মেঘের_অন্তরালে
পর্বঃ ০৮
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
নিহান মাইশার ধরা হাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে হাতটা সরিয়ে নিলো।
হাসিটা বজায় রেখে বললো, তুমি সরাসরি আমাকে কোনোদিন বলোনি তবে নিজের ব্যবহারে বুঝাতে চেয়েছো অনেকবার। আর আমি কোনো বাচ্চা ছেলে নই যে বুঝতে পারবো না। কিন্তু কখনো কিছু বলিনি কারণ তুমি আমাকে স্পষ্ট করে কিছু বলোনি তাই। তুমি যেমন বুঝাতে চেয়েছো তুমি আমাকে ভালোবাসো, আমিও তেমন তোমাকে বুঝাতে চেয়েছি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই তোমার প্রতি। তুমিও কোনো বাচ্চা মেয়ে নও যে বুঝতে পারবে না।
মাইশা হতাশ গলায় বললো, কিন্তু কেনো নিহান ?
সব কেনোর উত্তর হয় না। আজ তুমি আমাকে দেখা করার জন্য এতোবার রিকুয়েষ্ট করার সময়ই বুঝেছিলাম তুমি এসব বলার জন্যই দেখা করতে চাইছো। আমিও চাইছিলাম বিষয়টা শেষ করতে, তাই আসলাম। আশা করি তুমি তোমার উত্তর পেয়ে গেছো আর কখনো এটা নিয়ে আমার সাথে যোগাযোগের করার চেষ্টা করবে না।
নিহান উঠে চলে গেলো আর মাইশা টলমলে চোখে তাকিয়ে দেখতে লাগলো নিহানকে। কাউকে ভালোবেসে তাকে চাওয়াটা কী অপরাধ ? উত্তরটা নিহানের কাছে জানতে চাইলে হয়তো ভালো হতো। নিহান চোখের আড়াল হতেই মাইশার চোখ থেকে এক বিন্দু পানি গড়িয়ে গেলো।
১২.
হসপিটালের করিডোরে মায়ের পাশে বসে আছে ইসরা। চোখ দুটোয় আজ শ্রাবণের ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে, থামার নাম নিচ্ছে না। পারভীন বেগম থেকে থেকে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠছে। ইমন এসবের কিছু জানে না এখনো, হুরকে পাঠিয়েছে ইমনকে স্কুল থেকে আনতে, প্রতিদিন পারভীন বেগমই যায় আজ হুর গেছে। ইখতিয়ার আহমেদের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। ইসরার মামা ঢাকার বাইরে আছে তাই আসতে পারেনি আর বড় চাচার পরিবার গ্রামে। একটা কথা সত্যি, বিপদে খুব কম মানুষকেই পাশে পাওয়া যায়।
ডক্টর বাইরে আসলে ইসরা আর তার মা দৌড়ে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো, ইসরা অস্থির গলায় বললো, ডক্টর আমার বাবা কেমন আছে ?
এবারের মতো বেঁচে গেছে কোনো ক্ষতি হয়নি, সময় মতো হসপিটালে আনার কারণে। তবে উনার দিকে খেয়াল রাখবেন যাতে কোনো বিষয়ে টেনশন না করে আর উত্তেজিত না হয়।
ইসরা চোখ মুছে বললো, খেয়াল রাখবো ডক্টর। এখন আমরা দেখা করতে পারি ?
এখন তো ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে রাখা হয়েছে, ঘুম ভাঙলে আপনারা দেখা করতে পারবেন। তবে আজ বাসায় নিতে পারবেন না দুদিন হসপিটালে থাকতে হবে।
ঠিক আছে ডক্টর, ধন্যবাদ।
ইট’স ওকে, এটা আমাদের কাজ।
মুচকি হাসি উপহার দিয়ে ডক্টর চলে গেলো। ইসরা পাশের চেয়ারে বসে পড়লো।
মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো, বাবা এখন ভালো আছে। তুমি বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে এসো, রাতে এখানে থাকতে হবে তো। তুমি যাও আমি এখানেই আছি। ইমনকে আজ হুরের কাছে নিয়ে রাখতে বলে দিবো আমি।
পারভীন বেগম আর কথা বাড়ালেন না। মেয়ের কথা মতো বাড়িতে চলে গেলেন। ইসরা চেয়ারে বসে রইলো ক্লান্ত ভঙ্গিতে। নিজের জীবনের নাটকীয়তা দেখে সে ক্লান্ত। সব কেমন এলোমেলো লাগছে। ইসরা জানে এটা তার জন্য উচিত নয় তবু রেস্টুরেন্টে নিহানের হাতে মেয়েটার হাত দেখে তার অদ্ভুতভাবে কষ্ট হয়েছে। না চাইতেও বুক চিঁড়ে কান্না এসেছে। সেই একই মুহূর্তে আবার নিজের বাবার জীবনের আশঙ্কার মতো খবর তাকে হাজারটা টুকরো করে দিয়েছে।
ইসরা থাই গ্লাসের বাইরে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো, আমার জীবনে আর কতো নাটকীয়তা বাকি আছে খোদা, আর কতো ?
সন্ধ্যার কিছুসময় আগে ইখতিয়ার আহমেদের ঘুম ভেঙে গেলো। নার্স গিয়ে ইসরাকে খবরটা দিতেই ইসরা উঠে দাঁড়ালো। নিজের মনকে শান্ত করে কেবিনে ঢুকে গেলো। দরজা ঢেলে ভেতরে গিয়ে সাদা বেডটায় নিস্তেজ হয়ে শুয়ে থাকতে দেখলো নিজের বাবা নামক মানুষটাকে। বুক চিঁড়ে দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে এলো। একটা চেয়ার টেনে বাবার কাছে বসে আলতো করে মাথায় হাত রাখলো। আলতো স্পর্শে চোখ মেলে তাকিয়ে মেয়েকে দেখে ডুকরে কেঁদে উঠলো ইখতিয়ার আহমেদ। বাবার চোখের পানি ইসরার বুকে তীরের মতো বিঁধছে।
ইখতিয়ার আহমেদ মেয়ের হাতটা বুকে জড়িয়ে ভাঙা গলায় বললো, আমাকে মাফ করে দে মা। আমি নিজের হাতে তোর জীবনটা শেষ করে দিয়েছি। মাফ করে দে আমাকে। এই অপরাধবোধ আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।
বাবা,,,,
দীর্ঘ এক মাস পর মেয়ের মুখে বাবা ডাক শুনে মরুভূমির মাঝে এক পশলা বৃষ্টির মতো কাজ করলো ইখতিয়ার আহমেদের মনে। বাবা বাবা বলে অস্থির করে তোলা মেয়েটা আজ এক মাস তাকে বাবা বলে ডাকে না। একজন বাবার জন্য এর থেকে কষ্টের আর কী হতে পারে ?
তুমি উত্তেজিত হইও না, তুমি অসুস্থ শান্ত হয়ে থাকো।
আমাকে মাফ না করলে আমি শান্তি পাচ্ছি না রে মা।
এবার বুঝতে পেরেছো তো, কেউ কাউকে ঠকিয়ে ভালো থাকতে পারে না ?
খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছি রে মা। নিহানকে পেলে তার কাছেও ক্ষমা চেয়ে নিবো।
ইসরা আর কিছু না বলে বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। একটু পরই পারভীন বেগম প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে উপস্থিত হলেন। সব গুছিয়ে আসতে এতো লেট হয়ে গেছে। ইসরার জন্য খাবার নিয়ে এসেছে ইসরা সেগুলো খেয়ে নিলো।
পারভীন বেগম আমতা আমতা করে বললো, তুই চলে গেলেই ভালো হতো ইসরা। ও বাড়িতে কাউকে জানাসনি।
ও বাড়িতে আমার জন্য কেউ অপেক্ষা করে বসে নেই। কিংবা ও বাড়ির কারো মন রক্ষা করে চলারও আমার কোনো দায় নেই। নিজের অসুস্থ বাবাকে রেখে আমি কোথাও যাচ্ছি না।
তবু একবার জানিয়ে দিলে হতো না ?
আমার ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেছে আর এতোটা প্রয়োজনও নেই। কেউ খুঁজবে না আমাকে।
পারভীন বেগম আর কথা বাড়ালেন না। ইসরা বাবার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
১৩.
ড্রয়িংরুমে চিন্তিত মুখে বসে আছে আকরাম রেজওয়ান সহ তার পুরো পরিবার। নিহানও বসে আছে সোফার এক কোণে। এতো রাত হয়ে গেছে ইসরা এখনো বাসায় ফেরেনি, এটাই সবার চিন্তার বিষয়। ইসরার কিছু হয়ে গেলে তার বাবা-মায়ের কাছে কী উত্তর দিবে সেটা ভেবে সবার মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এদিকে ইসরার ফোনও সুইচ অফ বলছে সন্ধ্যা থেকেই।
নিহান বিরক্ত হয়ে বললো, বাবা আমি তোমাকে বারবার বলছি ঐ মেয়ে নিজের বাবার বাড়ি গেছে। তুমি ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করো আমার কথা মিলে যাবে।
আকরাম চিন্তিত গলায় বললো, আর যদি না গিয়ে থাকে। আর তারা জানতে চায় তাদের মেয়ে কোথায়, তখন কী বলবো ?
এভাবে হাত গুটিয়ে বসে থেকেও তো কোনো লাভ নেই। সেখানে না গিয়ে থাকলে আমাদের পুলিশের কাছে যেতে হবে। তোমার কথা বলতে অসুবিধা হলে আমাকে নাম্বার দাও আমি জিজ্ঞেস করছি।
আকরাম সাহেব কিছু একটা ভেবে নিহানের দিকে নিজের ফোন এগিয়ে দিলো। নিহান ইসরার বাবার নাম্বারে কল দিলো কিন্তু সুইচ অফ বলছে। এরপর ইসরার মায়ের নাম্বারে কল দিলো।
পারভীন বেগম ওয়াশরুমে গেছে তাই ফোনটা ইসরা রিসিভ করে হ্যালো বলতেই নিহান ইসরার গলা চিনতে পারলো। কোনো কথা না বলেই কল কেটে দিলো।
আকরাম সাহেব প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, কী হলো কথা না বলে কেটে দিলি কেনো ?
নিহান চোখ মুখ শক্ত করে বললো, কারণ আমার কথাই সত্যি। ফোনটা ইসরার মা নয় বরং ইসরা রিসিভ করেছিলো। তাই এখানে বসে নিজেদের টাইম নষ্ট না করাই ভালো।
আমিরা হাই তুলে বিরক্ত হয়ে বললো, যেদিন থেকে এই বাড়িতে এসেছে একটার পর একটা নতুন ড্রামা দেখিয়ে যাচ্ছে। যাবে বলে গেলে কী হতো ? শুধু শুধু এই ফালতু মেয়ের জন্য আমার ঘুম নষ্ট হলো।
নিহান আর আকরাম বাদে সবাই নিজেদের রুমে চলে গেছে। আকরাম গম্ভীর গলায় বললো, আমাদের বলে গেলেই পারতো। এভাবে না বলে টেনশনে ফেলার মানে কী ?
নিহান উঠে দাঁড়িয়ে বললো, ড্রামাবাজ তো তাই ড্রামা না করলে তার ভালো লাগে না, যতসব।
নিহান নিজের রুমে চলে গেলে আকরাম ও উঠে দাঁড়ালেন। সে আজ প্রচন্ড বিরক্ত ইসরার উপর। ইসরা সকালে তার মনে যেটুকু ভালো জায়গা পেয়েছিলো মুহূর্তেই সেটুকু হারিয়ে গেলো।
সকালবেলা ইসরা কলিংবেল বাজালে মনিরা দরজা খোলে দিলো। সবাই তখন ব্রেকফাস্ট করছিলো ডাইনিং টেবিলে।
ইসরা পাশ কাটিয়ে চলে যেতে গেলে নিহান রাগী গলায় বললো, দাঁড়াও।
ইসরা দাঁড়িয়ে পড়লো নিজের জায়গায়। নিহান খাওয়া রেখে উঠে ইসরার সামনে দাঁড়ালো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো, বাড়ির বাইরে কী লেখা আছে এটা আবাসিক হোটেল ?
ইসরা উত্তরে কিছু না বললে নিহান আবার বললো, এটা কোনো হোটেল নয় তোমার যখন ইচ্ছা বাইরে যাবে যখন ইচ্ছা আসবে। কাউকে কিছু না বলে যেখানে ইচ্ছে থেকে যাবে। এটা বাড়ি আর এখানে একটা ভদ্র ফ্যামিলি বসবাস করে। কিছু নিয়মকানুন আছে এই বাড়ির। তোমার কী এই বাড়ির কাউকে মানুষ মনে হয় না ? কাউকে না জানিয়ে নিজের বাবার বাসায় গিয়ে বসে আছো আর এদিকে সবাই সারাদিন অফিস করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বসে তোমার জন্য দুশ্চিন্তা করছে। সামান্যতম কমনসেন্স নেই তোমার মধ্যে, বাবা-মা কী এটুকু শিক্ষাও দেইনি ?
আমি বাবার বাসায় নয়, হসপিটালে ছিলাম।
নিহান অবাক হয়ে বললো, মানে ?
গতকাল দুপুরে বাড়ি ফেরার পথে মা ফোন করে জানায় বাবা হার্ট অ্যাটাক করেছে। তাই হসপিটালে গিয়েছিলাম ছুটে আর সারারাত সেখানেই ছিলাম।
নিহান চুপ করে গেলে আমিরা হঠাৎ বলে উঠে, তোমার ঐ ধোঁকাবাজ বাবা মরুক বাঁচুক আমাদের কী ? তুমি আমাদের কেনো হয়রানি,,,,
আমিরা,,,,,
আমিরার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো ইসরা। আমিরা কথা শেষ করার আগেই আমির রেজওয়ান উচ্চস্বরে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়ে রেগে বললেন, আর একদিন যদি আমি তোমাকে দেখেছি বড়দের মাঝে কথা বলতে। তাহলে তোমাকেও তোমার ভাইয়ের মতো বাড়ির বাইরে পাঠাবো। কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নাও ভালো করে।
বেশ কিছু সময় নিরবতা বিরাজ করলো তারপর আকরাম রেজওয়ান গম্ভীর গলায় বললো, একবার জানিয়ে দিলেই তো এতোগুলা মানুষ টেনশনে থাকতো না।
বাবার অবস্থা খারাপ ছিলো তাই আপনাদের জানানোর কথা মাথায় আসেনি। যখন বাবা একটু ঠিক হয়েছে তখন ফোন বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো চার্জ শেষ হয়ে।
তোমার মায়ের ফোন থেকে বলতে পারতে ?
আসলে আমি বুঝতে পারিনি আমাকে নিয়ে এ বাড়ির কারো কোনো সমস্যা হতে পারে। তাই আর অতটা গুরুত্ব দেইনি।
নিহান রেগে বললো, দেখেছো বাবা কেমন,,,
নিহানকে চুপ করতে ইশারা করলো আকরাম আর বললো, তুমি এই বাড়িতে যতদিন আছো ততদিন আমাদের দ্বায়িত্ব। এরপর থেকে কোনো সমস্যা হলে আগে বাড়িতে জানাবে, এখন নিজের রুমে যাও।
ইসরা কথা না বাড়িয়ে রুমে চলে গেলো। ক্লান্তিতে শরীরটা আর চলছে না এখন। সারারাত ঘুমাতে পারেনি হসপিটালে। ইসরা ভাবছে মাত্র একদিন হসপিটালে থেকে তার এমন বেহাল অবস্থা তাহলে ডক্টর কীভাবে হবে ? আজগুবি চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বের হলো। বেডে সাইড টেবিলে সকালের ব্রেকফাস্ট দেখতে পেলো। সে ওয়াশরুমে থাকাকালীন হয়তো দিয়ে যাওয়া হয়েছে। ইসরা কোনোরকমে খেয়ে ধপ করে বেডে শুয়ে পড়লো।
নিহান অফিসে বসে ভাবছে, না জেনে ইসরাকে এতোগুলো কথা বলা একদমই ঠিক হয়নি। কিন্তু সরিও বলতে পারেনি ইগোর জন্য।
আজ আবার উদাস কেনো নিহান ?
রুপমের কথা শুনে কাজে মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করে বললো, কই কিছু হয়নি।
তুই নিজেকে খুব সুন্দর মনে করিস তাই না ? আর তোর নিজের সৌন্দর্যের উপর খুব বেশি অহংকার।
নিহান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো, কী আবোল তাবোল বকছিস ?
ইসরা তোর আশেপাশে আছে তুই এটা সহ্য করতে পারছিস না। তাই এমন বিরক্ত মুডে থাকিস সবসময়।
নিজের কাজ কর বকবক বন্ধ করে।
সময় থাকতে নিজেকে শুধরেনে নাহলে জীবনে অনেক আফসোস করতে হবে তোকে। কালো মানুষের মন কালো হয় না নিহান, আর করিম চাচাও খারাপ মানুষ ছিলেন না।
নিহান বিরক্ত হয়ে কাজে মন দেওয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু মন বসাতে পারলো না কাজে। নিহান ফিরে গেলো আরো অনেকগুলো বছর পেছনে। নিহানের বয়স তখন কেবল পাঁচ কিংবা ছয়। নিহানদের বাড়ির দারোয়ান করিম চাচা ছিলেন কুচকুচে কালো আর সুঠাম দেহের মানুষ। নিহান খুব ভয় পেতো তাকে ভূত ভেবে । সেটা করিমের কাছে খুব ভালো লাগতো। সে বোকা টাইপের হওয়ায় সবাই তাকে নিয়ে মজাই করতো, কেউ ভয় পেতো না। নিহান তাকে ভয় পায় এটা তাকে বেশ মজা দিলো। তাই মাঝে মাঝে সবার আড়ালে সে নিহানে ভয় দেখাতো। নিহান তাকে মনে করতো ভূত। কিন্তু সেই মজাই একদিন তার কাল হয়ে দাঁড়ালো। নিহান ঝোপের আড়ালে ক্রিকেট বল খুঁজতে গিয়েছিলো আর এদিকে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। আবছা আলোয় ঝোপের আড়াল আরো অন্ধকার লাগছে। নিহান বল হাতে উঠে দাঁড়িয়ে আবছা আলোয় করিমকে দেখে ভূত বলে চিৎকার দিয়ে ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। টানা সাতদিন জ্বর থাকার পর নিহান সুস্থ হয়। সবাই সব জানার পর করিমকে কাজ থেকে বের করে দেওয়া হয়। এদিকে নিহান বড় হয়ে ভয়টা কাটলেও কালো মানুষের প্রতি বিরূপ ধারণা পোষণ করতে থাকে। তাকে কেউ বুঝাতে গেলে বলে কালো মানুষের মন যদি কালো না হয়, তাহলে করিম চাচা কীভাবে পারলো ইচ্ছে করে একটা বাচ্চাকে ভয় দেখাতে ? সে একজন কুৎসিত চেহারার সাথে কুৎসিত মনেরও অধিকারী আর সব কালো মানুষই করিমের মতো। এতো বছরেও নিহানের এই ধারণা কেউ পাল্টাতে পারেনি। যে পাল্টাতে এসেছিলে সে এখন বাড়ি ছাড়া। এখন আবার ইসরার বাবার আর ইসরার ধোঁকা দেখে তার ধারণা আরো পাকাপোক্ত হয়েছে কালো মানুষের মনও কালো আর কুৎসিত। নিহান ভেবেছিলো ইসরাকে সরি বলবে কিন্তু পুরনো কথা ভেবে আবার মন চেঞ্জ হয়ে গেলো। নিহান উল্টো ভাবতে লাগলো গতকাল সকালে ইসরার তাকে করা অপমানের প্রতিশোধ কীভাবে নেওয়া যায়। এদিকে ইসরা দুপুরের দিকে খেয়েদেয়ে আবার হসপিটালে চলে গেলো। আগামীকাল সকালেই ইখতিয়ার আহমেদকে রিলিজ দেওয়া হবে। সেসব নিয়েই ব্যস্ত ইসরা ভাবতেও পারছে না নিহান তার থেকে সামান্য বিষয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার ফন্দি আঁটছে।
চলবে,,,,