রঙ চা ☕
পর্বঃ০৫,০৬
লেখা – মাহফুজা_মনিরা
ভোর সকাল। ফজরের আজান পড়বে আর কিছুক্ষণের ভেতরেই। প্রায়াণ ধিমি পায়ে মিনু শেখের রুমে ঢোকে। জালাল শেখ আর মিনু শেখ দুজনেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। প্রায়াণ এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে কেউ তাকে দেখছে কিনা কোথা থেকে। নাহ কেউ নেই,আর থাকবেও না। এত সকালে কেইবা উঠবে তার বাড়ির!
প্রায়াণ সময় নষ্ট করে না। দ্রুত দ্রুত কাজ সাড়ে। প্রথমে বিছানার পাশের ছোট টেবিলের উপর রাখা জগ থেকে সমস্ত পানি নিচে ঢেলে জগ উল্টো করে রাখে। মিনু শেখের বাসায় হাটার জুতা জোড়ার একটা মিনু শেখের সিথানের কাছে রাখে প্রায়াণ। বইয়ের তাক থেকে এক এক করে সব বই নিচে এলোমেলো করে রাখে তবে নিঃশব্দে। জানালার পর্দার বাম পাশ টা ব্লেড দিয়ে একটুখানি কেটে টান মারতেই ফরফর করে ছিড়ে যায়। প্রায়াণ আৎকে উঠে তার বাবা মায়ের দিকে তাকায়। না,তারা এখনো ঘুম। উঠে নি শব্দে। প্রায়াণ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। তারপর চুপ করে বেরিয়ে পড়ে রুম থেকে। আর খানিকবাদেই আজান পড়বে তখন তার মা ও বাবা দুজনেই নামাজের জন্য উঠবে। প্রায়াণ সেই মুহুর্তের অপেক্ষায় থাকে।
.
নিজের রুমে গিয়ে কান খাড়া করে বসে থাকে প্রায়াণ। আজান হয়। ৫ মিনিট কেটে যায়। হঠাৎ ভেসে আসে প্রায়াণের মায়ের চিৎকার। প্রায়াণের মুখে পৈশাচিক হাসি ফুটে উঠে।
.
.
———প্রত্যুষের বাপ, উঠো না। দেখো কি কান্ড ঘটে গেছে।
জালাল শেখ বউয়ের চেঁচামেচিতে ধড়মড়িয়ে বিছানায় উঠে বসে।
——-কি হইছে মিনু? সাত সকালে চেঁচাও ক্যান?
মিনু শেখ কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে,
——–সামনে তাকাও। রুমের অবস্থা দেখো।
জালাল শেখ আশেপাশে চোখ ঘুরাতেই আৎকে উঠে। রুমের এই যা তা অবস্থা হলো কিভাবে!
মিনু শেখ সিথানের কাছ থেকে জুতা টা নিয়ে বলে,
——–এই দেখো সে এসেছিল আর জুতা টা আমার মাথার কাছে রেখে গেছে।
জালাল শেখ ভ্রু কুঁচকে বলে,
——–কে এসেছিল?
ততক্ষণে প্রত্যুষ, প্রায়াণ, প্রেমা তিনজনেই চলে এসেছে। পিউ উঠেনি। সে ঘুমে কাতর।
প্রেমা এসে চিন্তিত গলায় বলে,
——–কি হইছে আম্মু? চিল্লাইলা ক্যান?
প্রত্যুষ ও উত্তরের অপেক্ষায় বসে থাকে। আর প্রায়াণ এর ভাব খানা এমন যে চেঁচামেচি তে সদ্য ঘুম থেকে উঠায় সে খুব বিরক্ত।
মিনু শেখ সকলকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
——-দেখিস না আমার রুমের অবস্থা!! জ্বীন এসেছিল। জ্বীন। সেই এসব করে গেছে।
প্রেমা ভয়ে আৎকে উঠে। প্রত্যুষ বিরক্ত হয়। এই যুগে এসেও মায়ের এসব অন্ধবিশ্বাস প্রত্যুষের একদম ভালো লাগে না। কিন্তু প্রায়াণ..
সে জ্বীন নাম শুনতেই লাফ দিয়ে খাটের উপর উঠে মিনু শেখ কে জড়িয়ে ধরে।
——-আম্মু তার মানে আমি কোনো মিথ্যা স্বপ্ন দেখি নাই। সে আমার স্বপ্নেও এসেছিল আম্মু।
মিনু শেখ শুকনো ঢোক গিলে। বলে,
——-কে এসেছিল?
——-জানিনা। তবে সে অনেক লম্বা,তার গায়ে কেমন কাপড় জড়ানো। এসে বলছিল তোর ভাইয়ের বিয়ে নিশুতির সাথে দিস না। যদি দিস,তবে অনর্থ হয়ে যাবে। তোদের ঘর,সংসার সব পুড়ে ছারখার করে দিবো আমি।
মিনু শেখ হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন। জালাল শেখ এর গায়ের উপর ঢলে পড়ে বলে,
——–ওগো। এই বিয়ে ক্যান্সেল। অন্য মেয়ে দেখো। নিশুতির সাথে আমার প্রত্যুষের বিয়ে হচ্ছে না।
প্রত্যুষ নিশুতির সাথে তাকে বিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে কিছুই জানতো না। এখন জানতে পেরে বলে,
——-মা,তুমি নিশুতির সাথে আমার বিয়ে ঠিক করছিলা? নিশুতি ঐ ইফতির বোন না? মা আর ইউ ম্যাড?? ওর বয়স কই আর আমার বয়স কই!! ও আমার প্রেমার বয়সী বলতে গেলে। আমি ওকে বোনের চোখে দেখি আর তুমি কীনা!! তোমার জ্বীন কি বলছে কি বলে নাই আই ডোন্ট কেয়ার। বাট এই বিয়ে এমনিতেও হবে না। আমি জীবনেও ওকে বিয়ে করবো না। আন্ডারস্ট্যান্ড??
প্রত্যুষ দরজায় দুটো ঘুষি দিয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। ভেতরে ভেতরে আক্রোশে ফেটে পড়ছে ও। কেন সবাই ওর বিয়ের পেছনে এত উঠে পড়ে লেগেছে কে জানে!!
.
.
জালাল শেখ চেঁচিয়ে উঠেন।
——-এই দেখলা মিনু,তোমার ছেলে আমাদের উদ্দেশ্য করে কেমনে কথা বইলা গেলো!! এই জন্যেই তোমার এই ছেলেরে আমার ভাল লাগে না। যত বড় হইতেছে দিন দিন,ওত বেয়াদব হচ্ছে।
মিনু শেখ ও কাঁদা থামিয়ে গর্জে উঠেন।
——-ঐ ছেলে ভালা কাম করলে তোমার পোলা,আর খারাপ কাম করলে আমার পোলা?? চুপ একদম চুপ। এমনিতেও বিয়ে টা আর হচ্ছে না।
তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে বলে,
——–আপনি যদি আশেপাশে থেকে থাকেন তবে শুনোন,এই বিয়ে হচ্ছে না। আপনার কথাই রইবে।
প্রায়াণ মৃদু হাসে মায়ের পাগলামি দেখে। সে ছোট বেলা থেকেই দেখে এসেছে যে তার মা এসব জ্বীন পরীতে কি পরিমাণ বিশ্বাসী এবং এদের কে কত টা মান্য করে। কেননা তার ভাষ্যমতে জ্বীনের কথা না মানলে তারা বংশ নির বংশ করে দেয়। একবার তো মিনু শেখই সাধ করে ইউরোপ ট্রিপ রেখেছিল পুরো ফ্যামিলি কে নিয়ে ঘুরতে যাবে বলে। কিন্তু প্রায়াণ যেতে চায়নি। তার বন্ধুদের সাথে ট্রিপ ছিল বলে। সেবারও প্রায়াণ এভাবেই জ্বীনের নাটক করে ইউরোপ ট্রিপ ক্যান্সেল করেছিল। এবারও নিশুতিকে তার ভাবী হওয়া থেকে বাঁচালো।
প্রায়াণ মনে মনে নিজেকে বাহবা দেয় তার এসব বুদ্ধির জন্য।
.
.
প্রেমা আর প্রায়াণ একসাথে রুম থেকে বের হয়। প্রেমা বুঝে গেছে এসব কোনো জ্বীন পরীর কারসাজি না। এসব তার গুণধর ভাই প্রায়াণের কাজ। আর কেন করেছে সেটাও সে জানে।
প্রেমা সন্দেহের সুরে বলে,
——-ভাইয়া জ্বীন আংকেল টা তোর স্বপ্নেই এলো ক্যান? আমাদের স্বপ্নে কেন এলো না?
প্রায়াণ থতমত খায়। প্রেমা কিছু বুঝে গেলো না তো!
মুখে প্রসন্ন হাসি হেসে বলে,
———তোরা তো ছোট,তোদের স্বপ্নে এলে তোরা বেশি ভয় পেতি। তাই আসেনি।
প্রেমা যেন কথাটা বুঝতে পারে ঠিক সেভাবেই মাথা টা নাড়ায়। তারপর বলে,
——–তাহলে প্রত্যুষ ভাইয়ের স্বপ্নে এলো না কেন? সে তো তোমার থেকেও বড়!!
প্রায়াণ এবার কি বলবে ভেবে পায় না। ঈষৎ রাগী গলায় বলে,
——-আমি কেমনে জানমু! সেটা জ্বীন আংকেলই জানে।
প্রেমা স্মিত হেসে বলে,
——–ভাইয়া এবার না হয় নিশুতির বিয়ের প্রস্তাব টা আমাদের বাড়ি থেকে যেতো বলে তুই আটকে দিলি। কিন্তু যখন বাহির থেকে প্রস্তাব আসবে তখন? তখন কি করে আটকাবি?
প্রায়াণ থমকে যায়। দাঁড়িয়ে পড়ে সে। আসলেই তো। এভাবে তো কখনো ভেবে দেখেনি সে।
প্রেমা আবার বলে,
——-আমি জানি তুমি নিশুতিকে পছন্দ করো। আই থিংক ভালোবাসো তুমি ওকে। তাই একটা কথা বলি? যদি সত্যিই ওকে চাও তবে নিজের করে নিও দ্রুত। নয়তো ওর যে মা….ওকে বিয়ে দিয়ে বাসা থেকে তাড়াতে বেশিক্ষণ লাগবে না তার।
প্রায়াণ চুপ করে শুনে প্রেমার কথা গুলো। প্রেমা প্রায়াণের কাধে হাত রেখে বলে,
——–তুমি কি ওকে বলেছো যে ইউ লাভ হার??
প্রায়াণ এদিক ওদিক মাথা দুলিয়ে বলে,
——–নাহ।
——–বলে দিও। নয়তো ও হয়তো জানবেও না কোনোদিন যে ওরই বাসার পাশের কেউ ওর জন্য ভেতরে ভেতরে ধুকে ধুকে মরতেছে।
প্রায়াণ মাথা নিচু করে থাকে।
প্রেমা মুখে দীর্ঘ হাসি টেনে বলে,
——–আমি জানি নিশুতি তোমার হবে ভাইয়া। যদি কোনো হেল্প দরকার হয় আমাকে বলিও। আমি তোমার হেল্প করবো পাক্কা।
প্রায়াণ প্রেমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। মেয়েটা কত বড় হয়ে গিয়েছে!
.
.
সকালের আলো ফুটতেই প্রায়াণ প্রেমা কে পাঠায় নিশুতিকে ডেকে ছাদে নিয়ে আসতে। সে চায়,এখুনি নিশুতিকে নিজের মনের কথা টা বলে দিক।
প্রেমা কে পাঠিয়ে প্রায়াণ ছাদে উঠে। ছাদে উঠতেই চমকে যায় সে। নিশুতি রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে!
প্রায়াণ নিশুতির কাছে যেতেই শোনে, নিশুতি কবিতা আবৃত্তি করছে।
.
আমাকে ভালোবাসতে হবে না
ভালোবাসি বলতে হবে না
মাঝে মাঝে গভীর আবেগ নিয়ে
আমার ঠোঁট দুটো ছুঁয়ে দিতে হবে না
কিংবা আমার জন্য রাত জাগা পাখিও হতে হবে না
অন্য সবার মতো আমার সাথে
রুটিন মেনে দেখা করতে হবে না
কিংবা বিকেল বেলায় ফুচকাও খেতে হবে না
এত অসীম সংখ্যক “না” এর ভীড়ে
শুধুমাত্র একটা কাজ করতে হবে
আমি যখন প্রতিদিন একবার “ভালোবাসি” বলবো
তুমি প্রতিবার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে
একটু খানি আদর মাখা গলায় বলবে “পাগলি”
নিশুতির কবিতা আবৃত্তি শেষ হতেই প্রায়াণ নিচু কণ্ঠে বলে,
———পাগলি।
নিশুতি চমকে পেছন ঘুরে তাকায়।
হুট করে একফোঁটা শিশির উন্মুক্ত পায়ে লাগলে যেরকম শিরশিরানি অনুভব হয়,সকালের মিষ্টি একফালি রোদ চিড়ে নিশুতিকে পেছনে ফিরে তাকাতে দেখেও প্রায়াণের সেরকম একটা অনুভূতি হয়।
নিশুতি চমকে বলে,
——-ভাইয়া আপনি!!
“ভাইয়া” ডাক শুনে মুহুর্তেই প্রায়াণের সকল অনুভূতি ভেঙে খান খান হয়ে যায়। প্রায়াণ মনে মনে আক্রোশের সুরে বলে,
——–ভাইয়া? এই ডাক টাকে জবাই করা উচিত। খুন করা উচিত। ভাইয়া ডাকের জন্যেই হাজারো তরুণ আজ ভালোবাসাহীন!!
প্রায়াণকে নিচের দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবতে দেখে নিশুতি আবার বলে,
——-কি ব্যাপার?? কথা বলছেন না কেন?
প্রায়াণ মাথা তুলে তাকিয়ে বলে,
——-নাহ কিছুনা।
——-ওহ। আপনি এখানে?
——–হুম। শীতের সকালের মিষ্টি রোদ খেতে আসলাম। তুমি কেন এলে??
নিশুতি শুকনো মুখে আঙুলের ইশারায় দড়িতে শুকাতে দেওয়া কতগুলো কাপড় দেখায় প্রায়াণ কে।
প্রায়াণ বলে,
——-কাপড় ধুয়ে শুকাতে দিতে এসেছো?
——-জ্বি। ভাবলাম একটু দাড়াই। সারাদিন এমনিতেও বাসায় বসে ভালো লাগে না।
প্রায়াণ এগিয়ে গিয়ে নিশুতির পাশে রেলিং ঘেঁষে দাঁড়ায়।
শান্ত গলায় বলে,
——–তুমি খুব ভালো কবিতা আবৃত্তি করতে পারো নিশুতি।
নিশুতি আকাশপানে মুখ করে বলে,
——–ধন্যবাদ ভাইয়া।
——–একটা প্রশ্ন করি?
——–জ্বি।
——–কোথাও ঘুরতে বের হয়না?
নিশুতি মুচকি হেসে বলে,
——–নিয়মিত স্কুল যাওয়ার সময় পেতাম না আবার ঘুরতে যাওয়া!! আর আমার এমন কেউ ছিলও না যে ঘুরতে যাবো।
প্রায়াণ অবাক হয়ে বলে,
———ফ্রেন্ড?
———তেমন ফ্রেন্ড নেই। সংসারের ঝামেলা পোহাতে পোহাতে ফ্রেন্ডশিপ করার সুযোগ হয়নি এত।
ইতস্তত করে প্রায়াণ বলে,
——-বয়ফ্রেন্ড??
এবার নিশুতি হোহো করে হেসে উঠে।
——-ভাইয়া আমি কাজের জন্য মাঝে মাঝে খাওয়া দাওয়া, গোসল করাও ভুলে যাই! আবার বয়ফ্রেন্ড!! বয়ফ্রেন্ড রাখা একটা প্যারা ভাইয়া। সময় দিতে হয়,তার ইচ্ছেমতোই সব করতে হয়,নিজের জন্য কিছু করা যাবে না! আবার সময় না দিলে কত সমস্যা…এই সেই। সো এসব বিষয়ে আমি ভাবিনি কোনোকিছু ভাইয়া।
প্রায়াণ স্মিত হাসে নিশুতির কথা শুনে।
——-আচ্ছা নিশুতি,একটা প্রশ্ন করি??
——-জ্বি করুন।
প্রায়াণ নিশুতির মুখের দিকা তাকিয়ে বলে,
——–ভালোবাসা সম্পর্কে কি আইডিয়া তোমার??
নিশুতি খানিকক্ষণ তব্ধা মেরে থাকে প্রশ্ন টা শুনে। প্রায়াণ ভাবে এধরণের প্রশ্ন করা ঠিক হয়নি তার। তাই সরি বলতে নেয়। কিন্তু বলার আগেই নিশুতি বলে,
——–ভালোবাসা! ভালোবাসা সম্পর্কে আমার কাছে কোনো আইডিয়া নেই। তবে একটা কথা কি জানেন? ভালোবাসা খুব পাপী একটা জিনিস। একবার যার ঘাড়ে এসে পড়ে,সে চাইতেও এই সম্পর্ক ঠুকড়াতে পারে না। এই যেমন দেখুন না,আমার বাবা মা আমার সাথে এত কিছু করে তবুও আমি তাদের ছেড়ে কোথাও যাওয়ার কথা ভাবিনা। কারন ঐ যে আমি তাদের ভালোবাসি। আবার দেখুন না,ইফতি আমার সৎ ভাই হয়েও আমাকে কত আগলে রাখে। সাপোর্ট করে। ঐ যে ও আমাকে ভালোবাসে বলে। জানেন ভাইয়া,আজকালের এসব ভালোবাসা আমার কাছে আবেগ ছাড়া কিচ্ছু লাগে না। টাইম দিতে হবে,তাও আবার নিয়ম করে! না হলে রিলেশন ব্রেকাপ!! চৌদ্দ টা ডে পালন করতে হবে। সেই দিনগুলোয় আবার গিফট ও দিতে হবে। নয়তো এরকম বয়ফ্রেন্ড আমার দরকার নেই ভাব থাকে মেয়েদের মধ্যে! আর সবচেয়ে বেশি যেটা সেটা শো অফ! সবাইকে যেন দেখা পারলেই বাঁচে যে আমার উনি আমায় কত্ত ভালোবাসে অথচ ভেতরে ভেতরে কানাকড়িও ভালোবাসা নেই!
ভাইয়া আমার কাছে ভালোবাসা মানে সবার প্রথম একজন অপরজন কে বোঝা, একজন কাঁদলে অপরজনের সকল ব্যস্ততা থামিয়ে তাকে কাছে টেনে নেওয়া। আমার কাছে ভালোবাসা মানে একটা শক্ত কাধ। যার উপর আমার শরীরের সমস্ত ভার রেখে আমি আমার মনের গহীনে থাকা কষ্ট গুলো ব্যক্ত করতে পারবো। আমার কাছে ভালোবাসা মানে,নিয়ম মাফিক সময় দেওয়া না। আমার দুঃখ,সমস্যা সে বুঝবে আর তার টা বুঝবো আমি! আমার কাছে ভালোবাসা মানে কতগুলো দিন হলো রিলেশন এর সেটা না ভাবা,বরং আরো কতগুলো দিন একসাথে থাকা যায় সেটা নিয়ে ভাবা,স্ট্রাগল করা।
প্রায়াণ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে নিশুতির দিকে। এতদিন নিশুতির নর্মালিটির উপর প্রায়াণ ক্রাশ খেয়েছিল,আর আজ এক নতুন নিশুতির উপর খেলো। কয়েক মুহুর্তের ব্যবধানেই নিশুতি কত বড় হয়ে গিয়েছে! কত বড় বড় কথা কত অনায়াশে বলে ফেললো!
নিশুতি প্রায়াণের দিকে তাকিয়ে বলে,
——-আচ্ছা আসি ভাইয়া। দেড়ি হয়ে গেলো। বাসায় অনেক কাজ জমে আছে যে।
নিশুতি মিষ্টি হেসে চলে যায়। বিনিময়ে তার যাওয়ার দিকে প্রায়াণ ও মিষ্টি হাসি ছুড়ে দেয়।
.
.
বাসায় ঢুকতেই শারমিন হোসেন চিল্লাফাল্লা শুরু করেন।
——-এই জন্যেই তো বলি ছাদে গেলে আর আসার নাম থাকে না কেন। ঐ ঘরের ছেলের সাথে এত কিসের ভাব তোর হ??? আজ আসুক তোর বাপ। বারবার বলছি ঢেমড়ি মেয়ে,বিয়ে দিয়ে দাও। কিন্তু না,আমার কথা কে শুনে! আজকে আসুক সে।
নিশুতির অন্তর আত্মা কেঁপে উঠে শারমিন হোসেন এর কথা শুনে।
ইফতিকে ডেকে নিজের রুমে নিয়ে আসে নিশুতি। আতংকিত গলায় বলে,
——–ভাই আম্মু এসব কি বলতেছে? আমি কোথায় কি করলাম.
ইফতি গম্ভীরমুখে বলে,
———তুই ছাদে দাঁড়িয়ে প্রায়াণ ভাইয়ের সাথে কথা বলতেছিলি? তোর লেইট হচ্ছে দেখে আম্মু উপরে উঠছিল। তোকে আর প্রায়াণ ভাইয়াকে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখছে সে।
নিশুতি ধপ করে বিছানার উপর বসে পড়ে। দুর্বল গলায় বলে,
——-তার সাথে আমার কিছু নেই। আমি তাকে ডাকিও নি। সেই এসেছিল ছাদে হুট করে। আর আমরা জাস্ট এমনিই কথা বলছিলাম। স্পেশাল কিছু না ইফতি। বিশ্বাস কর।
ইফতি নিশুতির পাশে বসে বলে,
——–আমি জানি। আমি তোকে বিশ্বাস করি বোন। কিন্তু আম্মু তো করবে না। আব্বুও করবে না।
নিশুতি ইফতির হাত ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে।
——–আমার খুব ভয় করছে ইফতি। আজকে আব্বু আসলে না জানি কি কি কথা রটাবে আমার নামে আম্মু!
চলবে…..
রঙ চা
পর্বঃ০৬
লেখা – মাহফুজা_মনিরা
———তাহলে তোমার কথাই রইলো শারমিন। দুদিনের মধ্যেই বিয়ে দিয়ে এই মেয়েকে ঘর ছাড়া করবো আমি।
আজহার হোসেন শেষের লাইনটা চেঁচিয়ে বলেন। নিজের রুমে থেকেও স্পষ্ট শুনতে পায় তা নিশুতি ইফতি। নিশুতি চিন্তায় আড়ষ্ট হয়ে আছে। জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে বিছানার এক কোণে। ইফতির মাথাটা ঝিমঝিম করছে রাগে। নিজের মায়ের প্রতিই ঘৃণা লাগছে তার। নিশুতি তার পেটের সন্তান না হোক,পিঠের তো! এতটুকুও কি দয়া মায়া নেই ওর প্রতি?
ইফতি বিছানার চাদর খাঁমচে ধরে। নিশুতির দিকে তাকিয়ে তেজী গলায় বলে,
——–তুই যেয়ে কিছু বলবি নাকি আমি কিছু বলবো?
নিশুতি দুর্বল গলায় বলে,
——–এদের কে বলে কিছু হবে বলে মনে হয় তোর?
ইফতি বিছানা ছেড়ে দাঁড়িয়ে বলে,
———তাহলে তুই বসে থাক। আমি যাচ্ছি।আমিই যা বলার বলবো।
নিশুতি ইফতির দিকে এগিয়ে এসে বলে,
——–আর কত লড়বি আমার জন্য? বাদ দে ভাই। কপালে যা আছে আমার তাই হবে। নিজেকে নিয়ে আমি আর ভাবি না।
ইফতি চেঁচিয়ে বলে,
——-কিন্তু আমি তো ভাবি। আমি তোকে নিয়ে যথেষ্ট ভাবি এবং ভাববো আজীবন। তুই একদম চুপ থাক । আমাকে ভুলভাল বুঝিয়ে আটকাতে আসবি না। বালের কপাল!!! আমি যাচ্ছি।
ইফতি রুম থেকে বেরিয়ে যায়। নিশুতি উঠে এসে দরজার গোড়ায় দাঁড়ায়। কান খাড়া করে শুনতে চেষ্টা করে ওপাশে কি কি হচ্ছে তা। না জানি এই ইফতি টা আবার কোন ঝামেলা লাগিয়ে দেয়!
নিশুতির ভয়ের চোটে শরীরের সব লোম দাঁড়িয়ে যায়।
.
.
ইফতি আজহার হোসেন এর দিকে তাকিয়ে সোজাসাপ্টা বলে,
——–আম্মুর কথা শুনেই একদম আপুর বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবতেছো আর আম্মুর কথায় কতটুকু যুক্তি আছে সেটা একটু খুটিয়ে দেখবা না??
পাশ থেকে শারমিন হোসেন চোখ রাঙানি দিয়ে উঠেন। ইফতি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করে না। সে বলেই চলে,
——–সারাদিন আপু বাসার কাজ করে। একটা মানুষ সারাদিন কাজ করতে থাকলে দম বন্ধ লাগে তার। আপু তাই সকালে একটু দাঁড়িয়ে ছিল। তখন প্রায়াণ ভাইয়া ছাদে যায়। আর সে আপুর সাথে টুকটাক এদিক ওদিকের আলাপ করে। আর তাতেই একদম তাদের মধ্যে কিছু না কিছু আছে?? আব্বু কাকা তো মানা করে গেছিল আপুকে ঘরের একটা কাজও না করতে তবুও আপু করতেছে। কই সেটা কিছু না???
আজহার হোসেন ধমকে উঠেন ইফতিকে।
——–বয়স হবে ১৪-১৫ আর এখনি বাপ মায়ের মুখের উপর কথা বলিস?? শারমিন হোসেন ফোড়ন কাটেন।
——–আমার ভালো ছেলেটাকে ঐ ডাইনি মেয়ে নিজের বশে করে রাখছে। নাহলে দেখো না,ইফতি আগে আমাদের কত মান্য করতো। আর এখন!!
ইফতি দাঁতে দাঁত চেঁপে বলে,
——–আগে ছোট ছিলাম তাই বুঝতাম না কে ভুল আর কে ঠিক!! কিন্তু এখন আমার বুঝার যথেষ্ট বয়স হয়েছে। আর এখন আমি বুঝি। আসলে যে তোমরাই ভুল সেটাও বুঝতেছি। আর তাই আমি আমার বোনের পক্ষে। অন্যায়ের পক্ষে আমি কোনোদিন ছিলাম না,থাকবো না।
আজহার হোসেন চট করে দাঁড়িয়ে ইফতির গালে থাপ্পড় মেরে বসেন।
——-বেয়াদব!! বাবা মায়ের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানো না??
ইফতি গালে হাত দিয়ে মুচকি হেসে বলে,
——–আমি থাকতে এই বিয়ে আমি কখনো হতে দিবো না। আর তাতে আমি বেয়াদব হই আর যাই হই! আর আব্বু আম্মু মনে রাইখো,একদিন আপুর কাছেই তোমাদের ঠাই পাওয়া লাগবে।সেদিন আমিও আপুকে বলবো,যেন তোমাদের তাড়িয়ে দেয়। মাঝে মাঝে ঘিন আসে নিজের প্রতি!! আল্লাহ কি আর কোনো জায়গা পাইনি!? আমাকে এই পরিবারেই পাঠালো কেন!!
ইফতি আর এক মুহুর্ত দাঁড়ায় না। নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। আজহার হোসেন ধপ করে সোফার উপর বসে পড়ে। শারমিন হোসেন বিলাপ পেড়ে বলেন,
——–এখনো সময় আছে। ঐ ডাইনির থেকে আমাদের ছেলেকে আলাদা করো। নয়তো ইফতি একদম যাবে আমাদের হাত থেকে।
আজহার হোসেন চিন্তিত ভঙ্গিতে বলেন,
——–হুম করবো।
.
.
.
রাত ১১ টা।
সেই সকালের পর থেকে আর একটাবারো নিশুতিকে দেখেনি প্রায়াণ। আজকে নিশুতি স্নুপির খবর টা পর্যন্ত নিতে আসেনি! সব ঠিক আছে তো? নিশুতি ঠিক আছে তো!
প্রায়াণের মনের ভেতর অস্থিরতা কাজ করছে। সে সাতপাঁচ না ভেবে সরাসরি ফোন লাগায় নিশুতির নাম্বারে। দুইবার রিং পড়ে পড়ে কেটে যায়। ওপাশ থেকে কেউ ফোন তোলে না। এবার প্রায়াণের টেনশন আরো বেড়ে যাচ্ছে। সে বারবার সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করে যেন নিশুতি ঠিক থাকে। সুস্থ থাকে।
সাড়ে ১১ টার দিকে প্রায়াণ আরেকবার কল করে নিশুতির নাম্বারে।
তিনবার রিং হতেই ওপাশ থেকে নিশুতি ফোন তুলে।
ভাঙা গলায় বলে,
———হ্যালো।
প্রায়াণের বুকের ভেতরে ধক করে উঠে। নিশুতির কণ্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেন!! নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে তার।
প্রায়াণ তার চিন্তা প্রকাশ করে না নিশুতির কাছে। স্বাভাবিক গলায় বলে,
——–আজকে স্নুপিকে একবারও দেখতে আসলে না! স্নুপিও মন খারাপ করে বসে আছে তুমি আসোনি বলে। তাই ভাবলাম জিজ্ঞেস করি কেনো আসোনি!
নিশুতি বিরক্তির সুরে বলে,
———ওওও….
প্রায়াণ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
——–আর ইউ ওকে?
——–জ্বি। একটা কথা বলি?
——–হুম।
নিশুতি দম নিয়ে বলে,
——–আপনি আর কখনো আমাকে ফোন করবেন না। আমার সামনে আসবেন না। আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করবেন না।
প্রায়াণের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যায়।
সে উদগ্রীব কন্ঠে বলে,
———কেন? আমি কোনো ভুল করেছি নিশুতি?
———না। কিছু করেন নি। জাস্ট এমনিই। যেগুলো বললাম,সেগুলো করলে ভালো হয়। রাখছি।
নিশুতি খট করে ফোনের লাইন কেটে দেয়। প্রায়াণের হাত থেকে ফোন টা বিছানার উপর ধপ করে পড়ে। প্রায়াণের উন্মাদ লাগছে নিজেকে। হঠাৎ কেন নিশুতি এমন কিছু বললো!! কি কারন তার??
.
রাত যত বাড়ে প্রায়াণের সিগারেট খাওয়া তত বাড়তে থাকে। বুকের ভেতরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে কেউ যেন! নিশুতির বলা গোটাকতক লাইনে প্রায়াণের ফুসফুস জ্বলছে। ভীষণ জ্বলছে। সিগারেটও যেন আজ এই জ্বালা কমাতে পারছে না।
বারান্দায় উদাসী ভঙ্গিতে বসে সিগারেট টানছিল প্রায়াণ। ঠিক তখন স্নুপি আসে। এসে প্রায়াণের পায়ের আশেপাশে ঘুরঘুর করে। আবার প্রায়াণের পায়ের সাথে নিজের গাল ঘষে ।
প্রায়াণ পরম আদরে কোলে তুলে নেয় স্নুপিকে। হাত থেকে সিগারেট টা ফেলে দেয়। স্নুপির লোমশ দেহে হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
——–তোর মালকিন বোধহয় আমার হলো না আর স্নুপি। তাকে বুঝি হারিয়েই ফেললাম এবার…
.
.
সকাল বেলায় শারমিন হোসেন নিশুতির রুমে এসে নিশুতিকে ডাকে।
নিশুতি জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে ছিল চুপ করে। হঠাৎ শারমিন কে দেখে ভীষণ চমকে যায় সে। প্রয়োজন ছাড়া এদিকে ভুলেও পা মাড়ান না তিনি। আজ আবার কি এমন দরকার পড়লো তার!
শারমিন হোসেন নিশুতির সামনে দাঁড়িয়ে মিষ্টি করে বলেন,
——-নাস্তা খেয়েছিস? না খেলে খেয়ে নে। এরপর এই শাড়িটা পড়ে তৈরি হয়ে নে।
শারমিন হোসেন হালকা মিষ্টি কালারের একটা জামদানী শাড়ি নিশুতির হাতে ধরিয়ে দেয়।
নিশুতি এর মানে বুঝতে পারে। সে চুপ করে থাকে।
শারমিন হোসেন নিশুতির থুতনিতে হাত রেখে বলে,
———সুন্দর করে তৈরি হবি কিন্তু। তাদের পছন্দ হলে আজকেই তোর বিয়ে হয়ে যেতে পারে।
শারমিন হোসেন খুশিতে গদগদ ভাব দেখিয়ে বেড়িয়ে যান রুম থেকে। নিশুতির শাড়িটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
এটা তার মায়ের শাড়ি। মায়ের মৃত্যুর পর মায়ের সব জিনিস মেয়ের হয়। কিন্তু শারমিন হোসেন নিশুতিকে একটা জিনিসও দেয়নি তার মায়ের। সব নিজে লুফে নিয়েছেন।
নিশুতি আচমকাই কেঁদে উঠে। জানালা দিয়ে আকাশপানে তাকিয়ে বলে,
———আমাকে একা ফেলে চলে গেলে মা? আমাকেও নিয়ে যেতে। জানো না এই নশ্বর পৃথিবীতে যার মা নেই,তার কিচ্ছু নেই। কেউ নেই। তার জন্য বরাদ্দ কোনো ভালোবাসা নেই। আমি মানা করেছিলাম সেদিন,যেও না আজ গ্রামে। দেশের অবস্থা খারাপ। কোথা থেকে কি হয় আবার! সেই তুমি গেলেই গেলে। আমাকে কেন রেখে গেলে ঢাকা? যাওয়ার পথে দুর্বত্তরা তোমাদের বাসে আগুন ধরিয়ে দিলো। তুমি একা মানুষ। কারো সাহায্য পেলে না। গাড়ির ভেতরেই জ্বলে পুড়ে মরলে! জানো মা যখন খবর এসেছিল তুমি আর নেই,আমিও আমাতে ছিলাম না সেদিন।হাত আছড়ে আছড়ে কেঁদেছি। সবার কাছে অনুরোধ করেছি আমার মাকে ফিরিয়ে আনো। কিন্তু কেউ আনতে পারেনি। মানুষ মরে গেলে নাকি আর আসে না! তুমি কেন মরে গেলে মা? আমার কি হবে,কার কাছে থাকবো,কিভাবে থাকবো একটা বার ভাবলে না? তুমি স্বার্থপর না,ভীষণ স্বার্থপর।
নিশুতি দেয়ালে পিঠ ঘেঁষে বসে কেঁদে চলে। বুকের ভেতর টা ছিড়ে যাচ্ছে তার। নিয়তি এত বড় খেলোয়াড় কেনো??
নিশুতির রুমের দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে সবটাই দেখে ইফতি। তারও যে বুকটা ফেটে যাচ্ছে ভেতরে ভেতরে। সে উল্টো দিক ঘুরে চোখ মুছে নিজের। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে,যা কিছুই হয়ে যাক। এই বিয়েটা সে কিছুতেই হতে দিবে না।
.
.
১১ টা নাগাদ ছেলেপক্ষরা আসে দেখতে। নিশুতি ছেলেকে দেখে চমকে উঠে। বয়স কম হলেও ৪০ এর বেশি। এরকম একটা বুড়োর সাথে বিয়ে!!
শারমিন হোসেন খুশিতে ডগমগ হয়ে আছেন। এই বুড়োর গলায় নিশুতিকে ঝুলাতে পারলেই বাঁচেন তিনি। বুড়োর আরো দুই বউ আছে কিন্তু এবার তার চাই কচি মেয়ে। এর জন্য অবশ্য শারমিন হোসেন ভালো অংকের টাকাও পাচ্ছেন।
ছেলেপক্ষের পছন্দ হয় নিশুতিকে। তবে বিয়ে আজ না কাল। একটা প্রিপারেশন এর ব্যাপার আছে না! বুড়োর দুই বউ তো নিশুতিকে হাসি মুখে সতীন হিসেবে মেনেও নিয়েছে! নিশুতির মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব। এখন তার মনে হচ্ছে,নিয়তি খেলোয়াড় না,জানোয়ার!!
বিকেল বেলায় বারান্দায় চুপ করে বসে থাকে নিশুতি। আজ বাদে কাল তার বিয়ে! অথচ তার মধ্য নেই কোনো আনন্দ,নেই কোনো উল্লাস!
এভাবে তো সে চায়নি।
বিয়ে নিয়ে প্রতিটা মেয়ের একটা আলাদা স্বপ্ন,আলাদা উত্তেজনা থাকে। নিশুতিরও ছিল। খুব শখ ছিল তার,লালের বদলে নীল বেনারসি পড়বে সে। হালকা সাজেই নিজেকে মোহিত করে তুলবে। তার বর তাকে দেখবে আড়চোখে বারবার। আর নিশুতির চোখে ধরা পড়ে যেতেই নিশুতি মিষ্টি করে হাসবে।
ঈশ! কত স্বপ্ন….কত শখ….কত কিছু…..
কিন্তু পূরন হবে না হয়তো….
চলবে…..