আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা ❤️সিজন_২,পর্ব_২৭

আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা ❤️সিজন_২,পর্ব_২৭
সাহেদা_আক্তার

সাহেদারে রুমে নিয়া গেলাম। মানুষ তো উপরে নিচে ভরা। দুইজনেই চিপা চাপায় গিয়া শরীরটা এলিয়ে দিলাম।
.
.
.
.
রাত দুটো ছুঁই ছুঁই। ঘুমে আমি বেহুশ। এমন সময় সাহেদার গুতায় জাইগা উঠলাম। আমি চোখ কচলাতে কচলাতে কইলাম, কি হইসে? ও ফিসফিস কইরা কইলো, নিচে চল।

– এত রাতে নিচে কেন?

– ও আসবে?

– ওটা কে? ও……. ঐ ও। তা এত রাতে কেন?

– ধুর এত কথা বলতে পারবো না। সে আসছে। তুই আমার সাথে নিচে চল।

– কালকে বিয়ে করে তো একেবারেই চলে যাবি৷ এখন এই রাত বিরাতে দেখা করার কি দরকার পড়ল?

সাহেদা কিছু না বইলা একটানে আমারে নিয়া বাসার বাইরে আসলো। হলুদের অনুষ্ঠান শেষে এমনিতেও অনেক ক্লান্ত ছিলাম। এর মধ্যে কই থেকে যে এত শক্তি আসলো মেয়েটার আল্লাহ জানে! বাসার নিচে আইসা শুনলাম জামাই বাবু নাকি বাইকে কইরা আসবে দেখা করতে। আহা! কি পিরিতই না হয়ে গেছে ওদের মধ্যে। ক’দিন পরে তো ভার্সিটি খুলবে। তখনও দেখমু ওদের পিরিতের ঠ্যালায় আমি পরীক্ষায় ব্যাকলগ খামু।

আমরা নিচে দাঁড়াই আছি। আমি কিছুক্ষণ পর পর দীর্ঘশ্বাস ফালাইতেসি। সাহেদা জিজ্ঞেস করল, তোর জামাইরে মিস করছিস নাকি? আমি দাঁত কেলাইলাম। সোনা পাইসি তোমারে। জিগাইলাম, সাহেদা। ও রাস্তার এদিক ওদিকে তাকাইতে তাকাইতে বলল, বল।

– আমার জামাই কে রে?

– কে জানিস না?

– না। কার কথা বলিস?

– কেন? আকাশ ভাই।

– ধুর মজা করিস ক্যান?

– মজা করলাম কই? তুই তো ওরে বিয়ে করার জন্য পাগল।

– হুহ। করমু না ওরে বিয়ে। পঁচা গাজর।

– দেখা যাবে।

আমি কিছু বলার আগেই দুইজনরে দেখা গেল বাইকে করে আসতেসে। দেখেই আমি টাসকি খাইয়া আরেকটুর জন্য বাইকের তলে পড়ি নাই। আমার পঁচা গাজরটাও আসছে জামাইর সাথে। একটা সাদা পাঞ্জাবি পরা। তাতে সোনালি কাজ করা। চোখের সোনালি ফ্রেমের চশমা। সিল্কি চুলগুলা বাতাসে নড়তেসিলো। যেকেউ দেখলে মনে করবে আমরা দুইজন কাপল ড্রেস পড়সি। উফ! ভেবেই আমার সাগরে ডুব দিতে মন চাইতেসে। এত লজ্জা লাগতেসে যে মনে হয় সাগরও নীল থেকে লাল রঙ হই যাবে।

সাহেদা আয়ান ভাইয়ের সাথে কথা বলার জন্য এক সাইডে চইলা গেল। আকাশ আমার পাশে আইসা দাঁড়াইলো। সে ওদের দিকে তাকাই আছে আর আমি নিচের দিকে তাকাই পায়ের নখ দিয়ে জুতা খুটতেসি। হঠাৎ সে বলল, খুব সুন্দর লাগছে। শুনতেই আমার কান দিয়া ধোঁয়া বাইর হইতে লাগল।

– থ্যাংকস।

– হুম। দুইজনকে আসলেই অনেক মানিয়েছে।

আমি ওর দিকে তাকাইয়া বললাম, দুই জন? আপনি কাদের কথা বলছিলেন? সে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আয়ান আর সাহেদা। তুমি কার কথা ভাবছিলে? আমি ভাবসিলাম আমারে বলসিলো ভালো লাগতেসে। এখন দেখি……হুহ……কথাই কমু না। আমি চুপ কইরা রইলাম। হঠাৎ মনে হইলো একটু জিজ্ঞেস করা দরকার ঠিক আছে কিনা। রাতুলের যে অবস্থা দেখসিলাম। আমি ইতস্তত কইরা কইলাম, পেট ভালো হয়েছে?

– হুম।

– সত্যিই ঠিক আছেন?

– হ্যাঁ, কেন বলো তো? তুমি কি জানো নাকি আমার অনেক পেট খারাপ হবে?

– না এমনিই জিজ্ঞেস করলাম আর কি।

– আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তুমি জানতে। ঐ গাজরের হালুয়ায় কিছু মিশিয়েছিলে নাকি!? হু?

– না মানে আমি…

জিজ্ঞেস করে দেখি বিপদে পড়লাম৷ ধুর কেন যে সবসময় নিজের ঠ্যাংয়ে নিজে কুড়ালটা মারি! আমি কি জবাব দিমু সেটা ভাবতে ভাবতে হাতের নখ কাটতেসি। সে হঠাৎ বলল, হাতে মেহেদী পরেছো? দেখি। আকাশ আমার দুইহাত ধরে নিজের দিকে বাড়াইলো। আমি তো শুধু তাকেই দেখতেসি। আকাশ আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আমাকে ভালোবাসো?

আমি ওর কথা চমকে উঠলাম। তোতলাইতে তোতলাইতে বললাম, আআআমি? ককই না…তো। সে আমার দুই হাত দেখিয়ে বলল, আমার নাম লিখলে যে? আমি নিজের হাতের দিকে তাকাই দেখলাম আমার দুই হাত একসাথে জোড়া লাগালে আকাশ নামটা লেখা। এটা কখন লিখলো! আমি দেইখা চোরের মতো পালাইনোর পথ খুঁজতে লাগলাম। ও আমার দিকে তাকাই আছে। আমি তার দিকে তাকাইতে পারতেসি না। সে আরো কিছু বলার আগেই হঠাৎ পিছন ফিইরা দৌঁড় মারলাম। ওর একবার ছোঁয়া ডাক শুনসিলাম। কিন্তু কে শোনে কার কথা। এক দৌঁড়ে বাসায়।
.
.
.
.
সকালে সাহেদার ডাকে ঘুম ভাঙল। আমি চোখ কচলাইতে কচলাইতে উঠতেই সে রাগ কইরা কইলো, ছোঁয়া কালকে আমাকে রেখে চলে এসেছিলি কেন? আমি হাই তুলতে তুলতে কইলাম, তুমি পিরিত করছিলে। আমার অনেক ঘুম পাচ্ছিলো তাই তোদের বিরক্ত না করে চলে আসলাম।

– ঢং। এখন উঠো। এত গিজগিজের মধ্যে কেমনে যে মরার মতো ঘুমাস! ও হ্যাঁ, রাতুল ভাই এসেছিল তোর খোঁজে। তুই তো পড়ে পড়ে ঘুমাস। তাই আবার চলে গেছে।

– আচ্ছা।

– এখন তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নে তো। আমাকে নিয়ে পার্লারে যাবি।

– তা তো যাবো। এই কাহিনী কার দ্বারা সম্পন্ন হইলো আমাকে একটু তার নামটা বলতো।

আমি নিজের দুই হাত দেখাইলাম। সেখানে টকটকে খয়রি রঙে আকাশের নামটা ফুটে আছে। সাহেদা চোর চোর ভাব কইরা কইলো, ওমা ছোঁয়া! তোর হাতের রঙটা কি গাঢ় হয়েছে!? আর আমারটা কত হালকা হয়েছে।

– তোরটা আর আমারটা তো সেইমই।

– ধুর তোর ঘুম চোখে এমন মনে হচ্ছে। যা যা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নে।

সাহেদা বেটিটা আমারে জোর কইরা ওয়াশরুম পাঠাই দিলো। বের হয়ে দেখলাম সাহেদা সব গোছগাছ কইরা রেডি। আমারে কলা পাউরুটি ধরাই দিয়া বলল, চটপট খেয়ে নে। কি আর করা? পেটটারে ওগুলা খাওয়াই শান্তি করার পর পরই আমারে নিয়া সাহেদা পার্লারে দৌঁড় দিলো।

পার্লারের লোকেরা ওকে সাজাইতে বসছে। আমি দেখতেসি। সাহেদা এর ফাঁকে জিজ্ঞেস করল, কিরে, তুই সাজবি না?

– আমি কি সাজবো? তুই আমাকে পরার জন্য কিছু আনতে দিয়েছিস?

– এমা! আচ্ছা দাঁড়া। এখুনি ব্যবস্থা করছি।

সাহেদা কাকে একটা ফোন করে বলল, হ্যালো?… হুম একটা সমস্যা।… ছোঁয়ার শাড়ি আনতে ভুলে গেছি।… আচ্ছা, পুচকিকে দিয়ে পাঠিয়ে দিন।… আচ্ছা আচ্ছা। হ্যাঁ তৈরী হচ্ছি।…… হ্যাঁ হ্যাঁ পৌঁছে যাবো। ফোনটা রাখতে জিগাইলাম, এমন হ্যাঁ হ্যাঁ আচ্ছা আচ্ছা বলে কার সাথে কথা বললি? সে চোখ টিপে বলল, তোর জামাইর সাথে।

– ধুর, সারাক্ষণ জামাই জামাই করিস। বিয়া ঠিক হওয়ার পর থেকে জামাই ছাড়া আর কিচ্ছু মুখ দিয়ে বের হয় না।

– তোর বিশ্বাস হচ্ছে না? ফোন দিয়ে দেখাবো?

– না থাক। আমার শাড়ি আসলেই হলো।

একঘন্টা পর দরজায় নক হলো। দরজা খুলতেই কেউ একজন আমার উপর ঝাঁপাই পড়ল। আমি হতাশ ভাব কইরা সাহেদার দিকে তাকাইলাম। সে মিটি মিটি হাসতেসে। এদিকে পর্ষী ‘আম্মু আম্মু’ করতে করতে শেষ। এবার বুঝলাম ফোনের পুচকিটা কে ছিল। সে আমাকে একটা প্যাকেট ধরাই দিয়া বলল, আম্মু এটা তোমার। আমি প্যাকেট থেকে একটা শাড়ি বের করলাম। লাল কাঞ্জিভরম তসর সিল্কের একটা শাড়ি। সোনালি ফ্লোরাল কাজ করা। সোনালি পাড়ে লাল নকশা করা। দেখে খুব ভালো লাগলো। পর্ষী খুশিতে গদগদ হইয়া বলল, আম্মু যাও পইরা আসো। আব… মানে আমি কেমন পছন্দ করসি দেখতে হবে না? যাও যাও। পর্ষী এক প্রকার জোর কইরা ঠেলে পাঠাই দিল চেঞ্জ করার জন্য। পার্লারের লোকরা সুন্দর কইরা শাড়িটা পরাই দিল। এক ঘন্টায় আমার মেকআপও কমপ্লিট। পর্ষী পার্লারের লোকদের আরেকটা প্যাকেট ধরাই দিয়া বলল, এগুলা আম্মুকে পরিয়ে দাও। মহিলা কতগুলো গয়না বের করলো। দেখে বুঝলাম সোনার। আমি পর্ষীরে জিগাইলাম, এগুলো কার?

– তোমার। এখন তাড়াতাড়ি পরো।

– আমার মানে?

– উফ্! এত কথা বলো কেন আম্মু। পরো তো।

মহিলা আমাকে একটা চেইন চকার সেট পরালো। হাতে মোটা বালা। নাকে নথ। মাথায় টিকলি৷ বুঝলাম না আমার বিয়া না সাহেদার! পুরাই বউ বউ লাগতেসে সব মিলাই। আমি পার্লারের মহিলাকে বললাম, নথটা খুলে ফেলুন। পর্ষী কাঁদো কাঁদো হয়ে কইলো, আম্মু, সব পরো না হলে আমাকে খুব বকবে।

– কে বকবে?

– সেটা বলা যাবে না।

– না বললে আমিও পরবো না।

আমার কথায় সাথে সাথে পর্ষী ভ্যাঁ কইরা কাইন্দা দিল। আমি মানা করতেসি শুনতেসে না। সবাই তাকাই আছে আমাদের দিকে। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেইলা কইলাম, আচ্ছা আচ্ছা, সব পরবো। সাথে সাথে কান্না হাওয়া। চোখ মুইছা পিচ্চি শাঁকচুন্নিটা দাঁত কেলাইলো। মহিলা আমার খোলা চুলের দুইপাশে দুইটা কইরা লাল গোলাপ গুইজা দিল। আজ আমার বড়ো চুল নাই দেখে। থাকলে খোঁপা কইরা পুরো খোঁপায় গোলাপ গুইজা দিতাম। সাহেদার সাজ আমার আগে শেষ। আমারে দেইখা বলল, যাহ!

– কি?

– তুই আমার পাশে থাকলে আমার দিকে কেউ তাকাবেই না।

– ঢং।

পর্ষী আমারে জড়াই ধইরা বলল, আমার আম্মু বেস্ট আম্মু। সাহেদা ওর নাক টিপে দিয়া বলল, একদম ঠিক। আমি আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ছাইড়া মনে মনে কইলাম, এ মাইয়ার আম্মু ডাকটা বন্ধ করা গেল না।
.
.
.
.
আমরা কমিউনিটি সেন্টারে আড়াইটার দিকে পৌঁছাইলাম। আয়ানরা তিনটার দিকে চইলা আসলো। বরপক্ষে দেখলাম গাজরটাও আছে। হয়ত কলিগ হিসেবে আসছে। কিন্তু তার সাথে শিং মাছটা কেন আসলো বুঝলাম না। টকটকে লাল রঙের একটা লং স্কার্ট পরে আসছে আর সারাক্ষণ গাজরের সাথে চিপকাই আছে। কি বিরক্তি! আজকে সাহেদার বিয়ে দেখে কিছু কইলাম না। খাওয়া দাওয়ার পার্ট শেষ হইতে হইতে চারটা। এরপর আয়ান ভাইকে সবাই খুঁজতে লাগল বিয়ে পরানোর জন্য। সে কোনদিকে যেন হাওয়া হই গেল। গেলটা কই!

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here