রঙ চা☕
পর্বঃ০৩,৪
লেখা – মাহফুজা_মনিরা
সন্ধ্যা হতেই নিশুতিদের বাসায় বিচার বসে। সেখানে শারমিন হোসেন, নিশুতির বাবা আজহার হোসেন এবং নিশুতির ছোট কাকা নাসির হোসেন উপস্তিত আছে। প্রায়াণের আম্মু ও প্রায়াণও আছে। বিচার মূলত শারমিনের নামে। ইফতিই তার মায়ের নামে বিচার বসিয়েছে।
নিশুতি এক কোণায় চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। ভীষণ ভয় হচ্ছে তার। সে ইফতিকে বলেছিল এসব বিচার টিচার না বসাতে। এর প্রভাব পরবর্তীতে যদি তার উপরেই পড়ে তখন??
ইফতি সকল কে উদ্দেশ্য করে বলে,
———আম্মু আজকে সকালে নিশুতি আপুকে ভীষণ মেরেছে। মিনু আন্টি এসে না ছাড়ালে আজকে আপুকে মেরেই ফেলতো।
আজহার হোসেন বলেন,
——-নিশ্চয়ই কোনো কারনেই মেরেছে।
ইফতি রাগী গলায় বলে,
——–হুম। কারনেই মেরেছে। তার কারন আপু নাকি স্নুপিকে মাংসের টুকরো খাইয়েছে যা আম্মু নিজের খাওয়ার জন্য রেখেছিল।
আজহার হোসেন নিশুতির দিকে ফিরে কপাল কুঁচকে বলেন,
——–তাহলে তো ঠিকই আছে। এত বড় আকাম করছে ক্যান? আমি টাকা দিয়া মুরগী কিনি ওর কুত্তারে খাওয়ানোর জন্য??
নাসির হোসেন কথার মাঝে ফোড়ন কাটেন। বলেন,
——–আগে ইফতির পুরো কথা তো শুনে নেন ছোট্ট ভাই। নিশ্চয়ই জটিল কিছু হয়েছে, নয়তো সেই মিরপুর ১১ থেকে আমাকে ডেকে নিয়ে আসতো না ইফতি।
আজহার হোসেন চুপ হয়ে যান। ইফতি বলে,
——–আপুর কোনো দোষ নাই। সে খাওয়াই নাই স্নুপিকে কোনো মাংসের টুকরো। আর তার প্রমাণ স্বরুপ আছে প্রায়াণ ভাইয়া।
আজহার,নাসির,শারমিন সবার নজর এবার প্রায়াণের দিকে।
প্রায়াণ খানিকটা ঘাবড়ে যায় এভাবে সবাই তাকে দেখছে বলে। নিজেকে স্বাভাবিক করতে গলা খ্যাঁক করে উঠে।
ইফতি বলে,
——–ভাইয়া বলো। কাল রাতে কি হয়েছিল।
প্রায়াণ সবার দিকে সোজাসুজি ভাবে তাকিয়ে স্বাভাবিক গলায় বলে,
——–গতকাল রাতে আমি ছাদে যাই হাটাহাটি করার জন্য। হঠাৎ দেখি নিশুতি কে। আমি জিজ্ঞেস করলে ও বলে যে স্নুপিকে খাওয়ানোর জন্য আসছে। তখন আমার সামনেই স্নুপিকে খাবার দেয় নিশুতি। সেখানে কোনো মাংস ছিল না। জাস্ট কিছু ঝোল মাখানো ভাত আর তরকারি ছিল। স্নুপিকে খাইয়ে এরপর চলে আসে নিশুতি আবার বাসায়।
শারমিন হোসেন মুখ বাকিয়ে বলেন,
——-কি করে বিশ্বাস করবো তোমার কথা?? ঐ ছেড়ি তো নিজের রূপ দেখিয়ে তোমাকেও হাত করে নিতে পারে আর এসব মিথ্যা কথা বলাতে পারে তাইনা??
প্রায়াণ অবাক হয়। প্রচুর অবাক হয়। নিশুতিও চোখ বড়বড় করে তাকায় তার সৎ মায়ের দিকে। মিনু শেখ গর্জে উঠেন। বলেন,
——-এখন আপনি ফাদে পড়ে যাচ্ছেন দেখে কথা ঘুরিয়ে নিশুতি আর ছেলের নামে ভুলভাল কথা রটাচ্ছেন। আপনার চিন্তা ভাবনা এত নিচু ক্যাটাগরির কেন ভাবী?
প্রায়াণের ইচ্ছে করে বেশ কয়টা কড়া কথা শুনিয়ে দিক এই মহিলাকে। কত খারাপ হলে এত ছোট চিন্তা ভাবনা করতে পারে মানুষ!
প্রায়াণ অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে,
——আন্টি একে তো বিনা দোষে মেরেছেন নিশুতিকে। তার উপর আবার কীনা এখন এসব বলতেছেন!! আপনার মতো মহিলার জন্যেই ঘর সংসারে ক্যাচাল লাগে। বুঝছেন?
শারমিন হোসেন চেতে যান। স্বামীর উদ্দেশ্যে বলেন,
——–তোমার বউকে যা তা বলতেছে আর তুমি কিছু বলবা না?? চুপ করে থাকবা?
আজহার হোসেন কিছু বলার আগেই ইফতি বলে,
——–কি বলবে আব্বু? তোমারই তো দোষ। তুমি বিনা কারনে আপুকে মারছো। এখন নিজের দোষ ঢাকতে এসব উল্টো পাল্টা কথা বলতেছো।
আজহার হোসেন ধমক দিয়ে উঠে ইফতি কে।
——–চুপ কর তো ইফতি। ছোট মুখে অনেক বড় বড় কথা বলা শিখেছিস কিন্তু। বেয়াদব।
শারমিন হোসেন নিশুতিকে উদ্দেশ্য করে ফোড়ন কেটে বলে,
——–বেয়াদবের সাথে মিশলে তো বেয়াদবই হবে। নিজের মা টাও ছিল বেয়াদব,আর এটাও হইছে তাই। নিজের মা তো মরে গিয়ে বাঁচছে। কিন্তু আমার কাছে এই যন্ত্রণা রেখে গেছে।
নিশুতি নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে কথা গুলো শুনে। তাকে যা ইচ্ছা বলুক,তার মৃত মাকে কেন টানে এরা!! নিশুতির চোখ বেয়ে পানি পড়ে যায়।
ইফতি প্রায়াণের দিকে তাকিয়ে বলে,
——–বড়দের সামনে উচিত কথা বললেই বেয়াদব হয়ে যায় ভাইয়া। বুঝছো?
আজহার হোসেন এপর্যায়ে ইফতিকে থাপ্পড় মারতে উঠেন। নাসির হোসেন আর প্রায়াণ তাকে থামান। নাসির হোসেন চেঁচিয়ে বলেন,
——–ভাই আমার মা মরা ভাতিজি কে তোমাদের কাছে রেখেই আমি পাপ করে ফেলছি বোধহয়। ওকে নিয়ে অনেক ঝামেলা তোমার তাইনা? ঠিক আছে। ও না থাকলে তো আর ঝামেলা হবে না। তাহলে ওকে নিয়েই যাই আমি। তুমি তোমার মেয়ের দাবী ছেড়ে দিও ভাই,নিশুতিকে আমি আমার বাকি দুই মেয়ের মতো করেই বড় করবো।
আজহার হোসেন চুপ করে নতজানু হয়ে বসে থাকেন। সে কার পক্ষ নিয়ে কথা বলবে,বুঝে উঠতে পারছে না। তবে এখানে যে দোষ শারমিনের,তা তিনি ভালো করেই বোঝেন।
নিশুতির দিকে তাকিয়ে নাসির হোসেন বলেন,
——-নিশু মা। তোর যা যা আছে সব গুছিয়ে নে,আমি তোকে আজকেই নিয়ে যাবো।
শারমিন হোসেন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন। অবশেষে আপদ টাকে বিদেয় করা যাচ্ছে। অপরদিকে প্রায়াণের বুকটা ধক করে উঠে। নিশুতি চলে গেলে হয়তো আর কোনোদিন দেখা হবে না তার সাথে….প্রায়াণের মনের ভিতর নিশুতির জন্য জন্ম নেওয়া ভালোবাসা কী বুকের ভেতরেই চাপা রয়ে যাবে তবে??
প্রায়াণ ছটফট করতে থাকে। তার ইচ্ছে করছে বলতে যেন নিশুতিকে না নেয় তার কাকা। সে কি করে থাকবে নিশুতিকে ছাড়া!! দুদিনেই যে বড্ড মায়া জন্মে গেছে এই মেয়েটার উপর তার…
প্রায়াণের আর বলতে হয় না। নিশুতিই বেকে বসে। বলে,
——–না চাচা,আমি যাবো না। ইফতিকে ছেড়ে আমি থাকতে পারবো না।
ইফতি গর্জে উঠে। নিশুতির কাছে গিয়ে বলে,
——–মাথার নাট বল্টু ঢিলা হইছে তোর? এই জাহান্নামে ক্যান থাকবি হ? আমি প্রতি সপ্তাহে যাবোনি। তোর সাথে দেখা করে আসবোনি আপু। তবুও তুই যা। এখানের থেকে ওখানে অনেক ভালো থাকবি…..
নিশুতি স্মিত হেসে বলে,
——-আমি তোর বড় নাকি তুই আমার বড়? কানের তলায় লাগাবো আর একটাও পাকা পাকা কথা বললে। আমি যাবো না তোকে ছেড়ে, এটাই ফাইনাল।
ইফতি নাসির হোসেনের দিকে অসহায় চোখে তাকায়। নাসির হোসেন নিশুতিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
——–চল না রে নিশু। এখানে থেকে কেন মাইর গুতো খাবি শুধু শুধু?
নিশুতি বলে,
———না কাকা। আমি যাবো না। ইফতিকে ছেড়ে থাকা সম্ভব না আমার।
নাসির হোসেন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,
——-ঠিক আছে। তবে যদি কোনো সমস্যা হয়,আমাকে ফোন করে জানাবি কিন্তু।
আজহার হোসেনের দিকে তাকিয়ে বলেন,
———আজকে থেকে ওর পড়ালেখা,থাকা খাওয়া সব কিছুর যাবতীয় যত টাকা লাগে,আমি দিবো। ও এখানে একজন ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকবে। আর বাসার কোনো কাজ ও করবে না। থাকা খাওয়াতে মাস শেষে যে টাকা হবে, আমাকে বলবেন ভাই। আমি দিয়ে দিবো।
নাসির হোসেন উঠে দাড়ান। নিশুতির সামনে গিয়ে বলেন,
——-নিজের মেয়েকে পাশে বসিয়ে তোকে কোলের উপর বসাইছি। নিজের মেয়েদের কখনো খাইয়ে দেই না। তোকে দিছি। কারন তোর মা ছিল না। নিজের খেয়াল রাখিস মা। যা লাগবে আমাকে বলবি,ভাববি তোর বাপ নেই। মা মরলে বাপ হয় তালই,সেটা ভাইজান কে না দেখলে জানতাম না।
আজহার হোসেন মাথা নত করে বসে আছেন। কী বলবেন তিনি!! কিইবা বলার আছে তার…!
নাসির হোসেন আবার বলেন,
——–আসি, প্রতি সপ্তাহে একবার এসে তোকে দেখে যাবো।
শারমিন হোসেন কে উদ্দেশ্য করে বলেন,
——-আর ভাবী,আমার ভাতিজির গায়ে যদি একটা দাগ ও পড়ে মাইরের,তবে খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি।
নাসির হোসেন পকেট থেকে এক হাজার টাকার একটা নোট বের করেন। নিশুতির হাতে গুঁজে দেন তিনি। তারপর নিশুতির মাথায় হাত বুলিয়ে বেরিয়ে যান বাসা থেকে। মিনু শেখ ও বেরিয়ে যায়,পিছু পিছু প্রায়াণ। তবে যাওয়ার আগে নিশুতির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে কতক্ষন। ভাবে,দুনিয়াতে যেমন খারাপ মানুষ আছে,তেমন ভালো মানুষও আছে।
.
.
রাতের বেলা ইফতি প্লেটে ভাত বেড়ে নিশুতির রুমে আসে। নিশুতির গায়ে ভীষণ জ্বর। সকালের প্রহারের জন্য গায়ে ব্যথা ভীষণ তার। আর ব্যথা থেকেই জ্বর উঠেছে।
নিশুতি বিছানার উপর গুটিশুটি মেরে শুয়ে ছিল।
ইফতি ভাতের প্লেট টা বিছানার উপর রেখে নিশুতির সিথানের কাছে বসে।
——-আপুনি জ্বর কেমন?
——-হবে ১০১-১০২ রে। খুব শীত করছে। আরেকটা কম্বল এনে দে না।
ইফতি ভ্রু কুঁচকে বলে,
——–তুই সোয়েটার গায়ে দিয়েছিস??
নিশুতির এপাশ ওপাশ মাথা নেড়ে বলে,
——-না তো।
——–তা দিবি ক্যান। শীতে গুট্টি মেরে থাকবি,তবুও গায়ে শীতের কাপড় জড়াবি না,বদ মেয়ে কোথাকার।
নিশুতির ইফতির কথা শুনে ঠোঁট উলটে হাসে।
ইফতি উঠে গিয়ে আলমারি থেকে একটা সোয়েটার বের করে নিয়ে আসে।
——-উঠ। এটা পড় এক্ষুনি।
——-না পড়ল??
——-ছোট হয়েও মারবো তোকে।
নিশুতি ফিক করে হেসে ফেলে। উঠতে উঠতে বলে,
——–তুই যে কেন আমার বড় হলি না!
ইফতিও হাসে। নিজের হাতে নিশুতিকে সোয়েটার পড়িয়ে দেয়।
——–শীত কমেছে?
——-হুম কিছুটা।
——–এবার কম্বল গায়ে দিয়েই শুয়ে থাক।
——–আচ্ছা।
নিশুতি শুতে নিতেই ইফতি বলে,
——-উফফো,না শুইস না। খাবি আগে। বালিশে হেলান দিয়ে বস।
নিশুতি অসহায় দৃষ্টিতে বলে,
——-না ইফতি প্লিজ খাবো না। একদম খেতে ইচ্ছে করছে না।
——–কোনো কথা শুনবো না তোর। খেতে হবেই। ভালোয় ভালোয় চুপচাপ খা নইলে গুতাইয়া গুতাইয়া খাওয়াবো। আমারে তো তুই চিনিসই।
নিশুতি মুখ ফুলিয়ে বলে,
——–হুম চিনি। শয়তান কুত্তা বিলাই তুই…
——–আর তুই খুব ভালা মানুষ! নে হা কর।
নিশুতি জানে ইফতি ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে ছাড়বে না,যতক্ষণ পর্যন্ত না নিশুতি খেয়ে নিবে। একবার তো নিশুতিকে মুখ টিপে ধরে খাইয়েছিল ইফতি। নিশুতি শত চেষ্টা করেও সেবার ইফতির হাত থেকে রক্ষা পায়নি। ইফতি ছোট হলেও শরীরের গঠন ভালো তার,তাই শক্তিও বেশি।
নিশুতি মনে মনে “মটু হাতি ভোটকা” বলে ইফতি কে। ইফতি ভ্রু কুঁচকে বলে,
——-কি রে হা কর।
নিশুতি না চাইতেও হা করে। আর ইফতি খাইয়ে দেয় তাকে।
.
.
খাওয়া শেষে ইফতি বেসিনে হাত ধুচ্ছিল। শারমিন হোসেন তখন এসে বলেন,
——-তুই তো আমার পেটের সন্তান। অথচ তোকে দেখলে মনেই হয়না যে তুই আমার সন্তান!! ঐ বেয়াদব টার মতো হলি কি করে??
ইফতি মুচকি হেসে বলে,
——–পাপ বাপকেও ছাড়ে না আম্মু। ঘুমাও। রাত হয়েছে অনেক। গুড নাইট আম্মু।
.
.
রাত ১২ টা। কিছুতেই ঘুম আসছে না নিশুতির। বারবার মনে পড়ছে স্নুপির কথা। কি অবস্থায় আছে,খেলো কিনা!! নানান ধরনের চিন্তা এসে ভীড় করেছে নিশুতির ছোট্ট মাথায়।
নিশুতি উপায়ন্তর না পেয়ে প্রেমার নাম্বারে ফোন করে।
প্রেমা মাত্রই পড়াশোনা শেষ করে শুয়েছে। এত রাতে নিশুতির ফোন দেখে চিন্তিত হয়ে পড়ে। আবার কোনো সমস্যা হলো না তো…!
——হ্যালো নিশুতি। কি রে? কি হইছে?
——-কই কি হবে!
——-না হঠাৎ এভাবে ফোন দিলি যে তাই।
——–প্রায়াণ ভাইয়াকে একটু দরকার রে। তাই। উনার নাম্বার তো নেই আমার কাছে। তুই একটু প্রায়াণ ভাইয়া কে ফোন টা দে না।
প্রেমা ভারী অবাক হয়। প্রায়াণ ভাইয়া ইদানীং শুধু নিশুতি নিশুতি করে,আর নিশুতিও এখন ফোন করে প্রায়াণ কেই চাচ্ছে!! ঘটনা কী…!
নিশুতি ফোনের ভেতরেই ধমকে উঠে।
——-কি রে বোবা হয়ে গেলি ক্যান? ফোন টা দে না ভাইয়া কে। আরজেন্টলি দরকার উনাকে।
প্রেমা নিশুতির ধমকে কল্পনা থেকে বাস্তবে ফিরে আসে। বলে,
——-হুম দিচ্ছি দাড়া।
.
.
প্রায়াণ স্নুপিকে কোলে নিয়ে কথা বলছিল তার সাথে।
——-হ্যাঁ রে স্নুপি…তোর কি কপাল রে। তুই নিশুতির কত কাছাকাছি থাকিস,ওর স্পর্শ পাস! ইশ!! আমার না জ্বলে রে। আমিও ওর স্পর্শ পেতে চাই। ওর ঐ ছোট্ট ছোট্ট হাত ধরে মাইলের পর মাইল পথ পাড়ি দিতে চাই। নিশুতিকে আমার করতে চাই। তোর কি মনে হয়,নিশুতি আমার হবে???
স্নুপি কেউ কেউ করে উঠে।
প্রায়াণ চোখ বড়বড় করে বলে,
——-কি বলছিস রে তুই? নিশুতি আমার হবে?? সত্যিই হবে..!!
ঠিক তখনি প্রায়াণের রুমের দরজায় টোকা মারে প্রেমা। প্রায়াণ বিরক্তির গলায় বলে,
——-কে?
——–ভাইয়া আমি প্রেমা।
প্রায়াণ নাক মুখ কুঁচকে দরজা খুলে।
——–এত রাতে কি? দিনে জ্বালাইয়া মন ভরে না??
প্রেমা মুখ ভেংচি দিয়ে বলে-
——-বয়েই গেছে তোকে জ্বালাতে!! ফোন ধর। নিশুতির ফোন।
প্রায়াণের পায়ের তলার মাটি সরে যায় যেন। সবকিছু স্লো হয়ে আসে ধীরে ধীরে। ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে যেন…আর কেউ রু রু রু রুউউ….রু রু রু রুউউউ….ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক দিচ্ছে বোধহয়।
প্রেমা কপাল কুঁচকে বলে,
——-এই ভাইয়া। নে ফোন টা ধর।
প্রায়াণ সম্বিত ফিরে পেয়ে প্রেমার হাত থেকে ফোন টা নেয়। তারপর প্রেমা কে রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজা আটকে দেয়।
প্রেমা দরজার ওপাশ থেকে বলে,
——-কথা শেষে ফোন দিয়ে যাবি। আমার ফোন নিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি করবি না খবরদার।
প্রেমার কথা প্রায়াণের কান অব্দি যায় না। প্রায়াণ বিছানায় শুয়ে বলে,
——–হ্যালো।
ওপাশ থেকে নিশুতি বলে,
——–ভাইয়া সরি,এত রাতে আপনাকে ডিস্টার্ব করলাম।
——–না না ইটস ওকে। আমি এমনিতেও জেগে ছিলাম।
——–ওহ। ভাইয়া স্নুপির কি অবস্থা?? ও খাইছে? ওর জন্যেই ফোন করা।
প্রায়াণ স্নুপির দিকে তাকায় একবার। স্নুপি বিছানায় কম্বলের উপর গুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে।
প্রায়াণ বলে,
——-ও খেয়েছে। আর এখন ঘুমিয়েও আছে।
——-ওহ যাক। আমি খুব চিন্তায় ছিলাম ওকে নিয়ে। ও আপনাকে জ্বালাতন করে নি তো?
——-আরে না না। ও খুবই শান্ত আর ভদ্র প্রকৃতির। যেটা বলি সেটা কিভাবে বোঝে কে জানে,তবে সেটাই করে। যেমন বসে থাকতে বললে চুপ করে বসেই থাকবে। একটুও উঠবে না জায়গা থেকে।
নিশুতি স্মিত হেসে বলে,
——-কুকুরের মালকীন কে দেখতে হবে না!
প্রায়াণ মুচকি হেসে বলে,
——-হুম তোমার মতই তোমার কুকুর টাও শান্ত খুব।
নিশুতি কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে,
——-তবে আজ থেকে আপনিও ওর মালিক।
প্রায়াণ কিছু প্রতিউত্তরে কিছু বলে না।
নিশুতি হাই টেনে বলে-
——-তাহলে রাখছি ভাইয়া। গুড নাইট।
——-গুড নাইট।
নিশুতি ফোন রেখে দিলেও প্রায়াণের মুখে হাসির রেশ লেগে থাকে তখনো। মনে মনে বলে,
——-আজ রাতে আর ঘুম হবে না আমার। তোমাকে ভাবতে ভাবতেই রাত ফুরাবে নিশুতি….
চলবে….
রঙ চা ☕
পর্বঃ০৪
লেখা – মাহফুজা_মনিরা
মিনু শেখের মেজাজ ভীষণ গরম হয়ে আছে। কম হলেও ৬-৭ বার ডেকেছে প্রায়াণ কে। কিন্তু তার উঠার নাম নেই। যখন ডাকে তখন একটু নড়েচড়ে উঠে। এরপর যেই লাউ সেই কদু…!
আবার গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়। আজকে ভার্সিটিতে পরীক্ষা আছে ছেলেটার অথচ কোনোভাবেই উঠাতে পারছে না একে!!
প্রেমা আসে। বলে,
——-মা তুমি যাও। আমি তুলে দিচ্ছি ভাইয়া কে।
মিনু শেখ কপাল কুঁচকে বলেন,
——–আমিই যখন পারতেছি না তুই কিভাবে পারবি?
——–সে আমার ব্যাপার। তুমি যাও না,আমি তুলে দিবো প্রমিস।
মিনু শেখ খানিকক্ষণ প্রেমার দিকে ভ্রু উঁচিয়ে তাকিয়ে তারপর রুম থেকে বেরিয়ে যান। প্রেমা স্মিত হেসে নিজের মুখ টা প্রায়াণের কানের কাছে নিয়ে বলে,
——–নিশুতি এসেছে ভাইয়া। রঙ চা নিয়ে, খাবে না??
কথাটা যেন কারেন্টের মতো খেলে যায় প্রায়াণের মস্তিষ্কে। এক লাফে উঠে বসে বিছানায়। প্রেমা হোহো করে হেসে উঠে।
প্রায়াণ ব্যস্ত গলায় বলে,
——-কই? কোথায় এসেছে?
——-এসেছ তোমার স্বপ্নে!! উঠছিলে না তাই এই টেকনিক ইউজ করলাম। এবার উঠো। তোমার না আজকে পরীক্ষা?
প্রায়াণ রেগে যায়। বালিশ ছুড়ে মারে প্রেমার মুখের উপর।
——-তোর থোবরা টা ভেঙে দেওয়া উচিত বুঝলি?? ইডিয়ট।
প্রায়াণ গজগজ করতে করতে উঠে বাথরুমে যায়। প্রেমা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খায় বিছানায়। পিউ রুমে ঢোকে। প্রেমা কে একা এভাবে হাসতে দেখে বলে,
——-জ্বীনে ধরছে তোরে আপু? এমনে হাসতেছিস ক্যান?
প্রেমা হাসি বিলীন করে বলে,
——-এমনেই। তোকে বলতে হবে?
——-বল না,বল না.. আমিও শুনি। আমিও হাসি একটু..!
প্রেমা পিউ’র চুল টেনে বলে,
——–সর এখান থেকে। এত হাসতে ইচ্ছা করলে একা একা গিয়ে রাস্তায় বসে হাস। মানুষ পাগল মনে করে দু চার টাকা ফেলে দিবেনি চিকিৎসার জন্য!
প্রেমা রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আর পিউ গাল নাক ফুলিয়ে চেঁচিয়ে বলে,
——-আমি ক্লাস সিক্সে পড়ি দেখে আমাকে এত ইগনোর করিস না??? কুত্তি বিলাই একটা..
.
.
প্রায়াণ ফ্রেশ হয়ে মুখে পাউরুটি গুঁজে মিনু শেখের উদ্দেশ্যে বলে,
——–আম্মু গেলাম। দোয়া করিও।
মিনু শেখ প্রেমার মাথায় তেল লাগাচ্ছিল। সে উঠে এসে প্রায়াণের কপালে চুমু দিয়ে বলে,
——–ভালো ভাবে পরীক্ষা দে দোয়া করি আব্বাজান।
প্রায়াণ বের হতে নিতেই পিউ এসে চেঁপে ধরে তাকে।
——–ভাইয়া ২০ টা টাকা দিয়ে যা না…
———টাকা দিয়ে কি করবি??
———ফুচকা খাবো। দে না।
প্রায়াণ মুখ বাকিয়ে বলে,
——–আমার কাছে টাকা নাই। যা সর।
পিউ চোখ গরম করে বলে,
——–দিবি না??
——–নায়ায়ায়ায়ায়ায়া।
পিউ অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে,
——–ওকে ফাইন। আমিও আম্মুকে বলে দিবো যে তুমি সিগারেট খাও লুকিয়ে লুকিয়ে। আর আম্মু আমার কথা কিন্তু পুরোপুরি বিশ্বাস করে হু…
প্রায়াণ পিউ’র মুখ চেঁপে ধরে বলে,
——-অনেক হারামী হয়ে গেছিস। টাকার জন্য নিজের ভাইকে ব্ল্যাকমেইল করিস!! লজ্জা করে না তোর?
পিউ মাথা এপাশ ওপাশ করে বলে,
——–উহুঁ না। একদম লজ্জা করে না।
প্রায়াণ মানিব্যাগ থেকে ২০ টাকার একটা নোট বের করে পিউ’র হাতে গুঁজে দেয়। পিউ প্রায়াণের চুল এলোমেলো করে দিয়ে বলে,
———আমার লক্ষী ভাইয়া। কত্ত ভালো তুমি!
———হইছে ঢং করিস না! দরজা লাগিয়ে দে। বায়।
প্রায়াণ বেরিয়ে যায়। পিউ দরজা লাগিয়ে দেয়।
.
প্রায়াণ বের হতেই নিশুতিদের বাসার দরজা টাও খুলে কেউ। প্রায়াণ দাঁড়িয়ে থাকে এই ভেবে যদি নিশুতির সাথে দেখা হয়ে যায়! হয়োও তাই।
এক বালতি কাপড় চোপড় নিয়ে নিশুতি বের হয়।
কপালে তার বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে,পায়জামার কিছু অংশ ভেজা। প্রায়াণ বুঝে এতসব কাপড় নিশুতিই ধুয়েছে। প্রায়াণের খুব রাগ হয় নিশুতির উপর। তার ইচ্ছে হয় খুব কড়া করে বকে দিতে নিশুতি কে। কিন্তু কোন অধিকারে বকবে সে…?
নিশুতি প্রায়াণ কে দেখে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,
——-গুড মর্নিং ভাইয়া। কোথায় যাচ্ছেন এই সকাল সকাল?
——–ভার্সিটিতে। আজকে এক্সাম আছে আমার।
——-ওহ। আচ্ছা একটা জিজ্ঞেস করবো?
——-হুম।
——-কোন ভার্সিটিতে পড়েন?
——–ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। মাইক্রোবায়োলজি সাবজেক্ট নিয়ে।
নিশুতি চোখ বড়বড় করে বলে,
———বাহ বাহ! কত্ত ভালো জায়গায় পড়েন আপনি!
প্রায়াণ উত্তর দেয় না। স্মিত হাসে শুধু।
নিশুতি বলে,
——–তাহলে যান ভাইয়া। দোয়া করি আপনার এক্সাম ভালো হোক।
প্রায়ান মনে মনে বলে,
——–তুমি যখন দোয়া করছো তখন এক্সাম তো ভালো হবেই নিশুতি।
মুখে বলে,
——-থ্যাংকস।
——-ওয়েলকাম ভাইয়া।
নিশুতি বালতি নিয়ে ছাদের দিকে পা বাড়ায়। প্রায়াণ অপলক দৃষ্টিতে নিশুতির দিকে তাকিয়ে থাকে। একদম নর্মাল ভাবেও নিশুতিকে কী দারুণ লাগে দেখতে!
প্রায়াণ বিরবির করে বলে,
——-তুমি একটা মায়াবতী নিশু। আর তোমার মায়ার জালে আমাকে আটকে ফেলছো ধীরে ধীরে…
.
.
প্রেমা কলেজ গেলো কিছুক্ষণ আগে। সে এবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রী। নিশুতির থেকে ছোট হলেও তার আর নিশুতির মধ্যকার সম্পর্ক একদম বেস্ট ফ্রেন্ড এর মতোন। একে অপরকে তুই করেই বলতে পছন্দ করে তারা।
প্রত্যুষ অফিস গেছে অনেক সকালে। আজকে নাকি কিসের প্রেজেন্টেশন আছে তার। এই প্রেজেন্টেশন টা ভালো ভাবে কমপ্লিট করতে পারলে প্রত্যুষের প্রমোশন হবে অনেক উঁচু পোস্টে।
মিনু শেখ দুই ছেলের জন্যই মনে মনে দোয়া করছেন আর কাপড় ভাঁজ করছেন।
পিউ আজ বাসায়। স্কুল বন্ধ তার।
ঘরে একা একা একটুও মন টিকছে না। তাই মায়ের কাছে আসে গল্প করার জন্য।
——–মা চলো না গল্প করি।
——–এখন না পড়ে। আমার হাতে অনেক কাজ আছে পিউ।তার উপর কত টেনশন! আর ভালো লাগে না।
পিউ মায়ের পাশ ঘেঁষে বসে বলে,
——–কিসের টেনশন আম্মু??
——–এই যে সংসারে টেনশনের অভাব আছে! যখন তোদের সংসার হবে,তখন বুঝবি এসব। এছাড়াও প্রত্যুষের বিয়ে নিয়েও কত চিন্তা। কোথায় একটা ভালো মেয়ে পাবো কে জানে! আজকাল তো তেমন ভালো ঘরোয়া মেয়ে পাওয়াই যায় না।
পিউ চুপ করে ভাবে কিছু। তারপর বলে,
——–মা বাসায়ই যখন মেয়ে আছে তখন বাহিরে কেন খোজাখুজি??
মিনু শেখ কপাল কুঁচকে বলেন,
——–মানে?
——–মা নিশুতি আপু। সে তো ঘরের সব কাজ জানে। আবার পড়াশোনাতেও ভালো। দেখতেও সুন্দর। তাকে বড় ভাইয়ার বউ করে আনলে কেমন হয়? এতে মেয়েটার কষ্ট টাও কমতো..
মিনু শেখ পিউ’র মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন,
——-কত বুদ্ধি তোর! আমি তো ভেবেই দেখিনি এসব। নিশুতিকে আমারো খুব পছন্দ। আমার মনে হয় প্রত্যুষ ও ওকে পছন্দ করবে। আমি আজকেই তোর বাপের সাথে এই ব্যাপারে কথা বলে দেখবো।
পিউ খুশি হয় মনে মনে খুব। নিশুতি এই ঘরের বউ হলে ব্যাপার টা মন্দ হবে না। তার কাছেও নিশুতিকে অনেক ভালো লাগে। মেয়েটার মধ্যে একটুও অহংকার নেই। বেশ মিশুক….
.
.
পরীক্ষা শেষ আরো অনেক আগে। ক্যাম্পাসে বসে আছে প্রায়াণ। অহরহ বন্ধু বান্ধব থাকলেও তার কারো সাথেই কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। বারবার নিশুতিকে মনে পড়ছে তার।
একবার ফোন দিয়ে দেখলে কেমন হয়??
প্রায়াণ কালকে প্রেমার ফোন থেকে নিশুতির নাম্বার টা নিয়ে রেখেছিল তার কাছে।
প্রায়াণ সেই নাম্বারে কল লাগায়। দুবার রিং হতেই ওপাশ থেকে একটা মিহি কণ্ঠ ভেসে আসে।
——-হ্যালো আসসালামু ওয়ালাইকুম।
——-ওয়ালাইকুম আসসালাম। আমি প্রায়াণ নিশুতি।
নিশুতি অবাক হয়। কিন্তু নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলে,
——আপনি?
——-হ্যাঁ আমি।
——-কেন ফোন করেছেন? আই মিন কোনো দরকার??
এবার প্রায়াণ কি বলবে ভেবে পায় না। সে তো কোনো দরকারে ফোন করে নি।
প্রায়াণ কে চুপ করে থাকতে দেখে নিশুতি বলে,
——–হ্যালো…প্রায়াণ ভাইয়া।
প্রায়াণ আমতা আমতা করে বলে,
——–ফোন দিয়েছিলাম স্নুপির জন্য। আসলে আমি তো ভার্সিটিতে। ও কেমন আছে,খেলো কিনা,তুমি খোঁজ নিয়েছো কিনা এসব জানার জন্যেই কল দেওয়া।
নিশুতি বিনীত গলায় বলে,
——-আপনি স্নুপিকে নিয়ে এত চিন্তা করেন ভাইয়া! আ’ম ইমপ্রেসড।
প্রায়াণ মুচকি হাসে।
নিশুতি বলে,
——-আমি গিয়েছিলাম আপনাদের বাসায়। আমি দেখেছি স্নুপিকে। ও ঠিক আছে। দুপুরে আমি ওকে খাইয়ে দিয়ে আসছি। মেবি এখন ও ঘুমোচ্ছে।
——–ওহ!
——–হুম ভাইয়া। তাহলে রাখছি এখন?
——-নিশুতি।
——-জ্বি।
——–একটা কথা বলি?
——-হুম।
——–মাইন্ড করবা না তো?
——–নাহ। বলুন।
——–তুমি খুব ভালো রঙ চা বানাও।
নিশুতি মিষ্টি করে হাসে।
বলে,
——–আজকে সন্ধ্যায় আবার বানিয়ে খাওয়াবো। আসবেন না সন্ধ্যার আগে বাসায়?
প্রায়াণ উল্লাসিত হয়ে বলে,
——–এক্ষুনি রওনা দিচ্ছি। জলদিই চলে আসবো।
নিশুতি হেসে ফেলে।
——–আচ্ছা রাখছি।
——–আচ্ছা।
নিশুতি ফোন রেখে দেয়। প্রায়াণ বুকের উপর হাত রাখে তার। হৃদযন্ত্র টা এত জোরে জোরে ঢিপঢিপ করছে কেন!
.
.
——-আম্মুউউউউউউ এটা কি বলতাছো তুমি?
প্রায়াণের চেঁচামেচি দেখে মিনু শেখ খুন্তি নিয়ে আসে। বলে,
——–আরেকবার চেঁচাবি তাহলে এই খুন্তি তোর মুখে ঢুকাই দিবো। ফাও কামে চিল্লাস ক্যান?
প্রায়াণ বিছানার একদম কর্ণারে সরে বসে বলে,
——-আম্মু একটু শুনো আমার কথা টা। নিশুতি কত ছোট আর ভাইয়া কত বড়! আর তুমি কিনা ভাইয়ার সাথে নিশুতির বিয়ে দিতে চাচ্ছো?
——-তো? আমার ডিসিশনই ঠিক। তোর বাপকেও বলেছি। সেও রাজী। এবার শুধু নিশুতি রাজী হলেই হয়। ওর আম্মু আব্বু কে আমি মানিয়ে নিতে পারবো। ও রাজী হলেই আমি বিয়ের সব বন্দোবস্ত করে ফেলবো।
প্রায়াণের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে যেন। বুক টা ছ্যাৎ করে উঠে তার। মাথা ঘুরাচ্ছে তার। তার ভালোবাসা কীনা হতে যাচ্ছে তার ভাবী!! ওহ নো…
প্রায়াণ প্রেমা পিউ’র দিকে অসহায় চোখে তাকায়। প্রেমা তো আগে থেকেই আন্দাজ করতে পেরেছিল প্রায়াণের সাথে নিশুতির কিছু। আজ সিউর হয়ে গেলো। প্রায়াণের চোখে স্পষ্ট নিশুতির জন্য ভালোবাসা দেখা যাচ্ছে।
পিউ বলে,
——-ভাইয়া সমস্যা কী তোমার? নিশুতি আপু এই ঘরের বউ হয়ে আসলে তোমার কী প্রবলেম বুঝলাম না!!
প্রায়াণ দাঁতে দাঁত চেঁপে বলে,
——–তোর বুঝা লাগবে না।
পিউ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে প্রায়াণের দিকে। প্রেমা মুখ টিপে টিপে হাসে।
প্রায়াণ মনে মনে বলে,
——সরি আম্মু। তোমার দুর্বল সাইডে এবার আমাকে আঘাত করতেই হবে। নয়তো আমার নিশুতি আমার বউ হওয়ার জায়গায় ভাবী হয়ে যাবে। ওহ আল্লাহ!! দড়ি ফালাও। দড়ি ফালাও…
চলবে…..