আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা ❤️সিজন_২,পর্ব_১৭,১৮

আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা ❤️সিজন_২,পর্ব_১৭,১৮
সাহেদা_আক্তার
পর্ব_১৭

আমি সবাইরে ভালো কইরা পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম। আজকে আর মিস করা যাবে না। লজ্জা পাইলেও না।

সেই সকাল আটটায় আসছি। এখন সাড়ে দশটা বাজতেসে। লোকটার কোনো খবর নাই। বাসায় কি নয়া বউয়ের মতো সাজতেসে নাকি? এত্ত লেট ক্যান? না আজকে আসবে না? আমি চিন্তায় পড়লাম। সাহেদা আমারে কইল, এবার চল বোইন, বহুত খুদা লাগসে। তোর জ্বালায় সকালে একটা রুটি খেয়েই দৌঁড় দিসি। ওর কথা শুইনা পেটের কোণায় মোচড় দিল খুদায়৷ দুই লোকমা ভাত খাইয়াই চইলা আসছি। এখন পেটটা কিসব মঙ্গল গ্রহের প্রাণীর মতো শব্দ কইরা গান শুনাইতেসে। ঘাড়টাও ব্যাথা করতেসে। একবার বামে একবার ডানে তাকাইতে তাকাইতে ঘাড় ভাঙার উপক্রম হইসে। তার থেকে ভালো দরজায় দারোয়ানগিরি করতাম। সহজে কাজ হইয়া যাইতো। আমিও নিরাশ হয়ে কইলাম, চল। ও উইঠা দাঁড়াইতেই আমি ভৌঁ দৌঁড় দিলাম। সাহেদা ডাক দিয়া বলল, কই যাস? আমার উত্তর দেওয়ার সময় নাই। গাজররে দেইখাই পিছু নিলাম।

দশমিনিট পরে দেখলাম সে চেম্বারে ঢুকলো। ওরে কি যে লাগতেসিলো মেডিকেল এপ্রোনে! ইচ্ছে করতেসিলো তুইলা নিয়া যাই কাজি অফিসে। নাহ, থাক পরে কইবো গুন্ডি বউ। উপরের টুলেটের দিকে তাকাইলাম। লেখা, ডক্টর আকাশ আয়মান। নিউরোসার্জন। আমি হা কইরা টুলেটের দিকে তাকাই থাকতে থাকতে আকাশ আবার বাইর হইলো। আমি তো হা করতে করতে আগাইতেসিলাম তো তার লগে ধাক্কা খাইলাম। সেও তাড়াহুড়োয় ছিল খেয়াল করে নাই। ঠিক নায়ক নায়িকার দেখা হওয়ার পর্বের মতো। সেই সিনগুলা জাস্ট দেখার মতো। কিছুই হইলেই ধাক্কা। বাসে গাড়িতে কলেজে ভার্সিটিতে। ধাক্কার শেষ নাই। ধাক্কা ছাড়া প্রেম শুরুই হয় না। আমিও তো ধাক্কা খাইসিলাম আকাশের লগে। তবে সেই অফারে ক্রাশ খাওয়া ফ্রি আছিলো। সে আমার দিকে তাকাইয়া কইলো, সরি। আরে ছোঁয়া! মনে মনে কইলাম, চিনলো কেমনে!? মাস্ক পইরাও লাভ হইলো না।

– আরে স্যার যে। কেমন আছেন?

– আছি ভালো। এখানে?

– এইতো ঘুরতে এসেছিলাম আর কি।

– হাসপাতালে কেউ ঘুরতে আসে?

– না মানে দাঁতের ডাক্তারের কাছে আর কি।

– কি হয়েছে দাঁতে?

– দাঁতে কি হয়েছে? হয়েছে আর কি। ঐতো যা হয়। গাজর খেতে গিয়ে দাঁত নড়ে গেছে।

– দাঁত নড়ে গেছে গাজর খেতে গিয়ে! কি বলো! কিন্তু দুঃখের ব্যাপার আমার জানা মতে তো এই হসপিটালে কোনো দাঁতের ডাক্তার বসে না।

আমি বিড়বিড় কইরা কইলাম, আপনারে দেখে তো কথাই আউলাই গেসে। আপনি যেভাবে চেপে ধরসেন, আপনার কথার উত্তর দিতে গিয়া শুধু দাঁত না দাঁতের পাটি খুইলা বেরিয়ে আসবে।

– কিছু বললে?

– না না। কিচ্ছু বলিনি।

– আচ্ছা।

আকাশ চইলা যাইতে লাগলে পিছন থেকে ডাক দিয়া কইলাম, স্যার একটা সাহায্য করবেন? সে ফিইরা বলল, কি? আমি এগিয়ে এসে কইলাম, আপনার ফোনটা দেওয়া যাবে?

– কেন?

– আসলে আমি সাহেদাকে হারিয়ে ফেলেছি। ওর সাথে এসেছিলাম। আমার ফোনেও ব্যালেন্স নেই। একটু ফোনটা দিলে সাহায্য হতো।

– ওকে। একটু তাড়াতাড়ি করবে। আমাকে ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) যেতে হবে।

– জ্বি।

আমি ফোন করার বদলে ওর ফেসবুকে ঢুইকা নিজের আইডিতে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাই দিলাম। তারপর নিজের ফোনে কল দিয়া দিলাম। আমার ফোন বাজতেই ভং ধইরা কইলাম, হয়তো সাহেদা কল দিয়েছে। ধন্যবাদ সাহায্যের জন্য। কইয়াই ফোনটা ফেরত দিলাম। আমি তো মনে মনে লাফাইতেসি আর নিজের চিনা বুদ্ধির প্রশংসা করতেসি। খেয়াল করি নাই গাজর আমার দিকে অনেকটা আগাই আসছে। খেয়াল হতে সমান তালে আমিও মাথা পিছনে নিলাম৷ ও খুব কাছে আইসা কইলো, একটা কথা বলব? আমি ঢোক গিইলা কইলাম, কি? ও রহস্য দেখাই কইলো, সত্যি বলব? আমার গলা শুকাই আসলো। শুকনা গলায় বললাম, বলেন।

– তুমি না…

– আমি না?

– তুমি না…… দুই পায়ে দুই জোড়ার জুতা পরসো।

নিচের দিকে তাকাইলাম, ইচ্ছা করতেসে নিজের চুল নিজে ছিঁড়তে। উম! না থাক, ব্যাথা পামু। কিন্তু আজকেই দুই জোড়ার দুই জুতা পরতে হইলো! সকালে বের হওয়ার সময় গাজরের উত্তেজনায় খেয়ালও করি নাই। হায়রে ফুটা কপাল! আর সে যেমনে আগাইতেসিলো ভাবসিলাম…… ধুর ভাল্লাগে না। আমি একটুভাব নিয়া কইলাম, আরে এটা নতুন স্টাইল, স্যার। আপনি এখনো জানেন না! আকাশ আমার থেকে সইরা কইলো, ও আচ্ছা। এক পায়ে শু আর আরেক পায়ে স্লিপার পরার মতো স্টাইল আপাতত নজরে পড়েনি। আজ তোমার থেকে না হয় শিখে নিলাম। ভবিষ্যতে আসবো কিন্তু নতুন নতুন স্টাইল শিখতে। আসি। বইলাই আমারে এক বালতি সরম দিয়া চইলা গেল।

আমিও কম না, মনে মনে চিনা হাসি দিয়া কইলাম, গাজর তুমিও দেখবা তোমার মন্ডু কিভাবে চিবাইতে হয়। সাহেদা একটু পরে এসে কইল, কিরে, তুই এখানে? আমি তোকে সারা দুনিয়া খুঁজতেসি।

– আজকে গাজরের মুন্ডু দিয়ে চচ্চড়ি বানামু।

– আকাশ স্যারের ঠেলায় কি মাথা আউট হয়ে গেছে?

– সখী, জ্বালানি কাহারে বলে; সখী, বিরক্তি কাহারে বলে। তোমরা যে বলো আমারো মাথায় চিনা বুদ্ধির বাসা……। সখী, চিনা বুদ্ধি কারে কয়। সে বুঝিবে কত ধরণের হয়।

– ওই তুই কি পুরাই আউট হইলি?

আমি দাঁত কেলাই কইলাম, চল, আজকে খুশির ঠেলায় তোরে এক টাকার এলপেনলিবেন খাওয়ামু। সাহেদা মুখ বাঁকা কইরা কইল, থাক, তোর এলপেনলিবেন তুই খা। আমি বাসায় গিয়া ভাত গিলমু। তোর সাথে থাকলে আমার পেট স্বর্গে উড়াল দিবো। কপাল! বাসায় যামু কেমনে!? একটু পরেই তো ভাইবা!

– জ্বি সুইট হার্ট, চলেন টঙে গিয়া দুইটা খাইয়া ভাইবার প্রস্তুতি নিমু।
.
.
.
.
আমার ভাইবার সিরিয়াল এত পরে আসছে যে আরেকটুর জন্য নাক ডাইকা ঘুম দেই নাই। বিকালে ক্লাস পরীক্ষা হইলেই এই এক সমস্যা। খালি ঘুমে ঝুরায়।ঘুমে ঝুরতে ঝুরতে অর্ধেক দিন শ্যাষ৷ ফ্রিজ খুইলা এক বোতল ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল পানি ঢকঢক করে খাইতেই নাকে মুখে উইঠা অবস্থা কাহিল হই গেল। ঝিলিক ঘুম থেকে উঠে দরজা খুইলা আবার বিছানায় বসে ঝুরনি মোরগের মতো ঝুরতেসিলো। আমার কাশি শুইনা দৌঁড়ে আসলো। আমি কাশতে কাশতে সোফায় গিয়া বসলাম। একটু শান্ত হইতেই ঝিলিক জিগাইলো, ছোঁয়াপু, সারাদিনে খাইসো?

– হুম। না খাইলে পেটের ইন্দুর বিলাই গুলা আমার পিন্ডি চটকাইতো।

– খালা যাওয়ার আগে বার বার বলতেসিলো তুমি নাকি কয়টা ভাত নাকে মুখে গুঁজে বের হইসো।

– তা ঠিক বলসে আম্মু। যা হোক, খানা দানা কিছু রাখছিস না হাইন্ডা হাতিল (হাঁড়ি পাতিল) খালি করি রাখছিস?

ঝিলিক দাঁত কেলাই বলল, আইজকা রান্দা বাড়া করি নাই। খালা তো বারোটার দিকেই বের হই গেসে। খালুও সকাল সকাল গেসে গা। দুপুরে আগের কিছু ছিল তাই দিয়া পেট ভরসি। আমি হালকা কইরা কান মলে দিয়া কইলাম, চুরুনি৷ সে ঢং করে কান ডলে বলল, খুদা লাগসে।

– হ্যাঁ, রান্না না করলে খুদা তো লাগবে। আয় আমার সাথে।

দুইটা মিলা দুই প্যাকেট ঝোল ঝোল নুডুলস রান্না কইরা, ফ্যান চালাইয়া, টিভি ছাড়ি আরাম করে সোফায় বসলাম। সেই ঝাল হইসে। লম্বা লম্বা নুডুলসগুলা সুরুৎ করে টানতেই নাকে মুখে ঝোল ছিটাইয়া একাকার করে দিল। ব্যস, বান্দর নাচ কারে কয়। সাথে সাথে নাক ঝালে জ্বলে শ্যাষ। আমি কোনোমতে পড়ি মড়ি কইরা নাকটা ধুয়ে এসে দেখি ঝিলিকও লাফাইতেসে ঝালে। আমি ওরে এক গ্লাস পানি দিতেই সে পুরাটা খাইয়া নিল। তারপর দুইটা দুইটার দিকে তাকাই হাসতে হাসতে ফ্লোরে গড়াগড়ি খাইলাম কতক্ষণ। হাসি শেষ হতেই জিজ্ঞেস করলাম, পেট ভরসে?

– হ।

– এবার এগুলা ধুইতে যা। এটা তোর শাস্তি। একটু পরে ডাল ভাত তুলে দিবো। সাথে ভর্তা আর ডিম ভাজি। ব্যস, জীবনে আর কি লাগে!

ঝিলিক চইলা গেল রান্নাঘরে। এদিকে টিভি এক নাগাড়ে চলতেসে। আমি কতক্ষণ তাকাই ভাবলাম কি যেন ভুলে গেসি। হাতে গণতে শুরু করলাম, ভার্সিটি গিয়া খাইসি, ক্লাসে গেসি, সেখানে ইচ্ছা মতো ঝুরসি, বাসায় আসছি, খানা খাই ইন্দুর বিলাই গুলারে ঠান্ডা করসি আর এখন ফ্লোরের ঠান্ডায় বইসা টিভি দেখতেসি। আর কি!? ভাবতে ভাবতে হঠাৎ টিভিতে হাসপাতালের কথা বলা শুরু হলো। কোন এক হাসপাতালের কি এক সমস্যা হইসে। শুইনাই লাফ দিয়া উঠলাম। আমার গাজর ডাক্তার! দৌঁড়ে রুমে গিয়া ব্যাগ থেকে ফোন আইনা আরাম করে সোফায় বসলাম। ফেসবুকে ঢুকে দেখলাম আকাশ আয়মান নামে একটা আইডি থেকে রিকুয়েষ্ট আসছে। আমি মনে মনে হেসে মাত্র একসেপ্ট করমু এমন সময় ফোন বাইজা উঠল। দেখেই মুখের হাসিটা চওড়া করলাম। বন্ধু কল দিসে।

চলবে…

#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা❤️
#সাহেদা_আক্তার
#সিজন_২
#পর্ব_১৮

আমি মনে মনে হেসে মাত্র একসেপ্ট করমু এমন সময় ফোন বাইজা উঠল। দেখেই মুখের হাসিটা চওড়া করলাম। বন্ধু কল দিসে।

আমি ফোন রিসিভ করে বললাম, হ্যালো বন্ধু। কি অবস্থা? কতদিন পর! এক, দুই, তিন…… পুরা এক মাস পর ফোন আমাকে। কোনো খোঁজ খবর নাই।

– ছোঁয়া, তোমাকে কতদিন বলেছি আমাকে রাতুল ডাকবে।

– কিন্তু তোমাকে বন্ধু ডাকতেই বেশ লাগে। তা কি খবর?

– এই তো আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো?

– হুম, বিন্দাস। এতদিন ফোন দাওনি কেন?

– কাজে ব্যস্ত ছিলাম।

– কি এমন ব্যস্ত শুনি? বিদেশিরা কি খাটায় নাকি খুব?

– তা খাটায়। তবে দেশ থেকে ভালো। কেমন গেল এই একমাস?

– সেই।

– এই এক মাসে আবার ক্রাশ টাশ খাওনি তো?

– হুম, কত খেয়েছি।

– তা কিসের উপর খেলে এবার?

– আর বইলো না। একটা পোলার উপর খাইসিলাম, পরে দেখি বেটা খচ্চর, সিগারেট খায়।

রাতুল হাইসা বলল, তাহলে আর কোনো ছেলের উপর খেও না। আমি লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিতে কইলাম, তবে একজনরে ভালোবেসে ফেলসি।

রাতুলের হাসি হঠাৎ বন্ধ হইয়া গেল। এই এক জ্বালা। সে বিদেশে কাজ করে। দেশে মাসে একবার কইরা এসে আমারে দেইখা যায়। আজ দু তিন মাস কাজের চাপে আসে নাই। আমার সাথে কথা হয় নাই খুব একটা কিন্তু আম্মুর সাথে হয়। আমার অনেক খেয়াল রাখে। তাই সব কথাই ওর সাথে পকর পকর করি মোটামুটি। আমি তাড়া দিয়া কইলাম, শুনতেসো? জানো হইসে কি……

– ছোঁয়া, তুমি ক্রাশ খাও কিন্তু কাউকে ভালোবাসবে না।

– কেন শুনি। জানো ছেলেটা এত্তো কিউট, লাল লাল গাল। পুরা আমার লালু মিয়ার মতো। যত দেখি তত ক্রাশ খাই।

রাতুল গম্ভীর কণ্ঠে বলল, ছেলেটা কে, কি করে, কোথায় থাকে? আমি বললাম, আস্তে বাপু, সবুর করো। সব বলতেসি। বহুত কষ্টে ছেলেটার পরিচয় বাইর করসি। ছেলেটার নাম আকাশ আয়মান। নিউরোসার্জন। মা সহ আমাদের পাশের বাসায় উঠসে আর…। হঠাৎ রাতুল থম মাইরা গেল। আমি হ্যালো হ্যালো করতেই একটু পর কইল, আমি কদিন পরই দেশে আসছি। এর মাঝে ঐ আকাশের ধারে কাছে যাবে না।

– কেন?

– যাবে না মানে যাবে না। কোনোরকম খোঁজ খবরও নেবে না। আমি আসলে সব করবো।

– সত্যি?

– হুম।

– আচ্ছা, তাহলে বিয়ের ঘটকালি তুমি কইরো।

– বিয়ে? কার বিয়ে?

– কার আবার, আমার। আমি তো ঠিক করেই নিসি আমি ঐ গাজরটারে বিয়া করমু। বিয়ার পর ওরে ডাকমু গাজর জামাই।

– ছোঁয়া, আমি কাজ শেষ করেই দেশে আসছি। তারপর ফুফা, ফুফু আর তোমার সাথে কথা আছে। যেদিন আসবো সেদিন তুমি সব রান্না করবে। আর কেউ যাতে হাত না লাগায়। শুধু তুমিই রাঁধবে। আর ঐ আকাশ টাকাশের ত্রিসীমানায় যাবে না আমি আসার আগে। মনে থাকে যেন।

বলেই মুখের উপর ফোনটা কাইট্টা দিল। যা বাবা, কি হল এটা? রাগ করলো নাকি? হঠাৎ এত রাগ করলো কেন? ও বুঝছি, বন্ধু চলে যাবে দেইখা। আমি কান থেকে ফোনটা নামাইতেই একটা চারশো চল্লিশ বোল্টের ডাবল শক খাইলাম। ডিলিট! রিকুয়েষ্ট ডিলিট! আমার গাজর ডিলিট! এ্যাঁ…… আমার গাজর জামাই ডিলিট হই গেসে। কখন যে হাত লাগি একসেপ্টের জায়গায় ডিলিট টিপ পড়সে আল্লাহ মালুম। আমি কান্দি কাটি একসার হইতেসি। আমার চিনা বুদ্ধি…এ্যাঁ…। এদিকে ঝিলিক আইসা আমারে দেইখা ভ্যাবাচ্যাকা খাইলো। এই তো ও যাওয়ার আগে দাঁত কেলাই হাসতেসিলাম, এখন কানতে কানতে সাগর বানাই ফেলতেসি। ও কাছে এসে জিগাইলো, কি হইসে ছোঁয়াপু? আমি বাচ্চাদের মতো সর্দি টানতে টানতে কইলাম, আমার গাজর ডিলিট করি দিসি, এ্যাঁ……। ঝিলিক আগামাথা কিসুই বুঝলো না। আমি আবার ফ্যাত ফ্যাত করে কইলাম, আমারে একটা লালু মিয়া দে। ঝিলিক জানে, তাই কথা না বাড়িয়ে ফ্রিজ দেইখা এসে কইল, নাই।

– কি নাই?

– গাজর।

এবার আমার ইচ্ছা হইলো ডাক ছাইড়া কান্দি, আমার লালু মিয়া…… আমার গাজর……। গিয়া রুমের দরজা বন্ধ কইরা নাইকাদের মতো নিজেরে বিছানায় ছুইড়া মারলাম। আর ভ্যাঁ ভ্যাঁ কইরা কানতে লাগলাম।

আটটার দিকে দরজা খুলতেই দেখি ঝিলিক মহা আনন্দে পপকর্ণ খাইতে খাইতে বাংলা ছবি দেখতেসে। একটু পরেই শাবানার সেই চিরাচরিত কন্ঠ। না………। সেই দুঃখে ঝিলিকের গলা দিয়া পপকর্ণ আটকে গেল। ঢুকতেসে না দেখে আমি এক গ্লাস পানি দিয়া কইলাম, খা। সে টিভি থেকে চোখ না সরাই পানির গ্লাসটা নিয়া পপকর্ণগুলা পানি দিয়া গিললো। দেখে মনে হইতেসে শাবানার না হিতির জামাই মরসে। আমি ঠেলা দিতেই আমার দিকে তাকাইয়া ভূত দেখার মতো চমকাই পিছনে সইরা গেল। আমার চুল কতগুলা জটাধারীদের মতো জট পাকাই ছাতার মতো মেলি আছে। চোখ লাল হই ফুলে কইতরের ডিম হই গেসে। শরীরটারে পেত্নীদের মতো ঝুলাই রাখসি।

– তোমার কি হইসে ছোঁয়াপু?

– কিসু না। এরকম হই আছিস ক্যান। মনে হয় যেন তোর জামাই মরসে।

– তওবা তওবা, এসব কি কও। এখনো নাক টিপলে দুধ বের হইবো, সেখানে বিয়া করলাম কবে।

– তাও ঠিক। তোর তো বিয়ার বয়স হয় নাই। কিন্তু আমার তো হইসে।

ঝিলিক আনন্দে গদগদ হইয়া কইলো, ছোঁয়াপু, তুমি বিয়া করবা? আমি খালা খালুরে কমু তাইলে তোমার জন্য রাজপুত্তুর দেখতে। আমি মনে মনে কইলাম, সারসে, এই কথা আম্মার কানে উঠলে আমও যাইবো, ছালাও যাইবো। গাজররে তো হারামু, না জানি কোন বেডার লগে ধরি বান্দি বিয়া দি দেয়।

– না থাক। তোর রাজপুত্তুর তোর পুটলিতে ভরি রাখ। এই উপকার করা লাগবো না। এখন অন্য উপকার কর। বাসার নিচে গিয়া দোকান থেকে এক কেজি গাজর আন।

ওরে টাকা ধরাই দিয়া বাসা থেইকা বাইর করি দিলাম। আমার লালু মিয়া ছাড়া দিনটাই খারাপ যায়।
.
.
.
.
দুই তিনদিন হইলো পর্ষীর কোনো খবর নাই। আসে না। নাহলে তো প্রত্যেকদিন আইসা আমার লালুমিয়ায় ভাগ বসায়। মেয়েটা না আসায় যেমন স্বস্তি লাগতেসে আবার মনটা কেন জানি টানতেসে। আজ সন্ধ্যায় ঝিলিকের সাথে বইসা টম এন্ড জেরি দেখে হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাইতেসিলাম। হঠাৎ বেল বাজল। দরজা খুইলা দেখি পর্ষী দাঁত কেলাই হাসতেসে। আমারে জড়াই ধইরা কইল, নানুমনি কই? আইসাই আম্মুরে খুঁজতেসে। জিজ্ঞেসও করল না কেমন আছি।

– রান্নাঘরে।

বলতেই আমারে ছাইড়া রান্নাঘরে দৌঁড় মারল। আমার খবরও নিলো না। আমার থেইকা নানুমনিরে বেশি ভালো লাগে এখন। কি আর করুম। গিয়া টিভির সামনে বসলাম আবার। কান পাতসিলাম কিন্তু টম এন্ড জেরির ড্যা ড্যা এর জন্য কিসুই শুনলাম না। একটুপর দুইজন বাইর হইলো হাসিমুখে। হাসির কারণ না জানলেও পর্ষীরে বেশ খুশি লাগতেসে।

কতক্ষণ আমাদের সাথে টিভি দেখে হঠাৎ আমারে টানতে লাগল। পর্ষীদের বাসায় যাইতে হবে। আম্মু জিনিসপত্র গোছাইতে গোছাইতে বলল, আজকে তুই ওদের বাসায় থাকবি। আমি আম্মার চাইয়া কইলাম, কেন?

– সেটা নাকি সিক্রেট।

পর্ষী আমার হাত ধরে টাইনা কইলো, সিক্রেটই তো। চলো। আমাদের বাসায় রাতের খাবার খাবে। আমি আম্মুর দিকে তাকাইলাম। আম্মা অনুমতি দিল। আমি সোফা থেকে উঠতেই টাইনা দরজার কাছে নিয়া গেল।

কলিংবেল বাজাতে মুন দরজা খুলে হাসিমুখে কইলো, ছোঁয়াকে নিয়ে এসেছিস? পর্ষী বলল, হুম, আম্মু আজকে আমাদের সাথে থাকবে। আমি মনে মনে লাফ দিয়া দশহাত দূরে সইরা কইলাম, আবার গাজরের হালুয়া থেকে আম্মু ডাকা শুরু করসে। এই আম্মু কাহিনীর রহস্য বের করা লাগবো। মুন কিছু না বইলা হেসে কইলো, আচ্ছা। আমি মনে মনে কইলাম, আরে! কিসু কইলো না ক্যান!? আমি তো ওর আম্মু না।

রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে হঠাৎ পর্ষী বায়না ধরল শাড়ি পড়ার জন্য। কি মুসকিল! এত রাতে হঠাৎ শাড়ি ক্যান। আমি মানা কইরা দিলাম। সে একটা শাড়ির প্যাকেট আমার সামনে রাইখা এমন ভাবে তাকাইলো যে এখুনি ডাক ছাইড়া কাইন্দা দিবো। না পারতে প্যাকেটটা নিয়া পরতে চলে গেলাম। সুন্দর কাজ করা একটা লাল রঙের শাড়ি। যে কিনসে তার পছন্দ আছে৷ আমি পরার আগে কয়েকবার শাড়িটা দেখলাম। শাড়ি পইরা বাইর হইতেই পর্ষী আমারে টাইনা ড্রেসিং টেবিলের কাছে নিয়া গেল। আমারে সাজাইতে বসলো বাচ্চা হাতে। কানে দুল পরাইলো, গয়না পরাইলো। কাজল আমার হাতে ধরাই দিয়া কইলো, লাগাও আম্মু। তোমারে কাজলে সেই লাগে। আমি লজ্জা পাইলাম। ওর মাথায় হালকা চাটি মাইরা কইলাম, পাকনা বুড়ি। মুন রান্নাঘরে। রেদোয়ান নাকি কোথায় গেসে। পর্ষী আমার সাথে। তাও কেন যেন মনে হইতেসে কেউ যেন দেখতেসে আমারে। পাশে বারান্দা। ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় জানালা দিয়ে বারান্দা দেখা যায়। আমি একবার তাকাইলাম। কেউ তো নেই। তাও কেমন অস্বস্তি লাগতেসে।

সাজগোজ শেষ হতেই মুন আসলো। আমারে দেইখা কইলো, মা শা আল্লাহ। কারো যাতে নজর না লাগে তোর উপর। মনে মনে কইলাম, কারো না কারো তো নজর লাগতেসে। কেউ যেন দেখতেসে মনে হইতেসে। পর্ষীরে জিগাইলাম, বারান্দায় কি কেউ আছে? সে হঠাৎ ইতস্তত কইরা কইলো, কে থাকবে? চলো তো আম্মু।

– কোথায়?

পর্ষী আমারে ছাদের দিকে নিয়া গেল। দরজা খোলার আগে আমারে কইলো, নিচু হও। তারপর চোখে একটা কালো কাপড় বাইধা দিয়া কইলো, এগারটা আটান্ন বাজে। ছাদের দরজা খুইলা টাইনা নিয়া দাঁড় করাইয়া কইল, এখানে দাঁড়াও আমি আসতেসি।
.
.
.
.
কে একজন আমারে পেছন থেকে জড়াই ধরল। পর্ষী যে না তা ভালো কইরা জানি৷ ম্যাজিক তো না যে সে কয়েক সেকেন্ডে আমার সমান হই যাইবো। আমি হাত দিয়া সরাইতে গেলে আমার হাত চেপে ধরল আমার পেটের সাথে। স্পর্শটা চেনা অনেক। আমার ঘাড়ে তার নিঃশ্বাস পড়তেসে। আমি গুণতে পারতেসি। সে ফিসফিস কইরা বলল, শাড়িটাতে তোমাকে এত সুন্দর লাগছে যে ইচ্ছে করছে আজই নিজের কাছে নিয়ে যাই। এই দিনটাকে কি করে ভুলে গেলে? হ্যাপি বার্থডে, ছোঁয়া। সে আমার ঘাড়ে তার ঠোঁট দুইটা আলতো কইরা ছোয়ালো। সাথে সাথে শিউরে উঠলাম। এর মাঝেই তার ছোঁয়া অদৃশ্য। আমি চোখের কাপড় খুইলা এদিক ওদিক তাকাইতে দেখি আমার সামনে অনেকগুলো মোমবাতি লাভ শেইপ করে রাখা। সেখানে লিখা C+A। এত চেনা ক্যান সব? এই ফিসফিসানি আগে শোনা। এই স্পর্শ, এই মোমবাতি লেখা। কি যেন বার বার মনে পড়তে চাইতেসে। আমি মাথায় হাত দিতেই কে যেন টেনে বুকে জড়াই ধরে কইলো, তুমি ঠিক আছো ছোঁয়া? অচেনা স্পর্শ পাইতেই ঠেলে সরাই দিলাম। অবাক হয়ে কইলাম, বন্ধু, তুমি?

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here