অন্ধকার_পল্লী,Part:১০,১১,১২
Tabassum_Riana
Part:১০
অবনী আফিনের বাসায় আছে একদিন হয়ে গেলো।পরদিন রাতে আফিনের ফ্লাইট। আফিন আর অবনী দোলনায় বসে ফুল গাছ গুলো দেখছে।দুজনের হাতে ধোঁয়া উঠা দু মগ কফি।দুজনের মুখে কোন কথা নেই।দুজনেই কোন এক গভীর চিন্তায় মগ্ন।আফিন কফি মগে চুমুক দিয়ে অবনীর দিকে তাকালো।জ্যোৎস্না আলো টা যেন আরো সুন্দর হয়ে উঠেছে অবনীর সংস্পর্শে।পিঠের এলোমেলো লম্বা চুল গুলো উড়ছে।রাতের স্নিগ্ধ আলোয় অবনী ভীষন মায়াবী লাগছে।এতো মায়া কই পায় মেয়েটা ভেবে পায়না আফিন।দোলানায় ওদের মাঝে অবনীর একটা হাত রাখা।আফিন খুব ধীরে অবনীর হাতের ওপর হাত রাখলো।গরম হাতের ছোয়া পেয়ে অবনী হাত জোড়ার দিকে তাকিয়ে আফিনের দিকে তাকালো।আফিন অবনী মায়ায় আবার নতুন করে জড়িয়ে যাচ্ছে।অবনীর হাতটা আরো শক্ত করে ধরলো আফিন।আকাশের তারার দিকে চেয়ে আফিন মুখ খুলল
কেন বাতাস হয়ে এসে,
আমায় স্পর্শ করে যাও?
কেন ভোরবেলায় সূর্যের আলো হয়ে,
আমার ঘুম ভাঙাও?
কোন মায়ায় কিসের টানে,
দেহমনের শিহরণ জাগাও?
আমারও তো তোমায় ছুঁতে ইচ্ছে করে,
তোমার মোহ ধরানো গন্ধে নেশাগ্রস্ত হতে ইচ্ছে করে, ইচ্ছে করে তোমার ঐ লাল টুকটুকে ঠোঁট জোড়ায় ডুবে যেতে!!
তোমায় যদি জিজ্ঞেস করি,
আমার হাতে হাত রেখে বন্ধুর পথে হাঁটবে?
শ্রাবনের শেষ বিকেলে………
অবনী আফিনের দিকে মুগ্ধ চোখে চেয়ে আছে।লোকটা ওকে আর কতো মাতাল করবে তার নেশায়?ভেবে পায়না অবনী।বাহ খুব ভালো কবিতা পারেন আপনি।আফিনের দিকে চেয়ে বলল অবনী।পছন্দ হয়েছে?হালকা হাসলো আফিন।মাথা ঝাঁকালো অবনী।আফিন অবনীর গালে আলতো করে আঙ্গুল ছুঁইয়ে দিলো।অবনী চোখ বুজে আফিনের ছোঁয়া উপভোগ করছে।আফিন অবনীর দিকে একটু এগিয়ে এসে অবনীর গালে নাক ঠেঁকালো।অাফিনের গরম নিশ্বাস গুলো অবনীর হৃদয়কে গভীর ভাবে স্পর্শ করছে।সখী তোর নেশায় মাতাল আমি।আমার হৃদয়ের গহীনে শুধু যে তোরই বসবাস।আমায় আগলে নেয় তোর হৃদয়ের মাঝে।নেশা ধরানো কন্ঠে কথা গুলো বলে অবনীর গালে ঠোঁট ছোঁয়ালো আফিন।
,
,
,
,
আফিনের কথা গুলো অবনীর বুকে তীরের মতো বিঁধছে।অবনী আফিনের দিকে ফিরে তৎখনাৎ আফিনের বাহু ডোরে নিজেকে বন্দী করে নিলো।আফিন ও আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে তার জলপরীকে।বেশ কিছুক্ষন পর অবনী সরে এলো আফিন থেকে।অন্য দিকে মাথা ঘুরিয়ে নিয়ে চোখের পানি গুলো মুছে নিলো অবনী।আফিন কফি মগ দুটো হাতে তুলে নিলো।অবনীর দিকে একনজর তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।অবনীকে দেখতে পাচ্ছেনা ও।নিজের বুকটাও যে ফেঁটে চৌচির হচ্ছে।মেয়েটা চোখ মুছে ও কাঁদছে মুখ লুকিয়ে।নিজেকে শক্ত করলো আফিন।অবনী!!!রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ো।অনেক রাত হয়েছে।বলে উঠলো আফিন।অবনী কি বলবে?কথা বলার শক্তিটা ও বেঁচে নেই ওর মাঝে।ইচ্ছে করছে মানুষটাকে পরপারে পাড়ি দিতে।মানুষটার মাঝে হারিয়ে যেতে।কিভাবে থাকবে মানুষটাকে ছাড়া?মানুষটা যে ওর প্রত্যেকটা নিশ্বাসের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে।হুহু করে কাঁদতে থাকে অবনী। আফিন টি টেবিলের ওপর মগ দুটো রেখে অবনীকে কোলে তুলে নিলো।অবনী দুহাতে মুখ ঢেকে রেখেছে।আফিন অবনীকে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে ঘরের ভিতর ঢুকে গেলো।অবনীকে খাটে শুইয়ে দিয়ে ওর কপালে চুমো খেয়ে সরে আসতেই আফিনের গেন্জীর কলার টেনে ধরলো অবনী।প্লিজ যাবেননা!!!এখানে থাকুন।কাঁদতে কাঁদতে বলছিলো অবনী।অবনীর কান্নায় না করতে পারলো না আফিন।অবনীর পাশে শুয়ে পড়লো আফিন।অবনী আফিনের বুকে মাথা রেখে আফিনের হাত ধরে রাখলো।প্লিজ হাতটা ছাড়বেননা।চলে যাবেননা একা ফেলে।কাঁদতে কাঁদতে বলছিলো অবনী।আমি আছি অবনী ঘুমাও।অবনীকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলল আফিন।
,
,
,
,
আফিনের বুকেই রাতটা পাড় করলো অবনী।পরদিন সকালে ঘুম ভেঙ্গে গেলো অবনীর।আফিনকে রুমে না পেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাঁড়ালো অবনী।ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে নিচে নেমে এলো অবনী।আফিন পাকঘরে পরোটার কাই করার চেষ্টা করছে।মিনিটে মিনিটে পানি ঢালছে ময়দায় আফিন।অবনী পাকঘরের কাছে এসে হালকা গলা পরিষ্কার করে নিলো।কি করতে চাচ্ছেন আপনি জানতে পারি?হাসি থামিয়ে প্রশ্ন করলো অবনী।পরোটা বানাচ্ছি দেখতে পাচ্ছোনা?আমার পরোটা খুব মজা হয়।খেলে আঙ্গুল চাঁটতে থাকবা।পরোটার কাই মাখাতে মাখাতে বলল আফিন।হুম তা তো দেখতেই পাচ্ছি।সরে আসুন।পাকঘরে ঢুকে আফিনকে বের করে বলল অবনী।আফিন পাকঘরের সামনে দাঁড়িয়ে অবনীকে দেখছে।দেখাতেই যেন তৃষ্ণা মিটছে না আফিনের।আলতো পায়ে অবনীর পাশে এসে দাঁড়ালো আফিন।অবনী আফিনের দিকে একটু হেসে পরোটা বানানোয় মন দিলো।আফিন বেশ খানিকটা নিচু হয়ে অবনীর গলায় মুখ গুঁজে দিলো।ঠোঁট ছোঁয়াতে লাগলো অবনীর গলায় কাঁধে।অবনীর হাত চলতে চাইছেনা।আফিনের একটা হাত অবনী ময়দা মাখানো হাতের ওপর এসে থামলো।অবনীর আঙ্গুলের মাঝে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিলো আফিন।পরোটা বা ব বানাত তে হব বে ত তো?কাঁপা গলায় বলল অবনী।আফিন সরে এসে অবনীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকলো।অবনীর এতোক্ষন নিশ্বাস আটকে আসছিলো।এখন কিছুটা নিশ্বাস নিতে পারছে।আধ ঘন্টার মাঝে নাস্তা বানিয়ে নিলো অবনী।দুজনের জন্য অমলেট বানিয়ে খাবার গুলো টেবিলে রাখলো অবনী।নাস্তা সেড়ে আফিন ফোনে কথা বলায় ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।অবনী রুমে চলে গেলো।দুপুরের খাবার সেড়ে আফিন অবনীর রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো।
,
,
,
,
অবনী শুয়ে ছিলো।আফিনকে আসতে দেখে উঠে বসলো অবনী।আসুন মুচকি হেসে বলল অবনী।অাফিন রুমে ঢুকলো না।রেডি হয়ে নাও অবনী।বলে উঠলো আফিন।কেন?প্রশ্ন করলো অবনী।বের হবো তোমাকে নিয়ে। আমার ফ্লাইট কাল রাতে।আজকেরটা ক্যান্সেল।আফিনের কথায় সাড়া মুখ জুড়ে মনোমুগ্ধকর হাসি ফুঁটে উঠলো অবনীর।আফিন সরে এসে ওর রুমে চলে গেলো।অবনী শাড়ী নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।কালো একটি কাতান শাড়ীতে নিজেকে জড়িয়ে নিলো অবনী।কপালে কালো ছোট্ট টিপ,চোখে কাজল,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক লাগিয়ে নিলো অবনী।চুলগুলো কে পিঠের ওপর ছেড়ে দিয়ে বেরিয়ে এলো রুম থেকে।অবনীকে মুগ্ধ চোখে দেখছে আফিন।কালো শাড়ীটা এতোটা মানাবে ওর জলপরীকে কে জানতো?আফিনের পাশে এসে দাঁড়ালো অবনী।মুখে সে স্নিগ্ধ হাসিটা লেগেই আছে অবনীর।আফিন অবনীর দিকে একনজর তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল এভাবে হেসে আমায় পাগল করা ছাড়া কোন কাজ খুঁজে পাওনা?কখন রাস্তা ঘাটে জড়িয়ে ধরে কিস করে দেই পাগল হয়ে।পরে আমাকে বেশরম বলোনা।আর আমি কিন্তু সরি ও বলবো না বুঝো।একনাগাড়ে কথা গুলো বলে সামনে হাঁটতে লাগলো আফিন।মার্কেটে এলো আফিন অবনীকে নিয়ে।বেশ কিছু শাড়ী কিনে দিলো অবনীকে।আর আফসানার জন্য স্যালোয়ার কামিজ কিনে নিলো।অবনী তো কিছুতেই রাজিনা।কিন্তু আফিন ঘাড় ত্যাড়া। সে কিনে দিবেই।শপিং সেড়ে অবনীকে নিয়ে হালকা খাওয়া দাওয়া করে বাসার দিকে রওনা হলো আফিন।
,
,
,
,
অবনী বিছানায় বসে আফিনের সাথে গল্প করছিলো।১০টায় রুম থেকে বেরিয়ে গেছে আফিন।কোন সাড়া শব্দ নেই ওর।অবনী কিছুক্ষন অপেক্ষা করে খাট থেকে নেমে দরজার সামনে আসতেই একটা শপিং ব্যাগ পেলো নিচে।ব্যাগটায় কিছু লেখা আছে।ব্যাগটাকে হাতে তুলে নিলো।ব্যাগটায় লেখা”ভিতরে যা পাবে, তা পরে জলদি নিচে আসো।
চলবে
#অন্ধকার_পল্লী
#Tabassum_Riana
Part:১১
,
,
,
,
ম্যাচ জ্বালিয়ে মোমবাতি গুলো ধরালো আফিন।অন্ধকার রুমে মোমবাতি গুলো বাতাসের তালে তালে হেলে দুলে নৃত্য করছে।পুরো পরিবেশ টা রোমাঞ্চকর হয়ে উঠেছে।মোমবাতির আলোটাই আফিনে পাওয়া না পাওয়ার কথা গুলো বলে দিচ্ছে।টেবিলে খাবার গুলো সার্ভ করে গিটারটাকে স্ট্যান্ডে দাঁড় করিয়ে রেখে দিলো আফিন।আজ ওর জলপরীর জন্য কিছু স্পেশাল রেডি করে রেখেছে আফিন।হঠাৎ জানালা ভেদ করে দমকা বাতাসে মোমবাতি গুলো নিভে যাওয়ার যোগাড়।আফিন দৌড়ে পর্দা সরিয়ে জানালা গুলো আটকাতে শুরু করলো।জানালা বন্ধ শেষে আফিন ডাইনিং টেবিলের দিকে এগোতেই ওর চোখ আটকে গেলো।পৃথিবী থমকে গেলো আফিনের।হার্টবিট দ্রুত গতিতে চলছে আফিনের।আফিনকে এভাবে থেমে যেতে দেখে মোমবাতি গুলো থেকে হাত সরালো অবনী।আরে দাঁড়িয়ে আছেন যে?মুচকি হেসে বলল অবনী। এবার ঘোর কাঁটলো আফিনের।মোমবাতির আলোয় অবনীর নাকের সাদা পাথরের নাকফুলটা জ্বলজ্বল করছে।কি এক অপরুপ দৃশ্য তা বর্ননা করার ভাষা আফিনের জানা নেই।কালো গাউন,চুল গুলোকে পিঠের মাঝে এলোমেলো করে ছড়িয়ে রাখা।চোখে একটু কাজল,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক।সব মিলিয়ে অপরুপ লাগছে অবনীকে। পলকহীন ভাবে দেখে নিলো আফিন তার জলপরীকে।একটু একটু করে অবনীর দিকে এগুতে শুরু করলো আফিন।অবনী সোজা মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে।আফিন এসে অবনীর জামার কলারের ওপর থেকে কানের দুলটা হাতে নিলো।অবনী অাফিনকে দেখে যাচ্ছে।আজ যে অবনী চোখ সরাতে পারছেনা অাফিন থেকে।কালো কোট, লাল টাই উফ অসাধারন লাগছে আফিনকে।আফিন মুচকি হেসে অবনীর কানে কানের দুলটা পরিয়ে দিলো।
,
,
,
,
অাফিন সরে আসতেই অবনী একটু নড়ে উঠে ওর কান ধরে দেখলো।কানের দুলটা পাচ্ছিলো না জামা টা পরার পর।কিন্তু আফিন কোথায় পেলো বুঝতে পারছেনা অবনী।অাফিন অবনীর হাত ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিলো।অাফিন অবনীর সামনের চেয়ারে বসে খাবারের ডিশের ওপর থেকে ঢাকনা সরালো।চাইনিজ খাবার গুলো থেকে ধোঁয়া উঠছে।অবাক চোখে সব কিছু দেখছিলো অবনী।এতসব কখন করলেন?প্রশ্ন করে উঠলো অবনী।যখন রুমে বসে আমাকে ভাবছিলে তখন।বলে নেশা যুক্ত হাসি দিলো আফিন।অবনী লজ্জায় মাথা নিচু করে মুচকি হাসছে।বাসায় যতো পারো হাসো।এখানে জড়িয়ে ধরে চুমো দিলে ও কেউ দেখবেনা।কথা গুলো বলে খাওয়ায় মন দিলো আফিন।আফিনের কথা শুনে হালকা কেশে উঠলো অবনী।কি বলে এই লোক?মাঝে মাঝে আফিনের কথা শুনে অবাক হবে নাকি লজ্জা পাবে কনফিউজড হয়ে যায় অবনী।খেতে খেতে অবনীর দিকে তাকায় আফিন।কি হলো এভাবে লজ্জা পেতে থাকবা নাকি খাবাও?বলে উঠলো আফিন।আফিনের কথায় পুরো একটা মোমো মুখে ঢুকিয়ে দিলো অবনী।আফিন থ হয়ে তাকিয়ে আছে অবনীর কান্ডকারখানায়।অবনী মোমোটিকে ধীরে ধীরে কামড়ে খেয়ে নিলো।এবার আফিন হেসে দিলো।গড়াগড়ি খাচ্ছে আফিন হাসতে হাসতে।অবনী অসহায় ভঙ্গিতে আফিনের হাসি দেখছে।আফিন এবার থামলো অবনীর দিকে তাকিয়ে।গ্লাসে কিছু ড্রিংক ঢালতে লাগলো আফিন দুজনের জন্য।আ আমি এগুলো খাইনা।আস্তে করে বলল অবনী।এগুলো লো এলকোহলিক।খেতে পারবে।অবনীর দিকে একটা গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল আফিন।অবনী গ্লাসটা হাতে নিয়ে একটু চুৃমুক দিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলল।আফিন হেসে অবনীর দিকে তাকিয়ে আছে।কেমন? অবনীকে প্রশ্ন করলো আফিন।
,
,
,
,
মুখ খানিকে স্বাভাবিক করে নিলো অবনী।খারাপ না,আঙ্গুরের জুসের মতো লাগলো।বলে উঠলো অবনী।হুম বলে টেবিলের ওপর রাখা অবনীর হাতের ওপর হাত রাখলো আফিন।অবনী আফিনের দিকে তাকালো।চোখ জোড়া জ্বলজ্বল করছে ওর।অবনীর হাত উঠিয়ে সেখানে আফিন আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়াতেই অবনী হাত সরিয়ে নিলো।বুক ধুকপুক করছে ওর।আফিন চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে গিটারটা নিয়ে অবনীর সামনের ছোট্ট টুলটায় বসলো।অবনী আফিনকে দেখছে মুগ্ধ চোখে।আফিন গিটার বাজিয়ে গান ধরলো।
Muskurane ki wajah tum ho
Gungunane ki wajah tum ho
Jiya jaaye na, jaaye na, jaaye na..
O re piya re..
Jiya jaaye na, jaaye na, jaaye na..
O re piya re..
O re lamhe tu kahin mat jaa
Ho sake toh umr bhar tham jaa
Jiya jaaye na, jaaye na, jaaye naa..
O re piya re..
Jiya jaaye na, jaaye na, jaaye naa..
O re piya re.. piyaa re..
Dhoop aaye toh, chhaanv tum laana
Khwahishon ki baarishon mein
Bheeg sang jaana
অবনীর মুখে মলিন হাসি ফুটে উঠেছে কিন্তু চোখজোড়া জলে ভরে গেছে।আফিন অবনীর গালে হাত রাখলো।আমার জলপরী,কেন এতো মায়া লাগাস তুই?তোর মায়া জালে জড়িয়ে পড়েছিরে।বলতে লাগলো আফিন।অবনী আফিনের হাতের তালুতে গাল রেখে কাঁদতে লাগলো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে।অবনীকে দাঁড় করিয়ে আফিন ওর গালে ঠোঁট রেখে চোখের পানি গুলোকে শুষে নিলো।আফিনের কোটের কলার খামচে ধরে চোখ খিচে বন্ধ করে আছে অবনী।অবনীর গাল থেকে সরে এলো আফিন।অবনী এখনো আফিনের কোটের কলার ছাড়েনি।আরো জোরে আফিনকে ধরে রেখেছে অবনী।অাফিনের কেমন যেন অবনীর নেশায় ডুবে যাচ্ছে আফিন।আজকের দিনটা হয়ত আর কখনো ফিরে আসবেনা।অবনীকে এভাবে আবার পাবেনা হয়ত,হয়ত কোন এক অতল সাগরে ওর জলপরীকে হারিয়ে ফেলবে আফিন।আজকের দিনটা দুজনের জীবনে স্মরনীয় হয়ে থাকুক।কথা গুলে ভেবে অবনীর ঠোঁট জোড়ায় আলতো করে চুমু দিলো আফিন।আরো দুএকবার আলতো করে অবনীর ঠোঁটজোড়ায় উষ্ণ পরশ দিয়ে অবনীর ঠোঁটজোড়ায় ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো আফিন।শুষে নিতে থাকলো অবনীর রসালো ঠোঁটজোড়াকে।অবনী ও আজ আফিনের উষ্ণ ভালোবাসায় সাড়া দিচ্ছে।
,
,
,
,
অবনীর কলেজের সামনে এসে থামলো আফিনের গাড়ি।চোখ মুখ লাল হয়ে আছে অবনীর।মাথা নিচু করে আছে অবনী।আফিনের চোখের দিকে তাকাতে পারছেনা অবনী।আফিনের ব্যাপারে দূর্বল হয়ে পড়েছে অবনী।কলেজে যাও বলে উঠলো আফিন।আফিনের দিকে একনজর তাকিয়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লো অবনী।সামনে ফিরে চোখ মুছে নিয়ে দৌড়ে কলেজ গেটে ঢুকে পড়লো অবনী।অবনীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো আফিন।অন্তরার সামনে বসে আছে অবনী।অবনীর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে অন্তরা।অবনীকে দেখেই বুঝাগেছে সারারাত কান্না করেছে ও।সারারাত কান্না করেছিস মনে হচ্ছে?বলে উঠলো অন্তরা।জানি না কেন তার অনুপস্থিতি সহ্য করতে পারছিনা,কেন তার সাথেই থাকতে চাই শুধু?আমার না প্রত্যেকটা সময় নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চায় তাকে ছাড়া।কাঁদতে কাঁদতে বলছিলো অবনী।কে সে? অবনীর হাতে হাত রেখে বলল অন্তরা।অন্তরা সব বলে দিলো অন্তরা।আফিনের সাথে ওর প্রথম দেখা হতে শুরু করে সব কিছু।ওনি তোকে ভালোবাসে?প্রশ্ন করে উঠলো অন্তরা।জানি না বলে মাথা নিচু করলো অবনী।ক্লাশ শেষে আফিন নিতে এলো অবনীকে।গাড়িতে বসে আছে অবনী।দুজনেই চুপচাপ,কারোর মুখে কোন কথা নেই।তোমাকে আজ তোমার বাসায় দিয়ে আসবো।আমার বাসায় প্যাকিং করতে হবে,একটু রেস্টের ও প্রয়োজন আছে বলে উঠলো আফিন অবনীর দিকে একনজর তাকিয়ে।আমি ও আপনার সাথে যাবো,আপনাকে প্যাকিংয়ে হেল্প করবো।প্লিজ না করবেননা।বলে উঠলো অবনী।অবনীকে না করতে পারলো না আফিন।বাসায় নিয়ে এলো অবনীকে।আফিন প্যাকিং করছে আর অবনী এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে অাফিনকে।অবনীর ফোন বেজে উঠায় ফোন নিয়ে অন্যরুমে চলে এলো অবনী।
,
,
,
,
হ্যালো অবনী!!!!অপরপাশ থেকে বললেন রহমত সাহেব।
জি বাবা।বলে উঠলো অবনী।
কই তুই?কবে আসবি?জিজ্ঞেস করলেন রহমত সাহেব।
বাবা আজ বিকেলে চলে আসবো।মলিন মুখে বলল অবনী।
আজ তোর ফ্রেন্ড আফিন চলে যাবে।ওকে বাসায় চলে আসতে বল।এখানে খাওয়া দাওয়া করে একসাথে বেরিয়ে যাবে এয়ারপোর্টের জন্য।একনাগাড়ে কথা গুলো বললেন রহমত সাহেব।
জি বাবা,বলবো। বলে উঠলো অবনী।
কান থেকে ফোন সরিয়ে আফিনের কাছে এলো অবনী।বাবা বলছিলো আমাদের বাসায় যেতে।ঐখান থেকে এয়ারপোর্ট যাবেন।
অবনীর কথা শুনে হাসলো আফিন। ওকে বলে লাগেজের চেইন লাগালো আফিন।
চলবে
#অন্ধকার_পল্লী
#Tabassum_Riana
Part:১২
,
,
,
,
অবনীকে পৌছে দিয়ে কিছুক্ষন পর রহমত সাহেবের বাসায় লাগেজ ব্যাগ সমেত চলে এলো।রহমত সাহেব বেশ যত্ন আত্তি করলেন আফিনের একদম নিজের ছেলের মতো।রাতের খাবার খেতে বসেছে সবাই।খাবার টেবিলে অবনীর পাশে বসে পড়লো আফিন।খাবারের মাঝেই অবনীর বাম হাত ধরে ফেলল আফিন।অবনী কাশতে শুরু করলো।মেয়ের কাশি দেখে রহমত সাহেব মাথা তুলে তাকালেন।কিরে মা?পানি খেয়ে নেয়।অবনী চেয়ে ও পানি খেতে পারছেনা।মাথা ঝাঁকিয়ে অবনী বলল আমি ঠিক আছি।আফিন অবনীর হাত ছেড়ে দিলো।অবনী আফিনের দিকে একনজর তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।একগ্লাস পানি ঢকঢক করে খেয়ে নিলো।আফিন রহমত সাহেবের সাথে কথা বলার ফাঁকে অবনীর পায়ের ওপর পা রাখলো।অবনী বিষম খেলো।আফসানা অবনীর দিকে অবাক চোখে তাকালো।আফসানার দিকে তাকিয়ে অবনী খাওয়ায় মন দিলো।আফিনের পা অবনীর পায়ে স্লাইড করছে।খাবার সেড়ে আফিন বের হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।তবে চোখ দুটো অবনীকেই খুঁজছে।খাটের ওপর বসে আছে অবনী।ওর ব্রেইন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।কেমন অদ্ভুত এক ঘোরের মধ্যে আছে অবনী।কিছুক্ষন পর পর আফসানা আর মা এটা ওটা বলে যাচ্ছে কিন্তু ওর কানে কিছুই যাচ্ছেনা।ঘন্টা খানিক পর আফসানা অবনীর সামনে এসে দাঁড়ালো।আপি আফিন ভাইয়া চলে যাচ্ছে বলে উঠলো আফসানা।আফসানার কথা শুনে অবনী উঠে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।আফিন যে রুমটায় ছিলো সেদিকে এগুতেই কে যেন অবনীর হাত টেনে একটা খালি রুমে নিয়ে এলো।অবনী বড় চোখ করে আফিনের দিকে চেয়ে আছে।কি হলো আমাকে এনে নিজেই হারিয়ে গেলে?গম্ভীর গলায় বলল আফিন।না মানে এমনি একটু ব্যাস্ত ছিলাম।মাথা নিচু করে বলল অবনী।হুম!! বড় একটি নিশ্বাস নিয়ে বলল আফিন।শুনো আমার বডিগার্ডরা প্রতিনিয়ত তোমার সাথে থাকবে।কেউ তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা।অবনীর দুগালে হাত রেখে বলল আফিন।অবনীর চোখ জোড়া ভিজে গেছে।আফিন সত্যিই চলে যাবে?ভাবতেই বুকের এককোনে চিনচিনে ব্যাথা হচ্ছে অবনীর।আর তোমার সাথে ভিডিও কলে কথা হবে সবসময়।ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবে এবং আঙ্কেল আন্টির খেয়াল রাখবে।ওকে?একনাগাড়ে কথা গুলো বলল আফিন।অবনী আফিনের কাঁধে মাথা রাখলো।চোখ জোড়া বেয়ে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে অবনীর।
,
,
,
,
অবনীর মুখ তুলে ধরে আফিন দুহাতে।অবনীর চোখ জোড়া মুছে দিয়ে ওর কপালে ঠোঁট বুলিয়ে বেরিয়ে গেলো আফিন।এয়ারপোর্টে যাওয়ার সময় ঠিকহলো রহমত সাহেব যাবেন আফিনের সাথে।আফসানা আর মায়ের সাথে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলো আফিন।অবনী সিড়ি পর্যন্ত দৌড়ে এলো আফিনের পিছু পিছু।অশ্রু আর বাঁধা মানলো না অবনীর।আফিন চোখের আড়াল হতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো অবনী।এভাবে বেশ কয়েকদিন চলে গেলো।অবনী ঘর থেকে দুইদিন বের হয়নি।কারন আফিন তো এখন আর নেই ওকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।অবশ্য এ কয়দিন ভিডিও কলে কথা হয়েছে।আফিন কথা বললে ও অবনী কথা বলতে পারতোনা।গলাভেঙ্গে আসতে চাইতো ওর।চোখজোড়া ভিজে আসতে চাইতো।তিনদিন পর আজ বের হলো অবনী।বাহিরে বের হতেই মনে হলো মুক্ত বাতাস ওর হৃদয়টাকে ছুঁয়ে দিয়েছে।একটু আগাতেই আফিনের বডিগার্ডরা অবনীর সামনে এসে দাঁড়ালো। ম্যাম আপনাকে নিয়ে যেতে বলেছে যতোদিন পর্যন্ত স্যার না আসে।লোকটা মাথা নিচু করে বলে উঠলো।ঠিক আছে চলুন। বলে উঠলো অবনী।বডিগার্ডদের সাথে কলেজে চলে এলো অবনী।অবনীকে কলেজে দেখে অন্তরা দৌড়ে এলো।এতোদিন আসিস নাই কেন?প্রশ্ন করলো অন্তরা।
এমনিই ভালো লাগছিলো না।কিছুটা মন খারাপ করে বলল অবনী।কিছু কি হয়েছে অবনী?প্রশ্ন করে উঠলো অন্তরা।
ওনি চলে গেছে।ভাঙ্গা গলায় বলল অবনী।
কই গেলো? প্রশ্ন করে উঠে অন্তরা।
আমেরিকা পাঁচদিনের জন্য।নাক টানতে টানতে বলল অবনী।
বাহ!! বাহ!!পাঁচদিনের অনুপস্থিতি ও সহ্য হচ্ছে না।দুষ্টামি করে বলল অন্তরা।
কথা বলতে বলতে ক্লাশে চলে গেলো অবনী আর অন্তরা।
,
,
,
,
অফিসে বসে ওয়ালপেপারে জলপরীর ছবিটা বারবার দেখছে আফিন।কবে আবার দেখা পাবে এই জলপরীর?আফিনের যে আর ভালো লাগছেনা জলপরীকে ছাড়া।প্রত্যেকটা ঘন্টাকে বছরের মতো মনে হচ্ছে ওর।ভাইবারে ঢুকে অবনীকে অনলাইন পেয়ে মুখে হাসি ফুঁটে উঠলো আফিনের।কল করার কিছুক্ষন পর রিসিভ হলো।ক্লাশে লেকচারের শব্দ পাচ্ছে আফিন।
হ্যালো!!!!অপরপাশ থেকে ফিসফিস করে বলে উঠলো অবনী।
ক্লাশে অনলাইন হয়ে আছো কেন?বলে উঠলো আফিন।
নেট অফ করতে মনে নেই।ফিসফিস করে বলল অবনী।
মিস ইউ।নেশা ধরানো কন্ঠে বলে উঠলো আফিন।
গলা ধরে আসতে চায় অবনীর।কোনমতো নিজেকে সামলে নিলো অবনী।কে ক কেমন আছেন?ফিসফিসিয়ে বলল অবনী।
ভালো।ক্লাশ করো,রাতে কথা হবে।বলে উঠলো আফিন।
অবনী ফোন কেঁটে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলো মোবাইলটাকে।
অন্তরা অবনীর দিকে দুষ্টমির হাসি দিয়ে ক্লাশে মনযোগ দিলো।
ক্লাশ শেষে বেরিয়ে পড়লো অবনী আর অন্তরা।রাফসান এসে অন্তরাকে নিয়ে গেলো।অবনী বাসের জন্য অপেক্ষা করছে।
,
,
,
,
রাতে আফিন খাটে বসে ভাইবারে অবনীর আইডি চেক করলো।এসময় অনলাইন থাকে অবনী।কিন্তু আজ অবনীকে অনলাইন পেলোনা আফিন।বড় একটা নিশ্বাস নিলো আফিন।ফোনের কন্টাক্ট লিস্টে গিয়ে অবনীর নম্বরে কল দিলো আফিন।ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে।আফিনের বুক যেন ধুক করে উঠলো।পরক্ষনেই আফিনের মনে হলো হয়ত ফোনে চার্জ নেই।ল্যাপটপের ওয়ালপেপারে অবনীর কালো শাড়ী পরা ছবিটাকে দেখে সারারাত কাঁটিয়ে দিলো অাফিন।
কয়েক ঘন্টা আগে
বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছে অবনী।হঠাৎ সামনে একটা মাইক্রোবাস এসে চোখের পলকে অবনীর মুখে রুমাল চেপে উঠিয়ে নিয়ে চলে গেলো।চিৎকার করার ও সুযোগ পেলোনা অবনী।
চলবে