#ফাইন্ড_নোরা
#পর্ব_10
#দোলনা_বড়ুয়া_তৃষা
13.
রবিনের কথা গুলো মূহুর্তের জন্য বিশ্বাস হলেও, অভির মন বলছে নোরা মারা যায় নি। কিন্তু কোথায় নোরা?
অভি উঠে দাঁড়ালো, মিজান তখনো পিস্তল উঁচিয়ে ধরে আছে।
অভি উঠে বলল, নোরাকে কেন মারতে চাইছে কেউ? কী করেছে ও?
রবিন তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে, তুই কি রে? পুরো ঘটনা না জেনেই খুঁজতে নেমে গেলি?
নাকি ওরা তোকে জানানোর প্রয়োজন মনে করছে না।
তুই আসলে ওমর স্যারের জন্য “স্পাইরাল” টীমে যত টা হাবভাব নিয়ে থাকিস,তুই আসলে তা না, এই কেইস তা প্রমাণ করছে।
– ফালতু কথা বাদ দেয়, এর পেছনে কে?
– দ্যা গ্রেট অভি, এই সামান্য ব্যাপারটা বুঝতে পারছে না তার প্রিয়তমা কেন গায়েব? নাকি সে কেন চলে গিয়েছিলো তার মতো এইটাও বুঝতে পারছে না।
অভির কোন পুরানো রাগ কে যেন আগুন দিতে চাইছে রবিন। অভি রবিনের দিকে তেড়ে যেতেই রবিন বলে উঠলো,
– এই ভুল করিস না। এইখানে আমার গায়ে হাত লাগালে তুই বের হতে পারবি না।
অভি রাগে যেন পাগল হয়ে গিয়েছে। রবিনের দিকে তেড়ে একটা ঘুসি লাগিয়ে দিলো মুখে। রবিনের ঠোঁট ফেটে রক্ত পড়ছে। কিন্তু ও উঠে দাঁড়িয়ে আবার বিচ্ছিরি হাসি দিয়ে বলল-
-তুই আমার কাছে থেকে নোরাকে কেড়ে নিয়েছিলি, আজ আমি নিলাম।
অভি জোরে লাথি মারলো, এইবার রবিন আটকালো, দুজনেই সমান কৌশলে একই স্পিডে মারামারি করছে। মিজান তাকিয়ে আছে। মিজান পিস্তল উঁচিয়ে রবিনের পায়ে গুলি করতে চাইলে হঠাৎ পেছন থেকে কেউ ওর ঘাড়ে ইলেক্ট্রিক্যাল কিছু লাগাতেই সেন্সলেস হয়ে গেল মিজান।
অভি মূহুর্তের জন্য থেমে গেল, মিজানের দিকে তাকালো, দুইটা ছেলে ওর ঘাড়ে ইলেক্ট্রিক্যাল শক দিয়েছে। অভি মিজান কে ধরতে যাওয়ার আগে, রবিন বাম হাত দিয়ে অভির গলাটা সজোরে চেপে ধরল, ডান হাতে অভির কাঁধেও, ইলেক্ট্রিক্যাল শক দিলো৷ অভির সেন্স যাওয়ার একটু আগেই রবির ওর কানের কাছে মুখ লাগিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
-নোরা ব্ল্যাকমেইল করতে চেয়েছিলো মন্ত্রীদের। ওর শাস্তি ও পেয়েছে।
অভি কিছু বুঝলো না। তার আগেই ওর সেন্স হারিয়ে গেলো।
যখন ওদের সেন্স ফিরলো তখন ওরা দেখলো পারভীন আর কয়েক জন নিয়ে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।
অভি দ্রুত উঠে বসতে চাইলো, কিন্তু পারলো না। প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে।
প্রথম দিনে আসা সে অফিসে নিজেকে দেখে বেশ অবাকেই হলো অভি।
মিজান ও উঠে বসেছে৷ মিজানেরেও বুঝতে সময় লাগলো, কোথায় ওরা? কীভাবে এলো?
পারভীন ব্যস্ত গলায় বলল- ঠিক আছো তোমরা?
অভি ঘাড়ের দিকে হাত দিয়ে উঠে বসলো,
– আমরা এইখানে?
-অনেক ক্ষন তোমাদের কোন রেসপন্স না পেয়ে আমি ফোর্স পাঠিয়েছিলাম৷ ওরাই নিয়ে এলো তোমাদের৷ ফ্লোরে পরে ছিলে৷
– আর রবিন?
– He left..
অভি উঠে বসলো, আফসান হুইসেন কোথায়?
পারভীন ফাস্ট এইডের বক্স থেকে ওষুধ নিতে নিতে ফিরে তাকালো,
– এখন রাত দুইটা।
– তো? নোরা কে দিয়ে কি করানো হচ্ছিলো? নোরা বা কেন কাউকে ব্ল্যাকমেইল করবে? কি নিয়ে? আমাকে সব এখনিই জানতে হবে? নইলে আমি ধরে নেব রবিন যে বলেছে, নোরা মারা গিয়েছে। আর আমি কালেই মিডিয়াতে যাবো। আর নোরাকে দিয়ে পাকিস্তানের যে স্যাটেলাইট হ্যাক করা হচ্ছিলো তার প্রমাণ আমি দেবো।
তখন চাপ সামলাতে পারবে? নোরার মৃত্যুর জবাবদিহি করতে হবে পুরো সরকার কে।
– অভি তুমি বাড়াবাড়ি করছো।
অভি এইবার ভয়াবহ রেগে গেল, আমি এখনো কোন বাড়াবাড়িই করি নি, তবে আমাকে করতে হবে যদি তোমরা এইভাবে লুকাও।
পারভীন ভয় পেয়ে গেল অভির এমন অগ্নিমূর্তি দেখে। অভির রাগ যেন এইবার ওর গলা ধরে আসছে। এমন কাঁপা স্বরে বলল,
কাউকে চেনে না কাউকে জানে না, বাংলা ও জানে না। এমন একটা মেয়ে বেঁচে আছে কি নেই। মারা গেলে, কেন মারা গেল? কোথায় ওর বডি?
অভি এইবার কাঁপতে কাঁপতে বসে গেল, পারভীন এসে ওর কাঁধে আস্তে করে হাত রাখতেই অভি চোখ তুলে তাকালো, কাতার স্বরে বলল-
-কোথায় নোরা? আদৌ বেঁচে আছে তো?
পারভীন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অফিসে থাকা অন্যদের দিকে ফিরে তাকালো। সবার চোখ যেন বলছে, কোথায় নোরা?
মিজান বলল, আমাদের আর চুপ করে থাকার কোন মানে হয় না। নোরার ছবি দেশের সব থানায় পাঠানো উচিত। যাতে মারা গেলেও কেউ না কেউ তো ওর বডি পেয়ে থাকবে।
ঘন্টা খানিকের মধ্যে বাসার কাপড়েই আফসান হুইসেন অফিসে চলে এলো, অভি আজ বেপোয়োরা৷ ও এখনিই মিডিয়াতে নোরার ছবি ছড়িয়ে দিতে চায়।
-নোরা কাকে ব্ল্যাকমেইল করছিলো? কি এমন পেয়েছিলো নোরা?
আফসান হুইসেন এইবার মুখ খুললেন, বেশ বিধস্ত কন্ঠেই বলল,
– আমরা একটা এট্যাকের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। যেটা ওরা আমাদের করতে চাইছিলো আমরা সেটা ওদের দেশেই করতে চাইছিলাম। এইটা করতে গিয়ে নোরা অনেক গুলো সরকারী দপ্তরের ক্যামেরা আর ফাইল ও হ্যাক করে ফেলছিলো যা ছিলো একান্তেই ব্যক্তিগত। যাতে অনেকের ব্যক্তিগত ভিডিও ছিলো৷ নোরা আমাকে জানিয়েছিলো সেসব। আমি সেসব ব্যবহার করতে চাইলেও নোরা রাজি হয় নি। নোরা বলে ও এইসব নোংরা জিনিস করতে পারে না। আমিও আর কথা বাড়ালাম না। কিন্তু এইটা কীভাবে ওরা জানে বা নোরাকে ট্রেক করে আমি জানি না।
আমি সত্যি বলছি নোরা এই কিডন্যাপের ব্যাপারটা আমি সত্যিই আচ করতে পারছি না, কে বা কারা করতে পারে?
-কারা ছিলো ওরা? সবাইকে কেন ডাকা হয় নি?
– যেহেতু আমি ওদের জানাই নি আমি এসব দেখেছি তাই ওরা জানার প্রশ্ন আসে না। এখন যদি আমি ওদের ডেকে প্রশ্ন করি –
-আপনি নিজেকে বাঁচাতে এই ভাবে বসে ছিলেন? তাহলে এইটা ওদের জানালো কে? যাতে ওরা নোরাকে টার্গেট করলো? আর কে জানতো?
আফসান হুইসেন তখন মাথা নাড়লো, কেউ না।
-তাহলে তো আপনি ছাড়া সে কালপ্রিট কেউ না।
-আমি সত্যি বলছি আমি করি নি, আমি জানি সবাই আমাকেই দোষ দেবে তাই তো আমি এইটা নিয়ে কিছু বলি নি।
অভি টেবিল থেকে একটা কাগজ নিয়ে আফসান হুইসেন কে দিলো, ওদের নামের লিস্ট।
উনি ক্লান্ত চোখে তাকালো, তারপর কাগজ টা টেনে নিলো।
অভি পারভীন কে মোবাইলে তোলা সে ছয় জনের ছবি গুলো দিলো, বলল,
-যেভাবে হোক এই ছয় জন কে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই চাই।
অভি পুরো মাথাটা ফাঁকা লাগছে। সব যেন আরো জট পাকিয়ে যাচ্ছে। নোরাকে খুঁজে পাবে তো? বেঁচে আছে তো?
পারভীন অভির দিকে তাকিয়ে বলল, এইদিকে একটা রুম আছে, কিছুক্ষন রেস্ট নাও।
অভি ক্লান্ত শরীরে বিছানায় পরতেই, সেদিনের কথা টা মনে পড়ল, যেদিন বিয়ে এক সপ্তাহ আগে নোরা ওকে অন্য মেয়ের পাশে দেখেছিলো।
নোরা সেদিন ওর মায়ের কাছে গিয়েছিলো দেখা করত পর্তুগালে। ফিরে আসার কথা ছিলো দুই দিন পর। কিন্তু সেদিন রাতেই ফিরে এসে যখন অভি কে অন্য মেয়ের সাথে বিছানায় দেখেছিলো এক মূহুর্তের জন্য ও অপেক্ষা করে নি, বের হয়ে গিয়েছিলো।
অভিকে বুঝানোর সুযোগ ও দিলো না।
ও মেয়েটাকে আনে নি। সে নিজে এসেই হঠাৎ এইসব শুরু করছিলো। এইটা এক ট্রেপ ছিলো।
আজ রবিনের কথায় সেদিন টার কথা মনে পড়তেই আবার মন খারাপ টা, নোরাকে হারিয়ে ফেলার রাগ টা চেপে বসলো। মেয়েটা পরে স্বীকার করেছিলো রবিনেই এইসব করেছিলো। কিন্তু নোরা আর কোন সুযোগেই দিলো না। বিয়ে ভেঙে দিলো।
এইসব যখন ভাবছিলো তখন অভির মোবাইল বেজে উঠলো, অভি নিজেকে সামলে, হ্যালো বলতেই।
ওমর স্যার বলে উঠলো, অভি নোরা ওর মাকে মেসেজ করেছে, she is alive.
অভি দ্রুত উঠে বসলো।
-চলবে।