#প্রতিহিংসার অনুরক্তি-০১
লেখিকা: সালসাবিল সারা
খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গেলো জোহানের।কেমন এক উদ্ভট স্বপ্ন দেখেছে সে।সেই স্বপ্নের জের ধরে ঘুম ছুটে গেলো তার।এমন স্বপ্ন বিগত কয়েক মাস ধরেই তার ঘুমকে হারাম করেছে।না পারে সে রাতে ঘুমোতে আর না পারে সে দিনের বেলায় ঘুমোতে।এমনটা তার সাথে আগে কখনোই হয়নি।একটা রুটিন মাফিক জীবন ছিলো তার।কিন্তু,কিছু মাস পূর্বে নূরকে দেখার পর থেকেই এমন অস্থিরতা আর নূরকে নিয়ে নানান মনগড়া স্বপ্ন দেখে আসছে সে। নূর তার বাবার বন্ধুর মেয়ে। নূর বর্তমানে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ালেখা করছে।নূরের মতো এমন কিশোরী মেয়েকে দেখার পর থেকে জোহানের এমন কি হলো যার কারণে তার দিন রাতের ঘুম গায়েব হয়েছে,এটাই জোহান বুঝতে পারে না।তবে নূরের জন্যে এমন এক অনুভূতি অনুভব করে সে,যেটা একেবারেই তার কাছে নতুন।নূরকে একনজর দেখার জন্যে সবসময় ব্যাকুল হয়ে থাকে তার মনটা।নূরকে দেখলেও তার বুকে অস্থিরতা কাজ করে আবার না দেখলেও অস্থিরতায় ভোগে সে।
কয়েকমাস আগেই জোহান চট্টগ্রামে এসেছে ঢাকা থেকে।এইখানে আসার পর তার বাবার সাথে সে তার বাবার বন্ধু জনাব জহির উল্লাহ এর বাসায় যায়।তখন জোহান শুনেছিলো,তার ছোটবেলায় তারা প্রায় চট্টগ্রামে আসতো এমনকি নূরের পরিবারের সবাই প্রায়শই ঢাকায় ঘুরতে যেতো। জোহানেরও ছোট কালের কিছু স্মৃতি ভাসমান মনে আছে।তখন নূর নামক কারো অস্তিত্ব ছিলো না এই ধরণীতে। পরে কাজের চাপ বেড়ে যাওয়ায় দুই পরিবারের মাঝে আসা যাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।তবে চট্টগ্রামে আসার পর থেকে দুই পরিবারের মাঝে আসা যাওয়া এবং আন্তরিকতা দেখে জোহান বুঝতে পারলো এই দুই পরিবারের মাঝে রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও এই দুই পরিবারের মাঝে পরম ভালোবাসাময় একটা সম্পর্ক আছে।এতো বছর দেখা না হওয়ার স্বাদ এই দুই পরিবার প্রায়শই একে অপরের বাসায় আসা যাওয়া করার মাধ্যমে মিটিয়ে নেয় যখনই সুযোগ পায় তখন।নূরকে এই নিয়ে অনেকবার দেখেছে জোহান।নূরের চেহারা জোহানের চোখে ভেসে আসতেই জোহানের গাল গরম হয়ে এলো।অনেকবার নূরকে দেখলেও সেই প্রথম দিনের জোহানকে নূরের মুখ ভেংচি দেওয়ার দৃশ্যটাই যেনো আটকে আছে জোহানের চক্ষু জুড়ে।জোহান চট্টগ্রাম বিশ্বিদ্যালয়ের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র।তার এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে তার পরিবার এইখানে পাড়ি জমালো।নূরকে সে প্রথম যেদিন দেখে সেদিন অকারণেই নূর ভেংচি কাটে জোহানকে।প্রথমে জোহান ভেবেছিল নূরের মানসিক সমস্যা আছে।কিন্তু পরে সে বুঝতে পারলো নূর মেয়েটা অতি চঞ্চল।সেই চঞ্চল মেয়ের চঞ্চলতায় আটকে গিয়েছে জোহান।সেই প্রথম দিনের গোলাপী রঙের সুতির কামিজ পড়া নূরের পবিত্র মুখ আর তার ডাগর ডাগর চোখের চাহনি যেনো জোরপূর্বক স্থান দখল করে নিয়েছে জোহানের শান্ত মনে। যা বর্তমানে জোহানের বুককে অশান্ত করে রেখেছে।নূর জোহানদের বাসায় আসলে,নূরের চঞ্চলতা সারা ঘরকে মাতিয়ে রাখে।
বিছনায় এক হাত ঠেকিয়ে জোহান বসে রইলো।রুমে এসি চললেও সে রীতিমত ঘামছে,নিজের গালের গরম ভাব উপলব্ধি করতে পারছে।ভোরের পাখির কিচিরমিচির শব্দ কানে আসতেই জোহান ঘড়ির দিকে তাকালো।ভার্সিটির আরো অনেক সময় বাকি আছে দেখে জোহান আবারও চুপচাপ শুয়ে পড়লো। ঘাড়ের নিচে এক হাত দিয়ে চোখ বুজলো জোহান।বিড়বিড় করে সে বলতে লাগলো,
–“বড় মেয়েদের পাত্তা দিই না।আর এই পুচকি নুড়ি পাথরটা আমায় ঘুমোতে দেয় না।অসহ্যকর,জোহান।”
জোরপূর্বক জোহান ঘুমানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
—————
জোহান ভাবলো সে মাত্রই আধা ঘণ্টা ঘুমিয়েছে কিন্তু তার মায়ের চিৎকারে সে বুঝতে পারলো তার ঘুম ভাঙতে একটু বেশি দেরী হয়ে গেলো। ঠিকই তাই হয়েছে।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে জোহান এর চোখ কপালে উঠলো।ভার্সিটিতে যাওয়ার আগে জোহান এক পলকের জন্যে হলেও নূরকে দেখে তার স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে।জোহান নিজেও জানে না কেনো সে এমনটা করে।তবে,নূরকে দেখার পর থেকে জোহানের দিনকাল খুবই ভালো যাচ্ছে।যদিও বুকে প্রচুর অস্থিরতা হয়,তারপরও নূরকে দেখতে ব্যাপক ভালো লাগে জোহানের।কোনমতে নাস্তা সেরে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বাইকে উঠে বসলো জোহান।পেছনে জোহানের মা দৌড়িয়ে দোয়া কালাম পড়ে যাচ্ছে ছেলের সুরক্ষার জন্যে।একমাত্র ছেলে জোহান,তাই আনোয়ারার চিন্তা একটু বেশি এই ছেলে নিয়ে।
জোহান স্কুলের সামনে বাইকে বসে আছে।বুকটা ধুকধুক করছে তার।তার মনের ধারণা আজ সে নূরকে দেখতে পাবে না।কিন্তু তার মনের ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিয়ে নূর টেম্পু থেকে নেমে হেঁটে যাচ্ছে তার দুজন বন্ধুবীর সাথে। প্রাণটা যেনো জুড়িয়ে গেলো জোহানের। জোহান তার দুই ঠোঁটের অজানা হাসিটি উপলব্ধি করতে পারছে। কেনো এই মেয়েকে দেখলে জোহানের এতো প্রশান্তি আসে মনে এটা জোহান বুঝে না।নাকি
,বুঝেও না বুঝার ভান করে থাকে সে!তবে আচমকা কপাল কুঁচকে ফেললো জোহান। নূর স্কুলের গেইটে প্রবেশের পূর্বেই তার এক বান্ধবী তার কানে কিছু ফিসফিস করে বললে,তারা স্কুলের গেইটে না ঢুকে অন্য দিকে চলে যাচ্ছে।এই দৃশ্য দেখে জোহান মনে প্রশ্ন নিয়ে বাইক ধীর গতিতে সেদিকে চালিয়ে যাচ্ছে। দূর থেকে ঘটনা আন্দাজ করার চেষ্টা করছে জোহান। কিছু স্কুলের ছেলে সামনে দাঁড়ালো নূরের।তার এক বান্ধবী নূরের স্কার্ফ চেপে ধরলেও নূরের কানে ফিসফিস করে কথা বলা মেয়েটা মুখ চেপে হাসছে।ঘটনা কি,জানেনা জোহান।তাও সে কিছু একটা করার মনোভাব মনে মনে তৈরি করে নিয়েছে।সেখানের উপস্থিত এক ছেলে হাত ধরলো নূরের। নূর ভয়ে চমকে উঠলো।তার মুখ যেনো কে বন্ধ করে দিয়েছে।এমন অচেনা ছেলের স্পর্শে নূরের মুখ তালাবদ্ধ হয়ে গেল।আশেপাশে অনেক মানুষ থাকলেও তারা সেদিকে এগিয়ে না গিয়ে মজা নিচ্ছে এই দৃশ্যের।জোহানের মাথায় রক্ত চড়ে গেল।সে হেলমেট পড়া অবস্থায় এক দৌড়ে নূরের কাছে গিয়ে সেই ছেলের হাত ছুটিয়ে দিলো।নূরকে আড়াল করে সেই ছেলের কলার চেপে ধরে জোহান চিল্লিয়ে বললো,
–“স্কুলে না গিয়ে এইখানে রঙ্গলীলা চালানোর কারণ কি?”
ছেলেটা ভয় পেলো।জোহানের গম্ভীর কণ্ঠ এমন এক স্কুল পড়ুয়া ছেলের ভয় পাওয়ার জন্যে যথেষ্ট।ছেলেটা আমতা আমতা করে বলে উঠলো,
–“এই কিউট মেয়েটাকে আমার ভালো লাগে।”
ঠাস করে জোহান এক চড় লাগিয়ে দিলো ছেলেটাকে।এমন হওয়াতে মানুষের জটলা ছুটে গেলো।জোহানের এমন রাগ কখনোই হয়নি।অতিরিক্ত রাগ লাগছে তার।নূরকে ছেলেটা পছন্দ করে এটা যেনো জোহানের সহ্য হচ্ছে না।এইদিকে নূর সুযোগ বুঝে পালাতে গেলে জোহান নূরকে ধমক দিয়ে বললো,
–“স্টপ,নুড়ি পাথর।”
নূরের পা থামলো।নুড়ি পাথর ডাক শুনে সে বুঝলো এই ছেলে তার রগচটা জোহান ভাই।হেলমেটের ডিজাইন দেখে এখন নূর নিশ্চিত হলো সত্যিই এই ছেলে জোহান। নূরের এইবার ভয় লাগতে শুরু করলো।কারণ,জোহান খুবই কর্কশ ভাষার একজন মানুষ।নূর চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইলো।
–“কোন ক্লাসে পড়িস?”
জোহানের কথায় ছেলেটা গালে হাত দিয়ে বললো,
–“ক্লাস টেন।”
–“সামনে বোর্ড পরীক্ষা।এখন না পড়ে কি প্রেম করবি?শালা তোদের যদি দেখি আর এই মেয়ের দিকে তাকাতে তাহলে তোদের চোখ দিয়ে আমি মার্বেল বানাবো। আজকে থেকে তোদের ছোট বোন নূর।তোরা এই ছোট বোনকে তোদের মতো বাকি শয়তান ছেলেদের থেকে দূরে রাখবি।এইবার তাকে সরি বল কান ধরে।”
জোহানের হুমকি শুনে তিনজন ছেলেই কান ধরে সরি বললো নূরকে।হেলমেট খুলে জোহান চোখে ইশারা করলে ছেলে তিনজন চলে যেতে লাগলো।এইবার নূরের দিকে জোহান ফিরতেই নূর চোখ বুজে এক দমে জোহানকে বলতে লাগলো,
–“আমি কিছু করিনি।আমার ফ্রেন্ড সাবিয়া বলেছে এইখানে তার জরুরি কাজ আছে।আর এসে দেখি এই কাহিনী।আমি তো ছোট তাই বুঝতে পারিনি।প্লিজ আমাকে বকবে না।আমার ফ্রেন্ডের সামনে আমাকে বকা দিয়ে আমার মান সম্মানকে কবর দিবে না প্লিজ।”
জোহান ঐ মেয়ের দিকে তাকিয়ে তাকে হুমকি দিয়ে বলে উঠলো,
–“এখনো বত্রিশটা দাঁত উঠেনি,আর এই মেয়ে ফ্রেন্ডকে উৎসাহ দিচ্ছে প্রেম করতে?হেড স্যারকে বলে স্কুল থেকেই একেবারে বের করিয়ে দিবো।এখনো বুদ্ধি হয়নি ভালো করে আর সে এসেছে বান্ধুবির প্রেম সাজাতে।যাও স্কুলে!”
সাবিয়া জোহানকে দেখে গলে গেলেও জোহানের ব্যবহার দেখে তার মনকে শক্ত করে তার সাথীকে নিয়ে স্কুলের দিকে হাঁটতে লাগলো।
নূর মাথা নিচু করে রেখেছে।জোহান নূরের কান টেনে ধরে ধরলো,
–“স্কুলে এইসব চলে?তোমার বাবা জানে এইসব? শুধু এই রোদে পোড়া ফর্সা মুখ নিয়ে ছেলে পটালে হবে?পড়ালেখা করা লাগবে না?এখন থেকে এইসব মেয়ের সাথে যেনো আর হাঁটতে না দেখি।আচ্ছা এই ব্যাপারে আমি আংকেলের সাথে কথা বলবো।আঙ্কেল কতো কষ্ট করে তোমায় পড়ালেখা করাচ্ছে এই ভালো স্কুলে।আর তুমি কিনা!”
নূরের চঞ্চল মনটা একেবারে শান্ত হয়ে গেলো। আসলেই তো নূর পড়ালেখায় একেবারে অমনোযোগী।এই মেয়েদের সাথে হেঁটে দুলেই তার স্কুল কাটিয়ে দেয় সে।অথচ তার বাবা তার জন্যে কতোই না কষ্ট করে।তার মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েকে তার বাবা এতো ভালো স্কুলে পড়াচ্ছে,এটাই নূরের সোভাগ্য বলে মনে করছে।নূরের চোখে অশ্রু ভিড় করলো,সেই অশ্রুসিক্ত নয়নে সে জোহানের দিকে তাকাতেই জোহানের বুকে মোচড় দিলো।
–“আমি আর এইসব মেয়ের সাথে কথা বলবো না।আমি ভালো হয়ে যাবো।ভালো মতো পড়ালেখা করবো।আমি যায় জোহান ভাই।ঘণ্টার শব্দ শুনতে পাচ্ছি।”
নূর কথাটা বলে তার লম্বা বেণী পেছন থেকে সামনে টেনে নিয়ে হাঁটতে লাগলো স্কুলের দিকে।
জোহান স্তব্দ হয়ে আছে।সে শুধুমাত্র নূরকে একটু বাস্তবতা বুঝাতে চেয়েছিল।কিন্তু তার চিন্তা নূরের কান্নার কারণ হবে এটা সে ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি।নূরের অশ্রুসিক্ত চেহারা দেখে জোহান তার মনে নূরের জন্যে সৃষ্ট অনুভূতির একটা নাম খুঁজে পাচ্ছে।
নূর কিছু পথ গিয়ে আবারও থামলো।পেছন ফিরে সে দেখলো,জোহান এক হাতে হেলমেট নিয়ে তার দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নূর দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারও হাঁটতে লাগলো।জোহানকে সে চিনে কিছু মাস যাবত।জোহানের বাবা মাকে সে আপন করে নিতে পারলেও এই জোহানকে নূরের ভয় লাগে প্রচুর।নূরের দিকে সবসময় কেমন যেনো ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে সে।তাছাড়া নূর তাদের বাসায় গেলে সবসময় জোহান আর তার বাবার চিল্লাচিল্লির সম্মুখীন হয়। জোহানের মা আনোয়ারা থেকে উনার ছেলের রগচটা স্বভাবের নানান কাহিনী শুনে এসেছে নূর।তাই সে যেচে কখনো জোহানের সাথে আলাপ করেনি।মাঝে মাঝে জোহান নিজ থেকে কথা বললে তখন নূর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না। গড়গড় করে কথায় লেগে পড়ে।কিন্তু জোহানের তার দিকে নিষ্পলক চাহনী দেখে নূর নিজে চুপ করে যায়।তবে মনে মনে নূর জোহানের কথা বলার ধরণ,তার চাহনী,কথা বলার সময় তার ভোকাল কর্ডের নড়াচড়া বেশ উপভোগ করে।ছোট নূর তার এই মুহূর্তগুলোর উপভোগ করার কারণকে আজ পর্যন্ত কোনো নাম দিতে পারলো না।
___________________
ভার্সিটির ক্লাসে তেমন মন দিতে পারলো না জোহান।নূরের কান্নারত সেই চেহারা জোহানকে স্থির হতে দিচ্ছে না।ক্লাস শেষে তার বন্ধুদের সাথে ভার্সিটিতে অবস্থানরত ছোট একটা হোটেলে বসে রইলো সে।তার হাতের জ্বলন্ত সিগারেট থেকে ধোঁয়া উড়ছে।জোহানের এক বন্ধু শালু জোহানকে টিটকারী মেরে বললো,
–“কিরে কোটিপতি,সিগারেট না টানলে কিনলি কেনো?”
জোহান ছোট্ট করে জবাব দিলো,
–“হুহ?”
জোহানের আরেক বন্ধু অনি হেসে উঠলো,
–“বুঝছিস শালু,শালা মনে হয় কিছু নিয়ে ভাবছে। উম,
তার যে চোখের চাহনী;মেয়েরা তার থেকে ভয়ে দূরে থাকে।চেয়েও ক্লাসের মেয়েরা এই সুদর্শন যুবককে কিছু বলতে পারে না।তাহলে এই যুবকের এতো চিন্তা কিসের?”
জোহান আনমনে বললো,
–“নুড়ি পাথরের।মেয়েটা কান্না করলো কেনো?
একদম ভালো লাগেনি আমার,তার চোখের পানি।জানিস,তার নাকটা মুহূর্তেই লাল হয়ে গিয়েছিলো।”
জোহানের কথায় শালু,অনি দুইজনই হাঁ করে তাকিয়ে আছে।শালু মুখে বিস্কিট দেওয়ার আগেই সেটা চায়ের কাপে পড়ে গেলো।কারণ বিস্কিট ডুবিয়ে সে মুখে দিতে যাচ্ছিলো এর পূর্বেই জোহানের কথায় তার হাত থেমে গেলো।
–“ভাই,তুই ঠিক আছিস?”
অনি অবাক হয়ে বললো।
–“আমি হয়তো তাকে ভালোবাসি।”
জোহান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো।
শালু আর অনির চোখের আয়তন আরো বাড়লো।তাদের বিস্ফোরিত নজর জোহানের দিকে।
–“আগে বুঝিনি আমি।তবে আজ তার চোখের পানিতে আহত হয়ে আমি বুঝেছি,এই মেয়ের কিছু হলে বা কষ্ট পেলে আমি শেষ। কারো কষ্ট ব্যথিত হয়ে সর্বহারা হওয়ার নামই তো ভালোবাসা,তাই না?তাছাড়া কাউকে দেখার অপেক্ষায় কড়া রোদে পোড়া বা বৃষ্টিতে ভেজার নাম কি দিবি তোরা?তাকে দেখতে আমার বেশ ভালোলাগে।তার বকবক করা,না বুঝে কথা বলা,
খিলখিল হাসি,আমার ভ্রু কুঁচকে তাকানোতে ভয়ে পালানো,আমাকে মাঝে মাঝে ইশারায় ভেংচি কাটা,তার এইসব কিছু আমার ভালোলাগে।আমি তো তাকে নিয়ে রোজ স্বপ্ন দেখি।আমার মন বলছে আমার এইসব কিছুর নামই অনুরক্তি অর্থাৎ ভালোবাসা।”
শালু আর অনি দুইজন দুইজনের দিকে তাকিয়ে আবারও তাকালো জোহানের দিকে।জোহান এইবার নিজের ঠোঁটে সিগারেট বসালো।এক টান দিয়ে সে আবারও বলে উঠলো,
–“হু,বুঝেছি আমি।এই নুড়ি পাথরকে আমার চাই। আজ যখন ঐ ছেলেটা তার হাত ধরেছিল না,আমার গায়ে আগুন জ্বলছিলো।”
শালু হাত রাখলো জোহানের কাঁধে,
–“মামা,মাল খাইছিস?”
–“আমি এইসব খাই?”
জোহানের সোজা জবাব।
–“তাহলে আবোল তাবোল বকছিস কেনো?এইযে বলতেছিস নুড়ি পাথর,তার হাসি কান্না,ভেংচি কাটা! নুড়ি পাথর কি এইসব করতে পারে?”
জোহান হেসে উঠলো সশব্দে,
–“আবালের জাত!ওর নাম নূর।আমি তাকে আদর করে নুড়ি পাথর ডাকি।”
শালু আর অনি এইবার স্বাভাবিক হলো।তার বন্ধুর এমন প্রেমের গল্প শুনে প্রথমে চমকে গেলেও এখন তাদের মনে বন্ধুর জন্যে সংবর্ধনা জানানোর ইচ্ছা জেগে উঠলো।অনি বুকের উপর হাত ভাঁজ করে নিয়ে জোহানকে প্রশ্ন করলো,
–“একদম ঠিক ধরেছিস মামা।তুই এখন ভালোবাসায় মত্ত হয়ে আছিস।তোর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা ভালোবাসার আওতায় পড়ে।তা মামা, ভাবীর ছবি দেখা আমাদের!”
–“মামা ডাকছিস আমাকে আবার নূর তোদের ভাবী হয় কিভাবে?”
–“এই শালা কথা প্যাঁচাবি না।সোজা উত্তর দে।”
জোহানের কথায় শালু রেগে বললো।
জোহান তার সামনে থাকা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে তাদের জবাব দিলো,
–“ছবি নেই।ভালোবাসি তাকে আজই টের পেলাম।আগে শুধু ভালো লাগতো।কিন্তু এখন বুঝেছি,তার চোখের পানি আমার সহ্য হবে না।এক নিমিষেই মেয়েটা যেনো আমার সবচেয়ে আপনে পরিণত হলো!”
–“কোন ভার্সিটি বা কলেজে পড়ে?”
শালুর প্রশ্ন।
–“ক্লাস এইটে।”
জোহানের সরল উত্তর।
অনি আর শালু পুনরায় অবাক হলো।তারা একসাথেই চিল্লিয়ে বললো,
–“কি?”
–“ঘি!”
জোহান চোখ ছোট করে বললো।
–“এইটারে কি লালন পালন করে বড় করবি তুই?”
–“নাহ,শুধু ভালোবাসবো।যখন ওর ম্যাচুরিটি আসবে তখন তার সাথে জমিয়ে প্রেম করবো এরপর বিয়ে।”
–“সে যদি ভবিষ্যতে অন্য কাউকে ভালোবাসে?”
অনির প্রশ্ন।
–“প্রশ্নই উঠে না।তার অবস্থা আমি এমন করবো,সে আমাকে ভয় পাবে আর আমার এই ভয়ই তাকে আমার ভালোবাসায় ফেলবে এবং ঠিক এই কারণে অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারবে না সে।আর যদি হিতের বিপরীত হয়,এর জন্যে সোজা একশন নিয়ে নিবো।জীবনের প্রথম অনুরক্তি সে আমার।সর্বোচ্চ দিয়ে আমার জীবনে রেখে দিবো আমি তাকে।দরকার পড়লে আমার এই অনুরক্তি প্রতিহিংসার অনুরক্তিতে পরিণত করবো।তাও আমি আমার নুড়ি পাথরকে আমার থেকে দূরে থাকতে দিবো না।”
–“উফফ প্রেমিক পুরুষ আমাদের।ভাবীকে কিন্তু সুযোগ বুঝে পরিচয় করিয়ে দিবি।”
শালু বললো।
–“দেখা যাক!”
জোহানের থমথমে কণ্ঠের জবাব।
পরিস্থিতি এখন ঠান্ডা।তিন বন্ধু মিলে হোটেল থেকে বেরিয়ে এলো।অনি আর শালু তাদের গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।জোহান নিজের বাইকে উঠলো।তার মাথায় সবকিছুর চিন্তা একদিকে আর নূরকে সে ভালোবাসে এই কথাটা তার সাড়া মস্তিষ্ক জুড়ে রয়েছে।
বাড়ি পৌঁছে মায়ের সাথে টুকটাক কথা বলে ছাদে গেলো জোহান তার প্রিয় গিটার নিয়ে।গিটারে টুংটাং কিছু সুর তুলে নিজের অক্ষিজোড়া বুজে নিলো জোহান।তার চোখে ভাসমান নূরের সেই কান্নামাখা লাল রঙের মুখমণ্ডল।জোহান মুচকি হাসে।বুকের সাথে গিটার চেপে ধরে আনমনে বলতে থাকে,
–“তোমার চোখের এই পানি দেখলে হয়তো আরো আগেই বুঝে যেতাম তোমার জন্যে আমার মনের এই অনুভূতিটি ছিলো ভালোবাসার।তোমায় দেখে সৃষ্ট হওয়া আমার মনের অনুভূতির একটা নাম পেলাম আমি।অনুরক্তি।তুমি আমার অনুরক্তি নূর।তোমায় আমি বেঁধে রাখবো আমার এই জীবনে সারাজীবন ধরে।ইচ্ছা করলেও এই জোহান থেকে মুক্ত হতে পারবে না তুমি।”
জোহান মলিন হাসে নিজের কথায়।জীবনের এমন সুপ্ত অনুভূতি জোহান কখনো অনুভব করেনি।তার কাছে নূরকে আজ বড্ড ভালোবাসাময় মনে হচ্ছে।
—————
কেটে যায় অনেক বছর।নূরের উপর জোহানের ভালোবাসার মাত্রা এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছিয়েছে। নূরকে সবসময় নিজের নজরে আটকে রাখে জোহান।যদিও নূরের সামনে নিজেকে কঠোরভাবে পরিবেশন করে সে।তবে জোহান নিজেও বুঝতে পারে ইন্টার পড়ুয়া নূর এখন জোহানেই আসক্ত।জোহানের পরিকল্পনা একেবারেই সহজ সরল।অনার্স শেষ বর্ষের রেজাল্ট দেওয়ার অপেক্ষাটুকু করলো না সে।নূরকে নিজের করে নিতে সব চেষ্টায় চালিয়ে যাচ্ছে।নিজের বন্ধুদের সহযোগিতায় তিন বন্ধু মিলে নিজেদের একটা ব্যবসা দাঁড় করায়।নূরের পড়ালেখা শেষ করা পর্যন্ত সময় দিতে চাই জোহান নূরকে।কিন্তু এর পূর্বেই জোহান নিজের মনের কথা নূরকে জানাবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়।
এইচএসসির শেষ পরীক্ষায় এসে নূর বুঝতে পারে সে জোহানকে বাবার বন্ধুর ছেলে হিসেবে নয় বরং আরো গভীর কিছু মনে করে।যদিও নূর জোহানের কড়া নজর দেখে কখনো এইসব অনুভব করেনি।কিন্তু ইদানিং নূরের অস্থির লাগে জোহানকে দেখলে।তার দিকে জোহানের তাকানো নজরটা নিজের কাছেও স্বাভাবিক বলে মনে হয় না।জোহানের এমন নজর অনেক আগেই লক্ষ্য করেছিল সে তবে সেই নজর উপলব্ধি করতে পারেনি নূর।জোহানের দৈহিক গঠন আগের চেয়ে অনেক পরিবর্তন হয়েছে।আগের মতো ভাঙ্গা চাপা দেখা যায় না জোহানের।মুখে চাপা দাড়ি থাকায় তার মুখমণ্ডলের স্নিগ্ধতা বেড়েছে যেনো হাজারগুণ।তাছাড়া জোহানের উচ্চতাই তার দিকে মেয়েদের ধাবিত করার জন্যে যথেষ্ট।জোহানের তীক্ষ্ণ নজরের চাহনি যেনো নিমিষেই শেষ করে দেয় নূরকে। নূর এখনো নিজের এমন অস্থিরতার কোনো নাম দিতে পারেনি।তবে জোহান তার আশেপাশে থাকলে নূরের পেটে যেনো এক অজানা অস্থিরতা নামক ভালোলাগা জেঁকে ধরে।এইযে এখনো জোহানের তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকতে দেখে নূরের কাছে অন্যরকম লাগছে।অস্থিরতায় নূরের নাকে বিন্দুঘামের সৃষ্টি হলো।ওড়নার সমেত নাক থেকে ঘামটুকু মুছে নিয়েও লাভ হয়নি নূরের।জোহানের দিকে তাকালে আবারও তার নাকে অস্থিরতা নামক সেই ঘামের ফোঁটা ভিড় করলো।
জোহান নূরদের বাড়িতে এসেছে একটু আগেই।
আজ নূরের ছোট বোন জারার জন্মদিন ছিলো।কাজের চাপে জোহান আসতে অনেক দেরী করে ফেলেছে। নূর তার মায়ের কথায় জোহানকে কিছু নাস্তা এগিয়ে দিলো তাদের ঘরের বাহিরের রুমে।সেখানেই ঠাঁই মেরে বসিয়ে রেখেছে সে নূরকে।নূরের এখন গায়ে কাঁপুনি চলে আসছে জোহানের এমন চাহনীতে।
জোহান এর তৃষ্ণার্ত নজর আটকে আছে তার নুড়ি পাথরের দিকে।যে এখন অস্থিরতায় ছটফট করছে।জোহান তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আর কড়া ব্যবহারে এইভাবেই নূরকে শায়েস্তা করে যায়।কারণ,নূরের এমন অস্থিরতা মাখা মুখমণ্ডল যেনো জোহানের পরাণপ্রিয়।জোহান সেই বাইরের ঘরের চেয়ারে হেলান দিয়ে বসতেই নূর তাকে বলে উঠলো,
–“তোমার কি আর কিছু লাগবে?আমি ভেতরে যাচ্ছি।”
জোহান ঘাড় কাত করে নূরকে ধমক দিল,
–“উঠতে বলেছি আমি?”
–“এইভাবে বসে থাকার কি মানে?আর তুমি ভেতরে যাও,সেখানে অনেক মানুষ আছে।একা একা কি করবে এইখানে?”
নূর কাচুমাচু হয়ে বললো।
–“তোদের বাড়ির আত্মীয় স্বজন কাউকেই আমি চিনি না।চিনতে চাইও না।আমার তোকে দেখলেই হবে।বসে থাক।”
জোহানের কড়া জবাব।
–“বাবা,আঙ্কেল উনারা কি ভাববে বলো?এইভাবে দুইজন এক ঘরে!”
–“আমি তোকে কিছু করছি?চুমু দিচ্ছি!নাকি তোর ক্ষতি করার চেষ্টায় আছি?তুই আমার থেকে দশ হাত দূরে আছিস।বেকুব কোথাকার!”
কান গরম হয়ে আসে নূরের।জোহানের এমন কথাবার্তা সে কলেজে ভর্তির পর থেকেই শুনে আসছে।অন্যের সামনে ভালো মানুষ সেজে থাকলেও,নূর জানে জোহান কি পরিমাণ ঠোঁট কাঁটা স্বভাবের তাও শুধু একান্তই নূরের সামনে। নূর মুখ কুঁচকে চলে যেতে নিলে চার বছরের ছোট্ট জারা রুমে আসে,
–“নূর আপু,আমার ফ্রকের চেইন খুলে দিয়েছে নান্না।”
জারার মুখে কান্নার ছাপ স্পষ্ট। নূর জারার মুখের অভিব্যক্তির অনুকরণ করে জারার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তাকে জবাব দিলো,
–“নান্না না আন্না বাবু। আন্না তো তোমারই আন্টি তাই না!আন্টি হয়তো না বুঝে এমনটা করেছে।আমি ঠিক করে দিচ্ছি।”
জোহান নূরের এমন মুখভঙ্গি আর স্নেহময় ব্যবহার দেখে বিচলিত হয়ে পড়লো।আড়ালে সে জারা আর নূরের কর্মকাণ্ড সবটাই নিজের ফোনে ধারণ করে নিচ্ছে।জারার চেইন ঠিক করে নূর তাকে নিয়ে চলে যেতে নিলে জোহানকে জারা বলে উঠলো,
–“তুমি আসবে না বাসায়?”
–“নাহ রে বোন।উনার মাঝে ভিটামিন ‘ মানুষের সাথে মেশার ‘ অভাব রয়েছে।তাই গরমের মধ্যে উনি এখানেই থাকবে।”
নূর মুখ ভেংচিয়ে বললো।
–“দিবো একটা কানের নিচে।এই জারা আমি কি এমন বলো?আমি তোমাকে আদর করি,চকলেট দিই,চুম্মা দিই না?তাহলে আমি কি মিশি না তোমার সাথে?”
জোহান ভড়কে গিয়ে বললো।যারা মাথা দুলিয়ে জবাব দেয়,
–“হুম।অনেক আদর আর চকলেট দাও তুমি।”
কথাটা বলে জারা জোহানের এগিয়ে দেওয়া হাতের কিণারায় চলে গিয়ে জোহানের কোলে উঠে পড়লো।জোহান নূরের দিকে চেয়ে জারার গালে চুমু দিলো পরম স্নেহে,
–“ঐ নুড়ি পাথর, যা আমার জন্যে ভালো একটা জায়গায় ব্যবস্থা কর। ফ্যান যেনো ঠিক আমার মাথার উপরে থাকে।”
নূরের উদ্দেশ্যে কথাটা বলে জোহান নূরকে হালকা ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো।নূর বিরক্তির নজরে সেদিকে চেয়ে নাস্তার প্লেট,বাকিসব উঠিয়ে নিচ্ছে।আর জোহান জারার কানে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,
–“তুমি কি জানো,সে আমার অনুরক্তি?”
জারা মাথা নাড়লো।যার অর্থ সে জানেনা।প্রত্যুত্তরে জোহান মুচকি হাসলো।নূরের প্রতি তার অনুরক্তি একেবারে পবিত্র আর স্নেহময়।
___________
“এই বাপের বেটা,কি ভাবছিস এতো?”
অনির কথায় নিজের কল্পনা জগৎ থেকে বেরিয়ে এলো জোহান।অফিসের রুমে লাগানো ডিজিটাল ক্যালেন্ডারে আজকের তারিখ স্পষ্ট।এই তারিখ দেখেই জোহান তার অতীতে ডুবে গিয়েছিল।আজ সেপ্টম্বরের তেরো তারিখ।এই তারিখ জোহানের কাছে চিরস্মরণীয়।কারণ,এই দিনেই সে তার জীবনের প্রথম অনুরক্তির খোঁজ পেয়েছিল।প্রথম ভালোবাসার উপলব্ধির দিন তারিখ জোহান আজ পর্যন্ত ভুলেনি।সাথে সেই অনুরক্তির সাথে জড়িত কিছু সুখময় দিন তার মস্তিষ্কে কিলবিল করছিলো।
আগের জোহান আর এখনের জোহানের ব্যবহারের মাঝে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।জোহান এখন নিজের পরিবার থেকে আলাদা থাকে।খুব দরকারে বা তার মা তাকে নিয়ে বেশি চিন্তা করলে তখনই সে নিজের বাড়িতে যায়।
জোহানের নজর এখনো ক্যালেন্ডারে।অনি এইবার জোহান এর কাঁধে হাত রাখলো,
–“শালা আর কতো অন্যমনস্ক হয়ে থাকবি? এখনও কি নূর ভাবীকে নিয়ে ভাবছিস?এতো ভাবাভাবির কি আছে?সব তো ঠিক আছে।শুধু অতীত ভুলে বিয়েটা সেরে ফেল।তোর এমন অত্যাচারে বেচারা নূর ভাবিটাও ভালো নেই।দেখে নিস তুই।তোর ঘাড়ত্যাড়ামোর জন্যে তুই শুধু ওর দোষ দেখছিস।যেখানে আমি শুধু দোষ দেখি….”
–“নামটা মুখে আনবি না।আর অতীত ভুলবো?কিভাবে?যেই বিষাক্ত অতীতের কারণে আজ তিনবছর ধরে আমি নিজ পরিবার থেকে দূরে!আর নূরকে আমি এতো সহজে আপন করবো না। ও জ্বলবে আমার প্রতিহিংসায়।আমাকে অবিশ্বাস করার ফল ওকে আরো তীব্রভাবে ভুগতে হবে।এখন কি কষ্ট পাচ্ছে সে!আরো বেশি কষ্ট দিবো আমি তাকে।তবে যত্নসহকারে।”
রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকায় জোহান অনির দিকে।অনি ঘাবড়িয়ে যায়।
–“হুম,তোদের ব্যাপার এইসব।আমি জানি তুই তাকে তোর নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসিস।সবসময়ই তাকে নজরে নজরে রাখিস। তোদের মাঝের সব তুই ঠিক করবি।এখন আমাকে এই ফাইলে সিগনেচার দিন,বস।”
জোহান ফাইলে সিগনেচার করলে অনি চলে যায়।
জোহান ঘাড়ে হাত ঘষে।তার মাথায় অতীতের খারাপ স্মৃতির কথা মনে আসতেই তীব্র রাগ জমে। ঢকঢক করে টেবিলে রাখা পানি খেয়ে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে সে। দাঁতে দাঁত চেপে নূরের চেহারা স্মরণ করে জোহান নিজের রাগের বহিঃপ্রকাশ করে বলতে লাগলো,
–“খুব চেয়েছিলাম নিজের স্নেহময় অনুরক্তিতে
বেঁধে রাখবো তোমায়।কিন্তু সেদিন আমাকে অবিশ্বাস করে সব হারিয়েছো তুমি।তবে আমি এখনো তোমাকে ভালোবাসি।সারাজীবন বাসবো।কিন্তু ভালোবাসার নিয়মটা হবে একদম অন্যরকম।একটু কষ্টদায়ক।কারণ আমার এই ভালোবাসা হবে প্রতিহিংসার অনুরক্তি।যে প্রতিহিংসা তুমি আমায় অবিশ্বাস করে সৃষ্টি করিয়েছো আমার মনে। শুধু তুমি কেনো?আমার নিজের বাবাও সেদিন আমার গায়ে হাত তুলতে ভুলেনি।বাদ বাকি তোমার বাবা মা সেদিন আমায় ভরসা করায় আজও আমি তোমাদের বাড়ি যায়।এখনো তো আমার অনুরক্তির প্রকাশ করিনি তোমার কাছে।সবটাই করবো আমি।কিন্তু প্রতিহিংসার সহিত।নুড়ি পাথর,এই জোহান তোমাকে তার প্রতিহিংসার অনুরক্তিতে পুড়িয়ে ছারখার করবে তো আবার যত্ন করে তার চাদরে মুড়িয়ে নিবে।”
নূরের জন্য জোহানের চোখে মুখে সৃষ্ট প্রতিহিংসার আগুনের তেজ যেনো ছনছন করে তীব্রতা লাভ করলো।
চলবে……