প্রতারণা,(অনুগল্প)
নন্দিনী_চৌধুরী
তিনবছরের সম্পর্ক শেষ করে। আদ্র যেদিন আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছিলো,সেদিন আমি ওর পায়ে ধরে কান্না করেছিলাম আমাকে না ছেড়ে যাওয়ার জন্য।কিন্তু সেদিন আমার কান্না আদ্রের মন গলাতে পারেনি।সেদিন ও আমাকে ছেড়ে চলে যায়।আর আমি সেই স্থানে বসে চিৎকার করে কেঁদেছিলাম।
আমি মাহিয়া ইসলাম মাহি।অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী।বাবা মায়ের বড় মেয়ে আমি।আমার একটা ছোট বোন আছে মিহিয়া ইসলাম মিহি।মিহি ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পরে।আদ্রের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিলো খুব অন্যভাবে।এ.সে.সি পরিক্ষা দেওয়ার পর ভালো রেজাল্ট করায় বাবার কাছে একটা স্মার্ট ফোনের আবদার করি।বাবাও আমাকে একটা স্মার্ট ফোন কিনে দেয়।ফোনটা পেয়ে অনেক খুশি হয়েছিলাম।আমি মুলত ফোনটা দিয়ে ফেজবুক আর ইউটিউব চালাতাম।ইউটিউবে আমি অনেক গল্প পড়তাম।অনেক গল্পের চ্যানেল ছিলো সাবস্ক্রাইব করা।একদিন হঠ্যাৎ আবেগি মন একটা চ্যানেল চোখে পরে আমার।সেখানে একটা গল্প ক্লিক করে পড়ি আমি।গল্পের যার ভয়েজ দেওয়া একটা ছেলের।ভয়েজটা মাসাল্লাহ।আমি ভয়েজদাতার নাম চ্যাক করে দেখি নাম লেখা আদনান খান আদ্র।নামটা দেখেও আমার অনেক ভালোলাগলো।এরপর সব সময় অই চ্যানেলের ভিডিও গুলো দেখতাম।দিনে দিনে আদ্রের প্রতি দুর্বল হয়ে পরছিলাম।আমি আদ্রকে রোজ দেখতাম ফেজবুকে।আমার সার্চলিস্টের প্রথমে ওর নাম থাকতো।আদ্রের প্রতি যে আমার ভালোবাসা হয়েগেছে সেটা আমি বুজেগেছিলাম।কিন্তু সেটা আদ্রকে বলার মতো সাহস আমার ছিলোনা।একদিন আদ্রের একটা ভিডিওতে ও ওর নাম্বার টা দেয়।কারন অনেকে তাদের লেখা গল্প আদ্রের চ্যানেলে দিতে চায়।তাই আদ্র নাম্বার দিয়েছে।আমিও কি ভেবে নাম্বারটা উঠিয়ে নেই।চট করে নামিয়ে নেই হোয়াটস্যাপ।তারপর আদ্রের নাম্বার এড করে নেই।আদ্রের নামটা জলজল করছে আমার ফোনের স্ক্রিনে।নাম্বার নেওয়ার পরেও আমি আদ্রকে কোনো ম্যাসেজ দেইনি।একদিন সাহস করে দিয়েই দিলাম ম্যাসেজ।
আমি:আসসালামু আলাইকুম।
ম্যাসেজ দেওয়ার ৬মিনিট পর সে সিন করলো ম্যাসেজ,আর রিপ্লাই দিলো।
আদ্র:ওয়ালাইকুমুস সালাম।
আমি:কেমন আছেন।
আদ্র:জি আলহামদুলিল্লাহ আপনি?
আমি:আমিও আলহামদুলিল্লাহ।আচ্ছা জানেন আমার না আপনার গল্প গুলা অনেক ভালো লাগে।আপনি খুব ভালো লেখেন।
আদ্র:জি ধন্যবাদ।
এরপর আমি আর কোনো ম্যাসেজ দেইনি আদ্র ও দেয়নি।একদিন রাত ১১টা বাজে হঠ্যাৎ দেখি আদ্র ম্যাসেজ দিছে।সেটা দেখে আমি পুরোই চমকে যাই সাথে অনেক খুশিও হই।
আদ্র:হাই কেমন আছেন?
আমি:জি ভালো আপনি?
আদ্র:ভালো বিরক্ত করলাম নাকি?
আমি:না,না বিরক্ত করবেন কেন।আসলে একটু অবাক হলাম।আপনি নিজ থেকে ম্যাসেজ দেওয়াতে।
আদ্র:অহ হ্যা আপনাকে ভালো মনে হলো তাই দিলাম।তাছাড়া যারাই আমার সাথে কথা বলতে আসে সব খালি প্রেমের জন্য আসে যেটা আমার ভালো লাগেনা।আপনি একজন যে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব ছাড়া ম্যাসেজ করেছেন।তাই আরকি আপনাকেই দিলাম ম্যাসেজ।
আমি(আল্লাহ যাক ভালো হইছে আমি ওরে প্রপজ করিনি।নাহলে আমাকেও এভোয়েড করতো।ওতো জানেনা ওযাকে ম্যাসেজ করেছে সেও যে ওর কতো পাগল।)
আমি:কেন কারো সাথে রিলেশনে আছেন নাকি যে কেউ প্রেম প্রস্তাব দিলে ভালো লাগেনা।
আদ্র:না কেউ নেই লাইফে।কিন্তু যার তার প্রতিতো ভালোবাসা হয়না তাইনা।ভালোবাসার মতো সুন্দর অনুভুতি সবার জন্য হয়না।আমার যার জন্য হবে এই অনুভুতি তাকে আমি ঠিক জীবনে গ্রহন করবো।
আমি:আচ্ছা বুজলাম।
আদ্র:কিসে পড়াশুনা করে আপনি?
আমি:ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার।আপনি?
আদ্র:আমি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশুনা করছি।সাথে ইউটিউবার একজন।
আমি:ওহ গ্রেট।বাসা কোথায় আপনার?
আদ্র:সাভার আপনার?
আমি:আমার ও সাভার।বাহ আমাদের তো বাসা কাছাকাছি।
আদ্র:হ্যা।
এভাবে আমার আর আদ্রের কথপকথন চলতে লাগলো।২মাস পর আদ্র নিজে আমাকে প্রপোজ করলো।আমি তো প্রথমে অবাক হয়েছিলাম।তারপর নিজের ভালোবাসার মানুষকে পাচ্ছি সেই খুশিও ছিলো।এক্সেপ্ট করে নিলাম আদ্রকে।বেশ চলতে লাগলো আমাদের প্রেম।আদ্র আমার অনেক কেয়ার করতো,অনেক ভালোবাসোতো।আমিও আদ্রকে পাগলের মতো ভালোবাসতাম।রোজ দেখা করতাম আমরা।আদ্র ওর চ্যানেল পড়াশুনা সব সামলে আমাকেও সময় দিতো।এভাবেই কেটে যায় ৩বছর।হঠ্যাৎ আদ্র বদলে যেতে লাগলো।যেই আদ্র আমাকে আগে অনেক কেয়ার করতো আমাকে ফোন ম্যাসেজ দিয়েই যেতো।সেই আদ্র আমাকে ফোন তো দূর ম্যাসেজ ও ঠিক মতো দেয়না।আমি ফোন ম্যাসেজ দিলেও রেস্পন্স করেনা।রাতে একটু এসে করে বলে অনেক বিজি জব চ্যানেল সব কিছু নিয়ে।আমিও বিশ্বাস করি।ভালোনাসিতো তাইতো এতো বিশ্বাস করি।দিনের পর দিন ওর অবহেলা সয্য করেও কিছু বলতাম না।ওকে লাইনেই দেখতাম তবুও আমার ম্যাসেজ সিন করতোনা।ভাবতাম হয়তো সত্যি খুব বিজি।কিন্তু না আমার বিশ্বাস মিথ্যা করে দেয় আদ্র।
একদিন আমার বান্ধুবি আমাকে একটা স্ক্রিসট দেয় যেখানে দেখি আদ্রকে ওর ভিডিওর কমেন্ট বক্সে একটা মেয়ে লিখেছে আই লাভ ইউ বাবু।আদ্র রিপ্লাই দিয়েছে আই লাভ ইউ টু বাবু।এটা দেখে আমি অবাকের চরম পর্যায় চলে যাই।আমার বান্ধুবি আমাকে বলে এই মেয়েটা নাকি প্রায় ভিডিওতে আদ্রকে নানা কমেন্ট করে আর আদ্র তার রিপ্লাই করে।আরো অনেক স্ক্রিমসট দেয় যেখানে এরকম অনেক কমেন্ট করা আর রিপ্লাই দেওয়া।আমি নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।আমার বান্ধুবিকে বললাম খোজ লাগাতে।কারন আমার ফেজবুক পাস ছিলো আদ্রের কাছে আমি খোজ নিলে আদ্র জেনে যাবে।এই জন্য আদ্র আমাকে ওর চ্যানেল থেকে বের করে দিয়েছে।যেনো আমি এসব দেখতে না পারি।আমার বান্ধুবি খোজ এনে দিলো।মেয়েটার নাম তাসফিয়া নোভা।আদ্রের সাথে ৪মাস যাবত নাকি রিলেশন চলছে।এসব শুনে আমি আমার বুকের ভিতরা ছাই হয়ে যাচ্ছিলো।কেউ হয়তো কুপাচ্ছে আমার কলিজা মনে হচ্ছিলো।আমি নিজেও একটা ফ্যাক আইডি খুলে নোভাকে এড পাঠাই একদিন পর এক্সেপ্ট করে সে।ম্যাসেজ দি নোভাকে।জানাই তার আর আদ্র অনেক ভক্ত আমি।আসতে আসতে করে সব জানলাম।আসলেই তারা ৫হলো রিলেশনে আছে কিছুদিন পর বিয়ে করবে।সব জেনে সেদিন রাতে চিৎকার করে কেঁদেছিলাম। আদ্রকে ম্যাসেজ দিয়ে জানাই কাল লেকের পারে দেখা করতে।আমার ফেজবুকে পাস ওর থেকে নিয়ে আসি চ্যাঞ্জ করে।পরেরদিন আদ্র যথারীত আসলো লেকের পারে।আমি তার কাছে সব জানতে চাইলে সে জানায় তার এখন আর আমাকে ভালোলাগেনা।সে নোভাকে ভালোবাসে।আমার সাথে আর সম্পর্ক রাখতে চায়না।সব শেষ করে আদ্র চলে যেতে নিলে আমি পায়ে ধরে কান্না করে বলি আমাকে না ছাড়তে।তবুও সে চলে যায়।
৪বছর পর,,
এখন আমি নিজেকে অনেক সামলে নিয়েছি।আদ্র চলে যাওয়ার পর পাগলের মতো হয়েগেছিলাম।মা বাবা আমাকে নিয়ে অনেক চিন্তায় পরেযান।ডিপ্রেশন আমাকে ঘিরে ধরেছিলো।ডাক্তার দেখাই।তারপর আসতে আসতে ঠিক হতে লাগলাম।তবুও বেহায়া মন আদ্রের কথা ভাবতো।ফেজবুকে ডুকেই আদ্রের প্রফাইল চ্যাক দিতাম।নোভার সাথে ভালোই যাচ্ছে রিলেশন ওর।বিয়েও করে নিয়েছে ওরা।আমিও বিয়ে করেছি বাবার পছন্দের ছেলেকে।নাম তন্ময়।তন্ময় একজন কলেজের প্রফেসর।আমাদের বিয়ের আগে আমি তাকে সব বলেছিলাম।সে বলেছিলো তার আমার অতীত নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা নেই।এখন সেই আমার বর্তমান আর ফিউচার।হ্যা ভালোই আছি আমি তন্ময়ের সাথে।তন্ময়ের ভালোবাসায় নতুন করে আবার ভালোবাসতে শিখেছি।এখন তন্ময় আমার সব।তন্ময়ের ভালোবাসায় আদ্রের কথা আমি ভুলেই গেছি।
এর মাঝে শুনেছি আদ্রের নাকি ক্যান্সার ধরা পরেছে।লাস্ট স্টেজে আছে এখন।কথাটা শুনে কেন জানি কষ্ট লেগেছিলো হয়তো প্রথম ভালোবাসা তাই।নোভা আদ্রকে রেখে নাকি চলে গেছে কোনো এক বড়লোকের ছেলের সাথে।আদ্র আমাকে কল দিয়েছিলো একদিন।কল দিয়ে মাফ চেয়েছিলো কেঁদে।আমি সেদিম শুধু এটাই বলেছিলাম,,
“প্রতারকদের শাস্তি সৃষ্টিকর্তা এই পারেই দিয়ে দেন।তোমার শাস্তিও আল্লাহ তোমাকে দিয়েছে।তবুও তোমার প্রতি কোনো রাগ নেই আমার।দোয়া করি আল্লাহ তোমাকে সুস্থতাদান করুক।তবে তোমাকে ধন্যবাদ আমাকে তোমার জীবন থেকে বের করে দেওয়ার জন্য।তুমি আমার সাথে প্রতারণা করেছো বলেই আজ আমি আমার স্বামী তন্ময়কে আমার জীবনে পেয়েছি।ধন্যবাদ তোমার #প্রতারণা করার জন্য।
সমাপ্ত