আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা ❤️সিজন_২ ,পর্ব_২
সাহেদা_আক্তার
আমি মনে মনে চিনা হাসি দিয়া কইলাম, সাহেদার জন্য নইলে আজকে জোঁকের মতো লেগে থেকে তোমার নাড়ি নক্ষত্র বাইর করতাম। দাঁড়াও চান্দু তোমারে আমি খুঁইজ্যা বাইর করুম।
.
.
.
.
বাসায় আইসাই চিৎপটাং। রাস্তায় বহুত ব্যাঙের বাচ্চার মতো লাফাই হয়রান হই গেসি। পেটে থাকা গাজরগুলাও হয়রান হই গেসে আমার সাথে লাফাই। কি একখান সিটি পরীক্ষা দিলাম। কালকে ইচ্ছা মতো ঘুম গেসি। পড়াশোনা কিচ্ছু করি নাই। তাই একেবারে ডাব্বা মারসি। কত সোজা সোজা প্রশ্ন আসছিল। কালকেও তো পড়তে গিয়া দেখসিলাম প্রশ্নগুলা। যা হোক পরীক্ষার প্যারার তো শেষ নাই। যাই দেখি, ফ্রিজে কি আছে। গাজরগুলা রাখি আসি। অলরেডি তিনটা খাই ফেলসি। আর চারটা আছে। কালকে সকাল পর্যন্তও হইবো না। সাহেদাটা খালি আধা কেজি কিনে দিসে। এগুলা আমার পেটের কোনায়ও যায় নাই। এখন অনেক খুদাও লাগসে। গিয়া খুলতেই ফ্রিজ থেকে ভয়ংকর রকমের অনুভূতি লাগল। তাকাই দেখলাম করলা রাক্ষস সবুজ সবুজ চোখে আমার দিকে তাকাই আছে। আমি তো দেইখাই ফ্রিজ থেকে একহাত দূরে সইরা গেলাম। এগুলা এখানে ক্যান!
– আম্মু, ও আম্মু……
আম্মা রান্নাঘর থেকে কইল, কি হইসে? এত ষাঁড়ের মতো চিল্লাস কেন?
– ফ্রিজে এগুলা কি?
– কোনগুলা?
– এই যে সবুজ সবুজ।
– সবুজ সবুজ কি আবার? পটল?
– আরে না। ঐযে লম্বা করে……দুই মাথা হুইসের (সুঁই) মতো, সবুজ সবুজ…… গায়ে কত উঁচা নিচা খাড়া পাহাড়…
– কি সব বলিস। এত বড়ো মাইয়্যা হইছিস করলা চিনিস না?
– হ্যাঁ হ্যাঁ তোমার করলা না কোকিলা ঐটাই। ফ্রিজে ক্যান?
– তো কই রাখবো?
– আমার চোখের বাইরে……
– আমি কি করলা তোর চোখের ভিতর ঢুকাই রাখসি যে বাইরে রাখবো?
– তুমি জানো না আমি করলা চার চক্ষে দেখতে পারি না। কিসব উঁচা নিচা খাড়া পাহাড় সারা গা জুড়ে, আর তার উপর তিতার আম্মা।
– বিরক্ত করিস না তো। রান্নার সময় এত জ্বালানি ভালো লাগে না। মনে কর ফ্রিজে করলা নাই।
-………
কি কমু!? চোখের সামনে করলাগুলা রাক্ষসের মতো তাকাই আছে আর আমি নাকি মনে করতাম ফ্রিজে করলা নাই। আম্মাটা আমারে পাত্তাই দিলো না। হায়রে! আমার লালু মিয়াদের ওদের সাথে রাখলে ওরাও ভয় পাইবো। আমি নিরুপায় হয়ে আবার গাজরের থইলা নিয়ে রুমে চইলা আসলাম। থইলাটা টেবিলের উপর রাইখা ড্রয়ার খুলে অনেক খুঁইজ্যা একটা ললিপপ বাইর করে মুখে পুরলাম। ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুইতেই আম্মা এসে বলল, কালকে সকাল সকাল উঠবি।
– ক্যান!?
– বাসা চেঞ্জ করবো না? ভুলে গেলি?
– আম্মু আরো পরে, আজকে মাত্র পরীক্ষা শেষ হলো।
– কোনো পরে টরে নাই। কালকে বাকি জিনিস গুছাবো। পরশু বাসা ছাড়বো।
– ঝিলিক কই?
– ও বাজারে গেসে। কিছু জিনিস কিনার ছিল তাই পাঠালাম। তুই খেতে আয়।
– না, ও আসুক তারপর একসাথে খাবো।
– আচ্ছা, চলে আসবে হয়তো এখন।
আম্মাটা চইলা গেলো। আমি ফ্যানের দিকে তাকাই রইলাম। হাতটার উপর কত অত্যাচার করসি আজকে; কালকে আবার অত্যাচার করমু। আচ্ছা, পোলাটা যদি সত্যিই ড্রাইভার হয় আমার আম্মা আব্বা কি ড্রাইভার জামাই মাইনা নিব না!? সমস্যা নাই, আমিও গাড়ি চালানো শুরু করমু নে। তখন জামাই বউ মিইলা গাড়ি চালামু। ভাবতে ভাবতে খুশিতে ঘুমাই গেলাম।
আমি পাশে তাকাই দেখলাম লাল টুকটুকে ক্রাশ বসে গাড়ি চালাইতেসে। সিট বেল্ট বাঁধা। আমার দিকে নায়ক স্টাইলের হাসি দিল। আমি তো ফিদা। উফ্! গাল গুলা! আমি হাত বাড়াইলাম কচলানোর জন্য। তখনই হঠাৎ কোথা থেকে যেন ধপাস কইরা পড়ে গেলাম। গাড়ি থেকে পড়লাম কেমনে! পিট পিট করে তাকাই দেখি আমি বিছানার পাশে মেঝেতে পইড়া আছি। কোমরটা গেল নাকি! আজকে ক্রাশের জ্বালাই কোমরটাও গেল। আমি কোনোমতে আবার বিছানায় উঠে শুইয়া গেলাম। শুনতেসি আম্মা ডাকতেসে। ঝিলিক চলে আসছে বাজার থেকে। ওর কথা শোনা যাইতেসে। কোন দোকানদার কি করসে। কিসের কত দাম। এসব নিয়া আম্মার সাথে পকপক করতেসে। মোবাইল টিপে দেখলাম আধা ঘন্টা ঘুমাইসি। ঘুমটা ভাঙসে যে মাথাটায় প্রচন্ড ব্যাথা করতেসে। ভার হয়ে গেসে আবার। বমি বমি লাগতেছিল। আম্মা দ্বিতীয় বার ডাকতেই হড়হড় কইরা বমির বন্যায় সব ভাসাই দিলাম। শব্দ শুনে আম্মা আর ঝিলিক দৌঁড়াই আসল। আম্মা মাথা চাইপা ধরল আর ঝিলিক এক দৌঁড়ে বালতি নিয়ে আসল। ইচ্ছা মতো বমি করে নিজেকে হালকা করলাম। মাথা ব্যাথাটা বাড়সে। আম্মা আমারে শোয়াই দিয়ে দুজনে মিলে কোনোমতে সব পরিষ্কার করে নিল। আমারে হালকা খাবার খাইয়ে ঔষুধ দিয়ে আম্মা বলল, আবার ব্যাথা করছে? আমি মাথা নাড়লাম। এই মাথা ব্যাথাটা কত দিন যে প্যারা দিবে কে জানে।
– ঔষুধ খাওয়ার সময় পার হয়ে গেসে। ঘুমাচ্ছিলি তাই ভাবলাম একটু ঘুমা। কি অবস্থা হলো!
– ঠিক হয়ে যাবো। চিন্তা করো না।
– একটা বছর পার হয়ে গেল……
– ডাক্তার তো বলেছে সময় লাগবে।
– হুম। তুই কদিন রেস্ট নে। পরশু যাওয়া লাগবে না। আরো পরে উঠবো নতুন বাসায়।
– আমি ঠিক আছি আম্মু। দেখবা কালই সব গুছানো হয়ে যাবে। তাছাড়া ঝিলিক তো আছে।
– হুম, আমি থাকতে ছোঁয়াপুর টেনশন নাই।
– হ্যাঁ জানি তো। আমাদের ঝিলিক একাই কাজে একশো। আম্মু, নইলে বাড়িওয়ালা আবার কোন ক্যাঁচাল পাকাবে।
– ওকে বাবা তুই রেস্ট নে। আমাকে সন্ধ্যায় বের হতে হবে।
– আজকে নাইট ডিউটি?
– হুম। আজকে কয়টা খারাপ রোগী কপালে আছে কে জানে।
– হুম, কিচ্ছু হবে না। আমার আম্মা বেস্ট নার্স ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড।
– হ, পাকনা বুড়ি।
.
.
.
.
যেতেতু ভার্সিটি শুক্র শনি বন্ধ তাই পরদিন কাজে লাইগা গেলাম। যদিও আমারে তেমন কিছু করতে হইতেসে না। মেইনলি করতে দিতেসে না ঝিলিক। কিছু হাতে নিলেই কোত্থেইকা দৌঁড়ায় আসে চোখেও দেখি না। আইসাই হাত থেকে কাইড়া নিয়া কয় আমি করতেসি। ঝিলিক প্রায় একবছর আমাদের বাসায় কাজ করে। দেখলে মনে হয় ছোট থেকেই আমাদের সাথে পরিচয়। নতুন বাসাটা সাহেদাদের বাসার নিচের তলায়। সাহেদা থাকে তিনতলায় আমরা উঠবো দোতলায়। এবার থেকে দুই বান্দর একসাথে লাফামু। মনের মধ্যে খুশির সুনামি বইতেসে। উফ্, আই এম সো এক্সসাইটেড! ভাবনার মধ্যেই সাহেদারে ফোন দিলাম। বেচারি ঘুমাইতেছিল। ফোন রিসিভ করে বলল, হ্যালো…… কে?
– তোর সুইটহার্ট।
– অ, তুই? কি খবর?
– এইতো বাসা পাল্টাবার প্রিপারেশন চলছে। আই এম কামিং বেইবি। শোন না, আমি যে ক্রাশ খাইসি……
– একটা কথা শুন।
– কি?
– তুই যদি আর ক্রাশের কথা তুলছিস তবে প্রত্যেকদিন তোরে আমি ভর্তা কইরা আচার বানামু। তোর ক্রাশ খাওয়ার কাহিনি শুনলে মানুষ চিনি খেয়ে মরবো।
– আহা শুন না, কালকে যে খচ্চর কাউয়া থুক্কু ক্রাশরে দেখসিলাম ঐটারে খুঁজমু।
– কই খুঁজবি?
– সারা শহর খুঁজমু।
– হইসে, আপনার মুরোদ জানা আছে। বিছানা থেকে ওয়াশরুম যাইতে আলসি করস আর তুই নাকি সারা শহর খুঁজবি।
– এমন করে বলিস না।
– তোর ক্রাশের চক্করে আমি পাগল হই পাবনায় যামু।
– ওকে, বুকিং ডান। এখন উঠ। বের হমু।
– নাহ, আমার ঘুম পাইতেসে।
– উঠবি না আমি আসি ডোবায় চুবামু। এক ঘন্টা দিলাম। সুপার মার্কেট চলে আয়।
সাহেদা অনিচ্ছার সত্ত্বেও উঠে গেল। আমি সাদা গেঞ্জির উপর জিন্সের কোটি পরলাম, সাথে জিন্সের প্যান্ট। চোখে সানগ্লাস আর মাথায় বড়ো ক্যাপ পরে বের হইলাম। মুখে মাস্ক পরে নিলাম যাতে চিনতে না পারে। আয়নায় নিজেরে দেইখা নিজেই চিনতে পারি না। একঘন্টায় মার্কেটে গিয়ে দেখি সাহেদা আগেই হাজির। আমার কুটুকুটু বেস্টু। ওর কাঁধে হাত দিতেই আমারে দেইখা দুই হাত দূরে লাফ দিয়ে কইল, আপনি কে?
– যাক, গোয়েন্দা সাজটা ঠিক হইসে তাইলে। তুইও চিনতে পারিস নাই।
– এমন সাজছিস ক্যান?
– গোয়েন্দাগিরি করমু। চল।
– কই যাবি?
– দেখি। এক কাজ করি, পার্কিং প্লেসে গিয়ে দেখি ওর গাড়ি আছে কিনা।
– গাড়ি খুঁজবি কেমনে।
– হে হে, কালকে গাড়ির নাম্বারটা মুখস্ত করসি। ******* চল।
ওরে নিয়া পার্কিং প্লেসে চইলা আসলাম। অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর পাওয়া গেল। আজকেও আসছে। এবার মার্কেটে খোঁজার পালা। গিয়ে দেখলাম দ্বিতীয় ফ্লোরে একটা দোকানে বসে কার সাথে কথা কইতেসে। আমি আগাই যাইতেই হঠাৎ কি হইলো জানি না। খালি ময়দানে উস্টা খাইলাম। ফলে আশে পাশের সবাই আমার দিকে হা করে তাকাই রইলো। ক্রাশও আমার দিকে তাকাইলো। হায়রে ফাডা কপাল। উস্টা খাইলি ভালা কতা তাই বলে ক্রাশের সামনে!
চলবে…