পরিশেষে_ভালোবাসি,পর্ব_০৮,০৯

পরিশেষে_ভালোবাসি,পর্ব_০৮,০৯
সামিয়া_মেহেরিন
পর্ব_০৮

আহিয়ান হয়তো আমার মনের কথা বুঝতে পারলেন। নিজেই বলতে শুরু করলেন।
-খুব অবাক হচ্ছো আমাকে এভাবে দেখে, তাই না?

আমি মাথা নাড়ালাম। যার অর্থ হ্যাঁ। তিনি আবার বলতে শুরু করলেন।
-একজন ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট হওয়ার পাশাপাশি আমার আরো একটা পরিচয় আছে। আমি সিআইডি অফিসার। তোমাকে যারা কিডন্যাপ করেছে তারা একটা মাফিয়া দলের সঙ্গে যুক্ত। এই দলটাকে ধরার চেষ্টায় আছি অনেকদিন ধরে। কিন্তু প্রতিবারই কোনো না কোনো ভাবে ব্যর্থ হচ্ছি।

-কিন…তু…ওরা তো…বলছিলো..

আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই আসাদ সেখানে চলে আসে। আহিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে তারা কোথাও কাউকে খুঁজে পায় নি। আহিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আণাকে বললেন, চলো বাড়ি যাই।
-হুম।

নিশা, আরিয়া আর মাহাদীর বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। মাহাদী তাদের বাড়ি পৌঁছে দেয়। আরিয়া আর নিশা বাড়ির ভেতর ঢুকতে যাবে তখন মাহাদী নিশাকে পিছু ডাকে। আরিয়া বাড়ির ভেতর চলে যায় আর নিশা সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে।

নিশার রাগে পায়ের রক্ত মাথায় উঠে আছে। কারণ আজ শপিং এ পুরো সময়টায় মাহাদী আর আরিয়া একে অপরের হাত ধরে ছিল। কথায় কথায় যেন একে অপরের গায়ে ঢলে পড়ছিল। মাহাদী আর আরিয়ার কাছাকাছি থাকাটা মোটেও ভালো লাগছে না নিশার।

মাহাদী নিশার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। নিশা তেঁতিয়ে উঠে বলল
-কী হয়েছে ডাকলেন কেন?

-রাগ করছো কেন? আমার কথাটাতো শোনো।
-যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন।
-আচ্ছা বলছিলাম যে, আরিয়াতো তোমার বোনের মতো তাই না?
-হ্যাঁ, তো?
-যেহেতু বোন হয়, সেহেতু তুমি তোমার বোনের ভালোই চাইবে তাই না। দেখো, আমি আরিয়াকে ভীষণ ভালোবাসি। তবে কখনো বলা হয়নি।

মাহাদী আরিয়াকে ভালোবাসে শুনতেই নিশার পুরো পৃথিবী থমকে যায়। এমন কিছু হবে সে কোনোদিন ভাবে নি।

-আমি ঠিক করেছি, আগামীকাল আমি আরিয়াকে প্রপোজ করব। কিন্তু এসব ব্যাপারে আমি খুব কাঁচা। আমি চাই তুমি আমাকে হেল্প করো। আরিয়ার জন্য সারপ্রাইজ প্ল্যান করতে সাহায্য কর। প্লিজ নিশা তোমার আমাকে হেল্প করতেই হবে।

নিশা কোনো কথা না বলে দ্রুত বাড়ির ভেতর চলে যায়। এদিকে মাহাদী নিশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে।

ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে চুল বাঁধছি আর মুচকি মুচকি হাসছি। শেষ পর্যন্ত কিনা আমি এই গম্ভীর, গোমরামুখো, রহস্যজনক ব্যক্তি আহিয়ানের প্রেমে পড়লাম। দুনিয়ায় এতো মানুষ থাকতে আমার এই খাটাশটার প্রেমেই পড়তে হলো।

কিন্তু আহিয়ান! সে কি আমাকে ভালোবাসে? কেনইবা আমাকে বিয়ে করলেন তিনি? আমার সব প্রশ্নের উত্তর শুধুমাত্র আহিয়ানের কাছে আছে। কিন্তু তিনি কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি নন। আর কতদিন তিনি আমাকে এভাবে ধোয়াশার মধ্যে রাখবেন?

পরেরদিন নিশা আরিয়ার জন্য সারপ্রাইজ প্ল্যান করে। বাড়ির পুরো ছাদ ডেকোরেশন করে মাহাদী সেখানে আরিয়াকে প্রপোজ করবে বলে।

বিকেলবেলা রুম থেকে বেরিয়ে নিচে ড্রইংরুমে এসে দেখি নিশা মনমরা হয়ে সোফায় বসে আছে।

-কীরে এমন দেবদাসি রূপ নিয়ে বসে আছিস কেন?

আমার কথায় নিশা কিছুটা চমকে যায়।

-ক..কই আমি দেবদাসি হয়েছি? দেখ, আমার ভালো লাগছে না। তুই যা এখন এখান থেকে।
-আরে আরে আমিতো দেখছিই তুই দেবদাসি হয়ে আছিস। করো প্রেমে ট্রেমে পড়েছিস নাকিরে? (অবাক হয়ার ভান করে)

-আমি বুঝেছি তুই আমার পিছু ছাড়বি না। তুই থাক এখানে, আমিই বরং যাই।
-আরে শোন না….

নাশা দাঁড়ালো না। নিজের রুমে চলে গেলো। আমি জানি ও এখন কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই ও নিজের জীবনের সবথেকে বড় উপহারটা পাবে।

নিশা আরিয়াকে নিয়ে ছাদে গেল। মাহাদী আগে থেকেই সেখানে ছিল। তাদের দেখে মাহাদীর ঠোঁটের হাসি আরো প্রশস্ত হয়। নিশা ভাবলো মাহাদী আর আরিয়াকে কিছু সময় ব্যক্তিগত ভাবে কাটাতে দেয়া উচিত। এখানে তার আর থাকাটা ঠিক হচ্ছে না। নিচে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই মাহাদী নিশার হাত ধরে আটকায়। তাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে হাটু গেঁড়ে বসে মাহাদী।

-কোথায় যাচ্ছো, নিশা? যাকে প্রপোজ করব সেই যদি চলে যায় তাহলে কাকে প্রপোজ করব আমি?

-মা…মানে?
-নিশা, ভালোবাসি তোমায়। (একটু থেমে) কখন, কীভাবে ভালোবেসে ফেলেছি জানি না। তবে এটুকু জানি আমার হৃদয়ের প্রত্যেকটি স্পন্দন শুধু তোমার নামে। আমার অস্তিত্বের সাথে জড়িয়ে গেছো তুমি।
-কি… কিন্তু আপ…নিতো বলেছিলেন আপনি আরিয়াকে ভালোবাসেন।

-যদি তাই হতো, তাহলে আমার উডবি ইরফার আমাকে ফাঁসিতে ঝুলাতো।(আরিয়া)

-একদম ঠিক বলেছো।

অপরিচিত কণ্ঠস্বর শুনে ছাদের দরজার দিকে তাকায় নিশা। আরিয়া লোকটার কাছে গিয়ে তার হাত জড়িয়ে ধরে নিশার উদ্দেশ্যে বলে
-আসলে তোমাকে ইরফানের কথা বলা হয়নি। ইরফান আমার উডবি হাজবেন্ড। আর যা কিছু হলো সবই মাহাদী ভাইয়ের প্ল্যান।

নিশা অগ্নিদৃষ্টিতে মাহাদীর দিকে তাকায়। মাহাদী বোকা বোকা হাসি দিয়ে মাথা চুলকায়।

মাহাদী আর নিশার ব্যাপারে আহিয়ানকে বলতে খুশিমনে ঘরের দিকে গেলাম। ঘরের কাছে গিয়ে দেখলাম তিনি ফোনে কারো সাথে কথা বলছেন। যা শুনলাম তাতে আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল।

তার মানে তিনি অন্যকাউকে ভালোবাসেন।

চলবে

#পরিশেষে_ভালোবাসি
#পর্ব_০৯
#সামিয়া_মেহেরিন

তারমানে আহিয়ান অন্যকাউকে ভালোবাসে!

আহিয়ান আমাকে খেয়াল করেন নি। আমি আর ঘরের ভেতর গেলাম না। দৌঁড়ে নিচে নামতে গিয়ে আমার অজান্তে হাতের সাথে লেগে একটা ফুলদানি পড়ে ভেঙে যায়। সেই সময় আরিয়া বেখেয়ালি ভাবে হেঁটে আসছিল। যার ফলে একটা বড় কাঁচের টুকরো ওর পায়ে গেঁথে যায়। আরিয়ার কান্নার আওয়াজ পেয়ে আহিয়ান সহ বাড়ির সকলে সেখানে চলে আসে।

আরিয়া ঘুমিয়ে পড়লে আমি ওর ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরের দিকে যাই। ডাক্তার এসেছিল ব্যান্ডেজ করে দিয়ে গেছে সাথে কিছু ওষুধ দিয়ে গেসে। আমার ভুলের জন্যই আজ আরিয়ার এমন একটা অবস্থা হলো। প্রচণ্ড খারাপ লাগছে বিষয়টা।

ঘরে ঢুকতেই আহিয়ান আমাকে ধাক্কা দিয়ে আমার হাত দুটো দেয়ালের সাথে চেপে ধরেন। তার চোখের দিকে তাকিয়ে আমি আৎকে উঠলাম।

-কী ভেবে রেখেছো তোমরা? আমার পরিবারকে কি একটুও শান্তিতে থাকতে দেবে না?
-দে…দেখুন আ…মি…

-তোমার বাবা আমার বাবাকে মেরে ফেলেছে আর এখন তুমি চাইছো আমার বোনকে মেরে ফেলতে?

আহিয়ানের কথায় আমি চমকে উঠলাম। এসব কি বলছেন তিনি?

-দ…দেখুন আমি…মানছি আমি ভুল করে ফেলেছি। কিন্তু তাই বলে আপনি আমার পরিবার নিয়ে এসব বলতে পারেন না।

আহিয়ান ঈশার হাত ছেড়ে দেয়। আজ বেমালুম সে ঈশাকে তার জীবনের অনাকাঙিক্ষত সত্যটা বলে দিয়েছে। সে ভাবছে কথাটা ঈশাকে এভাবে জানানো ঠিক হয় নি।

আহিয়ান নিজেকে শান্ত করে। ঠাণ্ডা গলায় বললেন
-আমি যা বলছি ঠিকই বলছি। এটাই সত্যি।

আমি কি বলব কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার বাবা কিছুতেই এমন কাজ করতে পারেন না। কিন্তু…কিন্তু আহিয়ান! সে তো বানিয়ে এসব বলার মানুষ নন। তিনি হয়তো আমাকে ভালোবাসেন না, আমিতো বাসি। আমার ভালোবাসার ওপর আমার বিশ্বাস আছে। সেই বিশ্বাস থেকে বলতে সে কখনো বিনা কারণে এমন কিছু বলবেন। কিন্তু এই মুহূর্তে আমি মনে-প্রাণে চাইছি আহিয়ানের কথা যেন ভুল প্রমাণিত হয়। আমাকে সত্যিটা জানতে হবে। আর এই সত্যি আমাকে শুধু খালামণিই বলতে পারবে।

সেই মুহূর্তেই আমি কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম।

খালামণির বাড়িতে এসে তাকে সবটা বললাম। কিন্তু তাকে আমতা আমতা করতে দেখে আমি ঘাবড়ে গেলাম। তাহলে কি আমার ভয়ই ঠিক হলো!

-কি হলো খালামণি, তুমি কিছু বলছো না কেন?
-আ…সলে আসলে
-প্লিজ খালামণি আমাকে সত্যিটা বলো।

খালামণি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলেন।
-তোর বাবা আর আহিয়ানের বাবা বিজনেস পার্টনার ছিলেন। আহিয়ানের বাবা আফজাল সাহেব ছিলেন একজন অত্যন্ত সৎ মানুষ। যখন তিনি জানতে পারেন তোর বাবা অবৈধ কাজের সাথে যুক্ত, তিনি ব্যবসায়িক সব সম্পর্ক শেষ করে দেন। এতে তিশান ভাইয়ের ব্যবসায় অনেক লস হয়ে যায়। তিশান ভাই আবারও আফজাল সাহেবের সাথে মিলে ব্যবসা করতে আফজাল সাহেবকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি রাজি হন নি। তোর বাবা সবসময় অল্পতেই রেগে যেতো আর রাগে তার মাথা ঠিক থাকতো না। সেদিনও আফজাল সাহেবের ওপর প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিল। নিজের রাগকে দমন করতে না পেরে নিজের বন্দুক দিয়ে আফজাল সাহেবের দিকে পরপর তিনটা গুলি করে। আফজাল সাহেব সেখানেই মারা যান। তোর বাবা হয়তো অবৈধ কাজের সাথে যুক্ত ছিল, কিন্তু তোকে আর নিশাকে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসতো। লোভ মানুষকে কত কি করতে বাধ্য করে!

আমি আর কিছু শুনতে পেলাম না। দৌঁড়ে খালামণির বাড়ি থেকে বেরিবেরিয়ে এলাম। আমার বাবা একজন খুনি, সন্তান হিসেবে কিছুতেই আমি মানতে পারছি না।

ঈশা বেরিয়ে যেতে তার খালামণি কাউকে কল করে। কল রিসিভ হতে তিনি বলেন
-তুমি ঠিকই বলেছিলে, ঈশা এসেছিল আমার কাছে। কিন্তু তুমি আমাকে পুরো সত্যিটা বলতে দিলে না কেন?

ফোনের ওপাশ থেকে আহিয়ান বলল
-সবটা জেনে ঈশা যদি অন্যায়কে সমর্থন করে তাই। যতই হোক নিজের রক্ত বলে কথা। আর এমনটা হলে আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো না।
-কিন্তু ঈশাতো এমন মেয়ে নয়।
-মানুষ বদলাতে সময় লাগে না।

সন্ধ্যার আবছা আলোয় রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। আমার আশেপাশে কী হচ্ছে সেদিকে আমার কোনো খেয়াল নেই। কিন্তু আমার মনে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা লেগে বাস্তবে ফিরলাম। পড়ে যেতে নিলে মেয়েটি আমার হাত ধরে দাঁড় করায়।

-ঈশা, তুমি? তুমি এখানে এভাবে কেন?
-আ…আপনাকে ঠিক চিনলাম না।

মেয়েটি ম্লান হেসে বলল
-তুমি আমাকে না চিনলেও, আমি তোমাকে চিনি। কিন্তু তুমি রাস্তা দিয়ে এভাবে হাঁটছো কেন? কিছু একটা হয়ে যেতে পারতো। আচ্ছা চলো আগে বাড়ি যাই।

বাড়িতে ঢুকতেই মায়ের মুখোমুখি হলাম। মা মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বললেন
-আরে কুহু, তুই?
-হ্যাঁ মামি, আমি।

ওনাদের কথার মাঝখানে আমার থাকতে ইচ্ছে করছিলো না। যতটুকু বুঝলাম মেয়েটি আহিয়ানের ফুফাতো বোন।

ঘরে এসে দেখি আহিয়ান সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছেন। আমি তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।

-আমার বাবা যদি আপনার বাবাকে খুন করেই থাকেন, তাহলে আপনি আমাকে বিয়ে করলেন কেন?

আহিয়ান একপলক আমার দিকে তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মন দেন। আমার রাগ তরতর করে বেড়ে গেলো। চেঁচিয়ে বললাম
-কি হলো বলছেন না কেন? আজ আমি আমার সব প্রশ্নের উত্তর চাই।

আহিয়ান উঠে দাঁড়ালেন। কোনো কথা না বলে ঘর থেকে বেরিবেরিয়ে যেতে নিলেন।

-তাহলে কি আমি ধরে নেবো, নিজের বাবার হত্যার প্রতিশোধ নিতে আপনি এসব করছেন?

আহিয়ান থামলেন। কেমন যেন দৃষ্টিতে আমার দিকে একবার তাকিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। তার সেই চোখের ভাষা পড়ার সাধ্য আমার নেই। আমি সেখানেই হাঁটু গেড়ে বসে কাঁদতে লাগলাম। মাত্র কয়েক মুহূর্তেই সব কিছু বিষাদময় হয়ে উঠেছে।

আহিয়ান আর কুহু ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। আহিয়ান একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। ভাবছে এসবের মাঝে ঈশার তো কোনো দোষ নেই। তবুও মেয়েটা এত কষ্ট পাচ্ছে। ঈশার কান্না আজ কেন যেন তার হৃদয়কে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে।

নিরবতা ভেঙে কুহু বলল
-এমন মনমরা দেখাচ্ছে কেন তোমাকে?

কথাটা হয়তো আহিয়ানে কর্ণকুহরে পৌঁছে নি। কুহু আহিয়ানের কাছে গিয়ে তার কাধে হাত রাখে।

-আহিয়ান?
-হ…হ্যাঁ বলো।
-ভালোবেসে ফেলোনি তো ঈশাকে?
-এ..এসব ক…কী বলছো? আ…আমি তোমাকে ভালো…ভালোবাসি। ঈশা আমাদের মাঝে কখনো আসবে না।
-তাহলে এভাবে তোতলাচ্ছো কেন? (একটু থেমে) ঈশা ভালোবাসা পাওয়ার মতোই একজন মানুষ।

আহিয়ান কী বলবে ভেবে পায় না। এই কয়েকদিনে তার মনে ঈশার প্রতি যে অনুভূতি জন্ম নিয়েছে সেটা সা অস্বীকার করতে পারবে না। কিন্তু এই অনুভূতি যে কীসের সেটা এখনো বুঝে উঠতে পারে নি।

কুহু আবারও বলতে শুরু করে।
-ঈশাকে এখনো বলনি কেন যে তার বাবা বেঁচে আছে।
-বলব।
-ঈশার এক্সিডেন্ট করানোর চেষ্টা করে তুমি ঠিক কর নি।

আহিয়ান দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
-আমি জানি, আমি ঠিক করি নি। তিশান আহমেদকে ধরতে হলে ঈশাকে ব্যবহার করতেই হতো। তিশান আহমেদ যতই খারাপ মানুষ হোক, সে তার মেয়েদের প্রচণ্ড ভালোবাসে। ঈশার ক্ষতি হতে দেখলে সে নিশ্চয়ই কিছু না কিছু করবে। সেই সুযোগটাই কাজে লাগাতে চেয়েছি….

হঠাৎ একটা শব্দে আহিয়ান আর কুহু ছাদের দরজার দিকে তাকায়। একটা অবয়ব দেখতে পায়। আহিয়ান দ্রুত দরজার কাছে যায় অবয়বটা কার দেখার জন্য। কিন্তু ততক্ষণে অবয়বটা মিলিয়ে যায়।

🌸🌸🌸

গত দুঘণ্টা ধরে শাওয়ারের নিচে বসে ভিজছি। শাওয়ারের পানি আর আমার চোখের পানি, দুটো মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! একটার পর একটা চমক উপহার দিয়ে যাচ্ছে।

ঘরে দম বন্ধ হয়ে আসছিল দেখে ছাদে গিয়েছিলাম। কিন্তু কে জানতো সেখানে গিয়ে আমি চরম সত্যের মুখোমুখি হব।

সকালবেলা মা ড্রইংরুমে টিভি দেখছিলেন। আমি তাকে ওষুধ খাওয়াতে গিয়ে টিভির একটা নিউজ শুনে আমার পুরো পৃথিবীঈ যেন থমকে গেলো। নিউজে দেখাচ্ছে- গতকাল রাতে ঢাকার একটি শপিংমলে প্রাণঘাতী বোমা হামলায় নিহত অর্ধশত, আহত দুই শতাধিক। পুলিশের দেয়া তথ্যানুসারে এই হামলার পেছনে একটি মাফিয়া দলের হাত রয়েছে। যার লিডার একসময়ের প্রখ্যাত ব্যবসায়ী তিশান আহমেদ।

ঘন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে এক ধ্যানে হেঁটে যাচ্ছি। হাঁটতে হাঁটতে একটা খাদের সামনে চলে এসেছি। খাদটা এতটাই গভীর যে একবার কেউ পরলে আর বেঁচে ফিরতে পারবে না। আর এক পা পেরোলেই আমি সেই খাদে পড়ে যাবো।

খাদের দিকে এক পা বাড়াতে….

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here