এক_ফালি_রোদ ১১তম_পর্ব

এক_ফালি_রোদ
১১তম_পর্ব

নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলো না প্রাপ্তি। প্রতিবাদ করেই বসলো। কিন্তু এই সামান্য প্রতিবাদের হাওয়া যেনো একেবারেই সহ্য হলো ইসমাইল সাহেবের। রাগটা যেনো বেড়েই গেলো তার। তিনি তখন ছুটে গিয়ে প্রাপ্তির গালে সজোড়ে থাপ্পড় লাগিয়ে দেন। ঘটনার আকর্ষিকতায় খানিকটা বেকুব সেজে গেলো প্রাপ্তি। গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো সে। চোখের নোনাজল যেনো আন্দোলনে নেমে পড়লো। প্রাপ্তির অনুভব হলো বা গালটা জ্বলছে। হয়তো আঙ্গুলের ছাপ ও পড়ে গেছে। শ্যাম বর্ণে ছাপটা বুঝা যাচ্ছে না ভালো করে। নাসিমা বেগম ইসমাইল সাহেবকে টেনে নিয়ে চিৎকার করে বললেন,
– পাগল হয়ে গেলে নাকি? কি করছো? এতো বড় মেয়ের গায়ে কেউ হাত তুলে?
– চ্যাটাং চ্যাটাং কথা শুনেছো? মুখে মুখে খালি তর্ক বেয়াদব মেয়ে একটা। পুরো হয়েছে বাপের মতো অপদার্থ। জীবনে তো কিছু করতে পারে নি। ওর রক্ত আর কত ভালো হবে? যতসব
– তাই বলে তুমি হাত তুলবে? মানুষ শুনলে কি বলবে? আর ও তো বলছে ওখানে একটা প্রজেক্টের কাজে গিয়েছিলো। তুমি আসলে পাগল হয়ে গেছো?
– তোমার এসব আহ্লাদে মেয়েটা এমন বিগড়েছে। কই আমার রাইসা তো এমন নয়। কি সুন্দর সংসার করছে। আর এই মেয়ের এসব স্বভাবের জন্য আমি তাকে ঘাড় থেকেও নামাতে পারবো না৷

নাসিমা বেগম এবং ইসমাইল সাহেবের কথা কাটাকাটি চলছে। প্রাপ্তির সেখানে আর দাঁড়াতে ইচ্ছে হলো না। ধীর পায়ে হেটে নিজের রুমে চলে এলো সে। ভার্সিটির হোস্টেলে কথা বলা রয়েছে, কিন্তু সেটা সময় সাপেক্ষ একটা ব্যাপার। অনেকবার চেষ্টা করেছে বাহিরে কোথাও বাসা ভাড়া নিতে কিন্তু অবিবাহিত হবার কারণে ভালো কোনো বাড়িওয়ালা ভাড়াও দেয় নি। রাইসা থাকতে বাসাটা থাকার যোগ্য মতে হতো। কিন্তু এখন খানিকটা কালাপানির অনুভূতি হয়। জেলখানার কালকোঠরিও এর চেয়ে ঢের ভালো। বিছানায় গা এলিয়ে দিলো প্রাপ্তি। নিজেকে অনুভূতি শূন্য মনে হচ্ছে তার। আচ্ছা তার বাবা আজ বেঁচে থাকলেও কি তিনি এভাবে তার গায়ে হাত তুলতো? কে জানে? হয়তো না, হয়তো তাকে বুঝতো। হয়তো তার মাথার উপর বটতলার ছায়ার ন্যায় থাকতেন। মানুষের মুখে শোনা যায়, অনাথরা পৃথিবীর সবচেয়ে একা মানুষের কাতারে পড়ে। এতোদিন না বিশ্বাস না করলেও এখন সেই অনুভূতিটা হচ্ছে। সত্যি আজ সে একা, বড় একা। চোখের পানি শুকিয়ে এসেছে। চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। হয়তো ঘুমাতে পারলে সব ভুলে যাওয়া যেতো, হয়তো_________________

রাত নয়টা,
ডাইনিং টেবিলে খেতে বসেছেন সিকদার পরিবার। আজ অনেকদিন পর অয়ন বাসায় খাচ্ছে। অন্য সময় তো তার আসা যাবার সময় বুঝাই ভার। রাইসা সবাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। আবরারের এক্সিডেন্টের পর আজ অনেকদিন পর সে ডাইনিং টেবিলে খাচ্ছে। যদিও তার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না, কিন্তু কাউকে বুঝতে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে না তার। অয়ন নিশ্চুপ খেয়ে যাচ্ছে। দু একবার রাইসার সাথে চোখাচোখি হলে চোখ সরিয়ে দিয়েছে। রাইসা এবং আবরারের বিয়ের বিশ দিন হয়ে গেছে। এই বিশটা দিন কোনো দরকার ব্যতীত রাইসা আর অয়নের কথা হয় নি। সেদিন প্রাপ্তির পায়ে চোট লাগার সময় একবার ফোন করেছিলো অয়ন। কিন্তু এই কথোপকথনের সীমা দু মিনিটের বেশি হয় নি। রাইসাও জানে সে এখন বিবাহিত, অতীতের কাসন্দি ঘাটলে সমাজে চরিত্রহীনার ট্যাগ ব্যাতীত কিছুই মিলবে না। খাবার মাঝখানেই নাসির সাহেব অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,
– শুনলাম, এক ভার্সিটিতে শিক্ষকের চাকরি নিয়েছো?
– জ্বী, পার্টটাইম টিচিং করি।
– তুমি বললে সেটাকে ফুল টাইম করে দিতে পারি। অন্তত সমাজে বলা তো যাবে তুমি ভার্সিটির শিক্ষক।
– তার প্রয়োজন হবে না। আমার একটা চাকরি হবে হবে করছে। মনে হয় খুব তাড়াতাড়ি ই পেয়ে যাবো। ব্রাজিলের একজন প্রখ্যাত ফটোগ্রাফার মিস্টার লুসিয়াস উইজলির আন্ডারে কাজ করার অফার পেয়েছি। আমি ছবি পাঠিয়েছি। উনার ভালো লাগলে আমাকে এজ এ এসিস্ট্যান্ট নিয়ে নিবেন। যদি সেটা হয়ে যায়। আমি ব্রাজিল চলে যাবো।

অয়নের নির্বিকার ছন্দে বলা কথাটা কর্ণপাত হতেই ভ্রু কুচকে যায় নাসির সাহেবের। তিনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি প্রয়োগ করে তাকে অবলোকন করতে থাকেন। অয়নের ভাবমূর্তির কোনো পরিবর্তন হলো না। সে তার মতো খেয়ে যাচ্ছে। রাইসার মুখে ঘোর অন্ধকারের বাদল নেমে এলো, যা আবরারের দৃষ্টি এড়ালো না। মহীমা বেগম ধীর কন্ঠে বললেন,
– তুই ছবি পাঠিয়ে দিয়েছিস বাবা?
– হ্যা দাদীজান, আর আমার প্রফেশনে এর চেয়ে ভালো অফার পাবো না। আমাজানে কাজ করার সুযোগ পাবো। আর মিস্টার উইজলির কাছে অনেক কিছু শেখার আছে। অন্তত তোমাদের ও আমার প্রফেশন নিয়ে লজ্জা পেতে হবে না।
– তা কত বেতন হবে তোমার শুনি?

অয়নের কথার মাঝেই নাসির সাহেব প্রশ্নটা ছুড়ে দিলেন। তার কন্ঠে অসন্তোষ স্পষ্ট। কিন্তু তাতে অয়নের কোনো ভাবের পরিবর্তন হলো না। সে স্বাভাবিক ভাবেই বলে উঠলো,
– প্রথম তিনমাস একশত পয়ষট্টি রিয়েল করে দিবেন। এর পরে নিজের কাজের উপর ইনকাম।
– তা পয়ষট্টি রিয়েল এ বাংলাদেশের কতো টাকা হয় শুনি?
– এরাউন্ড পচিশশত টাকা।
– হাহ দুই হাজার পাঁচশ টাকা। বাহ বাহ এই না হলো আমার ইঞ্জিনিয়ার ছেলে। এতো ভালো রেজাল্ট করে আজকে এই ফাতরামি করে বেড়াচ্ছে সে। আজকে একটা ভালো চাকরি থাকলে ত্রিশ পয়ত্রিশ হাজার টাকা এমনেই চোখ বন্ধ করে কামাই করতে পারতে। আবরারকে দেখো। কি এস্টাবলিশড সে। আর তুমি? ব্রাজিলের বনে বনে গিয়ে পচিশত টাকা ইনকাম করবে। ছিঃ

নাসির সাহেবের কথা গুলো এখন সহ্যসীমা অতিক্রম করে ফেললো। অয়নের বসে থাকার আর ইচ্ছে হলো না।
– আমার খাওয়া হয়ে গেছে মা

বলেই উঠে গেলো সে। নাসির সাহেবের যেনো আরোও মেজাজ খারাপ হতে লাগলো। হিনহিনে কন্ঠে বলল,
– এখন দেমাগ দেখানো হচ্ছে? হাহ, দেমাগ। খেলে খাবে না খেলে নেই।
– বাবা থামো না, ও যদি এইটা করে খুশি থাকে ওকে এটাই করতে দেও। কাজে যদি নিজের ভালো না লাগে তাহলে সেই কাজ করে আনন্দ পাওয়া যায় না। ওর হয়তো এই কাজে আনন্দ লাগে। একটা সময় ঠিক সে এই কাজেই নাম কামাবে দেখো।
– হাহ! আর ওর তরফদারি করো না আবরার।

অয়ন এক মূহুর্ত সেখানে দাঁড়ালো না, হাত ধুয়ে নিজের রুমে চলে গেলো সে। মেজাজ খারাপ লাগছে। আরোও মেজাজ খারাপ লাগছে আবরারের সুপারিশ শোনার পর। আবরার সব সময় তার সুপারিশ করে। যদিও সে তাকে সত্যি সাপোর্ট করে, কিন্তু এতে নিজের অসফলতার অনুভূতিটা আরোও প্রবল হয়ে যায়। এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চায় সে। পালাতে পারলে হয়তো ভালো লাগতো। সে সেই ব্যবস্থাটাই করবে। সিগারেটের আগুন ধরিয়ে সুখটান দেয় অয়ন। দৃষ্টি বাহিরের দিকে। হঠাৎ কানে এলো,
– খাবারটা খেয়ে নাও। কখনো খাবারের উপর রাগ করতে নেই।

কন্ঠটি কানে আসতে ঘুরে তাকায় অয়ন। অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করে,
– তুমি?………………….

চলবে

[ আজ আবার টার্গেট দিতে ইচ্ছে করছে। এই পর্বটিতে যদি ৬০০ লাইক আসে তাহলে আগামীকাল দুটি পর্ব দিবো। যদি ৬০০ লাইক আসে তবে পরবর্তী পর্ব ইনশাআল্লাহ আগামীকাল দুপুরে #১২তম_পর্ব পোস্ট করবো। আর নাহলে রাতে ইনশাআল্লাহ পোস্ট করবো। দয়া করে কার্টেসি ব্যাতীত কপি করবেন না ]

মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here