এক_ফালি_রোদ
৩৬তম_পর্ব
হুট করেই একটা ফাইল টুপ করে নিচে পড়ে যায়। ফাইলটা আগে কখনো আলমারীতে দেখে নি রাইসা। তাই কৌতুহলের মাত্রাটা বেড়ে যেয়। ফাইলটা খুলে দেখলো কিছু মেডিকেল রিপোর্ট। রিপোর্ট গুলো উলটে পালটে যা দেখলো তাতে এক মূহুর্তের জন্য মাথা ঘুরে আসলো তার। রিপোর্টে স্পষ্ট লেখা রয়েছে মি. আবরার সিকদার। রাইসার কৌতুহলটা আরোও বেড়ে গেলো৷ রিপোর্টটি আরোও দেড় বছর পুরোনো। রিপোর্টে আবরারের বিভিন্ন ইঞ্জুরির কথা বলা রয়েছে। দেড় বছর আগে আবরার এক্সিডেন্ট করেছিলো। আশ্চর্যের ব্যাপার এই রিপোর্ট এর ডেটটির সাথে তার এক্সিডেন্টের ডেট ও বেশ মিলে গেছে। এবং হাসপাতালটিও ব্যাতিক্রম নয়। রাইসা একেরপর এক রিপোর্টের পাতা উল্টাতে লাগলো। হুট করে একটা পাতায় এসে থমকে গেলো রাইসা। পাতাটির শুরুটি “semen analysis” নামক একটি পরীক্ষার নাম লেখা। এবং রেজাল্টের বরাবর “No spermatozoa seen” লেখা। রাইসার বুকে টিপটিপ করতে লাগলো। মোবাইলটা সে হাতে নিলো, google খুলে রিপোর্টের বাক্যটি লিখতেই যা তার সামনে আসলো তার জন্য মোটেই তৈরি ছিলো না রাইসা। আবরার কখনো বাবা হতে পারবে না। এতো বড় সত্যটা আবরার তার কাছে অকপটেই লুকিয়ে গেছে। তার কাছে কিছুদি আগে ঘটে যাওয়া দৃশ্যগুলো ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে লাগলো। আবরারের বাচ্চার নাম শুনলেই ক্ষেপে যাওয়া, ব্যাপারটাকে এড়িয়ে যায়াটা আর রাইসার কাছে স্পষ্ট। মনে মনে একটা আক্ষেপের হাতছানি পেলো রাইসা। এতোবড় সত্যিটা এভাবে না লুকাতে পারতো আবরার। সে তাকে এই সত্যিটা এতোদিন কেনো বললো না! রাইসা অনুভব করলো তার গাল ভিজে আসছে। হঠাৎ করে একটা ধাক্কা খেলো সে। যার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলো না রাইসা। স্বামীর অক্ষমতার কথা ভেবে মস্তিস্কের হাইপোথ্যালামাসের বিভিন্ন অনুভূতির উদয় হলো। অনুভূতি গুলো রাগ, কষ্টের, আক্ষেপের, অভিমানের। অভিমানটি কার উপর ঠিক বুঝতে পারছে না রাইসা, উপরের স্রষ্টার উপর নাই আবরারের উপর। অবশ্য এখানে আবরারের দোষ নেই। আমাদের পুরুষ তাদের পুরুষত্বের উপর বেশ অভিমান করে থাকে, সেখানে আবরারের মতো সুঠাম দেহীর পুরুষ যখন নিজের অক্ষমতার কথা জানতে পারলো তখন তার মানসিক অবস্থাটা ঠিক কেমন হলো? তবুও রাইসার রাগ হচ্ছে। রাইসার ওই রাগের কারণটা বুঝতে পারছে না। এতোবড় ধাক্কা খেলে যে কেউ ভেঙ্গে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। রাইসাও সাধারণ মানুষ, তার ভেঙ্গে পড়াটা অস্বাভাবিক নয়। পাগুলো অসার হয়ে আসছে, মাথাটা ভনভন করছে। রাইসা কাঁপা হাতে কাপড়গুলো তুলে রাখলো, রিপোর্টটা হাতে নিয়ে বিছানায় ধপ করে বসে পড়লো। না বসলেও ভালো লাগছে না, শুতে পাড়লে হয়তো ভালো লাগতো। রিপোর্টটা সাইড টেবিলে রেখে গা এলিয়ে দিলো বিছানায়। তার মনে হচ্ছে সে তলিয়ে যাচ্ছে। গভীর অন্ধকারে ঢুবে যাচ্ছে। হাত পা নাড়ানোর শক্তিটুকু নেই তার। চোখটা বন্ধ করে ফেললো রাইসা। ঢুবে গেলো অতল ঘুমের সাগরে_____________
গাড়িতে পাশাপাশি বসে রয়েছে অয়ন এবং প্রাপ্তি। উবার ভাড়া করেছে অয়ন। গাড়িটা ঢাকার বাইরের দিকে যাচ্ছে। গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলো প্রাপ্তি। ঢাকা থেকে বের হলে ধামরাই। ধামরাই অনেকটা গ্রামের মতো। বেশ ঠান্ডা বাতাস গায়ে লাগছে প্রাপ্তির। মনটা আরোও স্বচ্ছ হয়ে উঠলো। গাড়ির এসিটা বন্ধ, কাঁচটা নামানো। একটা গ্রামের কাছে গাড়িটা থামলো। অয়নের দিকে তাকাতেই সে মুচকি হেসে বললো,
– চলে এসেছি। নামো।
প্রাপ্তি অয়নের পিছু পিছু নিচে থামলো প্রাপ্তি। গ্রামটি ধামরাই থেকে অনেক ভেতরে। অয়ন প্রাপ্তিকে বললো,
– আইল ধরে যেতে হবে, শাড়ি সামলে নিও।
প্রাপ্তি মাথা নাড়ালো। তারপর ধানের জমির আইল ধরে অয়নের হাত ধরে একটি বাড়ির কাছে এসে দাঁড়লো সে। সাদা শাড়ির নিচে কাঁদামাটি ভরে গেছে। তবুও আফসোস নেই প্রাপ্তির। কারণ এই প্রথম অয়িন তাকে কোথাও নিয়ে এসেছে। যে বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়েছে, বাড়িটি দোতালা চালের বাড়ি। প্রাপ্তির মুখের প্রশ্নের ঝলক দেখে অয়ন ধীর গলায় বলে,
– এটা আমাদের ফার্মহাউজের মতো। এখানে বাবার মাছের খামার গুলো আছে। আশেপাশের সব জমিগুলো বাবার। প্রায়ই আমরা আগে পিকনিক করতে আসতাম। আজ একটা বিশেষ দিন তাই তোমাকে এখানে নিয়ে আসলাম।
অয়ন তার সব প্রশ্নের একেবারেই দিয়ে দিলো। প্রাপ্তিকে নিয়ে বাড়িটি ভেতরে গেলো প্রাপ্তি। বেশ সুন্দর বাড়ির রুম গুলো৷ পুরো শহরের ধাছেই বাড়িটি তৈরি শুধু বাহিরের থেকে গ্রাম্য বাড়ির ধাছ। প্রাপ্তিকে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো বাড়িটি। অয়নের দিকে মুচকি হাসি দিয়ে বললো সে,
– এটাই কি আপনার সারপ্রাইজ
– উহু, ছাদে অপেক্ষা করছে। চলো
– যাওয়া যাবে?
– হু, পেছনে সিড়ি আছে।
অয়নের হাত ধরে আসতে আসতে ছাদে গেলো প্রাপ্তি। ছাদে গিয়ে যা দেখলো তাতে যেনো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলো না প্রাপ্তি। ছাদটি………..
চলবে
[পরবর্তী পর্ব আগামীকাল তারাবীর পর ইনশাআল্লাহ পোস্ট করবো। দয়া করে কার্টেসি ব্যাতীত কপি করবেন না ]
মুশফিকা রহমান মৈথি