কে_তুমি,পর্ব:২
Tahmina_Akther
পুরনো এক বটগাছের নিচে পরে আছে কায়নাত, আর তার পাশেই বসে আছে এক কালো ছায়ার পুরুষ অবয়ব।
যে তার নীল চোখের মুগ্ধতার দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে কায়নাতের মুখ পানে।
কালো ছায়ার পুরুষটি ভাবছে, তার নিজস্ব স্বজাতির কত সুন্দরী নারী আছে, যাদের দেখলে বুঝি মনে হবে এই বুঝি আল্লাহ তা’আলার অতি যত্ন নিয়ে তৈরি করা কোনো সৃষ্টি।
কিন্তু, মনুষ্য জাতের এই মেয়েকে দেখার পর তার ভাবনাটুকু বদলে গেছে।
মনে পরলো সেদিনের কথা যেদিন সে কায়নাত নামক মেয়েটিকে দেখেছিল,
সেদিন হঠাৎ করেই বিকেলে প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টির শুরু হয়।
তাদের অর্থাৎ জ্বীন জাতির আবার বৃষ্টির পানি সহ্য হয় না বলে উড়ে একজায়গায় সে আশ্রয় নিতে যাচ্ছিলো,আর সে হলো উড়ন্ত জ্বীন।তাই সে উড়তে পারে।
কিন্তু, সে তার আশ্রয় নেবার জায়গায় অর্থাৎ পাহাড়ের দিকে উড়ে যাচ্ছিলো।কিন্তু, উড়ে যাওয়ার সময় তার নজর পরে বিল্ডিংয়ের এক ছাদে যেখানে এক মেয়ে দাড়িয়ে বৃষ্টিতে ভেজার অপেক্ষায় ছিল।
সে এই মেয়েটির দিকে অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো, কিন্তু যখন তার শরীরে বৃষ্টির ফোঁটা পড়তে শুরু করলো, তখন সে তড়িঘড়ি করে তার আশ্রয়স্থলে চলে গেল।
এরপর সে প্রায় সময়ই ওই বিল্ডিংয়ের ছাদে যেত এবং মেয়েটির পাশে অদৃশ্য হয়ে তার প্রতি নজর রাখত।
এইভাবে, তার একটু দেখাতে স্বাদ মিটলো না, সে প্রতিরাতে মেয়েটির ঘরে থাকা শুরু করলো, কখনও মেয়েটিকে স্বপ্নে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যেত, কখনওবা মিষ্টি খাওয়াতো।
কিন্তু, কীভাবে যেন মেয়েটির পরিবার বুঝে গেল তাদের মেয়ের উপর বদনজর পড়েছে। তাই হজুর এনে মেয়ের উপর রুকাইয়া করলেন।আর তেল পরা এবং পানি পরা দিলেন যাতে এগুলো ব্যবহার করলে সেই জ্বীন মেয়ের উপর বদনজর দিতে না পারে।
তারপর থেকে সে মেয়েটির কাছে যেতে পারছে না।
কিন্ত, আজ মেয়েটির পিরিয়ড শুরু হওয়ায় সে অনায়াসে চলে আসে এবং, পিঠে চরিয়ে নিয়ে আসে এক পুরান শ্মশান ঘাটের বটতলায়।
হঠাৎ, চারদিকে আযানের শুরু হয়। তাই মেয়েটিকে পুনরায় পিঠে চরিয়ে নিয়ে বাসায় পৌঁছে দিয়ে চলে যায় সে ।
এতক্ষন, যা ঘটলো তার কিছুই অনুমান করতে পারেনি, কায়নাত।
সকালের মিষ্টি আলোর ঝলকানিতে ঘুম ভাঙল কায়নাতের মা’র। উঠে দেখলেন উনারা কায়নাতের রুমের ফ্লোরে শুয়ে আছেন।আর কায়নাত শুয়ে আছে খাটে তাই উনার স্বামীকে ডেকে উঠিয়ে দেখালেন তাদের মেয়ে ফিরে এসেছে।
– শাহানা, আমার মেয়ে কোথায় গেল? সারারাত ছিল কোথায়? বাড়িতে এলো কিভাবে? যেখানে ভিতর থেকে সব লক করা।
– কিন্তু, শাহিন আমার ভয় করছে, এবার মেয়েকে নিয়ে আবার দিয়েও গেল।
যদি পরবর্তিতে এরকম চলতে থাকে তাহলে কি হবে ভেবে দেখেছো?
– তুমি কি বলছ আমি বুঝতে পারছি। তাই এখন আমাদের করনীয়, ভালো একজন রাক্বী দেখে কায়নাতের উপর বদনজর সরানো।
-কার উপর বদনজর পড়েছে বাবা?যে দ্রতই রাক্বী খবর দিতে হবে.
শাহিন ও শাহানা দম্পতি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন কায়নাত ঘুম থেকে উঠে তাদের দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে।
মেয়ের চেহারা যেন চেনাই যাচ্ছে না,এত ঘুমানোর পরও মনে হচ্ছে কতরাত নির্ঘুম কাটিয়েছে।
আর, কায়নাত ভাবছে যে, সে স্বপ্নে দেখেছে তার কাছের কারো সাথে কোথাও গিয়েছিল সে। তবে কোথায় মনে করতে পারছে না সে?
চলবে