দিকে এগিয়ে দিলাম।আরদ্ধ ফাইল খুলে চেক করতে লাগল।আমি সেই ফাকে চারদিকে চোখ বুলাচ্ছি।রুমের দেওয়ালগুলো গাঢ় রংগে রাঙানো।অনেকটা নীলের মধ্যে কালো রঙ মেশানো।প্রথম দেখায় যে কেউ নীল আর কালোর মাঝে দিধা দ্বন্দে পরে যাবে।চারদিকে অনেকগুলো ফাইল ছড়ানো।যথাসম্ভব সবকিছু গুছিয়ে রাখার চেস্টা করা হয়েছে।কিন্তু রুমটা পরিপাটী মনে হলেও কেমন যেন অগোছালো।
-মিস ইনা!
আরদ্ধের কথায় আমি তার দিকে ফিরে তাকালাম।
-ফাইলে বেশ কিছু ভুল আছে।আমি সেগুলো রেড মার্ক করে দিয়েছি।দুই ঘন্টার মধ্যেসব ঠিক করে আনেন।কালকে অফ ডে ।ফাইলটা যেভাবেই ওকে আজকেই কমপ্লিট করতে হবে।
শীতল যান্ত্রিক কন্ঠে কথাগুলো বলে ফাইলটা আমার দিকে এগিয়ে দিল আরদ্ধ।
আমি ফাইলটা হাতে নিয়ে চিন্তায় পরে গেলাম।ঘড়িতে এখন দুপুর দুইটা বাজে।অফিসে যেতে যেতেই তিনটা পার হয়ে যাবে।ফাইল ঠিক করে আবার নিয়ে এসে ফাইনাল করা কোনভাবেই সম্ভব না।হঠাত করে আরদ্ধ বলে উঠল
-আপনি চাইলে আমার কেবিনে বসে ঠিক করতে পারেন।অফিস গিয়ে ফিরে আসার মত টাইম নেই আপনার হাতে।You can sit and stay here if you want.Rest is up to you.
কথাটা বলেই আরদ্ধ আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ল নিজ কাজে।
আমি ছোট্ট একটা হাসি ফেরত দিয়ে আরদ্ধের সামনের চেয়ারটাতে বসে পড়লাম।
ভাবতেই অবাক লাগে যে আরদ্ধের রুমে ঢুকার জন্যে একদিন ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করে ছিলাম সেই আরদ্ধের আজ সবকিছু তে আমার নির্দ্বিধায় যাতায়াত চলে।
গাড়ির ঝাকুনিতে ঘুম ভাঙ্গল আমার ।নিজেকে আবিষ্কার করলাম আরদ্ধের বুকে।ছেলেটা বাম হাতে শক্ত করে ধরে আছে আমাকে।আমি আগ বাড়িয়ে আলতো করে তার ঠোটের কোনে ঠোট ছুয়ে দিলাম।আরদ্ধ আমার কপালে একটা গাঢ় চুমু একে দিল………
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here