মায়াবতীর_প্রণয়ে,পর্বঃ৪

মায়াবতীর_প্রণয়ে,পর্বঃ৪
মম_সাহা

মিষ্টি রাগ করে একাই নিজের বাসায় চলে গেছে। বাসায় যেতে যেতে রাত বারোটা বেজেছে।অন্যসময় হলে মিষ্টি হয়তো এমনটা করতো না কিন্তু আজ বেশ রাগ হয়েছে কারণ,

ফ্লাশব্যাকঃ

-“আদ্র আপনি?”

মিষ্টিকে দেখে আদ্রও দ্বিগুণ অবাক হলো।সেও মিষ্টির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল
-“আরে লীলাবতী আপনি! আপনি এখানে!”

মিষ্টি এবার হেসে দেয়। যাক তবে সে যা ভাবছে তা না।মিষ্টি একটা শান্তির শ্বাস ফেলে উত্তর দেয়
-“হ্যাঁ আমাকে তো থাকতেই হবে। বিয়ের কনে আমার খালাতো বোন।”

-“ওহ্। আর বর আমার বন্ধু। ওর বিয়ের জন্যই এখানে আসা। আর এখানে এসে প্রচন্ড ব্যস্ত হয়ে পরি যে আপনার খবর টুকু নিতে পারি নি।”

-“হ্যাঁ বুজেছিলাম আপনি বোধহয় বেশি ব্যস্ত তাই খবর নেন নি।”

আরও কতক্ষণ নিজেদের মধ্যে কথা বলে মিষ্টি আর আদ্র।তাদের কথার মাঝেই হাজির হয় মিঠাই।সে এসেই চারপাশ না দেখে মিষ্টিকে বলে
-“আপুই আম্মু ডাকছে তাড়াতাড়ি এসো।তোমাকে একজন মহিলা দেখতে চাচ্ছে।”

মিষ্টি মিঠাইয়ের কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকায়। আদ্রও একটু অবাক হয়।কিন্তু এতটুকু বুঝতে পেরেছে যে এটা মিষ্টির বোন।কিন্তু মেয়েটার কথার অর্থ কারোই বোধগম্য হলো না।মিষ্টি জিজ্ঞেস করল
-“কোন মহিলা আমাকে দেখতে চাচ্ছে?আর কেনই বা দেখতে চাচ্ছে?”

মিঠাই এবার তৎক্ষনাৎ উত্তর দিলো
-“আরে সোহা আপুর ফুফু তোমাকে দেখতে চাচ্ছে।সোহা আপুর ফুফাতো ভাই নাকি তোমাকে দেখেছে আর ভালো লেগেছে তাই ওনার মাকে নিয়ে আম্মুর কাছে এসেছে তোমাকে দেখতে।ঐ যে হল রুমের দিকে আছে তারা।চলো আম্মু ডাকছে তোমায়।”

মিঠাইয়ের কথায় বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ল মিষ্টি সাথে তার মায়ের উপর রাগও হলো।কে না কে তাকে দেখতে চেয়েছে আর মাও রাজি হয়ে গেলো। রাগ আর বিব্রতকর দৃষ্টি নিয়ে তাকালো আদ্রের দিকে।

আদ্রের কাছে কথাটা বিষের মতন লাগল।এক ঝাঁক রাগ মাথা চারা দিয়ে উঠল।কিন্তু সে চাচ্ছে না মিষ্টির সামনে রাগ দেখাতে।তাই দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে আছে।

মিষ্টি মিঠাইয়ের দিকে তাকিয়ে বেশ রাগী স্বরে বলল
-“তুই মাকে গিয়ে বল আমি আসতে পারবো না।এটা নিয়ে যদি অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে তবে খারাপ হবে।”

মিঠাই এবার দমে গেলো।কিন্তু আপুকে না নিয়ে গেলে আম্মু তাকে বকবে।তাই মিঠাই মিষ্টির হাত টেনে ধরে বলল
-“চলো না আপু,আম্মু ওদেরকে একটা কথা বলেছে সেটা না রাখতে পারলে তো আম্মুর অসম্মান হবে তাই না? চলো আপু।”

-“আম্মু একবারও আমাকে জিজ্ঞেস করেছে কিছু? আমার এজন্যই এসব অনুষ্ঠানে আসতে ভালো লাগে না।”

একঝাঁক বিরক্ত নিয়ে মিষ্টি আদ্রের দিকে তাকালো।সে ভেবেছে আদ্রকে বলে তারপর গিয়ে দেখা করে আবার আসবে।কিন্তু সে কিছু বলার আগেই আদ্র তীক্ষ্ণ স্বরে বলল
-“হ্যাঁ যান যান দেখেন নিজের বিয়েটাও ঠিক করতে পারেন কিনা।এভাবে সেজেগুজে আসলে স্বাভাবিক সবার নজরেই আসবে। ”

মিষ্টি আদ্রের খোঁচা মারা কথায় বেশ অবাক হয়ে বলল
-“সিরিয়াসলি আদ্র আপনি এমনটা ভাবছেন আমার ব্যাপারে?আমি সাজগোজ করে এসেছি এসবের জন্য? আর আমার সাজটা ঠিক কি দেখলেন?”

মিষ্টির সামান্য কথায় আদ্র আরও বেশি রেগে গেলো মনে হয়। বেশ কঠিন স্বরে বলল
-“যান তো আপনি।গিয়ে আপনার রূপ পাত্রের মাকে দেখিয়ে আসেন।গো মিষ্টি।”

আদ্র কখনো মিষ্টির নাম ধরে ডাকে নি।আজ হঠাৎ নিজের নামটা আদ্রের মুখে শুনে মিষ্টির খারাপ লাগা কাজ করলো।কারণ এই মুখে লীলাবতী নাম শুনে অভ্যস্ত সে।আজ আদ্রের আচারণে বেশ কষ্ট পেয়েছে মিষ্টি।আর একটা কথা না বলে সে জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো।

মিঠাই এতক্ষণ চুপ করে সবটা দেখলো।মিষ্টির চলে যাওয়ার পরই সে আদ্রের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
-“এই যে এই মিষ্টার আপনি আমার আপুর সাথে এমন আচারণ করলেন কেনো?আপনি জানেন আব্বু আম্মু দাদী কেউ আপুকে কখনো বকে না আর আপনি কিনা বকলেন।দাঁড়ান আমার আব্বুকে বলবো।আর আপনার চোখ না চুলা?আমার আপুকে আপনি সাজুগুজু কখন দেখলেন?সামান্য একটা শাড়ি পড়েছে তা ছাড়া তো কোনো সাজই নেই।”

মিঠাইয়ের কথায় হুঁশ ফিরলো আদ্রের।সে মিঠাইয়ের সামনেই কেমন ব্যবহার করে ফেলল মিষ্টির সাথে।

অন্যদিকে মিষ্টি রাগ করে তার মায়ের পাশে এসে দাঁড়ায় গম্ভীর মুখ নিয়ে। রাবেয়া খাতুন নিজের মেয়েকে দেখে সামনের ছেলে ও ছেলের মায়ের উদ্দেশ্যে বলল
-“এই যে আমার মেয়ে মিষ্টি।”

ছেলেটার নাম নিবিড়।সে পেশায় ডাক্তার। সে মিষ্টির দিকে ড্যাবড্যাব তাকিয়ে আছে।নিবিড়ের মা বেশ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বলল
-“তোমার নাম কি?”

মিষ্টির সামনের মহিলার কঠিন স্বর শুনে রাগটা আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠল।সেও বেশ শক্ত স্বরে উত্তর দিলো
-“আমার নাম মিষ্টি।”

মিষ্টির বলার ভঙ্গি পছন্দ হয় না মহিলার।তবুও ছেলের পছন্দ হয়েছে আর মেয়েটা দেখতেও সুন্দর তাই নানা রকমের প্রশ্ন করলো।মিষ্টি দাঁত কিরমির করে উত্তর দেয় এবং চোখ রাঙিয়ে তার মায়ের দিকে তাকায়।

দূর থেকে মিঠাই আর আদ্র দাঁড়িয়ে সবটা দেখছে।এতক্ষণে মিঠাইয়ের আদ্রের সঙ্গে বেশ ভাব হয়ে গেলো।সে জেনেছে আদ্র মিষ্টির বন্ধু। তাই আদ্রের সাথে ফ্রী হয়ে কথা বলছে।মিষ্টির উত্তর শুনে মিঠাই আদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল
-“আজ নিশ্চিত কিছু একটা হবে।আপু সহজে রাগে না আর যদি একবার রেগে যায় তবে কিছু না কিছু ঘটাবেই।”

আদ্র মিঠাইয়ের কথা শুনে অবাক হয়ে বলল
-“মিষ্টির এত রাগ!!”

মিঠাই মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো।দুজন আবার ওখানের কথায় নজর দিলো।

ছেলের মায়ের মিষ্টির কথার হাব ভঙ্গিমা ভালো লাগছে না।কি বলে মেয়েটাকে দমানো যায় ভাবতে ভাবতেই মাহিলা হঠাৎ মিষ্টিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে
-“তোমার সব কিছুই আল্লাহ্ দিলে ভালো কিন্তু তোমার হাইট কম।আমার ছেলের পাশে একটু বেশিই ছোট দেখাবে।”

এতক্ষণ সব যেমন তেমন হলেও এখন বেশ অপমানিত বোধ করল মিষ্টি।তাই রেগেই বলল
-“হ্যাঁ আন্টি আমার হাইট খুবই কম। মাত্র ৫ ফুট।কিন্তু এখানে আপনার ছেলের সাথে মানানোর কথা কোথা থেকে আসলো? আর আপনার ছেলে নিশ্চয়ই কোনো রাজপুত্র না।আর আপনার ছেলে আমাকে দেখার সময় চোখ গুলো কি খুলে রেখেছিলো?”

মিষ্টি এবার তার মায়ের দিকে তাকিয়ে টলমলে চোখে রাগে লাল হওয়া চেহারা নিয়ে বলল
-“এবার খুশি তো আম্মু? মানুষের কাছে আমাকে অপমানিত করিয়ে খুশি হয়েছো? শান্তি হয়েছো তো তুমি?”

রাবেয়া খাতুন লজ্জায় মুখ নামিয়ে নেয়। সে তো তার মেয়ের অপমানের জন্য আনে নি।ভেবেছিলো ছেলে ডাক্তার ভালো পাত্র একটু দেখতে চেয়েছে মেয়েকে দেখুক।কিন্তু ছেলের মা যে এত নীচু মনের সে ভাবতে পারে নি।তিনি নিজের মেয়ের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে মিষ্টি গটগট পায়ে চলে গেলো সেখান থেকে।

নিবিড় এতক্ষণ সব কিছু চুপচাপ দেখছিলো।কিন্তু তার মা যে এমন বলবে সে ভাবতেও পারে নি।নিবিড় নিজের মায়ের কাজের জন্য বেশ লজ্জিত হয়ে ক্ষমা চাইলো রাবেয়া খাতুনের দিকে।

সবটাই আদ্র আর মিঠাই দেখলো।আদ্রের তো মহিলাটার উপর প্রচুর রাগ উঠলো। কিন্তু কিছু না বলে সে মিষ্টিকে খুঁজতে গেলো।

বেশ খোঁজা খুঁজির পর তারা জানতে পারল এই রাতে মিষ্টি একা বাড়ি চলে গেছে।আদ্র মিষ্টির রাগ দেখে অবাক।
________

মাঝে কেটে গিয়েছে দুই দিন।মিষ্টি সেদিন রাতে বাড়ি ফিরে আসে।পরেরদিন সবাই বেশ সকালে চলে আসে।কিন্তু মিষ্টি কারো সাথে কোনো কথা বলে নি।মিষ্টির আব্বু নাকি বিয়ে বাড়িতেই বেশ রাগারাগি করেছিলো।মিষ্টির মায়ের সাথেও ঝগড়া করেছিলো।

এই দুদিন মিষ্টি কারো সাথে কথা বলে নি এমনকি ঘড় থেকেও বের হয় নি।আদ্র অনেকবার কল দিয়েছিলো।মিষ্টি ফোন বন্ধ করে রেখেছে।

বিকেল পাঁচটা।বর্ষার সময় চারপাশের আবহাওয়া ঠান্ডা। মিষ্টি আজ তিনটে কাঠগোলাপ নিয়ে যাচ্ছে সুখদাতার জন্য। মাঝের দুদিন সে তার কথা রাখতে পারে নি।তাই একসাথে তিনটে কাঠগোলাপ নিয়ে চলল সুখ দাতার উদ্দেশ্যে। তবে মিষ্টির কাছে এ দুদিন কৃষ্ণচূড়া ফুল পাঠিয়েছে আদ্র।প্রতিদিন নিজের বারান্দায় ফুল পেয়েছে সে।

মিষ্টি সুখদাতার কাছে হাজির হয়ে ডাক দেয়। পিচ্চিটা মিষ্টিকে দেখা মাত্রই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে মিষ্টিকে।মিষ্টিও পরম মমতায় আগলে ধরে তাকে।ছেলেটা মিষ্টিকে জড়িয়ে ধরেই বলল
-“পরী তুমি আসো নাই কেন এই দুই দিন? জানো তোমারে আমার অনেক মনে পড়ছে।”

মিষ্টি হেসে দেয় পিচ্চিটার কথায়।তারপর হাঁটু গেঁড়ে বসে বলল
-“সরি রে সুখদাতা আমার একটু কাজ ছিলো তাই আসতে পারি নি।তোর ফুলও দিতে পারি নি।এই নে আজ তিনটে এক সাথে এনেছি।এগুলা নিয়ে তোর বান্ধবীকে দিছ।”

ছেলেটা মিষ্টির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলল
-“আমি তো এ দুদিন ফুল পেয়েছি।”

মিষ্টি অবাক হয়ে বলল
-“ফুল পেয়েছিস?কিন্তু কীভাবে?”

ছেলেটা আঙ্গুল দিয়ে পিছে দেখিয়ে বলল
-“ঐ যে ঐ ভাইয়া টা দিলো।”

মিষ্টি ভ্রু কুঁচকে পিছে তাকিয়ে অবাক হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল
-“আপনি!”

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here