দ্বিতীয়_বসন্ত,পর্ব-৫
লেখনীতে: নুরুন্নাহার_তিথি
উপস্থিত কিছু আন্টিরা রিথীকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করছে যা রুদ্ধর পছন্দ হচ্ছে না তাই রুদ্ধ চিৎকার করে বল,
–এনাফ ইজ এনাফ! আপনারা রিথীকে নিয়ে বাজে কমেন্ট করার আগে সবটা জেনে নিবেন। আর আমি আজকেই রিথীকে বিয়ে করবো। যে যাই বলুক আমি শুনবো না। ওর ক্যারেকটার নিয়ে কথা হচ্ছে তো আমার জন্যই তাইনা? সো, আই উইল ম্যারি হার রাইট নাও! আফটার দেন ইউ কান্ট টক ননসেন্স এবাউট রিথী।
রুদ্ধ এটা বলে রুম থেকে বের হয়ে চলে যায়। সানভি তাজ্জব বনে যায় পুরা। সারিকাও হতবাক! রুদ্ধর মা প্রথমে দ্বিমনা করছিল বিধবা ও বয়সে বড় মেয়েকে ছেলের বউ করতে। রুদ্ধর বাবা তাকে বুঝায় এরপর সে রাজী হয়।
রিথীকে মালিহা চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে জাগায়। রিথীর কাছে সবকিছু কেমন ডাবল ডাবল লাগছে তাই সে মালিহাকে বলে,
–সব ডাবল কেনো?
মালিহা বুঝে যায় রিথী ড্রাংক বা কেউ করিয়েছে। মালিহা ও রিহা ম্যানেজারকে বলে ওয়েটারকে দিয়ে লেবু পানি আনিয়ে রিথীকে খাওয়ায়। সবা মহিলারা রুম থেকে বেরিয়ে গার্ডেনে চলে যায়। মিস্টার রাশেদে রিসোর্ট ম্যানেজারকে বলে কাজি খুঁজে আনতে।
এদিকে, রিথীকে যখন বিয়ের কথা বলা হয় রিথী রেগে গিয়ে বলে,
–আমি বিয়ে করবো না। বিয়ে ছেলে খেলা না যে মিথ্যা অপবাদ গুঁচাতে বিয়ে করতে হবে। আমি জানিনা আমি এখানে কিভাবে এসেছি। তাই আমাকে আর রুদ্ধকে নিয়ে বাজে কথা বলার কারন নাই। বিয়ে আমি করবো না। আমি নিদ্রর স্ত্রী আর সেটাই থাকবো।
মিস্টার বাশার বলে,
–দেখো রিথী মা, তুমি আমার মেয়ে। তোমার কোনো কাজে আমি বাঁধা দেইনি। নিদ্রর সাথে বিয়ে করতে চেয়েছ রাজী হয়েছি। কিন্তু আল্লাহ যদি তাকে তোমার সাথে খনিকের জন্য পাঠায় তাহলে কি তোমার জীবন থেমে যাবে? তোমার কোনো ছেলে-মেয়েও নেই তাই তুমি বুঝতে পারছো না। কম বয়সি বিধবা মেয়েকে বাবা কার আশায় রেখে যাবে বলো? তোমাকে আমি এখনি বিয়ে দিতাম না কিন্তু পরিস্থিতিটাই এমন। একদিন না একদিন তো বিয়ে দিতাম তোমার। সেটা যদি আজকে হয় তো ক্ষতি কি! রুদ্ধকে আমি চিনি। সে আমাকে তোমার কথা শুনে বলেছিল যেনো তোমাকে এখানে নিয়ে আসি। সে তোমাকে আগের মতো করবে বলেছে। এক বাবার কাছে এটা অনেক বড় আশ্বাস। নিদ্রর যদি ফিরে আসার এতটুকুও চান্স থাকতো তবে আমি তোমাকে বলতাম না বিয়ে করতে। কিন্তু মা, নিদ্র আর ফিরবে না।
মিস্টার বাশারের কথায় রিথীর চোখ দিয়ে জল গড়ালেও সে বলে,
–প্লিজ আব্বু। আমি চাইনা বিয়ে করতে। আমি ভালো আছি নিদ্রের স্মৃতি নিয়ে। আমার জীবনে নিদ্রই প্রথম ও শেষ বসন্ত। দ্বিতীয় বসন্ত আসবে না কোনোদিন। আমার জন্য আমি কারো জীবন নষ্ট করতে চাইনা।
মিস্টার রাশেদ এবার রুমের ভিতরে আসেন। সে দরজার বাহির থেকে শুনছিলেন সব। সে এসে রিথীর পাশে বসে রিথীর মাথায় হাত রেখে বলে,
–দেখো মা, আমি চাই আমার ছেলের জীবন সঙ্গীনী ভালো মনের হোক। তুমি খুব ভালো মনের মেয়ে। আর ছেলে আমার তোমায় বিয়ে করতে চায়। আমার ছেলে ঝোঁকের বশে সিদ্ধান্ত নেয়না। সে তোমাকে প্রোটেক্ট করতে চায়। তোমার কথা শুনে সে নিজ থেকে বলেছে সে তোমাকে নরমাল লাইফ দিতে চায়। আমার ছেলে ফাজলামি করলেও তাকে আমি আর্মির অনুশাসনে বড় করেছি। তুমি মানা করো না প্লিজ। অতিত ভুলতে না পারলেও সেটাকে মনের মধ্যে বন্ধি করে রাখতে হয় নাহলে সামনে এগুতে পারবেনা।
রিথী তাকেও বুজানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কাউকেই বুঝাতে পারছে না। ওরাও রিথীকে রাজি করাতে পারছে না। কিছুক্ষণ পর রুদ্ধ আসে আর বলে,
–আপনারা একটু বাহিরে যাবেন? আমি একটু কথা বলবো।
সবাই না চাওয়া স্বত্বেও বাহিরে যায়। রুদ্ধ দরজা লাগিয়ে চেয়ার টেনে বসে। রিথী রুদ্ধর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। রুদ্ধ ভনিতা না করে বলে,
–আমাকে বিয়ে করতে কি সমস্যা? আমি কি খারাপ দেখতে নাকি আমার কোনো সমস্যা আছে?
রিথী কাটকাট গলায় বলে,
–আমি দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে চাইনা। তাই আপনি কেমন দেখতে বা সমস্যা আছে কিনা তা আমার জানার দরকার নেই।
রুদ্ধ হাত উঁচু করে বলে,
–ওয়েল! করো না বিয়ে! কিন্তু তুমি কি জানো তোমাকে খারাপ বানানো এসব একটা চক্রান্ত!
রিথী অবাক হয়ে তাকায়। রুদ্ধ তা দেখে বলে,
–সানভিরা করেছে এটা এবং আমাদের বাবাদের সব ফ্রেন্ডদের ওয়াইফরা তোমাকে নিয়ে বাজে কুটক্তি করছে কিছুটা। আংকেলকে আমি কাঁদতে দেখিছি জানো। রিহাকে জড়িয়ে সে নিঃশব্দে চোখের জল ফেলেছে। সে জানে তুমি নির্দোষ তবে প্রমান নেই। সিসিটিভি প্রমান টাও নেই কারন দুই দিনের জন্য রিসোর্টে বাবা রিকুয়েস্ট করেছিল সিসিটিভি অফ রাখতে ফর আওয়ার ফ্রিডম। কিন্তু এটাতেই যে কাল হয়ে দাঁড়ালো। আর সানভিরা কিন্তু তোমার লিপস্টিক পর্যন্ত ঘেটে দিয়েছে। আয়নায় দেখো।
রিথী জলদি করে উঠে আয়নায় দেখে। সত্যি তার লিপস্টিক ছড়িয়ে গেছে। রুদ্ধ পেছোন থেকে বলে,
–এখন মুখে যতোই বলো কোনো প্রুভ ছাড়া কেউ বিশ্বাস করবে না। আর তুমি ইনটক্সিসাইট ছিলে। সেটাও যে কেউ করিয়েছে তার প্রমান নেই। আমি জানলাম কিভাবে! মালিহা আমাকে তার সন্দেহের কথা জানিয়েছে। নাউ ডিসিশন ইজ ইউরস। তোমার বাবার কিন্তু এমনিতে অনেক লজ্জা জনক পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। তুমি নিদ্রকে ভালোবাসো এতে আমার কোনো প্রবলেম নেই। নিদ্র দুনিয়াতে নেই তাই আমার ভয়ও থাকবে না যে বউ আমার পালিয়ে যাবে! তোমার প্রথম ভালোবাসা ও স্বামী সে তাই তার প্রতি ভালোবাসা থাকবেই বরং না থাকলে সেটা প্রশ্নযোগ্য। ভেবে সিদ্ধান্ত নাও। আর আমার জীবন নষ্ট হবে কিনা সেটা আমার উপর ছেড়ে দেও।
রুদ্ধ রুম থেকে চলে গিয়ে ওদের বাবাদের যেতে বলে ভিতরে। রিথী নির্বাক হয়ে বসে আছে। সে সত্যি চায় না কেউ নিদ্রর জায়গা নিক ওর জীবনে। পরে নিদ্র যদি ওর স্বপ্নে আর না আসে! প্রতিদিন সে স্বপ্নে রিথী নিদ্রকে দেখে।
সাইকোলজি বলে,
” আমরা যা নিয়ে বেশি চিন্তা করি বা পুরোনো কোনো ঘটনার সেটাই রিফলেকশন হয়ে আমাদের ঘুমের সময় দেখি। আমাদের অবচেতন মনের ভাবনাকে অনেক সময় স্বপ্নের মধ্যে বাস্তব আকারে দেখি।”
মিস্টার বাশার তার মেয়ের দিকে তাকায়। রিথীও তার বাবার দিকে তাকায়। রিথী ভাবে,
“এই মানুষটা আমাকে ভুল শুধরে সবসময় ভালো কাজ করতে ইন্সপ্রেরেশন দিয়েছে। নিদ্র মারা যাবার পর থেকে আমার মুখে হাসি দেখার জন্য কতো কিছু করেছে বা করতে চেয়েছে। কিন্তু আমার মৌনতার কারনে সে দমে যেতো। এক বাবা নিজের মেয়ের বদনাম মানতে পারেনা আর সেখানে আমার বাবা আমাকে নিয়ে মিথ্যা অপবাদ গুলো শুনেছে। আমাদের তিন বোনকে আগলে রেখেছে। কতোকিছু মেনে নিয়েছে। বাবারা সবসময় নিজের মেয়েকে তার পরে কে আগলে রাখবে এমন মানুষ খোঁজে। তাকে কিভাবে কষ্ট দেই! নিদ্রকে আমি মৃত্যু ছাড়া পাবোও না। আর নিজের মৃত্যু কামনা করতে করতে ভুলেই গেছি যে আমি একজন মৃত মানুষের ভালোবাসাটাই দেখছি আর এদিকে যে বাবা আমাকে ২১ টা বছর যাবত ভালোবাসে সেটা দেখছি না। এমন তো না যে বাবা আমাকে ও নিদ্রকে আলাদা করতে চেয়েছে!”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিথী বিমুর্ষ নয়নে মাথা নাড়িয়ে বিয়েতে সম্মতি দেয়। বিয়ের পর সে তার নিজের মতো থাকবে এটাও বলে। পারিপাশ্বিক সাপেক্ষে সে বিয়েটা করছে তবে সে তার ও নিদ্রর মাঝে কাউকে আসতে দিবে না। সবার সামনে বিয়েটা হোক এরপর দেখা যাবে কি হয়।
কিছুক্ষণ পর কাজি এসে রুদ্ধ ও রিথীর বিয়ে পড়িয়ে দেয়। এরপর রিথীকে রিসোর্টে রুদ্ধর রুমে রেখে সবাই চলে যায়। মূলত রিথী একা থাকতে চেয়েছে। ঘড়িতে এখন রাত দশটা বাজছে প্রায়। ডিনার তো সবাই ৮.৩০ তেই করে ফেলেছে।
চলবে ইনশাআল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কার্টেসি ছাড়া কপি করবেন না। রিচেক করা হয়নি।