এক_ফালি_রোদ ২৪তম_পর্ব

এক_ফালি_রোদ
২৪তম_পর্ব

প্রাপ্তি লাজুক চোখে তার দিকে তাকালো। তার সামনে অয়ন দাঁড়ানো। নেশাগ্রস্ত চোখে দেখে যাচ্ছে সে প্রাপ্তিকে। অয়নকে দেখে মনে একটু খটকা লাগলো প্রাপ্তির। কিন্তু প্রাপ্তি কিছু বলার আগেই অয়ন তার ঠোঁট জোড়া দখলে নিয়ে নিলো। অয়নের এরুপ কান্ডে হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেলো প্রাপ্তির। একটি তীব্র বিকট গন্ধ তার নাকে এলো। কিন্তু সেদিকে তার খেয়াল নেই। প্রাপ্তির হৃদপিন্ড এতো জোরে স্পন্দিত হচ্ছে যেনো এখনই ফেটে যাবে। তার মস্তিষ্ক শূণ্য হয়ে আসছে। এদিকে অয়ন তার তৃষ্ণা মেটাতে ব্যস্ত। উষ্ণ ঠোঁটজোড়া যেনো সহস্র বছরের তৃষ্ণা এক মূহুর্তে মিটিয়ে ফেলতে উৎসুক হয়ে আছে। জাগতিক দুনিয়ার কোনো খেয়াল নেই তার। এক পর্যায়ে কামনা উম্মাদনায় পরিণত হতে লাগলো। প্রাপ্তির ঠোঁট ছেড়ে গলায় নেমে এলে প্রাপ্তির হুশ ফিরলো। সে চেষ্টা করলো অয়নের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতে। সেও অয়নের ভালোবাসা পেতে চায় তবে এভাবে নয়। অয়নের উম্মাদনার মাত্রা বাড়তে থাকলে প্রাপ্তির গায়ের সব জোর দিয়ে তাকে ধাক্কা দিতে করে। এতে অয়নের কিছুটা বিরক্তিবোধ হয়। হিনহিনে কন্ঠে বলে,
– এতো নড়ছো কেনো? আমার ছোঁয়া ভালো লাগছে না তোমার?
– আমনি কি নেশা করে এসেছেন?
– কেনো? কোনো সমস্যা?
– আমার এসব পছন্দ না, আর করবেন না।
– আমারো তো কত কিছু পছন্দ না তাতে কি কারোর কিছু যায় আসে?
– মানে?

অয়ন কিছু বললো না। তার কথাটা প্রাপ্তির মাথার উপর দিয়ে গেলো। অবাক দৃষ্টিতে শুধু তার দিকে তাকিয়ে রইলো। প্রাপ্তির চোখে সন্দেহের কীরণ চোখে পড়তেই তাকে কোলে তুলে নিলো অয়ন। অয়নের আচারণ আজ মোটেই স্বাভাবিক লাগছে না প্রাপ্তির। এমনটি তো হবার কথা ছিলো না। অয়ন তাকে বিছানাতে বসায়। প্রাপ্তির নত মুখটিকে আলতো হাতে তুলে সে। নেশাগ্রস্থ কন্ঠে বলে,
– আজ রাতটা অনেক মূল্যবান আমাদের জন্য। এভাবে সেটাকে নষ্ট করে দিও না প্লিজ। আজ রাতে তোমাতে বিলীন হতে চাই, অনুমতি আছে?

প্রাপ্তি আর কোনো কথা বললো না, মনের মাঝে সহস্র দ্বিধাদন্দ কাজ করলেও সে অয়নকে বাঁধা দিলো না। অয়নের মাঝে নিজেকে উজার করে দিলো চোখ বুঝে। রাত যত বাড়তে লাগলো নিঃশ্বাসের সুগভীর খেলা যেনো আরোও তীব্র হতে লাগলো। রুমের দেয়ালগুলো সাক্ষী দিচ্ছে তাদের মিলনের।

রাত ৩টা,
প্রাপ্তির ক্লান্ত নগ্ন শরীরটি লেপ্টে রয়েছে অয়নের বুকে। কিন্তু অয়নের চোখে ঘুম নেই। সে এক নজরে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। নেশার ঘোর কাঁটতে লেগেছে। বাস্তবিক চিত্র চোখের সামনে ঘুরছে। সে কেনো এমনটা করলো নিজেও জানে না। কিন্তু খুব একটা খারাপ লাগছে না। তবে খুব ভালোও লাগছে না। অনুভূতিটা মিশ্র, ক্ষণিকের ভালোলাগা মাত্র। তবে মনের মাঝে ক্ষীণ গ্লানিও উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। কারণ প্রাপ্তিকে সে ভালোবাসে না। মনের গহীনে প্রাপ্তি নামক নারীর জায়গাটি খুব নড়বড়ে। তবুও সে আজ এই মারাত্নক কাজটি করলো। কামনার তাড়ণায় প্রাপ্তির কাছে এলো সে। প্রাপ্তি যদি সত্যিটি জানে ক্ষমা করতে পারবে তো তাকে? অয়নের মাথায় অজস্র প্রশ্নেরা ঘুরপাক খাচ্ছে। কি মনে করে প্রাপ্তিকে বুক থেকে সরিয়ে দিলো সে। তাকে বিছানায় শুয়িয়ে টেবিলের কাছে গেলো সে। টেবিলের ড্রয়ারটি খুলতেই একটি বাদামী খাম দেখতে পেলো সে। খামটি বের করে তার ভেতরের ছবিগুলো বের করলো অয়ন। হাস্যজ্জ্বল মুখটি এখন ও জীবন্ত লাগছে ছবিতে। পকেটের থেকে লাইটারটি বের করলো অয়ন। রাইসার শেষ স্মৃতিগুলোও জীবন থেকে মিটিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিলো সে। ছবিগুলো জ্বলছে, সাথে জ্বলছে অয়নের ক্ষুদ্ধ হৃদয়টা। আগুনের লেলিহান শিখা দাবানলের রুপ নিচ্ছে, কিন্তু তা দেখার ক্ষমতা কারোর নেই, হবেও না_______________

পূর্বের সূর্যের কিরণ জানালা ভেদ করে প্রাপ্তির দেহে আছড়ে পড়ছে। চোখে সূর্যের কিরণ পড়তেই হাতটি বিস্তৃত করে পাশের মানুষটির দেহের উপস্থিতি খুঁজতে লাগলো সে। কিন্তু কারোর চিহ্ন মাত্র পেলো না। এমন কি কারোর দেহের উষ্ণতাও অনুভব হচ্ছে না। মনেই হচ্ছে না পাশে কেউ রাত্রিযাপন করেছিলো। পিটপিট করে চোখ খুললো প্রাপ্তি। আশেপাশে চোখ বুলালো সে। না অয়ন নেই, ঘরের প্রতিটি কোন নিঃস্ব। খানিকটা অভিমান হলো প্রাপ্তির। রাত পোহাতেই অয়নের এমন পরিবর্তন কিছুতেই মানতে পারলো না প্রাপ্তি। ভেবেছিলো নিজেকে তার বুকে আবিষ্কার করবে। কিন্তু এমন কিছুই হলো না। গোসল করে একটা বেগুনী সুতির সালোয়ার কামিজ পড়লো সে। নামায শেষে রুম থেকে বের হলো। কিন্তু বাহিরের অবস্থা দেখে কারোর বলার উপায় নেই এটা বিয়ে বাড়ি। কোনো হৈচৈ নেই কোনো সোরগোল নেই। প্রাপ্তি মাথায় ওড়ণাটা টেনে রান্নাঘরে গেলো। আজ শ্বশুরবাড়িতে তার প্রথম সকাল, সবার জন্য নিজ হাতে নাস্তা বানাবে এটাই ঠিক করলো সে। যা ভাবা তাই কাজ। কিন্তু রান্নাঘরে যেতেই যা কানে এলো তার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলো না প্রাপ্তি। রান্নাঘরে তখন……………

চলবে

[পরবর্তী পর্ব আজ তারাবীর পর ইনশাআল্লাহ পোস্ট করবো। দয়া করে কার্টেসি ব্যাতীত কপি করবেন না ]

মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here