নিশি_রাতের_ডাক,পর্ব ১৩,১৪

নিশি_রাতের_ডাক,পর্ব ১৩,১৪
সুমাইয়া_আক্তার
পর্ব ১৩

আস্তে আস্তে রুশা, আয়েশা,তানিয়া,সামান্তা,ফারিন, নিশিতা আমার সামনে দেখা দিতে লাগলো…আমি ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছি…মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার অবস্থা আমার….কোনোভাবে নিজেকে সামলিয়ে নেই…

আয়েশা বলে উঠলো,,,আমাকে কেন মেরেছে?? কে মেরেছে???কিভাবে মেরেছে জানতে চাও না???

হুম, জানতে চাই….

তাহলে শোনো….তোমার মামার কুনজরে শুধু আমি একা না হোস্টেলের শতাধিক মেয়ে পড়েছে….আমি যখন টয়েলেটে যেতাম তখনি তোমার মামা আমাকে সেক্সুয়াল হ্যারাজমেন্ট করতো….আমি কিছু করতে গিয়েও করতে
পারিনি….একদিন রাতে আমেনা খালা কান্না করতে করতে আমাকে ডেকে নিয়ে বললেন,,,এই আয়েশা শোনো আমার মেয়ে বৃষ্টির মাথা ফেটে গেছে…অনেক রক্ত লাগবে…তুমি কি রক্ত দিতে পারবা???

জ্বী দিতে পারবো…কিন্তু কোথায় আপনার মেয়ে???

এই যে পাশের হাসপাতালেই আছে…চলো আমার সাথে….

আমেনা খালা আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন???এখানে তো কোনো হাসপাতাল নেই….খালা আমার খুব ভয় করছে…আমি চলে যাচ্ছি হোস্টেলে…

তখনি তোমার মামা মানে ওই জানোয়ার টা আমার হাত হেচকা টানে ঝোপের মধ্যে নিয়ে যায়….আর আমেনা খালা কে 2000টাকা দিয়ে বিদায় করে দেয়….

আমেনা খালা এমন কাজ করবে ভাবতে পারিনি যাকে আমি নিজের মায়ের মতো ভাবতাম সেও এই কাজে..!!ছিঃ….

এরপর সেই জানোয়ার টা আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে… আমি চিল্লাতে থাকি….তখনি আশিক স্যার আমাকে বাঁচাতে আসে…জানোয়ার টা আশিক স্যার কে আঘাত করে সাথে আমাকেও…আমি ওখানেই পড়ে যাই…অজ্ঞান অবস্থায়ই সে আমার সাথে!!!!

তারপর যখন আমার জ্ঞান ফিরে তখনি জানোয়ার টা আমার গলা চেপে ধরে….শত চেষ্টা করেও বাঁচতে পারিনি…. মেরেই ফেলল আমাকে….তারপর আমাকে টেনে নিয়ে গিয়ে আমার রুমে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দেয়….যাতে সবাই বুঝতে পারে আমি আত্মহত্যা করেছি….

আমি আর স্থির থাকতে পারলাম না….মাথা ঘুরে পড়ে যাই আমি….

তারপর যখন জ্ঞান ফেরে আশিক,জয়, সামান্তা,রুশা,ফারিন,আয়েশা,নিশিতা,তানিয়া ওরা সবাই আমার পাশেই ছিল…. মা কেঁদে অবস্থা খারাপ করে ফেলেছে…বাবা, মা আমার অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার কারণ বুঝতে পারলেন না…আমিও কিছু বুঝতে দেইনি….মাথা ঝিম ধরে আছে আমার….পুরো শরীর ব্যাথা আমার… মা কে বললাম,,,মা আমাকে একটু চা করে দেও…খুব মাথা ধরেছে…. মা আমার জন্য চা করতে চলে গেছেন….

তারপর সামান্তা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,আপু তোমার ক্ষতি করার জন্য আমরা সবাই দুঃখিত…তুমি এখন বিশ্রাম নেও…আমরা আবার পরে আসবো…

জয় চলে যেতেই জয়ের হাত ধরে রাখি আমি….ওর হাত ধরে রেখে কান্না করতে থাকি…জয় আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,,,পাগলী আমি যাচ্ছিনা… আসবো আবার আমি…এখন তোমার বিশ্রাম দরকার…আমার কথা যখনি স্মরণ করবে আমি চলে আসবো….
আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে গেলো জয়….

আমি ভেবে পাইনা একটা মানুষ মরার পর ও কিভাবে এতো ভালোবাসতে পারে??? না জানি বেচে থাকলে কতটা ভালোবাসতো????

নবনীর চোখে পানি…. আমি আস্তে আস্তে বিছানা ছেড়ে উঠে বসলাম….নবনীর হাত ধরে বললাম,,,,ক্ষমা করে দিও আমাকে….আমার মামার জন্যই আজ এই অবস্থা তোমার….কিন্তু আমি কিছু করতে পারছিনা আর করার সাধ্যও নেই….

নবনী আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই চলেছে…মা এসে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল,,,কি হয়েছে??? এভাবে কাঁদছিস কেন???

আমি নবনী কে ছাড়িয়ে বললাম,,,না মা তেমন কিছুনা…আমি অজ্ঞান হয়ে গেছি…তাই মন খারাপ করছিলো…
মা আমাকে চা দিয়ে চলে গেলো….আমি নবনী কে বললাম,,, যাও ফ্রেশ হয়ে এসো…আর কান্না করতে হবেনা….আমি কিছু একটা ব্যবস্থা করবো….

রাতে খাওয়ার পর মায়ের ফোন থেকে মামা কে ফোন করলাম….ফোন করে বললাম,,,মামা আমি কাল হোস্টেলে যাবো…তুমি কাল সকালে এসে নিয়ে যেও….

মামা বলল,,,কাল এসে কি করবি???আর দুইদিন পর ই আয়…
মামার কথায় আর কিছু বলতে পারলাম না….কেন দুইদিন পর যেতে বলল,,বুঝলাম না…

রুমে এসে দেখি নবনী বারান্দায় গিয়ে মন খারাপ করে ফ্লোরে বসে আছে…আমিও গিয়ে নবনীর পাশে বসলাম…নবনী কাঁদছে.. কিভাবে ওকে শান্তনা দিব বুঝতে পারছিনা….নবনী কাঁধে হাত রেখে বললাম,,,দেখো তুমি এভাবে কেঁদো না…এখন তুমি একা নও আমরা দশজন একসাথে আছি….রিটন আহাম্মেদ আমার আপন মামা হলেও আমি তাকে ছাড়ব না…ওনার শাস্তি উনি পাবেই….

খুব জানতে ইচ্ছে করছে রুশা,তানিয়া, ফারিন আর সামান্তার মৃত্যু হলো…যদিও এসব জেনে আমার লাভ নেই…কোন প্রমাণ ছাড়া কিছুই করতে পারব না আমি….

হঠাৎ করেই ওরা সবাই আবার এসে হাজির হয়েছে….রুশা বলে উঠলো,, এখন কেমন আছো ফাহমিন???

আমি জবাব দিলাম,,হুম এখন ভালো আছি…আচ্ছা তোমাদের সাথে কি হয়েছিলো একটু বলবে আমাকে????
সবাই একসাথে বলে উঠলো,,,হুম বলব….

রুশা বলতে শুরু করে,,,যেদিন আমার লাশ রুমে পাওয়া যায় তার আগের দিন রাতে রহিম স্যার আমাকে ডেকে বললেন,,,রুশা মা এদিকে আসবে??তোমার মা ফোন করেছে বাড়ি থেকে….আমি রহিম স্যারের কথা বিশ্বাস করে তার সাথে গেলাম…স্যার আমাকে কমন রুমে নিয়ে গেলেন….আমি স্যার কে বললাম,,,,কি হলো স্যার আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন কেন???

তখন তোমার মামা হেসে বলল,,,এই যে মামণি,, কি যে সেক্সি লাগছে তোমাকে….আমাদের একটু মজা দিবে???কথা দিচ্ছি কেউ জানতে পারবে না….

আমি ভয়ে কাঁপতে থাকি,,, এ কি বলছেন স্যার??? প্লিজ আমার এতো বড় ক্ষতি করবেন না…তারপর,,, তারা দুজনেই আমাকে জানোয়ারের মতো খুবলে খেয়েছে….অনেক কাকুতি,মিনতি করেছি কেউ শোনেনি….

রিটন স্যার বলে উঠলেন,,,কাল আবার ও এসো কিন্তু…আর এই টাকাগুলো রাখো কাজে লাগবে….
আমি টাকাগুলো তার দিকে ছুড়ে বললাম,,,, আমি সবাইকে সব বলে দিবো…আপনি এই হোস্টেলের মেয়েদের সাথে কি করেন???এই কথা বলেই দৌড়ে বাহিরে আসতেই,, আমার মাথায় আঘাত লাগে….মাথায় হাত দিয়ে পিছনে তাকাতেই দেখি,, রিটন স্যার একটা হাতুড়ি দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করেছে….আমার মাথা থেকে দড়দড় করে রক্ত পড়ছে…আমি মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে পড়ে যাই….

(চলবে)

#নিশি_রাতের_ডাক
#পর্ব ১৪
#সুমাইয়া_আক্তার

তারপর আমার আর কিচ্ছু মনে নেই… অজ্ঞান অবস্থায় আবার ও ওরা আমার সাথে!!!!!
যখন জ্ঞান ফেরে আমি তখন ও কমন রুমে ফ্লোরে নগ্ন অবস্থায় পড়ে আছি…আমার উঠে দাঁড়াবার শক্তি নেই…অনেক চেষ্টা করে জামা কাপড় পড়ে উঠে দাঁড়াই…. কমন রুমের দরজা খুলে বাহির হতে যাবো কিন্তু দরজা বাহির থেকে লক করা….আমি অনেক চিৎকার করি… তারপর জহির আঙ্কেল মানে দারোয়ান এসে দরজা খুলে দেয়…আমি কান্না করতে করতে বলি আঙ্কেল আমাকে বাঁচান…

তিনি ও একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে বলেন,,,কি গো মামণি এবার আমাকে আদর করার সুযোগ দেও… এতো তাড়া কিসের???দারোয়ান আঙ্কেল আমার কাছে ধীরে ধীরে আসতে লাগলেন…. হেচকা টানে আমার বুকের থেকে ওরনা নিয়ে ফেললেন…আর বাচাতে পারিনি নিজেকে…

আমার মাথা দিয়ে এখনো রক্ত ঝরছে…মাথা সোজা করে দাঁড়াতে পারছি না আমি….আমি কান্না করতে করতে রুম থেকে বের হতে যাবো রহিম স্যার আমাকে ধাক্কা দিয়ে রুমের ভিতর ঢুকিয়ে দেয়…তারপর আমার ওরনা দিয়ে গলায় পেঁচাতে পেঁচাতে বলে,,, তুমি কি ভাবছো তোমাকে বাঁচিয়ে রাখব??না না তুমি বেচে থাকলে তো আমাদের সব কিছু ফাঁস হয়ে যাবে…
মেরেই ফেলল আমাকে….কি দোষ করেছিলাম আমি???আমাকে কি বাচতে দেওয়া যেতো না????আমি না হয় সব কিছুই গোপন রাখতাম….তারপর আর কি আমাকে ওইভাবে ঝুলিয়ে দিয়েছে যেভাবে ওদের ঝুলিয়েছে….

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,,,আচ্ছা তোমাদের কে মেরে এভাবে ঝুলিয়ে রাখলে কেউ কি কখনো দেখতো না???এটা কি করে সম্ভব??একটা মানুষ কে এইভাবে ঝুলিয়ে রেখে চলে যায় আর কেউই সেটা দেখে না???

তখন সামান্তা বলে উঠলো,,, কিভাবে কেউ কিছু বলবে???মেয়েদের কে তো খুব ভয়ে রাখতো রিটন স্যার….উনি বলতেন যদি আমরা কাওকে কিছু বলি তাহলে আমাদের ও ওদের মতো হাল করবেন….আর উনার একজন চামচা মানে পুলিশ আছে…সেই পুলিশ কে তো টাকা দিয়ে কিনে রেখেছে…. একটা খুন কে আত্মহত্যা তে পরিণত করতে পারে নিমিষেই….

এবার আমি সামান্তার কথা জিজ্ঞেস করলাম…কিভাবে কি হলো???

সামান্তা বলতে শুরু করে,,,,একদিন রহিম স্যার আমাদের ক্লাস নিচ্ছিলেন…ক্লাস নেওয়ার এক পর্যায়ে রহিম স্যার আমার পিঠে হাত রাখেন…প্রথমে কিছু মনে করিনি…আমি স্যার কে সম্মান করতাম… ধীরে ধীরে স্যারের হাত আমার কোমরের দিকে নামতে থাকে…আমি স্যার কে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করি এ কি করছেন আপনি???

স্যার থতমত খেয়ে বললেন,,,,তুমি কি বলছো এসব???তুমি আমার মেয়ের মতো….আমাকে এরকম ভাবতে পারলে তুমি????

আমি মাথা নিচু করে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম…ক্লাস শেষে স্যার আমাকে বললেন,,,আমার সাথে এসো কথা আছে তোমার সাথে….

আমার খুব ভয় লাগতে শুরু করে….আমি স্যারের সাথে যাই….স্যার আমাকে হোস্টেলের ছাদে নিয়ে গেলেন…আমি স্যারকে জিজ্ঞেস করলাম,,,স্যার আপনি আমাকে ছাদে নিয়ে এলেন কেন???

স্যার আমার শরীরে বিভিন্ন জায়গায় হাত দিতে থাকলেন…. আমি কাঁচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে আছি…. কিছু করতে পারছি না আমি….আমি কিছুটা সাহস নিয়ে বললাম,,স্যার আমাকে ছেড়ে দেন না হয় আমি ছাদ থেকে লাফ দিব….

এই কথা শুনেই রহিম স্যার ভয় পেয়ে আমাকে ছেড়ে দিলেন…..আমি দৌড়ে কাঁদতে কাঁদতে ছাদ থেকে নেমে আমার রুমে চলে যাই…রুমে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দেই….তারপর আমি ফ্যানের সাথে ওরনা পেঁচিয়ে আত্নহত্যা করি…কারণ আমি বেচে থাকলে আমার সাথে ওইসব হতো যা আমি কখনোই সহ্য করতে পারতাম না….আর কাগজে লিখে গিয়েছিলাম আমার মৃত্যুর জন্য রহিম স্যার দায়ী….

আমি বলে উঠলাম,,,কিন্তু আমি যে কাগজে লিখা দেখলাম তোমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়….,!!!!

সামান্তা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল,,,হয়ত রহিম স্যার সেই কাগজ টা সরিয়ে এই কাগজ টা রেখে দিয়েছে…

আমি ভেবে পাচ্ছি না…কেন বিশ্বাস করবো এই কথাগুলো???শত হলেও সে আমার মামা…

এবার তানিয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,,তানিয়া কি হয়েছিল তোমার সাথে???

তানিয়া বলতে শুরু করে,,,আমি ক্যান্টিনে যাচ্ছিলাম পানি আনার জন্য….তখন কেউ চিৎকার করছে এমন আওয়াজ আসছে…আমি আওয়াজ টা লক্ষ্য করে সামনে এগোতে থাকি…রাত তখন ১১.৪০ বাজে… আমি কমন রুমের সামনে এসে থামি…কমন রুম থেকেই আওয়াজ আসছে….আমি কমন রুমের দরজার একটা ছিদ্র দিয়ে দেখার চেষ্টা করি…দেখলাম প্রায় পনেরো/বিশজন মেয়েকে আটকে রাখা হয়েছে… ওদেরকে বলা হচ্ছে,,,তোমরা এই ড্রাগস গুলো নিজেদের শরীরে ঢুকিয়ে নেও…. তোমাদের এখনি পাচার করা হবে….

আমার কাছে ফোন থাকলে আমি প্রমাণ হিসেবে রাখতে পারতাম..আমি দৌড়ে গিয়ে ফারিন কক্র ডেকে আনি….আমরা ভয়ে কাঁপতে থাকি…আমার হাত থেকে পানির বোতল পড়ে যায়…তখনি রিটন স্যার দরজা খুলে বাহিরে বের হয়ে আসেন…আমাদের দেখেই একটা অট্টহাসি দিয়ে বললেন,,, আচ্ছা তাহলে তোমরা আমার সম্পর্কে সব জেনে গেছো???

আমি ভয়ে বলতে থাকি,,, স্যার আমাদের ছেড়ে দেন…আমরা কাওকে কিচ্ছু বলব না…প্লিজ ছেড়ে দেন আমাদের….

তা কি করে হয় মামণি রা???এভাবে তো তোমাদের ছেড়ে দেওয়া যায়না….

আমাদের দুজনকেই রিটন স্যার কমন রুমের ভিতর নিয়ে গেলেন….আমাদের দুইজন কে বেধে রাখা হলো…আমরা অনেক কাকুতি মিনতি করেছি তাও আমাদের ছাড়লো না….

হঠাৎ রহিম স্যার আমাদের দুইজনের মুখেই রুমাল চেপে ধরলেন….আমরা দুইজন ই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলাম…..

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here