আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা ❤️সিজন_২,পর্ব_১৯,২০

আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা ❤️সিজন_২,পর্ব_১৯,২০
সাহেদা_আক্তার
পর্ব_১৯

অচেনা স্পর্শ পাইতেই ঠেলে সরাই দিলাম। অবাক হয়ে কইলাম, বন্ধু, তুমি?

রাতুল আমার সামনে দাঁড়াই আছে। সে বিদেশ থেকে আসলো কখন! আমি ওর দিকে তাকাই আছি। ও জিজ্ঞেস করল, এত রাতে শাড়ি পরে এখানে কেন? আমি আমতা আমতা কইরা কইলাম, না মানে আসলে একটা বাচ্চা মেয়ে মানে… ও আমার কথার মাঝখানে পা দিয়ে সবগুলা মোমবাতি নষ্ট কইরা ফেলল। ওর এমন আচরণে একটু অবাক হইলাম। কিসু বলার আগেই আমার হাত ধইরা হ্যাঁচকা টান দিয়া ছাদ থেকে নামায় আনল। সিঁড়ি দিয়া এত দ্রুত নামতেসিলো কয়েকবার পড়তে লাগসিলাম। বাসায় আসতেই দেখি দরজার সামনে পর্ষী দাঁড়াই আছে। পর্ষী জিজ্ঞেস করল, আম্মুকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? রাতুল কোনোকথা না বইলা পর্ষীকে সরিয়ে বাসায় ঢুইকা পড়ল। ওর মুখের সামনে দরজা মাইরা দিল। মেয়েটা আম্মু আম্মু বইলা কাঁদতেসে বাইরে। আমি যাইতে লাগলে রাতুল আমারে বাঁধা দিয়া বলল, যাবে না।

– মেয়েটা কাঁদছে আমি…

রাতুল চিৎকার কইরা বলল, বলেছি না যাবে না। রুমে যাও। আমি কিছুই বুঝতে পারতেসি না। এত রাগার কারণ কি? একটু পর কান্না থাইমা গেল। বুঝলাম পর্ষী চইলা গেসে। আমিও জেদ কইরা রুমে গিয়া দরজা বন্ধ কইরা দিলাম।
.
.
.
.
ভোরে ঘুম থেকে উইঠা চুপি চুপি বের হইয়া আসলাম। নক দিলাম পর্ষীদের বাসায়। মুন হামি তুলতে তুলতে দরজা খুইলা বলল, আরে তুই? কাল রাতে এলি না কেন? আমি জিজ্ঞেস করলাম, পর্ষী কোথায়?

– কাল তো একসাথেই বের হলি। আর তো আসিসনি। ও তোর সাথে থাকেনি?

– না, কাল একটু ঝামেলা হয়েছিল। ও আসেনি?

– না তো।

– এটুকু মেয়ে কোথায় যাবে!?

– আচ্ছা চিন্তা করিস না আমি দেখছি। বাসায় আয়।

– না, এখন আর আসবো না। পর্ষীর খোঁজ পেলে বলিও।

আমি ছাদের দিকে রওনা দিলাম। কই গেল মেয়েটা। সাহেদার কাছে? যেতেও পারে। কিন্তু তাহলে তো মুনের কাছে গেলেই পারতো। বুঝতেসি না। আর কে আছে? পর্ষী পিচ্চি হইলেও এতটা বোকা না যে মাঝরাতে বাইরে যাবে। আমি দরজা ঠেইলা ছাদে পা রাখলাম। কালকের মোমবাতিগুলা এখনো ছড়াই আছে ছাদে৷ কালকের কথা ভাবতেই কান পর্যন্ত গরম হই গেল। কে ছিল! রাতুল হবে না শিউর। ওর ছোঁয়া আমার অপরিচিত। তবে কেডা ছিল! এত পরিচিত ছোঁয়া অথচ চিনলাম না। রেলিংয়ের কাছে গেলাম। ভোরের মৃদু বাতাস বইছে। আরাম কইরা কিছুক্ষণ দাঁড়াইলাম। হঠাৎ কারো উপস্থিতি টের পাইয়া পিছনে তাকাই দেখি রাতুল দাঁড়াই আছে। আমি আবার সামনে ফিরলাম। ওর সাথে কথা বলার মুড নাই। রাতুল পাশে এসে দাঁড়াই বলল, হ্যাপি বার্থডে। আমি কিসু না কইয়া দাঁড়াই রইলাম। ও আবার বলল, হ্যাপি বার্থডে ছোঁয়া।

– কখন এসেছো?

– কালরাতে দশটায় পৌঁছেছি দেশে। এখানে সাড়ে এগারটায় পৌঁছালাম। ভেবেছিলাম সবার আগে বার্থডে উইশ করে সারপ্রাইজ দেবো। কিন্তু তার আগেই…

– কি?

– কিছু না। সরি।

– হঠাৎ?

– আসলে রাগ উঠে গিয়েছিল তাই…

– কিসের রাগ? কি এমন হল যে রাগ উঠেছিল? আর এমনই রাগ উঠেছিল যে একটা বাচ্চা মেয়ের কান্নায়ও গলেনি।

– সরি তো।

আমি কিছু না বইলা নিচে নাইমা আসলাম। ওর সাথে কেন জানি আর আগের মতো খোলাসা হইতে পারতেসি না। বাসায় নক দিমু এমন সময় দেখি পর্ষী চোখ কচলাইতে কচলাইতে আকাশের বাসা থেকে বের হইতেসে। আমি গিয়া কইলাম, পর্ষী তুমি এখানে? ও পিটপিট কইরা কইলো, আম্মু!? কাল রাতুল আঙ্কেল এমন করল কেন? আমি একটু অবাক হইয়া কইলাম, তুমি চেনো?

– চিনি তো। আমি চিনি আব্বু চেনে। আমরা সবাই চিনি। তুমি আমাদের সাথে থাকতে আঙ্কেল আগে কত আদর করতো!

আমার সব কেমন যেন ইয়ারফোনের মতো জট পাঁকাই গেলো। সবাই সবাইরে চিনে কেবল আমিই চিনি না। মেমরি লস হয়ে কি যে বিপদে পড়লাম! পর্ষী কইলো, আম্মু ভেতরে আসো। আমি কইলাম, এটা কি তোমার বাসা নাকি!? আরেকজনের বাসায় এভাবে ঢুকতে নেই। বইলাই চোখ দুইটা ভেতরে গাজররে খুঁজতে লাগল। আমার মনের কথা কেমনে বুঝল জানি না। পর্ষী কইল, ওয়াশরুমে। আমি লজ্জা পাইয়া বললাম, কে ওয়াশরুমে? যাও নিজের বাসায়। পাকনা। পর্ষী কাঁধ নাচিয়ে মুনদের বাসার দিকে আগাইলো। মুন দরজা খুইলা দিয়ে বলল, এতক্ষণে ঘুম ভেঙেছে? আয়। বইলাই ভেতরে চইলা গেল। পর্ষী ঢোকার সময় আমি ডাইকা কইলাম, কাল ছাদে কে ছিল? পর্ষী পিছন ফিরে কইলো, আব্বু। তারপর বাসার দরজা বন্ধ কইরা দিল।
.
.
.
.
আমি লালুমিয়ার মুন্ডু চিবাইতেসি আর ভাবতেসি, পর্ষীর বাপের ছোঁয়া আমার এত চেনা হইলে …… সত্যিই যদি আমি পর্ষীর আম্মু হই!? না তাহলে আব্বু আম্মু তো বলতো। আর তাছাড়া আমার তো বিয়াই হয় নাই। ধুর এসব কি ভাবতেসি। আমার এখন গাজর আছে। কিন্তু…। আমি বিছানায় আড়াআড়ি ভাবে শুয়ে মাথা ঝুলাই রাখসি। দরজা বন্ধ৷ রাতুল নক দিলো। আমার খুলতে ইচ্ছে করতেসে না। কয়েক বার নক দিয়ে সাড়া না পেয়ে চইলা গেল।

আমি চার নাম্বার লালু নিতেই আম্মু নক কইরা কইলো, ছোঁয়া দরজা খোল। আমি বেশ বিরক্ত হয়ে দরজা খুইলা কইলাম, কি?

– তোকে নাকি রাতুল রান্না করতে বলেছিল।

– কখন?

মনে পড়ল ফোনে কইসিলো ঐবার। আমার এখন ওর সাথে আড়ি চলতেসে৷ নো রান্না। আমি সাফ জানাই দিলাম আম্মারে। আম্মা আমারে বলল, যা না মা ছেলেটা আসার পর থেকে না খেয়ে আছে। কাল রাতে নাকি হোটেলে খেয়েছে। তারপর আর কিছু খায়নি। তোর রান্না ছাড়া খাবে না বলছে। কি আর করা। বন্ধু বলে কথা। গেলাম রান্নাঘরে। টানা তিন ঘন্টা রান্না কইরা বাইর হইতেই পা দুইটা টন টন কইরা উঠল। দুপুরে না খাইয়া দিলাম ঘুম।

সাহেদা তিনটার দিকে আমার ঘুম ভাঙাইলো। আমি আধো আধো গলায় কইলাম, তুই?

– হ্যাঁ উঠ।

– কেন?

– বাইরে যাবো।

– না আমার ঘুম পাচ্ছে।

– কিসের ঘুম। সামনে আমার বিয়ে আর তুই পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস?

ও আমারে জোর কইরা তুললো। ঠেইলা ওয়াশরুমে ঢুকাই দিলো। ফ্রেশ হইয়া বের হতেই দেখি সাহেদা এক প্লেট ভাত তরকারি নিয়া বইসা আছে। আমার দিকে তাকাই কইলো, খাওয়া দাওয়া তো করিস নাই।

– হুম।

হাত ধুইয়া খাইতে বসলাম। মুখে লোকমা দিয়া কইলাম, কস যববিস? সাহেদা আমার কথা না বুইঝা জিগাইলো, কি বলিস? আমি ভাত গিইলা কইলাম, কই যাবি? সাহেদা জানালার পর্দা সরাইতে সরাইতে বলল, আমার এক দূর সম্পর্কের চাচা আসবে বিদেশ থেকে। রিসিভ করতে যাবো।

– বাকিরা কই?

– আমাকেই যাইতে হবে।

– তুই বিয়ের কনে। তুই যাবি কেন?

– কারণ আছে।

কেউ শুইনা ফেলবে এমন ভাবে সাহেদা আশেপাশে তাকাই আমার কাছে এসে ফিসফিস কইরা কইলো, আমি তাদের আমার চার চোক্ষে দেখতে পারি না। একটা মেয়ে আছে আমার বয়সী। একেবারে খচ্চর। যার তার সামনে নাক খোঁচায়। সে নাকি আবার মডার্ণ। ময়দার ডিব্বা। আর…। শুইনাই খাওয়ার মধ্যে বমি আসলো। সাহেদার মুখ চাইপা ধইরা কইলাম, কওয়ার আর সময় পাইলি না?

খাওয়া শেষ কইরা তৈরী হয়ে নিলাম। বের হইতে লাগলে রাতুল ডাক দিল। বসার রুমে বইসা খেলা দেখতেসিলো। আমারে ডাইকা জিজ্ঞেস করল, কোথায় যাও ছোঁয়া? আমি কোনো উত্তর দিলাম না। পর্ষীর সাথে করা ব্যবহারটা আমি কিছুতেই ভুলতে পারতেসি না। সাহেদা বলল, ভাইয়া আমার সাথে যাচ্ছে। আমার এক চাচা আসবে আজ বিদেশ থেকে, রিসিভ করতে যাবো।

– আমিও আসছি তাহলে। রেডি হয়ে আসি।

আমি জুতা পরতে পরতে কইলাম, কাল জার্নি করে এসেছো, বিশ্রাম নাও। যাওয়া লাগবে না। বইলাই সাহেদারে নিয়া বাইর হয়ে আসলাম।

আমরা সাড়ে চারটায় এয়ারপোর্টের পৌছাইলাম। চারটায় প্লেন ল্যান্ড করার কথা। তাহলে তো এতক্ষণে বের হইয়া যাওয়ার কথা। আমরা বাইরে অপেক্ষা করতেসি। হঠাৎ আমার চোখ পড়ল একটা সাদা প্রাইভেট কারের সাথে হেলান দিয়ে থাকা একটা ছেলের উপর। গায়ে সাদা শার্ট আর জিন্স। চোখে সানগ্লাস দেওয়া। চুলগুলো জেল দিয়ে সুন্দর সেইপ করা। আমি ক্রাশ খাইলাম। হায়রে! আমার গাজরটা! এতো সুন্দর! কিন্তু এত সেজেগুজে এয়ারপোর্টে ক্যান? আমি উঁকি ঝুঁকি মারতে লাগলাম। দেখলাম একটা মাইয়া এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে ওর দিকে এগিয়ে গেল। মাইয়াটা হাসিমুখে গিয়া জড়াই ধরল। কত বড় সাহস! আমার জামাইরে জড়াই ধরে। আমি বেলুনের মতো ফুইলা কান পাতলাম।

– কেমন আছিস?

– ভালোই। তোকে তো আগের থেকেও হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছে। ব্যাপার কি? বয়স কমছে না বাড়ছে?

– তুইও মজা করতে পারিস।

– সত্যি বলছি আকাশ। তোকে যত দেখি তত মনটা পাগল হয়ে যায়।

– বাদ দে না।

– আর কত বাদ দেবো? বাদ দিতে দিতে তোকে হারিয়ে ফেলেছি। এবার তো…

– গাড়িতে ওঠ। তোকে বাসায় নামিয়ে দেবো। আঙ্কেল আন্টি আমাকে কেন বললেন? নিজেরা এলেন না?

– মম ড্যাড নিজের থেকে তোকে বেশি বিশ্বাস করে তাই। আমি সোজা আগে তোর বাসায় যাবো। পরে বাসায় যাবো।

– ওকে ওঠ।

– থ্যাংকু।

বইলাই গালে একটা কিস কইরা বসল। দেইখাই আমার ইচ্ছে করতেসে মাইয়াটার চুল একটা একটা কইরা ছিঁড়ি। কত বড় স্পর্ধা! আমার গাজরে ভাগ বসায়। আমি যাওয়ার উদ্যোগ নিতেই কে যেন হাত দিল পিছন থেকে। আমি তাকাইতেই দেখি লাল লিপস্টিক পরা ভোটকা এক মহিলা আমার কাঁধে হাত দিয়া দাঁত কেলাইতেসে। আমি সাহেদার দিকে তাকাইলাম। সে অসহায়ের মতো তাকাইতেই বুঝলাম এটা ওর চাচি। পাশেই ম্যাচের কাঠির মতো লোকটা ওর চাচা আর আয়নায় ধইরা নিজের ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাইতে লাগাইতে চামড়া তুইলা ফেলতে থাকা ময়দার কেকটা তাগো মাইয়া। আমি একটা বেক্কলের হাসি দিলাম। মহিলা ককর্শ গলায় তিতা হাসি দিতে দিতে কইলো, ওএমজি, হাউ কিউটি পাই। কি নাম তোমার?

চলবে…

#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা ❤️
#সাহেদা_আক্তার
#সিজন_২
#পর্ব_২০

মহিলা ককর্শ গলায় তিতা হাসি দিতে দিতে কইলো, ওএমজি, হাউ কিউটি পাই। কি নাম তোমার?

– ছোঁয়া।

– ওএমজি, হাউ সুইট! হানি, দেখো না, এই মেয়েটাকে আমার ইয়োর সাথে মানাবে না?

– হান্ড্রেট পার্সেন্ট ডায়মন্ড চয়েজ, সুইটহার্ট।

আমি তাদের কথা শুইনা বেকুবের মতো তাকাই রইলাম। মনে হইতেসে উগান্ডা থেকে বাংলাদেশে আসছে বেড়াইতে। সাহেদারে গুঁতা দিয়া ফিসফিস কইরা কইলাম, এই ওএমজির কি কাম? সাহেদা কইলো, অভ্যাস। কোথা থেকে একটা ভোটকা পোলা আইসা ন্যাকা কন্ঠে কইলো, মমি, হাম্বাদের খার খোতায়? আমি কইলাম, হাম্বা!? এখানে গরু কোথায় পেলেন?

– আরে হাম্বাদের খতা বলছি। হাম্বাদের খতা।

– আমিও তো সেটাই জানতে চাইছি হাম্বা কই পেলেন?

– ওহ্হো! সেইডা, ওখে বোঝাও।

সাহেদা আমার কানে ফিসফিস কইরা কইলো, আরে হাবুলি, হাম্বা না। ওদের কথা বলছে। বেশি স্টাইল করতে গিয়ে আমাদের শব্দটা হাম্বাদের হয়ে গেছে। আমি ওর কথা শুইনা ফিক করে হাইসা ফেললাম। আসলেই হাম্বা। দুইটা মোটা হাম্বা আর দুইটা চিকন হাম্বা। মহিলা খেঁকিয়ে বলল, ওএমজি, হাসছো কেন? আমাদের কার কোথায়?

– আন্টি কার তো নেই। সিএনজি বা রিক্সা…

– ওএমজি, এসব কি বল সাহেদা! আমরা আর রিক্সা! হানি তুমি কিছু বলো।

– হ্যাঁ সাহেদা তোমার আব্বুর তো কার পাঠানো উচিত ছিল।

– এ অবস্থা হলে বিয়েতে কি দেবে জামাইকে? আমি তো আমার মেয়ের জামাইকে মার্সেডিস দেবো ব্ল্যাক ব্লু কম্বিনেশনের মধ্যে। দাম কত জানো? থ্রি পয়েন্ট ফোর মিলিয়ন ডলার। ক্যান ইউ ইমাজিন?

আমি বিড়বিড় কইরা কইলাম, আপনাদের ব্ল্যাক হোয়াইট কম্বিনেশনের হাম্বা গাড়ি দরকার৷ চাচি চোখ সরু কইরা কইলো, তুমি কিছু বললে? আমি হাইসা কইলাম, না, আন্টি। সাহেদা সিএনজিতে তো হবে না। লাগেজ আছে। বরং রিক্সা নেই। তিনটা হলেই হবে।

সাহেদা আর আমি বহু কষ্টে রিক্সা যোগাড় করলাম। ভাবসিলাম সাহেদার সাথে যামু কিন্তু আন্টিটা আমার সাথে যাবে কইয়া বাম হাতটা এত জোরে চাইপা ধরল মনে হইলো আমার হাতের হাড়গুলা কয়েক টুকরা হই গেসে। আমি হাইসা রাজি হইয়া হাতটাকে গেড়াকল থেকে বাইর করলাম। ফাঁকে দিয়া উঁকি মাইরা দেখলাম গাজরটাও ঐ শিং মাছরে নিয়া চইলা গেসে।

সবাই যে যার সাথে রিক্সায় উইঠা গেল। আমি পড়লাম বিপদে। চাচি উইঠাই তো রিক্সা দখল কইরা ফেলল। আমার জন্য রাখসে চার আঙ্গুল জায়গা। তার উপর একটা বড়ো লাগেজ। আমি আর রিক্সাচালক একে অন্যের দিকে চাওয়াচাওয়ি করলাম। বেচারার আজকে জান শেষ। আমি মনে মনে কইলাম, রিকশার অর্ধেক আয়ু আজই শেষ।

আমি মনে হয় গেসি৷ আমার কোমর শেষ। যে চিপা জায়গায় বসছি অর্ধেকটা ঝুইলা ছিলাম। মনে হয় এক দশক ব্যায়াম করার পর ঐ জায়গা আমার জন্য পার্ফেক্ট হবে। ইচ্ছে করতেসিলো বলি, মামা, রিক্সাটা টাইনা মোটা কইরা দেন। এর থেকে লাগেজের উপর বইসা আসলে কিংবা রিক্সা চালাই আসলে বহুত ভালো ছিল। মাঝরাস্তায় আইসা আরেক বিপত্তি হইলো। চাকা পাংচার। তাও চাচির সাইডেরটা। এই নিয়ে তাঁকে কথা শোনানোর শেষ নাই৷ রিক্সাচালকের চোদ্দগুষ্টিও মনে হয় এত গালির নাম জানে না। আমি তো সরমে ইচ্ছা করতেসিলো তাঁর মুখটা সেলাই করে দেই। লোকটা কিছু বলল না। সারারাস্তা রিক্সায় আন্টি কেবল ইয়োর প্রশংসা করল। আমার ইয়ো এটা আমার ইয়ো ওটা। যেন তাঁর ইয়ো পৃথিবীর বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য আলাদা প্রাণী। কিন্তু আসল কথা হইলো এই ইয়োটা কে!? একঘন্টার রাস্তা দেড়ঘন্টা লাগসে। তার সাথে ইয়ো ইয়ো শুনতে শুনতে মনে হইলো কয়েক যুগ পার হই গেসে। সাড়ে ছয়টায় পৌঁছাইলাম। মাগরিবের আযান অলরেডি দিয়া মুসল্লিদের নামাজ শ্যাষ৷ চাচি আমার আগে নাইমা গেলেন৷ আমি রিক্সা থেকে নাইমা বিশটাকা ভাড়া বেশি দিলাম। তিনি অনেক কষ্ট করসেন আজকে।

আমি উপরে আইসা কি ভেবে আকাশের বাসার কলিংবেল টিপলাম। আজকে কোন শিং মাছ আমার গাজরে ভাগ বসাইসে দেখা লাগবে। তার তো এখানেই আসার কথা। আমি খাঁড়াই আছি। চাচি সিঁড়ি দিয়া উঁকি মাইরা দেইখা নিল আমি কোন বাসায় থাকি। মহিলারে কি ভুতে পাইলো নাকি? আমি দরজার দিকে মনোযোগ দিলাম। খুলে না ক্যান? আন্টি এসে দরজা খুলে বললেন, আরে ছোঁয়া এসো। বসো।

– না আন্টি। বসবো না। এমনি আপনাকে দেখেতে এলাম। মনে হয় আপনাদের বাসায় গেস্ট, এসে বিরক্ত করলাম। আন্টি ভদ্রতা কইরা কইলেন, আরে কি যে বলো।

– কে এসেছে আন্টি?

– আমার ছেলের স্কুল ফ্রেন্ড। ভেতরে আসো।

না পারতে ভেতরে যাইতেসি এমন ভাব কইরা ঢুকলাম। যদিও শরীরে শক্তির ছিঁটে ফোঁটা নাই তাও শিং মাছটার খোঁজ খবর না নিলে চলতেসে না। আন্টি কইলেন, তুমি বসো আমি নাস্তা আনি। আমি ভেটকাইলাম। আন্টি চইলা যাইতেই এদিক ওদিক তাকাইলাম। দেখলাম গাজরের রুম থেকে কথা আসতেসে। আমি চুপি চুপি গিয়া উঁকি মারতেই রাগে পুরা শরীর দিয়া আগুন বাইর হইতে লাগল। গাজরের গায়ে শার্টের অর্ধেক। এক হাতা পরা। বাকি হাতায় মেয়েটা অসভ্যের মতো তার হাত ঢুকাই ওর দিকে বাজে দৃষ্টিতে তাকাই আছে।

– চাঁদনি, এসব কি হচ্ছে?

– আজকে আর আটকিও না আকাশ। আর কত তোমার জন্য অপেক্ষা করব?

বইলা মেয়েটা গাজরের দিকে আগাইতেই আমি ঠাস কইরা দরজা খুললাম। সাথে সাথে দুইজনে চমকাই উঠল। আমি মিষ্টি কইরা হাইসা ওদের দিকে এগোইলাম। মেয়েটা অবাক হয়ে কইলো, ছোঁয়া! আমি গাজরের শরীর থেকে শার্টটা খুইলা মেয়েটার হাতে ধরাই দিয়া কইলাম, শার্টটা চাই বললেই হতো। এমন অসভ্যের মতো একটা ছেলের সাথে লেগে আছেন কেন? বলেই ওরে রুম থেকে বাইর কইরা দিলাম। চাঁদনি দরজা ধাক্কাইতে লাগল আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়া গাজরের দিকে আগাইলাম। সে খালি গায়ে দাঁড়াই আছে। গলা খাকরানি দিয়া না দেখার ভান কইরা একটা টুল ওর সামনে রাখলাম। রাগ কমায় এখন লজ্জাটা আস্তে আস্তে বাড়তেসে। নাহ, রাগটা ধইরা রাখা লাগবো। আমার গাজর হইয়া অন্য মাইয়ারে সুযোগ দেয়। আমি টুলের উপর উইঠা দাঁড়াইলাম। না হইলে ওর সমান হওয়া যাবে না। ও আলমারির সাথে দাঁড়াই ছিল। আমি ডান হাত আলমারিতে রাইখা কইলাম, আপনার কি আক্কেল নেই? মেয়েটা অসভ্যতামি করছিল আর আপনি চেয়ে চেয়ে দেখছিলেন? কিছু বললেন না কেন? আমি রাগ দেখাইতেসি আর গাজর আমার দিকে কেমন করে যেন তাকাই আছে। আমি ঢোক গিললাম। ব্যাপারটা কেমন সুবিধার লাগতেসে না। সে আমার দিকে আগাইতেই আমি সইরা গেলাম। এর আবার কি হইলো! আমি অন্যদিকে ফিইরা কইলাম, এর পরের বার এমন দেখলে শাস্তি দেবো কিন্তু।

– তাই বুঝি। হিংসে হচ্ছে নাকি?

– হি……হিংসে করব কেন?

– ও হচ্ছে না? তা কি শাস্তি দেবে ছোঁয়া?

এতক্ষণ পরে ওরকথা শুইনা আরো ঘাবড়াই গেলাম। একে তো হিংসে হইয়া হুদা রাগ দেখাইলাম। তার উপর বেশি ঢং করতে গিয়া শাস্তির কথা বইলা ফেললাম। রাগবো নাই বা কেন। আমার গাজরে অন্য কেউ ভাগ বসাবে আর চাইয়া থাকমু নাকি? আমি ভাব নিয়া কইলাম, দিলে দেখবেন। সে আমার দিকে ঝুঁকে কইলো, তাই তো দেখতে চাচ্ছি। তুমি আবার শাস্তি দিতে জানো নাকি? পিচ্চি মেয়ে।

এ্যাঁহ, আমি পিচ্চি, না? এজন্য আমার দিকে তাকাও না। ঐ শিং মাছ তোমার পছন্দ। দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা। তোমারে আমি শিং মাছ কাইটা রাইন্ধা খাওয়ামু। হঠাৎ আমি টুলের উপর উইঠা ওর গালে কামড় দিয়া দরজার দিকে দৌঁড়াইলাম। দরজা খুইলা পিছনে ফিইরা কইলাম, পরেরবার আরেক গালে কামড় দিমু। মনে থাকে যেন। বইলাই দরজা খুইলা দৌঁড়।

বাসার দরজা রাতুল খুলল। আমি এখন সরমে কারো দিকে তাকাইতে পারতেসি না। সোজা নিজের রুমে গিয়া দরজা দিলাম। বিছানায় শুইয়া খালি গড়াগড়ি খাইতেসি আর বলতেসি, আল্লাহ আমি কি করলাম! হায় হায়! গাজর কি ভাবলো! আমি উইঠা বালিশ কোলে নিয়া ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়া নিজেরে দেখলাম। মনে হইলো সরমে লাল হইয়া গেসি। এবার আমি গাজরের সামনে যামু কেমনে! আসার সময় দেখসি ওর গালে দাগ বইসা গেসে। চাঁদনির কথা মনে পড়তেই নিজেরে কইলাম, ঠিক করসি। আমার গাজররে আমি কামড়াইসি। কার কি? বইলাই আবার বালিশে মুখ ডুবাই বিছানায় গড়াগড়ি খাইতে লাগলাম।

আটটার দিকে বাইরে কি নিয়ে যেন ঝামেলা চলতেসে। আমি হুক খুইলা বের হইতেই যে যেভাবে ছিল সেভাবে চিল্লাই উঠল, হ্যাপি বার্থডে। আমি তাকাই দেখলাম আব্বু, আম্মু, ঝিলিক, রাতুল, সাহেদা, মুন, রেদোয়ান, পর্ষী, গাজরের আম্মা আর সবশেষে আমার গাজর। ওর দিকে নজর পড়তেই দেখলাম গালে একটা বার্থডে স্টিকার মারা। বুঝলাম দাগ ঢাকতে এই পদ্ধতি। আমি ওর দিক থেকে চোখ ফিরাইলাম। লজ্জায় তাকাইতে পারতেসি না। মনে মনে খালি কইতে লাগলাম, কেন করলাম এই কামটা!

কেক কাটলাম, খাইলাম। সব করলাম। কিন্তু মন থেইকা মজা করতে পারলাম না। গাজরের লজ্জায় সব মাটি। সবাই যে যার মতো মজা করল। তবে একটা ব্যাপার খেয়াল হইলো। রাতুল আর আকাশের চোখাচোখি হইলে ওরা কেমন যেন হই যায়। তাই উভয় থেকে দূরে থাকা ভালো।

রাতে ঝিলিকরে জিজ্ঞেস করলাম, হঠাৎ এই বার্থডের অনুষ্ঠান কে করল? ঝিলিক মশারি টাঙাতে টাঙাতে কইলো, পর্ষী। আমি শোয়া থেকে উঠে বইসা কইলাম, বাইরে কি সমস্যা হইসিলো রে আমি বের হওয়ার আগে?

– রাতুল ভাইয়া আর ভালো ভাইয়া তোমারে নিয়া…

সে জিহ্বা কাটল। আমি কইলাম, আমারে নিয়া কি হইসে? ঝিলিক তাড়াতাড়ি কইলো, কিসু না কিসু না।

– ঝিল বল আমাকে।

– মানা আছে সাহেদা আপুর। বলা যাবে না।

ঝিলিক লাইট নিভাই শুয়ে পড়লো। ওরে জিগাই লাভ হবে না। কালকে সাহেদারেই জিজ্ঞেস করতে হবে। হঠাৎ আবার গাজরের কথা মনে পড়তেই কোলবালিশে মুখ গুইজা দোয়া করতে লাগলাম, ঘুম দাও। আল্লাহ তাড়াতাড়ি ঘুম দাও।
.
.
.
.
আমি সকাল সকাল সাহেদার বাসায় গেলাম। ভুলেই গেসিলাম ওর চাচা চাচির কথা। দরজা খুলতেই দেখি তারা খাবার টেবিলে। এখন দশটা বাজে। সাহেদা দরজা দিয়া উঁকি দিয়া কইল, তুই? আমি কিসু বলার আগেই কইল, এখন আসিস না। মাথা খারাপ হয়ে যাবে। আমি কইলাম, কেন? ভেতর থেইকা চাচি বলল, ওএমজি, কে সাহেদা? আমি ঢুকলাম। আমারে দেইখা ওর চাচি খুশিতে আটখানা হইয়া কইলো, ও এম জি, আরে ছোঁয়া। এসো এসো। আমাদের সাথে ব্রেড খাও। আমি কিসু বলার আগেই আবার কইল, ওএমজি, তোমার জামাটার রঙটা তো বিউটিফুল।

– আন্টি, এটা কফি কালার।

– ওএমজি, সাহেদা, একটু স্মার্ট হও। এসব কফি টফি অনেক পুরানো। পোড়া কালার ওটা, বুঝলে। ঐযে পোড়া পোড়া কালার হয় না। রুটির মধ্যে হয় যে। কি কালার?

– পোড়া কালার।

আমি আর সাহেদা একজন আরেকজনের দিকে তাকাইলাম। এদের সাথে থাকলে আমাদের জীবনও পোড়া কালার হই যাবে। সাহেদার আম্মু মুরগীর ঝোল চাচিকে দিতেই দেখে কইলেন, রংটা তো অনেক সুন্দর। আমি মাত্র মুখ খুলতেসিলাম, জ্বি, কালারটা একেবারে ঘ…। সাহেদা সাথে সাথে মুখ চাইপা ধরল৷ চাচি সন্দিহান চোখে কইলেন, ওএমজি, কি বলতেসিলা? সাহেদা মেকি হাসি দিয়া কইলো, সুন্দর রং যে সেটাই বলতেসিলো। ছোঁয়া তোর সাথে কিছু জিনিস ডিসকাস করার কথা ছিল। চল চল। ও আমারে টাইনা নিয়া গেল৷ আমার আর মডার্ণ কালারের নাম কওয়া হইলো না।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here