অবশেষে,পর্ব-৫,৬
Written_by_Sumaiya_Karim
পর্ব-৫
আয়রা মানুষ টার কথা শুনে নিজেকে কিছু টা দূরে সরিয়ে নিলো দেখে ফের সেই ব্যক্তি বলে উঠলো,
–‘তুই আমার সাথে পালিয়ে চল! তোকে আমি অনেক আগে থেকে ভীষণ ভালোবাসি কিন্তু বলতে পারিনি! মানে সুযোগ হয়ে উঠে নি। আজ সকালে শুনেছি যে তোর বিয়ে! আর নিজেকে স্থির করতে পারলাম না ছুটে আসলাম তোর কাছে! প্লিজ চল তুই আমার সাথে! তোকে অনেক সুখে রাখবো বিশ্বাস কর আরু! ফিরিয়ে দিস না আমাকে প্লিজ!’
–‘এসব কি বলছেন আপনি ইশান ভাই?’
–‘আমি ঠিক ই বলছি আয়রা!’
আয়রা ভাবছে ইশান কে এই বাড়িতেই বা কে ঢুকতে দিলো! সম্পর্কে সে তার ফুফাতো ভাই!আজ থেকে প্রায় বছর খানেক আগে এই ইশান একটা অঘটন ঘটিয়েছিলো আয়রার কাজিন মিরার সাথে। সেই থেকে তাদের সম্পর্ক টা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। আর আজ তাকেই এই মানুষটা ভালোবাসার কথা বলছে? তার উপর পালিয়ে যাওয়ার কথা তো থাকছেই এতো বড় সাহস ইশানের!
–‘আপনি এখানে আসলেন কি করে? মিরার সাথে অসভ্যতামি করার চেষ্টা করছিলেন আপনি সেটা কি ভুলে গেছেন?’
–‘আমি সেদিন তোর কাছে আসতে চেয়েছিলাম আর ভুল করে মিরার রুমে চলে গেছি!’
–‘কিহহ….
–‘বললাম তো বহুদিন আগ থেকে তোকে ভালোবাসি!’
ইশান আয়রার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলেছিলো আয়রা ছিটকে নিজের হাত দূরে সরিয়ে নেয়। আর ক্ষিপ্ত হয়ে বললো,
–‘তার মানে আপনি সেদিন আমার সাথে অসভ্যতামি করতে চেয়েছিলেন ছিঃ! আপনি সেটা আমার রুমে আমার সামনে দাঁড়িয়ে স্ব-সাহসের সাথে বলছেন কি করে? আমি এক্ষুনি সবাই কে ডাকছি!’
আয়রা রুম থেকে বেরোতে নিবে ওমনি ইশান তার হাত টেনে ধরে রেগে গিয়ে বলে,
–‘ভালোয় ভালোয় বলছি তাই কানে যাচ্ছে না তাই না? খারাপ রূপ টাই দেখবি?’
আয়রার সাথে জবরদস্তি শুরু করে সে। যত যাই হোক একটা ছেলের শক্তির কাছে একটা মেয়ের শক্তি কিছুই না। আয়রা ও ইশানের সাথে পেরে উঠছিলো না। তার উপর রুমে একা হওয়ায় ভয় কাজ করতে শুরু করলে সে মনে মনে আল্লাহ কে ডাকতে শুরু করে। এমন সময় রাশেদা হুট করে রুমে ঢুকে। আর ইশান কে আয়রার সাথে জোড়া জুড়ি করতে দেখে গিয়ে সজোড়ে চড় বসিয়ে দেয় তার গালে। বেচারা চড় খেয়ে তাল সামলাতে পারলো না।
–‘তোর এতো বড় সাহস? ভাগ্য ভালো আজকে আয়রার বিয়ে নাহলে আজকেই তোকে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলতাম। প্রথমে আমার মেয়ের দিকে হাত বাড়িয়ে যেই দুঃসাহস তুই দেখিয়েছিলি তার জন্য তোর বেঁচে থাকাটাই অনেক বড় ভাগ্যের ব্যাপার ছিলো। আর সেই কাজ টাই আবার আয়রার সাথে করতে চেয়েছিস? তোর কলিজা কত বড় রে?’
আরো কয়েক টা চড় মারে তার গালে। চুপচাপ চড় গুলো হজম করতে থাকে।
–‘যদি নিজের খারাপ না চাস তো এক্ষুনি এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যা। আর কখনো যাতে তোকে আয়রার তৃ-সিমানায় ও না দেখার যায়।’
ইশান ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে দুজনার দিকে রাগের বর্ষণ করে রাগে হন হন করে বেরিয়ে চলে যায়। আর আয়রা ভয়ে তার চাচি কে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়। এতো ভয় পেয়েছিলো যা বলার বাহিরে। তার উপর ইশান তার সাথে অসভ্যতামি করার চেষ্টা করেছিলো দেখে ভয়ে গায়ের কাঁপুনি ছুটে গেছে। সে রুমে একা থাকায় ভয়ের মাত্রা তীব্র বেগে বেড়ে গিয়েছিলো। আর একটু দেরি হলে কি হতে পারতো ভেবেই ভয়ে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। আয়রার কান্না দেখে তিনি বললেন,
–‘তুই আমাকে ডাকলি না কেন?’
এই কথার উত্তর দিতে যাবে তক্ষুনি রুমে আগমন হয় তন্নির। খুশি লাগছে তার। এই খুশিতে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে যেনো।
–‘ভাবী ফাইনালি তুমি আজকে আমাদের বাড়িতে সারাজীবনের জন্য ভাইয়ার জীবন সঙ্গী হিসেবে যাচ্ছো! আমার যে কত্তো খুশি লাগছে না তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না।’
সে কথা টা বলে সামনে চোখ ফেরাতেই দেখে আয়রার চোখে পানি। চোখ দুটো অস্বাভাবিক বড় করে বললো,
–‘একি তুমি কাঁদছো কেন? ভাবী আর ইউ ওকে?’
রাশেদা আয়রার হাত টেনে ধরে তাকে কিছু একটা ইশারা করে। আর চোখের পানি নিজেই আলতো করে মুছে দিয়ে বলে,
–‘সবাই কে ছেড়ে যাবে তো তাই কষ্ট হচ্ছে বুঝলে?’
–‘অহহো এটা কোনো রিজন হলো? দেখি ভাবী হাসো তো! মেকআপের আগেই কান্না শুরু করেছো পরে কি হবে বলোতো?’
আয়রা কোনো উত্তর দিলো না!
–‘তুমি তো একদম চলে যাচ্ছো না তাই না! আবার তোমার যখন ইচ্ছা হবে তখন তুমি আসতে পারবে কোনো বাঁধা নেই!’
তন্নি নিজে থেকে যথাসাধ্য বলে আয়রা কে হাসাতে চেষ্টা করে। এক সময় আয়রা ফিক করে হেসে ও দেয়।
রাতুল আর সায়ন আদ্র দুপাশে বসে আছে। এক পর্যায়ে রাতুল ফিসফিস করে আদ্রর কানে কানে বলে,
–‘ভাই তুই কাল নেশার ঘোরে বললি মেয়েরা ছলনাময়ী! তাহলে বিয়ে করছিস কেন?’
আদ্র সোজাসুজি নাকোচ না করে কথাটা যে বললো তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
–‘কই কখন বলেছি?’
–‘আরে ভাই সত্যি তুই এই কথাটা বলেছিস!’
–‘আমার তো কিছুই মনে নেই!’
–‘ওয়েট আমি সায়ন কে বলছি দেখবি সেও বলবে তুই গতকাল এই কথাটা বলেছিস নাকি না!’
সে সায়ন কে জিঙ্গেস করতেই ও বললো,
–‘কই নাতো আমি তো শুনিনি!’
–‘এই ভাই তুই অস্বীকার কেন করছিস? তোর মনে নেই আমরা ওর কথা টা শুনে কতটা অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ইভেন আদ্র শোন আমরা তোর বলা কথাটা নিয়ে খুব হেসেছি ও!’
সায়ন কেন এমন করলো বুঝলো না রাতুল। অন্য দিকে অস্বীকার করায় রাগ ও হয়। দুজনার বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে এমন কিছু আঁচ করতে পেরে আদ্র বলে,
–‘কি শুরু করলি তোরা? আমার বিয়ে টা তো বরবাদ করে দিবি রে ভাই থাম একটু!’
–‘ও না কেন করলো বল?’
–‘আহা বাদ দে তো!’
–‘ওকে ফাইন বাদ দিলাম। তুই ভাবী কে আমাদের দেখালি না কেন? এখন সেটা বল!’
–‘নিজেরাই তো দেখতে পাবি তাই আর আমি কষ্ট করলাম না!’
সায়ন আগের কথা বাদ দিয়ে এই প্রসঙ্গে বলে উঠলো,
–‘এখন দেখবো তা তো আমরা ও জানি। কিন্তু তুই গায়ে হলুদে ও আমাদের ভাবীর পিক দেখাস নি। তন্নি কে দেখাতে বললাম তাও না করে দিলি কেন ভাই? আমি তো কিছু বুঝতে পারলাম না!’
–‘ঠিক বলেছিস আমি ও তন্নির কাছে গিয়েছিলাম ও বলল এই বেটা নাকি আমাদের দেখাতে না করেছে!’
–‘চল তো রাতুল আমরাই গিয়ে এখন দেখে আসি!’
আদ্র তাদের বাঁধা দেয় কিন্তু কেউ ই শুনলো না। জোড় পূর্বক গিয়ে ও কোনো লাভ হলো না। দেখা মিলে নি মেয়ে গুলো ঢুকতেই দিলো না। মুখ ছোট করে তাদের দুজন কে ফিরে আসতে দেখে আদ্র বুঝে যায় আসল কাহিনী! আর মনে মনে হাসতে থাকে!
______________★
বিয়ে সম্পন্ন হলে বিদায় বেলায় আয়রার কান্নায় পুরো বাড়ি কিছু সময়ের জন্য নিরব নিস্তব্ধ হয়ে যায়। যেনো দুঃখের ছায়া নেমে আসলো! প্রত্যেক মেয়েদের জীবনে এই সময় টা খুব কষ্টের। আপন জন, আপন পরিবেশ সব ছেড়ে অন্য এক অজানা পরিবেশ অচেনা মানুষের সঙ্গে চলার শুরু টা করে দেয় এই বিয়ে। মেয়েদের জন্য এটা থেকেই হয়তো প্রথম ত্যাগের শুরু।
আয়রা কাঁদতে কাঁদতে বেহুঁশ ই হয়ে যায়। গাড়ি তে উঠিয়ে আদ্র পাশে বসানো হয় তাকে। তন্নি তার পাশে বসলো। গাড়ি আপন গন্তব্যে ছুটতে শুরু করলে আয়রার মাথা নড়চড় করে পড়ে যেতে নেয়। এটা দেখে তন্নি বলে,
–‘ভাইয়া নিজের বউ কে সামলাতে পারছিস না? কেমন নিষ্ঠুর রে তুই? ভাবী পড়ে যাচ্ছে উনাকে ধর!’
আদ্র ঝাড়ি খেয়ে আয়রা কে ধরে রাখার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো। অনিচ্ছা সত্ত্বেও করলে যা হয়। কাজ হচ্ছে না দেখে তন্নি আদ্রর হাতে চিমটি কেটে বলে,
–‘একটু রোমান্টিক হ রোবট কোথাকার! ভাবীর মাথা টা তোর বুকে নিয়ে পারছিস না। এগুলা ও আমাকে শিখিয়ে দিতে হবে? তোকে বিয়ে করে ভাবীর লাইফ বরবাদ হয়ে গেছে। আম সিউর তুই উনার জীবন তেজপাতা করেই ছাড়বি!’
আদ্র বড় বড় চোখ করে তাকালো। একটা কৃত্রিম আবরণ আই মিন মেকআপ করার কারণে আয়রার চেহারায় একটু চেঞ্জ দেখাচ্ছে দেখে রাতুল আর সায়ন তাদের চেনা মুখ টিকে ও এতো কাছ থেকে দেখেও চিনতে পারলো না।
বাড়ি তে পৌঁছানোর এক ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরে আয়রারা। আর ভারী গহনা আর লেহেঙ্গা পড়ে থাকায় গরমে অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে দেখে তন্নি একটা সুন্দর নীল রঙের জামদানি শাড়ি বের করে আয়রা কে দেয়। শাড়ি পড়তে না পারা সত্ত্বেও সে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। আর শেষে খুব চেষ্টা করেও শাড়ি টা পড়তে সক্ষম হলো না।
আদ্র অন্য রুমে বসে ল্যাপটপে কি যেনো করছিলো ওমনি তার দুজন জানে জিগার বন্ধুর আগমন ঘটলো। একজন এসেই আদ্র কে উদ্দেশ্য করে বললো,
–‘ভাই তুই জিতছিস!’
আদ্র আড় চোখে তাকালো।
–‘ভাবী খুব সুন্দরী!’
রাতুল বললো,
–‘তুই ওর বউয়ের দিকে ও নজর দিস নি তো?’
–‘মুখ সামলে কথা বল রাতুল!’ (রেগে)
–‘হাহা আচ্ছা সরি মজা করছিলাম!’
আদ্র চুপচাপ কাজ করে যাচ্ছে নিজের মতো আর এই দুইটার বকবক করা বন্ধ ই হচ্ছে না।
–‘কিরে ভাই মুখ এমন বাংলা পাঁচের মতো করে রেখেছিস কেন? সেই তখন থেকে খেয়াল করছি! কি ব্যাপার বল তো!’
আদ্র বললো,
–‘তোদের কথা শেষ হলে এখান থেকে বের হয়ে!’
–‘বাপরে যেনো বাসর ঘর থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছিস!’
–‘বকবক করে আমার মাথা খারাপ করে দিস না অফিসের একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছি এখানে থেকে যা!’
তন্নি ও শাড়ি পড়তে জানে না। তাই সুলতানা কে ডেকে নিয়ে আসে। উনি প্রথমে হাসেন। পরে সযত্নে শাড়ি টা পরিয়ে দিয়ে চলে যান।
আদ্র তাড়িয়ে দিচ্ছে দেখে দুজন বললো,
–‘যাই তোর বউয়ের কাছে নালিশ দিয়ে আসি!’
–‘ঠিক বলেছিস তুই সায়ন। আই হোপ ভাবী আমাদের সাথে থাকবে!’
আদ্র দাঁতে দাঁত চেপে দুজনার দিকে তাকালে দুজন ই ভেঙ্গচি কেটে বেরিয়ে আয়রার রুমে যায়। আর তন্নির ঢুকতে দিতে চাইলো না কিছুক্ষণ পর ঢুকতে দেয়। আর রুমে ঢুকেই আয়রা কে দেখে সায়ন আর রাতুল দুজনার চোখ যেনো ছানাবড়া। একসাথে দুজনার একই প্রশ্ন!
–‘আয়রা এখানে? কিন্তু কি করে?’
চলবে?
#অবশেষে
#Written_by_Sumaiya_Karim
||পর্ব-৬||
রাতুল আর সায়ন দুজন দুজনার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে উত্তর মেলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলো। এটা দেখে তন্নি বললো,
–‘কি হয়েছে তোমাদের? ভাবী কে দেখতে এসে মনে হয় আশে পাশে কোথাও ভূত দেখলে!’
–‘ভূত না কিন্তু যা দেখছি তা কি সত্যি?’
–‘অবকোর্স সত্যি হবে কিন্তু জানার বিষয় এটা যে, তোমরা দেখছো টা কি?’
–‘সেটাই যেটা দুচোখ দেখলো!’
তারা দুজন আয়রার পাশে বসলো। আয়রা ও তাদের দেখে হেলদোল কোনো রকম ব্যতিক্রম হলো না। মূলত সে চিনতেই পারে নি। উল্টো তাদের দুজনার কথায় কি রিয়েক্ট করা উচিত তা ভেবেই কোনো কুলকিনারা পেলো না। আয়রা কিছু বললো না তাদের দুজনের মধ্য থেকে একজন বলে,
–‘আয়রা তুমি এখানে কি করে?’
–‘আমার তো বিশ্বাস ই হচ্ছে না যে তোমার বিয়ে আদ্রর সাথে হয়েছে!’
আয়রা আস্তে করে বললো,
–‘মানে ঠিক বুঝলাম না ভাইয়া!’
–‘আমাদের ভুলে গেলে তুমি? রাতুল সায়ন জিসান এই তিন জন কে চিনতে না তুমি?’
তন্নি তাদের কথার কোনো অর্থ বুঝে উঠতে পারলো না আর না তো বুঝলো তাদের কথার আগা মাথা। খুব মনোযোগ সহকারে শুনলো তাতে ও কাজ হয় নি।
–‘এক মিনিট এক মিনিট, তোমরা কি ভাবী কে আগে থেকে চিনো?’
–‘হ্যাঁ চিনি!’
–‘কিভাবে চেনো?’
আয়রা নাম গুলো শুনে অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকালো। ভাবতে থাকলো আজ ৩ বছর আগে সে দেখেছিলো এই মানুষ গুলো কে। আর এখন প্রায় দুবছর পর আবারো দেখা! মানুষের জীবনে এমন কিছু ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে ঘটে যায় যা কখনো ভুলে যায় না। আর কিছু কিছু মানুষ ও স্মৃতি তে এমন ভাবে গেঁথে যায় যে তাদের মুখ গুলো ও সামনে দেখলেই অটোমেটিক চেনা যায়। কিন্তু আয়রা প্রথমে চিনতে না পারলে এখন চিনতে পেরেছে। এই কয়েক বছরে তাদের চেহারায় হালকা পরিবর্তন লক্ষ্য করাই যায়। এই জন্যই হয়তো চিনতে পারে নি ভেবে নিজেকে বুঝতে দিলো আয়রা।
তন্নি উত্তর না পেয়ে বললো,
–‘কি হলো কেউ বলছো না যে?’
আয়রা তাদের বলতে না দিয়ে নিজেই বললো,
–‘আমি যেই ভার্সিটি তে পড়তাম তখন উনারা সেখান কার সিনিয়র ছিলেন। ওভাবেই চিনতাম!’
–‘হুম ঠিক বলেছো!’
–‘আশ্চর্য তাহলে তোমরা বিয়ের আগে ভাবীর পিক দেখো নি? তখন চিনতে পারলে না আর এখন চিনেছো?’
–‘তোমারা বউ পাগলা ভাই আমাদের দেখতে দিলে তবে তো দেখবো তাই না? ও তো আমাদের দেখায় ই নি!’
–‘কিহহ কেনো?’
–‘এটা তো ও ই ভালো জানে জিঙ্গেস করে আসছি ওয়েট!’
রাতুল আর সায়ন আরো কিছুক্ষণ কথা বলে চলে যায়। তন্নি আয়রা কে বললো,
–‘ভাইয়া এমন টা করেছে তোমার মনে হয়? আমার মনে হচ্ছে উনারা আমার নিরহ ভাই টার নামে মিথ্যা কথা বলছে!’
–‘মিথ্যা কেন বলবে?’
–‘কি জানি ধুর বাদ দাও। একটা কথা তো মিথ্যা ই আমার ভাই মোটেও বউ পাগলা না ও তো একটা..!
–‘কি?’
–‘রোবট, রোবট একটা!’
–‘কিভাবে?’
–‘শোনো তাহলে…
তন্নির বলা শেষ হলে দুজন বেশ হাসে।
–‘তবে আমি কনফিউজড যে এই রোবট টা তোমাকে ভালোবাসে।’
–‘আচ্ছা তন্নি এই দুজন তোমাদের সম্পর্কে কেউ হয়? মানে আমি বলতে চাইছি তোমাদের কোনো রিলেটিভ?’
–‘কোন দুজন?’
–‘এই যে একটু আগে দুইটা ভাইয়া গেলো!’
–‘আরে এরা তো ভাইয়ার বন্ধু সেই ছোট্ট বেলা থেকে!’
–‘ও আচ্ছা!’
আয়রা ভাবতে থাকলো ওদের বন্ধুদের মধ্যে তো ৩ জন ই ছিলো আদ্র কোথা থেকে আসলো? রাতুল সায়ন আর জিসান এই তিন জন কেই জানতো আয়রা। আদ্র কে তো কখনো দেখে ও নি! কিভাবে বন্ধু হলো? আর হলেও কখনো আদ্র কে কেনই বা দেখলো না?
————
সায়ন আর রাতুল গিয়েও আর আদ্র কে পেলো না। বাসর রাত নিয়ে কোনো ফিলিংস নেই আদ্রর মাঝে। সবাই কে ফাঁকি দিয়ে সে ছাঁদে বসে আকাশ দেখতে ব্যস্ত থাকলো। এই দুদিনে বিয়ে নিয়ে কোনো আনন্দ ছিলো না তার মনে। যা ছিলো প্রতিশোধ নেওয়া প্রচেষ্টা।
এদিকে সুলতানা এসে আয়রা কে খাইয়ে দিয়ে চলে যায়। বাসর ঘরে তাকে নিয়ে এসে বসানো হয় রাত ১২ টায়। সে এখন অপেক্ষা করতে থাকে মিস্টার রোবটের আসার জন্য। তন্নির থেকে আদ্র কেমন তা জানার পর তার বিশ্বাস হয়ে গেছে এই লোকটার ভেতরে কোনো ফিলিংস ই নেই। কাকে ভালোবেসেছিলো আয়রা তা ভেবে নিজেই ডিপ্রেশনে চলে যায়। তাছাড়া ও বলেছিলো তাকে ভালোবেসেই সেদিন রাতে গিয়েছিলো, তাহলে রাতের কথা গুলো কি ছিলো? এক পয়েন্টের সাথে অন্য পয়েন্টের কোনো মিল নেই; ঠিক এই জায়গায় এসেই মনে হচ্ছে কোনো তো গন্ডগোল আছে এটা নিয়ে নিশ্চিত আয়রা! তবে আজ ভাবলো আদ্র কে সে জিঙ্গেস করবে নিজে আর ভয় পাবে না। কেননা সাহসী সে। হুহ
আদ্র রুমে আসলো ঠিকই তবে আয়রা কে কিছু বললো না। শুধু বিছানা থেকে বালিশ আর কাঁথা টা নিয়ে সোফায় চলে যায়। আর সেখানে গিয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়ে। আয়রা ড্যাব ড্যাব চোখে তা শুধু দেখলো। আদ্র কোনো কিছু না বলে ঘুমানোর চেষ্টায় মত্ত থাকলো নিজের মতোই। কেটে গেলো আরো কিছু মুহুর্ত আয়রা উঠে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসলো আদ্রর দিকে। মানুষ টার চেহারায় আলাদা মায়া আছে। কেন এমন করলো আদ্র তাই ভাবতে থাকলো। শেষে ভেবে না পেয়ে বিছানায় গিয়ে নিজেই শুয়ে পড়লো। সারাদিনে সব কিছু শেষে এই মুহূর্তে নিজেকে ক্লান্ত লাগছে বেশ। আদ্র আসলে তাকে জিঙ্গেস করবে ভেবেই এতোক্ষণ জেগে ছিলো বাট সেও যখন ঘুমিয়ে পড়লো তার ও আর জেগে থেকে কাজ নেই ভেবে নিজেই ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়।
এদিকে অনেক চেষ্টা করেও ঘুম আসলো না আদ্রর। কারণ একটাই সোফায় ঘুমানোর অভ্যাস তার নেই। তাই ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও বিছানার দিকে এগিয়ে যায় আর দেখে আয়রা গুটিসুটি মেরে ঘুমোচ্ছে। একটা কোলবালিশ নিয়ে এসে মাঝখানে রেখে দিয়ে একপাশে শুয়ে পড়ে সে। দুজনে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমায়।
________________★
সকালে ঘুম আগে ভাঙ্গলো আয়রার। আর বিশাল দেহি শক্ত হাত জাতীয় কিছু তাকে জাপটে ধরে থাকতে খেয়াল করলো। সে আর কেউ নয় আদ্র ই। কিছু টা সময় পর এটা লক্ষ্য করলো আয়রা এই মুহূর্তে আদ্রর বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে সে। এটা লক্ষ্য করতেই আয়রার চোখ গুলো অস্বাভাবিক বড় হয়ে যায়। আর তাড়াহুড়ো করে উঠে বসে। আচমকা এমন করায় আদ্রর গভীর ঘুমেও ফাটল ধরলো। কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে যেতেই ভীষণ রাগ হয় মানুষ টার। রক্ত চক্ষু নিয়ে আয়রার দিকে তাকায় সে। আয়রা নিজেকে সামলে নেয় ক্ষিপ্ত চোখ জোড়ায় রাগের মিশ্রন দেখতে পেয়ে বলে,
–‘ভাগ্যিস চোখ দিয়ে কাউকে খেয়ে ফেলা যায় না। তা না হলে কবে যে আমাকে মস্ত বড় হাতি টা এক নিশ্বাসে নিজেই গিলে ফেলতো কে জানে!’
আয়রা ভেবেছিলো তার কথা শুনে আদ্র রিয়েক্ট করবে আর তাকে রেগে গিয়ে কিছু বলবে কিন্তু না তেমন কিছুই হলো না। আদ্র ভদ্র ছেলের মতো ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। আয়রা নিজেই নিজেকে বলতে থাকলো,
–‘এটা কি হলো? উনি কিছু বললো না কেন? কি চলে এই রোবটের মনে? আমাকে জানতেই হবে! থাক বাবা আমার আর উঠে কাজ নেই আমি বরং ঘুমাই!’
আয়রা আবার শুয়ে পড়লো আর ঘুম ভাঙ্গলো দরজায় কারো টোকা পড়ায়। তন্নি এসে তাড়া দিয়ে বলে যায় তাকে ফ্রেশ হতে। আড়মোড়া ভেঙ্গে আয়রা ওয়াশরুমে চলে আবার কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে ও আসে। তারপর ভাবলো একবার বাড়িতে ফোন দিলে কেমন হয়? সবার সাথে কথা বলা যাবে নাহ ভালোই হয় সকাল সকাল মাইন্ড টাও ফ্রেশ হয়ে যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ কল দেওয়ার জন্য তো এবার ফোন দরকার। কিন্তু ফোন কই পাবে সে? তার ফোন টা তো সাথে করে নিয়ে ও আসে নি হায়রে বলে মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে পড়ে আয়রা। আর হঠাৎ করে চোখ যায় ড্রেসিং টেবিলের উপর। যেখানে একটা ফোন রাখা। আর দেরি করলো না উঠেই ফোন টা হাতে নেয়।
দেখলো ফোন টা আদ্রর ই। কোনো লক দেওয়া নেই দেখে আয়রা নিজে নিজেই বললো,
–‘আশ্চর্য ফোনে কি নিজের গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই নাকি? একটা লক তো দিতে পারতো নাকি? যাগ্গে এখন আমার জন্য তো ভালোই হলো। কল দেই! ব্যালেন্স আছে কিনা দেখি!’
আয়রার মন রিতিমত আঁকুপাঁকু করছে গ্যালারি তে যাওয়ার জন্য কিন্তু আরেক জনের ফোন অনুমতি ব্যতীত গ্যালারি তে যাওয়া ঠিক হবে না ভেবে বেলকনিতে গিয়ে নাম্বার মুখস্থ থাকায় কল দেয় সে। আর একে একে সবার সাথে কথা বলে নেয়। প্রায় দেড় ঘন্টার মতো সবার সাথে কিছুক্ষণ হাসি কান্নার খুনসুটির মধ্য দিয়েই কেটে যায়। সকাল সকাল সবার সাথে কথা বলে আয়রার মন টাও বেশ ফুরফুরে হয়ে যায়। যেই না ও ফোন টা যেখানে ছিলো সেখানে রাখার জন্য পেছনে ফিরে আর ওমনি দেখে….!
চলবে?