হৃদয়ের_প্রতিশ্রুতি🌸,পর্বঃ২

হৃদয়ের_প্রতিশ্রুতি🌸,পর্বঃ২
আদিলা

আমির আস্টপিস্টে পিছন থেকে কাউকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে থাকা এলোমেলো চুল গুলো পরম যত্নে সরিয়ে ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে নাক ঘষছে।। গভীর ভাবে চুমু দিয়ে চলছে.. আমিরের প্রতিটা স্পর্শে যেন মানুষটি কেপে উঠছে.. ভয়ংকর ভাবে কাপছে মানুষটি।। কাধ থেকে কাপড় একটু সরিয়ে নাক ঘষছে আর চুমু দিচ্ছে… মেয়েটি নিজের শাড়ি খামচে ধরেছে.. আমির হাল্কা হেসে চুমু আরও গভীর করে ফিসফিসিয়ে বলে ভালবাসতে চায় আজ সারাটারাত তোমায়।।পূর্ণ করে দিতে চায় তোমাকে।। খুব খুব করে ভালবাসতে চায়.. তোমার নরম হাতের স্পর্শ আমাকে প্রতিটা মুহুর্তে পাগল করে দেয়… বলোনা দিবে আজ গভীরভাবে ভালবাসতে.. ….মেয়েটা সামনে ফিরে জড়িয়ে ধরে আমিরকে।।আমিরের বুকে মুখ গুজে বলে.. ভালবাসি আপনাকে খুব করে… ।।খামছে ধরে আমিরের পাঞ্জাবী…এই মেয়েটাকে জুড়ে আমিরের পুরো দুনিয়া.. আমিরের মন প্রান সব কিছু জুড়ে এই মেয়েটারই বিচরন এখন…পাগলের মত ভালবাসে তাকে.. খুব খুব ভালবাসে যে।।পূর্নিমার চাদটা যেন আজ লজ্জায় আকাশের বুকে নিজের মুখ লুকিয়েছে…এলোমেলো চুল গুলা বার বার আমিরের মুখে এসে বাড়ি খাচ্ছে.. আমির মুচকি হেসে চুল গুলো পরম যত্নে সরিয়ে দুহাত দিয়ে কোমর জরিয়ে মেয়েটার মুখ তুলতেই আমির যেন দড়ফরিয়ে বিছানা থেকে উঠে…বড় বড় শ্বাস নেয়..এসির মধ্যে থেকেও যেন আমির ঘামছে প্রচন্ডরকম..অস্পষ্ট কন্ঠস্বরে একটি নামই ভেসে ওঠে “ইয়ামিনা”
আমির মাথায় হাত দিয়ে ঝিম মেরে কিছুক্ষন বসে থাকে.. সে কেন এরকম স্বপ্ন দেখেছে…ভাবতে পারছেনা কিছু…হটাৎ হাতে খেয়াল করতেই দেখে খুব যত্ন করে কে জানি হাতে বেন্ডেজ করে দিয়েছে.. আমিরের চোখ ধীরে ধীরে লাল হয়ে আসে..

__________🌸🌸

ইয়ামিনা ডাইং টেবিলের কাছে যেয়ে কাজ করতে নিলে জাফরা বেশ গম্ভীর কন্ঠে বলে..

নতুন এসেছো এ বাড়িতে। সব কিছুই নতুন তোমার কাছে.. আজ না কাল থেকে কাজ করো.. ইয়ামনা বেশ ভালভাবে বুঝতে পেরেছে জাফরার পছন্দ নয় তাকে.. কারনটা অজানা নয়।। কারন সবাই তাকে এখন দোষী ভাবছে.. কিছু না করেই সে যে অপরাধী হয়ে আছে… শুধু একটা ভুলের জন্য তার জীবনটা ওলট পালট হয়ে গেছে…

ইয়ামিনা এসব ভাবতে ভাবতে জাবির খাওয়া টেবিলে এসে বসে.. এমনিতেই প্রচন্ড দেরি হয়ে গেছে.. জহির আবরার জাবির আমিরের বড় ভাই… হটাৎ জাফরার কথায় ইয়ামিনার ধ্যান ভাঙে..

জাফরা বেশ শান্ত কন্ঠে বলে..যাও বস আমি খাবার বেরে দিচ্ছি…

ইয়ামিনা একবার জাফরার দিকে তাকিয়ে তারপর বলে..
না ভাবি আপনি বসেন নতুন হয়েছি তো কি সংসারটা তো আমারি.. আজ হোক বা পরে সংসারটা আমাকেই দেখতে হবে… এতক্ষনে আরুসি এসে ডাইং টেবিলে বসে।। জাবির আর আমিরের ছোট বোন সে অনেক আদরের..

ভাবি খাবার দাও খুব ক্ষুধা লেগেছে..জাফরাকে উদ্দেশ্য করে বলে.. আরুসি ইয়ামিনার বয়েসে ইন্টার ফাস্ট ইয়ার..
জাফরার সাথে সাথে ইয়ামিনা টুকিটাকি খাবার বেরে দিচ্ছে.. ইয়ামিনা পাশে বসতেই জাবির হাল্কা হেসে বলে..
জানো তোমাকে আমার প্রথম দেখেই আরুসির কথা মনে পরে গিয়েছিল. আমি যেন আরেকটা বোন পেয়ে গিয়েছি..আমি সত্যি খুব খুশি….আমার ভাইয়ের জীবনসঙীনি দেখতে পেয়ে তোমাকে.. কিন্তু আমার ভাইয়া যে ওই ইশিতার উপর মত্ত ছিল..তাই তো তার আজ এই অবস্থা.. তাই তো আমার ভাইয়কে ছেড়ে চলে গেছে ওই মেয়ে যখন তার এই অবস্থা জানতে পেরেছে।।কতটাইনা ভালবেসে ছিল.. জাবিব একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আবার বলতে শুরু করে..
আমি জানি আমির এসব হয়তো মেনে নিতে পারছে না তার আপাইজ হওয়ার কারন তোমাকে ভাবছে।। দোষ তোমাকে দিচ্ছে।।কিন্তু নিয়তির লিখা অন্য কিছু ছিল তাই আমার ভাইয়ের জীবনে তুমি বউ হয়ে এসেছো ওই ইশিতা নয়।। যা হওয়ার হয়েছে এখানে দোষ তোমার একার ছিলনা আমিররেরও ছিল.. আমার ভাইয়াটা অনেক রাগি গম্ভীর হলেও মনের দিক দিয়ে অনেক ভাল..যে পূরো দেশে রাজত্ব করত আজ তারই এই অবস্থা হয়তো সে মেনে নিতে পারছে না…।। নিজেকে খুব দুবল ভাবছে.. আমি জানি তুমি সব কিছু দিয়ে ওর কষ্ট ভুলিয়ে দিবে আগলে রাখবে ওকে.. কারন সংসার আর ওই মানুষটা এখন তোমার তাই দায়িত্ব গুলা তোমাকেই নিতে হবে… আশা করি বুঝতে পেরেছো..তুমি তো আমার আরেকটা বোন..

জাবিরের কথায় ইয়ামিনা শুধু মাথা নাড়ায়..

জাবির মুচকি হেসে চলে যায়…

হটাৎ ভয়ংকর চিৎকারে ইয়ামিনা ভয়ে আতকে ওঠে ডাইং টেবিল থেকে উঠে এক দৌড়ে রুমে যায়..এক পা এগোতেই যেন থেমে যায় দরজায় হাত রেখে ঠেস দিয়ে দাড়ায়..তার পায়ের সামনে অজস্র ছোট ছোট কাছের টুকরা..
আমির যেন হিংস্র হয়ে আছে চোখদুটো লাল হয়ে আছে.. একের পর এক জিনিস ভেঙেই চলছে হাতের কাছে যা পাচ্ছে সব ভেঙে চলছে কোনো ভাবেই যেন তার রাগ কমছে না..

ইয়ামিনা একটা লম্বা শ্বাস ছেড়ে সামনে এগোতে আমির বিকট আওয়াজ করে বলে… খবরদার আমার কাছে যদি আসার চেষ্টা করো..এখানেই মেরে ফেলব..জাস্ট গো টু হেল..ইডিয়েট..

এতক্ষনে জাফরা আরুসি রুমে এসে ভাইয়ের অবস্থা দেখে যেন আতকে উঠে।। বেন্ডেজ থেকে যেন রক্ত পরছে সেদিকে আমিরের হুস নেই..
আরুসি এসে ভাইকে জাপটে ধরে শান্ত হউ ভাইয়া..কি হয়েছে আমাকে বল..
আমির কিছুটা শান্ত হয়ে বলে.. রুহানকে ডাক আমি ওয়াস হবো
রুহানের সাথে আরেকটা সার্ভেন্ট এসে আমিরকে ধরে নিয়ে যায়…আরেকজন সার্ভেন্ট এসে ঘরটা পরিষ্কার করে দিয়ে যায়…
ইয়ামিনা এখনো ঠাই দাঁড়িয়ে আছে.. বাকরুদ্ধ আমিরের এমন আচরণে। এত রাগ এই মানুষটার কিভাবে তাকে যত্ন করবে তাকে সেড়ে তুলতে সাহায্য করবে… যা কিছুই হোক স্বামীটা যে এখন তার আর তার দিহানজি তো বলে দিয়েছে সে তো মন থেকে চায় আমি এই সংসার টা করি.. .. এই সংসারই এখন তার সব… তিন বার কবুল বলে বিয়ের এই পবিত্র বন্ধে আবদ্ধ হয়েছে সে..

ইয়ামিনা চোখজোরা বন্ধ করে নেয়.. চোখ থেকে কয়েক ফোটা জল পরতে আচল দিয়ে মুছে নেয়।।তাকে যে পারতেই হবে..

__________🌸🌸🌸🌸

ইয়ামিনা রুমের বিছানাটা সুন্দর করে ঘুছিয়ে দেয়.. বালিশ গুলো ঠিকঠাক করে দেয়..
তখনি হাতে টান অনুভব করতেই পাশে তাকিয়ে দেখে আরুশি তার হাত ধরে আছে.. আরুশি টেনে ইয়ামিনা কে নিজের রুমে নিয়ে যায়…
ইয়ামিনা একটু ইতস্তত বোধ করে আরুশির এমন ব্যবহারে..আরুশি ইয়ামিনাকে খাটে বসিয়ে বলে..
ভাবি তুমি ভাইয়ের কোথায় মন খারাপ করোনা… জানই তো ভাই একটু এরকম।। তার এমন অবস্থা কারন তোমাকে ভাবছে..আমি জানি ভাবি সমান দোষ ভাইয়েরও আছে… আর ওই ডাইনি ইশিতা আমার ভাইয়ের মাথা খেয়ে বসে আছে তাই তো আমার ভাই ওই ডাইনিকে ছাড়া কিছু বুঝে না..ভাবি আমি অনেক খুশি তুমি ভাইয়ের জীবনে এসেছো.. তুমি অনেক ভাল ভাবী।খুবই মিষ্টি। কি মায়াবি চোখ জোরা দেখলেই তো যে কেউ প্রেমে পরে যাবে কিন্তু আমার ভাইয়াটা ওই ইশিতার ওপর পাগল হয়ে আছে কি এমন জাদু করেছে আল্লাহ জানে.. শুনো ভাবি তুমি কিন্তু একদম ওই ডাইনির ছায়া আমার ভাইয়ের ওপর পরতে দিবে না… আমার বিশ্বাস আছে তুমি পারবে সবটুকু দিয়ে আমার ভাইয়ের মন জয় করে নিতে। কি ভাবি পারবে না..

ইয়ামিনা একটু হাসে তারপর মাথা নাড়ায়…

দেটস লাইক আ আমার কিউট ভাবি।।

ইয়ামিনা এই বাড়িতে এসে মন খারাপ থাকলেও আরুশির মত সাথি পেয়ে সে খুব খুশি।।। যাক কাউকে তো পেয়েছে কথা বলার জন্য ।। আর মেয়েটাও খুব ভাল সহজ সরল।। ইয়ামিনার বেশ ভাল লাগে আরুশিকে।। অনেকক্ষন কথা বলে আরুশি রুম থেকে বের হয় ইয়ামিনা…

চলবে…🌸

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here