এক_ফালি_রোদ
২০তম_পর্ব
– বলো, কি ব্যাপারে কথা বলবে?
– অয়ন এবং প্রাপ্তির বিয়ের ব্যাপারে মা। আসলে শেফালী চাচ্ছিলো না বিয়েটা হোক।
আমতা আমতা করে কথাটা বলেন নাসির সাহেব। নাসির সাহেবের কথা শেষ হবার আগেই মহীমা বেগম ধীর কন্ঠে প্রশ্ন করে উঠলেন,
– রাতে ঘুম কেমন হলো?
-জ্বী?
মহীমা বেগমের এমনধারা ছন্নছাড়া প্রশ্নে তব্দা খেয়ে গেলেন নাসির সাহেব। তিনি একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলতে চাইছে অথচ তার মা অন্য একটি গুরুত্বহীন প্রশ্ন ছুড়ে দিলো। এতে নাসির সাহেব খানিকটা বিরক্ত ও হলেন। কিন্তু বিরক্তি প্রকাশ করলেন না। কারণ তিনি তার মাকে প্রচুর ভালোবাসেন। মায়ের মনে কষ্ট দিয়ে কোনো কাজ করতে তিনি একেবারেই রাজী নন। ঠোঁটের কোনায় জোরপূর্বক হাসি টেনে নাসির সাহেব বললেন,
– মা আমার ঘুমের কথা বাদ দেন না, সে হয়েছে ভালোই। আপনাকে যেটা বলছিলাম এই বিয়েটা। এতে আমাদের কারোর ই মত নেই। বিশেষ করে শেফালীর৷ আর অয়ন ও এখনো মত দেয় নি।
– অয়নের মতামতের দাম তুমি কবে থেকে দিতে শুরু করলে?
– এটা কি বলেন মা, আমার ছেলে সে
– তাহলে এটা তো হয়তো জানোই, অয়ন ব্রাজিলের যাবার ভিসার জন্য আবেদন করেছে
মহীমা বেগমের কথায় হতবাক হয়ে গেলে নাসির সাহেব। নিজের ছেলে দেশান্তর হচ্ছে অথচ সে কি জানেও না। অবাক কন্ঠে তিনি বলেন,
– কি বলেন মা? ও এতো তাড়াতাড়ি ভিসার জন্য আবেদন করে ফেললো অথচ কাউকে জানালো পর্যন্ত না। শেফালী ও তো জানে না মা।
– জানি, আমাকে ও সে বলে নি। আমি জেনেছি তার কাগজপত্র দেখে। গত পরশু আমি তার রুমে গিয়েছিলাম। অয়ন তখন কিছু ফাইল গুছাচ্ছিলো বিধায় আমি জানতে পারলাম। ওই ফটোগ্রাফার তাকে নিজের কাজে নিয়েছে।
-………..
– আমার সিদ্ধান্ত তোমাদের কারোর ই পছন্দ হয় নি তাই না? কিন্তু আমি ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্তটা নিয়েছি৷ আর মেয়েটিকেও আমার পছন্দ হয়েছে।
– কিন্তু একটা মিথ্যুক মেয়েকে তুমি অয়নের জন্য পছন্দ করলেন মা?
– মিথ্যুক বলতে কি বুঝাতে চাইছো?
– মেয়েটি আপনাকে তার এবং অয়নের মিইথ্যে সম্পর্কের কথা বলেছে। অয়নের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই। তবুও সে মিথ্যে বলে এ বাড়ির বউ হতে চাচ্ছে সে। অয়নের জন্য একটা ভালো ঘরের মেয়ে খোঁজা এতোটাও কঠিন ব্যাপার নয় মা।
– প্রাপ্তি আমাকে কোনো মিথ্যে বলে নি। তাদের মাঝে কোনো অবৈধ কিংবা অসামাজিক সম্পর্ক নেই। প্রাপ্তি সেদিন ঠিক যা ঘটেছিলো আমাকে তাই ই বলেছে। ক্যামেরার এংগেলের জন্য ভিডিও না দেখে মনে হচ্ছিলো তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে, অশালীন আচারণ করছে। আর ভালো পরিবারের কথা বলছো নাসির। অয়ন কি সেই ভালো পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করবে? এমন হতে পারে না কি সে মেয়েটিকে ছেড়ে বিদেশ চলে গেলো। কিন্তু প্রাপ্তির বেলায় সে সেটা পারবে না। আমি সব ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রাপ্তি নামক মেয়েটির মাঝে এক অজানা সত্য খুজে পেয়েছি। একটা আশারর কিরণ! এক ফালি রোদ যেভাবে অন্ধকারকে দূর করতে যথেষ্ট, ঠিক তেমন একটা আশার কিরণ জীবনটাকে সাজাতে যথেষ্ট। প্রাপ্তি অয়নের জীবনের ঠিক সেই এক ফালি রোদের ন্যায়। দেখো আমাদের অয়নের ছন্নছাড়া জীবনটা ঠিক ওই মেয়েটা গুছিয়ে দিবে। আমার উপর বিশ্বাস রাখো। এই বিয়েটা হলে অয়ন নিজের থেকে পালাতে পারবে না।
– যা ভালো মনে করেন মা।
বলেই উঠে দাঁড়ালেন নাসির সাহেব। তিনি মায়ের কথায় অমত প্রকাশ করেন নি, তবে একেবারে সহমত ও হতে পারছে না। ভয় হচ্ছে এই ভেবে যে অয়ন আবার উল্টাপাল্টা কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে নেয়। যেভাবেই হোক তাড়াতাড়ি বিয়েটা দিয়ে দিতে হবে, যাতে চাইলেও অয়ন কোথাও পালিয়ে না যেতে পারে। তার মা তার ছেলের জন্য খারাপ কোনো সিদ্ধান্ত নিবেন না এটায় বেশ আস্থা রয়েছে নাসির সাহেবের। কিন্তু প্রাপ্তি মেয়েটা কি সত্যি পারবে অয়নের জীবনের এক ফালি রোদ হয়ে উঠতে!
বিকেল চারটা,
সূর্যমামা আজ বড্ড ক্ষেপে রয়েছে। মাথার উপরে অবস্থান করে তার প্রকোপ দেখাচ্ছেন। ঘড়ির কাটা চারটাতে এসে ঠেকলেও সূর্যের অবস্থায় সেটা বোঝা মুশকিল। মনে হচ্ছে এখন যেনো বারোটা বাজে,, দুপুরের সূচনা ঘটেছে। কিন্তু সেই দুপুর যে কবে পেরিয়ে বিকেলে পদর্পণ করেছে সেটা সূর্যমামার প্রকোপে বোঝা বড্ড ভার। এ নিয়ে চারতম লেবুর শরবতের গ্লাস ফাঁকা করলো অয়ন। তার সাদা গেঞ্জি গায়ের সাথে লেপ্টে রয়েছে,, তড়তড় করে ঘামছে সে। দেখে যে কেউ বলবে এইমাত্র গোসল সেরে এসেছে। সে অপেক্ষা করছে রমনা পার্কে এক বেঞ্চিতে। এই পার্কটি তার অন্তরের খুব কাছের। এখানে তার এবং রাইসার স্মৃতির কোনো অন্ত নেই। এক বটমূলের ছায়া তারা হাতে হাত রেখে কত প্রহর গল্প করতো তার ঠিক থাকতো না। অয়নের একটি মেমোরি কার্ড রয়েছে ১২৮ জিবির যেখানে শুধু রাইসার ছবি। কিন্তু আজ ঘটনাটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আজ সে অপেক্ষা করছে তার হবু বউ এর জন্য। প্রাপ্তির জন্য। আগামী সপ্তাহের শুক্রবার তাদের বিয়ে সম্পন্ন হবে। আজ ফাঁক পেয়ে প্রাপ্তির সাথে কিছু কথা বলে নেওয়াটা জরুরী। কিছু কথা যে তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া ভালো। বিয়ের খেলাটা যখন খেলতেই হবে তাহলে আটঘাট বেধে খেলাটাই উত্তম হবে বলে অয়নের ধারণা। বেশ কিছুক্ষণ ধরেই সে অপেক্ষা করছে, প্রাপ্তি এখনো আসে নি। সেই ফাঁকে কিছু ছবি তুললে মন্দ হবে না। যেই ভাবনা সেই কাজ, মোবাইলের ক্যামেরাটা অন করে সামনে খেলায় ব্যস্ত পথশিশুদের ছবি তুলতে শুরু করলো অয়ন। ছবি তুলতে তুলতে হঠাৎ খেয়াল করলো……………..
চলবে
[ পরবর্তী পর্ব ইনশাআল্লাহ আগামীকাল রাত নয়টায় পোস্ট করবো। দয়া করে কার্টেসি ব্যাতীত কপি করবেন না ]
মুশফিকা রহমান মৈথি