নিশি_রাতের_ডাক,পর্ব 3,4
সুমাইয়া_আক্তার
পর্ব 3
অনন্যা এক প্রকার গরম হয়ে বলে,,,কি শুরু করছিস তুই???তুই কি পাগল হয়ে গেছিস???
আমি অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিলাম…. কিচ্ছু বলার ছিল না আমার…আমি নিঃশব্দে কান্না করছিলাম…
অনন্যা আমার কান্না করা দেখে শান্ত হয়ে বলল,,,দেখ তুই এখন অসুস্থ… আমরা জানার চেষ্টা করছি কে করেছে তোর সাথে এসব???তোর আরাম প্রয়োজন… তুই প্লিজ এসব নিয়ে মাথা ঘামাস না…আমার ক্লাস আছে..আমি ক্লাসে যাচ্ছি…তুই বিছানায় শুয়ে হূমায়ূন আহমেদ এর “মিসির আলী “বই টা পড়…ভালো লাগবে…
অনন্যা আমার সিনিয়র…ওকে আপু ডাকিনা তুই করেই বলি… অনেক ভালো মনের মেয়ে অনন্যা…আমার অনেক খেয়াল রাখে…আমার রুমমেট রা সবাই আমাকে অনেক কেয়ার করে…অনেক ভালোবাসে আমাকে…
সেদিন বিকেলে খবর পাই যে মেয়েটা মানে রুশা হোস্টেল থেকে গায়েব হয়ে গিয়েছিল সেই মেয়েটার লাশ পাওয়া যায় আমাদের হোস্টেল এর কিছু দূরে…
কি হচ্ছে এসব???কেন খুন হচ্ছে এভাবে??কেউ মারছে ওদের??
পোস্টমর্টেম এর পর জানা যায় রুশাকে ধর্ষণ করা হয়…
পুলিশ খোজার চেষ্টা করছে খুনীকে…পুলিশ আমাদের ইনকুয়েরী করতে হোস্টেল এ এসেছিলো…
আমরা যা জানি,যতটুকু জানি বলেছি…সেদিন রাতের বেলা আবার সেই গানের সুর…আমাকে পাগল করে দিচ্ছে…আমি বিছানা থেকে উঠে জানালার কাছে গেলাম… জানালা খুলে দেখি সেই মেয়েটা আমাকে বলছে আমাকে বাঁচাও প্লিজ….
আমি যেতে চাইলে রিদিতা বলল,,এই কিরে এত রাতে জানালা খুলেছিস কেন??বন্ধ কর…
আমি জানালা বন্ধ করতে যাবো তখন দেখি মেয়েটা সেখানে নাই…মেয়েটা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে একটা কালো বিড়াল আমার দিকে এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে…আমি ভয়ে তাড়াতাড়ি জানালার সিটকিনি লাগিয়ে দিলাম…আজকের রাতটা ও যেন কেমন নেশা মাখানো রাত…আমার মধ্যে নেশা কাজ করছে…মনে হচ্ছে কেউ ডাকছে আমাকে…
বিছানায় এসে শুয়ে পড়লাম…ঘুম আসছে না আমার…কি করব কিছুই বুঝতেছিনা….
সকালে সবাই যে যার যার মত ক্লাসে চলে গেলো…আমাকে ক্লাসে যেতে নিষেধ করছে মামা…বলল,,,আর ও কয়েকদিন পর যেন ক্লাসে যাই…
আমি শুয়ে শুয়ে “মিসির আলী” বইটা পড়ছিলাম…পড়তে পড়তে পানির পিপাসা লাগে… রুমে যে বোতল থাকে ওই বোতলে পানি শেষ হয়ে গেছে…
তাই ক্যান্টিনে গেলাম পানির বোতল নিয়ে… রিনা খালাকে বললাম,,,খালা এক বোতল পানি দেও…
খালা পানি দিলো…আমি পানি নিয়ে চলে আসছি উপরে…পানির বোতল টেবিলেই রাখতেই দেখলাম পানিগুলো রক্তে লাল হয়ে আছে…
এই মাত্রই তো ভালো পানি আনলাম…আমি পানির বোতল নিয়ে আবার ও ক্যান্টিনে গেলাম খালা কে দেখাবো বলে…
খালাকে দেখাতেই বলল,,,এ কি বলছ গো মণি??আমি তো ভালো পানিই দিলাম…এই যে দেখো পানি তো পরিস্কার…
আমি বোতল এর দিকে তাকাতেই দেখি পানি ঠিক আছে…আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে ক্যান্টিন থেকে চলে আসি…
রুমে এসে বিছানায় বসতে যাবো তখন দেখি দেয়ালে বড় বড় অক্ষরে লেখা,,, আমাদের খুন করে তোরা পার পাবি ভেবেছিস???তোদের পর্দা ফাঁস করবো…
আমি রুমে চিল্লাতে থাকি,,, কে ওখানে কে???কে করছে এসব??এত সাহস থাকলে আমার সামনে আয়…
কেউ ই আসলো না…লেখাগুলো আস্তে আস্তে মুছে গেলো… আমি ভয়ে সূরা পড়তে থাকি… ভয়ে খাটের এক কোণে জড়সড় হয়ে বসে আছি আমি…পুরো শরীর ঘেমে ভিজে একাকার হয়ে গেছে….
মামা এসেছে আমাকে দেখতে…আমাকে এই অবস্থায় দেখে বলল,,,এই ফাহমিন কি হয়েছে তোর???আর নার্স কোথায়???
আমি বলি,,, মামা নার্স তো আজ সকালে আসেই নি…মামা ক্রুদ্ধ হয়ে নার্স কে ফোন করে অনেক বকাঝকা করলেন…
কিছুক্ষন পর নার্স এসেছে…
মামা থাক আর বকো না ওকে… আমি ঠিক আছি…
মামা আমাকে রেখে চলে গেলো…নার্স আমার পাশে বসে গল্প করছিলো…
হঠাৎ হাড্ডি চাবানোর মতো শব্দ আসছিলো…আমি নার্স কে বললাম,,,আপনি কি কোন শব্দ শুনছেন???হাড্ডি চাবানোর মতো???
নার্স বলল,,,নাতো এমন শব্দ আসবে কেন???হয়ত তোমার ভুল হচ্ছে…
আমি আবার ও সেই শব্দ শুনতে পাচ্ছি…মনে হচ্ছে আওয়াজ টা জানালার পিছন থেকে আসছে…
আমি জানালা খুলেই দেখলাম,,,একটা মেয়ে পিছন দিকে ফিরে কিছু একটা খাচ্ছে…মেয়েটার পরনে হালকা সবুজ রংয়ের টপস ছিলো…আমি আওয়াজ দিলাম কে ওখানে???
তখন মেয়েটা পিছন থেকেই তার মাথা টা ঘুরিয়ে সামনে আনলো…চেহারা টা পুরো থেতলে আছে…খুব বিশ্রী লাগছে… আমি ওর চেহারা দেখেই বমি করতে করতে বেসিনে চলে গেলাম…বেসিনের আয়নার দিকে তাকাতেই আয়নার ভিতর থেকে এক টা কালো চামড়া ছাড়া হাত আমার মুখ চেপে ধরলো…আমি চিৎকার দিয়েই জ্ঞান হারিয়ে ফেলি…
ঠিক কতক্ষন আমার হুশ ছিলোনা আমি জানিনা…যখন আমার জ্ঞান ফিরে তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে…নার্স তখন আমার পাশে বসা…তিনি আমাকে বললেন,,তুমি হঠাৎ বমি করতে করতে অজ্ঞান হয়ে গেছো…
আমি খুব অবাক হয়ে যাই…নার্সের সামনেই এত কিছু ঘটলো,,,আর নার্স কিনা বলছে আমি এমনিতেই বমি করছিলাম???
আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে নার্স কে জিজ্ঞেস করলাম,,,আপনি কি সত্যি আর কিছু দেখেন নাই???
নার্স বলল,,,না কি দেখবো আমি???কি দেখার কথা বলছো তুমি???
আমি বললাম,,,,আয়নার ভিতর থেকে একটা বিশ্রী হাত আমার মুখ চেপে ধরে… তারপর আমি অজ্ঞান হয়ে যাই…
আমার রুমে থাকা সবাই অবাক হয়ে বলছে,,,এই ফাহমিন কি হয়েছে তোর???মনে হয় তোকে কোন জ্বীন আছড় করেছে…দাড়া কাল এক হুজুর দেখাবো…
আমি অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি…কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না…
রাত টা কোনমতে পার করলাম….সকাল বেলা আমার নাম ধরে কেউ ডাকছে…তখন পাঁচটা বাজে…
এই ফাহমিন,,, আমি রিনি…একটু বাহিরে আসবে???তোমার সাথে কেউ একজন দেখা করতে এসেছে….
আমি দরজা খুলতেই দেখি রিনি দাঁড়িয়ে আছে… এত সকালে কে আসবে???
জানিনা তো…উনি পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে…তোমাকে যেতে বলল….
আচ্ছা যাও আমি আসছি….
চোখ মুছতে মুছতে পুকুর পাড়ে চলে গেলাম…ওখানে কাওকেই দেখতে পেলাম না…খুব রাগ হচ্ছিলো…এতো সকালে এরকম করার কি মানে হয়???
রাগে ফুসফুস করতে করতে চলে যাচ্ছিলাম…তখনি রিনি এসে আমার হাত ধরে রেখেছে…আমি রিনিকে ধমক দিয়ে বললাম,,,এই রিনি আমার হাত ছাড়ো…কি হচ্ছে এসব???
রিনি হাসতে হাসতে বলল,,,আজ তুই বাঁচতে পারবি না…তুই আজকেই মরবি…এই কথা বলেই,,,রিনি হো হো করে হেসে উঠলো…
তার হাসির সাথে সাথে আর ও দুইজনের হাসির শব্দ শুনতে পেলাম…
আমার মনে হচ্ছে কেউ যেন আমাকে আটকে রেখেছে… আমার নাড়াচাড়া করার কোন শক্তি নেই…
রিনির চেহারা অসম্ভব রকমের বিশ্রী দেখাচ্ছে….রিনি তখনো হেসেই যাচ্ছে…আমার সামনে আর ও দুইটা কালো ছায়া এগিয়ে আসছে…
আমার কোন শক্তি নেই সেখান থেকে পালিয়ে আসার…মুখ দিয়ে কোন আওয়াজ ও বের হচ্ছেনা আমার…আমি যেন বোবা হয়ে গেছি…
ওরা তিনজন মানে তিনটি কালো ছায়া… আমাকে ঘিরে ধরেছে…ওদের ধারালো নখ দিয়ে আমার শরীর স্পর্শ করছে…মনে হচ্ছে আমার শরীরে কাটা বিধে যাচ্ছে…আর সহ্য করতে পারছিনা ….চোখ দিয়ে পানি পড়ছে অনবরত…হাত পা ক্রমশ অবস হয়ে আসছে…চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে আমার…কিছু দেখতে পাচ্ছিনা আমি……
(চলবে)
#নিশি_রাতের_ডাক
#পর্ব 4
#সুমাইয়া_আক্তার
এমন সময় ফজরের আজান দেয়…আর মূহুর্তেই সেই তিনটি কালো ছায়া হাওয়া হয়ে উড়ে যায়…
আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাই মাটিতে…এবার অনেক বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে…বড় মামা এসে
আমাকে ধমকাচ্ছে আমি কেন বাহিরে গেলাম…এবার তো বাবা মাকেই ডেকে পাঠিয়েছেন…আমি ভয়ে আধমরা হয়ে গেছি…
মা বাবা এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো…আমি বাবা মাকে শান্ত করার জন্য বললাম,,বাবা দেখো কিচ্ছু হয়নি আমার…আমি ঠিক আছি…
বাবা আর মা হাউমাউ করে কেঁদেই চলেছে… বাবা তো নাছোড় বান্দা আমাকে বাড়িতে নিয়েই ছাড়বেন….
নিয়ে গেলো আমাকে বাড়িতে…মা তো উঠে পড়ে লেগেছে আমাকে হুজুর দেখানোর জন্য…
আমাকে টেনে নিয়ে গেলেন হুজুরের কাছে…হুজুর আমাকে তাবিজ দিলেন….বললেন তাবিজ টা ডান হাতে পড়তে…কোনভাবেই এটা খোলা যাবেনা…আমাকে তিনটি মেয়ের আত্না আছড় করেছে…আমি এই তাবিজ খুললেই ওরা আমার ক্ষতি করবে…
আমি কখনো এসবে বিশ্বাস করিনা তাও মায়ের জোরাজুরিতে পড়তে হচ্ছে…
এখন বিশ্বাস না করেও পারছি না…কারণ আমার সাথে যা হচ্ছে তা তো আর ফেলে দেওয়ার মতো না…
অনন্যা,সায়মা,নাফিসা রিদিতার কথা খুব মনে পড়ছে…মায়ের ফোন নিয়ে স্কুলের টেলিফোনে ফোন করলাম…
অনন্যা আর সায়মার সাথে কথা বললাম…অনন্যা বলল,,,এই শোন আমাদের ক্লাসের ফারিন আছে না…ওই মেয়েটাও ওর রুমে আত্মহত্যা করেছে…ফারিনের মা বাবা এসেছে বলল পুলিশের কাছে মামলা করবে…আর এদিকে রুশার খুনীকে এখনো বের করতে পারেনি…টিচারদের উপর যে সন্দেহ করবে এমন কোন আলামত পায়নি…
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম…..আমি অনন্যা কে বাই বলে ফোন রেখে দিলাম…খুব খারাপ লাগছে…ভাবছি কে করছে এমন???কেনইবা এভাবে আত্মহত্যা করছে???
মায়ের ডাকে আমার ভাবনায় ছেদ পড়লো…মা খেতে ডাকছে আমাকে…
কোনমতে খাওয়া শেষ করলাম… আমি আমার রুমে এসে শুয়ে পড়েছি কিন্তু কোনভাবেই ঘুম আসছে না…
শোয়া থেকে উঠে বারান্দায় গেলাম….আজকের আকাশ টা চাঁদে ঝলমল করছে….এক অপরুপ দৃশ্য….মন ছুঁয়ে যাচ্ছে একদম…হঠাৎ এক দমকা বাতাস এসে পড়লো আমার শরীরের উপর…প্রচন্ড বাতাসে আমি ছিটকে পড়ি মাটিতে…..
মাটি থেকে উঠতেই খেয়াল করলাম আমার ডান হাতে যে তাবিজ টা ছিল সেটা খুলে পড়ে গেছে মাটিতে…
আমি তাবিজ টা হাতে নিতেই তাবিজ অদৃশ্য হয়ে গেলো…আর তখনি কেউ যেন স্বশব্দে হেসে উঠলো…
কেউ হেসে হেসে বলছে তুই কি ভেবেছিস???তাবিজ দিলেই তুই আমাদের হাত থেকে বেঁচে যাবি???
আমি চিৎকার দিয়ে জিজ্ঞেস করি…কে তুমি??কি চাও আমার কাছে???কেন করছো এমন???আমি কি ক্ষতি করেছি তোমার???
তখনি আওয়াজ আসলো,,, কি ক্ষতি করেছিস???তুই ক্ষতি করিস নি…ক্ষতি তো করেছে তোর মামা….রিটন আহাম্মেদ…
মানে কি বলতে চাইছো তুমি???মামা যদি তোমার ক্ষতি করে থাকে তাহলে আমার সাথে এমন করছো কেন???
কারণ তোর মামার প্রাণ তুই…তুই চলে গেলে তখন রিটন আহাম্মেদ বুঝবে আপনজন হারালে কেমন লাগে???
তুমি কি বলছ আমি বুঝতে পারছিনা….
তারপর মা দরজায় নক করে…দরজা খুলতেই মা জিজ্ঞেস করে এত রাতে কার সাথে কথা বলছিস তুই???
আমি থতমত খেয়ে বললাম,,, কই কার সাথে কথা বলব??
মা চোখ বড় বড় করে বললেন,,একি তোর হাতে তাবিজ কোথায়???খুলে ফেলেছিস কেন???এই কথা বলেই আমার গালে চড় মেরে দিলেন…
আমি মাকে বলছিলাম,,মা আমার তাবিজ পড়তে ভালো লাগেনা…মা তাও জোর করে তাবিজ পড়িয়ে দিলেন…
আমি আবার ও শুয়ে পড়ি কিন্তু আমার মাথায় সেই মেয়েটার বলা কথাগুলো ঘুরছে…কি হচ্ছে এসব???মামা কি করেছে ওদের???
তাহলে মামা কি ওদের??? ছিঃ ছিঃ একি ভাবছি আমি???
এসব ভাবতে ভাবতে যে কখন ঘুমিয়ে পড়ি আমার খেয়াল নেই…সকাল বেলা মায়ের ডাকে আমার ঘুম ভাঙ্গে…
বই খাতা সব স্কুলের হোস্টেলেই রেখে এসেছি…তাই পড়তেও পারছিনা…খুব বোরিং লাগছে…সকালের নাস্তা করে বাড়ির পিছনের বাগান টায় গেলাম…বাগানে অনেক ধরনের ফুল গাছ লাগিয়েছে বাবা…বাবার বাগান করা খুব পছন্দ…..বাগানে ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম কি কি ফুল গাছ লাগিয়েছে বাবা…হঠাৎ জবা ফুলের গাছে চোখ গেলো…রক্তজবার মতোই জবা ফুল ফুটে রয়েছে…. তাই একটা জবা ফুল হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখছিলাম…তখনি মনে হলো আমার হাত টা অবশ হয়ে আসছে…নাড়াতে পারছিনা হাতটা…
জবা ফুল গাছের কাছ থেকে সরে আসতেই… আমার হাত আগের মতো হয়ে গেছে…আমি আবার হাত নাড়াতে পারছি…
বাগান থেকে চলে আসি আমি…দেখলাম মা রান্না করছে…মায়ের কাছে গিয়ে বসলাম…মা হাতের দিকে তাকিয়ে বলল,,,কিরে তোর হাতে রক্ত কিসের???পাগলের মতো হয়ে গেছে মা…
আমিও ভাবতে পারছিনা রক্ত আসলো কোথা থেকে???আমার তো হাত কাটেনি…তাহলে???
মা আমাকে ধমকাচ্ছে… কই গিয়েছিস তুই???হাত কাটলো কিভাবে???
আমি অবাক হয়ে বললাম,,,আমি নিজেও জানিনা মা কিভাবে কাটলো…হাতের দুইটা আঙ্গুল কেটে গেছে…খুব রক্ত ঝরছে…মা বাবাকে ফোন করে ডাক্তার নিয়ে আসলেন…
ডাক্তার আমার হাত দেখে বললেন,,,মনে হচ্ছে তুমি নিজের হাতে কেটেছো??
আমি বললাম,, না আমি নিজের হাত নিজে কাটতে যাবো কেন??আমি বাগানে গিয়েছিলাম..জবা ফুল্র হাত লাগাতেই… আমার হাত অবশ হয়ে যায়…তারপর আমি মায়ের কাছে চলে আসি…মা দেখে বলল,,,আমার হাত কেটে গেছে….
ডাক্তার একটা শ্বাস ছেড়ে বললেন,,,সাবধানে চলাফেরা করবে…আর এন্টিসেপটিক ওষুধ দিচ্ছি খেয়ে নিও…
আমার হাতে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে গেছে…মা আমাকে রুমে শুয়ে দিয়ে গেছে…কিছুক্ষন শুয়ে থাকার পর উঠে বসলাম…তারপর দেয়ালে লাল লাল অক্ষরে লেখা ভেসে ওঠা দেখলাম…
তুই কি ভেবেছিস তুই বেঁচে যাবি?? না তোর ক্ষতি তো আমি যেভাবেই হোক করব…ওই জবা ফুল টায় আমি কাটা দিয়ে দিয়েছিলাম..এজন্যই তোর হাত কেটে গেছে…মনে রাখিস তুই বাঁঁচবি না….তুই মরবি…সাথে তোর মামা ও তোর মামার গ্যাং রাও মরবে….
আমি ভয়ে কান্না করতে থাকি…কেন করছো এসব???আমাকে মাফ করে দেও…আমি আর নিতে পারছিনা… আমার অসহ্য লাগছে….আমাকে মাফ করে দেও প্লিজ….
তখনি আমার চোখের সামনে সেই তিনটি কালো ছায়া এসে হাজির হয়েছে…সেই তিনটি ছায়া মানুষের আকারে পরিণত হলো…একজনের ঠোঁট কাটা..ঠোঁট দিয়ে রক্ত ঝরছে…আর এক জনের চোখের কোটর থেকে চোখ বেরিয়ে গেছে…আর একজনের সেদিন সাদা সালোয়ার কামিজ পড়া মেয়ে দেখেছিলাম…সেই মেয়েটার চেহারা আগুনে পুড়ে ঝলসে গেছে…
আমি চিৎকার দিতে থাকি…আর ওরা তিনজন বলছে,,,তোর হাতে তাবিজ আছে তাই তোর কাছে আসতে পারছিনা…কিন্তু তুই ভাবিস না যে তুই বেঁচে যাবি…তোর ক্ষতি না করে আমরা এখান থেকে যাবো না….
তারপর ওরা তিনজন দেয়ালে মিশে যায়….আমি কান্না করছি অনবরত…কি করেছে আমার মামা??না মামাকে আমার জিজ্ঞেস করতেই হবে….
বিকেলে বসে বসে টিভি দেখছিলাম…মা এসে বলল,,,ফাহমিন তোর পার্সেল এসেছে…
আমি বললাম,,,কে পাঠাবে আমাকে পার্সেল???আমি তো কিছু অর্ডার করিনি…
তারপর পার্সেল টা নিয়ে আসলাম ঘরে… পার্সেলটির বক্সের উপরে আয়েশা নাম লেখা….
আমি নাম টা দেখে ভড়কে যাই…আয়েশা??এ কি করে হতে পারে???
(চলবে)