পরিশেষে_ভালোবাসি,পর্ব_০২,০৩
সামিয়া_মেহেরিন
পর্ব_০২
বাড়ির ভেতরে ঢুকেই আমি চরম অবাক। এ আমি কি দেখছি!
আমার বোন নিশা একটা মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। বুঝলাম মেয়েটা হয়তো আহিয়ান এর ছোট বোন। কিন্তু নিশা এ বাড়িতে কী করছে? ওকে কিডনাপ করা হয়েছে তাহলে এখানে কেমনে আসলো ও? ওর হাত পা বাঁধা ছবিই বা আসলো কোথা থেকে? আমার এসব ভাবনার মাঝেই, নিশা আর মেয়েটি আমাদের সামনে এসে দাঁড়াল। নিশা আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল
-কীরে আপু তলে তলে এতো কিছু আমাকে একবার বললি ও না। (নিশার কথায় আমার ধ্যান ভাঙল)
নিজেকে সামলিয়ে নিশা কে বললাম
_তুই এখানে কিভাবে আসলি? তোকে না..(আমাকে বলতে না দিয়ে)
_হ্যা হ্যা আমাকে কিডন্যাপ করা হয়েছিলো। আহিয়ান ভাইয়াই তো আমাকে গুন্ডাদের হাত থেকে বাঁচালো।
নিশার কথার আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। নিশাকে তো আহিয়ানই কিডন্যাপ করেছিল, তাহলে নিশা কেন বলছে আহিয়ান তাকে বাঁচিয়েছে? আর আহিয়ান আমাকে বিয়েই বা করলেন কেন? আমাকে বিয়ে করে তার কি লাভ?
এরকম হাজারটা প্রশ্ন আমার মাথায় কিলবিল করছে। আর আমার সব প্রশ্নের উত্তর আছে ওই খাটাশ আহিয়ানের কাছে। এসব ভাবনার মাঝে একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। আহিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বললেন
-শেষ পর্যন্ত নিজের জেদটাই রাখলিতো আহিয়ান। একা একা গিয়ে বিয়ে করে আসলি।
-মা আমিতো আগেই বলেছিলাম।
-সে যাই হোক, মিষ্টি একটা বউমা এনেছিস আমার জন্য আর আমি এতেই খুশি। বউমা বাইরে দাঁড়িয়ে আছো কেন? ভেতরে এসো।
-আরে ভাবি ভেতরে এসো। আমার ভাইয়ার পছন্দ আছে বলতে হবে। তুমি সত্যিই খুব মিষ্টি দেখতে।
বলেই আরিয়া আমার হাত ধরে আমাকে বাড়ির ভেতর নিয়ে গেল। এমন সময় একজন লোক হাতের মোবাইলের দিকে একমনে তাকিয়ে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করল। মোবাইলের দিকে নজর স্থির রেখে আহিয়ানের উদ্দেশ্যে বললেন
-কীরে আহিয়ান, আমাকে এত জলদি বাড়ি আসতে বললি কেন?
বলে মুখ তুলে তাকালো আমার আর আহিয়ানের দিকে।
-আহিয়ান, তুই বিয়ে করেছিস।( অবাক হয়ে)
তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে অবাকের চরম পর্যায় থেকে লাফ দিয়ে টুপ করে পৃথিবীতে পরেছেন। আরিয়া বলে উঠল
-একি মাহাদী ভাই! আপনি না ভাইয়ার বেস্টফ্রেন্ড। আপনাকেও ভাইয়া বিয়ের ব্যাপারে কিছুই বলে নি?
-না, আমিতো এখানে এসে জানলাম।
একটা অন্ধকার ঘরের ঠিক মাঝখানটায় একটা টিমটিমে বাতি জ্বলছে। আবছা আলোয় টেবিলের ওপর ছড়িয়ে থাকা কাগজপত্র আর এক কোণায় খুব সযত্নে রাখা একটি ফটোফ্রেম দেখা যাচ্ছে। ফটোফ্রেমে রয়েছে দুজন হাস্যজ্জ্বোল মেয়ের ছবি। ঘরের কোণায় একটা চেয়ারে একজন মধ্যবয়স্ক পুরুষ রক্তচক্ষু নিয়ে বসে আছে। তার দৃষ্টি স্থির হয়ে আছে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ২৪-২৫ বছরের দুটো ছেলের দিকে।
-তোদের বলেছিলাম না, ওদের দুজনের উপর সবসময় নজর রাখতে? এত কিছু হয়ে গেলো অথচ তোরা কিছু জানতেই পারলি না?
-সরি স্যার, ভুল হয়ে গেছে।
দুজন ছেলের মধ্যে একজন কথাটা বলতেই মধ্যবয়স্ক লোকটি হুংকার দিয়ে উঠলেন।
-ভুল হয়ে গেছে? কোন কাজ তোরা ঠিকভাবে করতে পারিস? (একটু থেমে) ওদের ব্যাপারে সব খোঁজখবর নে আর সবসময় নজর রাখবি ওদের উপর। এখন যা এখান থেকে।
দুজনেই চলে গেলো। মধ্যবয়স্ক লোকটা ফটোফ্রেম হাতে নিয়ে সযত্নে হাত বুলিয়ে আবারও আগের জায়গায় রেখে দিলেন।
এদিকে-
-আহিয়ান, তুই এসবের মধ্যে ঈশাকে জড়িয়ে ঠিক করছিস না।
মাহাদীর কথা শুনে আহিয়ান দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
-আমাদের ঈশাকে ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই।
মাহাদী আর কথা বাড়ালো না। কারণ সে জানে আহিয়ার এখন তার কোনো কথাই শুনবে না। আর ঈশাকে তো সে বিয়ে করেই ফেলেছে, কিছু বলেও লাভ নেই।
মাথায় এক ঝুড়ি প্রশ্ন নিয়ে আহিয়ানের রুমের মধ্যে পায়চারি করছি। উদ্দেশ্য আহিয়ান ঘরে আসলেই তার দিকে এক ঝুড়ি প্রশ্ন ছুঁড়ে মারব। নিশা আর আরিয়া আমাকে এ ঘরে রেখে গেছে। গত একঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি অথচ তার আসার নাম-গন্ধও নেই।
আহিয়ান ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলেন। আমি তার দিকে তেড়ে গিয়ে বললাম
-আপনি আমাকে বিয়ে করলেন কেন? আমাকে বিয়ে করে আপনার কি লাভ? নিশাকে কিডন্যাপ কেন করেছিলেন আপনি? আর নিশা এ বাড়িতে কি করছে? আমাকে এ বাড়িতে কেন এনেছেন? এসবের পেছনে আপনার উদ্দেশ্য কী?
একদমে সবগুলো প্রশ্ন করে হাঁপাতে লাগলাম। আর উনি আমার দিকে কিছুক্ষণ চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থেকে বললেন
-সময়মত সব জানতে পারবে।
বলেই আলমারি থেকে জামাকাপড় বের করে ওয়াশরুমে চলে গেলেন। আর আমি বোকার মতো তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। আমি তাকে এতগুলো প্রশ্ন করলাম আর তিনি এটুকু বলেই চলে গেলেন।
আহিয়ান ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে বলল
_এমন বোকার মত দাঁড়িয়ে আছো কেন? আমি তো বললাম সময় হলে সব জানতে পারবে।আর ততদিন আমার স্ত্রীর পরিচয়ে এখানে ই থাকতে হবে তোমাকে। আমাদের দুজনের ভেতরের কথা বাইরের কেউ যেন জানতে না পারে, কথাটা ভালভাবে মাথায় ঢুকিয়ে রাখো। তোমার বোন কিন্তু এই বাড়িতেই থাকবে।যেটাই করবে ভেবে করো।
বলে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লেন। চোখ বন্ধ করে বললেন, আলমারিতে তোমার জামা কাপড় সব রাখা আছে।
আমি সেভাবেই কিছূক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলাম। ভালো ভাবেই বুঝে গেছি এই খাটাশ আহিয়ান আমার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিবে না। এসবের মধ্যে ঘোর রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি। আমার সব প্রশ্নের উত্তর বের করতেই হবে।
চিন্তা ভাবনা সব দূরে ফেলে আলমারি খুললাম। দেখলাম অনেক গুলো থ্রিপিস আর শাড়ি রাখা আছে। সেখান থেকে একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াসরূম এ ঢুকে পরলাম।
ফ্রেশ হয়ে এসে পরলাম আরেক বিপদে। উনিতো বিছানায় শুয়ে আছেন। ঘুমিয়েও গেছেন বোধহয়। আমি তাহলে কোথায় ঘুমাবো। উনার সাথে বিছানায় ঘুমানো অসম্ভব। আমি তো উনাকে স্বামী হিসেবে মানিই না।আগেপাছে না ভেবে সোফায় গিয়ে শুয়ে পরলাম।
আবার ও আগমন ঘটলো নতুন এক সকালের। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলাম আহিয়ান এখন ও ঘুমাচ্ছেন। আমি নিচে নেমে এসে রান্না ঘরের দিকে গেলাম। দেখলাম আমার শ্বাশুড়ি মা রান্না করছে। আমাকে দেখে মুচকি হাসলেন। আমি তাকে সাহায্য করতে লাগলাম।আর এটা ওটা নিয়ে কথা বলতে লাগলাম।
ঈশার যাওয়ার অনেক ক্ষন পর ই আহিয়ান এর ঘুম ভাঙ্গে। ফ্রেশ হয়ে এসে বাইরে যাবে বলে রেডি হচ্ছে।আজ সে তার ভালোবাসার মানুষটির সাথে দেখা করতে যাচ্ছে তাই মনে মনে খুশিও হচ্ছে।
চলবে?
#পরিশেষে_ভালোবাসি
#পর্ব_০৩
#সামিয়া_মেহেরিন
রান্না শেষ হলে আমি ঘরে এসে দেখি খাটাশটা রেডি হচ্ছে। বোধহয় কোথাও যাবে। আমার দিকে অপলক তাকিয়ে নিজের কাজ এ মনোযোগ দিলেন।যায়ার আগে বলে গেলেন
_তুমি যে কম্পানি তে চাকরি করতে সেখান থেকে রিজাইন নেয়া হয়ে গেছে। বাড়িতে থাকবে তুমি।আর যদি চাও আমার কম্পানি তে চাকরি করতে পারো।মোট কথা আমার চোখ এর সামনে থাকতে হবে তোমাকে।
_কীইইই!
কোনো কিছুই না বলেই চলে গেলেন।আর আমি ভাবছি গত দু’দিন ধরে আমার সাথে কী কী ঘটেছে। মনে হচ্ছে অবাক এর শেষ পর্যায়ে গিয়ে চিতপটাং হয়ে শুয়ে থাকাই এখন বোধহয় বাকি আছে।
মাহাদী আহিয়ান এর সাথে কথা বলার উদ্দেশ্য তার ঘরের দিকে যাচ্ছে। একদিকে মাহাদী সিঁড়ি দিয়ে উপরের দিকে উঠছে অন্য দিকে নিশা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছে। দুজনের ই মনোযোগ নিজেদের ফোনের উপর স্থিত
। অতঃপর মাহাদী নামক ব্যাক্তি ও নিশা নামক ব্যাক্তির সংঘর্ষে তাদের দুজনের ফোন ই পড়ে গিয়ে চুরমার। দুজনেই একে অপরের দিকে অগ্নিচক্ষু নিয়ে তাকালো। নিশা বলে উঠলো
_এই যে আপনি চোখে দেখেন না? নাকি সুন্দরী মেয়ে দেখলেই ধাক্বা খেতে মন চায়? দিলেন তো আমার সাধের ফোনটা ভেঙ্গে।
_কী বললেন আমি চোখে দেখতে পাই না? আপনি তো নিজেই অন্ধ। আমার ফোনটার কি হাল করেছেন আপনি!
_এই আপনি নিজের দোষ আমাকে দিচ্ছেন কেন হ্যাঁ । আপনি তো বোধহয় সবসময় ফোনের ভিতরে ঢুকে গিয়েই চলা ফেরা করেন।কালকেও তাই দেখলাম নিজের দোষ স্বীকার না করে উল্টো তর্ক করছেন। আপনি আহিয়ান ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড না হলে মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলতাম একদম।
_কীইই!
নিশা আর মাহাদীর চিল্লাচিল্লি শুনে আরিয়া ঘর থেকে বেরিয়ে আসে।
_এই তোমরা এভাবে চিল্লাচিল্লি করে বাড়ি মাথায় তুলছো কেন বলতো।
-চিল্লাচিল্লিতো করছে এই লোকটা। আমি কোথায় করলাম? এমা..আমার তো কোচিং আছে। কত দেরি হয়ে গেল আমার! সব হয়েছে এই লোকটার জন্য।
বলেই নিশা হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল।
-মেয়েটা কে বলতো, আরিয়া। কালকেও বোধহয় দেখেছিলাম।
-ও হলো নিশা। ঈশা ভাবির ছোট বোন।
-ঈশা ভাবির মতো সুইট একটা মেয়ের এত ডেঞ্জারাস বোন। আমিতো ভাবতেই পারছি না। (একটু থেমে) যাই হোক, আহিয়ান কোথায় বলতো।
-ভাইয়া তো বাড়িতে নেই। সকালবেলা বেরিয়েছে।
-ওহ! তাহলে আমি আসি এখন।
কফিশপে বসে আছে আহিয়ান। তার সামনে বসে আছে কুহু। কুহু একদিকে আহিয়ানের ফুফাতো বোন, অন্যদিকে তার ভালোবাসা। কুহুও ভালোবাসে আহিয়ানকে।
নিরবতা ভেঙে কুহু বলে
-দেখো, ভালোবেসে ফেল না যেন ঈশাকে।
-এসব তুমি কি বলছ, কুহু। আমি কেন ঈশাকে ভালোবাসতে যাবো?
-তোমরা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ। পবিত্র সম্পর্কের প্রতি ভালোবাসা জন্মাবে এটাই স্বাভাবিক। ( ম্লান হেসে)
-আমি তোমায় ভালোবাসি, কুহু। তুমিতো সবই জানো কেন আমি ঈশাকে বিয়ে করেছি। আমাদের দুজনের মাঝে কেউ আসবে না।
-তাই যেন হয়!
-কুহু, তুমি সাবধানে থেকো। আর এই কয়েকদিন আমাদের দেখা না করাই ভালো।
-হুম। কাল আমি কাল আমি ফ্রান্স যাচ্ছি বাবার কাছে।
-চলো তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসি।
-হ্যাঁ, চলো
নদীর ধারে মুখে মাস্ক, চোখে সানগ্লাস আর মাথায় ক্যাপ পড়ে দাঁড়িয়ে আছে একজন লোক। তাকে দেখে চেনার কোনো উপায় নেই। লোকটা পকেট থেকে নিজের ফোন বের করে কারো কাছে কল দেয়। ফোন রিসিভ হতে সে গম্ভীর গলায় বলে
-অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়েছে?
ফোনের ওপাশ থেকে জবাব এলো
-স্যার, কাল থেকে বাড়িটার আশেপাশে অপরিচিত মানুষের আনাগোনা দেখছি।
-আমি ঠিকই ধরেছিলাম লোকটা আমাদের ওপর নজর রাখার জন্য লোক লাগাবে। চোখ-কান খোলা রাখো। আমার শ্বশুর মশাইকে ধরতে হলে তার পাঠানো লোকগুলোকেই আগে ধরতে হবে।
-জ্বী স্যার।
বিকেলবেলা বাড়ির সকলের জন্য নাস্তা বানাবো বলে রান্নাঘরে এলাম। আমার শ্বাশুরি মা প্রথমে মানা করলেও আমার অনুরোধে তিনি আর না করতে পারেন নি। নিশা আর আরিয়া এসেছিল আমাকে সাহায্য করতে কিন্তু আমি ওদেরকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ঘরে পাঠিয়ে দিলাম। কারন আমার মাথায় এখন দুষ্টু বুদ্ধি ঘুরপাক খাচ্ছে। সুন্দরমতো নাস্তা বানিয়ে ডাইনিং টেবিলে সাজিয়ে সবাইকে ডাক দিলাম। সবাই খেতে বসতেই আহিয়ান বাড়িতে ঢুকলেন। মা তাকে নাস্তা খেয়ে যেতে বললেন আর তিনিও বাধ্য ছেলের মতন খেতে বসলেন। তা দেখে আমি বাঁকা হাসি দিলাম।
আহিয়ান কফির মগটা হাতে নিয়ে চুমুক দিতেই থু থু আওয়াজ করতে লাগলেন।
-এটা কি কফি নাকি লবণের শরবত?
চোখ-মুখ কুচকে কথাটা বলতেই আমি মায়ের উদ্দেশ্যে বললাম
-দেখেছেন মা, আমাদের একটু ঝগড়া হয়েছে বলে আপনার ছেলে আমার বানানো খাবারকে খারাপ বলছে।( কাঁদো কাঁদো ফেস করে)
-আহিয়ান, বউমা এত কষ্ট করে রান্না করল আর তুই ওকে এভাবে বলছিস। আর কীসের লবণের কথা বলছিস তুই? কফিতে লবণ আসবে কোথা থেকে? আমরাও তো কফি খেলাম।
-মা, এই ক…( বলতে না দিয়ে)
-আহিয়ান চুপ খরে খাও। আর কোনো কথা না।
মায়ের কথার ওপর তিনি আর কিছু বললেন না। কফি মগে একটু পরপর চুমুক দিচ্ছেন। আমি ওনার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে আছি আর আহিয়ান আমার দিকে ঘরে চল খাইয়া ফালামু লুক নিয়ে তাকিয়ে আছেন। আমি মনে মনে হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছি। অন্যদিকে আহিয়ানের অবস্থা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি।
আহিয়ান আর না পেরে কাজ আছে বলে দ্রুত উঠে চলে গেলেন। আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলাম। এবার বুঝবে আমাকে বিয়ে করার সাধ।
আহিয়ান ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। তার মুখের নোনতা ভাবটা যাচ্ছেই না। বিছানায় গিয়ে টান টান হয়ে শুতেই আবার লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে গেল।
-একি পুরো বিছানায় পানি কেন?
আহিয়ান বুঝলো এটা ঈশারই কাজ। রাগে ফোঁস ফোঁস করতে লাগল সে।
আমি ভয়ে আর ঘরে গেলাম না। সোজা নিশার ঘরে চলে এলাম। দেখলাম নিশা আর আরিয়া বসে বসে গল্প করছে। আমিও ওদের সাথে যোগ দিলাম। আজকের সব ঘটনা ওদের বললাম। আমার কথা শুনে ওরা দুজনেই হো হো করে হেসে উঠল।
রাতের বেলা খাওয়ার পর্ব শেষ করে আহিয়ানের ঘরের সামনে পায়চারি করছি। ভেবেছিলাম আজ আর এই ঘরে আসব না। নিশা অথবা আরিয়ার সাথে থাকবো। কিন্তু ওরা দুজনেই আমাকে আহিয়ানের সাথে ঝগড়া মিটিয়ে নিতে বলে ঘর থেকে বের করে দিলো।
অসহায়ের মতো ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ঘরে ঢুকলেই আমার উপগ দিয়ে টর্নেডো বয়ে যাবে। কোনো উপায় না পেয়ে সাহস করে ঘরের ভেতর ঢুকেই পড়লাম।দেখলাম আহিয়ান গম্ভীর মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। তাকে দেখেই আমার কলিজার পানি শুকিয়ে গেলো।
চলবে?