কাশফুলের_ভালোবাসা,পর্বঃ০৪,০৫
লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
পর্বঃ০৪
সকালে নিজের অবস্থা দেখে ঘাবড়ে যায় মেহেক।কারণ সে নিজের মাথা সৌন্দর্যের কাঁধে পায় অর্থাৎ কাল রাতে ঘুমের ঘোরে সে সৌন্দর্যের কাঁধে মাথা দিয়ে দিয়েছে।মানে কাল সারারাত মেহেক সৌন্দর্যের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিল।
” এইযে ম্যাডাম,বাস থেকে নামুন।আমাদের আরেক জায়গায় যেতে হবে তো।”
বাস কন্ট্রাকটরের কথায় মেহেক নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে।সে তাকিয়ে দেখে সৌন্দর্য তখনো ঘুমাচ্ছে।মেহেক চিন্তা করতে থাকে যে সৌন্দর্যকে ডাকবে কিনা।কিন্তু মেহেকের চিন্তা করতে করতেই সৌন্দর্যের ঘুম ভেঙে যায়।সৌন্দর্য চোখ খুলে প্রথমেই মেহেকের দিকে তাকাই।হঠাৎ সৌন্দর্যের তাকানো দেখে মেহেক ঘাবড়ে যায়।সে সৌন্দর্যের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিজের ব্যাগ ঘুছিয়ে নেয় বাস থেকে নেমে পড়ার জন্য।সৌন্দর্যও নিজের ব্যাগ ঘুছিয়ে নেয়।সৌন্দর্য নিজের সিট থেকে বের হয়ে মেহেককে নিচে নেমে যাওয়ার জন্য জায়গায় করে দেয়।মেহেকও কথা না বাড়িয়ে নিচে নেমে পড়ে।মেহেক নেমে গেলে সৌন্দর্য মুচকি হাসে।আসলে তার ঘুম অনেক আগেই ভেঙে গিয়েছিল।সে আগে থেকেই জানে মেহেক তার কাঁধে মাথা রেখে গত রাতে ঘুমিয়েছিল।কিন্তু সকালে যখন মেহেকের ঘুম ভাঙেছে তখন সে ঘুমানোর ভান করে ছিল কারণ সে মেহেককে লজ্জায় ফেলতে চাইনি।এস কিছু ভাবতে ভাবতে সৌন্দর্য বাস থেকে নেমে পড়ে।আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়,হঠাৎ কিছু দেখে তার মুখে হাসি ফোঁটে।কারণ কিছুটা দূরেই দাঁড়িয়ে আছে মেহেক।সৌন্দর্য ভেবেছিল মেহেক হয়তো চলে গিয়েছে কিন্তু মেহেক যে তার জন্য অপেক্ষা করবে সেটা সে ভাবেনি।সৌন্দর্য এসে মেহেকের কাছে দাঁড়ায়।
” কি হলো মিস মেহেক?কারো জন্য অপেক্ষা করছো বুঝি?”
মেহেক কি বলবে বুঝতে পারছেনা।সে আসলে সৌন্দর্যের জন্যই অপেক্ষা করছিল কিন্তু এখন সেটা সৌন্দর্যকে বলতে তার হেজিটেশন ফিল হচ্ছে।
” ওই আসলে আমি গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলাম।” জোরপূর্বক হেসে উওর দেয় মেহেক।
সৌন্দর্য বুঝে যায় মেহেক মিথ্যা কথা বলছে।কারণ এই জায়গায় কোন গাড়ি সে পাবেনা।
” ও আচ্ছা।কিন্তু এখানে তো বাস ছাড়া অন্যকোন গাড়ি আসা যাওয়া করেনা।”
মেহেক বুঝে যায় সৌন্দর্য তার মিথ্যা ধরে ফেলেছে।
তাও সে হার মানলোনা।
” আসলে আমি নতুন তো তাই আরকি।”
” আচ্ছা ঠিক আছে চলো আমি তোমাকে গাড়িতে তুলে দিচ্ছি।”
মেহেক সৌন্দর্যের দিকে একটা কৃতজ্ঞতার হাসি দেয়।কিছুদূর গিয়ে সৌন্দর্য মেহেককে ট্যাক্সতে তুলে দেয়।
” ভালো থাকবেন মিস্টার সৌন্দর্য।আর এতো সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।”
” মাই প্লেজার।সাবধানে যেও।”
মেহেক মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।সৌন্দর্য ট্যাক্সি ড্রাইভারকে ট্যাক্সি স্টার্ট দিতে বলে।ট্যাক্সি অর্ধেক যাওয়ার পর মেহেকের মনে পড়ে আরে সে তো সৌন্দর্যের নম্বরটাই নিতে ভুলে গিয়েছে।সৌন্দর্যের সাথে পরবর্তীতে যোগাযোগের কোন মাধ্যম জানা না থাকায় মেহেকের মন খারাপ হয়ে যায়।হঠাৎ মেহেকের মনে পড়ে মুগ্ধের বিয়ের কথা।আশ্চর্য হলেও কাল রাতে একবারেও মেহেকের মুগ্ধের কথতা মনে পড়েনি।কিন্তু এখন মুগ্ধের কথা মনে পড়লে মেহেক কান্না পাচ্ছেনা বরং হাসি পাচ্ছে,বিদ্রুপের হাসি।মেহেক মুচকি হেসে চিন্তা করতে থাকে কতটা বোকা ছিল সে যে একটা মরিচিকার পেছনে তার মূল্যবান সময় নষ্ট করেছে।মেহেক ভেবে নেয় সে আর এসব মিথ্যা সম্পর্কে কোনদিনও জড়াবেনা আর মন দিয়ে পড়াশোনা করে সবাইকে দেখিয়ে দেবে সেও কোন অংশকে কম না।
এসব কিছু ভাবতে ভাবতে মেহেক নিজের বোনের বাড়ির সামনে এসে পৌঁছায়।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাড়ে সাতটা বাজে তখন।মেহেক ভাড়া মিটিয়ে ট্যাক্সি থেকে নেমে পড়ে।মেহেকের বোন তার শশুর বাড়ির লোকেদের নিয়ে একটা বিল্ডিং এ থাকে।বিল্ডিং এর দোতালা পুরোটা তাদের নিজেদের।
মেহেক সিঁড়ি দিয়ে দোতালায় উঠে আসে।তার মনের মধ্যে অনেক ভয় কাজ করছে না জানি তার বোনের শশুড়বাড়ির লোক তার আসাতে কি রকম ব্যবহার করে।মেহেক কাঁপা কাঁপা হাতে বেল দেয়।কিছুক্ষণ পর একটা ১৮/১৯ বছরের মেয়ে এসে দরজা খুলে দেয়।
” কাকে চাই?”
” আপুনি….. মানে সৃষ্টি আপু আছে?”
” হ্যাঁ ভাবী আছে কিন্তু আপনি কে?আর ভাবীকে আপনার কি দরকার?”
মেহেক কিছু বলবে তার আগেই মেহেকের বোন বেরিয়ে আসে।বোনকে দেখে মুচকি হাসে মেহেক।আর ছোট বোনকে এতোদিন পর দেখে সৃষ্টি মেহেককে জরিয়ে ধরে।
” কেমন আছিস মৃদু?আর তুই হঠাৎ আসলি?আসার আগে একবার বলবিনা।আমি তোর দুলাভাইকে পাঠাতাম।”
” তার কোন প্রয়োজন ছিল না।”
” ভাবী তুমি একে চেনো?” দরজা খুলে দেওয়া মেয়েটা বলে।
” অনু এ হচ্ছে আমার ছোট বোন মেহেক।আর মৃদু এ হচ্ছে আমার একমাত্র ননদ রিফা।”
” আরে ভাবী আগে বলবেনা।আসলে তোমাকে আমি আগে দেখেনি তো তাই চিনতে পারিনি।সরি হ্যাঁ।”
” সমস্যা নেই আপু।”
” এই তুই বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি?আয় আয় ভিতরে আয়।”
” হ্যাঁ এসো।ভাবী তুমি মৃদুকে নিয়ে এসো আমি মাকে ডেকে আনছি।”
রিফা ভেতরে চলে যায়।সৃষ্টি মেহেকের সাথে কথা বলতে বলতে ভেতরে আসে।মেহেক ভেবেছিল তাকে দেখে তার বোনের শশুড়বাড়ির লোকেরা রাগ করবে বা তার বোনের সাথে সমস্যা সৃষ্টি করবে কিন্তু এখন মেহেকের এসব কিছু মনেই হচ্ছেনা।মেহেকের বোনের শশুড় বাড়িটা ভিতরে ডুপ্লেক্স সিস্টেম মানে ঘরের ভিতরে সিঁড়ি আছে।সবার সাথে কুশলবিনিময় শেষ মেহেককে রিফা তার থাকার রুমটা দেখিয়ে দেয়।রুমে এসে মেহেক ধপ করে শুয়ে পড়ে।এতোক্ষণ জার্নি করে তার অনেক টার্য়াড লাগছে তার।সে কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে ওয়াশরুম চলে যায় ফ্রেশ হতে।ফ্রেশ হয়ে এসে মেহেক কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়।১২টার দিকে মেহেকের ঘুম ভাঙে।ঘুম থেকে উঠে মুখ হাত ধুয়ে নিচে নামার জন্য রুম থেকে বের হয় সে।মেহেক হাঁটতে হাঁটতে তার বোনের রুম খুঁজছে।তার সামনে যে রুম আসছে সে সেই রুমে উঁকি মেরে দেখছে।হঠাৎ একটা রুমের দরজা খোলা দেখতে পাই মেহেক।দরজাটা হালকা করে খোলা ছিল,মেহেক দরজার হাত দিতে নিঃশব্দে দরজাটা খুলে যায়।মেহেক ধীরপায়ে ভেতরে প্রবেশ করে।ভিতরে প্রবেশ করতে মেহেকের চোখ সর্বপ্রথম পড়ে দেয়ালে টাঙানো বড় ছবিটার উপর।ফরমাল ড্রেসে, ঠোঁটে হাঁসি ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা ছেলে।বেশ লম্বাটে ছেলে।ফর্সা মুখে মুখে হাল্কা চাপ দাড়ি বিরাজমান।চোখে কালো ফ্রেশের চশমা,যার তার কারণে চোখের চাহনি বোঝা যাচ্ছেনা।মেহেক ছবিটা দেখতে এতোটাই মত্ত ছিল যে কেউ যে তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে সেটা মেহেক বুঝতেই পারেনি।
” এইযে কে আপনি?আর আমার রুমে কি করছেন?”
গম্ভীর কারো কন্ঠস্বর কানে আসলে মেহেকের ধ্যান ভাঙে।সে পেছন ফিরে তাকাই তবে যা দেখে তাতে মেহেক চিৎকার দিতে গিয়েও চুপ হয়ে গেলো।মেহেক মুখে হাত দিয়ে বড় বড় চোখ করে তার সামনে থাকা বলিষ্ঠ দেহ বিশিষ্ট মানুষটা দিকে তাকিয়ে রয়।ছেলেটা শরীরে শুধু একটা টাওয়াল ছাড়া আর কিছু নেই,পুরো গা উন্মুক্ত তার।মেহেক লজ্জায় চোখমুখ খিঁচে বেরিয়ে আসে রুম থেকে।এদিকে ছেলেটা এখনো অবাক হয়ে মেহেক যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানটায় তাকিয়ে আছে।
খাবার সময় যখন মেহেক টেবিলে বসতে যাবে তখন সে খেয়াল করে সেই টাওয়াল পড়া ছেলেটা তার বরাবর সামনের চেয়ারটাতে বসে আছে।ছেলেটাকে দেখে মেহেকের আবারো তার উন্মুক্ত বুকের কথা মনে পড়ে যায়।আর এটা মনে পড়তেই মেহেককে আবারো লজ্জায় ঘিড়ে ধরে।
” কিরে মৃদু দাঁড়িয়ে আছিস কেন?বস।”
” হুম বসছি আপুনি।”
মেহেক শত লজ্জা নিয়ে ছেলেটার সামনের চেয়ারে বসে পড়ে।অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যেই মেহেক ছেলেটার পরিচয় পেয়ে যায়।ছেলেটার হচ্ছে তার বোনের ছোট দেবর।নাম আদরিক স্পর্শ।
খাবার পর্ব শেষ হলে সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।মেহেক আবারো নিজের রুমে ফিরে আসে।কিছুক্ষণ আগেই ঘুম থেকে উঠার পর তার এখন ঘুম আসছেনা,তাই মেহেক বসে বসে ফোনে মুভি দেখছে।
” কি করছিস মৃদু?”
কারো কথায় মাথা তুলে তাকাই মেহেক।দেখে তার বোন এসেছে।
” আরে আপুনি আয়।কিছুনা ওই মুভি দেখছিলাম।বস তুই।”
সৃষ্টি বিছানায় বসলো।তার সে মেহেকের হাতে হাত রেখে বলে,
” একটা সত্যি কথা বলবি মৃদু?”
” কি আপু?”
” তুই সত্যি করে বলতো কি হয়েছে?তুই হঠাৎ করে ঢাকা শহরে এলি কেন?”
” কিছু হয়নি আপুনি।আর তুই চিন্তা করিস না আমি বেশিদিন তোর শশুড় বাড়ি থাকবোনা।”
” এক থাপ্পড় দেবো,আমি কি তোকে ওইভাবে বলেছি নাকি?আচ্ছা যা তুই না বললে আমি তোকে জোর করবোনা তবে তোর কোন সমস্যা হলে আমাকে বলিস।”
” হুম।”
সৃষ্টি চলে যায় আর মেহেক ভাবতে থাকে তার ফেলে আসা তিক্ত অতিতের কথা।
চলবে…….
#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ০৫
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
ড্রয়ংরুমে রিফার সাথে বসে আছে মেহেক।সে আসতে চাইনি তবে রিফা তাকে জোর করে নিচে নিয়ে এসেছে।
” শোনো আমি আবার কাউকে আপনি করে বলতে পারিনা সো আমি তোমাকে তুমি করেই বলছি।”
” ঠিক আছে আপু।”
” ধুর রাখোতো আপু।নাম ধরে ডাকো,আমার নাম অনুজা রিফা।”
” আচ্ছা।”
” হুম।তো তোমাে পুরো নাম কি?আমি তো ভালো করে তোমার নাম জানিনা।”
” মৃদুলা মেহেক।”
” বাহ্ খুব সুন্দর নাম।আমি তোমাকে মেহু বলে ডাকবো,ওকে?”
” হুম।”
” খালি হুম হুম করো কেন?আমার সাথে এইসব হু হা চলবেনা।আমি খুব পকর পকর করি তাই তোমাকেও করতে হবে।”
” আচ্ছা।”
” ধুর।আচ্ছা এবার বলো তো তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?”
” এবার অর্নাস ফার্স্ট ইয়ারে ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছি।”
” কি বলো?আমিও তো অর্নাস ফার্স্ট ইয়ারেে ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছি।ওয়াও…..তার মানে আমরা ক্লাসমেট।তাহলে তো আমি তুমি না তুই করে বলবো।আর শোন তুইও তুই করে বলবি।”
” আচ্ছা।”
” ধুর মরা,খালি আচ্ছা আর হুম করে।অন্যকিছুও বল।”
” কি বলবো?”
” আচ্ছা এটা বল তোর বয়ফ্রেন্ড আছে?”
রিফার কথা শুনে মেহেকের মন খারাপ হয়ে যায়।
” কিরে কোথায় হারিয়ে গেলি?”
” উহু….কিছু না।”
” নেই নাকি?”
” না নেই।আপনার….না মানে তোর আছে?”
” হুম আছে।” লজ্জা পাওয়ার ভান করে বলে রিফা।
” তা কে সে?”
” তার নাম হচ্ছে ইভান।”
” বাড়িতে জানে?”
” না আমরা যে প্রেম করি তা বাড়িতে জানেনা তবে ইভানকে বাড়ির সবাই চেনে।”
” তা কিভাবে?”
” আরে ইভান আব্বু বন্ধুর ছেলে।”
” তো তোর ইভান কি করে এখন।”
” সে পড়াশোনা করছে এখনো।মেডিকেল স্টুডেন্ট, ফোর্থ ইয়ারে আছে এখন।আর হ্যাঁ ইভান ভাইয়ার(স্পর্শ) বন্ধুও।”
” ও আচ্ছা।”
মেহেক আর রিফা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে।কথা বলতে বলতে বিকেল হয়ে গেলো কিন্তু রিফার কথা শেষ হলোনা।হঠাৎ বেল বেজে উঠে।রিফা মেহেককে বসতে বলে দরজা খুলে দেয়।দরজার খোলার সাথে সাথে মেহেক হালকা একটা চিৎকারে শব্দ শুনতে পাই।
” দাভাই…….”
ততক্ষণে মেহেক বোন সৃষ্টি আর তার বোনের শাশুড়ীও নিচে চলে এসেছে।
” কিগো ননদীনি হঠাৎ এভাবে চিৎকার করলে কেন?”
” ভাবী দাভাই এসেছে।” দরজার কাছে দাঁড়িয়ে উওর দেয় রিফা।
” ও সৌ এসেছে।ওকে ভিতরে আসতে দাও অনু।বেচারা অনেক দূর থেকে এসেছে।”
রিফার তার দাভাইয়ের হাত ধরে তাকে টেনে ভিতরে নিয়ে আসে।
” দাভাই দেখো আমাদের বাড়িতে কে এসেছে।”
মেহেক এতোক্ষণ ফোনে কিছু করছিল,রিফার কন্ঠ শুনে সে রিফার দাভাইয়ের দিকে তাকাই।কিন্তু রিফার দাভাইকে দেখে মেহেক ছোটখাটো একটা ঝটকা খায় কারণ রিফার দাভাই মানে তার বোনের আরেক দেবর আর কেউ নয় বরং সৌন্দর্য।সৌন্দর্যও মেহেকে দেখে আশ্চর্য হয়।
” আপনি!”
” তুমি!”
একসাথে বলে উঠে মেহেক আর সৌন্দর্য।তারা দুজন যে দুজনকে আশা করি তা তাদের রিএকশেন দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
” দাভাই এ হচ্ছে মেহু ভাবীর ছোট বোন আর আমার নতুন বান্ধবী।”
” হ্যালো বেয়াইন সাহেবা।”
” হ্যালো।”
” অনুু সৌ কে এখন ছেড়ে দাও ওরা পরেও পরিচিত হতে পারবে।সৌ তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নাও।অনেকটা পথ জার্নি করে এসেছো।” বলে সৃষ্টি।
” জ্বি ভাবী।”
জ্বি বলে সৌন্দর্য চলে তো যাচ্ছে তবে তার চোখ এখনো মেহেকের উপর বিদ্যমান আর মেহেকও অবাক চোখে সৌন্দর্যে দিকে তাকিয়ে আছে।তার মনে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ” যদি সৌন্দর্য এই বাড়ির ছেলে হয় তাহলে সৌন্দর্যের বাড়িতে আসতে এতোক্ষণ কেন লাগলো?সে আর সৌন্দর্য তো একসাথে ঢাকায় এসেছিল।তাহলে সৌন্দর্য দেরি করো কেন এলো?”
” কিরে মেহু কি ভাবছিস?”
” আচ্ছা উনি কে হয় তোর?”
” আরে এটা আমার দাভাই মানে আমার মেঝো ভাই।”
” তোরা কয় ভাই বোনরে?”
” কেন তুই জানিস না?”
” না,বলনা।”
” আমরা তো ৩ ভাই আর ১ বোন।বড় ভাইকে তো তুই চিনিস তোর জিজু লাগে।আর এখন যাকে দেখলি সে হলো আমার মেঝো ভাই আর দুপুরে যাকে দেখেছিস সে হলো ছোটভাইয়া।”
” ও আচ্ছা।”
” আচ্ছা মেহু চল ছাদে চল।”
” ছাদে কেন?”
” ঘরে আর ভালো লাগছেনা,চল ছাদ থেকে ঘুরে আসি।তুই তো আমাদের ছাদ দেখিসনি।চল চল।”
রিফা মেহেকের হাত ধরে তাকে টেনে ছাদে নিয়ে আসে।ছাদটা দেখে মেহেকের মন ভালো হয়ে যায়।ছাদটা বিভিন্ন ফুলের গাছ দিয়ে খুব সুন্দর করো সাজানো।প্রত্যেকটা গাছে ৩/৪ টা করে ফুল ফুটে আছে।আর ছাদের দুপাশে আছে দুটো দোলনা।
” মেহু তুই একটু দাঁড়া আমি কাপড় গুলো বাসায় রেখে আসছি।”
” আচ্ছা ঠিক আছে।”
রিফা কাপড় গুলো নিয়ে নিচে নেমে যায়।মেহেক হেঁটে হেঁটে ফুলে গাছগুলো দেখছে।হঠাৎ মেহেকের চোখ যায় ছাদের কর্নারে।কেউ দাড়িয়ে আছে সেখানে আর কারো সাথে ফোনে কথা বলছে।মেহেক উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে আসলে লোকটা কে তবে মেহেককে বেশি কষ্ট করতে হয়নি তার আগেই লোকটা মেহেকের দিকে ফিরে তাকাই।লোকটাকে দেখে মেহেকের হার্ট এক সেকেন্ডের জন্য ধক করে উঠে।লোকটা আর কেউ নয় বরং স্পর্শ।স্পর্শ মেহেকের দিকে একপলক তাকিয়ে আবারো কথা বলতে বলতে নিচে চলে যায়।স্পর্শের গম্ভীর ভাব দেখে মেহেকের খুব আজব লাগছে।
” কি এটিটিউটরে বাবা।ওনার থেকে তো ওনার বড় ভাই সৌন্দর্য ডের ভালো আছে।এসেছি পর্যন্ত মনে হয়না দুদন্ড কথা বলতে শুনেছি।” নিজে নিজে বলে মেহেক।
মেহেক দোলনায় বসে দোল খেতে থাকে।কিছুক্ষণ পর হঠাৎ একজোড়া হাত এসে মেহেকের চোখ চেপে ধরে।হঠাৎ এরকম কিছু হওয়াতে মেহেক ঘাবড়ে যায়।
” কে?”
মেহেকের কন্ঠ শুনে লোকটা মেহেকের চোখ থেকে হাত সরিয়ে ফেলে।হাত সরতেই মেহেক দোলনা থেকে লাফ দিয়ে নেমে পড়ে।মেহেক পেছনে ফিরে দেখে সৌন্দর্য কাচুমাচু মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।
” সরি সরি মেহেক আমি ভেবেছিলাম বোনু,তাই আরকি।”
” সমস্যা নেই মিস্টার সৌন্দর্য।”
” চলো বসে কথা বলি।”
মেহেক আর সৌন্দর্য দোলানায় বসে।মেহেক যথাসম্ভব সৌন্দর্য থেকে দূরত্ব বজায় রেখে বসেছে।
” তাহলে ভাবীই তোমার সেই বোন।”
” হুম।”
” ভাবীর একটা বোন আছে শুনেছিলাম কিন্তু কখনো দেখিনি।তাই তোমাকে চিনতে পারিনি।তুমি কি আমাকে চিনেছিলে?”
” না।আমিও আগে কোনদিন আপনাদের দেখিনি।আমি দুলাভাইকে ছাড়া আপনাদের পরিবারের আর কাউকে তেমন একটা চিনিনা।”
” আচ্ছা।তা তুমি কি সবসময় এরকম চুপচাপ থাকো নাকি আমার সাথেই চুপ করে থাকো।”
” না তেমন কিছুনা।”
” হুম।আচ্ছা তুমি হঠাৎ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা এলে কেন?এর আগে তো কখনো আসোনি।”
” আছে কিছু কারণ।সময় হলে একদিন জানতে পারবেন।” মুচকি হেসে বলে মেহেক।
” তুমি বড়ই রহস্যজনক একটা মানুষ।”
সৌন্দর্যের কথা শুনে মেহেক আবারো মুচকি হাসে।সে ভাবতে থাকে,
” আসলেই কি আমি রহস্যময় মানুষ?তাহলে তো মুগ্ধ আর রিয়া আমাকে নয় আমি ওদের ঠাকাতাম।কিন্তু এরকম তো কিছুই হয়নি।উল্টো ওরা আমাকে ঠকিয়েছে আমার বিশ্বাস নিয়ে খেলা করেছে।”
” কি হলো মেহেক?কোথায় হারিয়ে গেলে?”
” কিছুনা।আচ্ছা আপনি কি কখনো কাউকে ভালোবেসেন?”
” হুম বেসেছি তো আর এখনো বাসি।”
” ও আচ্ছা তার মানে আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে।”
মেহেকের কথা শুনে চুলে হাত দিয়ে মুচকি হাসে সৌন্দর্য।সৌন্দর্যের হাবভাবে দেখে মেহেক তার উওর পেয়ে যায়।সে একটা দীর্ঘশ্বাস নেয়।
” জানেন মিস্টার সৌন্দর্য ভালোবাসা হচ্ছে কাশফুলের মতো।”
” তা কিভাবে?”
” কাশফুলের যেমন শুধু শরৎকালে দেখা মেলে তেমনি সত্যি কারের ভালোবাসাও দেখা মেলে ভাগ্য থাকলে।কাশফুল যেমন শুভ্র,ভালোবাসাটাও সেইরকম শুভ্র,স্বচ্ছ।”
” তোমার এই জ্ঞানী জ্ঞানী কথাগুলো বাবা আমার এই ছোট মাথায় ঢুকছেনা।তবে তোমার কথাগুলো শুনে ভালোলাগলো।”
মেহেক প্রতিউত্তরে কিছু বলেনা।সে আকাশের দিকে তাকিয়ে আবারো তার জীবন নাম বইয়ের আগে শেষ করে আসা পৃষ্টা গুলো মনে করতে থাকে।
চলবে……