আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা ❤️সিজন_২,পর্ব_১

আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা ❤️সিজন_২,পর্ব_১
সাহেদা_আক্তার

❣️সিজন ১ এর পর……❣️

এত্ত কিউট একটা মানুষ কেমনে হয়! লাল লাল গাল, চোখে সোনালি রঙের চিকন ফ্রেমের চশমা। রোদে পোড়া চেহারায় খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে আমার স্বপ্নের নায়কের মতো লাগতেসে। একটা কালো প্রাইভেট কারের ড্রাইভারের সিটে বসা। সব মিলিয়ে সেই লেভেলের ক্রাশ খাইয়া আমার পাবনায় যাওয়ার টিকেট রেডি। সিএনজিতে বইসা ছিলাম জ্যামে। ভার্সিটি যাইতেসি। আজকে সিটি (ক্লাস টেস্ট), মাথা কাজ করতেসিলো না। তাই এদিক ওদিক তাকাইতেসিলাম। তখনই পোলাটার দিকে নজর পড়ল। উফ্! গালগুলা! মাত্র হাত বাড়াইতেসিলাম গাল দুইটা কচলানোর জন্য, তখনই জ্যামটা ছাইড়া দিল। ধুর, জ্যামটা ছাড়ার টাইম পাইলো না! আমার ক্রাশ পাশের রাস্তায় মোড় নিল আর আমার সিএনজি সোজা ভার্সিটির দিকে। মনে মনে সিন্ডারেলার বোনদের মতো কইলাম, এই যে শুনছেন? আমার ঝাড়ুটা একটু ধরবেন? ঝাড়ু! আমি কি সিন্ডারেলা নাকি! ধুর, একটু পর পরীক্ষা আর পাগলের মতো কি সব বকতেসি। কিন্তু মনের কাগজে ছাপাখানার মতো তাহার চেহারা ছাপা হইয়া গেল।
.
.
.
.
– সাহেদা, সাহেদা, জানিস আমি না আজকে আবার ক্রাশ খাইসি।

একটু আগে ক্লাস, পরীক্ষা সব শেষ কইরা ভার্সিটি গেটের বাইরে ওরে নিয়া দাঁড়াইলাম। সাহেদা খুব মনোযোগ সহকারে নিজের সিটি পরীক্ষার প্রশ্ন দেখতেছিল। আমার কথা শুইনা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কইলো, ছোঁয়া, তুই কখন ক্রাশ খাস না? তুই দিনে রাতে অন্তত একশবার ক্রাশ খাস। তার উপর অদ্ভুত সব জিনিসের উপর। তেলাপোকার ঠ্যাংয়ের উপর, কাউয়ার নাকের ফোরন্দার (ছিদ্র) উপর, ব্যাঙের ডাকের উপর, টিকটিকির লেজের উপর……

– এমন করে বলিস না। ওরাও কত্ত কিউট!!!

– কিউট!? আল্লাহ!!! তোরে যে কি কইতাম? তোর ক্রাশ খাওয়া দেখলে আমারও ক্রাশ খেয়ে মাটির তলে ঢুইকা যাইতে ইচ্ছে করে। ক্রাশ খাওয়ার মতো যদি তুই ভাতটা খাইতি তাহলে হয়তো এতো দিনে কয়েক কেজি ওজন বাড়াইতে পারতি।

– সাহেদা, জীবনে যদি ক্রাশই না খাইতে পারি তো আর কি করলাম!

– হ, তাও যদি একটু মটু হইতি।

– ধুর, তোর পটর পটরে ভুলেই যাইতেসি কি কইতে আসছিলাম।

– আচ্ছা বল কি বলতেসিলি। এখন কিসের উপর ক্রাশ খাইলি?

– একটা ছেলের উপর।

– যাক, এতদিনে কাউয়া, ব্যাঙ বাদ দিয়ে মানুষের দিকে নজর পড়ছে। তা কার উপর খাইলি?

– সেটা তো জানি না। একটা প্রাইভেট কারে ড্রাইভারের সিটে বসা ছিল।

– যদি গাড়ির ড্রাইভার হয়?

– সে যাই হোক, যা মিষ্টি দেখতে……

– সেই মিষ্টি দিয়ে শরবত গুলে খা।

– হি হি, আপাতত লালু খামু।

– তোর মতো পাগল ছাড়া আর কেউ গাজরের নাম রাখে!?

– ওই, শোন না। চল না বাজার, ফাইরুজের কাছে শুনসি বাজারে নাকি ইয়া মোটা গুলুগুলু গাজর বিক্রি করতেসে।

– গাজর আবার গুলুগুলু হয় কেমনে? ফাইরুজ বলসে!?

– আরে আমার লালু মিয়াগুলা হয়। গুলুগুলু লালু মিয়া জুলুজুলু চোখে আমার দিকে তাকাই থাকে। উফ্!!!

আমার চিন্তা করেই জিভে পানি চইলা আসলো। সাহেদা আমার দিকে মুখ বাঁকা করে তাকাই কইলো, হইসে, আর লালা বাইর করতে হবে না। এখুনি মুখ থেকে পড়বে। চল চল। আজকে কোন লালুর কপালে দুঃখ আছে কে জানে। আমি দাঁত কেলাই ওরে নিয়া ডানে বাজারের দিকে রওনা দিলাম।

– বুঝলি, আজকের সিটিটা! উফ! সেই লেভেলের প্যারা ছিল।

সাহেদাও আমার সাথে সম্মত হয়ে কইল, হুম, আমার তো প্রশ্ন দেখেই চক্কর আসছিল। স্যার কি যে একখান প্রশ্ন করসে! কি যে দিসি আল্লাহ ভালা জানেন। পঁচিশে মাত্র পনের মার্কস কমন পড়সে।

– তাইলে তো আমি তোর থেকে ভালোই আছি। আঠারো মার্কস ভালা মতো দিসি।

– আহা! তিন মার্কস বেশি দিয়া কি গর্ব!

আমি ভেটকি দিয়ে কইলাম, গর্বই তো। কারণ আমাদের আতিলটা শেষ তিন মার্কস আমার থেকে দেখে লিখসে অথচ সেটা আমি পুরা আন্দাজে বানাই লিখসি।

– বেচারা সৌরভ! আমার ভাগ্য ভালো আজকে স্যার পরীক্ষা শুরুর একটু পর তোর পেছন থেকে উঠাই অন্য জায়গায় বসাইছিল।

– কারন তুমি পরীক্ষার সময় বেশি পটর পটর করো।

– হ, যাহোক, রেজাল্ট দিলে দেখা যাবে।

আমি একটা বড়ো করে হাই তুলে কইলাম, হুম, বহু কষ্টে এই এক সপ্তাহ ধরে সিটি পরীক্ষাগুলা দিতেসি। চল না আজকে তোর থেকে তিন নাম্বার বেশি আনসার করা উপলক্ষে আমারে এক কেজি লালু কিনি দিবি। আহা! আমার লালু মিয়া!!!

– এই তুই লালু মিয়া বলা থামাবি? কেমন লাগে শুনতে।

– আচ্ছা বাপু, গা জ র। আমার কত ইচ্ছা লালু মানে গাজর মিয়া খামু!!!!

– ওই বেটি, এই নিয়ে তোর কত নাম্বার ইচ্ছা পূরণ হইতেসে!? গত সিটি পরীক্ষার পরও তো দেড় কেজি কিনে নিয়ে গেলি।

– আরে এতদিন থাকে নাকি? সেই কবেই ওরা টয়লেটের টাংকিতে ঘুরতে চলে গেছে। আমার লালু মিয়া……

– হায়রে!

আমি ওরে নিয়া গাজর কেনার জন্য রাস্তার পাশের দোকানটায় দাঁড়াইলাম। উফ! কতগুলা লালু মিয়া আমার দিকে জুলুজুলু করে তাকাই আছে। সবগুলা চিল্লাই বলতেসে, আমারে নাও। আমারে নাও। আহা! কি দৃশ্য! কয়েকটা তো লজ্জায় তাকাইতেই পারতেসে না। কয়েকটা গভীর ভঙ্গিতে লাল দাড়িতে হাত বুলাইতেসে। যদি সামর্থ থাকতো সব্বাইরে নিয়া আমার জাদুর পেটে ঢুকাইতাম।

– চাচা, এক কেজি গাজরের দাম কত?

– ১৮০ টাকা।

– হ্যাঁ!!! চাচা, আর কম হবে না?

– না, এবার গাজরের দাম বাড়সে।

সাহেদা কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, শুন না, আরেক সময় কিনিস। আমার কাছে এত টাকা নাই। আচ্ছা, তোর কাছে একশো টাকা হবে? ওই, ওই…… কি ভাবিস?

– কি লাল লাল গাল!

ও আমার পা চইটা দিল। আমি ব্যাথায় কল্পনার জগত থেকে ফিইরা কইলাম, হ্যাঁ!? কিছু বলছিস? ও আবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে কইল, তোর কাছে একশো হবে?

– না, পঞ্চাশটাকা ছিল। সিএনজিতে উঠার আগে বিশ টাকার ফুসকা খাই ফেলসি। বিশ টাকার সিএনজি ভাড়া। এখন একশোর দশভাগের এক ভাগ আছে।

– কেমনে কি! পরীক্ষার টেনশানে আমার গলা দিয়ে খাবার নামে না। আর তুই আসার সময় ফুসকা খাইলি!?

– ব্রো , এত টেনশানের প্যারা নেওয়ার কি দরকার? রিল্যাক্স।

– আমি তোর ব্রো হই কবে থেকে? বুঝছি। দে, দশটাকাই দে। চাচা আধা কেজি দেন।

আমি কান্না কান্না ভাব করে কইলাম, মাত্র আধা কেজি!? সাহেদা আমার দিকে তাকায়ে কইলো, শুনো, তোমার লালু মিয়ার দাম বেশি। তাই অর্ধেক নিয়া খুশি থাকো। ওর কথা শুইনা চাচা আমাদের দিকে তাকাই রইলো। ও চাচাকে নব্বই টাকা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, এই নেন, চাচা। চাচার হাত থেকে গাজরের থইলা আমার হাতে দিয়ে কইল, হ্যাপি? আমি ঠোঁট উল্টাই কাঁদো কাঁদো হইয়া মাত্র কইতে লাগলাম, মাত্র আধা……

– টাকার যেহেতু সংকট এতেই সন্তুষ্ট থাকো বাছা। এবার চল। বাসায় যেতে হবে। লেট হচ্ছে।

ও আমারে টেনে নিয়ে আসল দোকানের সামনে থেকে। আমি পিছন দিকে তাকাই দেখলাম আমার লালু মিয়ারা চোখে পানি নিয়া তাকাই আছে। আমিও কান্না চোখে মনে মনে কইলাম, সি ইউ নেক্সট টাইম বেইবি। আমি ওর হাতে গাজরের থইলা ধরাই দিয়া একটা গাজর নিলাম। তারপর খাবার পানি দিয়ে ধুয়ে ওর সুন্দর সুন্দর লাল দাড়ি পরিষ্কার কইরা রাস্তায়ই খাওয়া শুরু করলাম। খাইতে খাইতে হঠাৎ উৎসাহিত হয়ে কইলাম, ডেড কডো সুনডর বিলউ। সাহেদা আমার দিকে ফিইরা বলল, এটা কি ভাষা! আগে গাজরটা খেয়ে শেষ কর তারপর আজাইরা বকিস। আমি কোনোমতে মুখে থাকা গাজরগুলা গিলে বললাম, দেখ, বিলাইটা কি সুন্দর, মা শা আল্লাহ!

– এটা বলার জন্য গব গব করে কথা বলতেছিস!? তুই যে কেন এত গাজর পাগল!?

আরেক কামড় দিয়া কইলাম, ডানি না (জানি না)। সাহেদা বিরক্তির সুরে বলল, এইটা বড্ড বিরক্ত লাগে। মুখে খাবার রেখে ভুস ভুস করে কথা বলা। আর্ধেকও বুঝা যায় না। আমি শেষ অংশ মুখে পুরে দিয়ে কইলাম, ইডজ ওগে (ইট’স ওকে)। সাহেদা আমার দিকে মাথা নাড়াই হাঁটায় মন দিল।

সিএনজি স্টেশন বড় মার্কেটের পরে। বড় মার্কেটের কাছাকাছি আসতেই কইলাম, এই, সাহেদা, শুন না।

– হুম বল।

আমি ফিসফিস করে কইলাম, চল না মার্কেটে ঘুরে আসি। ও আমার দিকে ফিরে বলল, ঘুরবি কেমনে? টাকা আছে?

– আরে সব সময় টাকা থাকা লাগে নাকি?

– হুদা ঘুরে কি করবি? কালকে আসিস……

হঠাৎ একটা প্রাইভেট কার সাই কইরা সামনে দিয়ে গিয়া আমাদের কাদায় ভরাই দিলো। কালকে সারা রাইত ইচ্ছে মতো আকাশ বাথরুম করে মাঠে ঘাটে ছোটখাটো পুকুর বানায় ফেলসে। আর আজকে ঐ পুকুরের পানিতে আমাদের একেবারে গোসল করাই দিল। আমার সাধের সাদা জামা একেবারে কালা জামা হইয়া গেল। মেজাজ খারাপ করে গাড়ির পিছু নিলাম। সাহেদা আমাকে থামিয়ে কইল, গিয়ে কি লাভ হবে?

– খচ্চর কাউয়াটা আমাদের জামার কি হাল করসে দেখ। আমার কত সাধের জামা! ইচ্ছে করতেসে পিটাই ভর্তা বানাই পোড়া মরিচ দি মাখি খাই।

– আরে ছাড় তো। তারা এত কিছু ভাবলে সাবধানে গাড়ি চালাতো। ওই… ওই…… এত মনোযোগ দিয়ে কি দেখিস?

– ছেলে……

– ছেলে!? কোন ছেলে? কার কথা বলছিস?

– আরে যে প্রাইভেট কারটা একটু আগে কাদা পানি ছিটালো। ওইটার ভেতর থেকে একটা পোলা বের হইসে। ঐযে চলে গেল দেখ।

– দেখতেসি না।

– আরে ঐযে কালো গাড়িটা।

– এইটা তো পার্কিং এরিয়া। কত কালো গাড়িই তো আছে।

– আরে ঐযে……ধুর তোর দেখা লাগবে না। ইস্ চলে গেসে ভিতরে। সাহেদা……

– বল।

– আমার ক্রাশ। আজ সকালে যাকে দেখসিলাম গাড়িতে। ইস! কি কিউট!

সাহেদা কোমরে হাত দিয়ে কইল, তুই না ওরে ভর্তা বানাইতেছিস? আমি লাজুক ভাব করে কইলাম, এসব কি কও বান্দুপী! কেউ নিজের ক্রাশরে ভর্তা বানায়? চল না মার্কেটে। ক্রাশ দেখমু।

– এই শুন। এখন সোজা বাসায়, না গেলে আমি তোরে ভর্তা বানামু। খালি আজাইরা ক্রাশ খাস। চল।

আমি কাঁদো কাঁদো হয়ে বললাম, জ্বি দাদিআম্মা চলেন। সাহেদা জোর করে আমাকে টেনে মার্কেটের সামনে থেকে নিয়া গেল। আমি যাওয়ার সময় একটা উঁকি মারলাম। তারে প্রথম দোকানেই দেখা গেল। আমি মনে মনে চিনা হাসি দিয়া কইলাম, সাহেদার জন্য নইলে আজকে জোঁকের মতো লেগে থেকে তোমার নাড়ি নক্ষত্র বাইর করতাম। দাঁড়াও চান্দু, তোমারে আমি খুঁইজ্যা বাইর করুম।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here