অবশেষে,পর্ব-৯,১০
written_by_sumaiya_karim
পর্ব-৯
রিয়া তার মোবাইল টা বের করে একটা ফটো তুলে নেয়। আদ্র তো এসব দেখে সাথে সাথেই রাগের চোটে বেরিয়ে চলে গিয়েছিলো। রিয়া ও সায়নের বলা শেষ কথা টার মতো কোনো সিনক্রিয়েট না করে দেখান থেকে প্রস্থান করে।
তন্নি ফিরে আসে আর রাতুলের সাথে কথাবার্তা বলে শেষে আয়রা বলে,
–‘ভাইয়া এবার যেতে হবে বাসায় কেউ নেই আপনি প্লিজ আদ্র কে…
–‘হুম হুম অবশ্যই বলে দিবো। আমি এখনি আদ্রর অফিসে যাচ্ছি হ্যাপি?’
–‘হুম!’
আয়রা আর তন্নি বাসায় ফিরে আসে। আদ্র অফিসেই আবার চলে গিয়েছিলো তবে তার মাথায় কি চলছে নিজেও বুঝতে পারছে না। আয়রা কে সে বউ হিসেবে মানে নি ঠিক ই তবে রাতুলের সাথে এভাবে রেস্টুরেন্টে বসে একসাথে দেখা টাও ভালো ভাবে হজম করতে পারছে না। তাই সে কাজ ফেলে এক ভাবে দৃষ্টি অনড় করে বসে আছে। এমন সময় দরজায় কেউ নক করে। আর সে রাতুল!
–‘আদ্র ভেতরে আসবো?’
রাতুল কে এখানে দেখে বেশ অবাক হয় মানুষ টা। কিঞ্চিত ভ্রুঁ কুঁচকে সেদিকে দৃষ্টি নেয়। উত্তর সে দেয় না চুপ করেই থাকলো দেখে রাতুল ভেতরে চলে আসে। আর এসেই চেয়ার টেনে বসে পড়ল।
–‘কিরে ভাই কোথায় মনোযোগ তোর? এভাবে স্টাচু হয়ে আছিস কেন?’
–‘তুই এখানে?
–‘এভাবে বলছিস যে? আমার কি অন্য কোথাও থাকার কথা ছিলো?’
আদ্র নিজের ক্ষোভ টা চেপে রাখতে না পেরে প্রকাশ করে ফেললো।
–‘তোর তো রেস্টুরেন্টে থাকার কথা আয়রার সাথে?’
আদ্রর কথা বলার ধরণ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে কথা টা সহজ স্বাভাবিক ভাবে বলে নি। বরং ত্যাড়া ভাবেই বলেছে।
–‘মানে?’
–‘বুঝিস না নাকি না বুঝার ভং ধরছিস?’
–‘আদ্র কি হলো তোর? তার মানে তুই আমাদের কে রেস্টুরেন্টে দেখেছিস? কেন গিয়েছিলি তুই ওখানে? আমাদের ডাকলেই তো পারতি!’
–‘তোদের প্রেম নষ্ট করি কি করে?’
–‘হোয়াট..? আর ইউ ম্যাড আদ্র?’
–‘আমি পাগল নই একেবারে সুস্থ্য স্বাভাবিক একটা মানুষ!’
–‘এসব কি বললি তুই নিজে বুঝতে পারছিস? কে বলেছে তোকে এসব?’
–‘যেই বলুক না কেন আমি তো নিজ চোখে দেখে আসলাম ই!’
–‘চোখের দেখায় ও ভুল থাকে! আর তুই যা দেখেছিস সেটা হয় ই নি। আয়রা..
–‘ব্যাস আর বলতে হবে না!’
আদ্র কয়েক টা বাজে কথা ও বলে ফেলে আয়রা আর রাতুল কে নিয়ে। অথচ এসব কথা রাতুল এক মুহুর্তের জন্য ও ভাবে নি। লজ্জা লাগছে নিজের কাছেই। সত্যি কথা টা বলার আগেই যে আদ্রর কাছ থেকে এতো গুলো কথা তার শুনতে হবে ভেবে আসে নি। লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। শেষে আর চুপ না থেকে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,
–‘আমি বুঝতে পারছি না তুই এসব কি বলছিস। তবে তুই যা দেখেছিস তা সত্যি আর যা ভাবছিস তা ভুল। আর এই ভুল আর ভ্রম নিয়ে যা কথা শুনালি তুই আমাকে তোর সামনে আর দাঁড়ানোর মুখ নাই আমার। তোকে বন্ধু ভাই ভাব ি আর আয়রা কে বোন! এসব কথা ভাবা ও আমার জন্য পাপ। আমি রিয়া কে ভালোবাসি ওর সাথে সামনে আমার এঙ্গেইজমেন্ট হয়ে যাচ্ছে আর তুই এসব..? ছিহ..!
–‘তোর কথা শেষ হলে তুই আসতে পারিস এখন!’
–‘যাচ্ছি তবে যেজন্য এখানে এসেছি তা বলে নিই।’
–‘আমি তোর কোনো কথা শুনতে চাই না। জাস্ট গেট লস্ট!’
–‘তোকে শুনতে হবে। এসব জানা জরুরী তোর জন্য। আমাকে আটকাস না লস্ট আমার কথা গুলো শুন। কথা দিচ্ছি আর কখনো তোর সাথে আসবো না।’
–‘বল!’
–‘আয়রা আমাকে রেস্টুরেন্টে ডেকেছিলো এটা বলতে যে তুই জিসানের সুইসাইড টা নিয়ে ওকে দোষ দিচ্ছিস। বিয়ের প্রথম থেকে এই একমাসে সব বলেছে ও আমাকে। আসলে তুই দুবাই চলে যাওয়ার পর থেকে জিসান উগ্র হয়ে যায়। গুন্ডামি করে বেড়াতো ভার্সিটি তে। আমরা না পারতে ওর সঙ্গ দিতাম। আর তার এই গুন্ডামি স্বভাবের জন্য ই আয়রা তাকে খুব অপছন্দ করতো। প্রপোজ এক্সেপ্ট করার জন্য জিসান আয়রা কে তিন দিন সময় দিয়েছিলো। যেখানে একজন একটা মানুষ কে পছন্দ ই করে না সেখানে প্রপোজ এক্সেপ্ট করবে কিভাবে। জোড় করে আর যাই হোক এটলিস্ট ভালোবাসা তো আর হয় না। ঐ তিন সময় শেষ হয়ে চতুর্থ দিন পড়ে জিসান মারা যাওয়ার আগের দিন। ঐ দিন সে আয়রার সাথে অসভ্যতামি করার চেষ্টা করেছিলো তাও জারিফার বার্থডে তে গিয়ে। জারিফা আয়রার ফ্রেন্ড ছিলো আমরা চিনতাম। আমি আর সায়ন কে মিথ্যা বলে নিয়ে গিয়েছিলো ও। সেদিন ধরা পড়ায় জিসানের সব ফাঁস হয়ে যায়। অনেক অপমানিত হয় ও। আর আংকেল আন্টি ভার্সিটি তে গুন্ডামি করার কথা জানতে পারায় ওকে বকেছিলো। এই গোটা বিষয় টা জিসানের ইগো তে লাগে সহজে নিতে না পারায় সে সুইসাইড করে ফেলে। এই ঘটনার সাক্ষী আমি আর সায়ন ছিলাম। আয়রা এটাই বলতে গিয়েছিলো আমি যাতে তোকে সত্যি টা বলি আর তুই ওর পরিবারের ক্ষতি না করিস ব্যাস আর কিছু না!’
–‘এতো সুন্দর গল্প সাজিয়েছিস? সত্যি ই প্রসংসনীয়!’
–‘এটা গল্প নয় বাস্তব। বিশ্বাস করাটা তোর উপর!’
রাতুলের কথার মাঝখানে হঠাৎ তার ফোন টা বেজে উঠে আর সে দেখে রিয়ার ফ্রেন্ড দিয়া ফোন দিয়েছে। চট করে ফোন টা রিসিভ করল সে। ওপাশ থেকে যা বললো তা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না সে। দিয়া বললো,
–‘রাতুল ভাই আপনার থেকে এটা আশা করিনি! আপনি কিনা শেষে আমার ফ্রেন্ড টা কে ঠকালেন? আমার ফ্রেন্ড খুব কষ্ট পেয়েছে। আপনাকে খুব বেশি ভালোবাসতো রিয়া। আপনি ওকে ঠকিয়েছেব এটা মানতে না পেরে হাত কেটে ফেলেছে। শেষে ওকে বেহুঁশ অবস্থায় পাওয়া গেছে। আংকেল আন্টি ওকে হসপিটালে নিয়ে এসেছেন। এসব করার আগে ও বাড়ির সবাই কে কাঁদতে কাঁদতে বলেছে আপনি ওকে ঠকিয়েছেন আর তারপর দরজা বন্ধ করে দিয়ে এসব করলো। আপনি কাজ টা ঠিক করেন নি রাতুল ভাই! ঠিক করেন নি!’
রাতুলের হাত থেকে ফোন টা পড়ে যেতে নিলেও সে সামলে নেয় আর হন্তদন্ত হয়ে আদ্রর অফিসে থেকে বেরিয়ে যায়। আদ্র অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকলো। যাওয়ার আগে রাতুল যা বলে গেলো তা কি সত্যি নাকি মিথ্যা? আর এভাবে হঠাৎ করেই বা কোথায় ছুটে চলে গেলো ও? আদ্র রাগ কমলো না বরং বাড়লো আরো। সে নিজেও জানে না কেন সে আয়রা কে রাতুলের সাথে দেখা টা মানতে পারছে না। নাহ আয়রার সাথে কথা বলা দরকার তাই আদ্র অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা বাসায় চলে যায়।
আদ্র বাসায় আসে। দেখে সব নরমাল। আয়রা সম্ভবত রান্না ঘরে। নিজের রাগ এতো টাই বেড়ে গেছে যে কিছু তেই কন্ট্রোল করা যাচ্ছে না দেখে সে রুমে গিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। অনেক্ষণ পরে বের হয়। আর আয়রা কে ডাকে। ডাক টা অস্বাভাবিক লাগলো আয়রার কাছে। বুঝতেই পারছে কিছু গোলমাল আছে। রান্না ঘরের কাজ শেষ করে গোছগাছ করে আসতে একটু লেট হয়। রুমে ঠুকেই দেখে আদ্র নেই। তাকে ডেকে গেলোই বা কোথায়? হঠাৎ করে পেছন থেকে দরজা আটকানোর শব্দ পায় সে। আর সঙ্গে সঙ্গেই ফিরে তাকায়।
–‘আরে দরজা বন্ধ করলেন কেন?’
–‘খুব সমস্যা হচ্ছে বুঝি?’
–‘মানে কি?’
–‘রেস্টুরেন্টে রাতুলের সঙ্গে কি করতে গিয়েছিলে তুমি?’
–‘আপনি আনার কথা তো বিশ্বাস করেন নি রাতুল ভাইয়ার কথা বিশ্বাস করবেন তাই উনাকে জিসান সম্পর্কে কথা বলতে গিয়েছিলাম। কারণ ঐ দিন সাক্ষী ছিলো উনারা দুজন!’
–‘শ্যাট আপ! প্রেম করছিলে হ্যাঁ? লজ্জা করলো না তোমার এসব করতে?’
আদ্র রাগের মাথায় যা নয় তা বলে গেলো। আয়রা সব চুপচাপ শুনে নিয়ে বললো,
–‘ভাই বোনের সম্পর্ক কোথায় নিয়ে গেলেন আপনি ছিহ! ভাবতেও ঘৃণায় গা রিরি করছে! আমি এই জন্যই গিয়েছিলাম যাতে আপনার ভুল ভাঙ্গে আর আপনি? আমার সাথে তন্নি ও গিয়েছিলো ও জানে সত্যি টা। তন্নি তো আপনার বোন ওকেই নাহয় জিঙ্গেস করে নিবেন কেন আমরা ওখানে গিয়েছিলাম! আপনার মতো মানুষের সঙ্গে আর যাই হোক আমি সংসার করতে পারবো না। আপনি আমাকে বিয়ে করেছেন ঠিক ই তবে বউ হিসেবে মানেন নি কখনো। প্রতিশোধ নিতেই এসব করেছেন! আপনার জানায় ভুল ছিলো। কিসের জন্য আমার সাথে এমন করছিলেন তা জানতেই আমি একমাস আপনার যা নয় তা সহ্য করে গেছি আর না। আমি আজ ই বাবার বাসায় চলে যাবো। আমার শেষ ঠাই টুকু ওখানে অবশ্যই মিলবে! না মিললে রাস্তায় পড়ে থাকবো তাও আপনার মতো চিফ ম্যান্টালিটির মানুষের সাথে থাকার কোনো মানে হয় না! ডিভোর্স পেপার টা যথাসময়ে পেয়ে যাবেন মিস্টার আদ্র! ভালো থাকবেন আসি আমি!’
আয়রার এতো খারাপ লাগছিলো যে তৎক্ষণাৎ ব্যাগ পত্র গুছিয়ে বাবার বাড়ি চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বের হয়ে যায় সে। তন্নি সেখানে উপস্থিত ছিলো না বলে কিছুই জানতে পারলো না।
চলবে?
#অবশেষে
#written_by_sumaiya_karim
||পর্ব-১০||
আদ্র বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আয়রার চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে ছিলো এমন সময় পেছন থেকে কারো ডাক পড়ায় সে সেদিকে তাকায়। আর দেখে তন্নি। মনে মনে নাম জপ করতেই এসে হাজির দেখে ভালোই হলো। তন্নি আদ্র কে দেখেই বলে,
–‘আরে ভাইয়া তুমি কখন এলে?’
আদ্র মাথা চুলকিয়ে স্থির হয়ে জবাব দেয়।
–‘এই একটু আগে! তুই কোথায় ছিলি?’
–‘আমার রুমেই ফোনে কাজ করছিস!’
–‘ও আচ্ছা!’
–‘কেন খুঁজছিলে নাকি আমাকে?’
–‘হ্যাঁ না মানে..
–‘আরে কি মানে মানে করছো? ভাবী কোথায়?’
–‘চলে গেছে!’
–‘কিহহ? চলে গেছে মানে? এসব কি বলছো ভাইয়া? কোথায় গেছে?’
–‘ঐ আসলে…
–‘কি আসলে আসলে? ভাবী এই ভাবী…ভাবী..
তন্নি ডেকে ডেকে উপর তলা নিচ তলা সব তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখলো কোথাও নেই আয়রা। সাড়া ও দিচ্ছে না। অবশ্য থাকলে তবে তো সাড়া দিবে? যেখানে মানুষ টাই নেই সাড়া মিলবে কোত্থেকে? তন্নি শেষে কোথাও না পেয়ে হয়রান হয়ে আদ্রর কাছেই যায় আর বলে,
–‘ভাইয়া ভাবী কোথায় গেছে? এই একটু আগেও তো রান্না ঘরে ছিলো! আমি আর ভাবী রান্না করছিলাম। আমার ফোন এলো আর আমাকে ভাবী যেতে বললো! এই এতটুকু সময়ের মধ্যে কোথায় গায়েব হয়ে গেলো ভাবী?’
–‘তার আগে তুই আমাকে বল তুই কি আয়রার সাথে রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলি আজ?’
–‘হ্যাঁ!’
–‘কেন গিয়েছিলি?’
–‘তোমাকে কেন বলবো?’
–‘না বললে আয়রা কে ও খুঁজে পাবি না!’
–‘মানে কি?’ তন্নি বোকা বনে গেলো যেনো!
–‘মানে সেটাই যেটা আমি বলেছি! সো তুই আমাকে আমার প্রশ্নের জবাব দে তাহলে তুই ও তোর প্রশ্নের জবাব অটোমেটিক্যালি পেয়ে যাবি!’
–‘ওকে ফাইন বলছি! আসলে আমি আজ সকালে ছাঁদে তোমাদের কথোপকথন গুলো শুনেছি। শেষে তুমি চলে যাওয়ার পর আমি ভাবীর সাথে কথা বলি… (অতঃপর সকল ঘটনা আস্তে আস্তে খুলে বলে তন্নি। সব শুনে আদ্র স্তব্ধ হয়ে যায়।)
–‘তুই ও মিথ্যা বলছিস তাই না? রাতুলের সাথে নিশ্চয়ই আয়রার অন্য কোনো সম্পর্ক আছে নাহলে ও আমাকে না বলে গেলো কি করতে? আর তোকে তো আমি দেখি নি। তার মানে তুই মিথ্যে বলছিস?’
–‘আমি মিথ্যা কেন বলতে যাবো? আর রাতুল ভাইয়ার সাথে ভাবী…? ছিহ ভাইয়া এসব কি করে ভাবতে পারলে তুমি?’
–‘জানিনা তবে আমি জানি তুই মিথ্যে বলছিস! আর তুই সেটাই বলছিস যেটা আয়রা আর রাতুল তোকে বুঝিয়েছে। জিসানের মৃত্যুতে আয়রা ই দোষী!’
–‘আমি বিন্দু পরিমান ও মিথ্যা বলিনি। উল্টো রাতুল ভাইয়া নিজে ভাবী কে নিজের বোন বলেছে আর তুমি? কি বলছো এসব মাথা ঠিক আছে তোমার? জিসান ভাইয়ার কথা গুলো একদম সত্যি। নাহলে তুমি সায়ন ভাইয়াকে জিঙ্গেস করতে পারো!’
–‘সায়ন কিভাবে জানবে সায়ন তো রেস্টুরেন্টে ছিলো না!’
–‘ছিলো না তো কি হয়েছে সেদিনের ঘটনায় তো রাতুল ভাইয়া আর সায়ন দুজন ই উপস্থিত ছিলো সো দুজনার ই জানার কথা রাইট তুমি উনাকেই জিঙ্গেস করে জেনে নাও সত্যি টা!’
–‘ওকে ওয়েট!’
আদ্র সায়ন কে ফোন দেয় তবে ওর ফোন বন্ধ বলছে বারংবার। তন্নি সেটা বুঝতে পেরে এবার মরিয়া হয়ে উঠলো আয়রা কোথায় আছে তা জানতে।
–‘প্লিজ তুমি আমাকে বলো ভাবী কোথায়?’
–‘উপযুক্ত সময় তো হয় নি। উত্তর কিন্তু পাই নি আমি!’
–‘ওয়েট ওয়েট ভাইয়া তোমাকে কে বলেছে আমরা যে রেস্টুরেন্টে আছি?’
আদ্র মুখ ফসকে বলে দেয়,
–‘সায়ন বলেছে!’
তন্নি যেনো বিশ্বাস ই করতে পারছে না।
–‘কি বলেছে তোমাকে?’
–‘কই কিছু না!’
–‘তার মানে এসব তোমাকে উনি ই বলেছে তাই না? এসভ কেন করলো উনি?’
–‘সায়ন কিছু করে নি!’
আচমকা তন্নি তার মাথায় আদ্রর হাত দিয়ে বলে,
–‘কসম আল্লাহ বিশ্বাস করো ভাইয়া আমি সত্যি বলছি। ভাবীর সাথে রাতুল ভাইয়ের ঐ রকম কোনো সম্পর্ক ই নেই। আর ভাবী আর আমি এই জন্যই গিয়েছিলাম যাতে তুমি ভুল ভেবে ভাবীর পরিবারের কোনো ক্ষতি না করো। ভাবীর কোনো দোষ নেই রাতুল ভাই সায়ন আর ভাবীর ফ্রেন্ড জারিফা এই ঘটনার সাক্ষী ছিলো বলেই ভাবী সেখানে উনাদের ডেকেছিলো। কিন্তু রাতুল ভাই সায়নের আসার নাম শুনেই রেগে যসয়। তাই আমি উনাকে ফোন দিয়ে নিষেধ করে দিয়েছিলাম যাতে উনি আর না আসে। আর সেই উনি ই কিনা এসব কথা বললো তোমাকে? ছিহ আমি বিশ্বাস ই করতে পারছি না! উনি এতো খারাপ?’
আদ্র এবার চুপ হয়ে যায় পুরোপুরি।
–‘এবার তো বিশ্বাস হলো? এখন প্লিজ ভাইয়া বলো না ভাবী কোথায়?’
–‘আয়রা চলে গেছে এ বাড়ি ছেড়ে!’
তন্নি যেনো অবাকে চূড়ান্তে পৌঁছালো।
–‘তার মানে আমি আসার আগে তুমি এইসব কথা ভাবী কে বলেছিলে?’
–‘হ্যাঁ!’
–‘কি করলে তুমি এটা ভাইয়া?’
–‘আমি তো..
–‘একজন তোমাকে কিছু একটা বললো আর তুমি সেটা বিশ্বাস করে নিলে? রাতুল ভাই আর সায়ন তো বন্ধু ছিলো উনি এমন টা কেন করলো?’
আদ্র কিছুদিন আগে তাদের দুজনার মধ্যে হওয়া ঘটনা টা সব খুলে বলে। তন্নি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,
–‘এ কেমন বন্ধুত্ব তোমাদের? এবার আমি বুঝতে পেরেছি সব। হয়তো আমি নিষেধ করার আগেই উনি ওখানে চলে গিয়েছিলো। আর আমাদের সব কথা শুনে নেয়। রাতুল ভাইয়ার উপর রেগে থাকায় প্রতিশোধ নিতে গিয়ে তোমাকে ফোন দিয়ে উল্টো পাল্টা বলেছে যাতে তোমাদের সম্পর্ক ও নষ্ট হয়ে যায়। এ কেমন মনুষ্যত্ব উনার?’
–‘রাতুল আমার কাছে এসেছিলো!’
–‘কখন?’
–‘আমি অফিসে থেকে আসার আগে! আর আমি ও সায়নের কথা শুনে রাতুল কে বাজে কথা বলেছি!’
তন্নি একপাশে বসে হায় হায় করে কপাল চাপড়াতে থাকলো। সায়ন কাজ টা মোটেও ঠিক করে নি। তার একটা বানোয়াট মিথ্যের জন্য দুজন মানুষের সাথে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাচ্ছে আদ্রর। হঠাৎ করে রাতুলের উঠে চলে যাওয়ার কথা টাও মনে পড়ে আদ্রর।
–‘আর রাতুল আমাদের কথার মাঝে হঠাৎ করেই ছুটে কোথায় যেনো চলে গিয়েছিলো! ওকে দেখতে স্বাভাবিক ও মনে হয় নি আমার! আচমকা চলে যাওয়ার আমি আরো রেগে গিয়েছিলাম!’
তন্নি বিপদের আশঙ্কা পেয়ে বলে,
–‘এভাবে হঠাৎ কোথায় গেলো? তুমি রাতুল ভাইয়া কে কল দাও! যদি নিজের ভুলের একটু ও অনুশোচনা বোধ থাকে তো কল দাও।’
আদ্র সম্মতি জানায়। আর সঙ্গে সঙ্গেই রাতুলের নাম্বারে কল দেয়। রাতুল অস্থির হয়ে ছুটে হসপিটালে চলে গিয়েছিলো। আদ্রর কল দেখে সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ করে আর ধরা গলায় বলে,
–‘ভাই রিয়া হসপিটালে ভর্তি। ও হাত কেটে ফেলেছিলো। সায়ন তোর মতো রিয়া কেও আমার আর আয়রা ভাবীর নামে উল্টা পাল্টা বুঝিয়েছে। আর রিয়া সেটা কে সত্য ভেবে নিজের ক্ষতি করতে চেয়েছিলো! ওহ তোকে কেন বলছি তুই তো আমাকে বিশ্বাস ও করবি না। আমি কথা বলার মতো এনার্জি নাই রে রাখি!’
রাতুল ভাঙ্গা গলা স্পষ্ট জানান দিচ্ছে খুব সম্ভবত ও কান্না করছে। তার মানে সায়ন শুধু তাকেই কল দেয় নি বরং রিয়া কেও এ ব্যাপারে জানিয়েছিলো। আর তারা কিনা সেটা কেই সত্যি মেনে যা নয় তা করে করে যাচ্ছিলো? কতো টা জঘন্য এই সায়ন? রাতুলের সব কথা শুনে মুহুর্তের মধ্যে ভীষণ রাগ উঠে গেলো আদ্রর। হঠাৎ এভাবে তাকে রেগে যেতে দেখে তন্নি বলে,
–‘কি হয়েছে ভাইয়া?’
–‘সায়ন নাকি রিয়া কেও ভুল বুঝিয়েছে। আর সেটাই সত্যি সত্যি মনে করে রিয়া হাত কেটে ফেলছে এখন হসপিটালে ও!’
তন্নি কি বলবে বা কি রিয়েক্ট করবে নিজেও বুঝতে পারছিলো না। আদ্র রেগে বললো,
–‘এখন যদি আমি সায়ন কে সামনে পেতাম তাহলে..!’
–‘তাহলে আর কচুর মাথা করতে! একজন একটা বললো পর সেটাকেই সত্যি মানতে হবে হ্যাঁ? কান্ড জ্ঞান বলতে কিছু নেই তোমাদের হ্যাঁ? যে এই আকাম করেছে তার তো ফোন ও বন্ধ কি করবে তার আর এখন হ্যাঁ?’
–‘আমাকে এক্ষুনি হসপিটালে যেতে হবে! রিয়ার কি অবস্থা কে জানে। এটা তো সত্যি রাতুল রিয়া কে খুব ভালোবাসে! আমার ওখানে যাওয়া দরকার!’
–‘চলো আমাকে ও ভাবীদের বাড়িতে ড্রপ করে দিও।’
–‘চল কুয়িক!’
.
রাতুল কে হসপিটালে দেখে রিয়ার বাবা মা ক্ষুব্ধ হয়ে তার কাছে এসে বললো,
–‘তুমি? তুমি কি করতে এসেছো এখানে? আমার মেয়ের মরা লাশ দেখতে?’
–‘আন্টি..
–‘তুমি চুপ থাকো একটাও কথা বলবা না তুমি! এতোদিন ভালোবাসার নাটক করে শেষে কিনা আমার মেয়ে টা কে ঠকালে?’
–‘আংকেল আন্টি আপনারা আমার কথা টা শুনুন আপনারা ভুল ভাবছেন!’
–‘তোমার কোনো কথা শুনতে চাই না! আর না তো কখনো আমার মেয়ের আশে পাশে তোমাকে দেখতে চাই! চলে যাও তুমি এখান থেকে! এমনিতেই যা করেছো করেছো! আর না আমাদের মেয়ের পর কোনো ক্ষতি হোক তাও তোমার জন্য তা আমরা চাই না। তাই ভালো হয় তুমি চলে যাও এখান থেকে!’
রাতুল অনেক আকুতি মিনতি করে রিকোয়েস্ট ও করলো কিন্তু রিয়ার বাবা মা কেউ ই তার কথা শুনলো না। না পারতে হসপিটাল থেকে বের হয়ে যায় রাতুল। মনে এক বিশাল কালো মেঘ জমেছে। মেঘে মেঘে ঘর্ষণের ফলে ক্রমশই ধেয়ে আসছে এক বৃষ্টি! যার নাম মন খারাপের বৃষ্টি। এই এক্ষুনি যেনো টুপ করে এক ফোঁটা পানি কণা গড়িয়ে পড়লো বলে! চোখের কোণ পানিতে টইটম্বুর হয়ে আন্দোলন শুরু করেছে কিনা? তাকে আর ঠেকায় কার সাধ্য?
.
সায়ন শুধু রাতুলের খারাপ চাচ্ছিলো। আদ্রর সাথে ও যে না চাইতেও খারাপি হয়ে গেলো তা ভেবে কষ্ট লাগছিলো সামান্য। তবে রাতুলের নাম টা মাথায় আসতেই থরথর করে রাগে সমস্ত টা শরীর কাঁপতে শুরু করে। রাগের বসে ফুঁসতে থাকে সায়ন। আর অসাবধানতাবশত গাড়ি চালাতে গিয়ে হঠাৎ ই অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে এক্সিডেন্ট করে বসলো সে….!
চলবে?