রংধনুর_রঙ_কালো,১২

রংধনুর_রঙ_কালো,১২

অরিনের হাসি থামিয়ে ইলহান উচ্চশব্দে দৃঢ় গলায় বললো,” আমি বিশ্বাস করি না অরিন। তুমি আমাকে ঠকাতে পারো এটা আমি কখনও বিশ্বাস করি না।”
অরিন কাঠের মতো শক্ত চেহারা করে বললো,” কিন্তু তুমি তো আমাকে ঠিকই ঠকাতে পেরেছো ইলহান।”
” হ্যাঁ। নোংরা আমি। কলুষিত, নিকৃষ্ট, অপরাধী, পাপী! খুব খারাপ একজন মানুষ। এই খারাপ মানুষটিই এখন তার খারাপ কাজের জন্য ক্ষমা চাইছে। তুমি তো আমার কাছে সবচেয়ে পবিত্র, বিশুদ্ধ, স্নিগ্ধ। আমাকে ক্ষমা করতে পারবে না অরিন?”
অরিন মলিন হাসি দিয়ে বললো,
” আমরা সবসময় চাই আমাদের বিপরীত মানুষটি পবিত্র হোক। সে যেনো যেকোনো পরিস্থিতিতে সৎ থাকে, বিশুদ্ধ থাকে। কিন্তু নিজে তার জন্য সৎ হতে পারি না। পৃথিবীর সবচেয়ে সরল মনটিকেই আমরা বেছে নেই প্রতারণা করে ঠকানোর জন্য। কেনো বলো তো? ”
” স্যরি অরিন, এক্সট্রিমলি স্যরি।”
” এতোই যখন বিশ্বাস আমার প্রতি তাহলে অন্বয়সাহেবের গাঁয়ে হাত তুলেছিলে কেনো? আমার সাথে তাকে দেখলে তোমার গা জ্বলে কেনো?”
” তোমার প্রতি আমার বিশ্বাস আছে। কিন্তু ওই ব্যারিস্টারের উপর একটুও বিশ্বাস নেই। সে তোমাকে কিরকম নজরে দেখে সেটা যদি তুমি জানতে..”
ইলহানের কথা শেষ হওয়ার আগেই অরিন বললো,” জানি আমি। আর যাই হোক সে অন্তত তোমার থেকে অনেক ভালো। ”
ইলহান অরিনের ডানহাত নিয়ে তার উল্টোপিঠে চুমু দিয়ে বললো,
” অরিন, আমার মায়াপরী। তুমি তো আমার একটামাত্র বউ। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করো। কথা দিচ্ছি আর কখনও তোমার বিশ্বাস ভাঙবো না। এই অধমকে কি আর একটা সুযোগ দেওয়া যায় না?”
অরিন হাত সরিয়ে বললো,” সুযোগ হয়তো আমি তোমাকে দিতাম। কিন্তু পরিবারের কাছে আমাকে ছোট করে আর বিনা অপরাধে অন্বয়সাহেবের গাঁয়ে হাত উঠিয়ে তুমি তোমার সংকীর্ণ মনের পরিচয় দিয়েছো। আমার মনে তোমার জন্য যেটুকু জায়গা ছিল সম্পূর্ণটাই বিতৃষ্ণায় পরিপূর্ণ এখন। আমি চাইলেও আর তোমাকে আগের মতো ভালোবাসতে পারবো না ইলহান। ”
ইলহান আলতোভাবে অরিনের গাল স্পর্শ করে বললো,” অরিন, লক্ষী আমার। প্লিজ এইরকম বলো না। আমি রাগের মাথায় মা-বাবাকে তখন ফোন করে ওইসব বলেছি। নিজের উপর কন্ট্রোল ছিল না। ভুল হয়ে গেছে, স্যরি তো! আচ্ছা, আমি এবার সবাইকে ফোন করে বুঝিয়ে বলবো তোমার কোনো দোষ নেই। সব দোষ আমার ছিল। আমিই শুধু শুধু তোমাকে সন্দেহ করেছিলাম। ঠিকাছে?”
” এই কাজের মাধ্যমে তুমি প্রমাণ করে দিয়েছো আমার মান-সম্মানের কোনো গুরুত্বই তোমার কাছে নেই। ভালোবাসার প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ থাকলে তুমি এই কাজ করতে না। যা হোক, তোমার যা ইচ্ছা হয় করো। কিন্তু একটা কথা মনে রেখো, একবার মন ভেঙে গেলে তা আর কখনও জোড়া লাগানো যায় না। আমার মন ভেঙে গেছে ইলহান। তুমি আমার মনের সুপ্ত ভালোবাসার অনুভূতিগুলো ভেঙে খণ্ড খন্ড করে দিয়েছো।”
অরিনের টলমল চোখের দিকে চেয়ে থেকে ইলহান হঠাৎ ওর মাথাটা বুকে জড়িয়ে ধরে ভেজা গলায় বললো,” স্যরি, স্যরি, স্যরি! আমাকে যা খুশি শাস্তি দাও অরিন। কিন্তু ছেড়ে যেও না। আমি পারবো না তোমাকে ছাড়া থাকতে।”
মেলবোর্নে ঝমঝমে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে ভেসে যাচ্ছে স্বচ্ছ সড়ক। যান্ত্রিক শহরের বুকে বৃষ্টির ফোঁটা এনে দিয়েছে আশ্চর্য সৌন্দর্য্য! ঘড়িতে বারোটা বাজে। ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ কিছুই হয়নি। পরে দু’টোই একসাথে হলো। ইলহান নিজের হাতে লাঞ্চ রেডি করেছিল। অরিন শুধু পাশে পাশে থেকেছে। এছাড়া অন্যকোনো উপায়ও নেই তার। সুন্দর করে ইলহানকে চায়ের কাপে পেস্ট্রি বানাতে দেখে অরিন জিজ্ঞেস করলো,” দারুণ তো! এগুলো তোমার কোন গার্লফ্রেন্ডের কাছে শিখেছো?”
ইলহান জবাব দিল না তখন। গার্লফ্রেন্ড নিয়ে খোঁটা তাকে দীর্ঘসময় সহ্য করতে হবে বোঝা যাচ্ছে। অরিন সকাল থেকেই তার মোবাইলটা খুঁজে পাচ্ছে না। অন্বয়সাহেব নিশ্চয়ই এতোক্ষণে ফোন করতে করতে পাগল হয়ে গেছেন। তিনি হয়তো গতরাত থেকেই অপেক্ষা করছেন অরিনের ফিরে আসার জন্য। এখন অবধি অরিন তাকে নিজের একটা খবর জানাতে পারেনি৷ তিনি নিশ্চিত ধরেই নিয়েছেন যে অরিন বিপদগ্রস্ত। অরিনের কেনো জানি মনে হলো, অন্বয়সাহেব তাকে খুঁজতে এইখানে চলে আসবেন। হয়তো এসে গেছেনও। অরিন বারান্দায় গেলেই তাকে দেখতে পাবে৷ এই আশা নিয়ে সে বারান্দায় গেল। অগত্যা ইলহানকেও টেনে বারান্দায় আনতে হলো। কারণ দু’জনের হাত আটকানো। অরিন বারান্দায় এসে বিস্মিত এবং হতচকিত হলো। অন্বয় সাহেব আসলেই গাড়ির সাথে ঠেস দিয়ে মাথার উপর ছাতা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন।এতো উপর থেকে অরিনদের তিনি খেয়াল করলেন না। কিন্তু ইলহান কঠিনগলায় জিজ্ঞেস করলো,
” এই লোক এখানে কেনো?”
অরিন নির্বিকার উত্তর দিল,” আমি কি জানি?”
ইলহান পূর্বের চেয়েও কঠিন কণ্ঠে বললো,
” ভিতরে চলো।”
তারপর ইলহান অরিনকে টেনে ভেতরে এনেই বারান্দার গ্লাস আটকে দিল। অরিন খিলখিল করে হাসতে লাগলো। ইলহান সেই হাসি দেখে অবাক চোখে তাকালো।
” হাসছো কেনো?”
” তোমার নির্বুদ্ধিতা দেখে হাসছি। এভাবেও কাউকে আটকে রাখা যায়? আমিও দেখবো, কতদিন তুমি আমাকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে নিজের কাছে রাখতে পারো।”
ইলহান মৃদু হেসে অরিনের মুখের কাছে ঝুঁকে বললো,” সারাজীবন তোমাকে আমি আটকে রাখতে পারি। কারণ আমার বিয়ে করা বউ তুমি। তোমার উপর অধিকারবোধ আমার সবচেয়ে বেশি।”
তারপর গানের সুরে আওড়ালো,
” তুমি চাইলেই আমি তোমার। না চাইলেও তুমি আমার..”
হঠাৎ ইলহানের গলায় গান শুনে অরিন ভ্রু কুচকে তাকালো। ইলহান জানালায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,” তোমার মনে আছে অরিন? আমাদের বিয়েরদিন রাতেও এমন বৃষ্টি ছিল। আমি তোমাকে কোলে করে বারান্দায় নিয়ে গেছিলাম। কত সুন্দর ছিল সেই দিনগুলো। এইখানে আসার পর একবারও সুন্দর সময় কাটেনি আমাদের। ”
অরিন অগ্নিদৃষ্টিতে বললো,” খবরদার! ভুলেও এই সাহস দেখাবে না। আমার কাছে আসার চেষ্টা করলে আমি তোমাকে.. না, নিজেকেই শেষ করে ফেলবো। তোমার মতো প্রতারকের স্পর্শ আমার জন্য বিষ। বুঝেছো বিষ!”
” কিন্তু আমি যে তৃষ্ণায় মরে যাচ্ছি অরিন।”
” এই তাহলে আসল কারণ আমাকে আটকে রাখার?”
ইলহান অগ্রসর হয়ে অরিনের ঠোঁটে আঙুল রেখে বললো,” আসল কারণ না। কিন্তু হতে পারে এটাও একটা কারণ!”
অরিনের হৃদযন্ত্রের ক্রিয়াকলাপ অস্বাভাবিক বেড়ে গেল। সে ইলহানের আঙুল নিজের ঠোঁট থেকে সরিয়ে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললো,” প্লিজ ইলহান। তোমার প্রতি শেষ যে বিশ্বাস অবশিষ্ট আছে সেটা অন্তত ভেঙে দিও না। তুমি কখনও আমাকে জোর করোনি। আশা করি এবারও করবে না।”
ইলহানের চেহারায় সুক্ষ্ম হাসির রেশ ভেসে উঠলো।
” আগে কখনও জোর করার প্রয়োজন হয়নি। এখন যদি প্রয়োজন হয়, জোর করতেও পারি!”
অরিনের চেহারাটা মুহুর্তেই কাগজের ন্যায় সাদা হয়ে গেল। ইলহান এতে খুব মজা পেল। হেসে কুটি কুটি হয়ে একহাতে অরিনকে জড়িয়ে ধরলো। মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,” ভয় পেয়ো না। আমি মজা করেছি। তোমাকে কষ্ট দেওয়ার মতো কোনো কাজ আমি করবো না অরিন! অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। এখন সময় এসেছে কষ্টগুলো প্রশমিত করার।”
অরিন মনে মনে ভাবলো, আসলেই কি কষ্ট প্রশমিত করা যায়?
বৃষ্টিস্নাত আয়েশী দুপুরে বিছানায় আরাম করে শুতেই কখন যেনো ঘুমিয়ে পড়েছে ইলহান। অরিনের শুয়ে থাকতে খারাপ লাগছে না। কিন্তু ঘুমানোর মতো মানসিকতাও তার নেই। ইলহানের পাশে শুয়ে নানারকম জল্পনা-কল্পনায় ব্যস্ত হয়ে উঠেছে সে। একটা সময় ছিল, যখন ইলহানের ভালোবাসায় অরিন খুঁজে পেতো সর্বসুখ। ইলহানের আদরে নিজেকে শ্রেষ্ঠ ভাগ্যবতী মনে হতো। নিজের ভাগ্যে নিজেরই ঈর্ষা হতো। মাঝরাতে প্রায়ই অরিন ঘুম ভেঙে অনুভব করতো, নির্ঘুম ইলহান মত্ত হয়ে তাকে কোমল, তুলতুলে স্পর্শে আদর করছে। সেই মিষ্টি অনুভূতির কাছে অরিনের অন্য সবকিছু তুচ্ছ মনে হতো। ইলহানকে জড়িয়ে ধরে কত পাগলামি সে করেছে রাতের পর রাত। কত বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা, জোৎস্না রাত স্বর্গীয় মুহুর্তের মতো কেটে গেছে একে-অপরের ভালোবাসায় মগ্ন থেকে। একসাথে তারা নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে প্রতিদিন। সেই মধুময় সুখের দিনগুলো এতো দ্রুত শেষ হয়ে যাবে কে জানতো? এক মুহুর্ত অরিনের সুভাষ ছাড়া থাকতে না পারা ইলহান বিদেশে এসেই কেমন বদলে গেল। আচ্ছা, তার সবকিছুই কি অভিনয় ছিল? নাকি সত্যি ভালোবেসেছিল সে অরিনকে?অবশ্য ভালোবাসলে কি এমন নিষ্ঠুরভাবে ঠকাতে পারতো? অন্য একটি মেয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার আগ মুহুর্তে কি ইলহানের একবারও মনে হয়নি অরিনের কথা? তার দৃশ্যপটে কি ভেসে উঠেনি অরিনের অসহায় মুখ? কিভাবে পারলো সে এতোবড় প্রতারণা করতে? অরিন নিজে কি পারতো ইলহানকে ছাড়া অন্যকোনো পুরুষের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে? কক্ষনো পারতো না। এখনও তো পারবে না। ইলহান ছাড়া অন্যকারো স্পর্শ সহ্য করার আগে যেনো তার মৃত্যু হয়। পাশ ফিরে ইলহানের অদ্ভুত সুন্দর ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে অরিনের ভীষণ কান্না পেল। ভাবতেই কষ্টে বুক ফেটে যায় যে এই মানুষটি একজন বিশ্বাসঘাতক। অরিন ছাড়াও তার জীবনে শত শত নারীর উপস্থিতি আছে। সোফিয়া নামের এক পরমা সুন্দরীর সাথে তার দীর্ঘতম সম্পর্ক! আচ্ছা, সোফিয়াও কি অরিনের মতো ইলহানের টোল পড়া গালে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়? তার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে? এলোমেলো ব্রাউনিশ চুলে মুখ গুঁজে প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলে? ইশশ, অরিনের বুকে এহেন যন্ত্রণা হচ্ছে কেনো? পাজরের এই অদ্ভুত টনটনে ব্যথা থামানোর উপায় কি? অরিনের সত্যি ইচ্ছে করছে ইলহানকে খুন করে ফেলতে। সে এতো ভয়ংকরভাবে অরিনকে শাস্তি না দিলেও পারতো। কিন্তু অরিনের অপরাধ কি ছিল? ইলহানকে ভালোবেসে বিয়ে করাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় অপরাধ ছিল। সেই অপরাধের শাস্তি হলো এই অসীম যন্ত্রণা। ইলহানের সাইলেন্ট করা মোবাইলে কল এসেছে। অরিন হঠাৎ স্ক্রিনে তাকিয়ে বুঝতে পারলো। কারো নাম নেই, একটা অদ্ভুত নাম্বার। পরে মনে হলো বাংলাদেশী ডিজিটের নাম্বার দেখতে দেখতে অভ্যস্ত চোখ হঠাৎ বিদেশী নাম্বার দেখে চমকে গেছে। অরিন ইলহানকে ডেকে তুললো।
” তোমার মোবাইল বাজছে। উঠে দেখো।”
ইলহান চোখ কচলাতে কচলাতে বললো,” কে?”
” জানি না। অপরিচিত নাম্বার।”
” তুমি ধরে বলো আমি ঘুমাচ্ছি।”
” তোমার ফোন আমি কেনো ধরবো।”
ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে ইলহান নিজের ফোন ধরলো।
” হ্যালো, হু ইজ দিস?”
অরিন আর ইলহান কাছাকাছি থাকায় অপর পাশে ব্যক্তিটির ইংরেজিতে বলা কথা অরিন স্পষ্ট শুনতে পেল।
” ইলহান, ইম্মি বলছি। সোফিয়া সুইসাইড এটেম্পট করেছে। তুমি ওর সাথে ব্রেকাপ করেছো তাই ও গতরাতে পাওয়ারফুল ট্যাবলেট একসাথে আট-দশটা খেয়ে নিয়েছে। এখন রয়্যাল হসপিটালে ভর্তি।”
অরিনের বুক ধ্বক করে উঠলো। অথচ আজব ব্যাপার ইলহান ফিক করে হেসে দিচ্ছে এই কথা শুনে। অরিন অবাক হয়ে ইলহানের দিকে তাকালো। ইলহান বললো,” তুমি আমাকে কি মনে করো ইম্মি? তুমি এইসব বললেই আমি বিশ্বাস করবো? আমার দেখা শ্রেষ্ঠ মিথ্যাবাদী তুমি।”
” ইলহান আমি এইবার সত্যি বলছি।”
” শাট আপ। আরেকবার কল দিয়ে ডিস্টার্ব করলে তোমাকেও ব্ল্যাকলিস্টে রেখে দিবো।”
ইলহান ফোন কেটে দিল।
” সো রুড ইলহান! তুমি এমন করলে কেনো?”
” আরে, ইম্মি একটা ফালতু মেয়ে। ওর কোনো কথা আমি বিশ্বাস করি না।”
” কিন্তু যদি ও সত্যি বলে থাকে? আমার মনে হয় তোমার যাওয়া উচিৎ। যতই হোক, সোফিয়া তোমার গার্লফ্রেন্ড বলে কথা। তার সাথে তো তোমার সবচেয়ে দীর্ঘতম সম্পর্ক! চার বছর ধরে লিভিং করেছো। ”
ইলহান গরম চোখে তাকিয়ে বললো,” তুমি কি কোনোভাবে আমাকে ফাং করার ট্রাই করছো?”
অরিন হো হো করে হেসে দিল। ইলহান হুট করেই উঠে বসলো। পকেট থেকে চাবি বের করে হ্যান্ডকাপের লক খুলে নিজের হাত উন্মুক্ত করলো। তারপর অরিনের হাত ধরে টেনে তাকে জানালার কাছে এনে তার হাতের সাথে জানালার গ্রিল হ্যান্ডকাপ দিয়ে আটকে দিল। অরিন এক আকাশ বিস্ময় নিয়ে উচ্চারণ করলো,
” ইলহান কি হচ্ছে এসব?”
” আমি যাচ্ছি। যতক্ষণ ফিরে না আসবো ততক্ষণ তুমি এভাবেই আটকে থাকো।”
ইলহান সত্যি সত্যি অরিনকে জানালার সাথে আটকে দিয়ে চলে গেল। রাগে, ক্রোধে অরিনের চোখ-মুখ লাল হয়ে এলো। কোনো লাভ নেই জেনেও সে জানালা থেকে হাত ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করলো। নরম হাতে গাঢ় লাল দাগ বসে গেল। একটু পর অরিন ফোনের ভাইব্রেশন শুনতে পেল। জানালার এক কোণায় তার হাতব্যাগটা ঝুলছে। পর্দার আড়ালে ছিল বলে এতোক্ষণ দেখা যায়নি। ফোনের ভাইব্রেটিং শুনে অরিন বুঝতে পেরেছে এইখানে তার ব্যাগ আছে। সে ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করলো। যা ভেবেছিল তাই। অন্বয়সাহেব ফোন করেছেন।
” হ্যালো অন্বয়সাহেব।”
ওইপাশ থেকে তুমুল উৎকণ্ঠা নিয়ে অন্বয় বললো,
” মিসেস অরিন, কি অবস্থা আপনার? কোনো খোঁজ-খবর নেই কেনো? জানেন আমি আপনার এপার্টমেন্টের নিচে দু’ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। আপনি আট নম্বর ফ্লোরে থাকেন না? তাহলে একবার বারান্দায় আসুন প্লিজ। এই মাত্র আপনার হাসব্যান্ডের সাথে আমার দেখা হয়েছে। তিনি ওভারস্পিডে গাড়ি চালিয়ে আমার গাঁয়ের উপর নোংরা পানি ঢেলে দিয়ে গেছেন।”
অরিন মনে মনে উচ্চারণ করলো,” অসভ্য একটা।”
” মি. অন্বয়, আপনি কিছু মনে করবেন না প্লিজ। ওর এমন বিহেভিয়ারের জন্য আমি স্যরি। ”
” আপনি কেনো স্যরি হবেন? আমি কিছু মনে করিনি। আপনি কেমন আছেন সেটা বলুন। কালরাতে আসবেন বলে যে গেলেন তারপর তো আর আসেননি। আপনাদের মধ্যে কি সব ঠিক হয়ে গেছে?”
” ওর সাথে কিছু ঠিক হওয়া সম্ভব না। আমি খুবই বিপদের মধ্যে আছি মি. অন্বয়। আমাকে একটা সাহায্য করতে পারবেন?”
” বলুন কিভাবে সাহায্য করতে পারি?”
” ইলহানকে ফলো করুন। সে কোথায় গেছে আমি জানতে চাই।”
” কিন্তু তিনি তো অনেকক্ষণ আগে বেরিয়ে গেছেন। আমি এখন রওনা দিলেও তাঁকে খুঁজে পাবো কি-না জানি না।”
” আমার ধারণা সে রয়্যাল হসপিটালে গেছে। আপনি একটু খোঁজ নিয়ে দেখবেন? প্লিজ।”
” রয়্যাল হসপিটাল মানে? রয়্যাল মেলবোর্ন হসপিটালের কথা বলছেন?”
” হ্যাঁ, মনে হয় এটাই।”
” আচ্ছা, কি হয়েছে একটু ক্লিয়ারলি বলুন তো।”
” কিছুক্ষণ আগে ইলহানকে একটা মেয়ে ফোন জানিয়েছে সোফিয়া নাকি সুইসাইড এটেম্পট করেছে। এখন হসপিটালে ভর্তি।”
” সোফিয়া মানে কে? যে মেয়েটি আপনাকে ক্লাবে এটাক করেছিল?”
” হুম। আপনাকে তো আসল কথা বলাই হয়নি। আজকে ইলহান আমার কাছে সবকিছু স্বীকার করেছে। আবার ক্ষমাও চেয়েছে। যদিও আমি ওর সাথে নরম হইনি। তবুও দেখুন, আমাকে ঘরে আটকে রেখে ঠিকই ওই মেয়ের কাছে চলে গেল।”
” আপনি টেনশন করবেন না। আমি হসপিটালে গিয়ে আপনাকে সব জানাবো। কোনো হেল্প লাগলে বলবেন। আর ফোনটা হাতের কাছে রাখবেন প্লিজ।”
ঠিক আধঘণ্টা পর অন্বয় ফোন করে সতেজ গলায় অরিনকে জানালো,
” কংগ্রাচুলেশনস মিসেস অরিন। আপনার হাসব্যান্ড বাবা হতে চলেছেন।”
অরিন যেনো সপ্তম আসমান থেকে ধপাস করে পড়লো। এতো অদ্ভুত কথা সে জীবনেও শুনেনি এমনভাবে বললো,” কি? আমার হাসব্যান্ড বাবা হতে চলেছে এর মানে কি?”
অন্বয় হেসে বললো,” মানে সোফিয়া প্র্যাগনেন্ট!”
” ধ্যাত!”
একথা বলেই অরিন মোবাইলটা জানালা দিয়ে ছুঁড়ে মারলো। সুচের চেয়েও ধারালো, তীক্ষ্ণ এক অসহ্য ব্যথায় তার শরীর কাঁপতে লাগলো। চোখ থেকে বের হলো উত্তপ্ত জল!

চলবে

-Sidratul Muntaz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here