নতুন_শহরে,5

নতুন_শহরে,5
কুরআতুল_আয়েন

সেদিনের পর ইসু আর ইস্পাতের সামনে যায় নি।এমনকি ইস্পাতের কাছেও প্রাইভেট পড়তে যায়নি।ইসুর ছোট মনটায় ইস্পাতের কথাগুলো তীরের মতো গিয়ে লেগেছে।তাই ইসু সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে আর ইস্পাতের কাছে পড়বে না।ইসু ঘুম জড়ানো চোখ নিয়ে বসে রইলো বিছানার এককোণায়।প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে এসেছে ইসু ভার্সিটিতে যায় না।এই এক সপ্তাহ ধরে নিজেকে ঘরে বন্দী করে রেখেছিলো।আজকে ভার্সিটিতে যাবে বলে আগেই ঘুম থেকে উঠে পড়েছে।ঢুলুমুলু পা’য়ে বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেলো।ফ্রেশ হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কতক্ষণ সময় নিয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো।ইসু নিজেকে দেখছে আর ভাবছে,
‘ঠিকই তো বলেছেন ইস্পাত স্যার!আমার আর শিমু ম্যাডামের মধ্যে তো আসলেই আকাশপাতাল তফাৎ।কত সুন্দর শিমু ম্যাডামের চেহারা আর আমার ফ্যাকাশে কুষ্ঠ রোগীর মতো একখানা মুখ।’

ইসু ভিতর থেকে জোরে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে ছুটলো রুমুর রুমের দিকে।রুমু তখন ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো।ইসুকে দেখে অনেকটা খুশি হয়।আনন্দিত গলায় বললো,

‘ইসু তুই আজকে ভার্সিটি যাবি।’

ইসু মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো।কিছুক্ষণ চুপ থেকে মিনমিনে গলায় বললো,

‘রুমু আমার মুখে একটু পাউডার দিয়ে দিবি।দেখ তো মুখটা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে আছে।একটু পাউডার দিলে হয়তো ভালো লাগবে।’

রুমু হেসে জবাবে বললো,

‘ইসু!তোকে এইভাবেই অনেক সুন্দর লাগে।তোর হলদেটে গা’য়ের রঙ টা খুবই মারাত্মক।তার উপর তোর ঘন কালো লম্বা কেশ।সবকিছু মিলিয়ে তোকে অপূর্ব আবেদনীয় লাগে।’

ইসু নাছোড়বান্দা হয়েই বললো,

‘দে না রুমু।একটু মুখে পাউডার মাখিয়ে।আমি তো এইসব ভালো করে দিতে পারি না।’

‘ঠিকাছে বস।আমি দিয়ে দিচ্ছি তোকে।’

ইসু একটুকরো মুচকি হেসে বসে পড়লো রুমুর সামনে।রুমু ইসুকে মুখে একটু পাউডার মাখিয়ে লম্বা চুল গুলো ছেড়ে দিলো।ইসু সবসময় মাঝখানে সিঁথি করে বিনুনি করে ভার্সিটি যেতো।আজকে রুমু ইচ্ছা করেই চুলগুলো ছেড়ে দিয়েছে।ইসু আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে বললো,

‘বাহ্!আমাকে তো সুন্দর লাগছে রুমু।আগে তো চুল ছাড়া অবস্থায় নিজেকে কখনো ভালো করে দেখিনি।’

‘ইসু!তুই বরাবরই সুন্দর।এবার ব্যাগ গুছাতে যা।একটু পরেই বেরিয়ে যাবো।’

ইসু হাসি মুখে দৌড়ে চলে গেলো।ইসু চলে যাওয়ার পরপরই রুমু রেডি হতে শুরু করে দিলো।
—-
ইস্পাত অনেক উশখুশ করছে।ডিপার্টমেন্টের বাহিরে অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে।ইসু আজকেও ভার্সিটিতে যাবে কিনা তা জানার জন্য।কিছুটা সময় ব্যয় করে ইস্পাত যখন ব্যর্থ হলো তখনি রাগে গাড়ির দরজা টা ঠাস করে খুলে ড্রাইভিং সিটে বসে শো শো করে চলে গেলো।জোরে ড্রাইভ করছে আর রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।ইস্পাত শুধু ভাবছে একবার ইসুকে কাছে পাই তখন দেখে নিবো ওকে।আমার সাথে রাগ দেখানোর ফল বুঝতে হবে তাকে।

ক্লাসরুমে বসে থাকতে থাকতে ইসুর দু চোখে এখন ঘুমেরা রাজত্ব করতে শুরু করে দিয়েছে।রুমু সহ ক্লাসের অনেক ছাত্র-ছাত্রীই বাহিরে আছে।ইসু ইচ্ছা করেই ক্লাসে বসে আছে।সে ইস্পাতের সামনে ক্লাস ব্যতীত আর পড়তে চায় না।ইস্পাতের আসার সময় হয়ে আসতেই সবাই ক্লাসে ঢুকে নিজেদের মতো বসে পড়লো।রুমু ইসুর পাশে ধপাস করে বসে পড়লো।গা’য়ে জড়িয়ে থাকা লম্বা ফতুয়া টা টেনেটুনে ইসুর দিকে তাকালো।ইসুকে থমকে বসে থাকতে দেখে বললো,

‘কিছু হয়েছে তোর ইসু।’

ইসু মাথা নাড়িয়ে বললো,

‘না কিছুই হয় নি।’

রুমু আরো কিছু বলতে নিলেই ক্লাস রুমে ইস্পাত চলে আসায় আর কিছু বলতে পারেনি।ইস্পাত আসায় ইসুর খুব অস্বস্তি হচ্ছে।ইস্পাতের দিকে এখন পর্যন্ত তাকায়নি।ইস্পাত এলোমেলো পা’য়ে ক্লাসে এসে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো।রুমুর পাশে ইসুকে দেখে বুকটা ধক করে উঠলো।কতক্ষণ নিষ্পলক তাকিয়ে রইলো ইসুর দিকে।ইসুর লম্বা চুল গুলো খোলা দেখে ইস্পাত শুকনো একটা ঢোক গিললো।বিরবির করে নিজেই নিজের মন আওড়াচ্ছে,

‘এই মেয়ে কি আমাকে মেরে ফেলবে নাকি।শাস্তি দেওয়া উচিত এই মেয়েকে কঠোর শাস্তি!ছেলে পাগল করার জন্য এইভাবে চুল ছেড়ে এসেছে নাকি!!শিক্ষকই যদি পাগল হয় ছাত্রের কথা তো বাদই দিলাম।’

ইস্পাত ক্লাস করাচ্ছে আর আড়চোখে ইসুর দিকে তাকাচ্ছে।ইসু আগের মতোই মাথা নিচু করে রেখেছে।যা দেখে ইস্পাতের শরীর রাগে শিরশির করছে।ক্লাস শেষ হতেই ইস্পাত কড়া গলায় ইসুকে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘মিস ইসু!আপনি আমার কেবিনে দেখা করে যাবেন।’

ইসু ইস্পাতের কথা শুনে চট করে ইস্পাতের দিকে তাকালো।ইস্পাতের রাগান্বিত চোখ দেখে ইসু পুনরায় মাথা নিচু করে ফেললো।ইস্পাত ইসুকে এইভাবে সঙের মতো বসে থাকতে দেখে টেবিলে একটা চাপড় দিয়ে বললো,

‘কি হলো!কথা কি কানে যাচ্ছে না?আমার কেবিনে আসতে বলেছি তো।’

একপ্রকার বাধ্য হয়েই উঠে দাঁড়ালো ইসু।ইসু দাঁড়াতেই ইস্পাত নিজের কেবিনে হাঁটা ধরলো।ইসুও গুটিগুটি পা’য়ে ইস্পাতের পিছন পিছন আগাচ্ছে।ইস্পাত পকেটে হাত গুজে খুব দ্রুত হেঁটে যাচ্ছে।ইসু ইচ্ছে করেই আস্তে পা’য়ে আগাচ্ছে।এখন তার ইস্পাতকে দেখলে মেজাজটাই গরম হয়ে যাচ্ছে।ইস্পাত পিছনে ফিরে ইসুকে এইভাবে হাঁটতে দেখে বললো,

‘পা’য়ে কি মেহেদী পড়েছো তুমি?’

ইসু মুখ বাঁকিয়ে বললো,

‘পা’য়ে মেহেদী পড়ে না মেহেদী দেয়।যেইটা জানেন না সেইটা বলেন কেন।’

‘যাক!কথার বুলি ফুটেছে তাহলে।আমার পিছু পিছু না হেঁটে আমার সাথে সাথে আসো।’

‘আমি আপনার কথা শুনতে বাধ্য নই স্যার।’

ইস্পাত থেমে যায়।কটমট চোখ নিয়ে ইসুর দিকে এগিয়ে গেলো।ইস্পাত কে এইভাবে এগিয়ে আসতে দেখেই ইসু ভয় পেয়ে যায়।উল্টো ঘুরে দৌড় দিতে গেলেই ইস্পাত ইসুর ডান হাত টা চেপে ধরে নিজের কেবিনে নিয়ে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিলো।ইসুর কোমর টা নিজের সাথে চেপে ধরে রেখেছে।ইসু নিজেকে ছাড়ানোর জন্য অনেক চেষ্টা করছে।ইস্পাত রেগে গিয়ে বললো,

‘এই ষ্টুপিড!এমন কই মাছের মতো নড়াচড়া করছো কেন?একটু চুপ করে থাকো।’

ইসু ইস্পাতের কথা শুনে দাঁতে দাঁত পিষে বললো,

‘আমি কই মাছ বা রুই মাছের মতো নড়াচড়া করি তাতে আপনার কি?আর এইখানে কেন ডেকেছেন আপনি?যা বলার এখনি বলে ফেলুন।আমি ক্লাসে যাবো।’

‘আমি না বলা পর্যন্ত তুমি যেতে পারবে না।এইভাবেই থাকতে হবে।’

‘আমি একমুহূর্তেও আপনার কাছে থাকবো না।আমাকে ছাড়ুন বলছি।’

ইস্পাত ইসুর কথা কানে না নিয়ে ইসুর খোলা চুলে মুখ ডুবিয়ে দিলো।ইসুর সারা শরীর শিরশির করে উঠলো।ইস্পাত ইসুর চুলগুলো কাঁধ থেকে সরিয়ে দিয়ে ছোট ছোট চুমু এঁকে দিতে লাগলো।ইসু ইস্পাতের থেকে সরে আসার আপ্রাণ চেষ্টা করছে।ইসু ভাঙা গলায় বললো,

‘ছোঁবেন না একদম আমাকে।আপনাকে আমার সহ্য হচ্ছে না।ভুলে গেলেন নাকি,ওইদিনের কথা গুলো।কই আপনার শিমু।যান না উনার কাছে।উনার সাথে এইসব ফষ্টিনষ্টি করুন গিয়ে।আমার কাছে একদম আসবেন না আপনি।’

ইস্পাত চোয়াল শক্ত করে তাকালো ইসুর দিকে।এমতাবস্থায় বললো,

‘তোমার এইটাকে ফষ্টিনষ্টি মনে হচ্ছে।আমাকে কি তোমার খারাপ ছেলে মনে হয়।’

‘তা নয়তো কি?কি ভালো কাজ টা করছেন আপনি আমার সাথে।আমাকে এইভাবে নিজের কেবিনে এইসব ফষ্টিনষ্টি করার জন্যই তো ডেকেছেন।’

‘ইসু মুখ সামলে কথা বলো।আমার রাগ তোলাবে না একদম।’

‘কি করবেন আপনি?আর কি করার বাকি আছে আপনার।নির্লজ্জ,খারাপ পুরুষ একটা।’

ইস্পাত আর সহ্য করতে না পেরে ইসুকে নিজের সাথে আরো জোরে চেপে ধরে।আচমকাই ইসুর জামার চেইনটা খোল দিলো।জামাটা টান মেরে কোমর অবধি এনে ইসুর ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরলো।আর নিজের হাত দিয়ে ইসুর সারা শরীরে বিচরণ করতে লাগলো।এমন হওয়ায় ইসু কান্না করে দেয়।ইস্পাত কে নিজের থেকে সরাতে নিলেই ইস্পাত আরো পাগলমের মতো ইসুকে জাপটে ধরে।ইসু আগের ন্যায় কান্না করেই যাচ্ছে।

কিছুক্ষণ পর ইস্পাত ইসুকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বললো,

‘বলেছিলাম তো!আমাকে একদম রাগাবে না।কেন রাগালে আমাকে?’

ইসু ইস্পাতের বুকে গুটিসুটি মেরে মুখ লুকিয়ে আছে।ইস্পাত ইসুর পিঠে চোখ পড়তেই আঁতকে উঠলো।ইসুর হলদেটে পিঠটায় নিজের নখের আঁচড়ের দাগ গুলো একদম ফুটে উঠেছে।ইস্পাতের কাছে নিজেকে এখন খুব অপরাধী লাগছে।ইস্পাত ইসুর পিঠে হাত রাখতেই ইসু কিছুটা কেঁপে উঠলো।ইসু ইস্পাতের থেকে দূরে সরে আসলো।ক্রন্দনরত গলায় বললো,

‘আপনি খুব খারাপ স্যার।আপনাকে দেখলেই আমার খুব ঘৃণা হচ্ছে।’

ইসু জামার চেইনটা লাগিয়ে নিজেকে ঠিক করে ইস্পাতের কেবিন থেকে বেরিয়ে পড়লো।ক্লাসে গিয়ে নিজের ব্যাগ নিয়ে সোজা বাসায় চলে আসার জন্য রিকশায় উঠে বসলো।

ইস্পাত মাথাটা দু’হাত দিয়ে চেপে ধরে রেখেছে।নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে।রাগের বশে ইসুর সাথে সে কি করেছে তা এখন বোধগম্য হচ্ছে।সবকিছুই তার কাছে কেমন বিষাদময় লাগছে।
—-
ইস্পাত পড়াতে এসে দেখে আজকেও ইসু আসে নি।রুমু আর টুম্পাকে কোনোমতে পড়িয়ে বিদায় দিয়ে দিয়েছে।রুমু আর টুম্পা চলে যেতেই ইস্পাত বিছানায় সটান করে শুয়ে পড়লো।এমন সময় ইমাম ইস্পাতের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,

‘ভাইয়া!তোমার গোলাপ গাছে একটা ফুলও নেই।সবগুলো ভেনিস হয়ে গিয়েছে।’

ইস্পাত চুপ করে আছে।কালো গোলাপ গাছ টা তার খুব শখের গাছ।এই গাছটার প্রতি তার দূর্বলতা অনেক আগে থেকেই।অথচ,আজকে ইমামের কথায় তার মনের গহীন থেকে কোনো রিয়েকশনেই আসছে না।মন শুধু বারবার ইসুর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।ইস্পাত দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,

‘ইমামা!তুমি যাও এখন।আমার ভালো লাগছে না।’

ইমাম অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ইস্পাতের দিকে।কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বিরবির করে বলতে লাগলো,

‘ভাইয়ার কি হয়েছে হঠাৎ করে।ভাইয়া তো কখনো এমন করে না।ভাইয়া তো সবসময় বলেছিলো গাছের খোঁজ খবর দিতে।তার জন্য তো ভাইয়া আমাকে বেতন হিসেবে চকলেট দেয়।আচ্ছা!ভাইয়া যদি উল্টে গিয়ে বলে,আমাকে আর চকলেট দিবে না তাহলে আমার কি হবে।আম্মুও তো আমাকে চকলেট খেতে দেয় না।শুধুমাত্র এই পোঁকা ওয়ালা দাঁতের জন্য।কি যে করি কিছুই বুঝতে পারছি না।আম্মুকেই আগে পটাই।ভাইয়ার মতিগতি ভালো ঠেকছে না।’

ইস্পাত সোফায় থম মেরে বসে আছে।ইসুর সাথে তার তেমন একটা দেখা হয় না।ইস্পাতের মা রিনি আহম্মেদ চোখের চশমা টা ঠিক করে ইস্পাতের পাশের জায়গাটা দখল করে নিয়ে বসে পড়লেন।কিছুটা শক্ত গলায় বললেন,

‘তোমার কি মন খারাপ ইস্পাত?কয়েকদিন যাবত খেয়াল করছি তোমাকে?’

ইস্পাত একটু নড়েচড়ে বসলো।ইস্পাত আমতাআমতা করে বললো,

‘আমি ঠিক আছি মা।আমার কিছু হয় নি।’

রিনি আহম্মেদ সন্দেহের চোখে তাকিয়ে রইলেন ইস্পাতের দিকে।উনার কাছে কেন জানি ইস্পাতকে ঠিক লাগছে না।ইস্পাত মা’য়ের দিকে আড়চোখে তাকালো।মা যে তাকে সন্দেহ করছে তা ঠিকই বুঝতে পেরেছে।ইস্পাত কিছু না বলে সেখান থেকে উঠে গিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
—-
এইভাবেই কয়েক টা দিন কেটে যায়।ইসু আর ইস্পাতের তেমন একটা দেখা হয় নি।যতবারই দেখা হয়েছে ততবারই ইসু ইস্পাতকে এড়িয়ে গিয়েছে।ইস্পাত প্রথম প্রথম সহ্য করে নিলেও পরে ঠিকই ইসুর উপর খুব রাগ করে।মনে মনে ভেবে নিয়েছে ইসু তাকে সহ্য করতে পারে না।সে নিজেই ইসুর কাছে গিয়েছিলো।তার মনে ইসুর জন্য জায়গা থাকলেও ইসুর মনে তার জন্য কোনো জায়গা নেই।তাই ইস্পাত সিদ্ধান্ত নিয়েছে,ও বিয়ে করে নিবে।এমনকি,ইস্পাতের মা রিনি আহম্মেদ ইস্পাতের জন্য শিমুকে ঠিক করে রেখেছেন।শিমুর সাথে ইস্পাতের বেশ ভালো একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।সেই সূত্রে শিমুর প্রায়ই ইস্পাতদের বাসায় আসা যাওয়া হতো।তার পরপরই রিনি আহম্মেদ ইস্পাতকে বিয়ের জন্য ছাপ দিতে শুরু করলেন।ইস্পাত প্রথমে রাজি না হলেও পরে ইসুর ইগনোর দেখে বাধ্য হয়েই বিয়েতে রাজি হয়ে যায়।কিন্তু,মনে মনে অনেক পুঁড়ছে ইস্পাত।রাতের নিকষ কালো ঘনিয়ে আসতেই ইস্পাতের মন শুধু ইসুর জন্য ছটফট করে।

ইসু আর রুমু খাবার খেতে বসেছিলো।আছিয়া বেগম আনন্দিত গলায় বললেন,

‘ইস্পাতের বিয়ে ঠিক হয়েছে।ইস্পাতের কলিগের সাথে।নাম শিমু।মেয়েটা নাকি ভারী মিষ্টি দেখতে।রিনি ভাবী নিজে পছন্দ করেছেন।’

আছিয়া বেগমের কথা শুনেই ইসুর গলায় খাবার আটকে গিয়েছে।হুট করেই ইসুর চোখ দুটো পানিতে ভরে উঠতে শুরু করলো।ইসু খুব কষ্ট করে মুখের খাবার টা গিলে মাথাটা নিচু করে নিলো।

রুমু ইসুর মতিগতি বুঝতে পেরেছে।ইসুর মনে যে ইস্পাতের জন্য একটা অনুভূতি তৈরি হয়েছে তা ঠিক বুঝতে পেরেছে।রুমু আছিয়া বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘মা!কবে বিয়ে স্যারের?’

‘এইতো দু’সপ্তাহ পরেই বিয়ে।কাল থেকেই বিয়ের তোরজোর শুরু করে দিবে।’

রুমু আর কিছু বলে নি।ইসু এখনো মাথা নিচু করে রেখেছে।আছিয়া বেগম এইখান থেকে চলে যেতেই ইসুও নিজের রুমে চলে যায়।বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে ইসু ডুকরে কেঁদে উঠলো।ইস্পাতের বিয়ের খবর শুনে সে নিজেকে কিছুতেই ঠিক রাখতে পারছে না।বুকের ভিতর টা কেমন হাঁসফাঁস করছে তার।

সকাল হতে না হতেই ইস্পাতের বাসায় মেহমান আসতে শুরু করে দিয়েছে।ইস্পাত সবকিছুই সহ্য করে নিয়েছে।শিমুকে মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে তার।তবুও,মনে মনে পণ করে নিয়েছে ইস্পাত,সে শিমুকে যতোটা সম্ভব সুখী রাখবে।শিমুর তো কোনো দোষ নেই।

ইস্পাত ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে লিফটের সামনে এসে দাঁড়ালো।লিফটের অপাশে দাঁড়িয়ে থাকা ইসুকে দেখে ইস্পাত কিছু না বলে চুপ করে এককোণায় দাঁড়িয়ে পড়লো।ইসুর সামনে নিজেকে ঠিক রাখতে খুব কষ্ট হচ্ছে ইস্পাতের।নিজেকে স্বাভাবিক রাখার জন্য শুধু জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।ইসু ঠোঁট কামড়ে ইস্পাতের দিকে তাকিয়ে আছে।কান্নাটাকে দমানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু,অম্বুর ধারার মতো টুপ করে চোখের কার্ণিশ বেয়ে একটুকরো মুক্তার দানা গড়িয়ে পড়লো।ইসু উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে চোখের সেই মুক্তোর দানা গুলো সযত্নে মুছে নিলো।ইস্পাত লিফটের দেয়ালে ইসুর প্রতিচ্ছবির দিকে একমনে তাকিয়ে রইলো।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here