তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা
পর্ব:8,9
Suraiya_Aayat
পর্ব:8
” শোনো তোমাকে আমি এটাই প্রথম আর এটাই শেষ বারের মতো বলছি তোমার ভাইয়ার মাথাটা বিগড়ানো বন্ধ করো ৷ তোমার জন্য তোমার ভাইয়া এখনো আমাকে বিয়ে করেনি ৷ বিয়ে করেও শান্তি দিলেনা তুমি আমাকে ৷ তাই এসব ছেলে ভোলামি কথাবাত্রা গুলো বন্ধ করো ৷”
ক্রমাগত মায়ার এমন উদ্ভট কথা শুনে নূরের চোখের জল আর আটকালো না, না জানি মায়া ওদের ভাই বোনের মতো পবিত্র সম্পর্কটাকে কতোটা নোংরা চোখে দেখে , ভাবলেই নূরের নিজেকে শেষ করে ফেলতে ইচ্ছা করে ৷ নূর ভাঙা গলায় বলল
” ভাবী দয়া করে তোমার এই মন মানসিকতার পরিবর্তন করো ৷ না জানি তোমার সাথে আমার কোন জন্মের শক্রুতা আছে যে তুমি আমাকে সহ্য করতে পারো না ৷”
নূরের কথা শুনে মায়া রেগে গিয়ে বলল
” শক্রুতা ! এর মাঝে আবার শক্রুতা এলো কোথা থেকে, আমি তোমাকে নিজের বোনের মতো ভাবি আর তুমি আমাদের মাঝে শক্রুতার কথা বলছো ৷”
হঠাৎ মায়া কেমন জানি উল্টোসুরে গাইতে লাগলো, নূর তার কারন বুঝলো না তবুও বলল
” আমি জানি তুমি মুখে সবার সামনে এমন মিষ্টি মিষ্টি কথা বললেও তোমার অন্তরে আমার জন্য ঘৃনা ভরা, তুমি কেন আমাকে সহ্য করতে পারো না তা আমি সত্যিই যদি জানতে পারতাম ৷” চোখের জল মুছে খানিকটা স্বাভাবিক গলায় বললো নূর ৷
হঠাৎ আচমকাই অপর পাশ থেকে হুঠ করে নূরের ভাইয়া বলে উঠলো
” কি সব বলছিস এগুলো ? তোর আর মায়ার মাঝে শক্রুতা হতে যাবে কেন? মায়া তোকে যথেষ্ট ভালোবাসে ৷”
নূর হঠাৎ করে ওর ভাইয়ার কন্ঠ শুনে চমকে উঠলো তবুও নিজেকে সামলে বলল
” ভাইয়া তুমি হয়তো পুরোটা শোনোনি ৷ এটা নতুন কিছু না, আমি জানি না সত্যিই আমার দোষটা ঠিক কোথায় ৷”
নূরের ভাইয়া নূরকে অনেক বিশ্বাস করে মায়ার তুলনায় ও বেশি আর এই সব ছোট ছোট বিষয়ের কারনে মায়া নূরকে সহ্য করতে পারে না ৷ নূরের প্রতি এই বিশ্বাস থেকে নূরের ভাইয়া মায়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়লো
” কি বলেছো তুমি নূরকে ৷”
মায়া একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল তবুও ও হরার পাত্রী নয় নাই সাবলীল ভাবেই বলল
” তুমি তো শুনলে নূর কি বললো, ও বললো আমি নাকি ওকে সহ্য করতে পারি না, আমি নাকি ওকে হিংসা করি আরো কতো কিছু !”
নূর শুধু শুনছে, অবলীলায় মায়া ওকে মিথ্যাচার করছে ৷
নূরের ভাইয়া বলে উঠলো
” এগুলো কি শুনছি নূর তোর থেকে এগুলো আশা করিনি , মায়া তোর ভাবী হয় তুই তাকে এমনটা বলতে পারিস না ৷ যাই হোক তোর ব্যাবহারে এখন তো মনে হচ্ছে আমাদের বিয়ে হলে তুই এই বাসায় আসলে আমাদের কে বাসা ছাড়তে হবে ৷”
ওর ভাইয়ার বলা শেষের কথাটা যেন ওকে ভেঙে দুমড়ে মুছড়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ৷ কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলল
” ভাইয়া তুমি অন্তত এই কথাটা বলতে পারলে !”
মায়া ওপাশ থেকে বলে উঠলো
” ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করো না নূর , তোমার ভাইয়া এখন সব জেনে গেছে তাই তুমি এসব বলছো তাইনা ৷”
নূরের ভাইয়া যখন মায়ার কথাটা চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে ওকে দোষারোপ করতে পারে তখন বাইরের কোন মানুষের কথায় ওর কোন যাই আসে না ৷ নূর ভাঙা গলায় বলল
” জ্বি ভাবী তুমি ঠিক বলেছো , আমি ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করছি ,যাই হোক তোমাদের বিয়ে হলে আমি আর তোমাদের বাসায় যাবো না চিন্তা নেই ৷ আচ্ছা রাখছি গো আল্লাহ হাফেজ, আর ভাইয়াকে বলো সে যেন আমাকে নিয়ে আর চিন্তা না করে ৷”
কথাটা বলে নূর কলটা কেটে দিলো ৷ ফোনটাকে হাত দিয়ে দূরে ছুড়ে ফেলে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো ৷ ফোনটা ভেঙে যাওয়াতে তার এক অদ্ভুত আওয়াজ হলো ৷
নূর ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে একসময় জোরে জোরে কেঁদে ফেলল ৷ প্রিয় মানুষদের থেকে পাওয়া আঘাতগুলোর কাছে অন্য আঘাত গুলো তো তুচ্ছা ৷
❤
” sir,আপনারা এভাবে আমাকে প্রেসারাইজ করতে পারেন না , তাছাড়া আমি জানি আমাকে কি করতে হবে ৷ বারবার আমকে মনে করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই ৷” অনেকটা কর্কশ কন্ঠে বলল আয়াশ ৷
সামনে বসে থাকা মধ্যবয়সী লোকটা তার চোখের চশমাটা ঠিক করে বললেন
” এটা কোনভাবেই একটা সায়েন্টিস্ট সুলভ আচরন নয় আয়াশ ৷ তাছাড়া তুমি হয়তো ভুলে গেছো যে আমি তোমাদের হেড ৷আর তুমি আমাদের এই প্রজেক্টের বড়ো প্রজেক্টটার দায়িত্ব নিয়েছো ,আর এই হলো তোমার এগ্রিমেন্ট ৷” কথাটা বলে আয়াশের দিকে বেশ একশো পাতার একটা এগ্রিমেন্ট এগিয়ে দিলেন , যার প্রতিটা পাতায় আছে আয়াশের বাঁকা হাতের সিগনেচার ৷
আয়াশ পেপার গুলো নিয়ে দূরে ছুড়ে দিলো ৷ ও ওনার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল
” ভুলে যাবেন না sir আমি ছাড়া এই এক্সপেরিমেন্ট অসম্ভব , কজ আই হ্যাভ দা ডেড বডি যেটা আপনাদের দরকার ৷ তাই আপনারা আমার সাথে থাকলেন কি না থাকলেন বা আমাকে বরখাস্ত করলেন কি আই ডোন্ট কেয়ার বাট আই উইল সাকসিড ফর সিউর ৷”
আয়াশের কথা শুনে উনি একটু থেমে গেলেন, আর যাই হোক উনি যানেন যে আয়াশ ঠিক কতোটা দক্ষতাপূর্ন ৷ উনি খানিকটা ঠান্ডা গলায় বললেন
” ওয়েল , ফরগেট ইট ৷ আমরা এগ্রিমেন্ট নিয়ে কথা বলি ৷”
আয়াশ একটা বাঁকা হাসি হেসে টেবিলের ওপরে থাকা অ্যাসিডের বোতল টা মাটিতে ছুড়ে মারলো
” গো টু হেল উইথ ইউর এক্সপেরিমেন্ট ৷”
কথাটা বলে বেরিয়ে গেল ৷ ওর মাথায় যেন রক্ত চড়ে গেছে রাগে ,ওর ওপর কেউ অযাচিত ভাবে কোন রকম প্রেশার ক্রিয়েট করলে বা উঁচু গলায় কথা বললে আয়াশ তা সহ্য করতে পারে না ৷ গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে গাড়ি স্টার্ট দিতে বললেই ড্রাইভার বলে উঠলো
” sir আপনি এখন আপনার ল্যাবে যাবেন নাকি বসায় যাবেন?”
আয়াশ রেগে গিয়ে উচ্চকন্ঠে বলল
” আমার বাসায় যে আমার ল্যাব সেটা কি তুমি জানো না ?”
উনি ভয়ে কাচুমাচু হয়ে বললেন
” আসলে sir বাসায় যাওয়ার অন্য রাস্তা আর আপনার ল্যাবে যাওয়ার রাস্তা তো অন্য তাই আরকি ৷”
আয়াশ আর কিছু বললো না, রাগ হচ্ছে খুব , আর এখন রাগ কমানোর একটাই উপায় যা হলো ওর আফু সোনা ৷ আয়াশ নূরের নাম্বারে কল করলো ৷ ফোন সুইচ অফ ৷ বিরক্তি নিয়ে আর একবার ফোন করলো, এবার ও সুইচ অফ ৷ রাগের পরিমানটা বাড়তে লাগলো,না জানি আজ কি হবে !
❤
নুরের থেকে ঠিক এক হাত দূরত্বে ঝনঝন করে কাঁচের ছোট্ট একোরিয়াম টা ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেল ৷ নূর চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো,ভয়ে ওর গলা শুকিয়ে আসছে, আয়াশ হঠাৎ এমন রেগে গেল কেন নূর তা জানে না , তবুও ওর আর কোন মন মানসিকতা নেই আয়াশকে কারন জিজ্ঞাসা করার, ও জানে মানুষটা ওকে পরোয়া করেনা ৷ নূরের ভীষন পরিমান কান্না পাচ্ছে, এটা কি ধরনের জীবনজাপন করছে ও যেখানে ওর নিজের পরিবার দূরে ঠেলে দেই অবিশ্বাস করে আর আরেকদিকে একটা সাইকো মানুষের সাথে জীবন কাটাতে হয় যে এই ভালো আর এই খারাপ ৷ নিজের জীবনের প্রতি তীব্র অনীহা জাগছে নূরের মাঝে ৷ নূর কোন সাড়াশব্দ করছে না, চুপ করে মেঝেতে বসে আছে ৷ নূরের এমন মূর্তির মতো ভাবাবেগ দেখে আয়াশ এবার আরো একটা কাঁচের জিনিস নিয়ে মেঝেতে ফেলে দিলো , নূর চমকে কেঁপে উঠলো ৷ নূর তবুও আয়াশকে কিছু বলছে না ৷ আয়াশ নূরের হাত ধরে টেনে তুলে বলল
” এই মেয়ে মরে গেছো নাকি ? কিছু বলছোনা কেন? নাকি বোবা হয়ে বাকশক্তি হরিয়েছো কোনটা ?”
নূর আয়াশের হাতের বাধন ছাড়িয়ে বলল নরম কন্ঠে বলল
” আর কিছু ! আর কিছু ভাঙবেন ? নাকি আমাকে শেষ না করলে আপনার শান্তি নেই কোনটা ? বাঁচতে দিন না আমাকে , কেন আমাকে বেঁচে থেকেও মরে যেতে বাধ্য করছেন বলুন তো ? আমি তো আপনার কোন ক্ষতি করেছি বলে আমার মনে হয়না,না আপনাকে আমি আগে কখনো চিনতাম না আপনাকে আগে কখনো দেখেছি ৷ আপনি কখনো আমার মনের ওপর অধিকার জমাতে পারেননি দেখুন কিন্তু আমার শরীরের ওপর অধিকারটা কিন্তু ঠিক ই খাটিয়েছেন ৷ আমি কখনো কোন প্রতিবাদ করেছি ?করিনি তো ! কারন আমি যে অবলা, আমি প্রতিবাদ করলেও কেউ আমার কথা কখনো বিশ্বাস করবে কি?আমি জানি করবে না ৷ আমাকে জোর করে অপবাদ দিয়ে বিয়ে করেছেন, সেটাও মেনে নিয়েছি ৷ নিজেকে আমার সামনে অনেক রহস্যময় হিসাবে প্রমান করেন , আমার ওপর অযাচিত ভাবে সব সময় অধিকার খাটান, আমি তো কখনো কিছু বলিনি ৷ আসল কথাটা কি জানেন তো আপনার মতো অনেক পুরুষ আছে যারা নিজেদের ক্ষমতা দিয়ে নারীকে দমিয়ে রাখতে চাই যাই হোক দিন শেষে একটাই কথা বলবো
” আমাকে প্লিজ মুক্তি দিন ৷”
আয়াশ নূরের কথাটা শুনে নূরকে ছেড়ে দিয়ে নূরের দিকে খানিকটা ঝুঁকে বলল
” তোমার মুক্তি আমাতেই ৷”
কথাটা বলে বেরিয়ে গেল ৷ নূর মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইলো ৷ মানুষটাকে এতোকিছু বলার পরও কোন পরিবর্তন নেই ৷ নূর তো ভেবেছিলো আয়াশ হয়তো ওকে সপাটে একটা চড় মেরে দেবে কিন্তু তা না উল্টে নরম সুরে কথা বলে চলে গেল ৷ এটা তো এমন হয়ে গেল যে কনো মেঘ কখনো রোদ্দুর ! ও কি মানুষটা কে আদেও কখনো বুঝবে?
❤
নূরের গলায় মুখ ডুবিয়ে ঘুমিয়ে আছে আয়াশ, নূরকে নিজের শরীরের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে ৷ রুমে এসি চলা সত্বেও নুর ঘামছে , শরীরের মাঝে অসস্তিতে ভরপূর ৷ নূর চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করতেই আয়াশ বলে উঠলো
” আফু সোনা ঘুমাচ্ছনা কেন? তোমার ভাবীর জন্য চিন্তা হচ্ছে বুঝি ?”
ভাবী বলতে আয়াশ মায়ার কথা বুঝিয়েছে সেটা নূর বুঝলো কিন্তু মায়ার আবার কি হতে যাবে সেটা ভেবে নূর আর কিছু বলল না, চুপটি করে শুয়ে রইলো ৷
আয়াশ নূরের গলায় একটা চুমু দিয়ে বলল
” চিন্তা নেই তোমার ভাবীর বেশি কিছু হয়নি শুধু ডান হাতটা ভেঙেছে , সারতে টাইম লাগবে ৷”
নূর চমকে উঠলো, কই ও তো এমন কিছু শোনেনি ৷ নূর ধড়ফড় করে উঠে বসলো ৷ আয়াশ বিরক্ত হয়ে বলল
” বারবার দূরে চলে যাও কেন বলো তো, এই জন্যই তো পানিশমেন্ট দিই ৷ ”
নূর থমথমে গলায় বলল
” কি হয়েছে ভাবীর?”
আয়াশ একটা হাই তুলে বলল
” এক্সিডেন্ট করেছে হয়তো ওই আরকি ৷”
নূর অবাক হয়ে বলল
” আপনি কি অরে জানলেন যে ভাবীর এক্সিডেন্ট হয়েছে, আর কই ভাইয়া তো আমাকে কিছু বলেনি ৷”
আয়াশ এবার উঠে নূরকে কাছে টেনে নিয়ে বলল
” বলবে কিভাবে সে তো বউয়ের সেবায় মগ্ন যেমনটা আমি তোমার নেশাতে পাগল ৷”
আয়াশের কথা বলার ধরন শুনে নূর কাঁপাকাঁপা গলায় বলল
” সত্যি করে বলুন সব , আপনি কি করে জানলেন ৷”
আয়াশ নূরকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নূরের দিকে ঝুকে নূরের মুখে ফু দিয়ে বলল
” আমিই তো হালকা করে একটা ধাক্কা দিলাম আর তোমার ভাবী রাস্তায় পড়ে গেল, এটা আমার দোষ বলো?”
ভয়ে নূরের চোখে জল চলে এলো ৷ নূর আমতা আমতা করে বলল ” সে তো আপনার কোন ক্ষতি করেনি, আপনি তাহলে তার পিছনে পড়েছেন কেন?”
আয়াশ নুরের চোখের পাতায় চুমু দিয়ে বলল
” আমার আফু সোনাকে কেউ কষ্ট দিলে বুঝি আমার কষ্ট হয়না বুঝি !”
কথাটা বলে নূরকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো ৷
নূরের মাথায় ঘুরছে আয়াশের বাবার বলা কথাগুলো
” তোমার খুশিতেই আয়াশের খুশি ৷”
ওনার বলা কথাটা সত্যি নাকি মানুষটার ব্যাবহারই একটা গোলকধাঁধা ?
চলবে,,,
#তুমিই আমার প্রিয় নেশা
#পর্ব:9
#Suraiya_Aayat
” ভাবী এখন কেমন আছে ?”হালকা নরম সুরে বলল নূর ৷ নূরের কথা শুনে ওর ভাইয়া গাল থেকে হাত নামিয়ে কপালে ভাজ ফেলে চিন্তিত সুরে বলল
” রাতে তো অনেক জ্বর এসেছিলো, হাতটাও ভেঙে গেছে ঠিক হতে সময় লাগবে ৷”
আয়াশ বলে উঠলো
” কে যে মারলো এভাবে ধাক্কাটা , ডেভিল সে একটা৷”
কথাটা বলতেই নূরের দিকে তাকালো, নূর ও আয়াশের কথাটা শুনে আয়াশের দিকে তাকালো ৷ মানুষটা একটা অপরাধ করেছে নিজে আবার এখন নিজেই নিজের সম্পর্কে এমন উল্টোপাল্টা বলছে দেখে নূর অবাক হলো ৷ নূরের ভাইয়া বলে উঠলো
” কি আর বলি বলো, যা হওয়ার তা হয়েছে, আর তাছাড়া মায়া আমাদের বিয়ের জন্য অনেক জোর করছিলো কয়েকদিন ধরে, কিন্তু নূরকে নিয়ে চিন্তায় ছিলাম বলে তাই আর বিয়ের কথা ভাবিনি কিন্তু ওর এখন যা অবস্থা তাতে করে আরো কিছুদিন পিছিয়ে গেল ৷”
নূর মাথা নীচু করে আছে , চুপচাপ ওর ভাইয়ার কথা শুনছে ৷ওনার কথা শেষ হতেই আয়াশ বলে উঠলো
” ভাইয়া এটা তো ভাবির বাড়ি রাইট ? ভাবীর আম্মু কোথায় , ওনাকে তো দেখছি না !”
” উনি কিচেনে আছেন, তুমি বসো আমি ডাকছি ওনাকে ৷”
আয়াশ ওর জায়গা জেকে উঠে ব্যাস্ততা নিয়ে বলল
” আরে সমস্যা নেই, তুমি এখানে থাকো আমি ওনার সাথে দেখা করে আসছি ৷”
কথাটা বলে আয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷
মায়া ঘুমিয়ে আছে, মেয়েটার হাতের অনেক অংশ তাছাড়া শরীরে বিভিন্ন জায়গা আচড় পেয়ে ছিলে গেছে ৷ নুর বিছানার একপাশে মায়ার কাছে চুপচাপ বসে আছে আর ওর পাশে ওর ভাইয়া চেয়ারে বসে আছে ৷
নূর হঠাৎ নিস্তব্ধতা ভেঙে বলল
” ভাইয়া ! তুমি কি এখনো আমার ওপর রাগ করে আছো কালকের ঘটনার জন্য ?”
নূরের ভাইয়া অবাক হয়ে বলল
” কালকে কি হয়েছিলো রে? আমার তো মনে নেই ৷”
নূরের চোখের কোনে জল, মাথা নীচু করে আছে নূর ৷ ভাঙা কন্ঠে বলল
” কিছুনা ভাইয়া ৷”
নূরের কথা শোনার পর নূরের ভাইয়া অনেক ভাবার চেষ্টা করলো তারপর ভাবছে সফল হয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল
” ওহহ ! সেই কথা কালকের৷ আরে আমি কিছু মনে করিনি , তাছাড়া তোর কোন দোষ নেই আমি জানি ৷”
কথাটা বলতেই মায়া ওর ভাইয়াকে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো ৷ নুরের ভাইয়া নুরকে জড়িয়ে ধরে বলল
” আরে পাগলি কাঁদছিস কেন ! চুপ একদম ৷ আমার তো কিছুই মনে নেই, আর কালকে এমনিতেই মন খারাপ ছিলো তাই রাগের মাথায় হয়তো অনেক কিছু বলে ফেলেছি তুই কিছু মনে করিস না ৷”
নূর ওর ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো ৷
হঠাৎ আয়াশ এসে বলল
” এহেম এহেম , ভাই বোনের কান্নাকাটির মধ্যে আমি কি ডিস্টার্ব করে ফেললাম মনে হয় ৷”
নূরের ভাইয়া তার জায়গা থেকে উঠে বলল
” আরেহ না না তেমন কিছু না, নূর কান্না করছিলো ও ভাবছিলো আমি হয়তো ওর ওপর কোন কারনে রেগে আছি ৷”
আয়াশ নূরের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বলল
” ভাই বোনের মধ্যে কি কোন ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে নাকি ?”
নূরের ভাইয়া হাসিমুখে বলল
” না না আয়াশ তেমন কোন ব্যাপার নেই , আচ্ছা তোমরা বসো আমি আসছি, তোমাদের জন্য খাবার নিয়ে আসি ৷”
আয়াশ নূরের দিকে তাকিয়ে বলল
” ভাইয়া থাক লাগবে না, আমি অয়েলি খাবার খাইনা ,আমি মিষ্টি ভালোবাসি , বাসায় গিয়ে ঠিক খেয়ে নিবো ৷”
নূরের ভাইয়া আয়াশের কথা কতোটা কি বুঝেছে তা নূর জানে না কিন্তু নূর বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে ৷ নূরের ভাইয়া উনি চলে গেলেন খাবার আনতে আয়াশের কোন কথা না শুনে ৷
নূরের ভাইয়া চলে যেতেই আয়াশ মায়ার দিকে তাকালো, মায়া বেঘোরে ঘুমাচ্ছে ৷ নূর মায়ার পাশে বসতে গেলেই আয়াশ নূরের হাত ধরে ওর কাছে টেনে আনলো ৷ নূর ঝটকা সামলাতে না পেরে অনেকটা আয়াশের গায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়লো তবুও আয়াশ সামলে নিয়েছে ৷ নূরের কানের পাশে গুজে রাখা চুলগুলো আয়াশ নূরের মুখের ওপর ছড়িয়ে দিয়ে নূরের মুখের ওপর একটা ফু দিলো ৷ নূর খানিকটা কেঁপে উঠতেই আয়াশ বললো
” এতো কাঁপাকাঁপি কিসের আফুসোনা ? ভালোবাসা নিতে গেলেই তোমার যত ভয় ! এই ভয়টা আমি আজকে কাটিয়েই ছাড়াবো দেখ , বাসায় চলো ৷”
নূর হাত দিয়ে আয়াশকে সরাতে গেলেই আয়াশ বলল
” একবার বলেছি না পালানোর চেষ্টা করবানা , তুমি যতটা পালানোর চেষ্টা করবে আমি ততটাই তোমার কাছে এগিয়ে যাবো ৷”
নূর চুপ করে আছে মাথা নীচু করে ৷ আয়াশ পুনরায় বলল
” আচ্ছা যাই হোক এখন বলো কান্না করছিলে কেন?”
নূরের ভাবভঙ্গির পরিবর্তন হলো না,নূর আগের মতোই চুপ করে রইলো ৷ আয়াশ পুনরায় বললো
” কি হলো বলো ! না বললে তুমি তো জানো আমি ঠিক কি করতে পারি ! আমি অত্যন্ত লজ্জাহীন একজন মানুষ যে যেখানে সেখানে সবকিছু করতে পারে ৷ তাই তাড়াতাড়ি আনসার দাও ৷”
নূর মিনমিন সুরে বলল
” আসলে ভাইয়া আমাকে নিয়ে অনেক চিন্তা করে তো তাই আমি একটু রাগারাগি করেছিলাম সেই জন্যই আরকি ৷” নূর আয়াশকে সত্যিটা বললো না ৷ কারন আয়াশ নূরদের বাসাতে যতদিন ছিলো মায়া আয়াশের সাথে কখনো খারাপ ব্যাবহার করেনি আর মায়া যেহেতু ওদের বাড়ির হবু বউ তাই মায়ার সব কথা আয়াশকে বলে মায়াকে আয়াশের চোখে নীচে নামাতে চাইনা নুর ৷
কথাটা শোনামাত্রই আয়াশ ওর হাতের বাধন হালকা করতেই নূর ছিটকে দূরে সরে গেল, আসলে আয়াশ ওকে এতো শক্ত করে আটকে রেখেছিলো যে আচমকাই ছেড়ে দিতেই নূর ভারসাম্য হারিয়ে ফেলল ৷
আয়াশ নূরের দিকে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
” ওহহ ৷”
নূর আয়াশের মুখ দেখে বুঝতে পারলো যে আয়াশ কোনভাবেই ওর কথা বিশ্বাস করেনি ৷ আসলে না বিশ্বাস করার ই কথা , নূর মিথ্যা নামক জিনিসটাও ঠিক করে গুছিয়ে বলতে পারেনা, ওর শরীরের মাঝে অস্থিরতা কাজ করে, চঞ্চলতা বাড়ে , মুখের ভাবভঙ্গির পরিবর্তন হয় যখন ও কখনো মিথ্যা বলতে যাই ৷ এইভাবে ও ছোটবেলায় ওর আম্মুর কাছে কতোবার যে ধরা খেয়েছে তার ঠিকানা নেই ৷
নূরের ভাইয়া প্লেট ভর্তি খাবার সাজিয়ে ওদের সামনে রাখলো, নূরের গলা দিয়ে খাবার নামছেনা বারবার আয়াশের মুখের দিকে তাটাচ্ছে, মানুষটা অতিরিক্ত স্বাভাবিক তবুও যে আয়াশের এমন একটা লুকে নূর কেন মেনে নিতে পারছেনা নূর জানে না ৷আয়াশ সবকিছু রেখে হালিম খেলো যেটা মায়ার মা বরাবরই অত্যন্ত ঝাল দেই ৷ নূর যতদূর জানে আয়াশ ঝাল খাবার খাই না, ইফার কাছ থেকে নূর এই কথাটা জেনেছে ৷ আয়াশের সাদা মুখে কানের অংশটুকু লাল হয়ে আছে ৷ মনে হচ্ছে যেন নিজের মাঝে রাগটাকে দ্বিগুণ করার চেষ্টা করছে, আর দিনশেষে রাগ গুলো আয়াশ নূরের ওপরেই ঝাড়বে ৷ নূর এক গ্লাস জল ঢকঢক করে খেয়ে নিয়ে বলল
” ভাইয়া আমার শরীরটা ভালো লাগছে না , আমি আর খাবো না ৷”
আয়াশ নূরের দিকে তাকিয়ে বলল
” কি হয়েছে ?”
নূর ঘাবড়ে গিয়ে বলল
” জানি না , জ্বর জ্বর আসছে মনে হয় ৷”
নূরের ভাইয়া চিন্তিত কন্ঠে বলল
” আয়াশ তুমি যাওয়ার পথে ওর জন্য একটু ঔষুধ নিয়ে নিও ৷”
আয়াশ মাথা নাড়িয়ে বলল ” জ্বি ভাইয়া ৷”
নূর চুপচাপ বসে রইলো ৷ কি হবে ভাবছে শুধু ৷
কিছুখন পর ওরা রওনা দিলো ৷ আয়াশ ড্রাইভ করছে পাশে বসে আছে নূর ৷ আয়াশ বেশ চুপচাপ কথা বলছেনা দরকার ছাড়া ৷ হঠাৎ আয়াশ একটা ফার্মেসির দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই নূর বুঝতে পারলো যে আয়াশ ঔষুধ কিনবে , তাহলে কি আয়াশ ওর কথা বিশ্বাস করেছে নাকি ওকে ওর জালেই ফাসাচ্ছে কোনটা ?
আয়াশ দোকান থেকে ঔষুধ এনে নুরের হাত দিয়ে বলল
” নাও , জ্বর কমবে ৷”
নূর কাঁপাকাঁপা হাতে ঔষুধটা নিলো , ওর তো জ্বর নেই তাহলে ও ঔষুধটা কেন খাবে তাই হাজারো কল্পনা জল্পনা করে বলল
” বাসায় গিয়ে খাই ?”
আয়াশ একটু ভারী গলায় বলল
” তাড়াতাড়ি খাও , নো মোর ওয়ার্ডস ৷” নূর আর কথা বাড়ালোনা ,ঔষুধটা করে খেয়ে ফেললো ৷ মনে মনে বলতে লাগলো ” হুদাই যে কেন মিথ্যা বলতে যাস আল্লাহ মালুম , এখন ঔষুধ খেয়ে যদি উল্টো কাজ হয়🤷🏻!”
আয়াশ গাড়ি চালালো , নূর একটু অন্যমনস্ক ছিলো তাই খেয়াল করেনি যে কোথায় এসেছে ৷ নূর গাড়ি থেকে নেমে দেখলো ওরা একটা ছোট্টখাটো বাড়ির সামনে নেমেছে ৷ নূর অবাক হয়ে বলল
” এটা কোথায় ?”
আয়াশ একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল
” ডেভিল ভিলা ৷”
চলবে,,,,