তুমিই আমার প্রিয় নেশা
পর্ব:6,7
Suraiya_Aayat
পর্ব:6
সারাদিন নূর আর বেশি কিছু ভাবেনি , কালকে ওরা আয়াশের বাসায় ফিরে যাবে সেই জন্য রাত্রে বেলা খাওয়ার শেষে নূর ওর বাবার ঘরে গেল ৷ উনি ফোনে উচ্চস্বরে কারোর সাথে কথা বলছিলেন তখনই আচমকাই নূর ঘরে ঢুকতেই উনি একটু ভড়কে যান ৷ ফোনটা অত্যন্ত ব্যাস্তাতার সাথে কেটে দিয়ে নূরকে জিজ্ঞাসা করেন
” কি রে মা এতো রাতে তুই এখানে যে ৷”
নূর ঘরে ঢুকে ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বলল
” একটা প্রশ্ন করবো তোমাকে উত্তর দেবে?”
উনি ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বললেন
” হ্যাঁ বল না ৷”
” আমার যে নানুর বাসা আছে তুমি তা আগে কখনো সে বিষয়ে কিছু বলোনি তো ? এমনকি আমার মামা আছে সে কথাও কখনো জানাওনি কিন্তু কেন?”
নূরের বাবা বেশ কিছুখন গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন তারপর গলা পরিষ্কার করে বললেন
” শুনবি কেন বলিনি ?”
নূরের এবার খানিকটা হলেও খারাপ লাগলো যে তার বাবা তার থেকে কথাগুলো লুকিয়েছে তাই খানিকটা অভিমানী সুরে বলল ” হমম বলো ৷”
উনি রকিং চেয়ারে ধপ করে বসে পড়লেন আর দুলতে লাগলেন নূরকে বসতে বললেও নূর বসলোনা ৷
” তোর মা আর আমি ভালোবেসে বিয়ে করি, তোর নানু বাসার সবাই ছিলেন সমাজের উচ্চবিত্ত মানুষ, সহজ ভাষায় বললে খানদানী পরিবার ৷ তখনকার দিনে এমনকি এখনো এই রিতী মানা হয় তে খানদানী বংশের মাঝেই আত্মীয়তা গড়ে উঠবে, মানে খানদানী বংশের ছেলের সাথে খানদানী বংশের মেয়ের বিয়ে হবে ৷ কিন্তু আমি সাধারন পরিবারের ছেলে ছিলাম তাই তারা আমাকে মেনে নেয়নি ৷ তোর মা আমাকে ভালোবেসেছিলো শুধু, কোন জাতপাত বিচার করেনি তাই হয়তো 30টা বছর আমরা একসাথে থাকতে পেরেছিলাম ৷ যাই হোক আমরা পালিয়ে বিয়ে করি নয়তো তারা আমাদেরকে মেনে নিতো না, আর এই খবরটা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তেই তোর নানুর বাসার সকলের আত্মসম্মানে লাগে তাই তারা তোর মাকে নিজেদের মেয়ে বলে অস্বীকার করে এবং সবাই তেমনই ব্যাবহার করতে থাকে ৷ এই কথা শুনে তোর মা খুব কষ্ট পেয়েছিলো তাই আর কখনো তাদের কাছে ফিরতে চাইনি ৷ তাই আমিও তোর মা কে আর জোর করিনি ৷ কয়েক বছর পর আমাদের মনে হলো যে আমাদের সব অগোছালো সম্পর্কগুলো ঠিক করা উচিত, কোন মনোমালিন্য না রাখায় শ্রেয় তাই আমরা ঠিক করি তাদের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইবো ৷ তোর মা তাদের কাছে ক্ষমা চাইতে গেলে তারা পুনরায় অস্বীকার করে ৷ রাস্তায় ফিরতে ফিরতে আ্যক্সিডেন্ট হয়,তোর মামার বাড়ির লোকজন তোর মায়ের মৃতদেহ আমাদের কাছে দিয়ে নিষ্ঠুরের মতো চলে যাই, তাই আমি তোদেরকে একথা কখনো জানাতে চাইনি ৷
কথাগুলো শুনে নূরের চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়ালো ৷মানুষ কি করে এতোটা নিষ্ঠুরের মতো আচরন করতে পারে তাও আবার জাতপাত বিচার করে ৷ নুর চোখের জল মুখে কঠিন সুরে বলল
” তাদের ঠিকানা কোথায় বাবা ? কোথায় গেলে তাদের মতো মানুষের দেখা মিলবে ?”
উনি কাঁদোকাঁদো হয়ে বললেন
” সেটা তুই জানতে চাস না মা, আমি তোকে বলতে পারবো না, আমি চাইনা তাদের মতো মানুষের ছায়া তোর ওপর পড়ুক ৷ আমাকে ক্ষমা কর ৷”
নূর বেরিয়ে গেল রুম থেকে ৷ ওর মায়ের কথাগুলো বারবার কানে বাজছে ৷ কতোটা খারাপ ওর মায়ের বাসার লোকজন ৷
নূর রুমে যেতেই দেখলো আয়াশ হাতের ওপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে, নুরের চোখটা আয়াশের ওপর আটকে গেল ৷ কতোটা নিষ্পাপ লাগছে দেখতে, সারাদিনে আয়াশ কোন খারাপ ব্যাবহার করেনি ৷ নূর গিয়ে চুপিসারে আয়াশের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো , আয়াশের দিকে ফিরে ঘুমায় না নূর, আয়াশের দিকে তাকালেই ওর কেমন একটা অসস্তিমাখা অনুভূতি হয় ৷চোখটা বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করতেই পিঠে আয়াশের ঠোঁটের ছোঁয়া পেয়ে শাড়ির আঁচলটা শক্ত করে চেপে ধরলো নূর, চোখ মুখ খিচে শুয়ে আছে , ও এখন কোনরকম বিরক্তি প্রকাশ করলেই আয়াশ আরো পেয়ে বসবে তাই কোন রেসপন্স না করায় ভালো ভেবে চুপ করে রইলো ৷ ধীরে ধীরে আয়াশের ঠোঁটের ছোঁয়া নুরের সমগ্র পিঠ ছাড়িয়ে গলায় নেমে আসলো,,নুর চুপ করে আছে কোন সাড়া শব্দ নেই ওর ৷ আয়াশ নূরকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলল
” এতোটা সহ্য ক্ষমতা তুমি কোথা থেকে পেলে আফুসোনা ? এমন করলে যে আমারো তোমাকে ভালোবাসার ইচ্ছাটা দ্বিগুন হয়ে যাবে তা কি তুমি জানো ?”
কথাটা শুনতেই নূর চোখ খুলে ফেলল, আয়াশের এই পরিমান লাভ টর্চার ও সহ্য করতে পারে না সেখানে দ্বিগুন ভালোবাসা কিভাবে সহ্য করবে ও ?
কথাটা ভাবতেই ভয়ে চোখ খুলে ফেলল ৷ আয়াশ নূরের কান্ড দেখে হাসতে লাগলো, নূর ভাবছে যে চোখটা খুলে কি ও নিজের পায়ে নিজে কুড়ুল মারলো?
আয়াশ নূরের নাকটা টেনে দিয়ে বলল ” কি ভয় পেয়ে গেলে আফু সোনা ?”
নূর উঠতে যেতে নিলেই আয়াশ নূরকে বিছানার সাথে চেপে ধরে বলল ” শুয়ে শুয়ে রিল্য৷ক্সে কথা বলো, এতো ব্যাস্ত হচ্ছো কেন আমি তো আছি তাইনা! ”
নুর ওর কাঁপাকাঁপা ঠোঁট দুটো নাড়িয়ে বলল
” মানেইইই ৷”
আয়াশ অনীহা নিয়ে বলল
” আগে বলো এতখন আমাকে ছেড়ে কোথায় ছিলে ? বলেছি না আমার সাথে ছায়ার মতো হয়ে থাকবে ৷কি বলিনি ?”
নুর ভয়ার্ত কন্ঠে বলল
” জ্বি , বাবার ঘরে গিয়েছিলাম ৷”
আয়াশ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল ” কেন?”
“কেন আবার এমনিই ৷”
” ওহ আচ্ছা বুজেছি তুমি বলবেনা, যাই হোক তাহলে চলো তোমাকে ভালোবাসি ৷”
” এইইই না না, বলছি বলছি ৷” ভয়ে ভয়ে বলল নুর ৷
আয়াশ মুচকি হেসে বলল ” হ্যাঁ বলো ৷”
নুর ভয়ে ভয়ে আয়াশকে সব বলে দিলো ৷ আয়াশ নূরের সব কথা শুনে ক্লান্ত ভঙ্গি নিয়ে নূরের পেটের ওপর মাথা রাখতেই নূর বলে উঠলো ” সরে জান, আমার কাতুকুতু লাগছে ৷”
হুঠ করে আয়াশ সরে গিয়ে নুরের মুখের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলল ” তুমি ওনার কথা বিশ্বাস করেছো ?”
নূর অবাক হয়ে বলল
” হমম, না বিশ্বাস করার কি আছে ?”
আয়াশ নূরের গালে ছোঁট ছোঁয়াতে ছোঁয়াতে বলল
” ভালোবাসতে মন চাই আফু সোনা,বিরক্ত করোনা ৷”
🌼
” কিছুখন আগেই তো বাসায় এলেন, এখন আপনি কোথায় যাচ্ছেন?”
আয়াশ হেসে বলল ” বউকে ভালো না বেসে তাকে কিভাবে শুধু টর্চার করা যাই সেই ট্রেনিং নিতে যাচ্ছি ৷”
আয়াশের কথা শুনে নূর শুকনো ঢোক গিললো,মানুষটা সব কাজেই এতো ত্যাড়া ত্যাড়া কথা বলে কেন! নূর বিরক্ত হয়ে বলল ” আচ্ছা যান, আমি আর কখনো জিজ্ঞাসা করবো না ৷”
আয়াশ নূরের দিকে চোখ মেরে বলল
” বাই আফুসোনা ৷”
নূর হাফ ছেড়ে বাঁচলো ৷ মানুষটা সামনে থাকলে ওর শরীরের মাঝে অদ্ভুত পতিক্রিয়া শুরু হয়ে যায় ৷ নূর ঠিক করলো আজকে ও আয়াশের বাবার সাথে দেখা করতে যাবে ৷ ওনার সাথে এখনো অবধি নূর দেখা করেনি ৷ নূর কথাটা ভেবে আয়াশের বাবার ঘরের দিকে পা বাড়ালো ৷
চলবে,,,,,
#তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা
#পর্ব:7
#Suraiya_Aayat
আয়াশের বাবার ঘরের দিকে পা বাড়ালো নূর ৷ মানুষটাকে কখনো দেখিনি নূর ৷ সকাল বেলা ইফাকে জিজ্ঞাসা করেছিলো যে ও ওনার ঘরে যেতে পারবে কি , ইফা ওকে বলেছিলো ” হ্যাঁ ভাবি যাও কোন সমস্যা নেই, আমি অবশ্য খুব একটা যাইনা, আম্মু ওনার খাবার দাবার দিয়ে আসে ,কোন দরকারি কথা থাকলে সেটা বলতে যাই, তাছাড়া ওনার ঘরে তেমন কেউ একটা যাই না তাছাড়া উনিও নিজেকে ঘরবন্দি করে রেখেছেন বাইরে বার হননা ৷ কিন্তু তুমি যাও কেউ কিছু বলবে না , তাছাড়া তুমি গেলে উনি তোমাকে দেখে খুব খুশি হবে ৷”
কথাটা মনে মনে আর একবার স্বরন করে নূর রুমের বাইরে পা বাড়ালো ৷ নূর চিনে গেছে ওনার ঘরটা কোথায় ৷ উনি থাকেন সবচেয়ে শেষের ঘরে, ঘরের অবস্থান শুনে এটা কল্পনা করা খুব একটা কঠিন নয় যে প্রয়োজন ছাড়া সচরাচর ওনার ঘরে কেউ তেমন একটা যান না ৷ওনার ঘরের সামনে যেতেই হঠাৎই কেউ একজন সেই ঘরের দরজা খুলে আচমকাই বেরিয়ে আসতেই নূর চমকে গেল, ভয় পেয়ে খানিকটা চমকে উঠলো ৷ সামনের দিকে তাকাতেই দেখলো আহান ওর দিকে তাকিয়ে আছে ৷ আহানকে দেখে নুরের মনের মাঝে যে সফট কর্নার ছিলো তা ধীরে ধীরে পাথরে পরিনত হতে লাগলো , ওর মনে পড়ে , খুব করে মনে পড়ে ওর বিয়ের দিনের কথা সেদিন আহান সকলের সামনে ওকে প্রত্য৷ক্ষান করেছিলো আর যার দরুন আজ ও আয়াশের বউ৷ আহান কিছু বললো না নূরের মুখের দিকে তাকিয়ে হাটা দিলো সেখান থেকে, নূর লক্ষ করলো আহানের মুখের ভাব ভঙ্গি ছিলো কঠোর ,খুব করে কোন কিছুর প্রতি চরম বিরক্তি ফুঁটে উঠলে যেমনটা হয় ঠিক তেমনটাই ৷নূর আহানকে আর বেশি গুরুত্ব না দিয়ে নরম কন্ঠে ডেকে উঠলো
” বাবা ! আসবো ৷”
ভিতর থেকে ওর কথার প্রতিউত্তর এলো না দেখে নূর একটু ঘাবড়ে গেল ৷ উনি কি ইচ্ছা করেই উত্তর দিচ্ছেন না নাকি উনি ওনার ছেলে ব্যাতিত কারোর সাথে কথা বলতে চান না কোনটা! কথাটা ভেবে আর একটা বার নূর ডেকে উঠলো
” আসবো ! বাবা !”
তখনই হঠাৎ কেউ তড়িঘড়ি কন্ঠে বলল
” কে ?”
নুর ওনার থেকে উত্তর শুনে একটা সস্তির নিশ্বাস নিলো ৷ তারপর বুকে বল আর একরাশ সাহস নিয়ে বলল ” বাবা আমি নূর ৷”
উনি ওনার হাস্সোজল কন্ঠে বললেন
” বৌমা ?”
” বৌমা ” শব্দটা শুনে নূর কিছুখন চুপ করে রইলো ৷ তারপর একটু থেমে বলল ” জ্বি ৷”
কথাটা বলার পর আর কোন উত্তর এলো না দেখে নূর বিভ্রান্ত হয়ে গেল যে ও ভিতরে যাবে কি যাবে না,তারপর ভিতরে যাওয়ার কথা ভাবতেই হঠাৎই দরজার প্যাচ প্যাচ শব্দে নূর আতকে উঠলো, বুঝতে পারলোনা হঠাৎ কি হলো, তবে বছর 50 এর একজন মধ্যবয়স্ক মানুষকে দেখে নূর বুঝতে পারলো যে সেটা আয়াশের বাবা ৷ আয়াশের বাবাকে দেখে নূর কিছুখন ওনার দিকেই তাকিয়ে রইলেন, তার শরীরের গঠন সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে, গালে সাদা দাড়ি, মাথার চুলগুলোতে সাদা রঙ ধরেছে ৷ গায়ে সাদা শাল আর পরনে একটা সাদা পাঞ্জাবী ৷ নূর যতদূর জানে আয়াশরা উচবিত্ত খানদনী পরিবারের কিন্তু আয়াশের বাবাকে দেখলে বোঝা অসম্ভব যে তিনি সেই বংশের ছেলে, হয়তো সময়ের সাথে সাথে তিনি নিজেকেও ভেঙে দুমড়ে মুচড়ে গুটিয়ে নিয়েছেন ৷ ওনার এমন চেহারার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ নূরের ঘোর ভাঙলো ৷ তখন মনে হলো যে উনি মুরব্বি মানুষ ওনাকে সালাম করা উচিত তাই নূর আর দেরি না করে মাথায় শাড়িটা বেশি করে টেনে দিয়ে ওনার পায়ে সালাম করতে গেলেই উনি সরে গেলেন ৷ নূর অবাক হলো , ওনার দিকে তাকিয়ে বললেন
” জ্বি আমি কি কিছু ভুল করে ফেললাম বাবা ৷”
উনি মুচকি হেসে বললেন
” একদম না নূর মা, আমি চাইনা আমার পা ধরে কেউ সালাম করুক তাই তোমাকেও করতে দিলাম না ৷”
নূর ও এক চলতে হাসির রেখা ফোটালো ওর ঠোঁটে ৷উনি নূরকে বললেন
” ঘরে এসো মা ৷” কথাটা বলে উনিও ঘরের দিকে গেলেন ৷ নূর ওনার পিছুপিছু গেল ৷ পুরো ঘরটা একটা অন্ধকার কুঠুরির মতো , কিন্তু খুব পরিপাটি ৷ উনি গিয়ে চেয়ারে বসলেন ৷ ঘরের অন্ধকার দেখে নূর জানালার দিকে তাকালো, সেখানে পর্দা দিয়ে ঢাকা ৷ নূর কিছু না বলে পর্দাটা সরিয়ে জানালাটা খুলতে গেলে পারলো না, জানালাটা হয়তো বহু বছর ধরে খোলা হয়না তাই হয়তো সে তার নিজের জায়গাটা পোক্ত করে নিয়েছে ৷ তবুও নূর অনেক চেষ্টায় জানালাটা খুলতেই একরাশ আলো ঘরে ঢুকে ঘরটাকে আলোকিত করে দিলো ৷ আয়াশের বাবা তেহেরাত সাহেব উনি চোখ বন্ধ করে নিলেন, উনি নিজেই কতো বছর বাইরের আলোর মুখ দেখেননি ৷
নূর জানালা খুলে ওনার সামনে রাখা চেয়ারটাতে বসলো ৷ উনি ওনার চোখ বন্ধ করে রেখে বললেন
” বাইরের আলো বড্ড চোখে লাগে নূর মা ৷তুমি নিজেই তো একটা নূর ৷”
নূর একটু আধো আধো গলায় প্রশ্ন করে উঠলো
” আমার নাম নূর আপনি কি করে জানলেন বাবা ৷”
উনি ভাঙা গলায় হেসে বললেন
” আয়াশ বলেছে ৷”
আয়াশ বলেছে কথাটা শুনে নূরের মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘুরলো ৷ আর বেশি কৌতুহল না রেখে বলল
” বাবা একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো আপনাকে ? বলবেন তার উত্তরটা ? আমি জানি আপনি উত্তর জানেন ৷”
উনি চোখটা খুলে বাইরের দিকে তাকালেন
” হমম বলো মা ৷”
” আয়াশ নামক মানুষটা আমার কাছে একটা গোলক ধাঁধার মতো, রহস্য বলতে পারেন , উনি এমন কেন? আর পাঁচ জনের এতো স্বাভাবিক ভাবে কথা বলেন না কেন? এতো রহস্য কেন ওনার মাঝে ? ওনার কি কোন অতীত আছে ? উনি কি কাউকে পছন্দ করতেন? আমাকে এভাবে বিয়ে করার কারন কি যখন সে আমাকে ভালোই বাসেনা ৷”
একনাগাড়ে সব প্রশ্ন করে ফেলল নূর ৷
উনি নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন
” এতো প্রশ্ন নূর মা ?”
নূর ওনার দিকে মিনতির সুরে তাকিয়ে বলল
” আমি সত্যিই জানতে চাই বাবা, এভাবে একটা অস্বাভাবিক ব্যাবহারকারী মানুষের সাথে কীভাবে সংসার করা যাই আপনিই বলুন ৷”
উনি ওনার বিছানা থেকে নেমে নূরের মাথায় হাত দিয়ে বললেন
” তোমার এই প্রশ্নের একটাই উত্তর ৷”
নূর কৌতুহল নিয়ে বলল
” কি ?”
” একটা কথা সবসময় মনে রাখবে তুমি সর্বদা খুশি থাকলে আয়াশ মনোবল পাবে, সে খুশি থাকবে ৷”
নূর অবাক হয়ে বলল ” আমি মনে করি না যে তিনি আমাকে ভালোবাসেনা তাই আপনার উত্তর আমি মানতে পারছি না , প্লিজ আপনি তো জানেন তাহলে বলুন ৷”
” আমি যতটুকু জানি ততটুকুই বললাম মা বাকি ওর ভালোবাসা তোমাকেই বুঝে নিতে হবে ৷ আর আমার বড়ো ছেলের তোমার সাথে এমন ব্যাবহার করেছে , তোমাকে বিয়ের আসর থেকে প্রত্যখান করেছে তাই ওর হয়ে আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি ৷ আসলে ও যা করেছে আয়াশের জন্য করেছে ৷ ”
নূর আর কিছু বললো না,আহানকে নিয়ে ওর শোনার ইচ্ছা নেই, তার প্রতি নূর মায়া ত্যাগ করেছে ৷
তেহেরাত সাহেব বললেন
” আহান পরশু ইউএসএ যাচ্ছে, আমি চাইনা ও এতো তাড়াতাড়ি যাক , ওকে বারন করলেও কোন কথা শুনলো না ৷”
নূর আহানের কথা শুনতে চাই না তাই কথা কাটানোর জন্য বলল
” বাবা আপনি সকালে খেয়েছেন?”
উনি মাথা নাড়িয়ে না জানালেন ৷ নূর সেই সুযোগে বলল
“আচ্ছা আপনি বসুন আমি আপনার খাবার আনছি , এবার থেকে আমি আপনার খাবার দিয়ে যাবো , সেই সুবাদে আপনার সাথে কথা বলাও হয়ে যাবে ৷”
নূর কথাটা বলে তাড়াহূড়ো করে বেরিয়ে গেল ৷ আয়াশের বাবা ওনার চোখের কোনের জলটা মুখে বললেন
” শুনছো প্রিয়ন্তি তোমার বৌমা তোমার মতোই হয়েছে তাই ধৌর্য হারিয়োনা ৷”
❤
আয়াশের বাবার রুমে সকালের নাস্তা দিয়ে এসে নূর রুমে আসলো, যা বুঝলো এ বাসাতে ওকে শুয়ে বসেই কাটাতে হবে , কাজ করার কোন সুযোগ নেই ৷ ইফাও বাসাতে নেই যে মেয়েটার সাথে বসে গল্প করবে তাই রুমে এসে ফোনটা হাতে নিলেই হঠাৎ রুমের ভিতর অদ্ভুত গন্ধ পেলে নূর, কেমন জানি পোড়া পোড়া গন্ধ আসছে ৷ নূর অনেকখন ধরে গন্ধটা অনুভব করছে কিন্তু তা কোথা থেকে আসছে ও জানে না ৷ একবার ওর কলেজে ল্যাবে প্র্যাকটিক্যাল করার সময় ছোটখাটো একটা বিষ্ফোরন হয়েছিলো একটা মেয়ের অযথা পাকনামিতে তাই সেই দিনের কথা নুরের মনে পড়ে গেল ৷ গন্ধটা পুরো রুমময় ছড়াচ্ছে ৷ নূর ভয় পেয়ে গেল কিছু যদি হয়ে যাই, গন্ধটার উৎসটাও নূরের অজানা ৷ ভয়ে ভয়ে একপা দুপা করে রুম থেকে বেরোতে গেলেই হঠাৎ কিছুর সাথে ধাক্কা খেতেই নূর সামনের দিকে তাকালো , আয়াশের সাথে ধাক্কা খেয়েছে ও ৷ আয়াশকে দেখে পিছনে সরে যেতেই আয়াশ নূরের কোমর ধরে ওর কাছে এনে ওর সাথে এক করে নিয়ে বলল
“পালাচ্ছো কেন আফুসোনা ?’
নূর একটু তোতলাতে তোতলাতে বলল
” দেখুন না কোথা থেকে একটা বাজে স্মেল আসছে মনে হচ্ছে কোন কিছু ব্লাস্ট করেছে ৷”
আয়াশ নূরকে নিজের সাথে আরো মিশিয়ে নিয়ে বলল
” কই না তো, আমি তো কোন গন্ধ পাচ্ছি না ৷ ”
নূর আয়াশের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল
” সত্যিই আপনি পাচ্ছেন না, কিন্তু আমি তো পাচ্ছি ৷”
কথাটা বলেই লম্বা শ্বাস নিয়ে দ্রুত নিশ্বাস ছাড়লো নূর,নাহ এখন তো ওউ আর গন্ধটা পাচ্ছে না, হঠাৎ করে কি হলো?
নূর অবাক হয়ে আয়াশের দিকে তাকিয়ে বলল
” বিশ্বাস করুন আমি গন্ধটা পাচ্ছিলাম ৷”
” তুমি আমাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছো আফু সোনা, পানিশমেন্ট তো পেতেই হবে, এমনিতেই একটু আগে বউকে টরচার করার নিনজা টেকনিক শিখে আসলাম , কাজে লাগাতে হবে না ?”
নূর শুকনো ঢোক গিলে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেই আয়াশ কোলে তুলে নিলো ৷
” আমার থেকে পালানোর বাহানা খোজো হমম, এখন পানিশমেন্ট নাও ৷”
নূর আর কিছু বলতে পারলো না, আয়াশের দিকে অবাক চোখে তাকালো ৷ অদ্ভুত একজন !
চলবে,,,,