কাশফুলের_ভালোবাসা,পর্বঃ২৯,৩০
লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
পর্বঃ২৯
” কি হয়েছে?এভাবে হাঁপাচ্ছিস কেন?আগে শান্ত হয়ে বস।” মেহেক রিফাকে বিছানাতে বসাই।রিফা জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে।
” বল এবার ঘটনা কি?এভাবে হাঁপাচ্ছিস কেন?মনে হচ্ছে ম্যারাথনে অংশগ্রহণ করে এসেছিস।”
” বইন তার থেকেও বড় কিছু হয়েছে।”
” তো কি হয়েছে সেটা তো বল।”
” শোন না ইভান কিছুদিন ধরে জোর করছে যে আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে যেন বাসায় বলে দিয়।সে তো বিয়ের প্রস্তাবও পাঠাবে বলছে।কিন্তু আমি না করে দিয়েছি।এর জন্য সে কাল থেকে আমার ফোনও ধরছেনা।”
” বাহ্ তাতো খুব ভালো।তো এতে সমস্যা কোথায়?”
” আরে এখানেই তো সমস্যা।ইভানের এখনো ইন্টার্নি করা বাকি আছে।ও এখানো প্রতিষ্ঠিত নয়।এই মূহূর্তে বাড়িতে যদি আমাদের কথা বলি তাহলে যদি বাবা-মা আমাদের মেনে না নেয় আর আমার বিয়ে অন্যকোথাও দিয়ে দে।”
” রিফু ফিউচার ইস ফিসচার।তোর ফিউচারে কি হবে তা না ভেবে প্রেজেন্টটাতে গুরুত্ব দেয়।বর্তমানটাতে ইনজয় কর।তুই কিন্তু জানিস না কি হবে।তবে নেগেটিভ কিছু না হয়ে পজিটিভ কিছুও তো হতে পারে।তাই ভবিষ্যতে কি হবে তা নিয়ে এতো চিন্তা করিসনা।”
” কিন্তু বাবা-মা যদি আমার কথা না শুনে তো?তুই কিছু কর বইন।”
মেহেক কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলে,” আচ্ছা আমি আপুনির সাথে কথা বলে দেখবো।আপুনি তাহলে দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলবে।যদি দুলাভাইকে রাজি করানো যায় আমার মনে হয়না আঙ্কেল-আন্টি আর মানা করবে।”
” থ্যাংক ইউরে বান্ধবী।”
২ দিন পর,
” আরে বইন একটু পরেই তো তোর হাবীর সাথে দেখা করবি।এবার তো চ্যাটিং বন্ধ কর।”
” ধুর একটু প্রেম করতে দেতো।”
” নে তৈরি হওয়া শেষ।”
” এতো তাড়াতাড়ি!”
” গত ২ ঘন্টা যাবৎ তোকে সাজাচ্ছি আর তুই বলছিস তাড়াতাড়ি।রিয়েলি?এবার আয়নায় দেখ।”
” হুম ঠিক আছে।”
” জানিস তোরে আজ খুব সুন্দর লাগছে।ইভান ভাইতো চোখই সরাতে পারবেনা।”
” ও তাই নাকি?তাহলে চল চল ইভানকে দেখিয়ে আসি।”
” এ কেমন মেয়েরে বাবা।শোন তুই কোন ডেটে যাচ্ছিস না বরং তোকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে।একটু তো লজ্জা পা।”
” লজ্জা পাওয়ার কি আছে?কোথাও কি লেখা আছে যে দেখতে আসলে লজ্জা পেতে হবে?”
” বইন তোর সাথে কথায় আমি পারবোনা।চল এবার তোর হাবী নয়তো তোকে না দেখতে পাওয়ার বিরহে পাগল হয়ে যাবে”।
মেহেক রিফাকে নিচে নিয়ে আসে আর ইভানের সামনাসামনি সোফাটাতে বসিয়ে দেয়।রিফাকে দেখে তো ইভান তার থেকে চোখই সরাচ্ছেনা।
” ভাইয়া এভাবে দেখবেন না,নজর লেগে যাবে তো।আর আপনার পাশে আপনার বাবা মাও কিন্তু আসে।” ইভানের কানে ফিসফিস করে বলে মেহেক।মেহেকের কথা শুনে ইভান তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নেয় আর তা দেখে মেহেক মিটিমিটি হাসে।
রিফা রুমে ইভানের কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে রিফা।কিছুক্ষণের জন্য তাদের আলাদা করে কথা বলতে দেওয়া হয়েছে।
” খুব তো বলেছিলে বাড়িতে নাকি কেউ মানবেনা,তোমার বিয়ে দিয়ে দেবে এটা সেটা।এখন কারা মানলো শুনি?”
” আমার কি দোষ বলো।আমি তো গল্পে এরকমই পড়েছি।”
” হায়….পাগলি।ওটা গল্প ওর এটা বাস্তব।গল্পের মধ্যে কেউ মারা গেলে তাকে কোনভাবে আবারো জীবিত করা যায় কিন্তু বাস্তবে তা হয়না।বুঝতে পেরেছো।”
” হুম।কিন্তু বাড়ির সবাই রাজি হয়েছে শুধু মাত্র মেহুর কারণে।ও যদি ভাবীকে না বোঝাতো তাহলে এসব হতো না।”
” হুম ঠিক বলেছো।মেহেক আসলেই খুব ভালো আর মিষ্টি একটা মেয়ে।”
” হুম ঠিক বলেছো।ভালো,মিষ্টি তবে খুব সহজসরল।সহজেই সবাইকে বিশ্বাস করে নেয়।যার কারণেই তো আজ ও এতোটা কষ্ট পাচ্ছে।”
” হুম মেহেকের সাথে যা হয়েছে তা জেনে খুব খারাপ লেগেছে।তবে আমি আশা করি ওর লাইফে এর থেকেও ভালো কেউ আসবে।যে ওকে খুব ভালোবাসবে।”
এদিকে দরজার বাইরে,
রিফার রুমের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে পাহাড়া দিচ্ছে মেহেক।দরজা ভেতর থেকেই বন্ধ তাও রিফা তাকে এখানে পাহারাদারের মতো বিনা বেতনের চাকরি ধরিয়ে দিয়েছে।
” এখানে কি করছো মেহুপরী?”
হঠাৎ কারো কথা শুনে চমকে যায় মেহেক এবং ছিটকে কিছুটা দূরে সরে যায়।পেছন ফিরে মেহেক দেখে সৌন্দর্য দাঁড়িয়ে আছে,এটা দেখে মেহেকের দেহে প্রাণ ফিরে আসে।
” ও আপনি।আমি তো মনে করেছি কোন জ্বিন ভুত এলো নাকি।”
” তুমি এই কাঠফাঁটা রোদের মধ্যে ভুত দেখবে ভেবেছো?ভুতরা এখন এসির মধ্যে আরাম করে ঘুমাচ্ছে।যখন সূর্য ডুবে চাঁদ উঠবে তখন তারা আসবে।”
” আপনি কি করে জানলেন ভুতরেরা এসি ছেড়ে ঘুমাচ্ছে?হতেও তো পারে তারা ফ্যান ছেড়ে ঘুমাচ্ছে।”
” হতেও পারে।এবার বলো তুমি এখনে কি করছো?”
” রিফা বলেছে দাঁড়িয়ে পাহাড়া দিতে।”
” আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?”
” জ্বি বলুন।”
” তোমার সম্বন্ধ ঠিক না হওয়াতে কি তুমি কষ্ট পেয়েছে?”
” না কষ্ট কেন পাবো?ওনারা ভাঙলে আমি নিজেই ভেঙে দিতাম।ওই মাম্মাস বয়কে বিয়ে করার কোন ইচ্ছেই আমার ছিলনা।”
” ও আচ্ছা।তুমি তাহলে এখানে পাহারাদারি করো আমি বরং আসি।বাই বাই।”
সৌন্দর্য পকেটে হাত গুঁজে চলে যেতে থাকে।তার মুখে হাসি লেগে আছে তবে তা মেহেক দেখেনা।
.
.
নিজের রুমে বসে বই পড়ছে মেহেক।ইভান আর রিফার বিয়ের কথা পাকা হয়ে গিয়েছে।পরশুদিনই তাদের এঙ্গেজমেন্ট।এঙ্গেজমেন্ট রিফার বাড়িতেই হবে তাই বাড়ির সবাই এখন প্রিপারেশন নিচ্ছে।
” কি করছিস মৃদু?”
মেহেক পেছন ফিরে দেখে সৃষ্টি হাতে একটা খাবারের প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
” কিছুনা না আপুনি।তুই কেন কষ্ট করে আনতে গেলেছি খাবার?আমার খিদে লাগলে আমিই খেয়ে নিতাম।”
” আমি জানি তুই কত খাস।এবার চুপচাপ খাবারটা খেয়েনে।”
মেহেকও আর কোন কথা না বলে খাবার খেতে থাকে।খাবার খেতে খেতে মেহেকের মনে হয় সৃষ্টি থাকে কিছু বলবে।
” কিরে আপুনি কিছু বলবি?”
” শোন না তোকে একটা কথা বলার ছিল।কিন্তু যদি তুই মন খারাপ করিস তাই বলছিনা।”
” কিরে কি হয়েছে একটু খোলসা করে বলতো।”
” পরশু দিনতো রিফার এঙ্গেজমেন্ট।আমি চাইছি অনুষ্ঠানে যেন মামী,নানী,নাইরা আর নক্ষত্র ভাইয়া আসুক।”
” হ্যাঁ তো আসুক না।এতো এতো চিন্তার কি আছে?”
” তোর খারাপ লাগছেনা।এতো কিছু হলো….”
” আপু আমি তোকে আগেই বলেছিলাম আমি ওসব মনে রাখিনি।আর যা করেছে সব মামা করেছে এতে ওদের দোষ কোথায়?”
” তাহলে তুই প্লিজ মামীর সাথে কথা বল।আমি মামীকে অনেক বার বলেছি কিন্তু মামী আসতে রাজিই হচ্ছে না।”
” আচ্ছা ঠিক আছে আমি কাল সকালে ওদের কাছে যাবো।তুমি চিন্তা করোনা,আমি ওদের রাজি করেই তবে ছাড়বো।”
.
.
.
মেহেক সকাল সকাল মেহেকের মামীর কাছে চলে আসে।আসলে তারা এখনো ঢাকায় মেহেকের মামীর বাপের বাড়িতেই আছে।সৃষ্টি থেকে ঠিকানা নিয়ে মেহেক সেখানেই চলে আসে।মেহেককে দেখে তার মামী খুশি হয়,সেইসাথে তার নানীও।তারা দুজন মেহেকের খুব আদরযত্ন করে।মেহেক অনেক কষ্ট করে তার মামী আর নানীকে এঙ্গেজমেন্টে আসার জন্য মানিয়ে নেয়।মেহেকের যাওয়া আগে একবার নাইরার সাথে দেখা করে যেতে চাই।সে জানতে পারে নাইরা রুমেই আছে।মেহেকও হাসিখুশিভাবে নাইরার সাথে দেখা করার জন্য রুমে চলে আসে তবে রুমের সামনে এসে থেমে যায়।
” কেন তুমি আমায় বোঝোনা বলোতো?তুমি কি বোঝোনা তোমার এই অবহেলা আমি সহ্য করতে পারছিনা।আমার হৃদয়টা যে জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে।”
মেহেক নাইরার কথা শুনে পুরো বিষয়টা বুঝতে না পারলেও কিছুটা হলে আন্দাজ করতে পারেছে কারণ সেও এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছে।মেহেক খানিকটা পিছিয়ে যায় আর নাইরার নাম।ধরে ডাকে।মেহেকের শব্দ শুনে নাইরা তাড়াতাড়ি চোখের জ্বল মুছে নেয় আর ফোনটাও বালিশের তলে লুকিয়ে ফেলে।
” আরে আপু তুমি এখানে।চলো তো আজ তোমার সাথে গল্প করবো।কতদিন হলো তোমার সাথে ঠিক মতো কথা বলা হয়নি।”
” আচ্ছা।”
” হুম তবে তার আগে তুমি আমার যখন তোমার হাতের স্পেশাল কফিটা নিয়ে এসো তো।ওটা ছাড়া গল্প জমবেনা।”
” আচ্ছা তুই বস আমি আসছি।”
নাইরা চলে যেতেই মেহেক নাইরার ফোনটা খুঁজতে শুরু করে এবং একসময় পেয়েও যায়।তবে নাইরার ফোনে লক দেওয়া যার ফেলে অনেক চেষ্টা করেও
মেহেক লক খুলতে পারেনা।
চলবে….
#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ৩০(অন্তিম পর্ব-০১)
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
দেখতে দেখতে রিফা আর ইভানের এনগেজমেন্টের দিন চলে এসেছে।নাইরা,অথৈ,শান্ত,আদিব প্রায় সবাই চলে এসেছে।কিছুক্ষণের মধ্যে ইভান আর রিফার এনগেজমেন্ট সম্পন্ন হয়ে যায়।রিফা স্টেজে ইভানের সাথে ফটোসুট করছে,মেহেক সৃষ্টিকে কাজে সাহায্য করতে গিয়েছে।সবাই ডান্স করছে, অথৈ চুপচাপ এককোণায় দাঁড়িয়ে বিভিন্ন মোটেন্ট মোবাইলে ভিডিও করছে।
” হেই ব্ল্যাকপিংক।”
কারো কথা শুনে মেহেক পেছনে ফিরে তাকাই,দেখে রুদ্র হাসিহাসি মুখ করে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
” আপনি!”
” হুম।ওয়াট এ প্রেজেন্ট সারপ্রাইজ।আমাদের আবারো দেখা হয়ে গেলো।আমার মতো মনে হচ্ছে ভাগ্যও চায় যেন আমাদের দেখা হয়।”
” আমার তো মনে হয় আপনি আমাকে ফলো করছেন।”
” নো নো নো।আমি মোটেও তোমাকে ফলো করছিনা।”
” তাহলে আপনি এখানে কি করছেন?”
” ইভান মানে মানে যার এনগেজমেন্ট আমরা তাদের নেইভার।”
” আচ্ছা।”
” তো চলে ব্ল্যাংপিংক ড্যান্স করি।”
” নো থ্যাংকস।”
” আরো চলো।দেখো সবাই তো মজা করছে আর তুমি এখানে একা একা দাঁড়িয়ে আছো।কেমন দেখাচ্ছে বলোতো?”
” না আমার ইচ্ছে করছেনা।”
” আরে চলো তো।” রুদ্র অথৈয়ের হাত ধরতে যাবে তার আগেই কেউ অথৈয়ের হাত ধরে তাকে সাইডে সরিয়ে দেয়।অথৈ আর রুদ্র দুজনেই চমকে পাশে তাকাই,তারা দেখে শান্ত দাঁড়িয়ে আছে।শান্তকে দেখে অথৈ আর রুদ্র দুজনেই ঘাবড়ে যায়।
” তোকে আমি আগেও বারণ করেছিলাম বাট তুই শুনলিনা।আমি কোন সিংরেট করতে চাইনা তাই এই লাস্ট বার তোকে ছেড়ে দিলাম।এবার তাড়াতাড়ি আমার চোখের সামনে থেকে যা,নয়তো আজ সুস্থভাবে বাড়ি ফিরে যেতে পারবিনা।” একদম শান্তস্বরে বলে সে।
রুদ্র আর কোন কথা না বলে চুপচাপ সেখান থেকে কেটে পড়ে।শান্ত এবার অথৈয়ের দিয়ে তাকাই,তবে সে কিছু বলে।অথৈয়ের হাত ধরে সবার অগোচরে তাকে বাড়ির ছাদে নিয়ে আসে শান্ত।
এদিকে,
নাইরা বারবার চেষ্টা করছে স্পর্শের সাথে কথা বলতে কিন্তু স্পর্শ বারবার তাকে এড়িয়ে চলছে।সে যতবারই স্পর্শের সামনে যায় স্পর্শ কোন না কোন বাহানা দিয়ে তার থেকে দূরে চলে যায়।স্পর্শের এই ব্যবহার নাইরা মোটেও সহ্য করতে পারছেনা।সে মূলত এখানে এসেছে এই আশায় যে সে একবার স্পর্শের সাথে কথা বলতে পারবে কিন্তু তার আসার কোন লাভই হলোনা।একসময় হাল ছেড়ে দেয় নাইরা,সে আর স্পর্শের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেনা।
ছাদের,
শান্ত শক্ত করে অথৈয়ের হাত ধরে আছে।অথৈ বারবার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু শান্তের শক্তির সামনে সে পেড়ে উঠছেনা।
” আমার হাত ছাড়ুন মিস্টার শান্ত।”
কিন্তু শান্ত কিছু বলেনা।অথৈ হাত ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করতে থাকে কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয়না।
” হাত ছাড়ুন আমার।আপনার কোন অধিকার নেই আমার হাত ধরার।” রেগে বলে অথৈ।এতোক্ষণ অনেক কষ্ট করে শান্ত নিজের রাগটা কন্ট্রোল করেছিল কিন্তু অথৈয়ের কথা শুনে তার রাগ আরো বেড়ে যায়।শান্ত অথৈকে দেয়ালের সাথে ধাক্কা দেয়।অথৈ দেয়ালের সাথে লেগে যায় তবে ধাক্কা দেওয়া ফলে সে হাতে কিছুটা ব্যথাও পাও।কিন্তু ব্যথায় চিৎকার করবে তাই আগেই শান্ত তার গাল চেপে ধরে।
” আমি হাত ধরে পারবোনা,কোন অধিকার নেই আমার কিন্তু অন্যছেলে ঠিকই ধরতে পারবে।ও বুঝতে পেরেছি ওই ছেলে তো আবার তোমার প্রেমিক।”
” কিসব যা তা বলছেন?”
” আমি যা তা বলছি,ও আই সি।এই তুই কি বুঝিস না আমাকে?বুঝতে পারিস না আমি তোকে ভালোবাসি?নাকি বুঝেও অবুঝের মতো থাকিস?কোনটা?যা তোর আর বুঝতে হবেনা।আজকের পর থেকে আমি ভুলে যাবো আমি কাউকে ভালোবেসেছিলাম আর তোর সামনেও আর কখনো আসবোনা।ভালো থাকিস।”
অথৈকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে শান্ত ধুপধাপ পা পেয়ে নিচে চলে যায়।অথৈ এখনো নির্বাক হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে।
অনুষ্ঠান শেষ অনেক আগেই।সবাই খাওয়া-দাওয়া করে চলে গিয়েছে।সৃষ্টির শশুর-শাশুড়ীও অনেক আগেই ঘুমাতে চলে গিয়েছেন।সৃষ্টিকে ঘরের সবকিছু গোছাতে সাহায্য করে মেহেক উপরে চলে আসে।তবে সে নিজের রুমে না গিয়ে যায় স্পর্শের রুমে।
” কে?”
” ভাইয়া আমি,মেহেক।”
স্পর্শ তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দেয়।
” কিরে বোনু,তুই এখনো ঘুমাসনি?”
” তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছিলে?”
” না না।কিছু বলবি নাকি?”
” হুম।”
” আয় ভেতরে আয়।”
মেহেক ভেতরে ঢুকে একটা ওটা না বলে স্পর্শকে সোজা জিজ্ঞেস করে, ” ভাইয়া তুমি আর নাইরা আপু একে অপরকে আগে থেকেই চিনতে তাইনা?”
মেহেক প্রশ্ন শুনে স্পর্শ ঘাবড়ে যায়।সে কিছু বলবে তার আগেই মেহেক আবারো বলে—
” তোমরা রিলেশনেও ছিলে তাইনা?”
” তুই কি করে জানলি?”
” নাইরা আপুর ফোনে তোমার আর আপু ছবি দেখেছি আমি আর আপু ফোনের পাসওয়ার্ড ছিল তোমার নাম দিয়ে।”
এবার স্পর্শ কিছু বলেনা,সে মাথা নিচু করে বিছানায় বসে পড়ে।মেহেকও একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে স্পর্শের সামনের সোফাটাতে বসে পড়ে।
” কাল সকালবেলা নাইরা আপু আবারো সিওল চলে যাবে।এবার হয়তো একেবারের জন্যই চলে যাবে।”
মেহেকের কথা শুনে স্পর্শ মাথা তুলে তার দিকে তাকাই।
” দেখো ভাইয়া যা হয়েছে তা হয়েছে।আর এসব মামা করেছিল,এতে নাইরা আপুর কি দোষ বলো?নাইরা আপু তো এসবের কিছুই জানতোনা।প্লিজ তুমি এসব ঝামেলার জন্য নিজেকে আর নাইরা আপুকে কষ্ট দিওনা।”
” জানিস আমি তোর সাথে আগে কম কথা কেন বলতাম?কেন তোর সাথে রুড বিহেব করতাম?শোন তাহলে,তোর চেহারাটা না অনেকটা নাইরার সাথে মিলে যায়।তোকে দেখলেই মনে হতো নাইরা আমার সামনে আছে,আমার কাছে আছে।আমি সবসময় তোর থেকে দূরত্ব বজায় রাখতাম কারণ তোকে দেখলেই আমার বারবার নাইরার কথা মনে পড়তো।”
মেহেক কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে—
” চিন্তা করে দেখো ভাইয়া।নাইরা আপু কিন্তু তোমায় সত্যিই ভালোবাসে।আসছি আমি।”
মেহেক চলে যায় আর স্পর্শ ভাবতে থাকে সে কি করবে।
পরেরদিন সকালে,
এয়ারপোর্টে সকাল থেকে কারো জন্য অপেক্ষা করছে স্পর্শ।কিন্তু যার জন্য অপেক্ষা করছে তারাই দেখা নেই।অবশেষে অনেক অপেক্ষার পর কাঙ্ক্ষিত মানুষের দেখা পেলে স্পর্শ।
” নাইরা।” জোরে নাম ধরে ডাকে স্পর্শ।স্পর্শের আওয়াজ শুনে নাইরা চমকে যায় আর পেছন ফিরে স্পর্শকে খুঁজতে থাকে।একসময় নাইরাও স্পর্শকে দেখতে পেয়ে যায়।স্পর্শকে দেখে নাইরার চোখে পানি জমে যায়।স্পর্শ নাইরার সামনে এসে দাঁড়ায়।
” অভিমান করেছি বলে,অভিমান না ভাঙিয়ে চলে যাচ্ছো যে।”
” আমি কি কম চেষ্টা করেছি?কিন্তু তুমিই তো আমাকে পাত্তা দাওনি।”
” আমার ভুল হয়েছে গেছে মহারাণী।আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি,তাই তো তোমার সাথে দেখা করার জন্য চলে এসেছি।”
” জানো তোমার অবহেলাতে আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি?”
” আই এম সরি জান।”
নাইরা স্পর্শকে জরিয়ে ধরে।স্পর্শও তার প্রেয়সিকে সযত্নে জরিয়ে ধরে।
” চলো এবার।”
” কোথায়?”
” কোথায় আবার?বাসায়।”
” তোর না কিছুক্ষণ পর ফ্ল্যাট।”
” আমি যাবোনা।এখন আমি এখানেই থাকবো।”
” না নাইরা,তুমি যাবে।তুমি যেটার জন্য এতোদিন দূরে ছিলে যেটা যদি মাঝপথে ছেড়ে দাও তাহলে তো হলোনা।তুমি যাও।
” কিন্তু…”
” কোন কিন্তু না।তুমি যাবে,আমি তোমার ফিরে আসার অপেক্ষা করবো।আমি তোমাকে এখানে নিতে আসিনি,তোমাকে বিদায় দিতে এসেছি।”
” ভালো থেকো।আর আমাকে মনে রেখো।”
নাইরার ফ্ল্যাটে উঠার সময় হয়ে গিয়েছে।নাইরা স্পর্শকে বিদায় দিয়ে চলে যায় আর স্পর্শ নাইরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
মাঝে আরো ২ দিন চলে যায়।সবার জীবন মোটামুটি ভালোই চলছে,শুধু দুজন ছাড়া।তারা হচ্ছে শান্ত আর অথৈ।এই দুইদিন অথৈ শান্তের কোন পাত্তাই পাচ্ছেনা।না শান্তের সাথে তার প্রতিদিনই দেখা হয় কিন্তু শান্ত সবার সাথে নরমাল বিহেব করলেও অথৈয়ের সাথে এমন বিহেব করে যেন সে তাকে চেনেই না।আজ এতোসব কিছু আর সহ্য করতে না পেরে সবার মাঝ থেকে শান্ত টেনে ভার্সিটির পেছনে নিয়ে আসে অথৈ।
” কি হচ্ছেটা কি?আপনি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন কেন?”
” আপনার সমস্যা কি হ্যাঁ?দু’দিন ধরে কোন পাত্তাই দিচ্ছেন না।এটিটিউট দেখাচ্ছেন নাকি?”
” আপনি কে যে আপনাকে পাত্তা দেবো?”
” আমি তোর যম।বেশি ঢং করলে না ওই যে পেছনে একটা গাছ দেখছিস ওটাতে বেঁধে পিঠাবো তোকে।”
” এসব কিভাবে কথা বলছেন আপনি?”
” ও বাবা আপনি।শোন বেশি নাটক করবি না,নাহলে মেরে হাড্ডিগুড্ডি ভেঙে দেবো।অথৈ কুল কুল।শোন তোকে আমার কিছু বলার আছে।”
” কি বলবেন?”
” জোয়াহে।”
” মানে?”
” মানেটা নিজে খুঁজে বের করুন।আর মানে পেলে এর উওরটাও দেবেন।টাটা।”
অথৈ খুশি মনে সেখান থেকে চলে আসে।এদিকে শান্ত অথৈয়ের বলার কথার অর্থ কি হতে পারে সেটাই ভাবছে।
৩ দিন পর,
” আপুনি তুই এসব কি শুরু করেছিস আমাকে বলবি?”
” কি হয়েছে কি?”
” তুই মিস্টার সৌন্দর্যের সাথে আমাকে না জিজ্ঞেস করে কেন বিয়ে ঠিক করেছিস?আমি কি তোর উপর বোঝা হয়ে যাচ্ছি যে আমাকে বিয়ে দিয়ে তাড়াতে চাইছিস?এরকম কিছু হলে বলে দে আমি চলে যাবো।”
সৃষ্টি কোন কথা না বলে মেহেককে থাপ্পড় মেরে দেয়।পরে মেহেক বুঝতে পারে আসলে সে রাগের মাথায় কিসব উল্টাপাল্টা বলে ফেলেছে।মেহেক কিছু বলবে তার আগেই সৃষ্টি বলে,
” শোন তুই কখনো আমার উপর বোঝা হবিনা।আমি জানি তোর এসব ভালো লাগছেনা কিন্তু আমি চাই তোকে একটা সুন্দর ভবিষ্যত দিতে।আল্লাহ না করুম যদি বেবিকে জন্ম দিতে গিয়ে আমার কিছু হয়ে যায় তখন তোর কি হবে?তাই আমি চাইছি তোকে একটা সেভ মানুষের কাছে রেখে যেতে।যাতে আমার কিছু হলেও যাতে তোর কোন কিছু না হয়,তুই ভালো থাকিস।আমি চাইনা তুই একবার ভালোবেসে যে কষ্টটা পেয়েছিস সেটা দ্বিতীয়বার তুই পা।”
সৃষ্টি শেষের কথা শুনে মেহেক বুক কেঁপে উঠে।
” আপুনি তুই…..”
” আমি জানি তুই কেন চট্টগ্রাম ছেড়ে চলে এসেছিস।রিফা আমাকে বলেছে।আমি তোর বড় বোন মৃদু,আমি চাইবো তুই সবসময় যেন ভালো থাকিস।”
সৃষ্টির কথা শুনে মেহেক বুঝতে পারে সৃষ্টি যা করছে তার ভালোর জন্যই করছে।মেহেক সৃষ্টিকে জরিয়ে ধরে নিরবে কান্না করে।
চলবে…..