#ফাইন্ড_নোরা
#পর্ব_2,3
#দোলনা_বড়ুয়া_তৃষা
পর্ব_2
3.
এলার্মের শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো জেনির। বালিশের উপর উপুড় হয়ে শুয়েছিলো। স্বভাব বশতঃ বাম হাত বাড়িয়ে দিতেই ক্যাকটাসেরর কাঁটা ফুটাতে হাত সরিয়ে নিয়ে চোখ মেলে তাকালো।
সব অচেনা লাগছে ওর। দেওয়াল জুড়ে নানা রকম ছবি।
ফ্লোরে নিজের জিন্স আর হিল পড়ে আছে দেখে পাশ ফিরলো। উমুক্ত খোলা চওড়া পিঠ ; ওপাশ হয়ে শুয়ে আছে কেউ। নিজের দিকে তাকিয়ে চাদর টেনে বুকে উপর তুলে দিলো। হাঁটুতে মাথা রেখে একটু হাসলো।
ও অভির ঘরে আছে৷ কাল এইখানেই ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলো।
পায়ের কাছে পড়ে থাকা অভির টি-শার্ট টা পরে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো।
মোবাইলের গোঁ গোঁ শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো অভির।
বালিশের নিচ থেকে মোবাইল বের না করেই সাউন্ড কমিয়ে পাশ ফিরল।
ওয়াশরুমে কেউ পানি উইজ করছে শব্দ হচ্ছে শুনে চমকে উঠল। সোফার উপর জেনির ব্যাগটা দেখে আবার চোখ বন্ধ করল। এরপর উঠে বসল।
নিজের দিকে তাকিয়ে চাদর টেনে আবার হেলান দিলো বালিশে। তখন ওয়াশরুম থেকে শর্টস পরা সরু লম্বা পা ফেলে বেরিয়ে এলো জেনি।
জিন্সটা তুলে নিয়ে সোফায় বসে হাসি মুখে বলল-
– গুড মনিং।
অভি সামান্য ঝুঁকে এসে টেবিলে ক্যাকটাসের পাশ থেকে সিগারেট নিয়ে মুখে পুরে আগুন ধরিয়ে বলল-
-মনিং। তবে গুড নয়।
– কেন?
– এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল রাত?
শব্দ করেই হাসলো জেনি। জিন্স পরে। টি-শার্ট টা খুলে মাটিতে পড়ে থাকা কালো টপসটা পরে নিয়ে কোঁকড়া চুলগুলো বের করে দিল ভেতর থেকে।
ধোঁয়া ছেড়ে বলল-
– কফি খাবে?
– না, আমি অফিসে খেয়ে নেবো।
– আবার আসবে কবে?
– কোথায়?
অভি উঠে ওর জিন্স টা পরে বলল-
– এইখানে, আমার রুমে?
ব্যাগ থেকে চিরুনি বের করে চুলে বুলাতে বুলাতে জেনি বলল-
– ডোন্ট নো! মে বি নেভার-
অভি জেনির চুল সরিয়ে আলতো চুমু দিয়ে বলল-
– বাট ইট ওয়াজ গ্রেট!
জেনি আলতো হাসলো।
– অফিস যাবে না?
আবার বিছানায় শুয়ে পড়লো অভি। আবার মোবাইল বেজে উঠতেই হাতে নিয়ে স্কিনের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। বিড়বিড় করে বললো,
– আই এম সাসপেন্ডেড, ডোন্ট ইউ নো?
পেছন ফিরে বলল-
– ও, সরি।
আবার আয়নায় তাকিয়ে বলল-
-বাট ইটস গুড। ইউ নিড এ ব্রেক!
সিগারেট মুখে দিয়ে ধোঁয়া ছাড়লো অভি। জেনি ওর ব্যাগ টা কাঁধের একপাশ থেকে অন্য পাশে আড়াআড়ি ঝুলিয়ে বলল-
– আজ অন্য দেশে চলে যাবো আমি-
কথা শেষ করার আগেই অভি বলে উঠলো
– ওসব মরুভুমিতে গিয়ে কি পাবে? এইখানে আমার সাথে তুমিও লিভ নাও-
উচ্চস্বরে হেসে উঠলো জেনি,
– নো নো, আমি কোন রিলেশনশিপে যেতে চাই না। বাংলাদেশী কারো সাথে তো একদম না।
– কি খারাপ ভাই আমরা?
– বাবা হিসেবে খুব ভালো এরা, বাট নট টাইপ অফ পার্টনার।
– কেন তোমার বাবা কি মাকে জ্বালাতো নাকি?
আবার সোফায় বসে হিলটা পরতে পরতে বলল-
– দ্যা গেট ডির্ভোস, আই ওয়াজ জাস্ট সিক্স।
– হু, তোমার চেয়ে ভালো তো মেক্সিকান মেয়েটা ছিলো যাকে লাস্ট উইক এনেছিলাম। এইভাবেতো পালায়নি বিছানায় ফেলে রেখে।
– এখনো আছে মে বি তোমার আশায়। আমি চললাম।
জেনি দরজায় শব্দ করে বেড়িয়ে যেতেই আবার মোবাইল বেজে উঠলো, এইবার ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে উঠলো-
– এত কিসের ইগো তোমার?
– বিজি ছিলাম স্যার।
– আমি জানি কোন টাইমে বিজি থাকো তুমি, অফিসে আসো।
– স্যার আমি তো লিভে নেই, সাসপেন্ড-
– কথাবার্তা ছাড়া কারো নখ তুলে দাও, কারো চোখ, এত কন্টোল ছাড়া রাগ তোমার। বাট নাউ আই নিড উ-
– অনেক কন্ট্রোল অফিসার আছে তো স্যার। আমিও একটু লিভ চাই।
– বাংলাদেশের কেস না হলে তোমাকে ডাকতাম ও না আমি।
– আরো অনেকে তো আছে স্যার।
– ইটস এবাইউট নোরা।
বিছানা ছেড়ে উঠে বসল অভি, সিগারেট এশট্রেতে ফেলে বলল-
– ওর সাথে বাংলাদেশের কি?
– ও বাংলাদেশে গিয়েছিলো লাস্ট উইক,ফর এ গর্ভমেন্ট জব। আই সেন্ড হার। বাট নাও সি ইজ মিসিং। উই নিড টু গো বাংলাদেশ।
– স্যার আমি দেশে গেলে মা ধরে বিয়ে করিয়ে দেবে। অন্য কাউকে পাঠান।
– তোমার চেয়ে ভালো কেউ পারবে না এইটা হ্যান্ডেল করতে। ওরা এইটার দায়ও স্বীকার করতে চায় না। আর আমি জানি ইউ স্টিল ফিল ফর নোরা।
খুঁজে বের কর, আমিই তোমাদের বিয়ে দেবো। প্রমিজ।
অভি হেসে উঠল, সাউন্ডস লাইক স্কুল বয় টফি।
ওপাশ থেকেও হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে,
– কবে যেতে হবে?
– পারলে কাল যাও।
– ওকে।
উঠে দেওয়ালে লাগানো বড় পর্দাটা সরাতেই সবুজ ঘাসের উপর সাদা গ্রাউন পরা এক সুন্দরী মেয়ের ছবি। যার গাউনটা ঘুরছে তখনো, ওর মুখ একপাশে ফেরানো। কানের পাশে একটা সাদা ফুল। যেন রূপকথার কোন রাজকন্যা।
আলতো করে ছুঁয়ে দিলো ছবিটা। কেঁপে কেঁপে উঠছে হাতটা। চওড়া ফর্সা পিঠের মাংস পেশিগুলো যেন নড়ে উঠছে।
থামিয়ে দিলো নিজেকে, চোখ মুখ শক্ত করে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অভি, আর বিড়বিড় করে বলছে,
– আই উইল ফাইন্ড ইউ নোরা।
-চলবে
#ফাইন্ড_নোরা
#পর্ব_3
#দোলনা_বড়ুয়া_তৃষা
4.
– মেয়েটাকে চিকিৎসা না দিলে মারা যাবে।
ইন্দুর এমন কথায় ওষুধের প্যাকেট ঠিক করতে করতে ফিরে তাকালো সাহেলা। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি কিন্তু শুকনা শরীর তাই ত্রিশই লাগে। গ্রে কালার বোরকা আর গ্রে কালার বড় হিজাবে ঢাকা থাকে সবসময়। আগে এইটা ওর জামাইর দোকান ছিলো। সে মারা গেল দুইটা বাচ্ছাকে মানুষ করার জন্য সেই বসে এখন দোকানে।
– কার কথা বলছিস? কি হয়েছে?
ইন্দু সামনে আরেকটু ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বললো-
– ভীষণ জ্বর গায়ে৷ এক রত্তি মেয়ে গো আফা, কিন্তু কি কষ্ট না পাচ্ছে। হায়নার দল খুবলে খেয়েছে। ওই যে মিলের পাশে ডাস্টবিন আছে না? ওখানে পড়ে ছিলো।
– বলিস কি? পুলিশ কেইস হলে ফেঁসে যাবি।
– এইখানের পুলিশেরও কি কোন ভরসা আছে আপা? তাই ঘরে এনে পরিস্কার করিয়ে রেখে এলাম৷ গা পুড়ে যাচ্ছে।
এদিক ওদিক তাকিয়ে আবার ফিসফিস করে বললো-
– ওখান থেকে রক্ত পড়ছে।
সাহেলা চোখ মুখ কুঁকড়ে উঠলো৷ এইখানে অহরহ মেয়ের জীবনের গল্প সে জানে। কিন্তু যখনিই ধর্ষণের কথা শুনে সে আঁতকে উঠে।
জ্বরের ওষুধ, ব্যাথার ওষুধ আর একটা মলম দিলো।
ইন্দু একশো টাকা দিয়ে বলল, এখন এইটাই আছে।
সাহেলা আবার ব্যস্ত হয়ে পড়লো প্যাকেট গুলো গুছিয়ে রাখতে। ডাক্তার এসে পড়লে দম ফেলার টাইম থাকে না।
বলল-
– যা, পরে দিস। আর শোন দোকান বন্ধ করে আমি আসবো রাতে।
ইন্দু দ্রুত পা চালিয়ে বাড়ি ফিরতে চাইলো। এখন ওর সাথে রমিজ থাকে৷ ট্রাক নিয়ে যায় রাতের বেলা। দিনে ফিরে। অন্য জায়গায় ওর আরেক টা বউ আছে কিন্তু তাতে কি? এই জগতে শুধু নিজের কথা ভাবতে হয়। ইন্দুর মনে এখনো একটা বাচ্চা, গিন্নি সেজে রান্না করে ঘরে ফেরা স্বামীকে রান্না করে খাওয়ানোর একটা স্বপ্ন আছে। তার জন্য তো কাউকে চায়।
রমিজকে বলবে কিনা বুঝতে পারছে না। এত সুন্দর মেয়ে। ওর মনে আবার কু মতলব হলে? সদ্য কষ্ট এখনো সারেনি।
ওকে জানাবে না বলেই মনে মনে ঠিক করলো৷ তাছাড়া সামনে ইদ, ও বাড়ি চলে যাবে। কয়েক দিনের ব্যাপার।
ঘরে এসে তাড়াতাড়ি মেয়েটাকে ঔষুধ খাইয়ে দিলো। ঔষুধ পেটে পড়ার সাথে সাথে বমি করে দিলো। জোরে চেপে ধরলো বুকে ইন্দু ওকে।
মেয়েটাও কেমন যেন আঁকড়ে ধরতে চাইছে৷ অনেকক্ষণ এইভাবে ধরে রাখার পর মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়লো।
ইন্দু ভাবলো ওর বসে থাকলে চলবে না। মেয়েটা ঘুমাতে ঘুমাতে বাসা বাড়ির কাজ গুলো সেরে আসতে হবে।
ক্লান্ত শরীর যেন এক বিন্দুও নড়ার ইচ্ছে নেই। তাই সেও শুয়ে পড়লো। আজ রমিজ আসলো না৷ দুপুরে আরেক টু খাইয়ে ঔষুধ খাইয়ে দিলো মেয়েটাকে। সন্ধ্যার দিকে জ্বর ছাড়লো একটু। কিন্তু সারাশরীর ব্যাথা। সাহেলা আপাও এলো না। তাই মেয়েটার গা ঘেঁষেই শুয়ে পড়লো রাতেও।
পরের দিন আবার জ্বর কমে গেল। তাই ভাবলো সকালে খাইয়ে এইবার বের হতে হবে।
মেয়েটাকে রেখে যেতে ইচ্ছে করছে না। তাও যেতে হবে। রংচটা শাড়িটা খুলে ভালো একটা শাড়ি পরে নিলো। মেয়েটার দিকে একবার তাকালো। বাচ্চাদের মতো কুঁকড়ে দলা পাকিয়ে শুয়ে আছে। এই স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে যেন বড্ড বেমানান লাগছে। কিন্তু মানুষের পোশাক বড় অদ্ভুত জিনিস। ওকে নিজের সস্তা জামাতে নিজের কেউ লাগছে।
মেয়েটা কথা বলার মতো অবস্হায় নেই এখনো। মনটা ভার হয়ে গেল ওর দিকে তাকিয়ে। কিন্তু ছুটতে হবে। এখন না গেলে শিমু ভাবী ভীষণ ক্ষ্যাপে যাবে।
5.
অনেকক্ষণ ধরে রোদে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে মিজান। কালো শার্ট আর সানগ্লাসে আর এমন গাঁথুনি শরীরে এয়ারপোর্ট থেকে বের হওয়া মেয়েরাও একবার ফিরে তাকাচ্ছে ওর দিকে। পুলিশ বলে কথা।
অনেকক্ষণ ফোন বাজছে। গাড়িতে মোবাইল। ইচ্ছে করেই ধরছে না। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সিগারেট ফেলে গাড়ির জানলায় মাথা ঢুকিয়ে মোবাইলটা নিলো। দশটা মিসকল! কল ব্যাক করতে যাবে তার আগেই আবার কল এলো, শিমু নামটার সাথে জ্বলজ্বল করছে একটা বাচ্চা মেয়ের ছবি। এইটা ওর মেয়ে মিতুর ছবি। রিসিভ করতেই
ঝাঁঝালো স্বরে বলে উঠলো,
– মরে গেলেও তো খবর পাবে না,
– এই দুনিয়ায় খারাপ মানুষ সহজে মরে না, আর আমাদের মতো ভালো মানুষের জীবনের ঠিক নেই। বড় অদ্ভুত নিয়ম।
– মুখ সামলে কথা বলবে, এইখানে মেয়ে আছে নইলে-
– মেয়ের সামনে তুমি যেভাবে শুরু করলে আমিও উত্তর দিলাম, তাড়াতাড়ি বলো কেন ফোন দিচ্ছো?
– আমি কেমন আছি জিজ্ঞেস না করতে পারো, মেয়ে কেমন আছে সেটা তো জিজ্ঞেস কর।
– আমি জানি ও ভালো আছে, আজ ড্রয়িং হোমওয়ার্ক বাকি তাই এখন করছে।
চুপ হয়ে গেল শিমু। ওদিকে মেয়েকে ধমকালো, তুমি আবার বাবাকে ফোন করেছো?
– ওকে ধমকাচ্ছো কেন? বল, কি বলবে?
– কোথায় তুমি?
– যেখানেই থাকি, জাহান্নাম থেকে দূরে আছি। – মিজান-
– রাখছি-
– মেয়ের স্কুলে মিটিং আছে, দুইটার দিকে চলে এসো। আর তো তিন মাস বাকি, এখন অন্তত কিছু দায়িত্ব নাও।
– তিন মাস পর তো নিতে হবে না। তাই এখন থেকেই মিতুর কোন প্রিয় আংকেল কে নিয়ে গিয়ে অভ্যাস করাও।
আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দিলো। তীব্র রোদে এদিক ওদিক তাকিয়ে আরেকটা সিগারেট মুখে দিতে লাইটার জ্বালিয়ে দিলো কেউ। পাশ ফিরে তাকিয়েই হেসে উঠলো মিজান।
– অভি? কখন বের হলি?
– যখন কাটাকাটা কথা বলছিলি বউকে।
উচ্চস্বরে হেসে উঠল মিজান, গাড়ির দরজা খুলে উঠে বসল। অভিও ওর কালো ব্যাগ পেছনের সিটে রেখে উঠে বসলো৷ গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বললো-
– আর বউ, শালা পুলিশদের বিয়ে করাই উচিত না। সারাদিন চোর ডাকাতের পেছনে ঘুরে, সিনিয়রদের ঝাড়ির উপর জীবন, বোবা হয়ে যেতে হয়, বাড়ি গিয়ে বউ যখন বলে, চল আজ কিছু হোক-, তখন কি আর মুখ দিয়ে ঝাড়ি ছাড়া কিছু বের হয়? আব বউ ভাবে অন্য কেউ আছে জীবনে।
মেয়েটা বিয়ের পর পর না হলে বোধহয় এই জনমে বাবা ডাক ও শুনতাম না।
বলতে বলতে পেছনে ফিরে গাড়ি ব্যাক করল। রাস্তায় বেরিয়ে এলো গাড়ি।
– তারপর?
– তারপর আর কি? ড্রামা, ডির্ভোস চায় সে। যতই বুঝাই, কে বুঝে বল।
– আর মেয়ে?
– ভরণপোষণ আমার, থাকবে ওর কাছে। নিজের কাছে রাখতে পারার মতো টাইম থাকলে তো ডির্ভোস হতো না। আর তিন মাস বাকি, তারপর ফাইনাল। তোর কি খবর বল,যেমন ছিলি তেমনিই তো আছিস।
হেসে মাথা নাড়ল অভি, মিজান বাম হাতে হলুদ ফাইলটা এগিয়ে দিলো। অভি পাতা উল্টাতেই ছবিটা দেখে থেমে গেল।
– কোথায় যাবি এখন? নীলা আপুর বাসায়? আন্টি তো ওখানে।
– না মা জানে না আমি এসেছি। ভেবেছিলাম তোর সাথে থাকব। তুই নিজেই তো দেখি ঘর ছাড়া। হোটেলেই নিয়ে যা কোনো।
– হোটেলে যাবি কেন? আমি আর শফিক একটাতে থাকি। রুম একটা খালিই আছে। ওখানে থাকবি।
– আমার সমস্যা নেই। এখন আফসান হুইসেনের কাছে চল।
-রেস্ট নিবি না এত দূর জার্নি করে এলি-
-অফ্রিকার জংগলে একবছর থেকে এলে এইসব কিছুই মনে হবে না।
মিজান হাসলো, সামন্য ঝুঁকে ছবিটা দেখে বলল-
– তোর খুব ক্লোজ ছিলো নাকি? বাংলাদেশের?
– না, নামে বাঙালী, বাবা বাঙালী, মা বিদেশী, ছোট বেলায় মা বাবা আলাদা হয়, তখন থেকে মায়ের কাছে। তবে ওর বাবা অনেক পয়সা ওয়ালা আর সব কিছুর মালিকও।
-বাংলা বলতে পারে?
– খুব একটা না, আমার সাথে থেকে যা শিখেছে আর কি, বুঝে মোটামুটি।
– এইখানে আসতে গেল কেন?
– দেশ নিয়ে ওর একটা ফ্যান্টাসি কাজ করতো। আমিও আনবো বলেছিলাম। আমাদের ব্রেকাপ হয়ে গেল, আর হলো না। তাই বোধহয় এসেছিলো।
– অনেক ট্যালেন্ট মেয়ে নাকি?
ফাইল টা বন্ধ করে জানলায় হাত রেখে বাইরে তাকিয়ে বস্তি বাড়ি গুলোতে চোখ যেতেই চোখ নামিয়ে। নরম সুরে বলে উঠলো-
– শুধু ট্যালেন্ট নয়, এক প্রকার রত্ন বলা যায়।
কিন্তু কোথায় এখন? কোথায় তুমি নোরা?
-চলবে