ফাইন্ড_নোরা #পর্ব_6

#ফাইন্ড_নোরা
#পর্ব_6
#দোলনা_বড়ুয়া_তৃষা

8.

সেদিনে ধোঁয়া ভরা রুমে যেখানে সব দিকে বাদামী চুলের মেয়েরা নেচে যাচ্ছিলো সোফায় বসে থাকো কালো চুলের নোরার দিকে প্রথম নজর পড়েছিলো অভির। নাইজেরিয়ার ড্রাগস ডিলিং একটা গ্যাং কে ধরিয়ে দেওয়ার সাফল্যের জন্য অভিকে ট্রিট দিচ্ছিলো অফিসের বন্ধুরা।
সেখানে অভি সব মেয়ে মাঝে বসে সমানে কালো চশমা আর আগা গোড়া কালো ড্রেসে কোর্ট আর জিন্সে মেয়েটাকে সত্যিই আলাদা লাগছিলো। প্রথম দেখায় যে কেউ ওকে বাঙ্গালিই বলবে।

হাতে সফট ডিংক্স নিয়ে অভি ভীড় ঠেলে সে সোফায় গিয়ে বসলো, প্রথমে ওকে দেখলো হাসা চেষ্টা করে নোরা। আবার জুস নিয়ে অন্য দিকে তাকালো।

– কবে জয়েন করেছো?
নোরা ফিরে তাকালো, তবে কথা বুঝতে পারলো না। অভি ভ্রু কুচকে বলল-
– বাঙ্গালি? এশিয়ান?
নোরা মিষ্টি হেসে মাথা নাড়ল,
অভি ইশারায় মুখের চারপাশে গোল করে ঘুরিয়ে দেখাতেই নোরা আরো জোরে হাসলো, টেবিলে রাখা স্ট্রবেরী তুলে নিয়ে বলল-
– মাই ফাদার ইজ এশিয়ান।

অভি মাথা নাড়ল। মেয়েটা অভির দিকে তাকিয়ে,
-উ? উইজ পার্ট?
অভি পুরো গ্লাস গলায় ঢেলে মুচকি নোরা হাত টা ধরে বুকের রেখে বলে,
– এভ্রাই পার্ট, উইজ পার্ট উ ওয়ান্ট?

নোরা এত জোরে হেসে উঠলো অভি যেন অনেক বছর পর কোন কল কল ধ্বনি শুনতে পেল। যেমন টা বাংলা সাহিত্যে গল্পের নায়িকাদের হাসির বর্ণনা থাকে।
প্রথমবারের মতো অনুভব করলো।

নোরা ডান্স ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু যাচ্ছে না। অভি ওর দিকে তাকিয়ে বলল-
-বোরড?
ও জোরে মাথা নাড়ল। ওর চশমা চুল সব যেন এক সাথে নড়ছে। ঝোপ ওয়ালা কোন ফুল গাছ কে যেন কেউ ধাক্কা দিলো।

– আই লাইক টু স্পেন্ড মাই টাইম উইথ মাই কম্পিউটার। আই লাভ ইট।

অভি বাংলায় বলল- মেশিন পছন্দ মেয়ে মানে তাড়াতাড়ি পটে যাবে।
নোরা ভ্রু কুচকে তাকাতেই অভি দাঁড়িয়ে নোরার হাত ধরে টান দিলো,
– চল প্রেমে ফেলি তোমাকে।

নোরা কিছু বুঝতে না পারলেও অভি যে ওর উপর লাইন মারছে খুব সহজেই ধরতে পারছে। পার্টিতে এসেছে পর্যন্ত ও অভিকেই দেখে যাচ্ছিলো এত চার্মিং একটা পারসন।

অভির পেছন পেছন বের হতেই বাইকের কাছে নিয়ে গেল নোরাকে। নোরা হাসলো,
– নাও?
অভি স্টার্ট দিতে দিতে বলল-
– ডোন্ট?

নোরা হেসে উঠে পড়লো। ফাঁকা রাস্তায় শীতের মধ্যে যখন বাইক চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে
পেছনে নোরা স্পর্শ যেন ওর কাছে মাদকের মতো লাগছিল।

রাত দুইটা এখন। ফাঁকা রাস্তায় কফি হাতে বসে আছে অভি রাস্তার পাশে বেঞ্চে। গাড়ি নেই এইদিকে। রাস্তার লাইটের আলোর নিচে কয়েক টা কুকুর ঘুরছে শুধু।
মিজান এসে কাঁধে হাত রাখতেই অভি ওর চিন্তা থেকে বেড়িয়ে এলো৷
আজ সকালে আবার শিমুর বাসায় যাওয়ার পর থেকে অভির মন খারাপ হয়ে আছে। কেন সে বুঝতে পারছে না।
নোরা কে খুঁজে পাবে তো? এই চিন্তাটা যেন ওকে ভীষণ পোড়াচ্ছে।

– কী ভাবছিস?
– কিছু না, নোরার কথা ভাবছি। জীবনে অনেক মেয়ের সাথে জড়িয়েছি। নোরা চলে যাওয়ার পর ও, কিন্তু নোরার প্রতি এই টান টা-
দীর্ঘশ্বাস ফেলে অভি৷ মিজানের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি নিজেই যেন হারাতে চাই না এইটা।

মিজান কি বলবে বুঝতে পারছে না। কারণ এই এক সপ্তাহ অভির সাথে এই কেইসে কাজ করে বুঝতে পারছে কোন ক্লু নেই। মেয়েটা হয়ত বেঁচে নেই। কিন্তু অভির অবস্থা দেখে মিজান সেটা বলার সাহস পারছে না।

মিজান অভির দিকে তাকিয়ে বলল-
– দেখ অভি নোরা হয়ত-
অভি হাত উঁচিয়ে থামিয়ে দিলো,
-আমি জানি ও বেঁচে আছে আর এই শহরেই আছে কারণ আমি ওকে অনুভব করতে পারি।
জানিস ও একা একা ভয় পেত তাই একা থাকলেই আমাকে সে সময়ের ভিডিও পাঠাতো আমি যে প্রান্তেই থাকি না কেন আমার তা দেখতে হতো, আমার গ্যালারি ভর্তি ওর ভিডিও। আমি সারাক্ষন সে সব দেখি।

অভি হঠাৎ থেমে গেল, মিজানের কাছ থেকে ফোন নিয়ে পারভীন কে ফোন দিলো।
-পারভীন নোরার অভ্যাস ছিলো সব কিছু ভিডিও করে রাখতে৷ ওর মোবাইলে কিছু পেয়েছিলে?
– ওর মোবাইলে পাসওয়ার্ড ছিলো। ওর ফেইস বা ফিংগার ছাড়া হয়ত আরো কিছু আছে যা আমরা জানি না। আর হ্যাক করলে সব ডাটা চলে যাবে এমন স্টিটেম ছিলো তাই আমরা পারি না। অন্য কাউকে দেখানোর আগে তো তুমি নিয়ে গেলে সেদিন। কিছু করতে পারলে?

অভি আর কিছুই যেন শুনছে না। মিজানের হাতে মোবাইল দিয়ে বাসার দিকে দৌড় দিলো।
মিজান চিৎকার করে উঠলো, কি হয়েছে?
পারভীন ও সমানে বলে যাচ্ছে, কি হয়েছে?

অভি ততক্ষনে তিন তলায় উঠে গিয়েছে। মিজান বলল- ও তো রুমে গেল,
পারভীন বলল- আমরা সবার ব্যাংক একাউন্ট চেক করেছে। সন্দেহজনক কিছু পাই নি।

মিজান আচ্ছা বলে ফোন রেখে দিলো।
রুমে যেতেই দেখলো ও নোরা মোবাইল অন করে ফেলেছে আর ওর ভিডিও গুলো বড় স্মার্ট টিভিতে কানেক্ট করে দিয়েছে। একটা পর একটা ভিডিও দেখে যাচ্ছে।
বেশি ভাগ নোরার কুকুর কে নিয়ে ভিডিও। দেশে আসার ভিডিও। গাছ পালা রাস্তার ভিডিও। অভি অস্থির ভঙ্গিতে একের পর এক টেনে নিয়ে যাচ্ছে।

-তুই কীভাবে খুলেছিস মোবাইল টা। ওর মোবাইলের পাসওয়ার্ড আমার আর ওর জন্য কেনা ঘরের নামে ছিলো। বিয়ের প্রপোজ করতে ওকে গিফট করেছিলাম।
-তোরা বিয়ে করেছিলি?
– না। তার আগেই ব্রেকাপ।
– কেন?

অভি চুপ হয়ে গেল। মিজান ও ভিডিও গুলো দেখছে। কি আলিসান ঘর ওর। বড় লন। বড় গার্ডেন। কত বড় বড় রেস্টুরেন্টে ঘুরছে। কখনো সমুদ্রের মাঝে জাহাজে। কখনো হেলিকপ্টারে৷

একটা তে অভিকে নিয়ে একটা ভিডিও যেখান অভিকে মিস করছে এইটা বলছে তবে সেটা বাংলায় ও না ইংরেজি তেও না। মিজান কিছু বুঝছে না। অভি তাকিয়ে আছে।
মিজান বুঝছে না দেখে অভি ভিডিও টা চেঞ্জ করতে করতে বলল- পর্তুগালের ভাষা। ওর মায়ের দেশ।

তেমন কিছু পেল না। অভি শেষের দিকের ভিডিও গুলো দেখতে লাগলো। যেগুলো এই দেশে করা হয়েছে। সেখানে সন্দেহ জনক কিছু পেল না।
শেষের একটা ভিডিও চালছে শুধু লম্বা করিডোরের। যেখানে ও লিফটে করে ওর রুমে যাচ্ছে। আর ভিডিও করে যাচ্ছে। ফাঁকা সব কিছু। সেদিন যে অফিস দেখে এলো।

অভি সোফায় হেলান দিলো হেরে যাওয়া ভঙ্গিতে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল- ও যখন ভয় পায় তখন এমন ভিডিও করে। আগে আমাকে পাঠাতো। এখন হয়ত জমিয়ে রাখে।
মিজার অভির দিকে তাকালো। ছয় মিনিট ধরে শুধু এইসব চলছে। মিজান অভির দিকে ঘুরে তাকালো।
– কিছু তো নেই।পারভীন বলল ওরা কারো একাউন্টে এমন কিছু পায় নি।
অভিও অন্য সোফা থেকে সিগারেট নিতে নিচু হতেই হঠাৎ নোরা তীব্র স্বরে চেচিয়ে উঠলো,
– অভি হেল্প –

ওরা দুজনেই যখন ফিরে তাকালো তখন ক্যামেরা উল্টো হয়ে আছে কালো পর্দা। অভি আবার পেছেনে টানলো। নোরা ওর রুমে ঢুকে দরজা লক করার সময় কেউ ধাক্কা দিলো ওকে। মোবাইল নিচে পড়ে আছে। কারো মুখে কোন শব্দ নেই শুধু জিনিসপত্র পড়ার আওয়াজ হচ্ছে আর নোরা ‘ নো নো ‘ শব্দ। একটু পর ও মুখ কেউ চেপে ধরেছে। এমন শব্দ। পায়ের আওয়াজ।

অভি চোখ বন্ধ করে শব্দ গুলো শোনার চেষ্টা করলো। বলল-
– ওরা ছয় জন ছিলো। ছয় জনের জুতা শব্দ। কম্পিউটারের শব্দ ও শোনা যাচ্ছে।

মিজান ও তাকিয়ে রইলো। তখনো পর্দাটা কালো দেখাচ্ছে। বেড়িয় যাওয়ার শব্দ।
অনেক ক্ষন চুপচাপ। কোন শব্দ নেই। মিজান ভিডিও টা অফ করতে নিলো। অভি হাত ধরে ফেলল।
তখন কেউ মোবাইল টা হাতে নিলো। বেক ক্যামেরায় ছিলো তাই কারো সামান্য জুতা দেখা যাচ্ছে। হয়ত সে ভিডিও টা অফ করতে চাইছে৷ কখনো বেক কখনো সেল্ফি মুড করছে। কখনো ফ্লোর কখনো সিলিং দেখা যাচ্ছে। মিজান আর অভি যেন রুদ্ধশ্বাসে তাকিয়ে আছে। কারো চেহেরা দেখতে পাওয়া যায় কিনা। হঠাৎ কারো কপালেরে একটা দিক দেখা যেতেই ভিডিও টা শেষ হয়ে গেল।

অভি আর মিজান একে অপরের দিকে তাকাল, অভি আবার বেক করে কপাল টায় পস করে ছবি তুলল, পারভীন কে সেন্ড করে ফোন করল।

– তোমাদের সে অফিসে যত স্টাফ আছে, সিনিয়র , জুনিয়র, পিএ, যত ঝাড়ুদার, বেয়ারা এমন কি টয়লেট পরিস্কার লোক ছিল এই এক মাস সবার ছবি আমি চাই এখন।

– এখন?
– হ্যাঁ এখন। আর যে ছবিটা পাঠালাম সেটা কারো সাথে মিলে কিনা দেখ। আমি আসছি এখন। আর ভিডিও টাও দেখ।

অভি যেন একটা বড় আলো দেখতে পেল এখন। কিছুটা তো জানতে পেরেছে। এইবার শুধু একশনের অপেক্ষায়।

চোখ ক্লান্তিই যেন নেই এখন। মিজানের আর বের হতে ইচ্ছে না হলেও যেতে হবে। মিজান ও রেডি হচ্ছে দেখে অভি বলল-
– না, তোকে যেতে হবে না। আমি একা যাই। তোর কাল তোর মেয়েকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। আমি দরকার হলে ফোন দেব।

অভি আর অপেক্ষা না করে বের হয়ে গেল৷ মিজান তাকিয়ে রইলো।

-চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here