অনুভূতির_সংঘাত_৩
ছামিনা_বেগম
সেদিনের পর আরো পাঁচটি দিন গত হয়েছে । এই কদিন রাধা আমাকে পুরোপুরি এড়িয়ে চলছে । হয়তো সে সময় নিচ্ছে । কিন্তু আমার অবস্থা শোচনীয় । তাকে এক পলক দেখার জন্য অযথাই ঘোরাঘুরি করছি বারান্দার সামনে , ক্লাসের সময় অমনোযোগী হয়ে পড়ছি । নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টায় আরো বেশি অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ছি । এ এক মহা বিপর্যয় ! অবশেষে সেই দিনটা এলো যখন আমার মনে হলো সে পজেটিভ সাইন দিচ্ছে । আমি তখন আকাশে উড়ছি । হলো এমন , ক্লাস শেষ হয়েছে , আমার কিছু নোটস তৈরি করতে হবে । লাইব্রেরিতে গেলাম হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের ওপর একটা বই খুঁজতে । এই বই গুলো র্যাকের সর্বোচ্চ স্তরে রাখা ছিল । খুঁজতে গিয়ে দেখলাম একটি মেয়ে মনোযোগ দিয়ে একটি বই নেড়েচেড়ে দেখছে । মাথা নিচু করে রাখার কারণে আমি মুখ দেখতে পেলাম না । মেয়েটির এলো খোঁপা এক পাশে হেলে আছে , তাতে একটি পাঞ্চ ক্লিপ আটকানো । এতে অবশ্য আমার কিছু যায় আসে না । আমি তো আমার রাধারাণীতেই মজে আছি । আচ্ছা , আজ তাকে তো দেখলাম না । সে কি আসেনি ? ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল । আমি ‘এক্সকিউজ মি , প্লিজ’ বলে মেয়েটির মাথার ওপর দিয়ে বইটি হাতে নিতেই মেয়েটি ঘুরে তাকাল । এ যে আমার রাধারাণী ! এত কাছ থেকে আমি কখনোই কোনো মেয়েকে দেখিনি । ওর ভাসা ভাসা চোখ দুটোতে আজও কাজলের সরু টান বিদ্যমান । টলটলে চোখে জ্বলজ্বল করছে কালো মনি দুটো । ওর দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে আমি বুঝতে পারলাম খুশিতে আমার হৃৎপিণ্ডখানা অত্যাধিক হারে লম্ফঝম্ফ শুরু করেছে । সে আমার দিকে অপার বিস্ময়ে চেয়ে ছিল । মুখে টু শব্দটি নেই । তবে ঠোঁটের কোণে বোধ হয় একটু প্রশ্রয় ছিল ! তখন মনের মাঝে একটা ভাবনা আমায় ভীষণ ভাবে অপদস্থ করতে লাগল । আফসোস হচ্ছিল এই ভেবে যে টিভি সিরিয়ালের নায়কদের মতো আমার ওই বিশেষ গুণটি নেই কেন যেখানে অনেক দূরে থেকেও তারা নায়িকার উপস্থিতি অনুভব করতে পারে ?তাহলে আমি আরও আগে তার দেখা পেয়ে যেতাম ।পরক্ষণেই আমি কষে ধমক দিলাম নিজেকে এই আবর্জনার মতো চিন্তা ভাবনার জন্য । আরে , টিভি সিরিয়ালের পরিচালকরা তো নিজের শোয়ের টিআরপি বাড়ানোর জন্য কত কিছুই করে । তারপর আবার মনে হলো ওরা তো মানুষের বিভিন্ন রকম অনুভূতি নিয়েই কাজ করে তাহলে সেটা দোষের হবে কেন? আর আমার শুধু ওকে দেখলে , ওর কথা শুনলে , ওর কথা ভাবলেই হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি পায় । মন তখন বলল, তুমি এখনো আনাড়ি আছ বন্ধু। আগে পাকা খেলোয়াড় হও তারপর না হয় দূর থেকে অনুভব করার প্রক্রিয়াটি শেখানো যাবে ।
ফ্যান চলছিল সিলিং এ । হাওয়ায় ওর সামনের ছোট করে কাটা কয়েক গাছি চুল মৃদু মন্দ উড়ে এসে চোখ দুটো ঢেকে দেওয়ার পায়তারা করছিল । মনের অজান্তেই কখন যে আমার হাত ওর কপাল ছুয়ে চুল গুলো সরিয়ে দিল আমি বুঝতে পারলাম না । ধ্যান ভাঙলো তখন যখন সে গলা খাকড়ি দিয়ে নিজের উপস্থিতি জানান দিল । আমি হাসি মুখে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম ,
– কেমন আছ ?
সে কাঠকাঠ স্বরে জবাব দিল ,
-ভালো আছি ।
– আমাকে জিজ্ঞেস করবে না কেমন আছি !
– এর কোনো প্রয়োজন আছে ?
-একে সৌজন্যতা বলে ।
রাধা মুখ বাঁকালো । কেন যেন আমার সেটাও ভালো লাগল । আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো হাত বাড়িয়ে ওর ক্লিপটায় হাত দিতেই সে গমগমে স্বরে বলে উঠল ,
-কি করছেন এসব ? সরে দাড়ান ।
আমি সরলাম না । এখন ভাবতেও অবাক লাগছে আমি এতোটা বেহায়া কবে থেকে হলাম ? একটা মেয়ে আমাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছে । অথচ আমি তাকে আরো বেশি করে ভালোভাসতে চাইছি । আচ্ছা, একে কি ভালোবাসা বলে ? নাকি মোহ ?
যাই হোক, আমি সরলাম না দেখে সে আরো বেশি রেগে গেল হয়তো । সে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল ,
-সরে দাড়ান বলছি । নাহলে আমি কিন্তু কমপ্লেইন করব আপনার নামে ।
– খোঁলা চুলে তোমাকে বেশ লাগে দেখতে ।
সম্পূর্ণ অন্য প্রসঙ্গে কথা বলায় রাধা খানিকটা হতচকিত গেল বোধ হয় । ওর চোখের তারায় ফুটে উঠল স্পষ্ট বিস্ময় । এরপর সে প্রায় জোর করেই আমাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে চলে গেল । আমি ওর যাওয়ার পথে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নিজের অপকর্মের জন্য লজ্জিত হলাম । এই আচরণ আমার সাথে কোনো মতেই যায় না । তবে কিভাবে করলাম আমি ?নাকি ভালো বাসলে সবাই এমন বেহায়া হয় ? এর উত্তর আমার জানা নেই । তবে এই মুহূর্তে এসব লিখতে গিয়েও কেমন অস্বস্তি হচ্ছে আমার। রাধা চলে যাওয়ার সময়ও কেমন অন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল । এর অর্থ আমি জানি না । কিন্তু এখন আমার ভীষণ খারাপ লাগছে । আমার এমন করা উচিত হয়নি । সেই অধিকার আমার নেই । কিন্তু আমি যে তখন নিজের মধ্যে ছিলাম না তখন এক অন্য শিমুল ভর করেছিল । যার মধ্যে কুটকুট করে ভরা ছিল অনুভূতি । আবেগের এত ছড়াছড়ি আমার কখনোই ভালো লাগেনি । কিন্তু তবুও নিজের কৃতকর্মকে আমি অস্বীকার করতে পারি না । আত্মগ্লানীতে আমি দগ্ধ হচ্ছি । এখন কেমন যেন ভয় হচ্ছে । যদি সে সত্যিই আমার নামে অভিযোগ করে ! তখন ! তখন কী হবে ?
পরের দিন আমি আর ক্লাসে যাইনি । দুপুর পার করে নিলয় ফোন করল আমায় । স্যাররা আমাকে নাকি খুঁজছিল । কিন্তু কেন খুঁজছে তা বলল না । বলল ,সারপ্রাইজ আছে । অস্বস্তিতে গাঁট হয়ে রইলাম আমি । তবে কি আমার আশঙ্কা সত্যি হল ? রাধা কি সত্যি আমার নামে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেছে ? সারা বিকেল অস্বিরতায় কাটল । রাতে ঘুম হলো না ঠিক মতো । উশখুশ করতে করতে ভোররাতে ঘুমিয়ে গেছি ঘুমের সাগরে । সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙল । তখন , সাড়ে বাজে , তড়িঘড়ি করে তৈরি হয়ে ভার্সিটি গেলাম । প্রথম ক্লাসে ম্যাম ক্লাস নিল । ক্লাস শেষেও আমি নিজের জায়গায় ঠায় বসে রইলাম । নিলয় প্রায় টেনেটুনে নিয়ে গেল শিক্ষকদের রুমে । তখনকার আমার অবস্থা কল্পনা করলে আমার এখনো হাসি পাচ্ছে । কি ভয়টাই না পেয়েছিলাম । কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে বারিণ স্যার বোমটা ফাটাল । প্রিন্সিপাল স্যারের অনুমতি নিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় একটি সেমিনারের আয়োজন করছে । সেখানে আমাদের ডিপার্টমেন্ট থেকে রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে আমাকে আর নিলয়কে চিহ্নিত করেছে শিক্ষকেরা । আমি তখন বিস্ময়ে হতবাক হয়ে দাড়িয়ে ছিলাম কয়েক মুহূর্ত । একদিকে রাধার আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ না জানানো অপর দিকে শিক্ষকদের আস্থাভাজন হতে পেরে আমি কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাব বুঝতে পারছিলাম না ।
মনের ভেতর নিজের প্রতি আত্মগ্লানী , বিতৃষ্ণা জন্মালে কেমন বিশ্রী অনুভূতি হয় তার রেশ আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিলাম । এদিকে এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে । আমিও আশা ছেড়ে দিয়ে পুরো দমে পড়াশোনায় মন দেওয়ার চেষ্টা করছি । কিন্তু তবুও মাঝে মাঝে তাল কেটে যাচ্ছে । পড়ার ফাঁকে ফাঁকে প্রথমদিনের দেখা শ্যামবর্ণী রাধা আমায় বিচলিত করে তুলছে । তার সুরের ঝংকার আমার অনুভূতিকে বিবশ করে দিচ্ছে । নিজের সঙ্গে নিজের লড়াই কতটা ভয়াবহ হয় তা যে ভুগেছে একমাত্র সেই ভালো বলতে পারবে । আমিও এক অবর্ণনীয় যন্ত্রণায় বুদ হয়ে রইলাম ।
অবশেষে সেমিনারের দিনটি উপস্থিত হল । বিভিন্ন কলেজ , ইউনিভার্সিটি থেকে অভিজ্ঞ শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ছাত্রছাত্রীরা এসেছে । আমি আর নিলয় স্টেজের একপাশে দাড়িয়ে আছি । প্রিন্সিপাল স্যার বক্তৃতার মাধ্যমে সেমিনারের উদ্ভোধনী সম্পন্ন করলেন । বারিণ স্যার আগত অতিথিদের সবাইকে বরণ করে নেওয়ার জন্য ভলান্টিয়ারদের ফুল ও ব্যাচ হাতে মঞ্চে উপস্থিত হতে বলল । কয়েকটি মেয়ে ট্রেতে করে ব্যাচ ও ফুলের তোড়া নিয়ে উপস্থিত হলো । সবার পড়নে লাল পেড়ে সাদা শাড়ি । আমি হাতের ধরা সেমিনারের পেপারটার ওপর এলোমেলো চোখ বুলিয়ে যখন সামনে তাকালাম আমার দৃষ্টি বিস্ফোরিত হল । রাধারাণী ভলান্টিয়ার সেজে এক শিক্ষকের কোটের বুকে ব্যাচ পড়িয়ে দিচ্ছে । মুখে তার মৃদু হাসির রেখা । খোলা চুল গুলো পিঠময় এলিয়ে দেওয়া , হাটার সাথে সাথে তাতে ঠেউ খেলে যাচ্ছিল । কি অপরূপ লাগছিল ওকে । আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম সেদিকে। স্টেজ থেকে নামার সময় সে আড়চোখে চাইল আমার দিকে । মুখে সলজ্জ হাসি । এর অর্থ বুঝতে সময় লাগল না আমার । নিলয় আমার কুনুইয়ে টিপ্পনি কাটলে আমি ওর দিকে তাকিয়ে সলজ্জ হাসলাম ।আজ আমার দিনটা সত্যিই ভালো যাবে ।
.
.
.
.
. প্রিয় ডায়েরি , অনেকদিন কথা হয়না তোমার সাথে । আজ বলতে এলাম । কেমন আছ তুমি ? আমি ভালো আছি । বৃন্দাবনে রাধার সাথে কৃষ্ণ ভালোই আছে । ওরা জমিয়ে প্রেম করছে । ভার্সিটিতে ওদের রাসলীলার কাহিনী সর্বজনবিদিত । স্যাররাও মনে হয় জানে । তাই বারিণ স্যারের প্রিয়ভাজন হওয়ায়, মাঝেই একদিন তিনি আমায় পড়াশোনার হালচাল জিজ্ঞেস করছিলেন । আমি তাকে নিরাশ করিনি । প্রেমের সাথে সাথে পড়াশোনাও চলছে পুরো দমে । ভালোবাসা আমার লক্ষ্যের সামনে বাধা হয়ে দাড়ায়নি । এর জন্য আমি রাধার কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকব । সে যথেষ্ট ম্যচিয়োর , আমায় খুব বোঝে । জানো ডায়েরি , আমার আবদার রাখতেই যতই গরম পড়ুক না কেন সে রোজ চুল খুলে রাখে । আমার নিজেকে তখন ধন্য মনে হয় ।
কাল কি হয়েছে জানো , আমি আর রাধা ভার্সিটি ক্লাস শেষে একটু বাজারে গেছি । ওর নাকি কিছু কিনতে হবে । কেনাকাটা শেষে সে আমায় একটা চশমার দোকানে নিয়ে গিমে একটা জিরো পাওয়ারের লেন্স উপহার দিয়েছে । আমি ভীষণ অবাক হয়ে গিয়েছিলাম । তখন সে বলল ,
– শিমুল , তুমি রোজ রাত জেগে পড়াশোনা করছ । চোখের কি অবস্থা হয়েছে ,দেখেছ ? একদম লাল হয়ে আছে । শুধু পরিশ্রম করলেই হবে ? নিজের খেয়াল রাখতে হবে না ? কিন্তু তোমাকে বলে তো লাভ নেই । আমার কোনো কথাই শোনো না তুমি । মানছি, সামনেই তোমার ফাইনাল এক্সাম । তুমি তোমার সেরাটা দিতে চাও । তাই বলে কি নিজেকে ভুলে যাবে তুমি । এত পড়াশোনা করে কি লাভ যদি তুমি সুস্থই না থাকলে ! এখন থেকে রোজ রাতে পড়তে বসে এই চশমা পড়বে । তাহলে চোখে কম প্রেসার পড়বে । মনে থাকবে ?
আমি মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে ছিলাম ।
-দেখি , তাকাও আমার দিকে ।
রাধা আমার থুতনি ধরে তার দিয়ে ঘুরিয়ে চশমাটা পড়িয়ে দিল । তার পর আমার দিকে কয়েক পলক তাকিয়ে থেকে শব্দ করে হেসে উঠল । সপ্রশ্ন তাকিয়ে বললাম ,
-হাসছ কেন ? আমাকে কি খুব খারাপ দেখাচ্ছে ?
-না , খারাপ দেখাচ্ছে না । তবে মুখে একটা গম্ভীর গম্ভীর ভাব এসে গেছে । তোমাকে দেখে না কাকু কাকু মনে হচ্ছে । একদম সিনিয়র সিটিজেন ….
বলেই ঠোঁট টিপে হাসল সে ।
-তাই নাকি ? তবে তো তোমার লস হয়ে গেল । এই বুড়োর সাথেই যে তোমায় ঘর বাঁধতে হবে ।
-ইস , বললেই হল !
আমরা পার্কে বসে ছিলাম । আমি ওর হাত ধরতে চাইলে সে হাসতে হাসতে সরে গিয়ে এক সময় দৌড় লাগালো মেইন গেটের দিকে । আমিও ওর পিছু নিয়ে ওর হাত ধরে ফেললে সে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছিল । আমি ওকে আমার বাহু বন্ধনে আটকে রেখে মুগ্ধ হয়ে চেয়েছিলাম । স্বাভাবিক হয়ে আমরা ফিরতে উদ্যত হতেই একসময় রাস্তার দিকে তাকিয়ে সে হঠাৎ করেই গম্ভীর হয়ে গেল । আমি সেদিকে তাকিয়ে রাস্তায় গাড়ির জ্যাম ছাড়া কিচ্ছু দেখতে পাইনি । কিন্তু তারপর থেকেই ও কেন যেন চুপ হয়ে গেছে ? আমার সাথে কথা বলছে না । দেখাও করেনি আজ ।
ডায়েরি , তুমি বোধ হয় আমার ওপর অভিমান করবে এখন । প্রেমিকা কথা বলছে না জন্যেই আজ তোমার কথা মনে পড়ল বলে । কিন্তু কি জানো , নিজেকে আমার বড়ো ভাগ্যবান মনে হয় , যে আমি রাধার মতো একজনকে পেয়েছি । সে এত যত্ন করে আমার , ইচ্ছে করে ওকে নিজের ভিতর সযত্নে লুকিয়ে রাখি ।
★★★★★
কোনো মেয়েই মনে হয় নিজের মানুষটার তার প্রাক্তনের প্রতি মুগ্ধতা বা ভালোবাসা সহ্য করতে পারে না । অহনারও চোখ বেয়ে জলের ধারা গড়িয়ে পড়তে লাগল । গালে জলের ছোঁয়া পেতেই হাত দিয়ে মুছে হেসে ফেলল অহনা । ইস কি বোকা মেয়ে সে ! হতে পারে একটা মেয়েকে কোনো এক সময় সে সত্যি খুব ভালো বেসেছিল । কিন্তু এখন তো শিমুল তাকে ভালোবাসে । কত যত্ন করে অহনা আর ওদের অনাগত সন্তানের । তাহলে অহনা কাঁদছে কেন ? সে কি অনিশ্চয়তায় ভুগছে ! আবার হাসি পেল অহনার । স্বগতোক্তি করে বলল,
-‘ মিস রাধা ,সত্যি বলতে আমার আপনাকে সত্যিই হিংসে হচ্ছিল । কারণ শিমুল আপনাকে ভীষণ ভালোবেসে ছিল । কিন্তু আপনি আমাকে হিংসে করবেন না এটা ভেবে যে শিমুল এখন শুধুই আমার । সে এখন আমাকে ভালোবাসে এবং আমার একটা সুন্দর সংসার আছে। কিন্তু আমার আফসোসও হচ্ছে আপনার ভাগ্যের প্রতি । আপনি শিমুলের মতো একটা চমৎকার মানুষের প্রিয়জন হতে পারলেন না । দোয়া করি , আপনি যেন আপনার জীবনে সবথেকে সুন্দর মানুষটাকে পেয়ে যায় । আল্লাহ আপনাকে একটা সুন্দর জীবনযাপনের তৌফিক দান করুক । ‘
ঘড়ির দিকে তাকাল অহনা , রাত ন’টা বেজে পঁচিশ মিনিট । শিমুল এখনো এলো না কেন ? ফোন টা হাতে নিয়ে শিমুলকে কল করতে চেয়েও রেখে দিল ফোনটা । থাক , হয়তো ব্যস্ত আছে ! তাছাড়া বলেও দিয়েছে আজ তার ফিরতে দেরি হবে । তাই অহনা আর ঘাটাল না ওকে । আবার ডায়েরি খুলে পড়তে লাগল পরবর্তী কাহিনী জানার জন্য ।
চলবে….