প্রতিশোধ
পার্ট_8,9
জামিয়া_পারভীন_তানি
পার্ট_8
__ “আবির তুমি এসব বলছো টা কি, তুমি অন্য কারোর জন্য আমাকে অপমান করছো? ” মেয়েটি বলে আবিরকে।
__ “দেখো আমার কাছে তোমার কোনই ভ্যালু নাই। হয়তো ছিলো কোন একদিন এখন কিছুই নাই। তুমি চলে যেতে পারো, আর আনার সাথে কন্টাক্ট করার চেষ্টা ও করিও না।। “আবির বলে মেয়েটাকে।
__ ( মেয়েটা আবিরের কলার ধরে বলে ) ” এতো বড় কথা তুমি আমায় বলতে পারোনা আবির। আমি তো তোমায় ভালোবাসি, তার চেয়েও বড় কথা দুই দিন পর আমাদের বিয়ে। সব কিছু ঠিক ছিলো কিন্তু তুমি মাঝখানে এমন কথা কেনো বলছো আবির। ”
__ ( মেয়েটাকে সরিয়ে দিয়ে) দেখো অনু ( মেয়েটার নাম অনন্যা, আবির অনু বলে ডাকে ) , তোমাকে আমার বিয়ে করা সম্ভব না। কারণ আমার বিয়ে হয়ে গেছে নিরার সাথে। ( নিরার কাঁধে হাত রেখে বলে আবির)
__ ” তুমি আমার সাথে ফাজলামি করছো তাই না আবির, কতো টা ভালোবাসি তার পরীক্ষা নিচ্ছো তাই না। ” (অনু)
__ ” ফাজলামি করার কোন মুডে আমি নাই মিস অনু ” ( আবির)
__ ” এটা বিশ্বাস করিনা, বিয়ের দুই দিন আগে এসব কি বলছো তুমি “। ( অনু)
__ ” দেখো অনু, তোমাকে আমি মন থেকে কখনো ই ভালোবাসিনি। বাবা বিয়েটা ঠিক করেছিলেন বলে মত দিয়েছিলাম। কিন্তু আমি বিয়ে করেছি আমার প্রেমিকা নিরা কে। তার সাথেই সংসার করবো, সেটা তোমার বাবা কে জানিয়ে দিয়েছি, তাও কেনো তুমি এখানে এসেছো? আমি চাই তুমি আমাকে কখনো বিরক্ত করবেনা। ” ( আবির বলে অনুকে)
__ ( নিরা আবিরের কাছ থেকে সরে এসে বলে) বিয়ে যখন ঠিকই করা ছিলো, তাহলে বিয়ে করতে কি প্রব্লেম। আর আমি আপনার প্রেমিকা ছিলাম ও না হবোও না কখনো। বিয়ে করে সুখী হয়েন, আমি চলে যাবো এই বাসা থেকে। ( বলেই নিরা উপরে চলে যায়)
__ নিরা ভুল বুঝোনা ( আবিরের কথা নিরা শোনেও না)
__ বাহ আবির বাহ, তুমি একটা অমানুষ, নইলে আমার সাথে এমন করতে না তুমি। বিয়ের সব কিছু ঠিকঠাক, কার্ড ছাপানো হয়ে গেছে আর তুমি অন্য কে নিয়ে সংসার করছো। বেশ ভালো, তোমাকে সুখে থাকতে দিবোনা। বিয়ে তোমাকে করতেই হবে ওই দিনেই, ওই সময়ের, পারলে আমি কেশ করে আসবো। ( বলে অনন্যা চলে যায় আবিরের বাসা থেকে)
__ ( দরজা খোলাই ছিলো , তাই রোমানা কখন এসেছে আবির খেয়াল করেনি। রোমানা আবির কে এসে বলে) ” কি হয়েছে আবির বাবা? ” অনু মা এতো রাগ করে চলে গেলো ক্যান ? ”
__ ” খালা তুমি এসেছো ভালো করেছো, দুপুরের খাবার ব্যবস্থা করো ” (আর কিছু না বলে আবির উপরে যায়)
__ উপরে গিয়ে দেখে নিরা বিছানায় বসে আছে। নিরার পাশে গিয়ে বসতেই আবিরকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয় নিরা।
__ ” দেখুন! আমি আপনাকে ভালোবাসি না, বাসবো ও না কখনো। আর আমার কাছে আসার চেষ্টা ও করবেন না “।
__ দেখো! এতো রাগ করতে হয়না, তুমি খুব রাগী। রাগ টা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করো।
__ জ্ঞান দিয়েন না, আপনার জ্ঞান শুনার জন্য আমি বসে নাই। ( নিরা)
__ ” রাগ তোমার হওয়া টা স্বাভাবিক, আমি তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করিনি সেটা ঠিক। কিন্তু এখন ভালোবাসি, তোমাকে সত্যিই খুব ভালোবেসে ফেলেছি নিরা। ”
__ এসব ফালতু কথা কখনো ই বলবেন না। ( নিরা)
__ ওকে কাজের কথাতে ই আসি তাহলে, রোমানা চলে এসেছে সে রান্না করছে। আর তার চেয়েও বড় কথা পরশু আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান। কেনাকাটা হবে তোমার পছন্দের, রেডি হয়ে থেকো।
__ কিসের অনুষ্ঠান? আমি এর মাঝে নাই।
__ দেখো, সব সময় জেদ ভালো না। ২ ঘন্টার মাঝে যেন তোমাকে রেডি দেখি।
__ আপনার কথা অনুযায়ী আমি চলতে পারবোনা।
__ আবির একটু রাগ করে নিরাকে হটাৎ ই কোলে নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ভিজিয়ে দেয়। নিরা আবির কে মারতে থাকে খুব কিন্তু তাও ছাড়ে না। আবির আর নিরা দুজনেই ভিজে গেছে তখন নিরা বাধ্য হয়ে শাওয়ার শেষ করে। আবির ততোক্ষণে বের হয়ে গেছিলো। নিযে পরিষ্কার হয়ে নিরার জন্য ড্রেস রেডি করে দেয়, গয়না সহ। নিরা রাগ করে থাকলেও রেডি হয়৷
__আবির ডাইনিং টেবিলে বসে আছে আর রোমানা খাবার দিচ্ছিলো। তখন নিরা নিচে নামে, নিরাকে দেখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তাড়াতাড়ি খেয়ে নিতে বলে। নিরাও কথা না বাড়িয়ে খেয়ে নেয়, কারণ জানেই ঝগড়া করে লাভ নাই। আবির নিরাকে রোমানার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। রোমানাও বউ মা বলে খুব সুন্দর করেই মেনে নেয়।
__ এরপর দুইজনে শপিং এ যায়। বিয়ের ড্রেস কিনে আবির, নিরার পছন্দেই। আবিরের গুলা আগে থেকেই কেনা ছিলো । গয়না কিছু কিনে সন্ধ্যার পর রেস্টুরেন্টে ঢুকে। সেখানে ডিনার করে রোমানার জন্য এক প্যাকেট নিয়ে বাসায় আসে।
__ বাসায় এসে দেখে আবিরের বাবা মা এসেছে, নিরার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় আবির।
__ নিরা সবাইকে সালাম দেয়, কিন্তু নিরাকে যে আবিরের বাবা মা মানতে পারেনি সেটা বুঝতে পারে আবির। এতে আবিরের তেমন কিছুই যায় আসে না কারণ আবির সারাটা জীবন একা একা ই বড় হয়েছে। আবিরের বাবা মা শুধু টাকার পিছনে দৌড়িয়েছে। আবিরের জন্য কোন স্পেশাল সময় ছিলো না তাদের। আবিরের কাছের মানুষ বলতে ছিলো এক রোমানা আর একমাত্র ফ্রেন্ড মিশি। আবিরের বাবা মা দুইজনেই ডাক্তার, তারা সব সময়ই ব্যস্ত থাকতো । আর এখন বেশির ভাগ সময় ই বিদেশে থাকে। যেখানে টাকা বেশি তারা সেটাকেই বেছে নিয়েছে। । কিন্তু আবিরের জন্য কোন আদর ভালোবাসা ছিলো না কোনদিনই। আবিরের ইচ্ছে ছিলো শিক্ষক হবার কিন্তু বাবা মায়ের ইগোর কাছে হেরে গিয়ে মেডিকেলে ভর্তি হতে হয়। সেখানে পড়াশোনা শেষ করে প্রফেসর হয়ে শিক্ষক হবার ইচ্ছেটাই শুধু পূরণ করতে পারে।
__ তৃণার বাবা আসে সেদিন রাত্রে, তৃণা তার বাবার গলা জড়িয়ে কি যে কান্না করে তা বলার মতো না। তৃণার বাবাও একটু আবেগী, তাই মেয়ের জন্য সব কিছুই করতে চায়। তৃণার বাবা প্লান করে নিরার যায়গাতে তৃণা করে দিয়ে নিরাকে সরিয়ে দিবে। তৃণার জন্মের সময় ওর মা মারা গেছে তাই এতো আদরের মেয়েকে কখনো কষ্ট দিতে পারবেনা তৃণার বাবা।
__ আচ্ছা ড্যাডি, ওই মেয়েটা আমার মতো দেখতে হলো কিভাবে। ( তৃণা)
__ নারে তেমন কিছুই না। তুই এতো ভাবিস না, সব ঠিক হয়ে যাবে।
__ তুমি নিরাকে কি করবে?
__ আমার বাসায় নিয়ে গিয়ে বন্দী করে রাখবো।
__ নাহ এতে ধরা পড়ে যেতে পারো।
__ তো কি করতে বলছিস?
__ আমি বরং নিরা হয়ে যায়, আর ওকে তৃণা বানিয়ে দাও।
__ নাহ এটা সম্ভব না।
__ কেনো ড্যাডি, আমার জন্য এটুকুও পারবে না।
__ আচ্ছা দেখছি, কি করা যায়।
__ ওকে ড্যাডি, খুব আনন্দে জড়িয়ে ধরে তার বাবা কে।
তৃণার বাবা খুব টেনশন এ পড়ে যায়। যদি তৃণাকে নিরা বানিয়ে পাঠায় তাহলে সব শেষ হয়ে যাবে। তাহলে কি করে কি হবে কিছুই বুঝতে পারেনা তৃণার বাবা।
একমাত্র মেয়ের সুখের জন্য সব কিছুই করতে পারবে কিন্তু কিভাবে সম্ভব। তৃণাকে উনি হারাতে চায় না, তার থেকে আবিরের বাবা মায়ের সাথে কথা বলবে ভাবে তৃণার বাবা। এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ে তৃণার বাবা।
__ তৃণাও মহা খুশি যে তার একটা চাওয়া আবারো পূর্ন হবে। সাইরাও খুব খুশি তৃণার সুখে।
__ ______
আবিরের মা আর বাবা আবিরের সাথে মিটিংয়ে বসে। নিরা তখন উপরে ছিলো সেই সুযোগে বলে
__ আবিরের বাবা আবির কে বলে ” দেখো আবির, তুমি এমন একটা কাজ করেছো , সেটা আমাদের স্টাটাস এর সাথে সত্যিই যায় না। কোথায় আমাদের অবস্থা আর কোথায় একটা নিম্নঘরের মেয়ের স্টাটাস। ” ( খুব গম্ভীরমুখে বললেন)
__ আচ্ছা ড্যাড, তোমরা সারা জীবন এতো এতো আয় করেছো কার জন্য।
__ এটা কেমন কথা, আমাদের আর কেই বা আছে তুমি ছাড়া ( আবিরের মা)
__ আচ্ছা মম, এতো বাড়ি, গাড়ি সম্পত্তি দিয়ে আমি কি করবো যদি আমি কখনো মন থেকে সুখী নাই হতে পারি।
__ তাহলে অনন্যাকে বিয়েতে মত দিয়েছিলে কেনো? ( আবিরের বাবা)
__ কারণ তুমি পছন্দ করেছিলে তাই।
__ তাহলে এখন কি হলো, অন্য মেয়েকে তুমি কিভাবে বিয়ে করতে পারো।
__ এটা একটা এক্সিডেন্ট ছিলো, কিন্তু বিয়ের পর আমি নিরাকেই ভালো বেসে ফেলেছি।
__ কিসের এক্সিডেন্ট ? ( আবিরের মা)
__ আমি তোমাদের এতো কিছুর জবাব দিতে পারবোনা মম। প্লিজ আমার ভালোবাসা কে তোমরা মেনে নাও। নইলে তোমরা তোমাদের বাসায় গিয়ে তোমাদের মতো ব্যস্ত লাইফ লিড করো। নিরার সাথে আমাকে সুখী থাকতে দাও প্লিজ।
__ তার মানে আমরা তোমার কেউ না তাইতো আবির ( মা)
__ তোমরা আমার বাবা মা, আমি যদি তোমাদের পছন্দ অনুযায়ী চলি। তাহলে আমার সুখের দিক টাও তোমাদের দেখা উচিৎ।
__ তোমার সাথে কথা বলেই বা কি লাভ, আমরা এখন পর হয়ে গেছি।
নিরা উপরে দাঁড়িয়ে সব শুনেও কিছু না বলে ঘরে গিয়ে কাঁদে। আসলে তো নিরা চায়নি এমন তার সংসার হোক। এরা এতো ই ধনী যে মানুষকে শুধু কস্ট দিতেই জানে। আমি তো নিম্নঘরের মেয়ে, এই বাড়িতে থাকা আমার সত্যিই অনুচিত। কাল সকালে ই চলে যাবে এমন টা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে।
মিটিং শেষ করে আবিরের মন ও খারাপ, ঘরে এসেই দেখে নিরা ঘুমিয়ে গেছে তাই নিরা কে আর জাগায় না। বিছানার এক পাশে সেও শুয়ে পড়ে।
,
,
,
আবিরের বাবা মা একটু রাগারাগি করেই নিজের বাসায় চলে আসেন। সকাল সকাল আবিরের বাবার ফোনে একটা নাম্বার থেকে ফোন আসে। জরুরি ভিত্তিতে আবিরের বাবাও দেখা করতে রাজি হয়ে যায়। আবিরের বাবা আর তৃণার বাবা একটা রেস্টুরেন্টে দেখা করে।
,
,
তৃণাকে দেখার পর আবিরের বাবা যেন অবাক ই হয়। পুরোই নিরার মতো দেখতে কিন্তু পোশাক গুলো ই শুধু শর্টকাট। তৃণা বেশ মধুর কন্ঠে বলে
__ আংকেল , আমি আবির স্যার কে খুব বেশি ভালোবাসি। তাই তাকে একটু কস্ট দিই, কিন্তু আবির স্যার আমায় ভুল বুঝে। তারপর কিভাবে যে ওই মেয়েটা কে পেলো তা জানিনা।
শুধু একটা রিকুয়েস্ট, নিরাকে সরিয়ে দিয়ে আমাকে নিরার যায়গায় দিবেন। তাহলে আপনার সামাজিক স্টাটাস ও ঠিক থাকে। আর আমিও আবিরের বউ হয়ে গেলাম।
__ নিরার বাবা মনে মনে খুবিই খুশি হয়। ( কিন্তু হতাশা নিয়ে বলে) আবির অনেক চালাক, সব বুঝে নিবে। কিন্তু ওদের বিয়েও হয়ে গেছে৷ বিয়ে ছাড়া তুমি ওর সাথে থাকতেও পারবেনা।
__ আবার কায়দা করে বিয়ে করে নিবো।
__ আবির বুঝে ফেলবে, এমনিতেই আমাদের সাথে ওর ঝগড়া হয়, সে আরোও রেগে যাবে।
__ প্লিজ আংকেল, কিছু হতে দিবোনা।
আমরাই সব সামলিয়ে নিবো।
__ ওকে ওকে, তাহলে অনন্যার ফ্যামিলি কে ম্যানেজ করো।
__ অনন্যা কে আংকেল?
__ ওর সাথে আজ আবিরের বিয়ে হবার কথা ছিলো । কিন্তু আবির আগেই বিয়ে করে নেয় তাই খুব রেগে আছে।
__ আপনি শুধু ঠিকানা দেন, আমি সব ম্যানেজ করে নিবো আংকেল।
__ ওকে ভরসা করলাম, তোমার উপর।
চলবে……
#প্রতিশোধ
#পার্ট_9
#জামিয়া_পারভীন
__ আবির খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে নিরাকে ডাক দেয়, নিরা সাড়া দেয় না দেখে নিরার ঘুমন্ত কপালে কিস করে আবির আর তখনই নিরা টের পেয়ে যায়।
__ দেখুন, এইসব আমি পছন্দ করিনা তা কি জানেন না?
__ জানি তো , কি করবো বলো?
__ যান বাইরে যান, আর আসবেন না এখানে।
__ আচ্ছা একটা কথা তো বলো? তুমি কি কাউকে ভালোবাসো?
__ আমাকে কি বাজারের মেয়ে মনে হয় যে আমি কাউকে ভালোবাসবো?
__ আমি এসব মিন করে বলিনি, ভুল বুঝছো।
__ আপনারা ছেলেরা ভাবেন কোন মেয়ে আপনাকে ইগনোর করলে তার প্রেম আছে। অথচ এটা ভাবেন না ইগনোর করার পিছনে দায়ী আপনারা নিজেরাই।
__ হ্যাঁ! তা জানি, আমার দোষ এর জন্যই তুমি হয়তো কখনো ক্ষমা করতেও পারবেনা।
__ জ্বী হ্যাঁ, সেটাই।
__ আজ একটু মিশির চেম্বার এ যেতে হবে তোমাকে ।
__ কেনো, আমি কি অসুস্থ?
__ হুম, সেদিন মিশি যেটা বলেছে সেটা টেস্ট করে দেখতে হবে।
__ কবে কি বলেছে
__ আরে, বাদ দাও৷
গেলেই সব জানতে পারবে।
__ ওকে দিলাম বাদ, কিন্তু পরে যদি উল্টো পাল্টা কিছু শুনি তো আপনাকে কখনো ক্ষমা করবোনা।
আবির মিশির চেম্বারে গিয়ে নিরা কে পরীক্ষা করায়। যেদিন রেপ হয়েছিলো নিরা, সেদিন ই প্রেগন্যান্সির টেস্ট টা করিয়ে নিতে বলেছিলো মিশি। তাই আবির এর খারাপ লাগ্লেও নিরাকে নিয়ে আসে আজ। রেজাল্ট যাই হোক মেনে নিতেই হবে। সেদিন সন্ধ্যায় রেজাল্ট আনতে আবির একা যায়। কারণ নিরাকে সে এটা বলতে পারবেনা খুব সহজে। আর টেস্ট এর রেজাল্ট পজিটিভ দেখে হাসবে কি কাঁদবে তা বুঝতে পারেনা আবির। নিরা এই কথা জানলে তার খবর খারাপ করে দিবে।
তাই আবির ডিসিশন নেয় বিয়ের অনুষ্ঠান এর পরই নিরাকে এই খবর দিবে।
রেজাল্ট নিয়ে আলমারি তে লুকিয়ে রাখে আবির। পরের দিন বিয়ের অনুষ্ঠান তাই আবিরের বাবা মা সবাই আসে আবারো। আত্মীয়রা একেবারেই কমিনিউটি সেন্টারে আসবে, আবিরের বউ দেখতে।
আবিরের বাবা মাও নিশ্চিত আছে, বিয়ের মূল নাটক দেখবে বলে। নিরাকে তাদের একদমই পছন্দ না। ক্ষেত মেয়ে, আবিরের মায়ের ভাষায়। সব সময় শাড়ি পরে নিরা, যা এই যুগের সাথে বেমানান। অথচ তৃণা কতো ই না আধুনিক। অনন্যাও বেশ ছিলো কিন্তু তৃণাকেই তাদের বেশি ভালো লেগেছে। তার থেকেও বড় কথা তৃণার বাবা বিজনেসম্যান। সমাজে তার স্ট্যাটাস ও অনেক বেশি।
তৃণা যে পার্লারে নিরাকে সাজানোর কথা সেখানে গিয়ে চুপ করে বসে থাকে। দুপুরের দিকেই নিরাকে পার্লারে নিয়ে যায় আবির। আবিরকেও রেডি হতে হবে তাই ড্রাইভার এর উপর নিরাকে আনার দায়িত্ব দিয়ে আবির চলে আসে।
পার্লারের ভিতরে তৃণাকে দেখে নিরা চমকিয়ে যায়।
__ কি ব্যাপার তুমি এইখানে কি করছো? ( নিরা)
__ এইখানে তো তোমার আসার কথা ছিলো না, আসার তো কথা ছিলো আমার, তা এর শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে। ( তৃণা)
__ মানে, কি বলছো এইসব?
__ আবির স্যার কে পাবার জন্য এতো নাটক করলাম, আর তার সুযোগ নিলে তুমি তাই না। এর প্রতিশোধ আমি নিয়েই ছাড়বো । তোমাকে ভালো ই ভালো ই বলছি আজ থেকে তুমি তৃণা হয়ে আমার বাবার সাথে থাকবে। আর আমি নিরা হয়ে আবিরের সাথে থাকবো। মেনে নিতে কি রাজি আছো?
__ তোমার জন্য মিঃ আবির আমার ক্ষতি করেছে। তোমার মিথ্যা নাটকের বাস্তবতা আমাকে দেখিয়েছে আবির। আর আমি আবিরকে ছেড়ে দিবো। তা স্বপ্নেও ভেবো না, আবিরকে প্রতি মুহুর্তে কষ্ট দেয়ার জন্য নিরাই যথেষ্ট।
__ তা ভুলে যাও, এখন তুমি আর টিকতে পারবে না।
পার্লারে সব ব্যবস্থা করেই রেখেছি। বলেই তৃণার বডি গার্ড রা নিরা কে মুখ বেধে তৃণার বাসায় নিয়ে যায়। আর তৃণা আবিরের বউ সেজে আবিরের গাড়িতে করে বিয়ের অনুষ্ঠান এ যায়।
তৃণা প্রথমে অনুষ্ঠানে ঢুকেই আবিরের বাবা কে আর মা কে আলাদা আলাদা ভাবে চোখ টিপ দেয় বুঝিয়ে দেয় সে তৃণা। আবির সেটা খেয়াল করে নেয় কিন্তু বুঝতে পারেনা কিছুই।
বছরের প্রথম দিন, সাথে আবিরের বিয়ে, সেই হৈচৈ চারিদিকে। একে একে সবাই তৃণাকে নিরা ভেবে অভিনন্দন জানাচ্ছে।
মিশি : হ্যালো নিরা, কেমন আছো? এই সময় শরীরের যত্ন নিও বেশি করে।
__ এই সময় মানে? ( তৃণা)
__ আরে আবির তোমাকে কিছুই বলেনি নাকি? ( মিশি)
__ তৃণা ভয় পেয়ে যায়, কি বলতে চাচ্ছেন উনি, ধরা পড়ে যাবে না তো, এইসব ভয় ভিতরে ঢুকে যায়।
আবির : আহ! মিশি , কি শুরু করলি তুই বলতো। এখনো সে কিছুই জানেনা, আজ বলবো।
( তৃণা একটু স্বস্তি পেলো)
মিশি : ওহহ তাই নাকি, ওকে বাবু 🙃🙃
নিরার মা এসে তৃণার কে জড়িয়ে ধরে এতে তৃণা চিনতে না পেরে বলে
__ কে আপনি? আজব তো আমার সাজ নষ্ট হয়ে গেলো। ( তৃণা)
__ কি বলছিস মা তুই? নিজের মা কে তুই ভুলে গেলি?
__ সরি মা! আসলে তোমার মুখ দেখিনি, তাই ভুলভাল বলে ফেলেছে। ক্ষমা করে দিও ( মনে মনে উহহ! এই মহিলা যে এমন করবে কে জানতো । আমি তো ধরাই পড়ে যাচ্ছিলাম)
আবির এইসব ঘটনাতে বেশ সন্দেহ করে ফেলে তৃণাকে। কিন্তু কিছুই বলেনা, মনে মনে বলে, নিরা তো এমন ছিলো না। তাহলে কি এই মেয়ে নিরা নয়। অবশ্য নিরার চোখের ভাষা আমি বুঝি। এটা তো নিরার চোখ মনে হচ্ছেনা, নাকি সাজানোর জন্য এমন লাগছে। নাহ মাথা কাজ করছে না। পরে দেখা যাবে, আচ্ছা যদি এইটা নিরা না হয় তাহলে নিরা কোথায়? আর চিন্তা করতে ভালো লাগছে না আবিরের।
__ ( আবিরের মা) আবির ডার্লিং! এতো কিসের টেনশন করছো তুমি।
__ না তো মম! নিজের পছন্দ মতো সুন্দরী বউ পেয়েছি, কিসের টেনশন করবো আমি। [ আবির]
__ তাই তো কথা, এতো সুন্দর বউ থাকতে আর কিছু লাগে নাকি? ( আবিরের বাবা)
__ হ্যাঁ ড্যাড, ঠিকিই বলেছো।
সবাই অনেক রকমের গিফট এনেছে। খাচ্ছে, আবিরের নাম করছে। ফটোশুট, ভিডিও সব শেষ করে রাত ১২ টার দিকে তারা সবাই বাসায় চলে আসে।
,
,
,
তৃণার বাবা নিরাকে দেখে বেশ অবাক হয়। একেবারে তৃণার মতো দেখতে।
__ আচ্ছা এটা কিভাবে সম্ভব মিসেস আবির। তুমি তো পুরাই তৃণার মতো দেখতে।
__ এটাই তো আমার জীবনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে মিঃ।
__ কিন্তু কিভাবে সম্ভব সেটা বলতো?
__ এটা আপনি ভালো করে জানবেন, আমার তো জানার কথা নয়।
__ আমি কি জানবো? ( তৃণার বাবা)
__ তা আমি জানিনা। যাই হোক আমাকে এখানে তুলে এনে কি আপনি ভালো কাজ করেছেন?
__ আমি আমার মেয়ের চোখের জল দেখতে পারিনা।
__ ওহহহ তাইনা, আবির আমায় ভালোবাসে, আর সে তৃণাকে খুব শীঘ্রই ধরে ফেলবে।
__ চিনতেই পারবে না, হা হা হা ( তৃণার বাবা)
__ তা কয়দিন পরেই বুঝতে পারবেন।
__ যাও উপরে তৃণার ঘরে গিয়ে থাকো। ( সাইরা সাইরা বলে সাইরা কে ডাকে)
__ জ্বী আংকেল ( সাইরা)
__ আজ থেকে নিরা কে তৃণা মনে করে তাকে নিয়ে থাকবে? আর বডিগার্ড তো আছেই পালাতে পারবেনা। ( তৃণার বাবা)
__ জ্বী, এসো বলেই নিরাকে ধরে নিয়ে যায়।
__ সাইরা ছাড়ো , খুব শীঘ্রই তোমাদের জেলে পাঠিয়ে ছাড়বো দেখে নিও। ( নিরা)
নিরা এতো দিন না বুঝলেও এখন বুঝতে পারছে সে আবির কে ভালোবেসে ফেলেছে। খুব কস্ট হচ্ছে নিরার কিন্তু এখান থেকে কিভাবে পালাবে তার প্লান করতে থাকে।
চলবে…..