প্রতিশোধ,পার্ট_4,5
জামিয়া_পারভীন
পার্ট_4
__ আবির মেয়েটি কে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজেও তার পাসেই বসে ড্রাইভার কে গাড়ি চালাতে বলে। ইশারায় ড্রাইভার কে এক যায়গায় যেতে বলে, হয়তো আবির আগেই লোকেশন বলে রেখেছে।
__ তা কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে মিঃ স্যার।
__ গেলেই দেখতে পাবে মিস নিরা।
__ নাম কিভাবে জানলেন? কিছুক্ষণ আগেও তো নাম জিজ্ঞেস করছিলেন?
__ কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারবে সেটা।
__ হুহ, আপনি সব পারেন, তুলে নিয়ে আসতে যখন পেরেছেন, অন্য কাজ ও কোন ব্যাপার না।
__ একদম চুপ, বেশি কথা বলা পছন্দ করিনা আমি। ( জোরে করে বলে) নিজের অসম্মানের কথা ড্রাইভার এর সামনে বলা লাগবে নাকি। ( নিরার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে)
______ নিরাও আর কিছু বলেনা, অন্যায় করে এখন ভালো মানুষ সাজা হচ্ছে। আর কতো ন্যাকামি দেখতে হবে আল্লাহ ই জানে। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। প্রকৃতি দেখতে তার ছোট বেলা থেকেই খুব ভালো লাগে। আজ সব অসহ্য লাগছে তাও নিজেকে মনে মনে দোষারোপ করছে, কিসের পাপের শাস্তি সে পাচ্ছে।
____ গাড়ি এসে থামে একটা পার্লারের সামনে। আবির নিজে নেমে নিরা কে বের হতে বলে। নিরা নামতেই মিশি বলে, এইতো চলে এসেছো, তাড়াতাড়ি আসো, একটু না সাজলে হয় বলো। এক ঘন্টায় খুব সিম্পল সাজে সাজিয়ে বাইরে আনে মিশি। শপিং সেইই করেছে, একমাত্র ফ্রেন্ড এর বিয়ে বলে কথা।
__ নিরাকে এতো ই সুন্দর লাগছে যে আবির হা করে তাকিয়ে আছে নিরার দিকে। লাল শাড়ির সাথে খোলা চুলে লাল গোলাপ, চোখের কাজল, ঠোঁট এ লাল লিপিস্টক। অল্প সাজেই যেন নিরাকে লাল পরীর মতো লাগছে।
মিশিঃ এই যে মিঃ আবির, দেখার সময় আরোও আছে এখন তো চোখ সরান।
__ আবির লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। কিন্তু আড় চোখে বার বার নিরার চোখের দিকে তাকাচ্ছে, যেন বার বার প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করে।
__ আবির কে নিজের গাড়িতে যেতে বলেআর বলে নিরা আমার গাড়িতে যাবে। দিয়ে নিরাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে মিশি। গাড়ি চলতে শুরু করে কোর্টের উদ্দেশ্য। সেখানেই বিয়েটা হবে( আবির + নিরা)
মিশি ___ আবির আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড, সেই ক্লাস নাইন থেকে একসাথে পড়েছি। কখনো কোন মেয়ের দিকে খারাপ চোখে দেখেনি। মেয়ে বন্ধু বলতে আমিই ছিলাম তার জীবনে । কখনো ভুলেও আমার সাথে পড়াশোনা এর বাইরে কথা বলতো না। একটু বড় হবার পরও সে পারসোনাল টুকিটাকি কথা বল্লেও কোন মেয়ের সাথে তার রিলেশন ছিলো না। কাল রাত্রে চেম্বার থেকে ফেরার পথে তোমায় দেখে যায়। আবিরের মুখ থেকে ঘটনা শুনি, খুব বকি তাকে। এতো টা রাগ করা তার উচিৎ হয়নি, তাই ভুল করে ফেলেছে। ক্ষমা করে দিও নিরা, জীবনে সুখী হবার চেষ্টা করিও। আবির খুবইই ভালো ছেলে, তোমার সব চেয়ে কাছের মানুষ হবে , মিলিয়ে নিও।
নিরা____ জ্বী ম্যাম, মনে থাকবে ( মনে মনে বলে কখনো ক্ষমা করবোনা আপনাকে স্যার, আজীবন অভিশাপ দিয়ে যাবো, যতই আপনি ভালো মানুষ সাজার চেষ্টা করেন, শাস্তি আপনাকে আমিই দিবো )
মিশি ___ গুড গার্ল, কিন্তু ম্যাম নয় আপু বলবে।
নিরা ___ জ্বী আপু।
___ গাড়িটা কোর্ট এ চলে আসে। নিরা নেমে দেখে আবির একটা ছেলের সাথে কথা বলছে।
মিশি ___ আরে তন্ময় কখন এলে।
তন্ময় ___ এইতো আসলাম, এইমাত্র! তোমার ভাই বলো, বন্ধুই বলো তার বিয়েতে না এসে পারি।
মিশি ___ তলে তলে প্রেম করেছে আবির, জানতাম ই না। তাইই তো লুকিয়ে বিয়েটা আজ সেরেই নিতে চায়।
তন্ময় ___ তা লাজুক ছেলের প্রেম কেমন চললো এতোদিন।
আবির ___ মিশি একটু বেশিই বলে ভাইয়া।
__ ” নিরা এদিকে এসো, পরিচয় করিয়ে দিই উনি তন্ময়, আমার হাজবেন্ড। ” মিশি বলে নিরা কে।
__ পরিচয় পর্ব শেষ এ সবাই একটা রুমে যায়। নিরা পুরাই সারপ্রাইজড হয় নিরার বাবা মা কে দেখে । অস্ফুট স্বরে মা বলে ডেকে উঠে নিরা।
__ নিরার মা বলে ” এখন কেমন আছিস রে, তোর এক্সিডেন্ট এর পর একদিন তোর জ্ঞান ছিলো না, আমরা অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি, সকালে জামাই এর আত্মীয় গিয়ে তোর খোঁজ দেয়, আর বলে তুই এখন সুস্থ, এরপর তোকে জামাইয়ের এতো পছন্দ হয়েছে, তাই বিয়ের প্রস্তাব দেয়, আমরা গরীব মানুষ, এতো ভালো প্রস্তাব হাত ছাড়া না করে রাজি হয়ে যায়, তুই তো ডাক্তার হবি, জামাই ও ডাক্তার, দুইজনে খুব সুখী হবি রে মা । ” ( একদম এ কথা গুলো বলে নিরার মা)
নিরা___ হুম, উনি খুব ভালো মানুষ, উনি না থাকলে তো আমি মরেই যেতাম।
(মনে মনে বলে মিঃ স্যার আপনি অনেক মিথ্যা বলাই ওস্তাদ, প্রতিশোধ আমি নিয়েই ছাড়বো। আপনার টাকা থাকতে পারে কিন্তু নিরা কে কেনা এতো সহজ না)
সেখানে কাজীর সামনে বিয়েটা করে নেয়। এরপর সবাই মিলে রেস্টুরেন্টে যায় , লাঞ্চ করে সবাই। নিরা সবার সামনে খেতে না পারায় তেমন খায়নি সেটা আবির খেয়াল করে। খাওয়া শেষ, এর পর মা বাবার কাছে বিদায় নেয়ার সময় কেঁদে ফেলে নিরা। মা বাবা কে বলে ভালো থেকো মা, বাবা। নিরা গাড়িতে উঠে বসে আবির ও সবাইকে সালাম দিয়ে বিদাই জানায়।
__ তৃণা শান্তিতে নাই, খুব হতাশ, তার উপর আজ আবির স্যার আসেনি, ক্লাস ও নেয়নি। মানুষ টা কি উধাও হয়ে গেলো নাকি।
__ ” কিরে কিছুই বুঝলাম না, আবির স্যারের কেশ তো তুলে নিছিস। তাও কেনো সার আজ এলোনা? ” সাইরা বলে।
__ আমি কি জানি, আমি কি সবজান্তা যে বলে দিবো স্যার কোথায় গেছে। ( তৃণা)
__ আবির স্যার তো তোকে পুরাই পাগলি বানিয়ে ফেলবে। ( সাইরা)
__ বেশি বকিস না, এমনিতেই বাবা আমাকে রাজশাহী আসতে দিচ্ছিলো না। যদি জানতে পারে আমি এসব করেছি তাহলে নির্ঘাত নিয়ে যাবে। আমি তো আবির স্যার ছাড়া থাকতেই পারবোনা।
( তৃণা)
__ স্বপ্ন দেখিস না, তুই কি জানিস স্যার ম্যারিড কিনা। ( সাইরা)
__ বাজে বকিস না, উনি আমার প্রথম প্রেম। যে কোন মূল্য তে উনাকে আমার চাই ই চাই। ( তৃণা)
__” ( মন খারাপ করে) হুম, দেখ “সাইরা বলে।
তৃণার বাবা রাজশাহী শহর টাকে এক প্রকার ঘৃণা ই করে। কখনো চায়নি তার একমাত্র মেয়ে এই শহরে আসুক। অথচ তৃণার সেই ছোট বেলার শখ সে ডাক্তার হবে। আর চান্স ও পেলো নাকি রাজশাহী তে। তাও চায়নি তৃণা আসুক এই অভিশপ্ত শহরে। তৃণার ইচ্ছে আর জেদের কাছে হেরে গিয়েই আজ তৃণা রাজশাহী তে। আর এসেই ঘটিয়ে ফেলেছে গন্ডগোল।
__ আবির আর নিরা বাসায় আসে, সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আবির কফি বানিয়ে আনে দুই মগ, নিরা কে এগিয়ে দেয় একটা।
__ ” থাক থাক, আর নাটক করতে হবেনা, এখন আর কেউ নাই। ” নিরা
__ ” হয়তো ভালোবেসে বিয়েটা করিনি, কিন্তু শুধু তুমিই জানো কি হয়েছে আর গোটা দুনিয়া জানবে অন্য কিছু। রক্ষা করতে পেরেছি আমি তোমার সম্মান। খুশি হওয়া অনেক পরের ব্যাপার, মেনে নাও। ভুল তো মানুষের ই হয়, ক্ষমা কি করা যায় না?
__ ” কক্ষনো না, আই হেট ইউ মিঃ আবির স্যার। আপনি সব ছাত্রীর ক্রাশ হতে পারেন কিন্তু আমার কাছে ঘৃণার পাত্র আপনি কথা টা মনে রাখবেন। ” নিরা ঘৃণার নিয়ে বলে কথা গুলো।
আবির কথা গুলি শুনে খুব কষ্ট পেয়ে বেলকনিতে গিয়ে চেয়ারে বসে। মন টা খুব খারাপ করছে, মনে পড়ে নিরা কিছুই খায়নি তেমন। আবার কিচেন এ গিয়ে নিরার জন্য স্যুপ বানায়। এরপর ট্রে তে করে কিছু ফলমূল আর স্যুপ আনে। ঘরে এসে দেখে নিরা উল্টো দিকে ঘুরে শুয়ে আছে। মাথার ফুল গুলি ঘরে ছুড়ে ফেলেছে। বিছানায় চুল গুলো এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে আর ঘাড়ের নিচে একটু খানি জায়গাতে শাড়ি টা সরে গিয়েছে। খুব আকর্ষণীয় লাগছে এই অবস্থায়। আবির নিরার পাশের টেবিলে খাবার রেখে নিরার পাশে বসে নিরার পিঠে হাত দেয়। নিরাও রাগান্বিত হয়ে ঘুরে ই আবির কে চড় মেরে বসে।
__ ” লজ্জ্বা করেনা, আবার এসেছেন ” নিরা
__ ” বাইরে তেমন খাওনি তাই খাবার নিয়ে এসেছিলাম, তার পুরষ্কার পেলাম। ” ( আবিরের চোখে পানি )
( ছেলে মানুষ খুব শক্ত হয়। কখনো ই কাঁদে না তাও আবিরের চোখে জল আসছে, নিজের কৃতকর্মের জন্য।)
__ ” খাবোনা আপনার কুকর্মের টাকার খাবার “। নিরা
চলবে……
জামিয়া_পারভীন
#প্রতিশোধ
#পার্ট_5
__ এমন করে বলতে হয়না, লক্ষী মেয়ের মতো খেয়ে নাও বলে আবির খাইয়ে দেয় নিরাকে। ( নিরা মনে মনে ক্ষেপা হলেও বেশি জেদ দেখাতে পারেনা, তাই চুপচাপ খেয়ে নেয়) খাওয়ার পর উল্টো দিক ঘুরে শুয়ে পড়ে, এমনিতেই অসুস্থ, এরউপর সারা দিন বাইরে থাকায় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। আবির সব রেখে এসে নিরার গায়ে কম্বল ঠিক করে দিয়ে নিজেও শুয়ে পড়ে।
__ আবিরের বাসা টা তার বাবার ছিলো, এখন তার নামে। দোতলা বাসায় পুরোটা ই যেন আধুনিকতার ছোঁয়া। দামী দামী ফার্নিচার, আর ঘর সাজানোর সোপিচ আর কৃত্তিম ফুল চারিদিকে। বাসাতে একটা অনুষ্ঠান এর পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে সাজানো হয়েছিলো বাসাটা। first January ছিলো আবিরের বাসায় অনুষ্ঠান। তার আগেই সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায়।
__ নিরা ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখে তার চারিদিকে অনেক গুলি শাড়ি, থ্রিপিচ, গাউন, টপস, মেকআপ বক্স, ম্যাচিং অলংকার সব কিছুই রাখা। নিরার চোখ দুটি আবির কে খুঁজছে কিন্তু আবির কে না দেখে সব কিছু সরিয়ে নিচে নামতেই মাথার উপর ফুলের পাপড়ি পড়া শুরু করে। নিরা বেশ উপভোগ করে এই ব্যাপার টা। এরপর আবির এসে হাততালি দিয়ে বলে শুভ জন্মদিন ম্যাডাম। ( নিরা ভুলেই গেছিলো আজ তার জন্মদিন, কিন্তু আবির কে দেখেই চাপা ক্ষোভ তৈরি হয়)।
__” আমার জন্মদিন আপনি জানলেন কিভাবে? ” ( নিরা)
__ সারপ্রাইজ ( আবির)
__ হ্যাঁ! তাইতো , এসব না করে গলা টিপে মেরে ফেললেও তো পারতেন মিঃ আবির স্যার। ( নিরা)
__ এসব কি বলছো, আর এভাবে কখনো বলবেনা। (আবির)
__ আপনাকে আমি ঘৃণা করি, এসব করলেই ভাববেন না ভালোবাসবো। ( নিরা)
__ বাদ দাও, নাস্তা করো, আর এগুলোর মাঝে এক সেট পরে রেডি হয়ে থাকিও। দাওয়াত দিয়েছে তোমার ফ্যামিলি, যেতে হবে। ( আবির)
__ নাস্তাতে পাউরুটি, কলা, ফল আর চা দেখে নিরার খুব রাগ হয়। ইচ্ছে করেই ঘরের মাঝে কলার খোসা ফেলে দেয়। খায় আর মনে মনে বলে এগুলো কি মানুষ খায়। ( সে এসব খেয়ে অভ্যস্ত না তাই)
__ আবির বাইরে থেকে এসেই কলার খোসা না দেখেই পা দেয় আর স্লিপ খেয়ে নিরার উপর পড়ে যায়। নিরা আবিরকে সরিয়ে দিয়ে বলে ” লজ্জা করে না, আর এমন যেন না হয়। ” আবির উঠে দেখে কলার খোসা, একটু রাগী স্বরে বলে ” এটা এখানে কোথেকে আসলো “। নিরা কলার খোসা দেখে মিটিমিটি হেসে বলল ” সরি, আসলে, মাফ করবেন “।
নিরার হাসিমুখ দেখে আবির বেশ খুশিই হয়। হাসলে যেন নিরাকে অপ্সরীর মতো লাগছে। এতোটা সুন্দর সে দেখতে যেন সারাজীবন এভাবেই চেয়ে থাকা যায়।
__ ” কি দেখেন এতো, বেশিক্ষণ কেউ চেয়ে থাকলে আমার লজ্জা লাগে। এখন যান, আমি রেডি হবো।” ( নিরা বলে)
আবির চলে যায়, নিরা শাওয়ার শেষ এ হালকা পিংক কালার একটা শাড়ি বেছে নেয়। শাড়ি টা পরে চোখে কাজল দেয় গাড় করে কিন্তু মেকআপ সে করেনা। পিংক কালার চুরি, গহনা পড়ে নেয়। চুল গুলো খোলা রেখে পাশের ফুলদানি থেকে পিংক গোলাপ নেয় ( তাঁজা গোলাপ, আবির ই আনিয়ে রেখে ছে হয়তো) মাথার একপাশে ফুল গুজে দেয়।
বাইরে বের হয় নিরা, নিচে আবির সোফায় বসে আছে। নিরাকে দেখে এক ভাবে তাকিয়ে আছে আবির, এতো সুন্দর একটা মানুষ হয় কিভাবে। নিরা আবিরের ধ্যান ভাঙিয়ে বলে ” এইযে আপনার জন্য সাজিনি, যে এইভাবে দেখবেন। ”
__ তো কার জন্য সেজেছো? (আবির)
__ ” সবাইকে বলেছেন আপনি ভালোবেসে বিয়ে করেছেন, নিজেকে সুখী না দেখালে তো আবার আপনার অপমান। তাই বাইরের মানুষের সামনে সুখী হয়েই থাকতে চাই। ” ( নিরা)
__ আজ হয়তো ভালোবাসোনা কিন্তু পরে একদিন বাসবে, বলে দিলাম (আবির)
__ বয়েই গেছে আমার, একজন রেপিস্ট কে ভালোবাসতে। (নিরা)
আবির আর কিছু না বলে নিরা কে নিয়ে প্রথমে মেডিকেল ভার্সিটি যায়। সেখানে কলিগ দের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় ওয়াইফ বলে। নিরাও বেশ অবাক হয় আবিরের ব্যবহার এ। এটাও বলে দেয় নিরা ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রী। কলিগ রা মজা করে বলে তাহলে প্রথম দিন ক্লাস টা যেন নিয়েই যায়। ছাত্রী হাজবেন্ড এর ক্লাস করবে, সবাই বেশ উতসাহী। তাই আবির ও গেলো নিরাকে নিয়ে ক্লাসে।
__ তৃণা আবির কে দেখে যতই না খুশি হয়, সাথে নিরা কে দেখে যেন আকাশ থেকে পড়ে। এই মেয়ে যে একেবারেই তার মতো দেখতে। কিন্তু কিভাবে সম্ভব আর এই আবির স্যারের সাথে কি করছে। তৃণার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যায় শুভ্র স্যারের কথাতে। শুভ্র স্যার ক্লাসে ঘোষণা দেন আবির স্যার নতুন বিয়ে করেছেন তোমাদের ক্লাসের ছাত্রী কে। এতে সবাই খুশি হলেও তৃণা আর সাইরা একে অপরের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। সবাই অবশ্য নিরা আর তৃণাকে একই রকম দেখে অবাক ও হয়। দুইটা মেয়ে একইরকম আবার তাদের বাবা মা ও আলাদা। এই প্রথম দুইজন কে সবাই একসাথে দেখছে। এর আগে বেশি ক্লাস ও হয়নি, আর দুইজন একসাথে কখনো ক্লাসে আসেনি।
__ নিরাও বেশ অবাক হয় তৃণাকে দেখে, কেউ বলতে পারবেনা সে আর তৃণার চেহেরাতে কোন তফাৎ নেই ।
__ সবাই ক্লাস থেকে বের হয়ে আসে নিরা কে নিয়ে আবির নিরার বাবার বাসায় যায়। এই প্রথম আবির গাড়ি ছাড়া হাটছে কারণ নিরার বাসাটা একটু গলিতে, সেখানে গাড়ি ঢুকে না। নিরার সাথে আবির ওদের বাসায় গিয়ে বেশ কথা বার্তা বলে নিরার পরিবারের সাথে, নিরাও বেশ হাসিখুশি ছিলো সবার সাথে।
কিন্তু নিরার মনে এক্টাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, কে এই তৃণা।
নিরা রান্নাঘর এ মা কে একা পেয়ে জিজ্ঞেস করেই বসে ” আচ্ছা মা, জমজ ছাড়া কি দুইটা মানুষ একই হয়? ” এমন প্রশ্নে যেন নিরার মা একটু ঘাবড়িয়ে যায়। সেটা না দেখেই নিরা আবারোও বলে ” আজ একটা মেয়েকে দেখলাম হুবহু আমার মতো দেখতে, আমার সাথেই পড়ে। কিভাবে সম্ভব মা! ”
__ নিরার মা এবার রাগান্বিত হয়ে বলে “আমি কি জানি? হতেও পারে! ”
__ নিরার মায়ের ব্যবহার ও নিরাকে অবাক করে দেয়। কিছুই না বলে চলে আসে সে। খাওয়া দাওয়া করে বিকেলে বের হয়ে যায় আবির আর নিরা।
চলবে……