অন্ধকার_পল্লী,Part:১৬,১৭,১৮

অন্ধকার_পল্লী,Part:১৬,১৭,১৮
Tabassum_Riana
Part:১৬

পুলিশ কমিশনার ডিজিআই আরো কিছু পুলিশ কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে মিটিং চলছে আফিনের।বিষয় হলো অবনীকে ফিরিয়ে আনা।আফিন দুহাত মুঠ করে সেটার ওপর থুতনি রেখে বসে আছে।চোখজোড়া বড্ড লাল হয়ে আছে ওর।সবাই কথা বলছে ও চুপচাপ শুনছে।হঠাৎ কমিশনারের কথায় চোখ তুলে তাকালো আফিন।দেখো আফিন অবনীকে মন্ত্রীর ছেলে মামুন কিডন্যাপ করেছে।ঐখানে অবনীকে আনতে গেলে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। বলেই থেমে গেলেন কমিশনার।আফিন রাগী চোখে তাকালো কমিশনারের দিকে।কি বলতে চান?আপনারা কি চান না আমার অবনী ফিরে আসুক?কি আপনারা চান না অবনীর মতো আর ও হাজার মেয়ের জীবন ধ্বংস হওয়া থেকে বেঁচে যাক?আপনাদের কোন কথাই মানবোনা আমি।আমার অবনীকে আমি চাই এক্ষুনি চাই এন্ড দ্যাটস ফাইনাল।চিৎকার করে কথা গুলো বলছিলো আফিন।
আফিন তোমার মানসিক অবস্থা বুঝতে পারছি।জানি তুমি কেমন বোধ করছো?কিন্তু কমিশনার স্যার ঠিক বলেছেন।ঐখানে এভাবে গেলে অনেক প্রবলেম হবে।বুঝার চেষ্টা করো।বলে উঠলেন ডিজিআই।আফিন ওনাদের দিকে তাকালো।ওরা যদি আমাদের না চিনে তাহলে তো কোন সমস্যা নেই।গম্ভীর গলায় বলল আফিন।নেই তবে কি করতে চাইছো?টেবিলের সাথে ভুড়িটাকে ঠেঁকিয়ে টেবিলের ওপর হাত রেখে বলে উঠলেন কমিশনার।আফিনের ঠোঁটের কোনায় শয়তানি হাসি ফুঁটে উঠলো।
,
,
,
ঐ রুপা খালা!! রুপা খালা!!!চেঁচাতে চেঁচাতে জামিলা রুপা খালার রুমে এলো।রুপা এ পল্লীর সর্দারনী।ঠোঁটে লাল লিপস্টিক লাগিয়ে গালে হালকা পাউডার বুলিয়ে নিলো রুপা।আজ একজন মালদার পার্টিকে আনন্দ দিতে হবে তাকে পঞ্চাশ হাজার টাকার বিনিময়ে।শাড়ীর আঁচল টাকে কাঁধের ওপর ফেলতেই জামিলার চিৎকার
শুনতে পেল রুপা।
,
,
,
,
কি হইছে এতো চিল্লাছ ক্যা?পান মুখে পুখে পুরে দিয়ে বলল রুপা খালা।এক ব্যাডা আইছে ব্রিফকেজ লইয়া। মালদার পার্টি মনে অইলো।আপনেরে বুলাইতেছে।বলেই দম নিলো জামিলা।রুপার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুঁটে উঠলো।আইতেছি বলেই চুলটাকে আবার আঁছড়ে নিয়ে ঠোঁটে আরেকটু লাল লিপস্টিকের পরশ বুলিয়ে নিলো রুপা।জামিলার দিকে একটু হেসে বেরিয়ে গেলো রুপা।তার কক্ষে একজন কালো কোট ধারী লোক বসে আছে।গালে ঘন কালো চাপ দাড়ি,চোখে সানগ্লাস।ভীষন হ্যান্ডসাম লোকটা।রুপা যেন একদফায় তার প্রেমেই পড়ে গেলো।শাড়ীর আচল একটু সরিয়ে লোকটার সামনে বসলো।হাতের একটা আঙ্গুল দিয়ে কিছু চুল প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে কথা বলল রুপা।কি চৌধুরী সাহেব কইছিলেন না রাতে আইবেন।অহন আইলেন যে?ঠোঁটে হাসি ফুটালো রুপা।আ’ম সরি আমি চৌধুরী সাহেব নই।আমি আফিন খান।বলে উঠলো রুপার সামনে বসা আফিন।রুপা কেমন যেন অবাক হয়ে আফিনকে দেখছে।আপনের লগে তো আমার কতা অয় নাই।বলে উঠলো রুপা।আমি জানি কিন্তু একটা কাজে এসেছি।বলে উঠলো আফিন।কি কামে আইছেন? মুখে খানিকটা বিরক্তির ছাপ ফুঁটিয়ে বলল রুপা।আমি একটা নতুন মেয়ে চাই একবারেই ফ্রেশ।বুঝছেন তো?একবারেই ফ্রেশ যাকে এখনো।কেউ স্পর্শ করে নি।বলে উঠলো আফিন।রুপা জামিলার দিকে একবার তাকিয়ে আফিনের দিকে তাকালো।নেই বলে উঠলো রুপা।আফিনের ভীষন রাগ হলে ও কিছুটা সামলে নিলো নিজেকে।২লাখ টাকা দিবো বলে উঠলো আফিন।
,
,
,
আরে কইলাম তো নাই।টাহার কতা কইলে কি ফেরেশ মাইয়া জন্মাইবো?যান আপনি যান।এহানে আপনের লাইগা ফেরেশ মাইয়া নাই।চল জামিলা চল।জামিলার দিকে তাকিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল রুপা।
,
,
,
,
৬লাখ টাকা দিবো।বলে উঠলো আফিন।৬লাখ টাকার কথা শুনে আর নিজেকে আটকাতে পারলোনা রুপা।জামিলা কে পাঠিয়ে দিলো অবনীকে সাজিয়ে দিতে।আফিমের সামনে রুপা বসে পড়লো।আসলে একজন আছে। একদম নতুন।যা করবেন একটু ধীরে সুস্থে।বলে উঠলো রুপা।মাথা ঝাঁকালো আফিন।কিছুক্ষন পর জামিলা এলো।এনারে লইয়া আহেন খালা।বলে উঠলো জামিলা।রুপা জামিলার দিকে গেল আহেন!!!!! আফিনের দিকে না তাকিয়ে বলল রুপা।জি!!আমাকে বলছেন?বলে উঠলো আফিন।জে আপনেরেই কইছি আহেন।বলেই দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলো রুপা।জানালা দিয়ে তাকালো আফিন। বখাটের সাজে আইজি কমিশমার আর অন্যান্য পুলিশ কর্মচারীরা হাত দুলিয়ে ইশারা করে জানালো যে মামুনরা এখনো আসেনি সব ঠিক আছে।
আফিন হালকা হেসে রুপার পিছু যেতে লাগলো।আশেপাশে বেশ কিছু রুম পড়লো।কিছু মেয়ে আফিনের হাত ধরে টানলো।আয় তোকে খুব আনন্দ দেবো এসব বলে।আবার কিছু রুমের দরজা বন্ধ।ভিতর থেকে শব্দ আসছে।আফিনকে নিয়ে একটা রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো রুপা।দরজাটা একটু চাপানো।যান ভিতরে।বলে উঠলো রুপা।আফিন চোখ দিয়ে ইশারা করলো রুপাকে চলে যেতে।রুপা বুঝতে পারলো এখন প্রাইভেসি দরকার।তাই হালকা হেসে বেরিয়ে গেলো রুপা।
,
,
,
আফিন ভিতরে ঢুকলো। অবনী লাল একটা লেহেঙ্গা পরে বসে আছে।সারা শরীরে দাগ হয়ে আছে আর ফোসকা পড়ে গেছে।হালকা সাজ দেয়া হয়েছে অবনীকে।অবনী বুঝতে পারলো একজন পুরুষের উপস্থিতি তবুও তাকালোনা সে দিকে।চোখ বুজে আছে অবনী।
,
,
,
,
অবনীর পাশে এসে দাঁড়ালো আফিন।নাম কি তোমার? বলে উঠলো আফিন।আমাকে প্লিজ ছেড়ে দিন।বলে উঠলো অবনী।নাম জিজ্ঞেস করলাম এখানে ছাড়াছাড়ির কথা কেন আসছে?আর তাছাড়া তোমার জন্য ঐ রুপাকে আমি ৬লাখ টাকা দিয়েছি।সো আজ যা বলবো তোমাকে তা করতে হবে।বলে উঠলো আফিন।না না প্লিজ এমন করবেন না।আফিন আফিন প্লিজ বাঁচাও আমাকে।এই নরপশুদের থেকে বাঁচাও আমাকে।চেঁচাতে লাগলো অবনী।আফিন অবনীর মুখ চেপে ধরলো।শশশ এতো চিল্লাও কেন? কি মনে করবে সবাই?এতোক্ষন হাতপা ঝাপ্টাচ্ছিলো অবনী।এখন থেমে গেলো।আফিন অবনীর মুখ থেকে হাত সরালো।আফিন কে?প্রশ্ন করলো আফিন।আফিনের নামে অবনী চোখ জোড়া ভিজে গেলো।এটা আমার হৃদকম্পনের নাম।আমার বাঁচার কারনের নাম আফিন।তাকে ভালবাসি আমি।ঐ নরপশুদের কারনে আমি তার থেকে দূরে। প্লিজ আমাকে নষ্ট করবেননা।কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো অবনী।অবনী ভালবাসে আফিনকে?ভাবতেই মন প্রান জুড়িয়ে গেলো আফিনের।নিজের চাপ দাড়ি আর সানগ্লাস খুলে নিলো আফিন।নিচে তাকিয়ে আছে অবনী।একটু তাকাও আমার দিকে।বলে উঠলো আফিন।না পারবোনা।আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ।বলে উঠলো অবনী।না তাকালে কেমন করে ছাড়বো?বলে উঠলো আফিন।অবনী ওপরে তাকিয়ে টাস্কি খেলো।এ সে কাকে দেখছে?এ যে ওরই আফিন।
,
,
,
আ আপনি?বলে উঠল অবনী।আফিন মাথা ঝাঁকিয়ে অবনীকে জড়িয়ে ধরতে গেলে সরে গেলো অবনী।নাহ প্লিজ ছুঁবেননা আমাকে।বলে উঠলো অবনী।
,
,
,
,
কেন অবনী?এমন কেন করছো?আমি আফিন।তোমার আফিন।আমার ওপর এতোদিন অনেক অত্যাচার হয়েছে।আমি নোংরা হয়ে গেছি।প্লিজ ছোঁবেননা।কাঁদতে কাঁদতে বলল অবনী।আফিনের আর সহ্য হলোনা।জোরে চড় বসিয়ে দিলো অবনীর গালে।কে বলল তুমি নোংরা হয়ে গেছো?আমি প্রথম যেদিন আমার জলপরীকে যেমন দেখেছিলাম ঠিক তেমন আছো তুমি।আমার জীবন আলো তুমি,আমার গন্তব্য তুমি।ভালোবাসি তোমায়,অনেক ভালোবাসি।তোমাকে চাই আমি।বলতে লাগলো আফিন।আফিনের কথা শুনে অবনী নিজেকে ঠিক রাখতে পারলোনা।কাঁদতে লাগলো।অাফিন বুকে জড়িয়ে নিলো তার জলপরীকে।

#অন্ধকার_পল্লী
#Tabassum_Riana
Part:১৭
,
,
,
,
অন্ধকার পল্লীতে বেশ কিছু বখাটে যুবকের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে।নতুন কিছু যোগ হয়েছে মামুন ও তার সঙ্গীদের সাথে।ওরা এই এলাকারই অধিবাসী।মামুন মাতাল অবস্থায় ওদের সাথে গল্প করছে।মামুনের বাকি লোকেরা ঘড়ি দেখছে আর আফিনের আসার অপেক্ষায় আছে।তো মামুন ভাই আপনি তো ঢাকায় থাকেন তো এখানে কেন আইলেন?নতুন বখাটেদের একজন মামুনকে জিজ্ঞেস করলো।এখানে অনেক জোস একটা মাল নিয়া আসছি।অবনী নাম মাইয়াডার।অবনীর সম্পর্কে সব কিছু নতুন বখাটেদের বলল মামুন নেশার ঘোরে।নতুন মাইয়া আনার প্ল্যান আছে নি?প্রশ্ন করে উঠলো নতুন বখাটেদের একজন।হ তিনজন আনছি।তাগোরে পতিতা পল্লীত বেঁইচা দিছি। ম্যালা ইনকাম হইতেছে।ঐ অবনীরে কিছু করিনাই অখনো।হের আশিক যদি আহে তাইলে টাকা লইয়া আশিকরে মারুম আর অবনীরে বেঁইচা দিমু।বলেই নেশারঘোরে হেসে উঠলো মামুন।ঠিক তখনই অন্য অফিসাররা এসে মামুন আর ওর লোকদের ধরে ফেললো।নতুন বখাটে গুলো তাদের নকল বেশ বদলে নিলো।এতক্ষন যা বলেছিস সব রেকর্ড করে নিলাম।দেখিস কি হাল হয় দাঁতে দাঁত চেপে কমিশনার বলল।এত্তবড় ধোঁকা!!!এত্তবড় ধোঁকা আর কিছু বলতে পারলোনা মামুন।চুপ হয়ে গেলো।মাতালতায় ডুবে গিয়েছে মামুন।আরো কিছু অফিসার গিয়ে রুপা কে ধরে আনলো।আমারে ধরলেন কেন?চেঁচিয়ে উঠলো রুপা।অবনী তোর কাছে থাকার পর ও মিথ্যে বলেছিস।অফিসার নিয়ে যাও এই মহিলাকে।রাগী গলায় বললেন ডিআইজি।কমিশনার ওদের সাথে চলে গেলেন।ডিআইজি অবনী আর কাছে এলেন ওদের নিরাপত্তার সাথে বাহিরে বের করে আনার জন্য।
,
,
,
আফিন চলো।বলে উঠলেন ডিআইজি।কারোর কন্ঠ শুনে অবনীর থেকে সরে এসে পিছনে তাকালো আফিন।আফিন অবনীকে নিয়ে বেরিয়ে আসো।সবাইকে ধরে নিয়েছি আমরা।
,
,
,
,
আফিন হালকা মাথা ঝাঁকিয়ে অবনীকে কোলে তুলে নিলো।আমি হাঁটতে পারবো।বলে উঠলো অবনী।হুম পারবেতো।তোমার কথা শুনেই বুঝতে পারছি তোমার মধ্যে কতোটুকু শক্তি আছে।বলে অবনীকে নিয়ে হাঁটতে লাগলো আফিন।মুচকি অবনী নিচে তাকালো।দুহাতে আফিনের গলা জড়িয়ে আছে অবনী।অাফিনকে একনজরে দেখে যাচ্ছে অবনী।এই দেখার যেন কোন শেষ নেই।অবনীর দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে ইশারা করলো আফিন এভাবে কি দেখা হচ্ছে?
অবনী মাথা নেড়ে মুচকি হেসে নিচে তাকালো।আবার ও আফিনের দিকে তাকালো অবনী।কপাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া আফিনের ঘাম গুলোকে উঁড়না দিয়ে মুছে দিলো অবনী।অবনীর দিকে না তাকিয়ে আফিন একটু হাসলো।অবনী আফিনের গলা জড়িয়ে ওর কাঁধে মাথা এলিয়ে দিলো।অন্ধকার পল্লী থেকে বেরিয়ে এলো আফিন ওর জলপরীকে নিয়ে।অবনীকে গাড়িতে বসিয়ে রহমত সাহেবকে কল দিলো আফিন।
,,,,,,,,,,,,হ্যালো আফিন বাবা আমার মেয়েকে পেয়েছো?ওপাশ থেকে কেঁদে বললেন রহমত সাহেব।
,,,,,,,,,,,জি আঙ্কেল ও আমার সাথে আছে।বলে অবনীর মাথায় হাত রাখলো আফিন।অবনী ও সিটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে গেছে।একয়দিন ওর ওপর কম ধকল যায়নি।
,,,,,,,,,,, আমার মেয়ে কেমন আছে?প্রশ্ন করে উঠলেন রহমত সাহেব।
,,,,,,,,,মোটামুটি সুস্থ আছে।তাও এখানকার আমার পরিচিত হাসপাতালে ওকে এডমিট করবো।আপনরা আসেন।ওকে বাবা আসছি আমি ওর মা অসুস্থ।ফোন রেখে ডিআইজি আর অবনীকে নিয়ে গাজীপুরের একটা পরিচিত হাসপাতালে পৌছে গেলো ওরা।অবনীকে ভর্তি করে দেয়া হয়েছে।
,
,
,
আফিম ওদের এগেইন্স্টে আমি কেস ফাইল করবো।বলে উঠলেন ডিআইজি। আপনি কেস ফাইল করে আর যা ইচ্ছা করেন আমার আগে ওদের গায়ে কেউ টাচ পর্যন্ত করবেনা।ওদের স্পেশালি মামুনকে কিছু স্পেশাল ট্রিটমেন্ট দিতে চাই।এতো দিন ওরা আমার অবনীর সাথে যা করেছে সব গুনে গুনে শোধ করে দিবো।
,
,
,
,
তিনঘন্টার ঘন্টার মধ্যে রহমত সাহেব চলে এলেন।ডিআইজি আর রহমত সাহেবকে অবনীর কাছে রেখে বেরিয়ে গেলো আফিন ঢাকার উদ্দেশ্যে।
ওটি থেকে বের হলেন ডাক্তার রেবেকা জামান।মিঃআফিন খান!!!!!বলে উঠলেন ডাক্তার।রহমত খান দাঁড়ালেন।
ওনি চলে গেছেন।আমি অবনীর বাবা বলে উঠলেন রহমত খান।ওহ।ওনার সাথে চাইলে দেখা করতে পারেন।বেশি কথা বলবেননা।ওনাকে একটু ঠান্ডা পরিবেশে থাকতে হবে।বলেই রহমত সাহেবকে অবনীর কাছে যাওয়ার জন্য।রহমত সাহেব মেয়ের কাছে এসে দাঁড়ালেন।ওনার চোখ জোড়া ভিজে আছে।অবনী শরীরের জায়গায় জায়গায় ব্যান্ডেজ করা।বাপ মেয়ের আবেগঘন সময় কাঁটলো বেশ কিছুক্ষন ধরে।
আআহ আর মাইরেননা স্যার মইরা যামু।চেঁচিয়ে উঠলো মামুনের দলের একজন।আফিন চাবুক দিয়ে ওদের বেধড়ম পিটাচ্ছে।একেকজনের চিৎকার হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে।ওদের শরীরের চামড়া ফেটে রক্ত বেরুচ্ছে আফিন সেই ঘায়ে লবন মরিচ ডলে দিলো।ওদের চিৎকার আরো বেড়ে গেলো।পানি দেন পানি দেন সবগুলা চিৎকার করতে লাগলো।আফিন গরমপানিতে লবন মরিচ মিশিয়ে ওদের গায়ে ঢেলে দিলো।সবাই চিৎকার করছে।বেশকিছুক্ষন পর আবার ও পানি খুঁজছে ওরা।আফিন গরম পানি এনে ফ্লোরে ঢেলে দিলো খা পানি।ভালো করে খা।চারজনে ফ্লোরে পড়ে চাটতে লাগলো।আফিন তখনই মারতে লাগলো ওদের।
,
,
,
মামুন গর্জে উঠলো।জানিস আমি কে?একবার ছুটতে পারি তারপর দেখ তোর কি হাল করি।আমার বাবা যোগাযোগ মন্ত্রী।ছিলো বাট এখন নেই।পুলিশের সামনে যা যা বলেছিলি সব রেকর্ড করে রাষ্ট্রপতিকে পাঠিয়েছি।তোর বাবার মন্ত্রীত্ব খেয়ে দিয়েছি।এখন না সে মন্ত্রী না তুই মন্ত্রীর ছেলে।কথা গুলো বলে আফিন আবার ও ওদের মারতে লাগলো।
আফিন তুমি চলে যাও।অবনীর এখন তোমাকে বেশি দরকার।ওদের ব্যাবস্থা তো আমি করবো।বলে উঠলেন কমিশনার।আফিন ওদের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে টিস্যুতে হাত মুছে বেরিয়ে গেলো।

#অন্ধকার_পল্লী
#Tabassum_Riana
Part:১৮
,
,
,
,
বাবার সাথে কথা বলার সময় অবনীর চোখ জোড়া আফিনকে খুঁজছিলো।আফিনকে খুঁজতে খুঁজতে কিছুক্ষনের মাঝে ঘুমিয়ে পড়ে অবনী।চোখের সামনে নির্যাতনের দৃশ্য গুলো ভেসে বেড়াচ্ছে।খুব ভয় হচ্ছে অবনীর।ওদের অট্টহাসি ওর বুকের ভেতর সব যেন ভেঙ্গে চুরমার করে দিচ্ছে।পুরো শরীর ঘেমে ভিজে যাচ্ছে অবনীর।চিৎকার করতে নিবে ঠিক তখনই কেউ খুব শক্ত করে জাপটে ধরলো অবনীকে।সেই মাতাল করা ঘ্রান,সে পরিচিত মাতাল করা নিশ্বাস যা অবনীর শিউরে উঠার জন্য যথেষ্ট, সেই পরিচিত বুক যেখানে অবনী শান্তি খুঁজে পায়। এতো গুলো পরিচিত অনুভূতি পাওয়ার পর চোখ বুজে রাখতে পারেনি অবনী।চোখ খুললে মনে হচ্ছিলো সেই নরপশুদের মুখ দেখতে পাবে কিন্তু স্পর্শগুলো অবনীকে চোখ খুলতে বাধ্য করলো।পিটপিট করে আধো চোখ খুলে অবনী।ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি ফুঁটে উঠে অবনীর।আফিন ততক্ষনে ওর ঠোঁটজোড়া অবনীর গালে কপালে ঠোঁটে বুলাতে লাগলো।অবনী ঘনঘন নিশ্বাস নিয়ে আফিনের উষ্ণ স্পর্শগুলোকে উপভোগ করছিলো।অাফিন শব্দ করে অবনীর ঠোঁটে দুতিনটে চুমু দিয়ে একটু সরে এলো।অবনী এখনো আফিনের গলা জড়িয়ে আছে দুহাতে।

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,জলপরী!!!চোখ খুলো। মায়াভরা কন্ঠে ডাকলো আফিন।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,খুব কষ্টে চোখ খুলল অবনী।আফিন হালকা হেসে ওর দিকে চেয়ে আছে।অবনী ও একটু হাসলো স্বাধীনতার হাসি দিলো।
,
,
,
,
স্যুপ নিয়ে এলাম।বলেই থেমে গেলেন রহমত সাহেব।অবনীর থেকে সরে এসে সোজা হয়ে দাঁড়ালো আফিন।রহমত সাহেব স্যুপের বাটিটাকে টেবিলের ওপর রেখে মেয়ের কাছে এসে দাঁড়ালো।মামনি এখন কেমন লাগছে?মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন রহমত সাহেব।জি বাবা একটু ভালো একটু অসুস্থ গলায় বলল অবনী।আফসানা কল দিয়েছিলো।তোর মা কথা বলবে তোর সাথে।বলে উঠলেন রহমত সাহেব।কল দাও ওকে।বলে উঠলো অবনী।রহমত সাহেব আফসানার নম্বরে কল দিলো।
,,,,,,,,,,,,,,,,,, হ্যালো বাবা আপি কই?মা কথা বলবে।অপর পাশ থেকে বলল আফসানা।
,,,,,,,,,, হুম ধর।কথাটা বলে অবনীর কানে ফোন রাখলেন রহমত সাহেব।মা আর বোনের সাথে বেশ অনেকক্ষণ কেঁদে কেঁদে কথা বলল অবনী।
আঙ্কেল রাত তো অনেক হচ্ছে।আপনি বাসায় যান।আফসানা আর আন্টি একা বাসায়।ইসলাম সাহেব ছেলের প্রতিশোধ নিতে আন্টি আর আফসানাকে ক্ষতি করার চেষ্টা করবে।একনাগাড়ে কথা গুলো বলে থামলো আফিন।হ্যা বাবা ঠিক বলেছো।অবনীর সাথে কে থাকবে?মেয়ের দিকে তাকিয়ে চিন্তিত কন্ঠে বললেন রহমত সাহেব।
আঙ্কেল ডোন্ট ওয়ারি।আমি আছি।রহমত সাহেবের হাতে হাত রেখে বলল আফিন।
আচ্ছা বাবা তুমি যেহেতু আছো তাহলে আর চিন্তা নাই আমার।কাল আমি আফসানা আর ওর মাকে আনার চেষ্টা করবো।মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলল রহমত সাহেব।
,
,
,
,
মাথা ঝাঁকালো অবনী।আসি!!বলে বেরিয়ে গেলেন রহমত সাহেব।আফিন বাথরুম থেকে পানি এনে রুমাল ভিজিয়ে অবনীর মুখটা মুছে দিলো।পুড়া জায়গা গুলোয় চেপে চেপে মুছে দিয়েছে আফিন।অবনীকে স্যুপ টুকু খাইয়ে দিয়ে নিজেও একটু খেয়ে নিলো আফিন।অবনীর বেডের পাশের টুলে বসে বেশ কিছুক্ষন গল্প করলো আফিন আর অবনী।পুরোটা সময় অবনীর হাত আফিনের দুুইহাতের ভাজে ছিলো।
গল্প শেষে আফিন বলে উঠলো অবনী অনেক রাত হলো ঘুমাও।একা একা ঘুম হবেনা।প্লিজ আপনি ও এখানে এসে শুয়ে পড়ুন।বলে একটু সরে গেলো অবনী।আফিন অবনীর পাশে শুয়ে ওর মাথা টা নিজের বুকে নিয়ে নিলো।পরদিন দুপুরে রহমত সাহেব আমেনা বেগম আফসানা কে নিয়ে এলো হাসপাতালে।মায়ের সাথে বেশকিছুক্ষন আবেগঘন মুহূর্ত কাঁটলো অবনীর।আফসানাও বোনকে ধরে খুব কেঁদেছে।এভাবে ৭দিন চলে গেলো।অবনীকে রিলিজ দেয়া হলো আজ।আফিন থেকে বিদায় নিয়ে ঘরে যাবার জন্য রওনা হলো অবনী আর রহমত সাহেব।বাসার কাছে আসতেই আশেপাশের সবাই অবনীকে ভ্রু কুঁচকে দেখতে লাগলো।
আরে আরে দেখ এ অবনী না?
হ এটাই তো অবনী।হুনছিলাম পতিতা পল্লীত নিয়া গেছিলো।কে জানি কয়জনের লগে রাত কাডাইছে।ছিঃ ছিঃ কতো বেশরম মাইয়া আবার ফিরা আইছে।এই এলাকায় এই অবনী বেশি দিন থাকলে আমগোর মাইয়ারা নষ্ট অইয়া যাইবো।
ছিঃ ছিঃ আশপাশ থেকে এই কথা গুলো অবনীর কান ঝালাপালা করে দিচ্ছিলো।চোখ জোড়া ভিজে আসছে অবনীর।রহমত সাহেব দ্রুত মেয়েকে নিয়ে ভিতরে চলে গেলেন।
,
,
,
,
বাসায় আসার পর থেকে কোন কিছুই ভালো লাগছেনা আফিনের।বুকখানা ভীষন খালি খালি লাগছে।কি যেন চলে গেছে খুব দূরে।ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলো আফিন।ফোন হাতে নিয়ে অবনীর নম্বরে কল দিলো।
ঘরে এসে দৌড়ে রুমে চলে গেলো অবনী।জন্ম থেকে এই এলাকায় একটু একটু করে বড় হয়েছে ওরা দুবোন।সবার ভালাবাসার মাঝেই থেকেছে ওরা।আর আজ খারাপ হয়ে গেলো সবার চোখে।ও কি সত্যি নোংরা হয়ে গেছে?আফিন তো বলছিলো ও এখনো আফিনের জলপরী তাহলে ওরা লেন এমন বলছে?কিছু ভাবতে পারছেনা অবনী।চোখ ফেঁটে কান্না আসতে চাইছে।বারান্দার রেলিং ধরে কাঁদতে লাগলো অবনী।ফোনে কল আসছে সেই কতক্ষন ধরে।চোখ মুছে কানে ফোন রাখলো অবনী।
উফ কি হলো মেয়েটার?ফোন ধরে না কেন?বলে উঠলো আফিন।আবার কল দিতেই ফোন ওয়েটিং অবনীর।পরে আবার কল করতেই অবনীর নম্বর বন্ধ পেলে আফিন।কি হলো ফোন বন্ধ করলো কেন?কিছুটা বিরক্ত হলো আফিন।রহমত সাহেবের নম্বরে কল দিলো আফিন।

,,,,,,,,,,,,,,,, হ্যালো আঙ্কেল বলে উঠলো আফিন

,,,,,,,,,,,,,,,, জি বাবা বলো।অপরপাশ থেকে বললেন রহমত সাহেব।

,,,,,,,,,,,,,,,, অবনী কই?ওকে কল দিচ্ছি। ফোন অফ আসছে।বলে উঠলো আফিন।

,,,,,,,,,,,,,,,,ও ঘরে আসার পর রুম থেকে আর বের হয়নি।ঘুমোচ্ছে মনে হয়।বলে উঠলেন রহমত সাহেব

,,,,,,,,,,,,,,,, ওহ।আচ্ছা ঠিক আছে আঙ্কেল রাখি তাহলে।আল্লাহ হাফেজ।বলে উঠলো অাফিন।ফোন কেঁটে বিছানার ওপর রেখে দিলো।সেদিন আর কল দিয়ে অবনীকে পেলো না আফিন।
সেদিন সারারাত আর ঘুমোতে পারলোনা আফিন।পরদিন অফিস থেকে ছুটে গেলো অবনীর কাছে।কাল থেকে এখন ও পর্যন্ত রুম থেকে বের হয়নি অবনী।খালি খাবারের সময় রুমে বসে খেয়েছে।আফিন অবনীর দরজা অনেক নক করলো।ভিতর থেকে অবনী বলছিলো প্লিজ আফিন চলে যান একটু একা থাকতে দিন।আফিন আর কিছু বলতে পারলোনা।রহমত সাহেবকে বলে চলে গেলো।এভাবে অনেক দিন এসেছে কিন্তু অবনীর সাথে কথা হয়নি ওর।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here