আপনাকেই চাই
পর্ব_০১
Sumaiya_Moni
-“কাল রাতে কি আমাদের মাঝে কিছু হয়েছিল? মানে ইন্টিমেট!” ইহিতা দ্বিধান্বিত চোখে অহানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে।
অহান কফির মগে কেবল চুমুক দিতে যাবে তখনি ইহিতার কথা শুনে চমকে উঠে। তীক্ষ্ণ নজরে ইহিতার দিকে তাকায়।
সদ্য বিয়ে করা অহানের বউ ইহিতা।কাল ওদের পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়েছে।ইহিতা রিসতায় অহানের বড় ভাবি হয়।তবে এখন তার বউ।
অহান ভ্রু কিঞ্চিৎ বাঁকা করে তেজী কন্ঠে বলল,
-“কোনো সন্দেহ আছে নাকি?”
ইহিতা বলে,
-“সন্দেহ কি হ্যাঁ ভাবে নিবো,নাকি না ভাবে?”
অতন্ত বিরক্ত সহিত অহান কফির মগ টেবিলের উপর রেখে দাঁড়িয়ে বলল,
-“আপনি আমার ভাবি হন। ভাবি ছাড়া আমি আপনাকে কখনোই নিজের ওয়াইফ ভাবভো না। এটা মনে রাখবেন।”
কথাটা বলে রুম থেকে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায় অহান।
ইহিতা অহানের রাগী চোহারা দেখে মৃদ হাসে। ছোট্ট অহান এখনো ছোট্টটিই রয়ে গেছে। রাগ এখনো নাকের ডগাতেই জমানো। তিন বছর পরও শারীরিক কোনো পরিবর্তন হয়নি।
যেমনটা আগে দেখেছিল। ঠিক তেমনি আছে অহান।
ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে ইহিতা বিছানা গুছাতে থাকে।
এই সংসারে ইহিতা প্রথম পা রেখেছিল আরমানের হাত ধরে।
তাঁদের বিয়ের দুই বছরের মাথায় আরমানের কার এক্সিডেন্টে মৃত্যু হয়।আরমান মারা যাওয়ার পর ইহিতা মানসিক ভাবে পুরোপুরি ভাবে ভেঙে পড়ে।অহানের বাবা-মা যথেষ্ট ভালো মানুষ ছিলেন। ওরা দুই ভাই ছিল। আরমান,অহান।তাঁদের মেয়ে না থাকার দরুন তারা নিজের মেয়ে হিসাবে ইহিতাকে এবাড়িতেই রেখে দেয়। আরমান মারা গেছে এক বছর হলো।
এর মধ্যে শ্বশুর বাড়ি থাকতেই ইহিতার কয়েকটা বিয়ের সম্মন্ধ আসে। অহানের বাবা আজমল রহমান হামিদা বানুর সাথে আলাপ করে অহানের সাথে ইহিতার বিয়ের ব্যাপারে। হামিদা বানুও এমন কিছু একটা ভাবছিল। সেও এই বিয়েতে সহমত ছিলেন। ইহিতার বাবা-মাকে খবর দিয়ে অহান,ইহিতার বিয়ের কথা বললে তারাও দ্বিধাবোধ করে না। রাজি হয় এ বিয়েতে।
কিন্তু আপত্তির বিষয় হলো অহানকে নিয়ে। অহান ছোট থেকে বড় হয় চায়নাতে। সেখানেই পড়াশোনা করার ওর ড্রিম ছিল। ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পূর্ণ করেছে। সেখানের একটি কোম্পানিতে জব করছে অহান। ভালো সেলারি পাওয়ার কারণে অহান সেখানেই সেটেল্ড হতে চায়।
কিন্তু দুইদিন আগে ওঁর মা হামিদা বানু জরুরি তলব দিয়ে বাংলাদেশ আসতে বলে। অহান এত জরুরি তলবের মুল কারণ জানতে চাইলে হামিদা বানু বলে না। বাংলাদেশে আসলে বলা হবে বলে জানায় হামিদা বানু। অহান ছোট থেকে ওঁর মাকে প্রচন্ড ভয় পায়। এবং-কি এখনো তাঁর কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। কিন্তু আজমল রহমানের সাথে অহানের বন্ধুর মতো সম্পর্ক। বাবা হওয়ার পাশাপাশি সে অহানের বন্ধুও বটে।যেই বিষয়টা ওঁর মাকে বলতে পারে না,সেই বিষয়টা নিরদ্বিধায় আজমল রহমানের কাছে শেয়ার করে।
এখনো অহানের কোনো ব্যতিক্রম হলো না। মার জরুরি তলব পেয়েই অহান ছুটে আসে বাংলাদেশ। বাংলাদশে এসেই জানতে পারে তার বড় ভাইয়ের বউকে বিয়ে করতে হবে। যে কি না বিধবা নারী হিসাবে সবার কাছে পরিচিত।
অহান তার মায়ের মুখের উপর না করতে পারেনি। কিন্তু আকার ইঙ্গিতে অনেক বার হামিদা বানুকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে এই বিয়ে করতে পারবে না। কিন্তু হামিদা বানু তাঁর এক কথায় থেকে যায়। বিয়ে করতেই হবে ইহিতাকে।
তারপর আর কি! ঘরোয়া ভাবেই বিয়ে সম্পূর্ণ হয় কাল রাতে।
রাতে অহান নিজের বিয়ে নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিল। আর এদিকে ইহিতা রুমে এসেই টুপ করে ঘুমিয়ে পড়েছে। অহানকে যেন দেখেও না দেখার ভান ধরে এমনটা করছে। অহান এটা দেখে নিজেকে শান্ত করে। হুটহাট করে বিয়ে হওয়ার কারণে হাজারটা চিন্তা ভাবনা করতে করতে চোখ লেগে আসে। জার্নি করে আসার পর রেস্ট নেওয়ার সময় টুকু পায়নি বিয়ের কারণে। তাই চোখ বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে সারা রাজ্যের ঘুম এসে জড়ো হয় অহানের চোখের পাতায়।ঘুমিয়ে যায় অহান। সকালে ইহিতার ঘুম ভাঙার আগেই অহানের ঘুম ভেঙে যায়। সারা রাত চেয়ারে এক কাঁতে ঘুমাবার ফলে ঘাড়ে কিছুটা ব্যথা অনুভব করে। ইহিতা তখনো ঘুমে কাঁদা। বিরক্তিকর ভাব নিয়ে ইহিতার দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে কিচেনে চলে আসে। আজমল রহমান ও হামিদা বানুও তখন ঘুম থেকে উঠেনি। ইহিতার বাবা-মা কাল রাতেই চলে যায়। অহান টুকটাক রান্না-বান্নার কাজ পারে। সেই সুবাদে এক মগ ব্লাক কফি বানিয়ে নিয়ে রুমে ফিরে আসে। রুমে এসে বিছানার দিকে তাকাতেই ইহিতাকে দেখতে পায় বসা। বিছানার উপর বসে মাথা নত করে বিড়বিড় করে কিছু একটা বলছে। অহানের তখন ইচ্ছা জাগে তাকে জিজ্ঞেস করতে। কিন্তু কাল রাতে একাই স্বার্থপরের মতো বিছানায় ঘুমিয়েছে বিধায়,কিছু না বলে সেই চেয়ারে এসে বসে। কফির মগে চুমুক দিতেই যাবে ঝড়ের বেগে ইহিতা অহানের কাছে এসে অদ্ভুত ধরনের প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়। এমন উদ্ভট প্রশ্ন শুনে কফি খাওয়া আর হলো না অহানের। চলে যায় রুম থেকে।
কিছুক্ষণ নিজেদের বাগানে ঘোরাঘুরি করে ওঁর বাবার রুমে বসে। আজমল রহমান তখন রুমে একাই ছিল।
-“আব্বু এটা করল আম্মু? সকালে আসলাম আর রাতেই আমার বিয়ে দিয়ে দিল আমার। তাও আবার ভাবির সঙ্গে।”অহান কিছুটা উত্তেজিত কন্ঠে বলে।
-“আহা! আস্তে কথা বলো। তোমার আম্মু শুনতে পাবে।” আজমল রহমান অহানকে হাতের ইশারা করে বলল।
-“কি আস্তে বলব,আম্মু কেন এমনটা করল। চায়না থেকে আসার আগে কেন বলেনি আমাকে বিয়ের কথা।”
-“আগে বললে তো তুমি আসতে না। তাই তোমাকে জানানো হয়নি।”
-“আব্বু,তুমি বুঝতে পারছো। আমার বিয়ে হয়ে গেছে। তাই ভাবির সাথে।” আফসোস-আক্ষেপ নিয়ে বলে অহান।
-“তাতে কি হয়েছে?বিয়ে তো একদিন তুমি করতেই। তাছাড়া তোমার বিয়ের বয়সও হয়েছে।আর ইহিতা অনেক ভালো মেয়ে। ঠিক সব কিছু মানিয়ে নেবে।”
-“আব্বু ভাবি আমার বড়ো।”
-“হ্যাঁ! জানি। এক বছরের বড়ো। এটা কোনো ব্যাপার না। আজকাল এগুলো কমন ব্যাপার। ”
-“আমি এ বিয়ে মেনে নিতে পারবো না। কিছুতেই না!” কঁড়া গলায় বলল অহান।
-“কে কি মানবে না শুনি।” গম্ভীর কণ্ঠে কথাটা বলতে বলতে রুমে প্রবেশ করে হামিদা বানু। তীক্ষ্ণ নজর অহানের উপর পড়তেই চট করে দাঁড়িয়ে যায়। ওঁর আম্মুর এমন চাহনি দেখে অহান রীতিমতো ভয় পাচ্ছে। আজমল রহমান তাঁর স্ত্রীর কাছে এসে বললেন,
-“মানে অহান বলছে নতুন বিয়ে করেছে। কিভাবে কি মানিয়ে নিবে এই আরকি।”
হামিদা বানু আজমল রহমানের কথা শুনে অহানের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“তোমার আব্বু যা বলতে তা কি সত্যি? ”
অহান মাথা নত করে উপরে,নিচু দুলায়। যার উত্তর হ্যাঁ!
-“সেটা নিয়ে তোমাকে এত ভাবতে হবে না। ড্রইংরুমে এসো। নাস্তা রেডি।” বলেই রুম ত্যাগ করলেন হামিদা বানু।
অসহায় চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে অহান। আজমল রহমান তাঁর ছেলের বিষয়টা বুঝতে পারছে। অহানের কাছে এসে কাঁধে হাত রাখতেই হাত সরিয়ে অহান রুম থেকে বের হয়ে যায়। অহান ড্রইংরুমে এসে চুপচাপ নাস্তা খেতে থাকে। ইহিতা এটাওটা এগিয়ে দিচ্ছিলো। অহানের একটা বিষয় খুব অবাক লাগে।অহান এক বছর পর বাংলাদেশে এসেছে। হামিদা বানু তাঁর নিজের ছেলেকে যত্নআত্তি না করে ইহিতাকে করছে। দেখে মনে হচ্ছে ইহিতা এ বাড়িতে আজ প্রথম এসেছে। ডিম ভাজা,পরোটা অহানের সামনে দিয়ে ইহিতার প্লেটে উঠিয়ে দিচ্ছে। এসব দেখে অহান ইহিতার দিকে ক্ষোভ নিয়ে আড়চোখে তাকায়। কোনো রকম খাবার খেয়ে না,গিলে উঠে রুমে চলে আসে।
রাগে একা বিড়বিড় করে বলতে থাকে,
-“এটাই দেখার ছিল।নিজের ছেলের চেয়ে ছেলের বউয়ের প্রতি এত মোহাব্বত!এটা কোনো কথা!” বলেই চেয়ার পা উঠিয়ে কপালে হাত দিয়ে রাখে।
ইহিতা চা হাতে রুমে প্রবেশ করে। অহানকে টেবিলের পা উঠিয়ে বসে থাকতে দেখে সামনে এসে বলে,
-“অহান,পা নামাও।”
অহান কপাল থেকে হাত সরিয়ে কপাল কুঁচকে তাকায় ইহিতার দিকে।
ইহিতা ঝাড়ি দিয়ে বলে,
-“আমার দিকে তাকাতে নয়,চেয়ারের উপর থেকে পা সরাতে বলেছি। ”
ঝাড়ি শুনে অহান চট করে পা নামিয়ে ফেলে। ইহিতা টেবিলের উপর চায়ের কাপ রেখে বলে,
-“ঠান্ডা হওয়ার আগে চা টা খেয়ে নেও।”
-“আমি চা খাই না।” বিরক্তি মুডে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে অহান।
-“এনেছি যখন খেতেই হবে। খাও!” বলতে বলতে ইহিতা বিছানায় এসে বসে।
অহান চড়ম বিরক্তি নিয়ে চায়ের কাপের দিকে তাকায়। ইহিতা ওর ফোন হাতে নিয়ে অহানকে প্রশ্ন করে,
-“তোমার কোনো গার্লফ্রেন্ড আছে?”
-“নাহ!” মৃদ স্বরে উত্তর দেয়।
-“বয়ফ্রেন্ড?”
অহান চট করে ইহিতার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। ভ্রু কুঁচকে বলে,
-“বয়ফ্রেন্ড!”
-“হ্যাঁ,বয়ফ্রেন্ড। আছে?”
-“আশ্চর্য! আমার বয়ফ্রেন্ড থাকবে কেন?” অবাক হয়ে চোয়াল জোড়া শক্ত করে বলে অহান।
-“আমি শুনেছি বাহিরের দেশ গুলোতে ছেলেরাই নাকি ছেলেদের সাথে ডেটে যায়। তারা গার্লফ্রেন্ড,বয়ফ্রেন্ডের কর্তব্য পালন করে।”
-“ভুল শুনেছেন।”
-“তাহলে,তুমি বলতে চাইছো তোমার গার্লফ্রেন্ড,বয়ফ্রেন্ড কোনোটাই নেই।”
-“না নেই।”
-“বউ?” থুতনিতে হাত রেখে বলে ইহিতা।
-“যেখানে আমার গার্লফ্রেন্ডই নেই। সেখানে বউ আসবে কোথা থেকে?কী আজগুবি প্রশ্ন।” রেগে চট করে দাঁড়িয়ে বলে অহান।
-“সত্যি নেই?”এক ভ্রু উঁচু করে বলে।
-“নাহ!” জোরে বলে অহান।
-“তাহলে আমি কে?”এবার ইহিতা দাঁড়িয়ে গিয়ে রেগে কোমড়ে হাত রেখে বলে।
অহান এতক্ষণে বুঝতে পারলো ইহিতার কথা পেচানোর মুল কারণ। অহানের মুখ থেকে শিকার করাতে চেয়েছিল ইহিতা ওঁর বউ। তার জন্য এত ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা গুলো বলেছে অহানকে।
-“কি হলো বলো?”কিছুটা ধকমকের স্বরে বলে ইহিতা।
-“ভাবি! এসব কি শুরু করেছেন? কাল রাতে আপনাকে বিয়ে করার কথা বললো আম্মু। শুনে মাথায় বাঁশ পড়লেও নিজেকে সামলে বিয়েটা করে নিলাম। জানি আপনি এখন আমার বউ। কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব! যাকে ভাবি বলে ডেকেছি। সে এখন আমার রিসতায় বউ হয়ে গেল।এটা কি মানা যায়!” কিছুটা অসহায় কন্ঠে কথা গুলো বলল অহান।
-“আগে তোমার ভাবি ছিলাম, এখন তোমার বউ। এতে সমস্যা তো দেখছি না আমি।”
-“বুঝার চেষ্টা করেন।আমি কিভাবে আপনাকে মেনে নিবো। আপনি আমার বড়।”
-“অনলি এক বছরের। তাতে সমস্যা নেই। আমি যদি মেনে নিতে পারি,তোমারও মেনে নিতে হবে।” আঙ্গুল তুলে বলে অহান।
এতক্ষণ অহান কাকে কি বলল। সে-তো মানতেই চাইছে না কিছু। সব কিছু মেনে নিয়েছে। আগে পরে কিছু বলে, লাভ হবে বলে মনে হচ্ছে না অহানের। এক হাত কোমরে রেখে আরেক হাতের আঙ্গুল কপালে বুলাতে থাকে। রাগ,বিরক্ত,লজ্জা তিনোটাই অহানের মধ্যে বিদ্যমান। ইহিতা হাত বগলদাবা করে অহানের দিকে তাকিয়ে ওঁর ভাবমূর্তি বোঝার চেষ্টা করছে। অহান আর কিছু না বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায়। বাসার বাহিরে চলে আসে। একা একা কোলাহল বিহীন গলির পথ দিয়ে হাঁটছে। বিয়ের ব্যাপারে ভাবছে। সামনে কি হবে। কী নাম দিবে এই সম্পর্কের,অহান জানে না।
একটি নিরিবিলি লেকের পাড়ে এসে বসে। সারা দুপুর সেখানে বসেই কাঁটিয়ে দেয়। বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না।
বাসার কথা মনে পড়লেই নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়।
দুপুর পার হয়ে যায়।ইতিমধ্যে ইহিতা ও হামিদা বানু কয়েকবার অহানকে কল দিয়েছে। অহান ফোন পীক করে না। সাইলেন্ট করে রেখে দেয়। রাতে ঠিক মতো ঘুম না হওয়ার কারণে বেঞ্চেই ঘুমিয়ে যায় অহান। সুমিষ্ট স্বরে আজানের ধ্বনি কানে আসছে অহানের। তড়িঘড়ি করে উঠে বসে। চোখ কচলিয়ে চারদিক তাকিয়ে থেকে অন্ধকার।
বুঝতে পারছে না। এখন সন্ধ্যা নাকি রাত! পকেট থেকে ফোন বের করে পাওয়ার বাটুনে চাপ দিতেই স্ক্রীনে ঘড়ির টাইম ভেসে উঠে সঙ্গে একশ’রও বেশি মিসড কল। তাও আবার ওর আম্মুর! অহান ফোন পকেটে পুরে সর্বশক্তি দিয়ে দৌড় দেয় বাসার দিকে। আজ তো অহান শেষ ওর আম্মুর হাতে!
-“নয়টা বাজতে চলল এখনো অহান বাসায় আসেনি। ফোনটা ধরছে না। আসুক আজ বাসায়। কত তেল হয়েছে শরীরে দেখবো।”রেগে নাকের পাটা ফুরিয়ে বলে হামিদা বানু।
আজলম রহমান তাকে শান্ত করতে যেয়েও দমে যাচ্ছে। কারণ সে আজ প্রচুর রেগে গেছে অহানের উপর। তখনি কৈ মাছের মতো ছটফট করতে করতে অহান দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। দৌড়ে হাপিয়ে গেছে। জোরে জোরে নিশ্বার নিচ্ছে। হামিদা বানু অহানকে দেখা মাত্রই হাতে খুন্তি নিয়ে তেড়ে যায়।
অহান ভয়তে আজমল রহমানের পিছনে লুকায়।
দাঁতমুখ খিঁচে হামিদা বানু বলে,
-“তুমি সরে যাও সামনে থেকে। আজ ওর খবর নিয়ে ছাড়ব।”
অহান ভীতু কন্ঠে বলে,
-“আম্মু মাফ করে দেও। এমন আর হবে না।”
-“গোলামের ঘারে গোলাম আমার ফোন ধরিসনি কেন? কত বার তোকে কল দিয়েছি দেখিসনি।” অহানকে ধরার পায়তারা করে বলেন।
-“ফোন সাইলেন্ট করা ছিল আম্মু। প্লিজ মাফ করো।” আজমল রহমানের পিছনে দাঁড়িয়ে এদিক,সেদিক দৌড়িয়ে বলে। আজমল রহমান মা-ছেলের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। বেশ আশংকার মধ্যে আছেন তিনি। না জানি খুন্তির বারি না তার গায়ে পড়ে যায়।
-“কোনো মাফ হবে না। মাইর হবে শুধু।”
-“আম্মু এবারের মতো ছেড়ে দেন পিচ্চি মনে করে।” ইহিতা বলে।
হামিদা বানু খুন্তি ফ্লোরে ফেলে দিয়ে বলে,
-“বউমা বলেছে তাই ছেড়ে দিলাম। নয়তো! পুরো শরীরে খুন্তির দাগ বসিয়ে দিতাম।”
অহান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ইহিতার উদ্দেশ্যে বলে,
-“থ্যাংক ইউ ভাবি! বেঁচে গেলাম।”
হামিদা বানু ফ্লোর থেকে খুন্তি হাতে উঠিয়ে চিল্লিয়ে বলে,
-“কি বললি তুই!”
হামিদা বানুর চিল্লানি শুনেই অহান উল্টো দিয়ে ফিরে ভয়তে রুমে দৌড় দেয়। আসলে ইহিতাকে ভাবি বলেছে ডেকেছে,তাই হামিদা বানু ফের রেগে গেছে। ইহিতা মুখে হাত রেখে হাসে অহানের এমন দৌড় দেখে। বলতে হবে ছেলেটি ভীষণ ভয় পায় তাঁর আম্মুকে।
রাত দশটা…
অহান ভয় ভয় দরজার পর্দা সরিয়ে উঁকি মেরে দেখে ড্রইংরুমে কি করছে সবাই। আসলে দুপুরে কিছু না খাওয়ার ফলে প্রচুর খিদে পেয়েছে অহানের যার কারণে উঁকি মেরে দেখছে খাবার টেবিলে বেড়েছে কি না। আজমল রহমান ও হামিদা বানু চেয়ার টেনে টেবিলে বসে। তখনি হামিদা বানু ইহিতাকে বলে অহানকে ডেকে আনতে। অহান এটা শুনেই পর্দার আড়াল থেকে চট করে বেড়িয়ে ফট করে একটি চেয়ার টেনে বসে পড়ে। ওঁর এমন কাণ্ডে সবাই বিস্মিত চোখে তাকায়।
অহান সবার দিকে না তাকিয়েই বুঝতে পারে ওঁর এমন আগমনে সবাই অবাক হয়েছে। তাই সব কিছু স্বাভাবিক করার জন্য উঠে শান্ত ভাবে দাঁড়িয়ে রুমে চলে যায়। ত্রিশ সেকেন্ড পর ধীরে পায়ে রুম থেকে ড্রইংরুমে এসে চেয়ার টেনে বসে।
সবাই এবারও একি নজরেই অহানের দিকে তাকিয়ে রয়।
অহান বুঝতে পারছে না কি করলে তারা ওঁর উপর থেকে নজর সরাবে।আসলে তারা বোঝার চেষ্টা করছে অহান কি করতে চাইছে। ইহিতা অহানের এমন কাণ্ডে এক ঠোঁট কাঁমড়ে ধরে হাসি আটকিয়ে তাঁদের স্বাভাবিক করতে খাবার ভেড়ে দিয়ে কথা বলতে থাকে। অহান কিছুটা হাফ ছেড়ে বাঁচে।
খাবার খাওয়ার এক পর্যায় অহান মৃদ স্বরে হামিদা বানুকে বলে,
-“আম্মু আমাকে কাল চায়না যেতে হবে।এখানে আসার কারণে তাড়াহুড়োই ছুটি আনতে পারিনি। পরশুদিন অফিসে না গেলে সমস্যা হতে পারে।”
হামিদা বানু কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,
-“যাও!”
অহান মনে মনে খুশি হয়ে যায়। ওঁর খুশির ঝলক চেহারায় ফুটে উঠে। কিন্তু বেশিক্ষণ খুশির ঝলক চেহারায় টিকে রইল না। খুশি বানুর কথা শুনে খাবার খাওয়া বন্ধ হয়ে যায় অহানের। সে বলল,
-“ইহিতাকেও সাথে করে নিয়ে যাবে চায়না।এটা আমার আদেশ।” বলেই তিনি উঠে চলে যায়।
অহান হা করে ওঁর আম্মুর যাওয়ার দিকে তাকায়। পরক্ষণে ইহিতার দিকে তাকাতেই ইহিতা মুচকি হেসে এক চোখ টিপ দেয়। সঙ্গে সঙ্গে অহানের হা করা মুখ বন্ধ করে নেয়। আজমল রহমান এটা দেখে মুচকি মুচকি হাসতে থাকে।
আমাদের অহান পুরো আহাম্মক হয়ে গেছে। ভাবলো কি,আর হলো কি। জীবনটা ফুটবল হয়ে গেল। যখন যে পারছে পা দিয়ে ছটিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।
চায়না গিয়ে কী ভাবি,দেবরের সম্পর্ক ঠিক হবে? নাকি এমনি রয়ে যাবে?
.
.চলবে