#ফাইন্ড_নোরা
#পর্ব_11
#দোলনা_বড়ুয়া_তৃষা
14.
-তুমি এই যুগের মেয়ে হয়ে কোন রকম ডকুমেন্ট ছাড়া ধুম করে একটা মেয়ে রেখে দিলে কোন খোঁজ খরব না নিয়ে? তুমি নাকি আরো এন জি ও চালাও?
মিজানের কথায় আরো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো শিমু। রান্নাঘর থেকে টেবিলে মাছের বাটিটা রাখলো বেশ জোরেই। মিজান মুচকি হাসলো। মিতুও হাসছে ঠোঁট চেপে। এতে শিমু আরো রেগে যাচ্ছে। ও ভালোই জানে মিজান ওকে এইভাবে রাগায়৷ তাও, শিমু আবার রান্না ঘরে ঢুকলো৷
কেটে রাখা সালাদের প্লেট থেকে এক টুকরো শসা তুলে নিয়ে মুখে দিতে দিতে আবার গলা চড়িয়ে বলল,
– নিশ্চয় কম টাকায় পেয়েছিলে, তাই না? কত দিবে বলেছো? দুইশ?
চামচ হাতে এইবার বেড়িয়ে এলো শিমু, তাতে মাছের ঝোল এখনো লেগে আছে।
এসে মিজানের সামনে দাঁড়িয়ে একটা চওড়া হাসি টেনে বলল,
– কি করব বলো? মানুষ চিনি না তো? চিনলে কি আর তোমার মতো মানুষের সাথে এত বছর কাটাতাম?
বলেই মুখ বেকিয়ে চলে গেল, মিজান খোটাটা হজম করলো। দেখলো মিতু এইবার ও মুখ টিপে হাসছে৷ অভি টেবিলে মাথা রেখে শুয়ে আছে তখনো। সব কিছু ওকে ক্লান্ত করে তুলেছে। ওর পাশে রাখা নোরার ফাইল টা। নোরার ছবিটা হাল্কা বের হয়ে আছে৷ নোরা ওর মাকে করা মেসেজ টা এই কেইসের টানিং পয়েন্ট। পারভীন ট্রেক করছে কোথায় থেকে এইটা পাঠানো হয়েছে। আর সে ছয় জন কেও ধরতে ফোর্স গিয়েছে।
শিমু রান্না ঘর থেকে গজগজ করছে,
– সে মেয়েকে খাইয়ে পরিয়ে টাকা দিলেও আমার ক্ষতি হতো৷ কোন কাজ পারে না। আমার তো মনে হয় সে পানিও ফুটাতে জানে না৷ আমি রান্না করে খাইয়েছি৷ এত সুযোগ পাওয়ার পর ও পালিয়ে গেল মেয়েটা?
-সি সি ক্যামেরা ঠিক হয় নি? ঠিক না হলেও তো আগের ডকুমেন্ট থাকবে পিসি তে।
শিমু রান্না ঘর থেকে বের হয়ে ফ্রিজ থেকে কিছু নিতে নিতে বলল-
-পিসি ও নষ্ট হয়ে আছে। মোবাইলেও দেখতে পারছি না৷ ছেলেটাকে ডেকেছি। আসবে বলল একটু পর।
তখনিই বেল বেজে উঠলো, মিজান গিয়ে দরজা খুলতেই একটা চুল কালার করা বিশ একুশ বছরের ছেলে। কানের বড় হেডফোন খুলে গলায় ঝুলিয়ে রেখেছে। কাঁধে কালো একটা ব্যাগ, রং বেরঙের টি-শার্ট।
মিজান কে দেখে সে মুখের চুইগাম চিবিয়ে চিবিয়ে বলল-
-আপনি কে? শিমু নেই?
মিজান টাস করে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দিলো, ছেলেটার হেডফোন খুলে নিচে পড়ে গেল, মিজান বলল-
-শিমু কি? আন্টি বল, ঠিক বয়েসে বিয়ে হলে তোর চেয়ে বড় ছেলে হতো ওর।
ছেলেটা কি বলবে বুঝতে পারছে না। মিজান হাসি চেপে আবার ওর কাঁধে হাত দিয়ে গেঞ্জি ঠিক করতে করতে মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ থাকতে ইশারা করলো৷
ছেলেটা বাধ্য ছেলের মতো মাথা নাড়ল। মিজান পেছনে ফিরে দেখলো, শিমু অগ্নিমূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মিজান এক গাল হেসে বলল,
– আরে কিছু না। ও আমাকে চিনতে পারছিলো না তাই পরিচয় দিলাম।
মিজান ওকে নিয়ে গিয়ে কম্পিউটারের সামনে বসালো। শিমু হেসে দিলো। ভালোই লাগলো ওর মিজানের এই কাজ টা। ছেলেটা খুব বিরক্ত করে শিমু কে। কারণ সে বুঝে গিয়েছিলো শিমু মেয়ে নিয়ে একা থাকে৷
মিতু নোরার ছবিটা বের করে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অভি মাথা তুলে তাকালো মিতুর দিকে৷ ওর চোখ গুলো এখনো লাল হয়ে আছে।
মিতু কে বলল, কোথায়ও দেখেছো ওকে?
মিতু মাথা নাড়লো, সে দেখে নি। কিন্তু তাও তাকিয়ে রইলো কালো কোর্ট পরা নোরার অফিশিয়াল সে ছবিটার দিকে।
অভি আবার মাথা টেবিলে রাখলো। আরিফ ফোন দিলো, অভি কানে লাগাতেই ও বলল, ওরা সে ছয় জন কে পেয়েছে। দ্রুত ওদের আনা হচ্ছে। তুমি আসো আধা ঘন্টার মধ্যে।
অভি চুপ করে রইলো৷ ভীষণ ক্লান্ত লাগছে ওর। সেদিন এইখানে এসে অদ্ভুত লেগেছিলো ওর। যেন নোরা আশেপাশেই আছে। আজ তেমন কিছু লাগছে না। তাই ওর ক্লান্তি যেন আরো বেড়ে গেল।
অভি আস্তে করে বলল- পারভীন বের করতে পেরেছে কোথায় থেকে নোরা মেসেজ করেছে?
– করছে। ও নাকি অনেক জায়গায় সিগনাল পাচ্ছে৷ তাই ট্রেক করতে পারছে না। দ্রুত দেবে তোমায় আপডেট। টেনশন করো না। আমরা নোরা কে খুঁজে নেবো।
অভি পারভীন কে ফোন দিলো, পেয়েছো?
– এইটা নোরার মেসেজ অভি, এত সহজেই কি ধরা যাবে ওর সিগন্যাল। মে বি যে সার্ভার ও উইজ করেছে সেটা অফ কিংবা ডিস্ট্রয় হয়েছে। তাই সময় বেশি লাগছে।
শিমু রান্নাঘরে কাজ করছে। মিতু ওর রুমে চলে গেল নোরার ছবিটা নিয়ে অভি খেয়াল করল না৷ মিজান ছেলেটার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। কম্পিউটার ওপেন করে করে চেক করতে থাকলো।
পারভীন তখনো ফোনে। অভি রেখে দিচ্ছিলো, পারভীন বলল, ওয়েট ওয়েট। পাচ্ছি এখন।
অভি সোজা হয়ে বসলো, পেয়েছো?
-হ্যাঁ, পারছি৷ তুমি পাঁচ মিনিট অপেক্ষা কর৷ আমি আইপি এড্রেস দিয়ে তোমার লোকেশন পাঠাচ্ছি।
মিজান অভির দিকে ফিরে তাকালো, অভি বলল, পেয়েছে।
মিজানের মুখেও হাসি ফোটে উঠলো, শিমু রান্না করে তখনো গজ গজ করছে।
– আমার কপাল টায় এত খারাপ। ভালো মানুষী দেখাতে যাই। সবাই আমার সাথে এমন করে। কাজের মেয়ে সে ছিল নাকি আমি ছিলাম সেটায় তো বুঝতে পারি নি। থাল ধুতে জানে না, কাপড় ধুতে জানে না, ঘর মুছতে জানে না। দাঁড়িয়ে সব করিয়েছি। এমন কি রুটি সেকতেও জানে না। এই ইন্দুকে একবার কাছে পাই, বেয়াদব মেয়েটা আমাকে উলটা ফাঁসিয়ে গেল।
কম্পিউটার, সি সি ক্যামেরা চেক করে বলল,
– সব ঠিক আছে, কিন্তু আগের কোন ডকুমেন্ট নেই৷ কেউ ইচ্ছে করেই এইসব নষ্ট করে দিয়েছে। আর সব ডিলিট করেছে। আগের ফুটেস আছে রিসেন্ট গুলো নেই৷
অভি এইবার উঠে দাঁড়িয়ে গেল। মিজান ও। শিমু বের হয়ে বলল,
– কোন চাপ লেগে ডিলিট হয় নি তো? মিতু গেইম খেলে।
ছেলেটা মাথা নাড়লো, না। এইগুলো কোন প্রফেশনাল মানুষেই করেছে। এমন ভাবে করেছে কেউ আর বের ও করতে পারবে না৷ এইসব আমিও জানি না৷
তখন পারভীন ফোন দিলো অভিকে,
– অভি ঠিকানা নাও।
অভি মোবাইল বের করে ঠিকানাটা গুগল জিপিএস দিতেই কোন লোকেশন দেখতে পেল না। ওর টাই দেখাচ্ছে৷
আবার মোবাইল কানে দিয়ে বলল, শো করছে না তো কিছু। আমার লোকেশনেই দেখাচ্ছে।
– আমি তো ঠিকই দিয়েছি। তুমি আবার চেক কর।
অভি মিজান কে ডেকে বলল, তোর মোবাইলে দেয় তো,
অভি ঠিকানাটা বলল, মিজান প্রথমে টাইপ করে থেমে গেল। অভির দিকে তাকিয়ে রইলো,
অভি বলল, কি হলো? তাকিয়ে আছিস কেন?
মিজানের কথা আটকে যাচ্ছে। তাও বলল-
-এইটা তো এই বাড়ির ঠিকানা।
-কি?
অভি প্রথমে বুঝতে পারলো না৷ কি বলছিস?
শিমু রান্না ঘর থেকে ভাতের বোল টা এনে রাখলো।
– তোমরা কাকে খুঁজছো? আগে আমার কাজের মেয়েটাকে খুঁজে দাও।
অভি আর মিজান একে অপরের দিকে তাকালো। দুজনের মনে একই প্রশ্ন যেন একই উত্তর বের করতে চাইছে৷
মিজান শিমু কাছে এসে বলল- তোমার কাজের মেয়েটা দেখতে কেমন? ছবি আছে কোন?
– না।
অভি দ্রুত নোরার ফাইল উল্টে ছবিটা বের করতে গেল। দেখলো ছবিটা ওখানে নেই৷
অভি বলল, ছবিটা কোথায়?
তখন মিতু ওর রুম থেকে বের হলো, নোরার ছবিটার উপরে ও ড্রয়িং করেছে। খুব সাধারণ একটা মেয়ে লাগছে এখন ওটা। নোরার ছবির উপর না করলে অভির মনে হতো এইটা অন্য কেউ৷
মিতু ছবি টা অভি আর মিজানের দিকে তুলে ধরে বলল-
– এইটা মোহনা।
অভি আর মিজান আরেক দফা অবাক হলো। শিমু রান্নাঘরে যাচ্ছে আর আসছে। মিজান শিমুকে দেখিয়ে বলল, এইটা?
শিমু ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল, হ্যাঁ এইটাই তো মোহনা আমার কাজের মেয়েটা। তুমি কোথায় পেলে? মিতু এঁকেছে বুঝি?
এই বলে চুলায় কিছু পুড়ছে এমন ভাবে সে ছুটলো৷
রান্না ঘর থেকেই চেঁচিয়ে বলল শিমু,
-মেয়েটা আমার সামনে বোবা সেজে থাকতো,মিতুর সাথে নাকি কথা বলতো। কি ফাজিল মেয়ে চিন্তা কর। তোমার মেয়ে সেটা আমাকে বলত না।
অভি কাঁপা কাঁপা হাতে ছবিটা নিয়ে চেয়ারে বসে পড়লো, মিতু অভির দিকে তাকিয়ে বলল,
– মোহনা বাংলা বলতে পারতো না। তাই ও চুপ করে থাকতো৷ মা অনেক বকাবকি করতো ও কিছুই বুঝতে পারতো না। তাই চুপ থাকতো। ভালোই হতো। ও আমাকে অনেক আদর করত। আমার খুব খারাপ লাগতো মা যখন ওকে বকতো। আমি পরে ওকে বুঝিয়ে বলতাম।
অভি যেন নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছিলো না। নোরা এইভাবে? এইখানে?
শিমু প্লেট নিয়ে এসে টেবিলে রাখতে রাখতে মিতুর মাথায় হাল্কা বারি দিয়ে বলল-
– বকবো না তো কি করব? একটা কাজ পারে না। না রান্না, না কাপড় ধোয়া, না ঘর মুছা। যেন রাজরানী, আমি তো গায়ে হাত দিই নি অন্য কেউ হলে তো একদিনে বের করে দিতো।
মিজান অভির দিকে তাকিয়ে আছে। অভি আগ্নেয়গিরির মতো ফুঁসছে। মিজান শিমুকে থামাতে চাইলো, তার আগেই মিতু বলে উঠলো,
-তুমি মোহনার হাতে গরম খুন্তি লাগিয়েছো।
শিমু ধমকের সুরে বলল, এই, ফাজিল মেয়ে, কি বলিস? ও রুটি সেকতে পারছিলো না।তাই আমি খুন্তি কেড়ে নিতে গিয়ে ও হাতে লেগেছে৷ আবার ক্রিম ও তো লাগিয়েছি-
শিমু কথাটা শেষ করতে পারলো না। তার আগেই অভি চিৎকার করে উঠলো,
– তুমি ওকে দিয়ে ঘরের কাজ করিয়েছো? কাপড় ধুইয়েছো?ঘর মুছিয়েছো?
অভির এমন চিৎকারে শিমু কিছুটা থমকে গেল, মিতু ভয় পেয়ে মিজান কে জড়িয়ে ধরলো।৷
অভি শিমুর সামনে এসে দাঁড়ালো, রাগে পাগল হয়ে গিয়েছে ও। চিৎকার করছে।
-তুমি ওকে গরম খুন্তি লাগিয়েছো? তুমি জানো ও কে? তোমার মত দশ হাজার মেয়ে রাখতে পারবে ও।
শিমু অভির রাগ দেখে ভয় পেয়ে আমতা আমতা করে বলল,
– আমি ওকে লাগাই নি। আর ওকে তো কাজ করার জন্যেই দিয়ে গেল, তাই-, কাজের মেয়ে কাজ করবে না তো-
অভি আরো জোরো বিকট চিৎকার করে উঠলো,
– তুমি ওকে কাজের মেয়ে বলছো?
অভির এমন অগ্নিমূর্তি দেখে মিতু আরো জোরে জড়িয়ে ধরলো মিজান কে। শিমু তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পরে গেল। ছেলেটা তখনো দাঁড়িয়ে ছিলো, সে বুঝতে পারছে না কিছু কি হচ্ছে। শিমু বুঝতে পারছে না। অভি কেন এমন রিয়েক্ট করছে? কে ও?
মিজান দ্রুত অভি আর শিমু মাঝখানে দাঁড়িয়ে গেল মিতুকে কোলে নিয়ে ,
-অভি, শান্ত হও তুই। ভুলে যাস না শিমু এখনো আমার বউ, আমার মেয়ের মা। ওর সাথে এমন আচরণ তুই করতে পারিস না আমার সামনে।
অভি থেমে গেল। ও কি করছে? কি বলছে? বুঝতে পারছে না।
আহহহ করে চিৎকার করে বসে পড়লো। মিজান শিমুকে তুলে নিলো। মিতুকে ওর কোলে দিয়ে, অভির কাছে গেল। অভি বলল-
-নোরা এইখানে ছিলো, আর আমরা ওকে পুরো শহর খুঁজে বেড়াচ্ছি? আমার এত কাছে ছিলো ও, আর আমি ওকে –
অভি কথা শেষ করতে পারছে না। মিজান ওর কাঁধে হাত দিয়ে বলল-
– আমরা তো জানি না বল, আর এইখানে তো সেইফ ছিলো, এখন কোথায় গেল?
অভি আবার শিমুর দিকে তাকিয়ে বলল,
-তুমি না মেয়েদের এন জি ও চালাও। তুমি ওকে এইভাবে অত্যাচার করেছো?
-অভি, আমি জানি না তুমি কার কথা বলছো। তবে তুমি ভুল বুঝছো। আমি ওকে কোন অত্যাচার করি নি। রান্না বান্না করে খাইয়েছি বলো। ওকে আনা হয়েছে কাজের জন্য আমার ও দরকার ছিলো কোন হেল্প তাই -।
আর ওর সাথে যা হয়েছে আমি আঁচ করতে পারি, ওর উপর যে অত্যাচার হয়েছিলো তার তুলনায় এইসব কিছুই না, তাই আমি ওকে –
অভি আর মিজান অবাক হয়েই এক সাথে বলে উঠলো,
– কি হয়েছিলো?
শিমু থেমে গেল, অভি আর মিজান তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ছেলেটা ওখানে দাঁড়িয়ে আছে দেখে শিমু থেমে গেল। মিজানেও হুশ ফিরলো, ছেলেটাকে টাকা দিয়ে বের করে দিলো।
মিতু কে মোবাইলে কার্টুন ছেড়ে দিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো।
ওরা তিনজনে ডায়িং টেবিলে বসল,
শিমু বলতে শুরু করলো৷
– মোহনা কে, মানে যাকে তোমরা নোরা বলছ, ওকে আমার কাছে কাজ করত এত বছর ধরে সে মেয়ে ইন্দুই এনে দিয়েছিলো ওর ভাইঝি বলে। এই সাজে। যাকে তুমি মিতুর আঁকা ছবিতে দেখছো। ইন্দু অনেক বছর আমার কাছে কাজ করছে তাই সন্দেহ করার মতো কিছু ছিল না।
যেদিন ওকে ইন্দু খুব ব্যস্ততা নিয়ে আমার কাছে দিয়ে গেল সেদিন রাতেই ও ভয়াবহ চিৎকার শুরু করে। আমাকে ওর কাছে যেতে দেয় না। আমি ওর হাবভাব দেখে বুঝতে পেরেছিলাম ওর সাথে হয়ত খারাপ কিছু হয়েছে।
তাই মিতু কে সে ডাক্তার দেখাই৷ ও আমার ফ্রেন্ড তাই ওর কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। যেদিন তুমি মিতু কে নিয়ে গেলে, এরপর আমি ওকে নিয়ে গিয়েছিলাম।
ওর সাথে একা কথা বলেছিলো। যেহেতু ও বোবা সেজে থাকতো তাই সে ডাক্তার ইশারায় ওকে বুঝার চেষ্টা করে।
ডাক্তার আমাকে বলেছিলো, ওকে অনেক অত্যাচার করে ধর্ষণ করা হয়েছিলো। আর এক জন দুজন নয়, ছয় জন মিলে ওকে রেপ করেছিল।
অভির নিশ্বাস টা যেন তখনিই আটকে গেল। অভি কি বলবে বুঝতে পারছিলো। যেন নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না। এত দিন ও বেঁচে আছি কি নেই সেই অনুভূতির চেয়ে এই অনুভূতি যেন ওকে কুকড়ে ফেলছে। কত কষ্ট পেয়েছে ও। সেটা ভেবে নিশ্বাস নিতে পারছে না।
মিজান ও অবাক হয়ে শুনছে।
শিমু বলল, আমি ভেবেছিলাম গ্রামে হয়ত কোন ভাবে সে এমন কিছুর শিকার হয়েছ তাই ইন্দুর কাছে ওকে পাঠানো হয়েছে।
অভির মোবাইল বেজে উঠলো তখন,
– আমরা সে ছয় কে ধরেছি। এনেছি।
অভি ওর দোটানা কাটিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেল। এতক্ষনের ভেঙে পড়া মানুষ টা যেন এইবার রক্তচক্ষু নিয়ে দাঁড়িয়ে গেল৷ এখনিই কোন অনর্থ করে ফেলবে।
শিমু আর মিজানের দিকে তাকিয়ে বলল, সে কাজের মেয়েকে আমার সামনে আন। যেভাবে হোক। আমি জানতে চাই ও কোথায় পেল নোরা কে।
মিজান কে রেখেই অভি একা বেরিয়ে গেল। মিজান ডাক দিলো শুনলো না।
অভি বেড়িয়ে যেতেই শিমু মিজানের বুকে আছড়ে পড়লো।
-চলবে।