মধ্যবিত্ত
পার্ট ১
লেখকঃ MD Bipul Imran
আজ কলেজের প্রথম পরিক্ষা
ক্লাসে ঢোকার একটু পরে স্যার আসলো
এসেই বলতেছেন
যাদের নকল করার ইচ্ছা আছে
তারা এখনি বাইরে চলে যাও
ধরা পড়লে বিপদ আছে কপালে
-স্যার আপনার নকল ধরার ইচ্ছা থাকলে
বাইরে চলে যান
টয়লেট গুলো আছেনা ওখানে গিয়ে দেখেন
অনেক অনেক নকল পাবেন
স্যারঃ কে বলবো এই কথা
আমিঃস্যার আমি(দাড়িয়ে পরলাম)
স্যারঃওহ ইমরান তুমি
আমিঃহ্যা স্যার আমি
আমি ছাড়া কার সাহস আছে
আপনার মুখের উপর কথা বলার
।
প্রতিটা কলেজে দুই একজন এরকম স্যার থাকে
যাদের দেখলেই ভয় লাগে
আমাদের কলেজেও ইনি
প্রথমে ভয় পাইতাম কিন্তু এখন না
।
স্যারঃকেন যে নকল করে
সারা বছর মনে হয়
ঘোড়ার ঘাস কাটে
আর গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলে
আমিঃস্যার আপনারা যে কেন নকল
ধরেন আমি বুঝিনা
সারা বছর কি পড়ান যে
ছাত্রদের নকল করতে হয়
স্যারঃতোমরা ক্লাস ফাকি দিয়ে
মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে গেলে কার দোষ
আমিঃস্যার আপনারা ক্লাস না করে
বউকে নিয়ে ঘুরতে গেলে কার দোষ
স্যারঃদুই একজন স্যারের জন্য সকলকে
এক করোনা ইমরানন
আমিঃস্যার আমিও যদি একই কথা বলি
স্যারঃবাবা মাফ চাই
তোর সাথে লাগাটাই আমার ভুল হইছে
আমিঃএতক্ষনে বুঝলেন
স্যারঃবাবা চুপ করে পরিক্ষা দে
আর কোনোদিনো তোর সামনে নকলেরর কথা বলবোনা
।
পরিক্ষা দিতেছি একটা প্রশ্ন কমন নেই
এইটা লেখলেই শেষ কিন্তু পাচ্ছিনা
সামনে মেয়ে একটা
মেয়েটাকে জিজ্ঞাস করলাম
আমিঃএই যে আন্টি এটা পারেন কি
মেয়েটিঃওই আমাকে দেখে কি
আপনার আন্টি মনে হয়
আমিঃওমা আপনি তাহলে কি
বিয়ে করেনন নাই এখনো
তারাতাড়ি করে নেন
নাহলে কপালে ছেলেই জুটবেনা
মেয়েটিঃআপনি একটু বেশি বেশি
যা দেখার দেখে নিয়ে চুপ করে থাকেন
আমিঃহ্যা আমি জানি আপনার থেকে আমি বেশি বেশি
আপনার থেকে হাইটে লম্বা
রোল সংখ্যা বেশি
আরো কতো কি বেশি
মেয়েটিঃআপনি একটা……
চুপ করে বসে থাকেন
আমিঃআমি চুপ থাকতে পারিনা
মেয়েটাঃভাই তোর পায়ে পড়ি
লিখতে দে আমায়
আমিঃসি সি এ কাজ ভুলেও
করবেন না।সবাই কি ভাববে
আর টাকাও নাই আমার কাছে
যে আপনাকে দিবো
।
মেয়েটি এমন ভাবে তাকালো
মনে হয় ধ্বংস করে দিবে সব কিছু
তার চোখের আগুনে
।
আর কিছু না বলে লিখা শেষ করলাম
শেষ করে আবার মেয়েটাকে ডাকলাম
মেয়েটাঃকি হইছে
আমিঃআপনি কিন্তু দেখতে অনেক সুন্দর
মেয়েটাঃফাজলামু করেন
পরিক্ষা দেন ঠিকমত
আমিঃপরিক্ষা তো দিছি
বাইরে অপেক্ষা করতেছি আপনার জন্য
তারাতাড়ি আসেন
।
কে অপেক্ষা করবে আমি
তাও আবার মেয়ের জন্য
হি হি এটা এমনি বললাম
খাতা জমা দিয়ে আসলাম
একটুপর রাফিদ অয়ন আসিফ আসলো
আমিঃকিরে কানা পরিক্ষা কেমন দিলি
আসিফঃনিজে চার চোখা
আর আমাক বলতেছে কানা
আমিঃদোস্ত চল একটা গেম খেলি
রাফিদঃতুই আগে আসিফের চশমা খুলে নে
(কানে কানে বললাম)
আমিঃআসিফকে এক আন্টিকে দেখিয়ে দিবো
আসিফ যদি তার কাছ থেকে ১০ টাকা আনতে পারে
তাহলে আজ সবাইকে আমি খাওয়াবো
নয়তো আসিফ খাওয়াবে সবাইকে
আসিফঃআমি রাজি আমি রাজি
আসিফ মনে মনে ভাবতেছে
জীবনে তোর কাছ থেকে ঝালমুড়ি
ছাড়া কিছুই খাইতে পাই নাই
আজ খাওয়ার সুযোগ পাইছি
ছাড়ছিনা সহজে তোকে
।
রাফিদকে ইশারা করে বললাম
চশমা খুলে নিতে
রাফিদ চশমা খুলে নিলো
আসিফঃএটা কি হলো
আমিঃএটাইতো আসল মজা
গেইমে টুইস্ট না থাকলে
সেই গেইম খেলে লাভ আছে
আসিফঃআচ্ছা আচ্ছা
আমি তো দেখতে পাচ্ছিনা
কোনো আন্টি এদিকে আসলে
বলবি আমাক
আমিঃআচ্ছা
নিরা এদিকেই আসছেই
নিরা আসিফের গার্লফ্রেন্ড
আমিঃদোস্ত আমরা যখন তালি দিবো তখন বলা শুরু করবি
আসিফঃওকে
নিরা আসিফকে দেখে এদিকেই আসছে
আমরা একটু পিছনে এসে তালি দিলাম
তখনি আসিফ বলা শুরু করলো
আসিফঃআন্টি ১০ টাকা দিবেন কি
আমি আমার ওয়ালেট টা বাসায় রেখে আসছি
তাই বাসা যেতে পাচ্ছিনা
দয়া করে যদি দেন
অপরদিকে নিশ্চুপ দেখে আবারর বললো
– কি হইলো আন্টি দেন না প্লিজ
আমি কাল দিয়ে দিবো আবার
-ঠাসসস
কুত্তা আমি তোর আন্টি হই না
রাতে ফোন দিয়ে আর একবার বাবু জানু বলিস
দেখবি তখন কি করি আমি
টাকা লাগবেনা তোর দ্বারা দিতেছি টাকা(নিরা)
-(এই সেরেছে এটাতো নিরা)নিরা তুমি আসলা কোথা থেকে
-দাড়া দিতেছি টাকা
।
ইমরান ভাই কোথায় তুই
তারাতাড়ি চশমা দে
কিছু দেখতে পাচ্ছিনা
কোনদিকে পালাবো বল তারাতাড়ি
আমিঃপিছনে আয়
বলতে দেড়ি দৌড় দিতে দেরি নাই
নিরাঃওই থাম থাম টাকা নিয়ে যা
আসিফঃবেচে থাকলে পড়ে নিবো
।
আমিঃনে চশমা পড়
চল এখন খাবো
আসিফঃচিটিং করছিস তোরা
পাবোনা খাওয়াইতে
রাফিদঃআমরা জানি এমন করবি
তাই তোর ওয়ালেট টা নিছি আগেই
আমিঃওখান থেকে ৫০০ নিয়ে দে ওকে ওটা
রাফিদঃআচ্ছা
এভাবে কিছুক্ষণ কথা বলার পর
হঠাৎ কেউ একজন আমার দিকে ইশারা করে ডাকতেছে
রাফিদঃদোস্ত দেখ মেয়েটা তোকে ডাকতেছে
আমিঃধ্যাত আমায় না অন্য কাউকে হয়তো
আমাক আবার কে ডাকবে
অয়নঃতোকেই ডাকছে
আমিঃআমাকে ডাকছেন
মেয়েটাঃহ্যা আপনাকেই
এদিকে আসেন
আমিঃ(আরে এ তো ক্লাসের মেয়েটা)
কি দরকার বলেন
মেয়েটাঃক্লাসে না খুব বললেন
অপেক্ষা করবেন আমার জন্য
এই অপেক্ষা।আমিই খুজতেছি আপনাক
আমিঃতাই।কি জন্য খুজতেছেন
মেয়েটাঃপ্রেম করবো তাই।নাম কি আপনার
আমিঃনাম দিয়ে কি করবেন
মেয়েটাঃপ্রশ্ন না করে যা জানতে চাইছি বলেন
আমিঃইমরান
মেয়েটিঃআমি সুমায়া
আমিঃভালো যাই এখন আমি
সুমায়াঃথামেন
ফোন টা দেন আপনারর
আমিঃদেখেন বেশি বেশি হচ্ছে
যাই আমি বাই
।
বলেই চলে আসলাম
আসিফঃদোস্ত কি বেপার
আমিঃকিছু নারে
নাম জিজ্ঞাস করলো এটুকুই
চল খাবো এখন খুদা লাগছে
রাফিদঃমেয়েটা কিন্তু ভালোই
আমিঃহবে কোনো ধনীর দুলালি
বাদ দে ওসব
।
এভাবেই যাচ্ছে আমার দিন
যতক্ষন কলেজে থাকি ভালোই থাকি বাসা আসলেই শুরু হয় কষ্ট
বাসায় আমি মা আর ভাইয়া ভাবি থাকি
ভাবি একটুও সহ্য করতে পারেনা মা আর আমাকে
কলেজ আসতেই ভাবি বলা শুরু করলো
ভাবিঃকি নবাব এতক্ষনে বাসায় ফেরার সময় হলো
আমিঃকেন কি হয়েছে
ভাবিঃকি হয়েছে মানে।
ভাই একজন কষ্ট করে মরতেছে আর উনি
পায়ের উপর পা দিয়ে বসে বসে খাচ্ছে
আমিঃআমার কি এটা কাজ করার সময় যে
কাজ করে টাকা উপার্জন করবো
ভাবিঃতা নয়তো কি করবে
বসে বসে খাবে
একদিকে বুড়ো মা জালাচ্ছে আর একদিকে ইনি
আমিঃভাইয়া কি আমার বয়সে টাকা ইনকাম করেছিলো
পারলে বাবার কাছ থেকে আরো নিয়েছে
তোমার সাথে প্রেম করার জন্য
ভাবিঃকথার উপর আবার কথা বলিস
তোর ভাই আসুক আজ দেখবি এখন
।
খুদা লাগছে খুব
রান্না ঘরে গিয়ে দেখি শুধু ভাত আর ডাল পরে আছে
অন্য সব তরকারি ফ্রিজে রেখে দিছে
চাইতে গেলে আবার শুরু হবে ঝগড়া
ভাইয়া ছোটখাটো সরকারি চাকুরি করে
একই পরিবারে থাকলেও মা আর আমি চলি মধ্যবিত্তের মতো
অন্যদিকে ভাইয়া আর ভাবি চলে উচ্চবিত্ত ভাবে
বাবা বেচে থাকায় কোনো কিছুর অভাব ছিলোনা
কিন্তু এখন সেসব কিছুই নেই
রাতে ভাইয়া আসলে ভাবি ভাইয়াকে কি জানি বলছে
সেটা উনিয়ে ভালো জানেন
আমাক ভাইয়া ডেকে বলতেছে
-তোর ভাবির সাথে তুই নাকি তর্ক করেছিস
-উনি উল্টা পাল্টা কথা বললে আমি কি করবো
-কি উল্টা পাল্টা বলছে ও।সব শুনছি আমি(ভাইয়া)
-তুমি কি শুনছো সেটা আমি জানিনা।তবে এটুকু বলতে পারি দোষটা ভাবির
-এখন আবার আমার সাথেই তর্ক করছিস
তোকে আজ আমি সোজাসুজি ভাবে বলে দেই
তোকে আর বসে বসে খাওয়াতে পাবোনা আমি
-মানে??
-তুই এ বাড়িতে থাকলে তোকে ইনকাম করে আনতে হবে(ভাইয়া)
-এ বাড়িতে তোমার যেমন অধিকার আমারো তেমন অধিকার আছে(আমি)
-কিসের অধিকার চাস তুই
দেখ বাবা সব আমার নামে লিখে দিয়ে গেছে(ঘর থেকে একটা কাগজ এনে)
-হা হা বাবা দিছে নাকি চালাকি করে নিছো
-কাগজ কথা বলবে
তুই চলে যা এ বাড়ি থেকে
-আচ্ছা আচ্ছা যাচ্ছি থাকবোনা আর তোর কাছে
মাকেও নিয়ে যাবো আমার সাথে
মা তুমি চলো
এই বাড়িতে আর কোনো অধিকার নেই আমাদের
-মা আমার কাছে থাকবে
তুই চলে যা এই বাড়ি থাকে(ভাইয়া)
-মা এ ঠিক করুক মা কোথায় থাকবে
-বাবা মারা যাওয়ার আগে মাকে আমার দায়িত্বে রেখে গেছে মা আমার কাছে থাকবে
-মা তুমি বলোতো কার কাছে থাকবে তুমি
মাঃবাবা তুই ছেলে মানুষি করিস না
আমি মরলে এ বাড়িতেই মরবো
আমাকে নিয়ে চিন্তা করিসনা তুই বাবা
-আচ্ছা মা ভালো থাকো তুমি
আমার জন্য দোয়া করিও
আজ টাকা নেই জন্য আমার কথা ভেবে মা আমার সাথে আসলোনা
দ্রুত একটা চাকরি করতে হবে
মা ওখানে থাকলে কি হবে জানিনা
আমার কাছে আনতে হবে মাকে
চাকরি হলে হয়তো না করবেনা আসতে
ভাইয়া তো সারাদিন অফিসে থাকে
সেতো আর জানেনা মায়ের সাথে ভাবি
কিরকম ব্যাবহার করে
চলে আসলে আজ নিজের জন্মস্থান থেকে
এই বাড়িতে ঘিরে কতই না স্মৃতি জড়িয়ে আছে
ভাইয়ার সাথে ঘুমানো ঘুড়ে বেরানো
ক্রিকেট খেলা আরো কত স্মৃতি
ছোটবেলায় আমায় ছাড়া থাকতোনা ভাইটা
আর আজ সেই বাসা থেকে বার করে দিলো
না ভাইয়া দেয়নি বরং ভাবি দিয়েছে
হ্যা তার কথাতেই ভাইয়া এসব করেছে
কি কি বলেছে ভাইয়াকে উনিয়ে ভালো জানেন
আমি কি খুব বড় ভুল করেছি ভাবি
আমাক তো নিজের ভাই ভেবে নিলেই পারতে
তোমার বাসায় তো তোমার বড় ভাই ছোট ভাই আছে
তোমার ছোট ভাইয়ের সাথে যদি এরকম হয় তাহলে তুমি কি পাবে মেনে নিতে।
জানি এ প্রশ্নের উত্তর নেই আজ
এসব ভাবতেছি আর হাটতেছি
।
পৃথিবির ভাবি গুলো কেন যে এরকম হয়
সেটা আমারর সঠিক জানা নেই
তারা কি পারেনা তার স্বামির পরিবার কে আপন করে নিতে পারেনা
আমরা তো আপন করে নেই তাহলে তারা পাবেনা কেন
তাদের মন কি আমাদের মত না
জানা নেই এসব প্রশ্নের উত্তর।
.
.
চলবে……