কে_তুমি?,পর্ব:৮
Tahmina_Akther
অবশেষে, সন্ধ্যার পর আমার বিয়েটা হয়েই গেল।
ঘরোয়াভাবে বিয়ের আয়োজনে শুধুমাত্র আঙ্কেল, আম্মু-আব্বু, কাজী এবং রাক্বী উনারাই উপস্থিত ছিল।
কবুল বলার আগ পর্যন্ত ভেবেছিলাম এই বুঝি সাদ এলো।
এসেই আমাকে বলবে এই কায়নাত তুমি কিন্তু, আজও ছাদে আসোনি। তাই আমিই তোমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।
ছিহহ,আমি এইসব কি ভাবছি? সাদ সে-তো আমায় কখনো বলেনি যে ও আমায় ভালোবাসে।
তাহলে কি আমিই কি তার জন্য বেশী ভেবেছি?
কিন্তু, একজন বন্ধু হিসেবেও কি তার প্রয়োজনবোধ ছিল না আমাকে দেখতে আসার!
এইসব ভাবতেই আমি কান্না করে ফেললাম। কি এমন অপরাধ আমার? যাকে পছন্দ করেছি তাকে আমার পছন্দটুকু ব্যক্ত করতে পারিনি।
আর, যার সঙ্গে বিয়ে হবে সে আমার সঙ্গে বিয়ের আগে একটু দেখা করার প্রয়োজনবোধ করলো না।
আছে আরেকজন যে মানুষই না তবুও তার কি দাম্ভিকতা? সে নাকি আমায় পছন্দ করে?
আল্লাহ তুমি কি এই অদৃশ্য সত্তার একটু সুবুদ্ধি প্রদান করতে পারো না , যাতে আমাকে ছেড়ে দেয়?
অভিমানী সুরে কথাগুলো মনে মনে বলছে কায়নাত।
কিছু সময় অতিবাহিত হবার পর, আঙ্কেল এলেন আমার রুমে। এসেই আমাকে সালাম দিয়ে বললেন,
– কায়নাত,মা আমার তোর মুখটা এমন শুকনো লাগছে কেন? তোর কি আমার উপর রাগ জমেছে? থাকলে বলে ফেল?
কিন্তু,একসময় বুঝবি তোর এই আঙ্কেল কেন এই পদক্ষেপ নিতে তোকে বলেছিল?
তখন আর আমার উপর রেগে থাকতে পারবি না।
তোর প্রত্যেক মোনাজাতে তোর এই আঙ্কেলের জন্য দোয়া করবি, বুঝলি?
– না, আঙ্কেল তোমার উপর রাগ করব কেন? এমনিতে ভাবছিলাম, জীবনে আমরা যা করব বলে ভাবি তা কখনোই হয়ে উঠে না। আল্লাহ যা ভেবে রেখেছেন তাই হয়!
– শোন, মা আল্লাহ যা জানেন তা আমরা জানি। তাহলে আমরা কিভাবে বুঝব কিসে আমাদের কল্যান আর কিসে অকল্যান?
তাই আল্লাহর ভেবে নেয়া সম্পর্কটা মেনে দেখ কখনো তোর খারাপ হবে না।
ওয়াসিফ, তোর স্বামী সে এই রুমের দরজার বাইরে দাড়িয়ে আছে। তুই যদি অনুমতি দিস তবে তাকে ভিতরে আসতে বলি?
আমার হঠাৎ করে কি যেন হলো? অজানা কারণে শরীর কাঁপতে লাগলো। আঙ্কেলের দিকে তাকিয়ে দেখি তিনি আমার দিকে উত্তরের আশায় তাকিয়ে আছেন। তাই মাথা নাড়িয়ে উনাকে এই রুমে আসার জন্য সায় জানালাম।
– যাবার আগে কিছু কথা বলে যাই। জীবন যেকোনো পরিস্থিতির সম্মুখীন হস না কখনো হার মানবি না। কারন, ছোট বড় সকল সমস্যার সমাধান আছে। সমাধান গুলো তোকেই খুজে নিতে হবে।
কিছু সময় পরে তোর মনে হয়তো অনেক প্রশ্ন জাগতে পারে। তাই এই ডায়েরিটা তোকে দিয়ে গেলাম। ডায়েরির মাঝে তোর কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়া আছে।
আসি তাহলে, ভালো থাকিস।
তোর এই বুড়ো বাবা টার জন্য দোয়া করিস।
আল্লাহ হাফেজ।
চলে গেলেন আঙ্কেল কিন্তু, উনার কথাগুলো আমি একটাও বুঝতে পারছি না।
আমার মনে কিসের প্রশ্ন জাগবে? আর যদি আমার প্রশ্নের উত্তরের প্রয়োজনও হয় তবে আঙ্কেলের কাছে থেকেই তো জানতে পারব। এই ডায়েরির কি প্রয়োজন?
ডায়েরিটা উল্টেপাল্টে দেখছিলাম।
এরইমাঝে এক পুরুষালী কন্ঠের সালাম শুনতে পেলাম, ঘাড় ফিরিয়ে দেখি সাদ দাড়িয়ে আছে।
ও এখানে, মানে কি ভাবে সম্ভব? আমি দ্রুত পায়ে হেটে সাদের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললাম,
– আপনি, এখানে ; তাও আবার আমাদের বাড়িতে আমারই রুমের সামনে।
আপনাকে আম্মু বা আব্বু কেউ দেখেনি তো?
ভিতরে এসে বসুন আমার স্বামী বা অন্য কেউ দেখলে কেলেংকারী হয়ে যাবে।
সাদের হাত ধরে টেনে ভিতরে নিয়ে এসে দরজাটা ভালোভাবে লক করে দিলাম।
– এই কে সাদ? আমি হচ্ছি ওয়াসিফ। তোমার সদ্য বিয়ে হওয়া স্বামী।
– মজা করছেন আপনি নিশ্চয়ই। বিশ্বাস করুন মজাটা আমার একটুও ভালো লাগেনি।
আপনি বললেন আপনি সাদ নন আপনি ওয়াসিফ তা আমি বিশ্বাস করব ; কখনো না!
– আচ্ছা, মুসিবতে পড়লাম তো। এই দেখো আমার আইডি কার্ড, দেখো এখানে আমার নাম।
বিশ্বাস না হলে এই দেখো আমার পাসপোর্ট। আর আমি আজ সকালের ফ্লাইটে বাংলাদেশ এসেছি।
আমার তো মনে হচ্ছে তুমি এই বিয়েতে রাজি না, তাই আমার সঙ্গে মজা করছো তাই না?
আমার সামনে তো সাদ’ই দাড়ানো কিন্তু আইডি কার্ড, পাসপোর্ট এইসব তো মিথ্যা নয়! তাহলে, একই রকম দেখতে সাদ বহুরূপী নাকি আমার স্বামী ওয়াসিফ।
আমার সব কিছু জানতে হবে। আর আমাকে এইসব জানতে সাহায্যে করবে আব্দুল আঙ্কেল।
মস্তিষ্কে কথাটি পৌঁছানো মাত্রই আমি রুমের দরজা খুলে দৌড়ে আঙ্কেলের রুমের দিকে যাচ্ছিলাম। পিছন থেকে ওয়াসিফ আমাকে ডাকছে। তার ডাকের সাড়া দেবার চেয়েও এখন আমার আঙ্কেলের সঙ্গে দেখা করা জরুরি।
হঠাৎ, কারো গগনবিদারী চিৎকারে আমার পায়ের গতি থেমে গেল।
কি হয়েছে? কে দিল এই চিৎকার?
চলবে