প্রাইভেট_টিচার♥,পর্ব_৩
লেখক_Ananta Sanny
ইকরা আবার অনন্তর গাল ধরে বলল
-কোনো চিন্তা করো না আত্মাপাখি আমি আছি তো (এটা বলে ইকরা গালে একটা কিস করলো)
অনন্ত ভালভাবেই টের পাচ্ছে যে ইকরা তাকে কত্ত ভালবেসে ফেলছে…
ইকরা দৌড়ে তার মার কাছে গেলো…
-ও মা, মা
-কিরে এভাবে ডাকছিস কেনো কি হইছে??
-বাবা কই
-তোর বাবা তো বাইরে গেছে। ফিরতে রাত হবে তার
-তাহলে তোমাকেই বলি
-কি বলবি
-চলো বসে বলি
-হ্যা বল এখন
-আমাকে যিনি পড়ান আমি তাকে অনেক বছর আগে থেকে চিনি। কিন্তু সে আমাকে চেনে না। (তারপর বাকি সব ঘটনা গুলো বলল)
-এখন তুই কি বলতে চাস??
-আমি তাকে ভালবাসি
-তারপর
-তারপর বিয়ে
-ঠাসসসসসসসসসসস ঠাসসসসসসসসস
-………
-তোর বাবা জানলে কি হবে জানিস তুই?? তোকে মেরে ফেলবে। আর কোথাকার না কে তাকে টাকা দিয়ে অপারেশন করাবো। আবার তোর সাথে বিয়ে? এটা কোনো কথা
-মা শোনো
-আমি এটা নিয়ে কোনো কথাই শুনতে চাই না।
ইকরা আবার তার রুমে চলে গেলো। রুমে গিয়ে দেখে অনন্ত শুয়ে ঘুমাচ্ছে…ইকরা অনন্তর মুখ টা দেখে কান্না করে দিলো। আর মাথায় একটু হাত দিলো। হাত দিতেই অনন্ত জেগে উঠলো
-সরি আমি ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। (অনন্ত)
-………(ইকরা কান্না করছে)
-আরে কান্না কইরেন না। একটা ভালো স্যার রাখবেন।
-আমি তোমাকে ভালবাসি
-কি যে বলেন না। আমি এদিকে বাঁচবই কিছুদিন। এখন কি সম্ভব??(স্টিক হাতে নিয়ে বলল)
-কই যান??
-চলে যেতে হবে তো
-নাহ আর একটু থাকেন
-না এমনিতে আপনার দেওয়া ৩০ মিনিট এর বেশি হয়ে গেছে। আর হ্যা কই গেছিলেন??
-কোথাও না
-ওহ আচ্ছা আসি। ভালথাকবেন, আর হ্যা ভালভাবে লেখাপড়া কইরেন।
অনন্ত সেখান থেকে চলে আসে। আর পিছে ফিরে তাকায় না। এদিকে ইকরা রুম আটকে দিয়ে অনেক কান্না করছে। তার ভালবাসার মানুষটি চলে যাচ্ছে কিন্তু আটকানোর ক্ষমতা নেই।
যতই দিন গড়াচ্ছে অনন্ত অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এখন তার অনেক জ্বর ও আসছে। হাতে টাকাও নেই। তাই মোবাইল টা বিক্রি করে দেয় বন্ধুর কাছে। আর একদিন বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার সাথের বন্ধুগুলো তাকে বাড়ি যেতে বলে।… অনন্ত বেশি দেরী না করে বাড়িতে চলে যায়। বাড়িতে যখন যায় অনন্তর এই অবস্থা দেখে তার বাবা (কাকা)
-কিরে এমন কি করে হলো??
-…..(অনন্ত সবকিছু বলে দেয়)
তো সেদিন সন্ধ্যার পর অনন্ত তার রুমে শুয়ে ছিলো। কিছুক্ষণ পর তার বাবা মা (কাকা কাকি) আসলো
-অনন্ত
-হ্যা বাবা বলো
-তোমাকে আমরা ছোট থেকেই লালন পালন করেছি। কিন্তু এখন সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না
-ওহহহ
-আর তোমাকে চিকিৎসার জন্য কোনো টাকাও দিতে পারব না
-হুমমম
-তুমি কালই শহরে চলে যাও (কাকি)
-…….(অনন্ত কিছু বলল না শুধু মাথা নারল)
-তোমার বাবা মা তোমার এমন অবস্থার জন্য দায়ী।
-না মা আমার ভাগ্য টাই এমন
(অনন্তর কাকা কাকী মা সেখান থেকে চলে আসলো)
আর এদিকে ইকরা অনন্তকে ফোনে পাচ্ছে না। হোষ্টেলে গিয়ে খোঁজ পায় সে বাড়ি চলে গেছে। কবে আসবে কেউ বলতে পারে না। ইকরা একদম ভেঙ্গে পড়ে।
অনন্ত পরদিন ভোরেই কাউকে না জানিয়ে আবার শহরে রওনা দেয়। আর হোষ্টেলে ফিরে আসে। বন্ধুরা সবাই দেখে অবাক
-কিরে আজকেই চলে আসলি?
-তোদের ছারা ভালো লাগে না তাই
-তোর একটা ছাত্রী ইকরা নাম। তোর খোঁজে আসছিলো
-তোরা কি বলছিস??
-বলছি যে তুই বাড়ি গেছিস কবে ফিরবি জানি না
-ভালকরছিস
তো কয়কেদিন যাওয়ার পর অনন্তর টাকা ফুরিয়ে আসে। এখানে থাকতে তো টাকা লাগবে। একটা বন্ধুর কাছে ধার চাইতে গেলো…
-দোস্ত কিছু টাকা দে(শুভ)
-কি করবি??(বন্ধুটি)
-এই কাছে নেই একটু চলি পড়ে দিয়ে দিবো
-পড়ে কিভাবে দিবি?? তুই টাকা পাবি কই??
-প্রাইভেট পড়িয়ে যে পাই সেখান থেকে দিবো।
-না তুই তো এখন সারাক্ষণ এখানেই থাকিস। পড়াতে তো যাস না
-একটু সুস্থ হই যাবো (ইকরার টা বাদ দিয়ে আর দুটো যে পড়াতো সেটা তারাই অনন্তকে দেখে বাদ দিয়েছে..সেটা অনন্ত বলে না)
-ওকে কত লাগবে??
-২ হাজার দে
-হুমমম
টাকা নিয়ে অনন্ত ভাবে….( বসে থাকলে তো সন্দেহ করবে। তার থেকে ভালো প্রিতিদন কোথাও হেটে আসবো। ওরা ভাববে আমি পড়াই। এভাবে কয়েকদিন যাওয়ার পর আমি তো চলে যাবো। তখন ওত সমস্যা হবে না হুহ….
অনন্ত বিকেল বেলা ইকরাদের বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে তার কলেজের পেছনে যাবে। কারন সেখানে একটা ভালো জায়গা আছে….অনন্ত যখন ইকরাদের বাসার সামনে আসলো তার উপরে তাকাতে ইচ্ছা করছিলো কিন্তু তাকালো না। যদি ইকরা দেখে ফেলে তাই। কিন্ত ইকরা বারান্দায়ই ছিলো অনন্তকে দেখে দৌড়ে চলে আসে…. আর অনন্তর সামনে এসে দাড়ায়….আর বলে
-বাড়ি থেকে কবে আসছো(ইকরা)
-এইতো তিন দিন হলো(অনন্ত)
-ফোন অফ কেনো??
-কেমন আছেন??
-আমার কথার উত্তর দিন
-কি??
-ফোন অফ কেনো??
-ফোন থাকলে তো অফ থাকবে
-মানে?
-বিক্রি করে দিয়েছি
-কেনো??
-খেয়ে তো বাঁচতে হবে তাই না?? টাকার দরকার ছিলো তাই বিক্রি করে দিয়েছি….
-এই রিক্সা (ইকরা একটা রিক্সা ডাকলো)
-কোথাও যাবেন??
-হুমমম
-আচ্ছা যান তাহলে
অনন্ত এক পা এগোনোর পরে ইকরা হাত টেনে ধরে বলে
-কই যান??
-এই যে কলেজে যাবো
-আমি রিক্সা কি এমনি এমনি ডাকছি।
-না আপনি যান
-বেশি কথা না বলে রিক্সায় উঠেন
-আমি
-উঠেন বলছি
তারা রিক্সায় উঠে একটা খোলা জায়গায় গিয়ে বসে।
-তো বাড়ি যে গিয়েছিলেন কি বলল(ইকরা)
-বের করে দিয়েছে। ভার হয়ে গেছি তো
-তাই বলে..?
-আমার বাবা মা হলে দিতো না
-হুমমমম। এখন কি করবেন??
-জানি না। তবে কালকের মধ্যে মৃত্যুটা হলে ভালো হবে। এত কষ্ট সহ্য করা যায় না
-ঠাসসসসসসস
-মারলেন কেনো??
-আমার সামনে মরার কথা বলবি না
-হুমমম
-আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছি মনে মনে
-কি সিদ্ধান্ত???
-আপনি সন্ধ্যায় হোষ্টেল থেকে বের হবেন একটু ঠিক আছে
-না আগে বলেন
-বের হলেই বুঝতে পারবেন
-কি যে করবেন আপনি। আমি তো মরে…(ইকরা বড় বড় করে তাকালো) না মানে বোঝেনই তো থাকবো না আর।
-সন্ধ্যায় বাইরে থাকিস। আর আমার এখন অনেক কাজ আছে উঠেন এখন
-একবার আপনি একবার তুই বলেন কেনো??
-রাগান যে তাই
-কই রাগাইলাম??
-এত প্রশ্ন কিসের হ্যা?? চলেন
-হুমমমম
সেদিন সন্ধ্যা বেলা….
অনন্ত সরল মনে গেটের বাইরে দাড়িয়ে ইকরার জন্য অপেক্ষা করছে…একটু পর ইকরা একটা রিক্সা নিয়ে নামল। সাথে ২ টা ব্যাগ…
-এগুলো নিয়ে কই যাবেন(অনন্ত)
-পালাবো(ইকরা)
-কেনো বাসা থেকে রাগা রাগি করছেন নাকি??
-না
-তাহলে
-আপনার সাথে পালাবো
-মানে?? আপনার মাথা ঠিক আছে??
-হ্যা সব ঠিক আছ? আপনার ব্যাগ কই
-নাই ব্যাগ। আমি পালাবো না
-কেনো??
-বাঁচবই কয়েকদিন এর মধ্যে দৌড়ঝাপ পাড়তে চাই না
-আমি মেয়ে হয়ে বাসা থেকে পালিয়ে আসছি। আর আপনি সাহস পাচ্ছেন না??
-পালাবো কি জন্য সেটা তো বুঝতে পাড়ছি না। আর এই হাত পা ভাঙ্গা ছেলে কে নিয়ে পালাবেন??
-হ্যা। দেড়ি কইরেন না। বের হয়ে আসেন
-ইয়ে কি যে করি
-ওই কুত্তা যাবি তুই নাকি লাত্থি মারমু
-না যাচ্ছি তো। একটা অসুস্থ মানুষের উপর টরচর(পরের কথা টা বিড় বিড় করে বলল)
-এই মনে মনে কি বলেন??
-না কিছু না
-ওকে যান নিয়ে আসেন তাড়াতাড়ি
-হুমমমম (অনন্ত ভেতরে ব্যাগ আনতে গেলো)
ইকরা মনে মনে বলল…প্লিজ একবার পালিয়ে দেখো। তোমার ভালর জন্যই সব ছেড়ে রেখে আসছি আমি। ইকরার কথা গুলো অনন্ত শুনতে পায় না। অনন্ত চলে যাওয়ার পর ইকরা বাইরে দাড়িয়ে উসপিস করছে আসছে না কেনো???
চলবে