টক্কর,৫ম পর্ব
সাহেরা_খান
“তোর গার্লফ্রেন্ড সাহেলা? যার ছবি দেখিয়েছে সে-ই তো? না কি অন্য কেউ?”
ওসি সাহেবের প্রশ্নে চুপ হয়ে যায় রানা। ধমক শুনতেই কেঁপে ওঠে সে। তারপর আস্তে করে বলল,
“জি, এই মেয়েটাই আমার প্রেমিকা। তার সাথে আমার দুই বছরের সম্পর্ক।”
ওসি সাহেব প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে যাচ্ছেন। রাগে শরীর জ্বলছে তার। তিনি ভেবে পাচ্ছেন না ৯ বছরের সম্পর্ক কী করে এতটা ঠুনকো হয়। প্রতিষ্ঠিত ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের বউ হয়ে সে এরকম নোংরামি কী করে করল! তিমন ছেলেটার জন্য তার বেশ সহানুভূতি কাজ করছে। তার স্ত্রীর কুকর্মের কথা কানে গেলে কীভাবে নিতেন সেটা ভেবেও কূল পাচ্ছেন না। ওসি সাহেব কিবরিয়াকে সাথে করে বেরিয়ে আসলেন। হাবিলদারকে কড়া করে বললেন রানাকে ধোলাই দিতে। তার এখনো রানাকে বিশ্বাস হচ্ছে না। অন্যদিকে রানার মনে ভূকম্পন শুরু হয়ে যায়।
*
বনানী থানার দুজন কর্মকর্তা এসেছেন। কায়রার ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তারাই ছিলেন। ওসি সাহেব ভীষণ খুশি হলেন দুজনকে পেয়ে। মামলার সব কাগজপত্র তার হাতে তুলে দিলেন বনানী থানার ওসি মোশাররফ হোসেন। তাকে সাদরে অভ্যর্থনা জানালেন ওসি সাহেব। আপ্যায়নের সব ব্যবস্থাও করা হলো। খেতে খেতে দুজনে আলাপে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। মামলার খুঁটিনাটি নিয়ে দুজনে বিস্তারিত আলোচনা শুরু করেন। ওসি সাহেব জিজ্ঞেস করলেন,
“আপনারা অপরাধীর নাগাল পাননি? এতটা নিখুঁত অপরাধ কী করে হতে পারে? কোনো ক্লু রেখে যায়নি আশ্চর্যজনক না ব্যাপারটা? খুবই প্রফেশনাল মনে হচ্ছে।”
মোশাররফ হোসেন বেশ পোড়খাওয়া লোক। কিন্তু তিনি এই কেইসের সমাধান আজও পাননি। এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি বেশ আশাবাদী দুই থানার কর্মকর্তা একজোট হয়ে যদি কাজ করে, তাহলে খুনিকে ধরা সহজ হয়ে যাবে। ওসি সাহেবকে তিনি বললেন,
“আপনার কথায় বোঝা যাচ্ছে ঘটনা দুটোর সূত্র একই। আমাদের চেয়ে আপনারা বেশ এগিয়ে আছেন দেখছি। এবার হয়তো অপরাধী পার পাবে না।”
ওসি সাহেব হেসে সহমত জানালেন। তিনি তাকেও চেষ্টা চালিয়ে যেতে বললেন। দুজনে যদি সহযোগিতা করে নিজেদের তাহলে দ্রুত সমাধান হবে। কর্মকর্তা দুজন বিদায় নিলে ওসি সাহেব ফাইল খুলে বসেন। কিবরিয়ার কাছে কিছু রিপোর্ট দিয়ে নিজেও মনোযোগ সহকারে পড়তে শুরু করেন। রিপোর্টে কোনো পরিবর্তন পেলেন না। দুই বোনকেই একইরকম নির্যাতন করা হয়েছে। সেখানে একাধিক লোক যুক্ত ছিল তা স্পষ্ট। বড়ো কোনো গ্যাং এর কাজ বোঝাই যাচ্ছে। তবে যে ঠিকানা উদ্ধার হয়েছে তারাই কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। যদিও একজনের মুখোশ বিহীন আসল চেহারা দেখা গেছে, তাকে সনাক্ত করা গেলেই শিওর হতে পারবেন। সব খতিয়ে দেখা হলে ওসি সাহেব কিবরিয়াকে জিজ্ঞেস করলেন,
“রানার ফোন কলের রেকর্ড কখন আসবে? কিছুক্ষণ পরে গিয়ে চেক করে আসবেন ও মুখ খুলেছে কি না।”
কিবরিয়া ফোন হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেল। কল রেকর্ড কখন হাতে পাবে সেই তথ্যের উদ্দেশ্যে কল দেয় কাউকে। তার সাথে কথা বলে সন্তুষ্টির হাসি দেয়। হাঁটতে হাঁটতে রানার সেলের সামনে এসে দাঁড়ায়। ধোলাই খাওয়ায় বেশ কাহিল হয়ে পড়েছে সে। ভেতরে প্রবেশ করে রানার কলার ধরে জিজ্ঞেস করল,
“মুখ কি খুলবি? না আরেকটু আদর দিতে হবে?”
রানা খুব মিনতি করে অস্পষ্টস্বরে কিছু কথা বলল। কিবরিয়া মনোযোগ দিয়ে প্রাণপণ চেষ্টা করছে বোঝার জন্য। কিন্তু সে ব্যর্থ হয়ে হাবিলদারকে বলল,
“একে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। সুস্থ হলে জানাবেন। কথা বলারমতো অবস্থায় নেই সে।”
কিবরিয়া বেরিয়ে সোজা ওসি সাহেবের কেবিনে ঢোকে অনুমতি নিয়ে। সে চেয়ার দখল করে নিয়ে বলল,
“কল রেকর্ড দ্রুতই হাতে পাবো স্যার। আর রানাকে চিকিৎসা দিতে বলেছি। সে কথা বলারমতো অবস্থায় নেই। আর ও কী যেন বলছিল তার মধ্যে একটা শব্দ বুঝতে পেরেছি।”
ওসি সাহেব কান খাড়া করে ফেললেন। প্রশ্নবোধক চাহনি দিতেই কিবরিয়া বলল,
‘ব্লাকমেইল’
ব্লাকমেইল শব্দটা নিজের মুখে আওড়ে তিনি বললেন,
“সেদিন যে ঠিকানা পেলাম সেটার খবর জানতে খোঁজ লাগান। কাজটা গোপনে করার চেষ্টা করবেন। কিছুতেই যেন তারা আভাস না পায়। মনে হচ্ছে খুনিকে ধরার সময় হয়ে গেছে। ওদেরকে ধরতে পারলেই মামলা ডিসমিশ হয়ে যাবে।”
কিবরিয়া দেরি করল না। নির্দেশ পেতেই ঘনিষ্ঠ সহচরকে কল দিয়ে ঠিকানাটি খুঁজে বের করতে বলল।
কিবরিয়ার ফোনের রিংটোন বেজে উঠতেই চমকে ওঠে সে। মাত্রই পকেটে রেখে ছিল। বেসুরো শব্দে বেজে ওঠায় সে বিরক্ত হলো। কলদাতার নাম দেখে সে ভীষণ খুশি হয়ে যায়। বিরক্তি, রাগ ঝেড়ে ফেলে দ্রুত হাতে কল রিসিভ করে। আন্তরিকতার সাথে কুশল বিনিময় করে কল করার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। ওপাশের কণ্ঠের মালিক কিছু একটা বলতেই খুশিতে লাফিয়ে ওঠে সে। নিজের উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ না করে দ্রুত গতিতে ওসি সাহেবের কেবিনে ফিরে যায় সে। ভ্রু কুঁচকে হাস্যোজ্জ্বল কিবরিয়াকে দেখছেন। ফোন না কাটায় তিনি কিছুই বললেন না। কিবরিয়া কথা শেষ করে নিজেই মুখের হাসি দীর্ঘ করে বলল,
“স্যার গুড নিউজ আছে। আশাকরি এতে কেইস সলভ হয়ে যাবে।”
ওসি সাহেব কোনো উত্তর না দিয়ে পরবর্তী অংশের জন্য বসে থাকলেন। কিবরিয়া কিছুটা চুপসে গেলেও চমকে যাবে ভেবে তাকে বলল,
“মিস কায়রার জ্ঞান ফিরেছে স্যার। তবে এখনো বেডে দেওয়া হয়নি। সাধারণ ট্রমা কাটিয়ে ওঠেননি। ঘণ্টা খানেক গেলেই হয়তো ঠিক হতে পারেন।”
ওসি ভেতরে ভেতরে বেশ চমকে গেলেন। একজনকে পেয়ে বেশ ভালোই হলো। অনেক তথ্য পাওয়া যাবে তার থেকে। কথাটা ভাবতেই শিহরিত হলেন। তিনি কিবরিয়াকে বললেন,
“বিকেলের দিকে যাওয়া যাক তাহলে। আপনি খোঁজ নিয়ে রাইখেন কথা বলা যাবে কি না।”
সম্মতি জানিয়ে চলে যায় কিবরিয়া। দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় হয়ে এসেছে। সে রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়।
*
ডাক্তার রঞ্জন বিশ্বাসকে কল দিয়ে কিবরিয়া শিওর হলো। তার আশ্বাসে ওসি সাহেবকে সাথে করে বেরিয়ে পড়ে সে। হাসপাতালে ঢুকেই জনসমাগম লক্ষ করল। কায়রার জ্ঞান ফিরেছে শুনে সবাই একনজর দেখার জন্য উপস্থিত হয়েছে। ওসি সাহেব ডাক্তারের সাথে কথা বলতে গেলেন। রঞ্জন বিশ্বাস হাসিমুখে এগিয়ে এসে বললেন,
“আপনাদের জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। কায়রা ম্যামের সাথে কথা বলেছি। তিনি আপনাদের সাথে কথা বলার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন। আপনারা এখনই দেখা করতে পারেন। আমি সবাইকে বেরিয়ে যেতে বলছি।”
ওসি সাহেব রঞ্জন বিশ্বাসের কথা শুনে ভীষণ খুশি হলেন। তার আন্তরিকতা বেশ সন্তুষ্ট করল তাকে। দুজনে রোগীর কেবিনে ঢোকার অনুমতি চাইতেই কায়রা উঠে বসে ভেতরে আসতে বলে। ওসি সাহেব আবিরার মতো দেখতে আরেকটি মেয়েকে দেখে অবাক হলেও ঘাবড়ে যাননি। তিনি যদি আগে থেকে না জানতেন বিষয়টি তাহলে নিশ্চিত বিষম খেতেন। কেবিনের আশেপাশে নজর বুলিয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন,
“কেমন আছেন ম্যাম? এখন আপনার সার্বিক অবস্থা কেমন? আপনি কি বিস্তারিত বলতে পারবেন না কি আমরা আরো অপেক্ষা করব?”
কায়রা হেসে আন্তরিকতা প্রকাশ করে বলল,
“আমি এখন ভালো আছি স্যার। আপনি চিন্তা করবেন না। পুরো একবছর বেডে শুয়ে থেকে আমার দশা আরো খারাপ হয়ে গেছে। এখন উঠে বসে কথা বলতে পেরে ভীষণ খুশি লাগছে। আপনারা নিশ্চিন্তে বলতে পারেন।”
কায়রার আত্মবিশ্বাস দেখে তিনি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন। এবার হয়তো রহস্যের সমাধান সহজে হবে। তিনি নড়েচড়ে বসে জিজ্ঞেস করলেন,
“আপনি আমাদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা যা হয়েছে বলেন। আমরা তদন্ত করে বেশ এগিয়েছি। আপনার জবানবন্দি পেলে আরো শিওর হবো।”
কায়রা সেই বিভীষিকাময় সময়গুলোর কথা মনে করতে চায় না। তার মুখটা মেঘে ঢেকে গেলেও অপ্রস্তুত হেসে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সে বলল,
“বিয়ের শপিং আগেই শেষ হয়ে গেলেও কিছু জিনিস মিসিং দেখে পুনরায় শপিং করতে গিয়েছিলাম। শপিংমল থেকে বের হওয়ার পরে কেউ একজন আমার কাছে সাহায্য চায়। সে দেখতে খুবই বিদঘুটে ছিল। তার জরাজীর্ণ অবস্থা থাকায় সন্দেহ করিনি। তাকে সাহায্য করতে তার সাথে রওনা দেই। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে পেছন থেকে কেউ আমার মুখ চেপে ধরে। তারপর আর কিছুই মনে নেই। যখন জ্ঞান ফিরে আসে তখন আমি দেখি ভয়ংকর একটা লোক আমার সামনে দাঁড়ানো। তাকে দেখে ভয় পেয়ে চিৎকার করলে আমার অতি চেনা একজন হাসতে হাসতে সামনে এসে দাঁড়ায়।”
চুপ হয়ে যায় কায়রা। অতীতের দুঃসহ স্মৃতিগুলো হাতড়ে বেড়ানোয় বিষণ্ণতা ঘিরে ধরে তাকে। মাথা নিচু করে চোখের জল মুছে নিয়ে সে বলল,
“আবিরার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল সে। আমাকে অনেকবার প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু আমি তা গ্রহণ না করায় আমাকে তুলে নিয়ে যায়। সবার সামনে মুখ দেখাতে না পারি তারজন্য কয়েকজন মিলে…।”
মুখ ঢেকে কান্নায় ভেঙে পড়ে সে। তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা কারোরই জানা ছিল না। তাই চুপ থাকাই শ্রেয় মনে করলেন। বেশ সময় পরে নিজেই শান্ত হয়। এরপর সে বলল,
“আমাকে প্রথমে ছেড়ে দিতে চাইলেও পরে আর ছেড়ে দেয়নি। ওদের সাথের মানিক নামের যে লোকটি ছিল সে-ই পরামর্শ দেয় আমাকে খুন করে রাস্তায় ফেলে দিতে। আমি আর কিছুই জানি না।”
মানিক নামটা শুনে কিবরিয়া চমকে ওঠে। ওসি সাহেব নির্বিকার ছিলেন। তিনি এই ভয়ংকর সন্ত্রাসীকে ভালো করে চেনেন। আবিরার গাড়িতে তার কার্ড পাওয়া গিয়েছে। এছাড়া সিসিটিভি ফুটেজেও তার চেহারা দেখা গেছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন,
“আবিরা ম্যাডামের বন্ধুটি কে? আপনি হয়তো জানেন না আপনার বোনের উপরও হামলা হয়েছে ঠিক একইভাবে। তবে আপনি বেঁচে ফিরলেও তিনি নাফেরার দেশে চলে গেছেন।”
কায়রা এক মুহূর্ত থমকে তাকিয়ে থেকে খবরটা হজম করে নিলো। মগজে বাড়ি মারতেই সে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে। চিৎকার করে বিলাপ করতে শুরু করে বোনের জন্য। ওসি সাহেব প্রাণপণ চেষ্টা করলেন তাকে শান্ত করতে। তিনি আবিরার বন্ধুর নাম জানতে চাইলেন আবারও। কায়রা রাগে, ক্ষোভে বলল,
“আমার সাথে এতবড়ো অন্যায় করে আবার কী করে পারল আবিরার সাথে এরকম কাজ করতে! আমি না হয় ওকে রিজেক্ট করেছিলাম কিন্তু ও কী করেছিল?”
আবারও কান্নায় ভেঙে পড়ে সে। ওসি সাহেব বেশ ঠান্ডা মাথায় বললেন,
“আপনি শুধু নামটা বলেন। আমরা তার শাস্তির ব্যবস্থা করছি। চিন্তা করবেন না। আইনের হাত অনেক লম্বা। সে কিছুতেই পার পাবে না।”
তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে কায়রা বলল,
“রানাকে না হয় ধরলেন কিন্তু মানিক আর তার সাঙ্গপাঙ্গরা শাস্তি পাবে? আমি একটুও বিশ্বাস করি না।”
ওসি সাহেব কিবরিয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলেন। তিনি উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
“সব প্রমাণ আমাদের হাতে আছে। এখন শুধু তাদের অ্যারেস্ট করার পালা। কোথায় আছে সব জানি। খুব দ্রুতই তাকে গরাদে পুরব। আপনি বিশ্বাস হারাবেন না প্লিজ।”
বলেই তিনি কিবরিয়াকে নিয়ে ফিরে আসেন। থানায় গিয়ে মিটিং আয়োজন করতে বললেন। যতদ্রুত সম্ভব মানিক আর তার গ্যাংকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে চান।
*
রানার বেহাল দশা হয়ে আছে। সে এখনো পর্যন্ত কথা বলতে পারছে না। কল রেকর্ড হাতে আসার কারণে সেদিকে ধ্যান না দিয়ে সব যাচাই করতে বসে পড়ল কিবরিয়া। প্রতিটি কল রেকর্ড শুনে কিবরিয়া হতভম্ব হয়ে যাচ্ছে। সে বাকরুদ্ধ হয়ে সব শেষ না করে রেখে দিলো। এতটা লজ্জা পেয়েছে সে মাথায় পানি ঢালার কথা ভেবে ওয়াশরুমে চলে গেল। ওসি সাহেব অনেক সময় ধরে কিবরিয়াকে কল দিচ্ছেন। তার সাড়াশব্দ না পেয়ে নিজেই উঠে আসলেন। ওয়াশরুম থেকে ভেজা অবস্থায় বের হতে দেখে তিনি ভ্রু কুঁচকে আছেন। অপ্রস্তুত হেসে কিবরিয়া বলল,
“স্যার আসলে গরম লাগছে ভীষণ। তাই মাথায় পানি ঢেলে ঠান্ডা করলাম নিজেকে।”
ওসি সাহেব কথাটি বিশ্বাস করেননি তা কিবরিয়া বুঝতে পারল। আজ যে তেমন গরম পড়েনি সে নিজেও জানে। পুরোই খোড়া অজুহাত দেখিয়ে নিজেই লজ্জা পেল। ওসি সাহেব কল রেকর্ডগুলো শোনার উদ্দেশ্যে হাতে নিলেই কিবরিয়া দ্রুত হাত থেকে কেড়ে নিয়ে বলল,
” স্যার, আমিই শুনতেছি সব। কী দরকার আছে আপনার কষ্ট করার।”
কিবরিয়ার মতিগতি ভালো লাগল না তার। তিনি কল রেকর্ড না রেখে অন করে ফেললেন। সামান্য অংশ কানে যেতেই দ্রুত বন্ধ করে দিলেন। কিবরিয়া অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ভান করল সে কিছুই শোনেনি। ওসি সাহেবের মুখ দিয়ে কিছুই বের হলো না। তার ফোনের রিংটোন বাজতেই তিনি সম্বিত ফিরে পান। দ্রুত কল রিসিভ করতেই তার মুখ বাংলার পাঁচ হয়ে গেল। কিবরিয়া লক্ষ করে জিজ্ঞেস করল,
“কি হয়েছে স্যার? কোনো খারাপ সংবাদ?”
ওসি সাহেব নিজের মুখ চিরতার রস খেলে যেমন অনুভব হয় ঠিক সেরকম করে ফেললেন। তিনি বললেন,
“সব শেষ হয়ে গেছে…।”
চলবে…